মাদার্চো-

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৯/০৭/২০০৯ - ১২:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


গল্পটি কল্পবিজ্ঞান হলেও কিছুটা ইয়ে। নানা অশ্লীল গালিগালাজ আছে গল্পের প্রয়োজনে। গল্পের থিমটিই প্রাপ্তমনস্ক ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে।

১.
প্রফেসর হক মহা অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরলেন গোলাম আম্বিয়ার দিকে। "কী হইল আম্বিয়া, আবার কী সমস্যা তোমার?"

গোলাম আম্বিয়া হাউমাউ করে উঠলো, "স্যার, একটা বিহিত করেন। এই লোকটা স্যার আমারে উঠতে বসতে মা বাপ তুইল্যা গালি দিতাসে স্যার। আমার কিন্তুক জিদ্দে শইলটা খালি ফাটতাসে। কিসু কই না খালি। আমি কিন্তুক স্যার, চেতলে খুব খরাব মানুষ, কখন যে তুইল্যা শালার পুতেরে একটা আছাড় দিমু ...।"

প্রফেসর হক চশমার ফাঁক দিয়ে গোলাম আম্বিয়ার পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি লম্বা টিংটিঙে কলেবর দেখেন মনোযোগ দিয়ে। "কী করসে মোয়াজ্জেম হোসেন?"

আম্বিয়া আবারও ডুকরে ওঠে, "গাইল দিসে স্যার! অসইভ্য সব খাচড়া খাচড়া কথাবার্তা কয় হ্যায়।"

প্রফেসর হক বললেন, "আচ্ছা তুমি যাও, কাম করো গিয়া। মোয়াজ্জেমরে আমি কমুনে বুঝাইয়া।"

আম্বিয়া তড়পে ওঠে, "স্যার, লাথো কা ভূত বাতো মে নেহি যাতা, আমগো পাশের বাড়ির বিহারী দাদি সবসময় কইতো! আপনি স্যার অরে পানিশমেন্ট দেন!"

প্রফেসর হক বললেন, "এখন এইখানে ক্যামনে অরে পানিশমেন্ট দেই? আমরা ফিরত গিয়া লই, তারপর দেখা যাবেনে। তুমি যাও, কাম করো গিয়া।"

গোলাম আম্বিয়া আবারও কী যেন বলতে গিয়ে থেমে যায়। তারপর ঝট করে ঘুরে দুপদাপ পা ফেলে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।

গোলাম আম্বিয়া বেরোতে না বেরোতেই কেবিনে ঢোকে মেজর মোয়াজ্জেম। "গুড মর্নিং, স্যার! কোন নিউজ?"

প্রফেসর হক গম্ভীর হয়ে বলেন, "মোয়াজ্জেম, তুমি নাকি আম্বিয়ারে খালি গালাগালি করো?"

মোয়াজ্জেম একটা টুল টেনে বসে পড়ে ধপ করে। "না স্যার, বিনা কারণে কি আর কেউ কাউরে গালি দেয়? আম্বিয়া লোকটা স্যার আইলসার হদ্দ। সে খালি শুইয়া বইসা থাকে। কাম করতে কইলে নড়েচড়ে না। তাই তারে মাঝেমধ্যে শরীর গরম করানোর জন্য ধরেন গিয়া একটু বড়দের গালি দেই আর কি। নাথিং পারসোনাল স্যার। আমাদের লাইনে এই জিনিস তো স্যার ধরেন গিয়া দুধভাত।"

প্রফেসর হক আরো গম্ভীর হয়ে বলেন, "তুমি তো আর তোমার লাইনে নাই মোয়াজ্জেম। তুমি এখন আমার লাইনে। আমার লাইনে এইসব না করাই ভালো। তিনজন মোটে মানুষ আমরা, তার মধ্যে দুইজন খালি একজন আরেকজনের পিছে লাইগা থাকবো, আর আমারে বইসা বইসা তার ফিরিস্তি শুনতে হইবো, ঐসব চলবে না। মিলমিশ কইরা চলবা এখন থিকা।"

মোয়াজ্জেম তার সাড়ে ছয় ফিট লম্বা শরীর কাঁপিয়ে হাসে। "ইয়েস স্যার! কিন্তু আমি আপনাকে বলতেসি স্যার, আম্বিয়ারে আমার হাতে ছাইড়া দ্যান, ওরে আমি এক সপ্তার মধ্যে সোজা করে ফেলবো। রোজ সকালে আমার সাথে এক ঘন্টা ব্যায়াম করলেই ও মানুষ হয়ে যাবে!"

