বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রটিকেট দিয়ে বিনাপয়সায় একটা বড়সড় জায়গা জুড়ে চলাফেরা করা যায়। সাম্প্রতিক সেমেস্টারে সেই জায়গার সীমা আরেকটু বেড়েছে। উত্তরে পাডারবর্ন শহর পর্যন্ত ট্রেনে এখন এই টিকেট দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবো।
পাডারবর্নে আগেও গিয়েছি, শহরটা ঘুরেও দেখেছি, তবে ততক্ষণে আলো কমে এসেছিলো। এবার ঠিক করলাম, ক্যামেরা নিয়ে শুধু ছবি তোলার জন্যেই চক্কর দেবো ওখানে। ইরিনাকে জিজ্ঞেস করতেই সে একপায়ে খাড়া।
বিষ্যুদবার ট্রেনে চড়লাম সকালে। কাসেলে তখন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। তবে হোফগাইজমার পার হবার পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে এলো। হেসেন প্রদেশ ছেড়ে যখন নর্ডরাইনভেস্টফালেন-এ পা রাখলাম, তখন আকাশ পুরো পরিষ্কার। আপসোস হলো, কেন ট্রাইপডটা সাথে করে নিয়ে এলাম না, কিছু দারুণ এইচডিআর এর খোরাক তোলা যেতো।
পাডারবর্ন শহরটা পাডার নদীর উৎসস্থল (পাডারবর্ন মানেও তা-ই)। নদী কথাটা শুনলে আমরা যা ভাবি, এ মোটেও তেমন কিছু নয়, শহরের ভেতরে এই নদী ধরে লোকে পায়ে হেঁটেও এগোতে পারবে। নদীটা মাটির নিচ থেকে বেরিয়েছে, প্রস্থ বড়জোড় পাঁচ মিটার হবে, স্বচ্ছ টলটলে জল, দুই পার বাঁধানো, নদীর পারে পায়ে হাঁটার পথ, চেস্টনাট আর ম্যাগনোলিয়া গাছের সারি, নদীতে ইতস্তত সাঁতরে বেড়াচ্ছে হাঁসের জুটি। নদীর পারে বসে আড্ডা দিচ্ছে বৃদ্ধবৃদ্ধার যুগল, স্কুলছুট ছেলেমেয়ে। কাসেলে চেস্টনাট গাছগুলোতে এখনও ঠিকমতো পাতা গজায়নি, পাডারবর্নে সেগুলোতে ভরপুর ঘন্টার মতো থোকা থোকা পাতা।
পাডারনদীর উৎস ছাড়া পাডারবর্নে দেখার মতো আর আছে এর ক্যাথেড্রাল আর শ্লস নয়হাউস, একটা দ্বীপপ্রাসাদ। আর বাকি শহরটাও অপূর্ব সুন্দর, অনেক ঝলমলে গীর্জা আছে, আর আছে মোড়ে মোড়ে ফুলের গাছ।
পাডারবর্নাররা সম্ভবত পণ করেছে গ্রীষ্মে পুরো শহরটাই ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখবে, পথের পাশে পাথরের টাবে, ল্যাম্পপোস্টের ওপর, রংবেরঙের ফুলের গাছ। নার্সিসাস, বোগেনভিলিয়া ছাড়াও নাম জানি না এমন অনেক ফুল দিয়ে বোঝাই শহর। উঁচু বিল্ডিং নেই বললেই চলে, বাসের মডেল একটু পুরনো, বাড়িঘরও পুরনো আমলের। দোকানপাট সবই রঙচঙে। কাসেলে প্রচুর বিদেশী বাস করে, কিন্তু পাডারবর্নে ভিনদেশী মুখ প্রায় নেই বললেই চলে। ইরিনা এক পর্যায়ে বলেই ফেললো, কাসেলে তার নিজেকে কখনো আগন্তুক মনে হয় না, কিন্তু পাডারবর্নে এসে তার মনে হচ্ছে সে বিদেশে আছে।
অনেকগুলি ছবি তুলেছি ঘুরতে ঘুরতে, কিছু তুলে দিলাম এখানে।
১. শ্লস নয়হাউস
শহর থেকে একটু দূরে একটা ঝিলের মধ্যে এই প্রাসাদ। এখন এটার মধ্যে একটা কারিগরী স্কুল (রেয়ালশুলে) চালু করা হয়েছে। আমরা ভেতরে ঢোকার পর একগাদা পিচ্চি এসে হাজির। একজন এসে জিজ্ঞেস করলো, "জিপিএস অস্টারআইয়ারজুখে (ঈস্টার অন্ডসন্ধান) কোথায় হচ্ছে বলতে পারেন?" ঈস্টারে এখানে সেখানে ডিম লুকিয়ে খুঁজে বার করার একটা মজার খেলা জার্মানীতে জনপ্রিয়, কিন্তু তাই বলে জিপিএস দিয়ে! প্রাসাদের ভেতরে ঢোকার পর বুঝলাম, জিপিএস ছাড়া উপায় নেই। বিশাল বাগান ভেতরে, নানা রঙের ফুলে সাজানো, আর গোটা প্রাসাদ ঘিরে ফুটে আছে হলুদ আর সাদা নার্সিসাস। ভেতরে শ'খানেক পিচ্চিকে খেলার নিয়মকানুন বোঝাচ্ছেন কয়েকজন বয়স্ক মানুষ।
২. পাডারের পারে
পাডারের পারে একটা ধাতব ভাস্কর্য আছে। নদীর পারে বছরের পর বছর কাপড় ধুয়েছেন যেসব মহিলা, তাঁদের স্মরণে এই ভাস্কর্য।
৩. পাডারবোয়র্নার ডোম
৪. পাডারবর্ন শহর
মন্তব্য
দূর্দান্ত গুছানো, পরিপাটি
আপনার কয়েকটা ছবিতে পারস্পেকটিভ খুবই চমৎকার হয়েছে ...
