নাজনীন মাইক্রোফোন হাতে ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়ায়। "চুলটা ঠিক আছে, সাইফুল ভাই?"
সাইফুল বুড়ো আঙুল দেখায়। "ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু ...," ওয়ান পর্যন্ত আসতে আসতে তার কণ্ঠস্বর স্তিমিত হয়ে আসে, গো-টা শোনাই যায় না।
"আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান হেলিবন্দরের অদূরে। একটু পরেই এখানে এসে ল্যান্ড করবে একটি বিশেষ হেলিকপ্টার। বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন হেলিকপ্টার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বেল হেলিকপ্টার টেক্সট্রন ও রসুন্ধরা এভিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত অনন্য মেডিক্যাল হেলিশিপ বেল-রসুন্ধরা এস এ এইট মডেলের এই হেলিকপ্টারে চড়ে আজ গাইবান্ধার প্রত্যন্ত সাঘাটা থেকে রাজধানীতে চিকিৎসার জন্যে এসে নামছেন একজন অত্যন্ত বিশেষ ব্যক্তিত্ব।" নাজনীন একটু থামে, সে জানে, টিভির পর্দায় এখন ভাসছে বেল-রসুন্ধরার হেলিকপ্টারের একটি পনেরো সেকেন্ডের নিঃশব্দ বিজ্ঞাপন।
"আজ যিনি এই হেলিশিপ থেকে নামবেন, তাঁকে বিশেষ রাষ্ট্রীয় প্রহরায় নিয়ে যাওয়া হবে রাজধানীর বুকে স্থাপিত অনন্যসাধারণ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র আল কাহিরা হাসপাতালে।" নাজনীনের গলার স্বর টুংটাং করে বেজে ওঠে। "রাস আল খাইমার আমিরের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এ হাসপাতাল দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধুনিক হাসপাতালগুলির মধ্যে একটি। পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবার এক অনন্য নজির, এক বিস্ময়ের অপর নাম আল কাহিরা।" নাজনীন মিষ্টি করে হাসে। "স্টুডিওতে আবার দর্শকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি সামিরা সুহার কাছে।"
সাইফুল তর্জনী আর বুড়ো আঙুল গোল করে দেখায়। কাজ শেষ। ক্যামেরা নিয়ে ভ্যানের ভেতরে ঢোকে সে, নাজনীন একটা সিগারেট ধরায়। দর্শকরা এখন সুহার লো-কাট ব্লাউজের বিষুবরেখায় চোখ রেখে তার আধো আধো যৌনাবেদনে ভরা কণ্ঠে শুনবে খবরের বাকিটা।
নাজনীন সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে ডানে তাকায়। এখনো এসে পৌঁছায়নি সব ভ্যান। মোটে চারটা দেখা যাচ্ছে। একত্রিশটা টিভি চ্যানেল, আজ এ খবর কি সবাই কাভার করবে না? দ্বীন টিভি আর নিশান নিউজ নেটওয়ার্কস আসবে না হয়তো, কিংবা কে জানে, হয়তো ওরাও আজ সবার আগে ছুটে আসবে, ব্যাকগ্রাউন্ডে দোয়া মাহফিল চলতে থাকবে সাঘাটার আঘাটা থেকে উঠে আসা ঘাটমড়া লোকটার জন্য। নাজনীন পেছনে তাকায়, হেলিপ্যাডের চারদিকে প্রাচীন বৃক্ষের মতো নিষ্কম্প অটল সব ছায়ামূর্তি দাঁড়ানো, হাতে অস্ত্র। হেলিপ্যাডের ভেতরে কেউ ঢোকার চেষ্টা করলে গুলি করা হবে। তবে সবার হাতে হয়তো রাবার বুলেট ভর্তি রায়টগান নেই, দুয়েকজন হয়তো খাঁটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েই দাঁড়িয়ে।
সাইফুল ভেতর থেকে বলে, "আপা, চা খাইবেন?"
নাজনীন হেঁকে বলে, "বিড়িটা শেষ কইরা লই, সাইফুল ভাই।"
সাইফুল ফ্লাস্ক খুলে এক কাপ চা নিয়ে বাইরে আসে। তার মুখ শুকনো। "আমার কিন্তু একটু টেনশনই লাগতাসে, আপা।"
নাজনীন নিষ্ঠুরভাবে হাসে। "টেনশনের কিচ্ছু নাই, সাইফুল ভাই।"
সাইফুল বলে, "কিন্তু কামটা তো বেআইনী!"
নাজনীন সিগারেটে টান দেয় বুক ভরে, "আইনের ব্যাপারটা বিগ বস দেখবে।"
সাইফুল বলে, "যদি কোনো সমস্যা হয়?"
নাজনীন বলে, "সমস্যা হবে না।"
সাইফুল চায়ের কাপে চুমুক দেয়, তার বিব্রত চোখ দু'টি মাটির দিকে। নাজনীন ধোঁয়া ছেড়ে সাইফুলকে দেখে আড়চোখে। লোকটা বড় ভালোমানুষ। কিভাবে সে এই নির্মম শহরে করে-কর্মে খাচ্ছে কে জানে!
