খসরু চৌধুরীর নামাঙ্কিত একটি পেপারব্যাক, সেবা প্রকাশনীর "সুন্দরবনের মানুষখেকো"তে পড়েছিলাম শিকারী পচাব্দী গাজীর কথা। আমার বয়স তখন কম, ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ি, সেবা থেকে প্রকাশিত শিকারের সব বইয়ের ঘাড় মটকে চিবিয়ে খাই বাঘের মতোই। জিম করবেট, কেনেথ অ্যান্ডারসন আর জন হান্টার তখন আমার হিরো। এক একটা শিকারের গল্পে যে আশ্চর্য শিহরণ ছিলো, এখনও রোমাঞ্চিত হই ভাবলে। ঐ গল্পগুলোর কারণেই শুটিঙের প্রতি আমার একটা মোহ কাজ করে দীর্ঘদিন ধরে, কারো বাসায় আগ্নেয়াস্ত্র দেখলে নেড়েচেড়ে শুঁকে দেখি। যদিও রক্তপিপাসা নেই দেখে নিজে শিকারের আগ্রহ কাজ করে না।
কথা সেখানে নয়, কথা খসরু চৌধুরীকে নিয়ে। সেই সুন্দরবনের মানুষখেকোর পর খসরু চৌধুরীকে আর বইতে পাইনি। আয়ুর জোরেই তিনি আরো অনেকবার আমার সামনে হাজির হন পত্রিকায়। প্রত্যেকবারই প্রসঙ্গ বাঘ। বাঘপাগল খসরু থামেন না, বাঘ আর সুন্দরবন নিয়ে তাঁর বিরাম নেই। একটা দেশের মূর্খ লোভী মানুষ নিয়ম করে গিয়ে ঢুকছে জঙ্গলে, জঙ্গলটার বারোটা বাজাচ্ছে ক্রমাগত, যারা এর রক্ষক, তারাই গিলে খাচ্ছে জঙ্গলের কইলজাগুর্দাফ্যাপসা, আর বোকা খসরু চৌধুরী বার বার জঙ্গলে গিয়ে ঐ ধর্ষণের পাগপার্ক তুলে এনে আমাদের দেখাচ্ছেন। বলছেন, কীভাবে মরছে বাঘ, আমাদের গৌরবের ধন, যাকে ভালোবেসে ওপরের তলায় আমরা ঠাঁই দিয়েছি মুদ্রায়, প্রতীকে, আর নিচতলায় মারছি টুঁটি চেপে ধরে। জঙ্গলের ভেতরটা পঁচে যাচ্ছে, খসরু চৌধুরী লিখছেন কাগজে, প্রতিকার হচ্ছে কি না জানি না, কিন্তু একজন কেউ তো হাত তুলে দেখাচ্ছেন, কীভাবে মানুষ রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের ঘাড়ে হালুম করে লাফিয়ে পড়ছে, জঙ্গলটার মড়ি চিবিয়ে খাচ্ছে রোজ। বাঘ আর কত বড় বাঘ? বাঘের চেয়ে বড় বাঘ আমরা।
অতিশয় বড় মূর্খ ছাড়া সবাই জানে, কীভাবে সুন্দরবনের অভাবে পঞ্চগড় পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে এক একটা বড় সাইক্লোন। বৃহস্পতি গ্রহ যেমন মহাকাশের সমস্ত উল্কাপিণ্ডকে নিজের বুকে শোষণ করে নিয়ে ক্রমাগত রক্ষা করে চলছে পৃথিবীকে, সুন্দরবনও শত শত বছর ধরে পৃথিবীর রুদ্রতম উপসাগরের সুদর্শনচক্রের ঘা বুকে নিয়ে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে। সুন্দরবন না থাকলে দেশের সবচেয়ে বড় মন্ত্রণালয় হতো দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তাই অভিবাদন জানাই খসরু চৌধুরীকে। শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত, আপনাকে থামতে না দেখে এই অভিবাদন। অভিবাদন আপনার স্বপ্ন আর প্রত্যাশার উচ্চতাকে, যে স্বপ্নের গায়ে খড়ি দিয়ে লেখা, একদিন আপনার লেখা পড়ে কেউ একজন "ব্যবস্থা" নেবে, বাঘ বাঁচাবে, সুন্দরবন বাঁচাবে। আপনি মানুষটা কে, কেমন, তা জানার কোন আগ্রহ আমার নেই, আপনার স্বপ্নের উচ্চতাকে নতজানু হয়ে অভিবাদন জানাই। আপনার মতো অক্লান্ত স্বপ্নবানে দেশটা একদিন ভর্তি হয়ে উঠুক, বাঘ আর বাঙালির গর্জনে এক একটা দ্রাঘিমাংশ প্রকম্পিত হোক।
মন্তব্য
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
১৯৭৪ থেকে চলছে ওনার কাজকারবার।
পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলোর লিঙ্ক আছে কোন?
