মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনলাইন ডকুমেন্টেশন নিয়ে কিছু প্রস্তাব

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ২৮/০৩/২০০৯ - ৫:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে অনেক বাক্যব্যয় হচ্ছে, নিজেদের "কনফিউজড" দাবি করে অনেকে বলছে তারা প্রকৃত ইতিহাস জানতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বাংলাদেশে রীতিমতো সরকারী উদ্যোগে বিকৃত করা হয়েছে একাধিকবার, তাই পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত তথ্যের সত্যতা নিয়ে যেমন অনেকের সন্দেহ রয়েছে, অপ্রতুলতা নিয়েও রয়েছে অভিযোগ।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যেহেতু একটি পৃথিবীব্যাপী প্রভাব বিস্তৃত করে ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষের জীবনের ওপর প্রত্যক্ষ চাপ সৃষ্টি করেছে, তাই বিভিন্ন ফ্রন্টে এর বর্ণনা সংগ্রহ ও নেটভুক্ত করা জরুরি।

মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেকেই বই লিখেছেন, তার মাঝে অনেকগুলিই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে বিবেচিত।

এ কথা উপলব্ধি করা সহজ যে লেখকরা বই বিক্রি করে আর্থিক লাভের আশায় সেগুলো লেখেননি। লিখেছেন তাঁর চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের কথা গ্রন্থিত আকারে ইতিহাস পাঠের সহায়ক গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবেই।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনলাইন ডকুমেন্টেশনের প্রথম পর্যায়ে এই গ্রন্থের লেখক ও প্রকাশকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরি বলে আমার কাছে মনে হয়। তাঁরা যদি তাঁদের গ্রন্থগুলির একটি ইউনিকোড সংস্করণ অনলাইনে কোথাও ভুক্তি হিসেবে রাখেন, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তা একটি আকর হিসেবেই বিবেচিত হবে।

সচলের সদস্য ও পাঠকদের কাছে অনুরোধ, আপনারা যদি পরিচিতমহলে এমন কোন গ্রন্থকারের সঙ্গে আলাপের সুযোগ পান, প্রস্তাবটি তাঁকে বিবেচনার অনুরোধ করবেন।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লিপিবদ্ধ ইতিহাস একত্রীকরণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। গত ৩৮ বছরে বিভিন্ন পত্রিকায় দু'টি প্রধান দিবস, ২৬শে মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরে প্রকাশিত রচনা ও বিবরণসমূহ ইউনিকোডিত করা যেতে পারে। ইউনিকোড আকারে ভুক্ত করার উদ্দেশ্য একটাই, গুগল পরাশক্তি যেন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উদ্দিষ্ট তথ্যকে মানুষের সামনে এনে দিতে পারে। পিডিএফে তা এখনো সম্ভব নয়।

তৃতীয় পর্যায়ে আমরা আমাদের নিকটজনের কাছ থেকে তাঁদের চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় ঘটনাসমূহ তারিখ (কমপক্ষে মাস) অনুযায়ী অনুলিখনের চেষ্টা করতে পারি। আমি এ নিয়ে একটি ক্ষীণ উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু সাড়া পাইনি বলে তা সামনেও বাড়েনি। সম্ভাবনা প্রবল যে ভবিষ্যতেও সাড়া মিলবে না, আমাদের নিকটজনেরা তাঁদের চোখে দেখা ঘটনাগুলি সঙ্গে নিয়েই সমাধিস্থ হবেন। তারপরও, এ কথা মাথায় রেখেই একটা চেষ্টা করে দেখা যায়।

এ ধরনের বড় কাজে যে স্কেলের সমন্বয়, আর্থিক প্রণোদনা ও প্রচার প্রয়োজন, তা এখনও আমাদের আয়ত্বের বাইরে। তবে ভবিষ্যতে আয়ত্বে আসবে না, এমন ভাবারও কোন কারণ নেই।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার প্রস্তাবের প্রথমটা আর তৃতীয়টা আমার পরিকল্পনার সাথে অনেকটা মিলে।
দ্বিতীয়টার ধারে কাছে আমি নাই।