চোখের কোণে আলো দেখতে পেয়ে নাজনীন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। আহ! আসছে শেষ পর্যন্ত। নিশ্চিত নিষ্ঠুর হায়েনার বাহিনীর মতো মাঠের অন্য প্রান্তে এসে থামছে এক একটা দীর্ঘ নিউজ ভ্যান, তাদের শরীরের বিভিন্ন প্রান্তের আলোয় লাল হয়ে উঠছে উঁচু ঘাস। নাজনীন চোখ কুঁচকে দেখার চেষ্টা করে, দ্বীন টিভির লোগোটা দেখা যায় কি না।
সাইফুল এক চুমুকে চায়ের কাপটা খালি করে আবার ভেতরে ঢোকে।
"সাইফুল ভাই, বাইনোকুলারটা লন দেখি একটু।" নাজনীন তাড়া দেয়।
সাইফুল ড়্যাক থেকে বাইনোকুলারটা নামিয়ে খাপ খুলে এগিয়ে দেয় নাজনীনের দিকে।
মিনিট তিনেক পর নাজনীন চোখ থেকে হতাশ হয়ে নামায় বাইনোকুলারটা। আসেনি দ্বীন টিভি। নিশান নিউজও না।
"বাদ পড়লো কারা?" সাইফুল নিস্পৃহ গলায় জিজ্ঞেস করে।
"কইতারি না, সাইফুল ভাই। দ্বীন আসে নাই। নিশানও না। ইভাটিভিও দেখলাম না।" নাজনীন বাইনোকুলারটা ফিরিয়ে দেয় সাইফুলের কাছে। "রাইখা দ্যান।"
সাইফুল বাইনোকুলারটা খাপে ঢোকাতে ঢোকাতে কান পেতে কী যেন শোনে। তারপর লাফিয়ে ক্যামেরা তৈরি করে। "আপা আপনে রেডি হন। নিউজরুমে ফোন লাগাই। আইসা পড়ছে।"
নাজনীন কানের পেছনে হাত রেখে শোনার চেষ্টা করে। একটা ক্ষীণ শুপশুপশুপ শব্দ আসছে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে। সাঘাটা তো ওদিকেই হবে। একেবারে কাকের মতো সোজা উড়ে আসছে যান্ত্রিক পাখিটা।
সাইফুল একটা জ্যাকেট গায়ে বেরিয়ে আসে, নাজনীন তার জ্যাকেটটা হুড়োহুড়ি করে চড়িয়ে নেয় গায়ে। মাউথপিসটা কানের সাথে ঠিকমতো ফিট করে নিয়ে দাঁড়ায় নাজনীন, "সাইফুল ভাই, টেস্ট, মাইক্রোফোন টেস্টিং, রেডি, ওয়ান টু থ্রি ...।"
সাইফুল বুড়ো আঙুল দেখায়, সেইসাথে চারপাশ আস্তে আস্তে উজ্জ্বল আর সশব্দ হয়ে ওঠে আগুয়ান হেলিশিপের উপস্থিতিতে।
নাজনীন সাইফুলের মুখের নিঃশব্দ গো অনুসরণ করে বলতে থাকে, "এই মুহূর্তে আমাদের ওপরে ভাসছে সেই হেলিশিপটি, যাতে শায়িত রয়েছেন একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। সমগ্র বাংলাদেশ উৎকণ্ঠা আর শঙ্কা নিয়ে চেয়ে আছে এই বিশেষ হেলিশিপটির দিকে। নিরাপত্তার কারণে আমরা হেলিপ্যাডের ভেতরে ঢুকতে পারবো না, কিন্তু আমরা অপেক্ষা করছি আল কাহিরার বিশেষ অ্যামবুলেন্সটির জন্য ... এবং সেটি এখন পূর্ণবেগে হেলিপ্যাডের দিকে ছুটে আসছে।"
সাইফুলের ক্যামেরা ঘুরে যায়, চাঁদ-তারা আঁকা বিরাট সাদা অ্যামবুলেন্সটি হেলিগ্রাউন্ডে প্রবেশ করে মেরুভল্লুকের মতো, পেছন পেছন ছুটে আসে তিনটি জলপাই রঙের এপিসি। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে হলে নাজনীনের মতো বাকি সাংবাদিকরাও ছুটে গিয়ে অ্যামবুলেন্সের ডাক্তারকে ঘিরে ধরতো, তার বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করতো, কিন্তু গতকাল বিশেষ টেলিকনফারেন্সে ব্রিফ করার সময় এই অপারেশনের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কর্নেল টিক্কা আলম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, অ্যামবুলেন্সের গতিরোধের চেষ্টা কেউ করলে বা কর্ডন ভেঙে কেউ ঢুকতে চাইলে তাকে গুলি করা হবে। রং টিভির ঝুমকা কামাল মধুর হেসে জিজ্ঞেস করেছিলো, বুলেটটা রাবারের নাকি আসল, কিন্তু কর্নেল টিক্কার রসবোধ নেই, সে কর্কশ গলায় বলেছিলো, ম্যাডাম, পাছায় রাবারের গুলি লাগলেও ভয়ানক ব্যথা লাগে বলে শুনেছি। কেউ আর কিছু বলেনি, ঝুমকার বিব্রত হাসিটা ফ্যাকাশে না হওয়া পর্যন্ত অসভ্য কর্নেল চোখ লাল করে তাকিয়েই ছিলো তার দিকে।
এপিসি থেকে ক্ষিপ্র গতিতে বেরিয়ে আসে কয়েকজন কমব্যাট পোশাক পরা সেনা, চোখের পলকে একটা হলুদ কালো স্ট্রাইপের কর্ডন তৈরি করে ফেলে তারা। দ্বিতীয় ক্যারিয়ারটা থেকে যারা বেরোয় তাদের হাতে অস্ত্র চকচক করে ওঠে সাংবাদিকদের ফ্লাডগানের আলোয়।
চারদিক কাঁপিয়ে প্রকাণ্ড হেলিশিপটা নামে হেলিপ্যাডে, আশপাশে কিছু শুকনো খড়কুটো নাচতে থাকে ভীরু চড়াইয়ের মতো। মাউথপিসটা মুখের কাছে রেখে নাজনীন বলে চলে, "এইমাত্র হেলিশিপ মাটি স্পর্শ করলো। আল কাহিরার অ্যামবুলেন্স টিম এখন হেলিকপ্টার থেকে অ্যামবুলেন্সে নিয়ে যাবেন সেই মহান ব্যক্তিকে, যাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ আজ সমগ্র বাংলাদেশকে স্পর্শ করেছে।"
সাইফুলের ক্যামেরা সশস্ত্র সেনাদের কাঁধ অতিক্রম করে জুম করে হেলিপ্যাডের দিকে কিন্তু ভেতরে অ্যামবুলেন্সের দরজা পর্যন্ত এক বিশেষ ক্যানভাসের টানেল টাঙিয়ে ফেলেছে প্যারামেডিকরা।
"দর্শকমন্ডলী, কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যামবুলেন্স তাঁকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে, আমরা তাঁদের অনুসরণ করবো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আবার ফিরে আসবো মাঠে, এখন আমরা আবার স্টুডিওতে ফিরে যাচ্ছি নাসিফ নিয়াজের কাছে।"
সাইফুল দু'আঙুল গোল করে দেখায়, নাজনীন ক্ষিপ্র গতিতে জ্যাকেট খুলতে থাকে। তার মূল কাজ সবে শুরু।
"মিথিলাকে ফোন করসিলেন, সাইফুল ভাই?" তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রশ্ন করে সে।
"জ্বি, আপা। তারা রেডি।" সাইফুল ক্যামেরা গোটাতে গোটাতে ভ্যানের ভেতরে ঢোকে। "আমরা কি এখন যাবো?"