ল্যাম্পপোস্টে ফুলের আইডিয়াটা চমৎকার...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
ইরিনার ছবি কই?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
চমৎকার, হিমু ভাই। খুব ভাল লাগল।
কোথাও বেড়াতে গেলে, ফিরে এসে এরকম সচিত্র পোস্ট দিয়েন, তাহলে নিজেও ঘুরে দেখতে পারব জায়গাটা।
দুর্দান্ত।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ইরিনা সম্পক্কে ঝাতি আরো ঝান্তে ছায়.....
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
হিমু ভাই,
আপনি মুহতারামার দুঃখ ভুলতেই কি ইরিনাকে ধরলেন?
খাশা, এই ইরিনাটা কে?!?!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
- হ, বুঝছি। তোরেও তওবা পড়াইতে হৈবো। বেগানা নারীর লগে নাছাড়াগো দেশ ঘুইড়া বেরাস ব্যাটা হুজুর কোনখানকার!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছোট্ট একটা টিপস: জাস্ট হরাইজনটা খেয়াল রেখেন, হরাইজনটা যেন সমান্তরাল থাকে, যেখানে সম্ভব। যেসব ছবি দেখে বুঝা যায় উদ্দেশ্য ছিল সোজা ছবি তোলা, কিন্তু হাত নড়ে গিয়ে হরাইজন বেঁকে গেছে, সেগুলো দেখতে অস্বস্তিকর লাগে। পিকাসোতে একটা টুল আছে 'স্ট্রেইটেন', সেটাও বেশ কাজ দেয়।
আপনি ছবি তোলার উদ্দেশ্য ভুল অনুমান করেছেন। "হাত নড়ে" গিয়ে হরাইজোন বাঁকা তোলার অভ্যাস আমার নেই। কিছু কিছু ছবিতে সূর্যকে সামান্য এড়াতে গিয়ে ফ্রেমে হরাইজোন সমান্তরাল রাখিনি, আর আমার লেন্সটা ১০-২০ মিমি, দুই পাশে বেঁকে যায় বলে ১০ থেকে ১৪ মিমি এর মধ্যে দিগন্ত সোজা রাখা সব সময় সম্ভব হয় না।
নো অফেন্স।
বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে এই প্রথম কোনো নিক দেখলাম 'মিসেস' সহযোগে।
নিজের দেশকে কবে যে এমন পরিপাটি গোছানো দেখতে পাব জানি না...
বিদেশ ভ্রমনের ইচ্ছা অনেকদিনের, আপনার ছবিগুলো দেখে ইচ্ছাটা আরও কিছুটা বেড়ে গেল।
(তাহসিন গালিব)
আহা, এইখানে কোনোদিন থাকা হবে না।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
(ইচ্ছা করে মন্তব্যটা দুইবার দেই নাই) আহা, এইখানে কোনোদিন থাকা হবে না।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
ছবিগুলো একদম ছবির মত সুন্দর!! কী ঝকঝকে পরিষ্কার!!
পাডারবর্ণে যাইনি কখনো। তবে আমার এক বন্ধু কেথাও যাবার অযুহাত হিসেবে পাডারবর্ণকে সবসময় সামনে দাঁড় করাতো। সেই থেকে বেশ পরিচিত।
ছবি খুব ভালো হয়েছে। খুবই ভালো!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ভালো হইছে!
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ
হিমু ভাইকে ধন্যবাদ জানাই এ ছবিগুলোর জন্যে।
পাডারবর্ন জায়গাটা দুর্দান্ত বলে মনে হচ্ছে...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
১০-২২ এর মজাই আলাদা
...........................
Every Picture Tells a Story
দাদারে, আমার ক্যানন ১০-২২ নাই, সিগমা ১০-২০ আছে একখান ।
ওয়াও! দারুন লাগল ছবি গুলো
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ওহ্ ! দুর্দান্ত সব ছবি !! চমৎকার...!!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কি চমৎকার সব ছবি...
কিন্তু সবকিছু এতো ঝকঝকে রাখে কিভাবে?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমি কোলন এর সাথে ডুসেলডর্ফ কিংবা ডুসেলডর্ফ এর সাথে পাঠার বনের কোন পার্থক্য বুঝি না। ইউরোপের সব সিটিই প্রায় এক ধাচের
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নাহ। সব শহরেরই আলাদা সুর আছে। একটু কান পেতে শুনতে হয় ।
অসাধারন লাগলো হিমু ভাই, অসাধারন! কি সব ছবি! অফিসে বসে বসে প্যাডারবর্নের একটা টেস্ট পেয়ে গেলাম, ধন্যবাদ আপনাকে!
নতুন মন্তব্য করুন