পত্রিকায় খসরু চৌধুরী'র অনেক লেখা পড়ে শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি।
খসরু চৌধুরী আসলেই এক অক্লান্ত যোদ্ধা। শ্রদ্ধা তাঁকে।
আর আপনাকেও ধন্যবাদ হিমু ভাই, আমরা আসলে অনেক কিছু ফর গ্রান্টেড নিয়েনি, ধন্যবাদ জানাতে ভুলে যাই এইসব মানুষদের। মনে করে আপনি কাজটা করেছেন, তাই আবারও ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
খসরু চৌধুরী আজকেও বাঘসহ উপস্থিত আছেন দৈনিক প্রথম আলোয়।
লিংকটা এখানে--
http://www.prothom-alo.com/mcat.news.details.php?nid=MTY0MDcz&mid=Mw==
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
আমার খুবই প্রিয় একজন মানুষ এই খসরু চৌধুরী। তাঁকে খুব ভালো করেই চিনি, জানি।
সুন্দরবন, বাঘ, সুন্দরবনেরপশুপাখিগাছলতাপাতাফুল এবং সুন্দরবনকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকা সংগ্রামী ও অসহায় মানুষদের প্রতি খসরু চৌধুরীর ভালোবাসা অফুরান।
আমার সম্পাদিত ছোটদের কাগজের বাঘ সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনীটি লিখে দিয়েছিলেন পরম মমতায়।
অন্যরকম এই মানুষটিকে অভিবাদন জানিয়েছো বলে হিমু তোমাকেও আমার অভিবাদন।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
লজ্জায় ফেলে দিলেন রিটন ভাই!
ওনার ইমেইল ঠিকানাটা পেলে বেশ হতো।
খসরু চৌধুরী আসলে দুটি প্রচ্ছদ কাহিনী লিখেছিলেন ছোটদের কাগজের জন্যে। বাঘ সংখ্যাটির শিরোনাম ছিলো--হালুম মানে বাঘ (আগস্ট ১৯৯৮)।
এর আগে " সুন্দরবন" (জুন ১৯৯৭)শিরোনামে লিখেছিলেন অসাধারণ একটি প্রচ্ছদ কাহিনী। সেই সংখ্যার যাবতীয় আলোকচিত্রও ছিলো খসরুরই তোলা।
তাঁর ই-ঠিকানা পেয়ে যাবে তুমি শিগিগিরই।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
ধন্যবাদ, রিটন ভাই।
ভাল্লাগলো!
সুন্দরবন নিয়ে দীর্ঘ ও পরিশ্রমসাপেক্ষ কাজ করেছেন অন্তত আরো দুইজন - এ এফ এম আবদুল জলীল এবং হুমায়ূন খান। এঁদের মধ্যে হুমায়ূন খানের কাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এই জন্য যে তিনি বনের পাশাপাশি বনবাসি বাওয়ালী, মৌয়াল, জোংরাখুটা, জেলে ইত্যাদি পেশার নিম্নবর্গের মানুষদের মর্মান্তিক জীবনচিত্র আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। সুন্দরবন দেখার ক্ষেত্রে তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী এককথায় অসাধারণ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মোহাম্মদ তোহা খান "সুন্দরবনের বাওয়ালী'' নামে অসাধারণ একটা বই লিখেছিলেন।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
আমি একটা সংশয়ে পড়ে গেলাম। সুন্দরবনের মানুষখেকো কি খসরু চৌধুরীর অনুলিখন, নাকি হুমায়ূন খানের?
ব্যাঘ্র পুরুষ পচাব্দী গাজীর বাঘ শিকারের কাহিনী 'সুন্দরবনের মানুষখেকো'।
অনুলিখন করেছিলেন হুমায়ূন খান।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
'সুন্দরবনের মানুষখেকো' নামে গল্পের একটা বই ছিল, যেটা পড়েছিলাম ২য় বা ৩য় শ্রেণীতে (১৯৮৩-১৯৮৪ সালে)। পচাব্দীরটা পড়েছি ৯০এর দশকের শেষ দিকে। সুন্দরবনের মানুষখেকো বইয়ের একটা গল্পের শিরোনাম ছিলো সম্ভবত "মানুষখেকোর কবলে সিকি ডজন সৌখিন শিকারীদল"। তখন থেকেই বুড়িগোয়ালীনি, কটকা এসব নাম মাথায় ঢুকে গেছে। বহুদিন পরে সেসব আবার মনে পড়লো।
খসরু চৌধুরীর শিকার কাহিনী আজো টানে। অসীম শ্রদ্ধা মানুষটার প্রচেষ্টার প্রতি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
হিমু ভাই,
আমি যেই পোস্টে আপনারে সালিভানের সাথে তুলনা করছিলাম সেখানে আপনি বলছিলেন তনোমনোধনোনিবেশ করে কি বলে গোয়েন্দাকাহিনী না কি জানি লিখেবন। ওমা, এক লেখার পরই আবার ফুলস্কেল দেশচিন্তা চলতেছে তো চলতেছেই!