"হ্যাঁ, চলেন। এরা অ্যামবুলেন্স না যাওয়া পর্যন্ত থাকবে মাঠে। আমাদের এই সুযোগটাই নিতে হবে।" নাজনীন শুকনো গলায় বলে। "আমাদের জিনিসপত্র সব ঠিক আছে তো?"
সাইফুল বলে, "জ্বি, আপা। চেক করসি আমি নিজে।"
নাজনীন গাড়ি স্টার্ট দেয়। রিয়ার ভিউ মিররে অ্যামবুলেন্সটাকে দেখতে দেখতে ভাবে, কেন রিপোর্টার নিজেই ড্রাইভ করছে, এই দেখে কেউ সন্দেহ না করলেই হয়।
হেলিগ্রাউন্ড থেকে বেরিয়ে তীব্র গতিতে গাড়ি ছোটায় নাজনীন। বিজয় সরণীর পার্কিং প্লটে অপেক্ষা করছিলো মিথিলার টিম, তারা চুপচাপ এসে গাড়িতে ঢোকে।
নাজনীন হাসে মিথিলার দিকে তাকিয়ে। "সব ঠিক আছে না, ডার্লিং?"
মিথিলা বাবলগাম চিবুতে চিবুতে বলে, "সব ঠিক।"
নাজনীন ড্রাইভার বশিরের হাত থেকে ছোট্ট গাড়িটার চাবি নিয়ে লাফিয়ে নামে। মিথিলার ক্যামেরাম্যান আনিস সাইফুলের কাছ থেকে সবকিছু বুঝে নেয়। সাইফুল গম্ভীর মুখে তার ক্যামেরা নিয়ে নাজনীনের পাশে গিয়ে বসে। নাজনীন অলস চোখে আশপাশটা দেখে নিয়ে উল্কাগতিতে বেরিয়ে আসে পার্কিং প্লট থেকে। মিথিলা নিউজভ্যান নিয়ে অনুসরণ করবে হাসপাতালের অ্যামবুলেন্সকে। নাজনীনকে তার আগেই আল কাহিরায় পৌঁছতে হবে।
২.
সাইফুল নির্লিপ্ত মুখে নামে গাড়ি থেকে। তার ক্যামেরা একটা স্কুলব্যাগের ভেতরে রাখা।
নাজনীন গাড়ির দরজা লক করে দিয়ে অলস পায়ে হাঁটতে থাকে লিফটের দিকে। লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে দু'জন সশস্ত্র সেনা, লিফটের সামনে দাঁড় করানো একটি মেটাল ডিটেকটর।
নাজনীনের কানে মোবাইলের ইয়ারপিস, মাউথপিসটা গলার কাছে ঝুলছে। সে মৃদু হেসে ফিসফিস করে বলে, "এখন!"
দরজার ওপরে ইন্ডিকেটর জ্বলে ওঠে, তিনতলা থেকে বেসমেন্টের দ্বিতীয় লেভেলে নামছে লিফট। নাজনীন অলস মৃদু পায়ে কোমর দুলিয়ে এগোতে থাকে লিফটের দিকে। সেনা দু'জন পাথুরে চোখে তার হাঁটার ছন্দ অনুসরণ করছে।
নাজনীন একজন সেনার সামনে দাঁড়িয়ে মধুর হেসে বলে, "আপনারা কি নতুন সিকিউরিটি?"
সৈনিকের পাথরে খোদাই করা চেহারা লালচে হয়ে ওঠে। "আমরা ন্যাশনাল গার্ড! দেখতে পান না?"
লিফটের দরজা খুলে যায়, অ্যাটেন্ড্যান্টের পোশাক পরা একটি মেয়ে বেজার মুখে একটা স্ট্রেচার ঠেলতে ঠেলতে বের হয়।
"কোথায় নামলো এইটা? ধুর!" মেয়েটা স্পষ্ট বিরক্তি নিয়ে বলে। নাজনীন ব্যাগ থেকে নিজের পরিচয়পত্র বার করে চটে ওঠা সৈনিকের নাকের সামনে ধরে। সাইফুলের হাত থেকে ব্যাগটা মাটিতে পড়ে যায়, সে ঝুঁকে পড়ে সেটা তোলে আবার। মেয়েটা স্ট্রেচার টানতে টানতে আবার ঢুকে পড়ে ভেতরে।
"আপনি সাংবাদিক?" সৈনিক চোয়াল শক্ত করে বলে।
"জ্বি।" নাজনীন মিষ্টি হাসে।
"এইখানে কেন এসেছেন?"