প্রফেসর হক বলেন, "তোমার সাথে এক ঘন্টা ব্যায়াম করলে ও মরা মানুষ হইবো। গতর খাটার জন্য তো তুমি আছো, আম্বিয়ার কাম যন্ত্রপাতি লইয়া। ওর তো পালোয়ান হইয়া কাম নাই। বোজলা? এইবার যাও, দুইজনে মিলা মিশা কাম করো গা। ফড়িংগুলির কাছ থিকা আইজকা পর্যন্ত কোন রিপোর্ট আইলো না, চিন্তায় আছি।"

মোয়াজ্জেম উঠে আড়মোড়া ভাঙে। তারপর খটাশ করে একটা স্যালুট দেয় কেবিন কাঁপিয়ে। "স্যার ইয়েস স্যার!"

প্রফেসর হক কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ ফিরিয়ে আবার কাজ করতে থাকেন। মিনিট খানেক পরই বাইরে কিছু দূরে চাপা হুঙ্কার শুনতে পান, "আম্বিয়া! ইউ ব্লাডি মাদার্চোদ! এইদিকে আসো, এই বাক্সটা খোলো জলদি! মুভ ইওর ফ্যাট বাট রাস্কেল! কুইক কুইক!"

প্রফেসর হক দীর্ঘশ্বাস ফেলে লগবুক ওপেন করেন, তারপর মোয়াজ্জেমের খাতায় একটা লাল ক্রস দিয়ে রাখেন। তারিখের জায়গায় লেখা, দিন ০৬।

২.
প্রফেসর হককে সব বিজ্ঞানীই কম বেশি দুয়ো দিয়েছিলেন প্রজেক্টের শুরুতে। সময়ভ্রমণকে অ্যালকেমির সাথে তুলনা দিয়ে দুনিয়ার বড় বড় বিজ্ঞান পত্রিকা বিজ্ঞানী হকের তুলা ধুনে সোয়েটার বানিয়ে ছেড়েছিলো। এগিয়ে এসেছিলো শুধু তার দেশের লোক, চাপাতি মফিজ।

"স্যার, আমি জানি আপনি পারবেন।" চাপাতি মফিজ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিলো। "আমি স্যার বদ লোক, বহুত খুন খারাবি কইরা পয়সা বানাইছি, কিন্তু আমি লোক চিনি। আপনি পারবেন। আপনি স্যার সব কিছু আমার হাতে ছাইড়া দেন।"

প্রফেসর হক সেই থেকে নিশ্চিন্তে সব কিছু চাপাতি মফিজের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। মাসখানেক পরই পত্রিকায় প্রফেসর হকের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর খবর বেরোয় ফলাও করে। বিজ্ঞান পত্রিকাগুলি খবর ছেপেছিলো, টাইম ট্র্যাভেলার'স ট্র্যাভেলিং টাইম ইজ আপ নাউ।

চাপাতি মফিজ এসে বলে, দেখেন স্যার কত্ত বড় চুতমারানি এরা।

প্রফেসর হক ওয়েবসাইটে নিজের মৃত্যু সংবাদগুলি খুঁটিয়ে পড়ে কিছুটা মন খারাপই করেছিলেন। লোকজন কী বদ! মরা মানুষের পিছনে লাগতেও ছাড়ে না।

চাপাতি মফিজ চেষ্টার কোন ত্রুটিই করেনি। আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাব বানিয়ে দিয়েছে আফ্রিকার এক মরু এলাকায়। দুনিয়ার নানা কোণ থেকে খুঁজে এনেছে প্রফেসর হকের সহকর্মীদের। তারা সবাই জানেও না কী নিয়ে কাজ হচ্ছে, প্রফেসর হককে তারা ডক্টর চৌধুরী নামে চেনে।

প্রথম রোবটটা যেদিন ফিরে এলো এক হাজার বছর আগের ছবি তুলে, সেদিন প্রফেসর হক মরুর আকাশের নিচে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকক্ষণ। ওপরে অনেক তারা মিটমিট করছে, নিচে তিনি অন্ধকারে শীতল বাতাসে দাঁড়িয়ে। মহাবিশ্বের এক গোপন সিন্দুকের চাবি যেন তিনি কুড়িয়ে পেয়েছেন।

