ফয়সাল মোস্তফার গ্রীন ক্রিসেন্ট

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ২৭/০৩/২০০৯ - ৫:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মার্চের ২৫ তারিখে ভোলার বোরহানুদ্দিন উপজেলার এক দুর্গম এলাকায় এক দুর্গসদৃশ মাদ্রাসা থেকে ড়্যাব-৮ এর সদস্যরা বিপুল সংখ্যক অস্ত্র-গুলি-বিস্ফোরক-জঙ্গিচটি উদ্ধারের পাশাপাশি চারজনকে আটক করেছেন। মাদ্রাসার প্রশিক্ষণার্থী ছাত্ররা বয়সে বালক ও কিশোর, এবং যে ১১জন অভিযানের সময় মাদ্রাসায় অবস্থান করছিলো, প্রত্যেকেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মাদ্রাসাটি দুর্গসদৃশ এ কারণে, একে ঘিরে গভীর পরিখা খনন করা রয়েছে, এবং ভেতরের কম্পাউন্ডটি বাইরে থেকে দেখা সম্ভব ছিলো না।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রীন ক্রিসেন্ট নামে একটি সংস্থার আর্থিক আনুকূল্য ও দিকনির্দেশনায় পরিচালিত এই মাদ্রাসা, যে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ফয়সাল মোস্তফা নামে এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক। এ সংবাদ বৃটেনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে, এবং বৃটিশ চ্যারিটি কমিশনে নিবন্ধিত সংস্থা জঙ্গিবাদের সামরিক কর্মকান্ডে মদদ দিচ্ছে বলে নানা মহলের প্রতি ধিক্কার উচ্চারিত হয়।

গ্রীন ক্রিসেন্ট সম্পর্কে যা জানা গেলো, সংস্থাটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বৃটিশ ও বাংলাদেশী ছাত্রদের উদ্যোগে। বৃটেনে এটি ১০৯৯২৩৩ নাম্বারে নিবন্ধিত। বাংলাদেশের একাধিক জায়গায় এবং পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে এদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ও হাসপাতাল রয়েছে।[২, ৩]

ফয়সাল মোস্তফা সম্পর্কে যা জানা যায়, তিনি রসায়নের ছাত্র, মেটাল ইরোশনের ওপর পিএইচডি করেছেন, ২০০৯ সালে তার বয়স ৪৫। বিভিন্ন কারণে তিনি একাধিকবার আইনশৃঙ্খলাপ্রয়োগকারীবাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন এবং নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন ও শাস্তি পেয়েছেন।

১৯৯৬ সালে ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে তাকে বাড়িতে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখার অভিযোগ থেকে খালাস পান। কিন্তু একটি বেআইনী আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে তিনি অপরাধী সাব্যস্ত হন, তাকে ৪ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়, এবং আজীবন আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার হারান।[১, ২]
২০০২ সালে বার্মিংহ্যামে গ্রেপ্তার হয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনার অভিযোগ থেকে মোস্তফা খালাস পান। সহঅভিযুক্ত বাংলাদেশী-বংশোদ্ভূত মইনুল আবেদিন ২০ বছরের কারাদন্ড পান। এর পর থেকেতিনি বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা MI5 এর নজরদারীতে রয়েছেন। [১, ২]

গোয়েন্দারা ২০০০ সালে বার্মিংহামের একটি ঠিকানায় আবর্জনার ঝুড়ি থেকে প্লাস্টিকের দস্তানা উদ্ধার করেন, যেটিতে HMTD নামের উচ্চশক্তির বিস্ফোরকের আলামত পাওয়া যায়। আবেদিনের Fallows Road, Sparkhill এর ভাড়া করা বাসাটি কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি রাখার জন্য ব্যবহার করা হতো। পুলিশ বাড়িটিতে রেইড করলে আবেদিনকে পাশের একটি বাড়িতে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর মোস্তফাকে বার্মিংহাম নিউ স্ট্রিট রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আবেদিনের স্টোররুমে ডিটোনেটর, সালফিউরিক এসিড ও মুখে পরার মুখোশ উদ্ধার করা হয়। মোস্তফা জানান, রকেট নির্মাণে আবেদিনের আগ্রহের সূত্রে তার সাথে তিনি পরিচিত হন। [৫]