"আমার এক আত্মীয় অসুস্থ।" নাজনীন শরীরের ভর বাম পা থেকে ডান পায়ে নেয়, অন্য পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সৈনিক নিবিষ্ট মনে তাকে পাশ থেকে দেখতে থাকে।
"কী নাম?" কর্কশ গলায় বলে সৈনিক।
"নাজনীন কামরান।"
সৈনিকের গলার স্বর আরো রুক্ষ হয়ে ওঠে। "আপনার আত্মীয়র নাম বলেন।"
"ওহ! সরি ... রফিকুল হক। কেবিন ৪০১-এ আছেন।"
সৈনিক ওয়্যারলেস তুলে নেয় কোমর থেকে। "রোমিও এগারো। রোমিও এগারো। চারশো একে রফিকুল হকের গেস্ট। নাজনীন কামরান। অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেক করা প্রয়োজন। ওভার।"
ঘড়ঘড়ে জবাব ভেসে আসে, "কপি। এক মিনিট।"
সৈনিক সাইফুলকে দেখে রক্তচক্ষু মেলে। "আপনি?"
সাইফুল ঢোঁক গিলে পরিচয়পত্র বাড়িয়ে দেয়। "আমিও আপার সাথেই।"
সৈনিক পরিচয়পত্র দেখে নীরবে। ওয়্যারলেস আবার খড়খড় করে ওঠে। "চার্লি ওয়ান। সব সঠিক, রোমিও এগারো। পরীক্ষা চালাও। ওভার।"
নাজনীন লাস্যময়ী ভঙ্গিতে মেটাল ডিটেকটরের ভেতর দিয়ে যায়, অন্য সৈনিক সেটি অন করে। ভেতর দিয়ে নাজনীন হেঁটে আসার পর মেটাল ডিটেক্টরের পাশে মনিটরে এক এক করে ফুটে ওঠে নাজনীনের সাথে যাবতীয় ধাতব বস্তুর ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি ও অবস্থান। চুলের ক্লিপ, সেফটি পিন, মোবাইল ফোন, কোমরের বেল্টের হুক, মানিব্যাগে মুদ্রা।
সৈনিক হাঁক দেয়, "ক্লিয়ার!"
একইভাবে পেরিয়ে আসে সাইফুলও। প্রায় একই জিনিসপত্রের ছবি ভেসে ওঠে মনিটরে। একই রকম ক্লিয়ার হুঙ্কার শুনে নাজনীনের মুখে একটা আলতো স্বস্তির হাসি ফুটে ওঠে। সাইফুলের নির্লিপ্ত চেহারার ওপর বন্ধ হয়ে যায় লিফটের দরজা।
ক্যামেরাটা সাইফুল ত্বরিতগতিতে সেই অ্যাটেন্ড্যান্টের গার্নির নিচে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে। গত পাঁচদিন ধরে এই চর্চাটাই সাইফুল করেছে, খোলা ব্যাগ থেকে ক্যামেরাটা বার করে কীভাবে স্ট্রেচারের নিচের পাটাতনের ওপর রাখা যায়।
নাজনীন জানে, লিফটে একটা ক্যামেরা থাকে, তাই সে মুখে একটা পাতলা হাসি নিয়ে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে। হাসপাতালের ভেতরে এখন একটা শক্তিশালী ভিডিও ক্যামেরা আছে, যা বহুদূর পর্যন্ত রিলে করতে পারে। একটু পরই নিউজভ্যানটা এসে দাঁড়াবে হাসপাতালের চত্বরে। ওখানে বসে মিথিলারা রিসিভ করবে তাদের পাঠানো ভিডিওচিত্র। বাকি তিরিশটা টিভি চ্যানেল যখন অ্যামবুলেন্স থেকে গাইবান্ধার সাঘাটা থেকে আগত বাংলাদেশের শেষ জীবিত মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানকে নামিয়ে আনার দৃশ্য ভিডিও করার জন্য কনুই চালাবে, তখন নাজনীন আর সাইফুল হাসপাতালের ভেতর থাকবে একটা ক্যামেরা হাতে।
নাজনীন একটা শ্বাস ফেলে লিফটের খুলে যাওয়া দরজা দিয়ে বেরিয়ে পা রাখে হাসপাতালের বারান্দায়। আগে ৪০১-এ রফিক মামাকে দেখে আসা যাক। তাঁর ঘরেই থাকবে গার্নিটা। অ্যাটেন্ড্যান্ট মাকসুদা এই কাজটুকুর জন্যে পাবে ক্যাশ দুই লক্ষ টাকা। নাজনীন মুখটাকে উদ্বিগ্ন করে তুলে ৪০১-এ দিকে এগিয়ে যায়।
৩.
রফিকুল হক বিছানায় শুয়ে শুয়ে ক্লান্ত চোখে দেখেন নাজনীনকে। "কেমন আছো?"
নাজনীন তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। "ভালোই আছি গো মামা।"
রফিক বিরক্ত হয়ে বলেন, "তোমরা শুধু শুধুই ফাল পাড়তেসো। কোন লাভ নাই।"
নাজনীন হাসে। "লসও তো নাই।"
রফিক মনমরা হয়ে বলেন, "সময় থাকতে যদি খোঁজখবর লাগাইতা, তাহইলে কি আর এত ঢাকঢাকগুড়গুড় করা লাগতো?"
