আপনারা কেউ কি নিজের ব্লগে গিয়ে পুরনো লেখাগুলি পড়েন?
আমি মাঝে মাঝে পড়ি। এটা অনেকটা অতীতের আয়নায় নিজেকে দেখার মতো। কেমন ছোট্ট রুগ্ন ছিলো সচলায়তন, যখন আমরা ক'জন শুরু করলাম! আমাদের সবার লেখায় তখন কত অস্থিরতার ছাপ, কত কত আইডিয়া গিজগিজ করছে, ডেভলপার অরূপ আর মুর্শেদকে প্রত্যেকদিন ট্রাকলোড করে আইডিয়া দিই সবাই মিলে। কত শোরগোল সবকিছু নিয়ে! পুরনো এক ব্লগ ছেড়ে আমরা রাপানুইয়ের নাবিকদের মতো পাড়ি জমিয়েছি, নতুন দ্বীপে বসতি গড়েছি সবাই, নতুন করে সাজাবো সচলায়তনকে। সচলে আমার পুরনো পোস্টে সেই নতুন সজ্জার ছাপ। আরেকটু সামনে আসি, আস্তে আস্তে ঘটনা যোগ হয়, চরিত্র যোগ হয়, সংলাপ যোগ হয়। সচলায়তনের চেহারা একটু একটু করে যেন বেড়ে ওঠে শিশুর মতো। আমার মতো আরো দুয়েকজন, যারা নিজেকে সচলায়তনের একজন সদস্যের আরেকটু বাইরে নিয়ে গিয়ে স্পর্শকাতর প্রেমিকের হটসীটে বসিয়েছেন, তাদের ক্ষোভ-রাগ-ছটফটানির আঁচও দেখি পুরনো লেখায়।
সচলায়তন আস্তে আস্তে সেই পোস্টগুলোর ধাপ পেরিয়ে একটা মস্ত পরিবারের চেহারা নিয়েছে এখন। নিছক কতগুলি মানুষের এলোমেলো লেখামাখা একটা ওয়েবসাইট তো নয় এটা।
পুরনো লেখা পড়তে গিয়ে অনুভব করি, জুবায়ের ভাই বড় মনোযোগী পাঠক ছিলেন আমার। প্রায় সব পোস্টেই একটি করে মন্তব্য আছে তাঁর। সেই উপস্থিতি এতো বিস্তার নিয়ে, তাকে উপেক্ষার কোন উপায়ই থাকে না।
জুবায়ের ভাইয়ের লেখাগুলি নিয়ে একটি বই প্রকাশ করবো আমরা। ফোনে রিটন ভাই আর মুর্শেদের সাথে আলাপ হয় তা নিয়ে। রিটন ভাই সম্পাদনার প্রস্তাবে সম্মত হন। তারপর আলাপ হয় প্রকাশনার সাথে জড়িত অভিজ্ঞ সচলদের সাথে। অনেক আলোচনা শেষে স্থির হয়, সচলে জুবায়ের ভাইয়ের লেখা ব্লগ-ঘরানার লেখাগুলিই সংকলিত হবে একটি গ্রন্থে। রিটন ভাই স্মরণ করিয়ে দেন জুবায়ের ভাইয়ের নিজের পরিকল্পনার কথা। সিকি-আধুলি গদ্য ডাকতেন তিনি নিজের এই লেখাগুলিকে। সে নামই স্থির হয় বইয়ের নাম হিসেবে।
কাজ এগোয়ে গুটিগুটি। অমিত আহমেদ অনেক সময় নিয়ে সচল থেকে জুবায়ের ভাইয়ের লেখাগুলি ফাইলবন্দী করে পাঠিয়ে কাজ সহজতর করে দেয়। সন্ন্যাসী আর আনিস ভাই রিটন ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ রেখে একটু একটু করে শেষ করেন বই বিন্যাসের কাজ। মেইলে মেসেজে দুরন্ত তর্ক চলে মাহবুব লীলেনের সাথে, অনেক লড়ায়ের পর ইউনিকোড জেতে, আমাদের প্রকাশনার বাহন হিসেবে। পাগলা অরূপ কাজের ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ একদিন ডেকে দেখায় দারুণ এক প্রচ্ছদের ছবি। মেহবুবা জুবায়ের পাঠান জুবায়ের ভাইয়ের জীবনী আর ছবি।
আমি শুধু সবকিছুর সাক্ষী হয়ে থাকি, হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছে বাংলা ইউনিকোডব্যবস্থায় প্রকাশিত প্রথম বইটির ফ্ল্যাপ টেক্সটে লিখি সচলায়তনের কথা, যেন সেটি একটি মাঠ, সেই মাঠে আমরা লেখার খেলায় মত্ত, আর সেই মাঠের পাশে একটি ছায়াতরুর নাম আমরা রাখি মুহম্মদ জুবায়ের। অনেক বিশ্বাস নিয়ে বলি, মুহম্মদ জুবায়েরের মৃত্যু আছে, লুপ্তি নেই।
পোস্ট উৎসর্গের অভ্যাস নেই আমার। সচলায়তনে আমার ত্রিশততম পোস্টটি উৎসর্গ করলাম জুবায়ের ভাইকে, যাকে কখনো দেখিনি, কখনো শুনিওনি, কিন্তু যিনি আমাদের বন্ধু ও স্বজন ছিলেন। আর কামনা করি, যেন আর কোন সচলকে হারিয়ে এমন পোস্ট লিখতে না হয় আমাকে।
মন্তব্য
......