এরপর বাকিটা সময় কেটে গেছে টাইমশিপ তৈরিতে। ভলান্টিয়ার যোগাড়ও মফিজই করেছে। গোলাম আম্বিয়া বাংলাদেশে আণবিক শক্তি কমিশনে কাজ করেছে অনেকদিন, আর মেজর মোয়াজ্জেম হোসেন মৌরিতানিয়ায় জাতিসংঘ শান্তি মিশন থেকে দেশে ফিরে মোটে অবসর নিয়েছে। দু'জনেই মোটা টাকা পেয়েছে এককালীন, অতীতে গিয়ে ফিরে আসা যাবে শুনে তারা আর আপত্তি করেনি।

প্রফেসর হক টাইমশিপ বোঝাই করেছেন নানা যন্ত্রপাতি দিয়ে। তাঁর উদ্দেশ্য নানা রকমের তথ্য সংগ্রহ। মাটি, বাতাস, পানির গুণাগুণ মাপা, নমুনা সংগ্রহ, আর আশপাশের ছবি তোলা। আশপাশ বলতে অবশ্য তিনি কয়েক হাজার কিলোমিটার ব্যাসার্ধ ধরে নিয়েছেন। তাঁর নিজেরই আবিষ্কৃত রোবটবেলুন শুধু ফাঁপিয়ে ছেড়ে দেবেন, তারাই এদিক সেদিক ঘুরে আবার জায়গামতো ফিরে আসবে ছবি নিয়ে। আর আছে ফড়িং রোবট, তারা সূর্যের শক্তিতে ওড়ে, তারা ছবি তুলবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ক্যামেরা দিয়ে, আশেপাশের ল্যান্ডস্কেপের। কেউ টেরটিও পাবে না তাদের উপস্থিতি। পরে সেই সূক্ষ্ম ছবিকে ম্যাগনিফাই করে দেখবেন প্রফেসর হক। ছয় হাজার বছর আগের পৃথিবীর চেহারাটা কম্পিউটারে গেঁথে নিয়ে আবার বর্তমানে ফিরে আসবেন, এ-ই ছিলো পরিকল্পনা।

৩.
আম্বিয়া দুপুরে খাওয়ার সময় আবারও বিচার নিয়ে এলো। "স্যার, মোয়াজ্জেম আমারে খালি মাদার্চোদ কইয়া গালি দেয়। স্যার আপনি একটা বিচার করেন!"

মোয়াজ্জেম বিশেষ স্যুপের প্যাকেট খুলে গরম পানিতে মেশাতে মেশাতে বললো, "আম্বিয়া, তোমার লজ্জা হওয়া উচিত! শরম করে না, এইসব আজেবাজে কথা বলো স্যারের সামনে? তোমার খারাপ লাগলে চলো মারামারি করি!"

আম্বিয়া বিষদৃষ্টিতে মোয়াজ্জেমের দিকে তাকালো শুধু, মুখে কিছু বললো না।

প্রফেসর হক মহা বিরক্ত হয়ে মোয়াজ্জেমকে বললেন, "মোয়াজ্জেম, তোমারে কী কইলাম সকালে?"

মোয়াজ্জেম কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, "কী করমু স্যার, অভ্যাস। আইলসা লোক দেখলেই জিহ্বা সুলসুল করে।"

প্রফেসর হক বললেন, "ফড়িংগুলি রিপোর্ট করছে কোনোটা?"

আম্বিয়া গোমড়ামুখে বললো, "না স্যার।"

প্রফেসর হক বললেন, "বেলুন থিকা কোন সাড়াশব্দ পাইলা?"

আম্বিয়া স্যুপ খেতে খেতে বললো, "একটু আগে আবার চেক করছিলাম স্যার। সিগন্যাল স্ট্রেংথ দেইখা মনে হইলো বারোশো কিলোমিটার দূরে আছে।"

প্রফেসর হক মনে মনে মাপলেন। ইয়োরোপের মাঝামাঝি পর্যন্ত গেলেই কাজ হয়ে যাবে তাঁর।

আম্বিয়া বললো, "স্যার, মোয়াজ্জেমরে বলেন সোলার সেলগুলি সব বসাইয়া ফেলতে। আমার আরো পাওয়ার লাগবো কালকে থিকা।"

প্রফেসর হক বললেন, "মোয়াজ্জেম, আজকে বিকালে সেলগুলি বসানো শুরু করো তাইলে।"

মোয়াজ্জেম বললো, "স্যার, আম্বিয়া হাত লাগাইলে কাজ তাড়াতাড়ি হইতো।"

আম্বিয়া বললো, "আমার তো মনিটরিং করতে হইবো। তুমি এতবড় শইলটা লইয়া কতগুলি সেল বসাইতে পারবা না? তুমি না কত হাতিঘোড়া মারসো?"