নাজনীন চোখ বোঁজে। সময় থাকতে কেউ জানেনি আবদুর রহমানের কথা। সাঘাটার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক স্থানীয় সাংবাদিক আবেগঘন একটা ভিডিও বার্তা পাঠায়, অন্তিম শয্যায় শুয়ে বাংলাদেশের শেষ জীবিত মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান শুধু একটু সুচিকিৎসা কামনা করেন, আর কিছু নয়। খবরটা বিপুল দামে কিনে নেয় কয়েকটা চ্যানেল। নাজনীন তখন ছিলো বগুড়ায়, ফিরছিলো ঢাকার দিকে, বসের নির্দেশে শেরপুর থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে গাইবান্ধার দিকে রওনা হয়। চ্যানেল এফের ইউসুফ মালিথা আর সে প্রায় মরণপণ গাড়ির দৌড়ে কেউ কাউকে হারাতে না পেরে প্রায় সমান সময়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেমে থমকে দাঁড়িয়েছিলো। জলপাই উর্দি পরা এক অফিসার বেরিয়ে এসে কঠোর মুখে বলেছিলেন, "আবদুর রহমান এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয়ে আছেন।"
নাজনীন চোখ খুলে তাকায়। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয় ভাঙতে পারেনি কোনো সাংবাদিক। সেদিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আবদুর রহমানের ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেনি কেউ। সাংবাদিকরা দেশ চষে ফেলে এসে জানিয়েছেন, আসলেই এই দাবি সত্য, আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা জীবিত নেই, আবদুর রহমানই শেষ জন। আজ থেকে বাষট্টি বছর আগে, কুড়ি বছর বয়সে তিনি ৬ নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করেন।
গত চারদিন ধরে অবিশ্রান্ত চলছে এই খবর। প্রায় সব ক'টি টিভি চ্যানেল জুড়ে। কেবল দ্বীন টিভি আর নিশান নিউজ চুপচাপ এ ব্যাপারে।
আবদুর রহমানের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটার পর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয়ে রেখেই তাঁকে রাজধানীতে আনা হয়েছে সুচিকিৎসা দেয়ার জন্যে।
নাজনীন চারপাশে তাকায়। নিখুঁত মসৃণ দেয়াল, তাপমাত্রা-আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া, নিশ্চয়ই এখানে খুব ভালো চিকিৎসা মেলে। আবদুর রহমান কি শেষজন না হলে কখনো পারতেন এখানে চিকিৎসা নিতে? গাইবান্ধার সাঘাটা থেকে বাসে চেপে গাবতলি, তারপর আবারও বাসে চেপে খানিকটা পথ, তারপর হয়তো খানিকটা মোনোরেলে চড়ে এসে কি নামতে পারতেন বিরাশি বছর বয়সের আবদুর রহমান? এই হাসপাতাল কি হজম করতে পারতো এই ভূমিহীন কৃষককে, তার ছেঁড়া জামাকে, তার মলিন অনভ্যস্ত ফাটা পায়ে বেমানান স্পঞ্জের চপ্পলকে, ছয় দশক আগের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে? আবদুর রহমানকে তো নেয়নি এই হাসপাতাল, নিয়েছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বলয়কে। আবদুর রহমানের সহযোদ্ধারা কে কোথায় কীভাবে মারা গেছেন, খোঁজও জানে না কেউ, কেউ খোঁজ রাখেও না। আবদুর রহমান এখন মহাবিপন্ন প্রজাতির শেষজন, এখন মিডিয়ার অশেষ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু শুধু, কোনো মানুষ আর নন।
নাজনীন উঠে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকানোর প্রয়োজন অনুভব করে না সে, নিচ থেকে ভেসে আসে অ্যামবুলেন্সের প্রাচীন নিনাদ। আবদুর রহমানকে নিয়ে তাঁর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয় এসে উপস্থিত হয়েছে আল কাহিরায়।
নাজনীন জানে, আবদুর রহমানকে রাখা হবে চারতলার বিশেষ কেয়ার ইউনিটে। সেখানে কোনো সশস্ত্র প্রহরী থাকবে না রাত নয়টার পর। বিগ বস জায়গামতো পয়সা ঢেলে এই তথ্য বার করে এনেছেন।
৪.
ন'টা বাজার পর নাজনীন গার্নির নিচ থেকে দু'টো সাদা অ্যাপ্রন টেনে বার করে। একটা সাইফুলের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে আরেকটা সে নিজে গায়ে চড়িয়ে নেয়। করিডোরে বুটের খট খট আওয়াজ মিলিয়ে গেছে কয়েক মিনিট আগেই। সৈনিকরা বোধহয় শুধু নিচে পাহারা দেবে।
রাত আটটায় ভিজিটিং আওয়ার শেষ। যে অ্যাটেন্ড্যান্ট শেষ ভিজিটরটিকেও ঝেঁটিয়ে বার করে দেয়, সে আসেনি এই ঘরে। বিগ বস অনেক আয়োজন করেছেন আজকের এই বিশেষ রিপোর্টিঙের জন্যে। লাইভ নয়, এটি প্রচার করা হবে কিছুক্ষণ পর, যাতে সাথে সাথে কেউ চুকলি কেটে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে।
অ্যাপ্রন পরা সাইফুল গার্নিটা ঠেলতে ঠেলতে করিডোরে বেরিয়ে এলো। নাজনীন মাথায় একটা মেডিক্যাল টেকনিশিয়ানদের টুপি চড়িয়ে নিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয় বোধহয় শুধু বাইরেই মজবুত, মনে মনে ভাবে নাজনীন। এর ভেতরটা একেবারেই নিঝুম আর দুর্বল। গার্নি ঠেলতে ঠেলতে বিশেষ কেয়ার ইউনিটের দরজা ঠেলে ঢুকে পরে তারা দু'জন, ভেতরে বিছানায় শুয়ে আছেন আবদুর রহমান।
নাজনীন দরজা বন্ধ করার উপায় খোঁজে, তারপর অস্বস্তি নিয়ে দেখে, এই দরজা বন্ধ করার কোন উপায় নেই। কাঁধ ঝাঁকিয়ে সে সাইফুলকে বলে, "সাইফুল ভাই, সমস্যা আছে। সময় কম পাবো আমরা। আগেই ক্যামেরা বাইর কইরেন না।"
আবদুর রহমান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকান। দুর্বল, অশক্ত, বৃদ্ধ একজন মানুষ। তার চেহারায় ক্ষুধা আর অভাবের ছাপ শুধু, ওখানে কোথাও লেখা নেই, এই মানুষটি কত সামান্যতাকে অবলম্বন করে কত বড় একটি বাহিনীকে যুদ্ধ করে পরাজিত করেছেন।
নাজনীন এগিয়ে গিয়ে তাঁর কপালে হাত রাখে। "স্লামালিকুম, দাদাজান! আমরা আপনার সাথে কথা বলতে আসছি। আপনি কি কথা বলতে পারবেন?"