আমি তো ভুল কই নাই! ল্যাখেন, ভাল্লাগে আপনার এইসব লেখা। জানা হয়। একটু লজ্জাও লাগে। দাঁড়ান, আমিও লিখুম!
'অন্ধকারে সিগারেট' টাইপেরও আরো কয়েকখান দেন, পারলে।
'অন্ধকারে সিগারেট' টাইপেরও আরো কয়েকখান দেন, পারলে।
আমার আপত্তি আছে। ঐ লেখার মন্তব্যেই আমি হিমুকে শাস্তি দেবার কথা বলেছিলাম। যত খুশি দেশচিন্তা করুন। এমন লেখা লিখবেন না যেটা পড়লে নিজের লেখা তো লেখা, বাকি কাজ-কর্মশুদ্ধ মাথায় ওঠে। যেমন মিলান কুন্ডেরারে বাগে পাইলে লাঠিপেটা করতাম।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাইছি আপনেরে... আমি কুন্ডেরার ছোটগল্প খুঁজতেছি পড়ার জন্য হন্য হয়ে। কিন্তু পাই না। আমি বিদেশী ভাষায় পড়ে আরাম পাই না। বঙ্গানুবাদ চাই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হা হা... আমি এখন পড়তেছি, The Unbearable lightness of being ...
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সুন্দরবনের বাঘের প্রতি খসরু চৌধুরীর মমতার কথা জেনেছিলাম ২০০৪ সালের দিকে উপকুলীয় অঞ্চলের উপর একটা গবেষনার সময়ে। এ ব্যপারে তার একনিষ্ঠতা এবং নির্ভিক একাত্মতা এককথায় অসাধারন।
শ্রদ্ধা রইল খসরু চৌধুরীর প্রতি তার কর্মের প্রতি
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খসরু ভাই, বুয়েটে পড়াশুনা করেছেন। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছিলেন কীনা মনে নেই। ডেইলী স্টারের হলিডে পাতায় (রোববারে প্রকাশিত হয়) প্রায়ই উনার লেখা ছাপা হয়। উনার সাথে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা সেইরকম।
সে রকম একটা ভ্রমনের লেখা পাবেন এখানে http://www.thedailystar.net/holiday/2005/10/02/holiday.htm
...........................
Every Picture Tells a Story
এইখানে আমার একটা পর্যবেক্ষণ আছে। আমি মনে করি, তাঁর উচিত সুন্দরবন নিয়ে লেখাগুলি বাংলা কাগজেও বেশি করে লেখা। সম্ভব হলে ব্লগেও। সুন্দরবন আর বাঘ সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য আসে কম, বিশ্লেষণ তো আরো দুর্লভ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
খসরু চৌধুরীকে আমারো অভিবাদন।
সেবা প্রকাশনীর রহস্য-রোমাঞ্চ লেখক খসরু চৌধুরী কে আমি বাস্তবে চিনতাম। আসল নামটা মনে নেই। আব্দুর রাজ্জাক বা আব্দুল জলিল ধরনের কিছু হতে পারে।
সেবার খসরু চৌধুরী আর ইনি সম্ভবত ভিন্ন মানুষ। অনেকদিন আগের স্মৃতি, ভুলও হতে পারে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
হ্যাঁ, আমিও তা-ই জানি। আমি সম্ভবত ভুল করেছি সুন্দরবনের মানুষখেকোর সাথে তাঁকে জড়িয়ে, সংশয় হচ্ছিল হুমায়ূন খান আর তাঁকে নিয়ে। সেবার খসরু চৌধুরী আমাদের জুবায়ের ভাইয়ের বন্ধু।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ঐ বই কত আনন্দ নিয়ে পড়েছি ছোটবেলায়!
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
দরকারি লেখা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
খসরু চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা।
সেদিন প্রথম আলো খুলে সম্পাদকীয় পাতায় তাঁর নাম দেখেই বাঘ বিষয়ে তাঁর লেখাটা প্রথমেই পড়ে ফেললাম ।
শ্রদ্ধা জানাই খসরু চৌধুরীকে।
নতুন মন্তব্য করুন