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
(দীর্ঘশ্বাস)
যা বলা হয়নি পোস্টে, জুবায়ের ভাইয়ের লেখা প্রকাশের ব্যাপারে তাঁর পরিবারের সম্মতি নেয়া হয়েছে। সচলে প্রকাশিত জুবায়ের ভাইয়ের যে কোন লেখা অন্য যে কোন মাধ্যমে প্রকাশের জন্যে তাঁর পরিবারের অনুমতি প্রয়োজন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
এই মাঠ একদিন ছোট্ট দ্বীপকে ছাপিয়ে সারাটা ভূ-তল সচল করুক। আর সেই ছায়াতরু? আরো প্রকাণ্ড হয়ে সেই প্রকাণ্ড মাঠ জুড়েই প্রশান্তি আনুক।
সচলায়তনের ব্যাপারটা অদ্ভুত রকম
আমি আছি মাত্র বছর খানেকের একটু বেশি সময় ধরে
এর আগে ব্লগ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না
অথচ এখন আমার দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে যেমন ঢুকে গেছে সচলায়তন
তেমনি প্রতিদিনের ফোন আড্ডা আর কাজের একটা বড়ো অংশ জুড়ে থাকেন সচল সদস্যরাই
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
পুরনো লেখায় চোখ বুলালে নিজের বিবর্তনটা প্রকট হয়ে ধরা পরে।
হিমু ভাইয়ের কাছ থেকে পাণ্ডুলিপিটা পেয়ে জুবায়ের ভাইকে নিয়ে লেখা পোস্টে আবার চোখ বুলিয়েছিলাম এই সেদিনই। কিছু আবেগ কখনও পুরনো হয় না, কিছু বিচ্ছেদ সারা জীবন বেদনা দেয়।
আমি এই দিক থেকে সৌভাগ্যবান যে জুবায়ের ভাইয়ের সাথে কথা হত ফোনে। দুর্ভাগা দু'টি কারণে -- ১) দেখা হল না সামনা-সামনি, ২) হয়তো একেবারেই চেনা-জানা-পরিচয় না থাকলেই ভাল ছিল; তাতে কষ্ট কম হত।
অমিত ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ জুবায়ের ভাইয়ের লেখাগুলো সংকলন করে দেওয়ার জন্য, রিটন ভাইকে ধন্যবাদ সম্পাদনার জন্য।
আমার মত প্রবাসে ছটফট করে মরা লোকের জন্য তো সচলায়তন প্রাত্যহিক জীবনের অনেক বড় অংশ। "ফ্রেন্ড লিস্ট"-এ আমারও এখন সচলই বেশি!
এমন চমৎকার একটা উদ্যোগের পেছনে যাঁরা আছেন সবাইকে সাধুবাদ জানাই।
জুবায়ের ভাইয়ের কথা খুবই মনে পড়ছে ...
-----------------------------
--------------------------------------------------------
আমার সাথে দেখা হয়েছিল অল্প কয়েক ঘন্টার জন্য!
মাথায় কয়টা লাইন শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে
Our lives are made
in these small hours
these little wonders,
these twists & turns of fate
time falls away,
but these small hours,
these small hours still remain...