আবদুর রহমান কিছু বলেন না, রুগ্ন চোখে চেয়ে থাকেন শুধু।
সাইফুল ক্যামেরা ঠিক করে, রিলে যোগাযোগ স্থাপিত হবার পর সে কাঁপা হাতে কাঁধে তুলে নেয় ক্যামেরাটা। "আপা, রেডি হন। ফাইভ, ফোর ...।"
নাজনীন মাইক নিয়ে বলতে থাকে, "অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর থেকে আমি নাজনীন কামরান বলছি। আমার পাশে শুয়ে আছেন আমাদের দেশের শেষ মুক্তিযোদ্ধা, আবদুর রহমান। এখানে আর কেউ নেই। আজ সারা দেশের সামনে আবদুর রহমান কিছু কথা বলবেন আমাদের সাথে।"
মাইকটা আবদুর রহমানের সামনে এগিয়ে দেয় নাজনীন। "দাদাজান! আপনি আমাদের বলেন, কী চান আপনি এই দেশের কাছে?"
আবদুর রহমান কিছুই বলেন না, ঘাড়টা সামান্য নড়িয়ে শুধু সাইফুলকে একবার দেখেন, তারপর নাজনীনকে দেখেন আবার।
নাজনীন বৃদ্ধের কপালে হাত বুলিয়ে দেন। "বলেন, দাদাজান! সারা দেশের লোক আপনাকে দেখতেসে এখন। আপনার কথা শুনতেসে। আপনি বলেন, কী চান আপনি এই দেশের কাছে?"
আবদুর রহমান একটা কাঁপা হাত তুলে নাজনীনের হাত স্পর্শ করেন। তারপর স্তিমিত গলায় বলেন, "মুই কিচ্ছু চাউ না।"
নাজনীন মুখ শক্ত করে বলে, "না, দাদাজান! বলেন, আপনি কী চান? কী চান এই দেশের কাছে? আপনারা যুদ্ধ করেন নাই? গুলি খেয়ে মরেন নাই? যুদ্ধের পর না খেয়ে মরেন নাই? বলেন, কী চান এখন! দেশের কাছে কী চান, জোর গলায় বলেন!"
আবদুর রহমান মাথা নাড়েন। "মোর কিচ্ছুর আশ নাই! কিছু চাউ না মুই!"
নাজনীন ক্যামেরার দিকে ফিরে তাকিয়ে তীব্র গলায় বলে, "বাংলাদেশের শেষ জীবিত মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান কিছু চান না। কারণ তিনি সারাটা জীবন চেয়ে কিছু পাননি। তিনি একটা নিরাপদ দেশ চেয়েছিলেন, মানুষের ভাতকাপড়ের নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছিলেন, কিছুই মেলেনি। জীবনের অন্তিম সময়ে এই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে থেকে আবদুর রহমানের কিছুই চাওয়ার নেই। কারণ এই চাওয়ার কোনো অর্থ হয় না!"
বাইরে থেকে দরজাটা হাট করে খুলে যায়, ভেতরে ব্যস্ত পায়ে প্রবেশ করেন অ্যাপ্রন পরা ডাক্তার। ঘরের ভেতর পরিস্থিতি দেখে কয়েক সেকেন্ড হতভম্ব হয়ে থেকে চাপা গলায় চিৎকার করেন তিনি, "হচ্ছে কী? এসব কী? জানেন না এটা স্পেশ্যাল সিকিউরিটি এরিয়া? বেরিয়ে যান! স্টপ ইট!" সাইফুলের তাক করা ক্যামেরার সামনে হাত বাড়িয়ে মুখ ঢাকেন তিনি। "সিকিউরিটি!" ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে গিয়ে ঘরের দেয়ালে একটা লাল বোতামে চাপ দেন তিনি।
নাজনীন মাইক নামিয়ে আবদুর রহমানের পাশে বসে। নিচ থেকে সশস্ত্র সৈনিকদের ওপরে আসতে কতক্ষণ সময় লাগবে? এক মিনিট? দুই মিনিট? দেশের শেষ মুক্তিযোদ্ধার করস্পর্শ করে দুই মিনিট চুপচাপ বসে থাকাই যায়।
৫.
নাজনীন আর সাইফুলকে যখন জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তখন দেশে তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হলো। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আবদুর রহমানের মরদেহ দাফন করা হলো শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা মাথায় জিন্নাহ টুপি চড়িয়ে একত্রিশটি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে আবেগঘন গলায় বললেন, "তিনি ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ...।"
আকাশে গুলির শব্দ মিলিয়ে গেলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, যেভাবে এর আগে অনেকগুলি বছরে মিলিয়ে গেছে অনেক প্রতিশ্রুতির ধ্বনি, প্রতিধ্বনি।
.