মোয়াজ্জেম চোখ রাঙায়, "আম্বিয়া, রোসো! খাওনটা খালি শ্যাষ হোক!"

আম্বিয়া বললো, "স্যার, মোয়াজ্জেম যদি আমারে আর একবারও মাদার্চোদ কইয়া গাইল পাড়সে, আমি কইয়া দিলাম, আমি আর কোন কাম করুম না!"

প্রফেসর হক বললেন, "মোয়াজ্জেম, দুষ্টামি বাদ দিয়া কাম করো, আম্বিয়ারে তার নিজের কাম করতে দ্যাও। আর লগে একটা রেডিও আর একটা ডার্ট গান লইয়া যাইও।"

মোয়াজ্জেম বললো, "স্যার, ডার্ট গানের বদলে আসল বন্দুক রাখলে ভালো হইতো। এইদিকে কি হোস্টাইল এনিমি থাকতে পারে?"

প্রফেসর হক বললেন, "মরুভূমির মধ্যে আছি ... তারপরও কিছু বলা যায় না। আশেপাশে লোকজন চলে আসতেও পারে। আর শোনো মন দিয়া! কোন প্রাণহরণ চলবে না। আমরা এখন ছয় হাজার বছর অতীতে আছি। একটা প্রাণী মারা মানে ভবিষ্যতে পুরা একটা বংশ ধ্বংস করা। খুব খিয়াল কইরা চলবা।"

খাওয়া শেষে আম্বিয়া আর মোয়াজ্জেম বেরিয়ে গেলে প্রফেসর হক আবারও বসলেন কাজে। একটা রোবট, যার নাম রাখা হয়েছে পেলিক্যান, ফিরে এসেছে কিছুক্ষণ আগে। পেলিক্যানও সূর্যের শক্তি কাজে লাগিয়ে ওড়ে, কিন্তু তার কাজ ফড়িঙের চেয়ে ভারি। সে মিষ্টি জলের সন্ধান করে তার ঠোঁটে ভরে নিয়ে এসেছে। প্রফেসর হক বসে বসে তার উড়ালের তথ্য বিশ্লেষণ করতে লাগলেন। ছয় হাজার বছর অতীতে জিপিএস ট্র্যাকিঙের সুবিধা নেই, তাঁকে অতি আদিকালের সার্ভে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পেলিক্যানের গতিপথ হিসাব করতে হবে, দেখতে হবে জলের খোঁজ সে এই মরুভূমি থেকে কোথায় কত দূরে গিয়ে পেলো। এরকম আরো কয়েকটা পেলিক্যান চারদিকে ছড়িয়ে আছে, তারা ফিরলে আশেপাশে জলের উৎস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

কাজ করতে করতেই প্রফেসর হক শুনতে পেলেন, মোয়াজ্জেম ধমকাচ্ছে আম্বিয়াকে, "আমি এই হেভি হেভি খাটনি খাটমু, আর তুমি মাদার্চোদ বইয়া বইয়া আরাম করবা? চলো আমার লগে! হাত লাগাইবা না মানে? চাইর হাত পায়ে কাম করামু তোমারে দিয়া, ইউ ব্লাডি ফুল ... !"

প্রফেসর হক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লগবুক খুলে মোয়াজ্জেমের নামে বারোটা লাল ঢ্যাঁড়া কাটলেন।

৪.
নবম দিনের মাথায় ফিরে এলো প্রথম ফড়িংটা।

প্রফেসর হক ছবিগুলি দেখে গম্ভীর মনে গোঁফ চোমড়াচ্ছিলেন, আম্বিয়া হন্তদন্ত হয়ে আবার মোয়াজ্জেমের নামে বিচার নিয়ে এলো।

"স্যার, আইজকা এই খবিশ আমারে বৈতল ডাকসে স্যার!" আম্বিয়া উত্তেজিত কণ্ঠে বলে।

প্রফেসর হক বিরক্ত হয়ে বলেন, "বৈতল কী?"

আম্বিয়া বলে, "এইটা স্যার একটা খুবই খরাব গালি।"

প্রফেসর হক বলেন, "আম্বিয়া যাও তো, কাম করো গিয়া। আমারে কাম করতে দ্যাও।"

আম্বিয়া স্ক্রিনে ছবিগুলি দেখে চমকে উঠলো। "স্যার, এইগুলি কোথাকার ছবি?"