২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টে তিনি আটক হন। দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে তিনি লাগেজে একটি গ্যাসচালিত পিস্তল আর প্রাইমারসহ ধরা পড়েন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি উল্লেখ করেন, এগুলি তিনি শিকারের উদ্দেশ্যে সাথে নিয়েছিলেন। এ অপরাধে তার সাজার আদেশ বিলম্বিত করা হয় (সাসপেন্ডেড সেন্টেন্স)। [১, ২]

সংবাদসূত্রে জানা যায়, ফয়সাল মোস্তফা ভোলার প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী মেজর (অব) হাফিজের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে।[৪]

2009_03_26_2_3_b

মাদ্রাসায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও এ সংক্রান্ত মামলায় ড়্যাব-৮ ফয়সাল মোস্তফাকে আসামী করেনি।[৪]

2009_03_27_1_2_b
2009_03_27_2_10_b

ফয়সাল মোস্তফা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক। [২]

গুগলম্যাপে ইংল্যান্ডে গ্রীন ক্রিসেন্টের অফিসের ঠিকানাটি দেয়া হলো।[৩]

greencrescent



সূত্রসমূহঃ
[১] দ্য গার্ডিয়ান, ২৬.০৩.২০০৯।

[২] টাইমস অনলাইন, ২৬.০৩.২০০৯।

[৩] গ্রীন ক্রিসেন্টের ওয়েবসাইট।

[৪] দৈনিক প্রথম আলো, ২৬ ও ২৭ মার্চ, ২০০৯।

[৫] বিবিসি, ১৭ জানুয়ারী, ২০০২।


মন্তব্য

সুজন চৌধুরী এর ছবি
গোপাল ভাঁড় এর ছবি

তাইলে ওহন কি হইবো?
--------------------------------------------
<ঘ্যাচাত, ঘ্যাচাত, ঘ্যাচাত> - আমার সিগনেচার

--------------------------------------------
বানান ভুল হইতেই পারে........

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

!!!

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এই 'ভদ্রলোক' তো খুবই সমৃদ্ধ একটা প্রোফাইল যুক্ত...

-------------------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

কালকেও ড়্যাবের মহাপরিচালক ভয় পাইতে না করে দিছে; বলছে সব আন্ডার কন্ট্রোল।
কিন্তু ভয় তো আর পেছন ছাড়তেছে না!

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

হোসেন [অতিথি] এর ছবি

পরজীবির মত ছড়িয়ে যাচ্ছে এই জিহাদী জোশ, আমরা যদি এভাবেই পাশ কাটাতে থাকি তাহলে আক্রান্ত হতে দেরী হবে না।লোকে বলে কু ক্লুক্স ক্ল্যান রা ফিরে আসে যুগে যুগে না না চেহারায়,আর ছড়ায় বিষবাষ্পের জীবানু।

অমিত আহমেদ এর ছবি

থাবড়ানো দর্কার।
অবস্থা এখন খুবই খারাপ।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

অপ্রিয় এর ছবি

আমি কিন্তু অতটা উদ্বিগ্ন নই? ছয় বছর ধরে খালেদা - নিজামী যৌথভাবে যে মৌলবাদের ডিমে তা দিয়েছে তা থেকে আরও খারাপ কিছু হলেও অবাক হতাম না। আমার বিশ্বাস, সরকারী প্রশ্রয় ছাড়া এদেশে মৌলবাদের উত্থান হতে পারে না। তাই সবাই যেন চেষ্টা করি মৌলবাদীরা যেন কোন ভাবেই রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার না হতে পারে।

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অতীতের ঘটনাগুলোর কথা যদি মনে করেন তাহলে দেখতে পাবেন প্রায় সব ক্ষেত্রেই অর্থায়ণকারী গোষ্ঠীকে মিডিয়া, বিচার ও শাস্তির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। একই ট্রিটমেন্ট পায় মূল পরিকল্পক ও আখেরে বেনেফিসিয়ারী গোষ্ঠী। শায়খ আব্দুর রহমান বা বাংলা ভাইদের তড়িঘড়ি করে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় (অবশ্য তারা ঐ শাস্তিই প্রাপ্য); কিন্তু অনুচ্চারিত থেকে যায় কাদের পরিকল্পনায়, কাদের অর্থে, কাদের ট্রেনিং-এ, কাদের আশ্রয়ে তারা ঐসব অপকর্মগুলো করেছিল। জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদ টিকে যাবার অনেকগুলো কারণের মধ্যে এই কারণটা অন্যতম।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