আমি গত দুই বছর ধরে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি মুক্তিযুদ্ধকালীন ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণগুলো। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের। আমার কাছে অনেকগুলো বই আছে। আরো অনেকেই লিখেছেন, সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। প্রতিবছরই নতুন নতুন অনেকে লিখছেন।

আর যারা লিখছেন না, তাদেরটা জেনে নিজেই লিখে রাখার কাজ শুরু করেছি সেও দুই বছর আগে। আসলে এটা আমার অন্য একটা প্রজেক্টের অংশ ছিলো। প্রজেক্ট বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু এই কাজগুলো চলছে।

আমাদের পরিচিত মানুষদের মধ্যে অনেকের মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতি আমি সংগ্রহ করছি। এগুলো নিয়েই একটা বই করার ইচ্ছা আমার আছে। খুব শীঘ্রই।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মুশফিকা মুমু এর ছবি

তিনটাই খুব ভাল উদ্যোগ চলুক , যেভাবে পারি হেল্প করব

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

হোসেন [অতিথি] এর ছবি

সামহোয়ারে কিছু ইবুক হয়েছিল। আমি লিংক দিয়ে যাব

অপ্রিয় এর ছবি

আছি...সহযোগীতা করব।

অনলাইনে পাওয়া তথ্যগুলোও লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন।

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

সবজান্তা এর ছবি

এই কাজের দৃশ-টান্ত হতে পারেন লেখক শাহাদুজ্জামান।

ক্রাচের কর্নেল - উপন্যাস হিসেবে উচ্চমানের না হলেও, সাবলীল ভাষায় বর্নিত ইতিহাস হিসেবে চমৎকার। আমার হিসেব যদি ভুল না হয়ে থাকে, তবে তরুন প্রজন্মের আমার মত ইতিহাস অজ্ঞদের অনেক কিছুই জানার আছে এ উপন্যাস থেকে।

যাদের সাধ্য আছে এমন মনকাঁড়া ভাষায় লিখতে পারেন, তাঁদের অবশ্যই এগিয়ে আসা উচিত।


অলমিতি বিস্তারেণ

নীল ভ্রমর [অতিথি] এর ছবি

খুবই ভাল প্রস্তাব। আমিও সাহায্য করব যথাসাধ্য।

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

আমি সাথে আছি।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

big minds, big thoughts হাসি

___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

রণদীপম বসু এর ছবি

বিষয়টাকে খুবই কাঙ্ক্ষিত ও জরুরি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবেই মনে করি। এটাকে নিজের ইচ্ছায় ও মননে লালন করছেন বলে হিমুকে সকৃতজ্ঞ অভিনন্দন জানাই। এ ব্যাপারে অনলাইনে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে উদ্যোগী হচ্ছেন নিজ নিজ অবস্থান সক্ষমত এবং নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ ধারণ করে। সাম-ইন ব্লগের কয়েকজন ব্লগার 'ফিরে দেখা ৭১' নামে একটা ই-বুক করেছিলেন (হাইপার লিঙ্কের পোস্ট থেকে ডাউনলোড করে নিতেন পারেন), কেউ কেউ ওয়েবসাইট খুলেছেনও যেমন 'বাংলাদেশ ১৯৭১', গ্রুপ আছে 'জন্মযুদ্ধ' ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু উদ্যোগগুলো যথার্থভাবে হয়তো এগুচ্ছে না। আমরা আবার চেষ্টা করে দেখতে পারি। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির অহঙ্কার এবং নিজস্ব পরিচয়ের মার্কিং পয়েণ্ট। অতএব সবগুলো উদ্যোগকে নাগালের মধ্যে রাখা এবং নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে আমাদেরকেই এগিয়ে যেতে হবে।
আপনি উদ্যোগ নিন, ক্ষমতা অনুযায়ী সাথে আছি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রানা মেহের এর ছবি

তৃতীয় পর্যায়ে আমরা আমাদের নিকটজনের কাছ থেকে তাঁদের চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় ঘটনাসমূহ তারিখ (কমপক্ষে মাস) অনুযায়ী অনুলিখনের চেষ্টা করতে পারি। আমি এ নিয়ে একটি ক্ষীণ উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু সাড়া পাইনি বলে তা সামনেও বাড়েনি।

এ উদ্যোগ অবশ্যই সামনে বাড়বে।
আজ নয় কাল
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।