প্রফেসর হক বললেন, "আমার হিসাব বলতেসে মিশরের।"

আম্বিয়া থতমত খেয়ে দেখতে থাকে ছবিগুলি।

প্রফেসর হক ছবিগুলি দেখে কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারেন না। ছবিতে নদী আছে, গাছপালা মরুভূমি পাথুরে প্রান্তর সবই আছে, কিন্তু কোন লোকালয় নেই। অথচ কোঅর্ডিনেট যা হিসাব করে বার করেছেন তিনি, তাতে করে এখানে প্রাচীন মিশরীয়দের বেশ কিছু নগরাঞ্চল থাকার কথা।

আম্বিয়া মাথা চুলকাতে চুলকাতে বেরিয়ে যায়।

খানিক বাদেই মোয়াজ্জেম এসে বললো, "স্যার, এই মিশনে আসলে একজন লেডিস দরকার ছিলো। এই অমানুষ আম্বিয়ার বদলে স্যার কোন মিস চম্পা-চামেলিকে যদি নিতেন, সময়টা ভালো কাটতো। রোজ এই কুইড়া বদমাইশটার মুখ দেখতে হয় ঘুম থিকা উইঠা!"

প্রফেসর হক গম্ভীর হয়ে যান। "মোয়াজ্জেম, কোন কাজের কথা বলবা?"

মোয়াজ্জেম গোমড়া মুখে বলে, "না স্যার। সুখদুঃখের আলাপ করতে আসছিলাম আপনার সাথে। আম্বিয়া অমানুষটার সাথে তো আসলে কথা বলা যায় না। সে বুঝে গাইল আর মাইর। আপনি ব্যস্ত, বুঝি নাই স্যার। আসি এখন।"

মোয়াজ্জেম বেরিয়ে যাবার পর প্রফেসর হক লগবুক খুলে মোয়াজ্জেমের নামে পাঁচটা লাল ঢ্যাঁড়া দিয়ে রাখেন।

৫.

পরের পাঁচ দিনে ফিরে এলো বাকি ফড়িংগুলিও। কিন্তু ফলাফল কম বেশি এক। লোকালয়ের কোন চিহ্ন নেই।

সবচেয়ে অস্বস্তিকর ছবি রাতের। আগুনের কোন নমুনাই নেই কোন ফড়িঙের ছবিতে। এর একটাই অর্থ, মানুষের কোন বসতি নেই। অথচ প্রফেসর হক হিসেব করেই ফড়িংগুলিকে পাঠিয়েছেন।

আম্বিয়া আর মোয়াজ্জেম প্রফেসর হকের অস্থিরতা দেখে আর বিরক্ত করলো না তাঁকে।

মোয়াজ্জেম বাইরে বেরিয়ে এসে সিগারেট ধরিয়ে বললো, "আম্বিয়া, ডার্লিং, সমস্যাটা কী?"

আম্বিয়া দাঁত খিঁচিয়ে বললো, "আশেপাশে কোন মানুষ নাই।"

মোয়াজ্জেম বিড়বিড় করে বললো, "ড্যাম! মানুষ না থাকুক, মেয়েমানুষ থাকা উচিত ছিলো! আর কত?"

আম্বিয়া সন্দিহান চোখে মোয়াজ্জেমকে দেখতে দেখতে বলে, "মতলব কী তোমার?"

মোয়াজ্জেম গালে হাত ঘষতে ঘষতে বললো, "আরে আশেপাশে গ্রামগঞ্জ থাকলে একটা ছেরিরে ধইরা নিয়া আসা যাইতো। অ্যামনে কইরা আর কতদিন যাইবো? একটা চাহিদা থাকে না মানুষের?"

আম্বিয়া বললো, "ঐ সাবধান! হুঁশিয়ার! কোন তাফালিং চলবো না। এইখানে একটু ঊনিশ বিশ হইলে কিন্তু আসল সময়ে পুরা খবর হইয়া যাইবো কইলাম!"

মোয়াজ্জেম হাসিমুখে পকেট থেকে একটা কনডমের প্যাকেট বার করে দেখায়। "তোমার মতো বাঙ্গু পাইসো আমারে? আমরা সচেতন। মোজা পইরা হাঁটি।"

আম্বিয়া বলে, "ফুলাইয়া বেলুন বানাইয়া কানের লগে বাইন্ধা রাখো গিয়া। স্যারে কী কইলো শুনো নাই? আশেপাশে জনমনিষ্যি নাই!"