.
এ গল্পটি ২০১০ এ প্রকাশিত গল্প সংকলন ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প"-তে অন্তর্ভুক্ত |
মন্তব্য
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
হ্যাটস অফের কোন ইমো নাই থাকলে তাই দিতাম
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
অসাধারণ, দূর্দান্ত - এই শব্দগুলার বাইরে আর কী বলা যায় ভাবছি!
এ গল্পই হয়তো সত্যি হবে একদিন...।
সামান্য এ পাঠকের অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
লেখায় নতুনত্ব অনুভব করলাম। বিষয়বস্তু মুক্তিযুদ্ধ হবার কারনে হয়তো অনুভবটা একটু বেশী মন ছুয়েছে।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
দুর্ধর্ষ কাহিনী।
অসাধারণ একটা গল্প পড়লাম ... কী জানি হয়তো একদিন এটাই সত্য হয়ে যাবে ...
অসাধারণ!
গলা দলা পাকায়ে উঠলো রে ভাই।
এ ঘটনা ঘটবার আগে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে মমি বানিয়ে ফেলতে হবে, জাদুঘরে দেখবে এরপরের সব প্রজন্ম।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
অসাধারণ কাহিনি। অসাধারণ, অসাধারণ, অসাধারণ!!!!!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
শেষ মুক্তিযোদ্ধা কবে, কখন, কোথায় মারা যাবে, তা আমরা কেউ জানবো না।
তবে শেষ রাজাকারেরটা জানার সম্ভাবনা বেশী, কারণ মৃত্যুকালে শেষ রাজাকার থাকবে হয়তো কোন উচ্চপদস্থ মন্ত্রী, যাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
সবাইকে ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়নি পোস্টে, মন্তব্যে জানিয়ে যাই, রংপুর অঞ্চলের সংলাপ অনুবাদ করে দিয়েছে এনকিদু।
অসাধারন হিমু! অসাধারন!!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এই একাউন্টটি কোন মডারেটরের নয়। এই একাউন্ট থেকে মডারেশন করা হয়না, কিংবা এই একাউন্টের কর্মকান্ডের দায়ভার সচলায়তন নেবে না।
বাহ্ বাহ্ হিমু। সত্যিই চমৎকার একটা গল্প লিখেছেন। আশা করি এমনটা বাস্তবে ঘটবেনা।
বহুদিন পর গল্প পড়তে পড়তে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা সৃষ্টি হল। আপনার গল্পের কাহিনীর নতুনত্ব, ঘটনার অসাধারণ জীবন্ত বর্ণনা আর আপনার পর্যবেক্ষণ শক্তি অনুধাবন করে আনন্দিত হচ্ছি। আশা করি আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে আপনিও প্রথম সারির একজন সব্যসাচরি লেখক (শুধু গল্পকার বললে সংকীর্ণ হয়ে যায়) হিসেবে খ্যাতি লাভ করবেন।
কে জানে, দুই যুগ পরের যে বাংলাদেশকে নিয়ে আশঙ্কিত হয়ে গল্পটা লিখেছি, তা কেমন হবে! ততদিনে আমাদের আয়ু নিঃশেষ হবে, আমাদের সন্তানরা হয়তো আমাদের এই গল্প নিয়ে হেসে কুটিপাটি হবে, আমরা কী বোকা ছিলাম ভেবে! তা-ই যেন হয়।
আগামী ১০-১৫ বছর কেন, প্রথম সারির লেখক কখনোই হতে চাই না। প্রথম সারির লেখকদের কান্ডকারখানা দেখে দেখে শুধু হতাশ হই। চলুন বরং এমনটা ভাবি, আগামী ১০-১৫ বছরে আমাদের আর লিখতেই হবে না, দারুণ সব লেখক সচলায়তনকে প্রতিদিন চমৎকার সব লেখায় ভরিয়ে রাখবেন। আমরা শুধু পড়বো আর মন্তব্য করবো ।
লেখকদের ভিতরে একজন ভবিষ্যতদর্শী বাস করেন। তাঁর চোখ দিয়ে লেখকরা তাই দেখতে পান সামনের জিনিস। সামনের জিনিস কি সবসময়ে ভাল হয়? না হয়না। খারাপও হয়। তখন লেখকের কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়না। মনে হয় লেখক বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলছে। আজ আপনাকে বলতে ইচ্ছে করছে, আপনার এই লেখার সবটুকুই মিথ্যে, গাঁজাখুরী গল্প। এমনটি কোনদিনও হবেনা।
যদিও জানি এমনটিই হবে। কি নির্মম সত্য! তার চেয়েও নির্মম ব্যাপারটি হচ্ছে আমরা কেউই গল্পটিতে বলা ভবিষ্যতকে রুখতে যাবো না। বরং এই গল্পটির কথাই ভুলে যাবো।
এই গল্পটা একেবারেই মিথ্যা হোক। মাকড়সার জাল গা থেকে সরিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল নড়ে উঠে প্রমাণ করুক, এই গল্পটি নিছক প্রলাপে পরিণত হবে কয়েক বছরের মধ্যে।
হিমুদা, খুব ভয়ংকর একটা সত্যিকথা অনেক সুন্দর করে বললেন, অবাক বিস্ময় নিয়ে লেখাটা শেষ করলাম, অসাধারণ বলে লেখাটাকে অসম্মান করার চেষ্টা করলাম না। লজ্জার কথা হল যে, আমরা জানিও না, এখন কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে ভন্ড সার্টিফিকেট ওয়ালা।
এক কথায় অসাধারন
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অসামান্য গল্প... কৈশোরে মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখায় মুক্তিযুদ্ধের কথা পড়ে যেভাবে রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠতো, সেই হারিয়ে যাওয়া অনুভূতিটা আবার টের পেলাম।
অসাধারণ হিমু ভাই, অসাধারণ !