মুশকিল হচ্ছে, এই দায়গুলি কেউ কাঁধে নেয় না। পত্রিকার কাটিঙে দেখবেন, পুলিশ সুপার দায়ী করেছেন ড়্যাবকে, ড়্যাব দায়ী করেছে ওপরমহলকে, ওপরমহলকে আর কিছু জিজ্ঞাসার সুযোগ আসেনি সাংবাদিকদের। পরবর্তীতে এই ফয়সাল মোস্তফা হয়তো আরো ব্যাপক কোন কুকাম করবে। তার দায়ও দেখা যাবে কোন চুনোপুঁটির ঘাড়ে চাপিয়ে বাকি সবকিছু ধামাচাপা দেয়া হবে।

চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার গর্ত খুঁড়ে প্রকান্ড ড্রাগনের লেজ বার করা হচ্ছে এতোদিনে। জানা গেছে, এর সাথে জড়িত ছিলো ডিসি-পোর্ট, তৎকালীন এনএসআই প্রধান, তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্তা। একটা বড় অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করতেই ছয় সাত বছর পার হয়ে যায়, আর রাজনৈতিক ল্যাবিরিন্থে একবার এসব ব্যাপার ঢুকিয়ে দিতে পারলে দোষীদের শাস্তি তো দূরের কথা, তাদের টিকিও স্পর্শ করা যায় না। এই সংস্কৃতি থেকে বেরোতে না পারলে বাংলাদেশের কোন আশা নেই। দায়িত্ববান ব্যক্তিবর্গের অসংখ্য অনিষ্পন্ন অপরাধ বাংলাদেশের এগিয়ে যাবার পথে গাছের গুঁড়ির মতো পড়ে আছে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সে কি কথা !!

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- প্রশ্ন হলো, পাকমন পেয়ারী গ্রীন ক্রিসেন্টের মালিক ফয়সালকে কেনো আসামী করা হলো না! তার বিরুদ্ধে এতোসব অভিযোগ কি আমাদের র‌্যাব প্রশাসনের চোখে পড়েনি নাকি তাতে কারো চোখ রাঙানি আছে!!

বড়ই চিন্তার ব্যাপার। চিন্তিত
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

বিপ্লব রহমান এর ছবি

এইসব রাঘব-বোয়ালরা সবসময়ই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যান। আর ধরা পড়েন কিছু চুনোপুঁটি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।

...জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বক্তৃতাবাজীই যেনো শেষ কথা!


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

মোস্তফার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।
------------------------------

--------------------------------------------------------

থার্ড আই এর ছবি

আমি নিজ একটা লেখা লিখব ভেবেছি, সব মাল মসল্লা নিয়ে দেখি হিমু লেখা নামিয়ে দিয়েছেন। গুড পোস্ট।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পোস্টটা খুবই তথ্যবহুল হয়েছে। এরকম সমৃদ্ধ প্রোফাইলের মানুষ কিভাবে পার পেয়ে যায়!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে...

তানবীরা এর ছবি

এই তথ্যবহুল পুষ্ট কি কামে আইব? ফয়সলতো রইবো ধরা ছোঁইয়ার বাইরেই আজীবন। তার থেকে হিমু ফয়সলরে উড়াইয়া দেওনের একটা পিলান দিতে কাম হইত।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সিরাত এর ছবি

[একটু অন্য প্রসঙ্গ: আচ্ছা ড়্যাব লিখতে হয় কেন? র এর বদলে ড় ব্যবহার করা লাগে কেন? এইটা তো সামহোয়্যারইনের ফোনেটিকে পারা যায়, আর সচলায়তন আর সামহোয়্যারইনের ফোনেটিক সিস্টেম দুইটা তো কাছাকাছি! এইটা কবে ঠিক হবে? আরকেটা পেইন হল ডট দিতে পারি না ফোনেটিক। কোন উপায় কি আছে নাকি?]

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

আরকেটা পেইন হল ডট দিতে পারি না ফোনেটিক। কোন উপায় কি আছে নাকি?

পর পর তিনটা দাড়ি দিলে সেটা ট্রিপল ডটে কনভার্ট হয়ে যায়, সিংগেল ডট দেয়ার মনে হয় সিস্টেম নাই ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।