পিলখানা হত্যাকান্ডের তদন্ত

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: রবি, ০৮/০৩/২০০৯ - ১০:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পিলখানা হত্যাকান্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশের অপরাধ অনুসন্ধান বিভাগের [সিআইডি] কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দের নেতৃত্বে একটি দল জিজ্ঞাসাবাদ করছে বিডিআরের আটক জওয়ান ও অফিসারদের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাপতিত্বে একটি তদন্ত কমিটির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেলের নেতৃত্বে একটি সেনা তদন্ত দল অনুসন্ধান করছে।

আমরা জানি না এই অনুসন্ধানের ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশিত হবে কি না। কিন্তু এই হত্যাকান্ড, পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ, সামরিক বাহিনীতে এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে দেশে এতো বেশি উৎকণ্ঠা চলমান যে জনসাধারণকে এ সম্পর্কে অবহিত করা সরকারের অবশ্যকর্তব্য। এর আগেও আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড ও গুলি হামলা এবং বাংলা ভাই তথা জেএমবির কার্যক্রমের ব্যাপারে তৎকালীন প্রশাসন অশালীন রকমের অবহেলা প্রদর্শন ও সক্রিয় ধামাচাপা অ্যালগরিদম অনুসরণ করেছে। দুটি ঘটনাকেই তৎকালীন প্রশাসন বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর চাপিয়ে দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে, এবং পরবর্তীতে তাদের সেই কীর্তি প্রকাশিত হয়েছে। তাই এবার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই গুপ্তহামলার তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত স্বচ্ছ, যাতে এ নিয়ে কোন প্রশ্ন না ওঠে।

আমরা তারপরও খবরের কাগজে নানা সংবাদ পড়ে চমকে উঠছি। আমরা জানতে পারছি, পিলখানা হত্যাকান্ডের তদন্তভার দেয়া হয়েছিলো আবদুল্লাহেল বাকী নামক এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তাকে, যিনি চট্টগ্রামে আটক দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার অনুসন্ধানকে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে ভুল পথে চালিত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর শুধু জনাব বাকীকেই এই দায়িত্ব থেকে সরানো হয়নি, আজ পড়লাম, স্বরাষ্ট্রসচিব পদে আসীন যিনি ছিলেন, তাকে সরিয়ে অন্য একজনকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, কিভাবে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হেনেছে, এমন একটি মামলায় অতিশয় গুরুতর অভিযোগবিদ্ধ একজন পুলিশ অফিসারকে পুনরায় পিলখানা হত্যাকান্ড মামলার মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়? স্বয়ং পুলিশের আইজিপি যেখানে ব্যক্তিগতভাবে এই হত্যাকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত [তাঁর জামাতা ক্যাপ্টেন মাজহারুল হায়দার সেদিন নিহত হয়েছিলেন], সেখানে কিভাবে পুলিশের একজন প্রশ্নবিদ্ধ কর্তা তদন্তের ভার পান?

পিলখানা হত্যাকান্ডের সুচারু তদন্ত চাই, বিচার চাই, অপরাধীদের সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এই গোটা প্রক্রিয়াটি হোক স্বচ্ছ ও দৃষ্টান্তের যোগ্য।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বড়ই আজব প্রশাসন। যাক শুরুতেই ব্যাপারটা যে ধরা গেছে তাই ভালো।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
রণদীপম বসু এর ছবি

সবকিছুই যদি মিডিয়াকে খুঁজে খুঁজে বের করে দিতে হয়, তারপর প্রশাসন বা রাষ্ট্র তার ব্যবস্থা নেয়, তাহলে এটা তো খুবই হতাশার কথা ! এরকম অনেক বিষয়ই থাকতে পারে যেখানে মিডিয়ার দৃষ্টি পড়ে নাই বা পড়বে না..!!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ধুসর গোধূলি এর ছবি
আরিফ জেবতিক এর ছবি

আরে কোন পুলিশ , সেটা কোন ব্যাপার না । অপরাধী ধরা পড়বেই ।

এই ঘটনায় ইউটিউব আর ইস্নিপ্স বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে অপরাধী পালিয়ে যেতে না পারে ।

ইফতেখার আনাম এর ছবি

"এই গোটা প্রক্রিয়াটি হোক স্বচ্ছ ও দৃষ্টান্তের যোগ্য।"
-- হোক সবার প্রাণের দাবি

ফারুক হাসান এর ছবি

এই গোটা প্রক্রিয়াটি হোক স্বচ্ছ ও দৃষ্টান্তের যোগ্য।

নিবিড় এর ছবি

এইখানেই তাইলে শুরুতে সেই পুরান নমুনা, আর এই তদন্তে প্রকৃতপক্ষে আসল দোষীরা কতটা বেরিয়ে আসবে তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এছাড়া তদন্ত শেষ হবার আগেই বিভিন্ন দল বা মহল একে অন্যকে যেভাবে দোষারোপ করছেন তাতে মনে হচ্ছে তদন্তের ফোকাস নষ্ট হবে।


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

ধ্রুব হাসান এর ছবি

দেশ ও জাতির জন্যই এসব ষড়যন্ত্রের সঠিক তদন্ত হওয়া অতি জরুরী। শুধু শুধু দলাদলি গালাগালি আর দেখতে চাইনা। এর খেসারত স্বাধীনতার পর থেকেই দিয়ে চলেছি আমরা; আর না...! তবে কেইস যে উপায়ে ফাইল করা হয়েছে তার লক্ষন দেখে কিন্তু ভালো লাগছেনা! সরকারের মনে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নিজেদের মধ্যেই আগে শুদ্ধি অভিযান চালানো উচিত। এতো গোজাঁমিল দিয়ে রাষ্ট্র চলতে পারেনা!

অতিথি লেখক এর ছবি

শুধু অপরাধী খুঁজে বের করে বিচার করলেই হবে না। বিচার কার্যকর করতে হবে। এবং তা এই সরকারকেই। আর তদন্ত শেষে মিডিয়ার সামনে সবকিছু প্রকাশ করা না হলে সাধারন মানুষ সরকারী ভূমিকা কতটুকু মেনে নেবে তাতে সন্দেহ আছে। তাই সরকারকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
-----মর্তুজা আশীষ আহমেদ(mortuzacse1982@yahoo.com)

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আসলে কী হয়েছিলো, সেটা মনে হয় কোনোদিনই আর জানা হবে না।

হাসিব এর ছবি

এইটাই শেষ কথা ।

দিগন্ত এর ছবি

উল্টোটাও সত্যি ... আসল ঘটনা জানা গেলেও অধিকাংশই সেটা বিশ্বাসই করবে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আরিফুর রহমান এর ছবি

সরিষার অন্দরে ভুতের এহেন অনুপ্রবেশ শুধু চিন্তার বিষয়ই নয়, রীতিমতো ভীতিকর!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

স্বচ্ছতার কোনো নমুনাই এখনো দেখা যাচ্ছে না।
আমাদের সরকার এগুলোকে সবসময়ই লজ্জার ভেবেছেন এবং ঢেকে রাখতে চেয়েছেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হায় রে !
কবে যে পরিস্থিতি বদলাবে...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।