গল্পটা পড়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে কেবল এটুকুই বলতে পারলাম।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
গল্পটা পড়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। কিছুই বলার নেই।
চোখে পানি চলে আসলো!...জটিল লেখা হিমু ভাই!!অসাধারণ!!!
অবিশেষণসম্ভব!!!
এরকম একটা গলফ আমিও লিখতে চাইছিলাম, কিন্তু পাগলা হিমু মেধায়, কল্পনাশক্তিতে আমার থিকা কতো আলোক বর্ষ দূরে আছে খোদাই জানে!!
আসেন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করে এই গল্পটারে গল্পই রেখে দেই
বিউগলারও যখন কেঁদে উঠে ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
গল্পটা পড়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। কিছুই বলার নেই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অসাধারণ !!
------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আপনার এই কল্পণা সর্বৈব মিথ্যা হোক। কারণ আমি তো অন্যরকমভাবে ভাবছিলাম বিষয়টা। আমার কল্পণাটা বাস্তবায়িত হলে আপনারটা মিথ্যা হবেই
তবে গল্পের ভবিষ্যদ্বাণী যাইই হোক, গল্পটা অ-সাধারণ অ-তুলনীয়!
লাল সালাম নিন।
...
এই গল্প মিথ্যা হোক...
আপনাকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা এভাবে গল্পটা বলতে পারার জন্যে...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
কী ভয়ঙকর একটা গল্প!
এসব পড়তে ভালো লাগেনা
একদম না
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
হুম।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
সচল থেকে দূরে ছুটিমগ্ন সন্ন্যাসীকে পড়তে দিয়েছিলাম গল্পটা, পিডিএফ করে। তিনি ৫৮টি বানান প্রমাদ ধরিয়ে দিয়ে ৫৮ পয়েন্ট কামিয়ে নিয়েছেন "বানানকে বাগ মানান" প্রজেক্টের আওতায়। সেগুলো সংশোধন করে নিলাম।
প্রথম অনুভূতি হয়েছিলো - কষ্ট, মন খারাপ ...
কিন্তু, তারপর কেন জানি না, হয়তো গল্পটার কিছুটা শ্লেষাত্মক আন্ডারটোনের কারণেই হবে - মনে হলো এটা হতেই পারে না, বিশ বছর পরও না!
'আমরা' কি এতোটাই অপদার্থ?! আমরা যারা চাই এরকম না ঘটুক, তাদের কথা বলছি।
তবে, লেখা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই ...
হাঁটুপানির জলদস্যু বরাবরের মতোই হাঁটুপানিতেই কীভাবে যেন বাঘ টাঘ মেরে টেরে একসা !!
চমৎকার লেখা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে পড়া অন্যতম সেরা গল্প।
এটা গল্পই থেকে যাক।
কে জানে, ২৪ বছর পর হয়তো আপনাকে ক্ষ্যাপাবো এই গল্পটা নিয়ে।
পড়ে থম্ মেরে বসে রইলাম কিছু সময়। অসাধারণ!!!!!!!!!!!!!!!
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)
লেখাটা পড়ে ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠার মত অনুভূতি হচ্ছে। অনন্য একটা লেখা।
লেখার বিষয়বস্তুটা যেন শুধুই দুঃস্বপ্ন থেকে যায়।
সময়ের সেরা গল্প এটা।
তবে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি কামনা করি গল্পের এ কাহিনী সর্বৈব মিথ্যা ও বানোয়াট।
আজ থেকে বিশ বছর পরে যেন হিমু'কে আচ্ছা করে বকে দিতে পারি- কেন এমন আজগুবি আপত্তিকর ও জাতির প্রতি অপমানজনক এই কাহিনী ফেঁদেছিল।
আমার এ আশা কি সত্য হবে ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আজ এ খবর পড়ে, গল্পটার কথা মনে পড়লো...
____________
অল্পকথা গল্পকথা
সমকাল আর্কাইভ কয়দিন রাখে ঠিক নাই। মূল খবরটা পেস্ট করে রাখি-
'আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়'
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : 'অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। জীবিত থাকতে কারও সহানুভূতি পেলাম না, মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান চাই না। আমার অনুরোধ, মৃত্যুর পর যেন আমাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়।'_ ক্যান্সারে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর হোসেন ক্ষোভ ও বেদনামিশ্রিত কণ্ঠে এ কথা বলেন। বেসরকারি রেজিস্টার্ড স্কুলের স্বল্প বেতনভোগী এই দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে সামান্য জমিসহ সহায়সম্পদ সব কিছু বিক্রি-বন্ধক রেখেছেন।
মোজাফ্ফর হোসেনের বাড়ি রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের দেবালয় গ্রামে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছেন। বছরখানেক আগে দাঁতের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইনফেকশন হয়। পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মুখমণ্ডলে ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে তিন একর জমি বিক্রি ও বন্ধক রেখেছেন। বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। এতে প্রতি সপ্তাহে লাগে চার হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে ঢাকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি।
____________
অল্পকথা গল্পকথা
:(
অসাধারণ গল্প ... আশা করবো এই গল্প যেনো কখনো ই সত্যি না হয়...
অসাধারণ লেখা। তবে সমাপ্তি টা আরো ভাল হতে পারত। মুক্তিজোদ্ধা দের নিয়ে এ ধরনের লেখা নতুন প্রজন্ম কে ভাবতে আরো উৎসাহিত করবে।
ভয়ংকর সুন্দর একটা গল্প! মন্তব্য না করে যাওয়াটা অমানষিক হয়ে যেত।
নতুন মন্তব্য করুন