খুব মর্মস্পর্শী লেখা,হিমু।
এর বাইরে আর বলার কিছু নেই।
প্রার্থনা করি, কেবল শুধু তুমি নও, আমাদের সচল পরিবারের সকলে এই শোকের আঘাত একসময় কাটিয়ে উঠবেন।
জুবায়ের ভাই, খুব মিস করি আপনাকে----
জুবায়ের ভাইয়ের বই আর সচলায়তন সংকলন কোন/কোন কোন প্রকাশনী থেকে বের হচ্ছে হিমু ভাই?
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
নিজেকে উল্টেপাল্টে দেখা হয় না কখনো। ফলত পিছনে পড়ে থাকি, ভুল-ত্রুটি শুধরিয়ে এগিয়ে যাওয়া হয় না আর।
জুবায়ের ভাই, না দেখা মানুষটির কথা মনে পড়লে শুধু দীর্ঘশ্বাসই বাড়ে।
তিনশত পোস্ট পূর্তিতে অভিনন্দন।
০১
আমি পড়ি, বেশ মনযোগ দিয়েই পড়ি। সবচেয়ে মজা লাগে পড়তে মাশীদ আপুর কিছু পোস্ট, মন্তব্য আর বদ্দা'র কিছু পোস্ট, মন্তব্য - যেমন, অরূপ ভাই ঘুমাচ্ছেন, তাই আজকে আর সচলায়তনের কোন ডেভেলপমেন্ট হবে না ইত্যাদি।
ওই সময়টায় আমি সচলে ছিলাম না, এসেছি আরো একটু পরে। মাঝে মাঝে মনে হয়, ওই সময়টায় সচলায়তনের সাথে পরিচয় থাকলে বেশ মজা হত।
০২
লেখার বাদবাকি অংশের জন্য মৌনতাই শ্রেয়
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ভালোবাসা।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
বইয়ের প্রচ্ছদটা অসাধারণ হয়েছে। এখন এক কপি বই আনাতে হবে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
…………….
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
আমি পিছন ফিরতে ভয় পাই। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে! পুরনো লেখা খুব একটা পড়া হয় না। সময়ের অভাবও এর জন্য দায়ী।
মুহম্মদ জুবায়েরের জন্য শুভকামনা। যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
একটা সত্যি কথা আজ লিখি। তখন আমি সচলায়তনে একদম নুতন, আসা যাওয়া আর মুলতঃ পড়া। জুবায়ের ভাইকে আমি চিনি না জানি না, তখন উনি অসুস্থ হয়ে হাস্পাতালে। রোজ আপডেট দেওয়া হচ্ছে সচলায়তনে, আমি পড়ি আর কেন জানি না এমনিতেই প্রার্থনা বেরিয়ে আসত মন থেকে। উনি মারা যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন কিছু লিখতে পারি নি, খুব ইচ্ছে ছিল উনাকে নিয়ে ছোট্ট একটা পোষ্ট দেব, কিছুই লিতে পারিনি বলে পোষ্ট দেওয়া হয় নি।
আজো উনার কথা উঠলে কে যেনো ভেতর থেকে আপনা আপনি বলে ওঠে, জুবায়ের ভাই যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
আমার মত পোড়া কপাল মনে হয় সচলায়তনে কারো নাই । যখন জুবায়ের ভাই সবার লেখা পড়তে শুরু করলেন আমি তখন সচল থেকে কিছুদিনের জন্য হাওয়া হয়ে গেলাম । যাওয়ার আগে একটা জিনিস লিখেছিলাম, তাতেই ওনার কমেন্ট পড়েছিল একটা । তারপর আবার যখন সচলে ঠিক মত লেখা শুরু করলাম ততদিনে অনেক কিছু ঘটে গেছে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
মুহম্মদ জুবায়েরের ভাইগুলোকে চিনি। তা থেকেই বুঝতে পারি, একটা অসাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার দেখা বা অনুভূতি ভাগাভাগির সুযোগ হারিয়ে গেল এ জীবনের মতো...
মৃতু্যর র কি সব শেষ হয়ে যায়? ভাবতে খুব ভালো লাগে, আমাদের এই ভালোবাসা ভরা কথাগুলো দেখছেন কোথাও থেকে... তারপর হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছছেন হিমুর মতো...
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
নতুন মন্তব্য করুন