মোয়াজ্জেম চোখ টিপে হাসে। "তাইলে রাত্রে সাবধানে ঘুমাইও!"

আম্বিয়া ফ্যাকাসে মুখে অন্যদিকে হাঁটা ধরে। মোয়াজ্জেম ঠা ঠা করে হাসে।

৬.

আরো চারদিন পর যখন বেলুনরোবট ফিরে আসে, তখন প্রফেসর হক অস্থির হয়ে ওঠেন।

বেলুন রোবটের তোলা ছবি শুধু বিস্ময়করই নয়, আতঙ্কজনকও। সে ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিস্তৃত মরুভূমির মধ্যে কিছু ইতস্তত সুতোর মতো সরু নদীর চিহ্ন, পরিষ্কার নীল নদ, মরুভূমির সীমানা পেরিয়ে নিশ্ছিদ্র সবুজ জঙ্গল, ভূমধ্যসাগর, আর তার ওপাশে ... আবারও নিশ্চিদ্র জঙ্গল। মানুষের সভ্যতার কোন চিহ্ন সেখানে নেই। রাতের বেলা তোলা ছবিতে চাঁদের আলো ছাড়া আর কোন আলোর চিহ্ন নেই। আগুন নেই কোথাও এতটুকু। নীল নদের তীরে নেই কোন বসতির চিহ্ন।

মাত্র ছয় হাজার বছর আগের কথা। অথচ কোন মানুষের চিহ্ন নেই কোথাও।

প্রফেসর হক উত্তেজিত হয়ে পায়চারি করতে লাগলেন। এমনটা হবার কথা নয়, এমনটা কখনোই হবার কথা নয়।

আম্বিয়া এসে ধরা গলায় বললো, "স্যার আমি ক্যালিব্রেশন নিজের হাতে চেক করসি। আমরা ছয় হাজার বছর আগেই আছি। কোন ভুল হয় নাই।"

প্রফেসর হক বললেন, "আকাশের ছবি তুলবা আজকে রাতে। স্টেলার ম্যাপ মিলাইয়া দেখবা ঠিকাছে কি না। কোন একটা গণ্ডগোল হইসে। নাইলে মানুষের আলামত নাই কেন?"

মোয়াজ্জেম বলে, "স্যার, ডাইনোসরের আমলে আইসা পড়লাম না তো?"

প্রফেসর হক বললেন, "না, আমাদের এনার্জি লেভেল এতো বেশি অতীতে যাওয়া সাপোর্ট করবে না।"

মোয়াজ্জেম বলে, "স্যার, তাহলে এক কাজ করি। এয়ার স্কুটার লইয়া আমি আর আম্বিয়া দুইটা চক্কর দিয়া দেইখা আসি আশেপাশে।"

প্রফেসর হক গোঁফ চোমড়ান। "খাড়াও, স্টেলার ম্যাপ মিলাইয়া দেখি। আকাশের তারাগুলি ছয় হাজার বছর আগে যেমন থাকার কথা, যদি তেমনই থাকে, তাহলে আমরা ঠিক সময়ে আছি।"

৭.
সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় আম্বিয়া জানালো, স্টেলার ম্যাপ নির্ভুল। ছয় হাজার বছর আগেই আছে টাইমশিপ।

মোয়াজ্জেম বললো, "স্যার, তাহলে অনুমিত দেন। চক্কর দিয়ে আসি।"

প্রফেসর হক বললেন, "ঠিক আছে। কিন্তু ভূমধ্যসাগর পার হইও না। মিশরের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত রেঞ্জটা দেইখা আসো খালি। লুক্সর থিকা মেমফিস ... এর মধ্যে কিছু না কিছু থাকা উচিত।"

মোয়াজ্জেম বললো, "পিরামিডের আশেপাশে কি নামতে হবে স্যার?"

প্রফেসর হক বললেন, "পিরামিড বানাইতে মানুষের আরো দুই হাজার বছর সময় লাগবে। শনের ঘর পাইলেই আমি খুশি। দেখো কী পাও।"

এয়ার স্কুটারও একটা বেলুন, তার সাথে একটা শক্তিশালী ইমার্জেন্সি জেট আছে শুধু। বাকিটা সময় সৌরবিদ্যুত চালিত একটা ছোট মোটর দিয়ে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

মেমফিস আর লুক্সর, কোন দিকে কে যাবে, তা নিয়ে মোয়াজ্জেম আর আম্বিয়ার মধ্যে একটা তর্ক পাকিয়ে উঠছিলো, প্রফেসর হক ঝাঁঝিয়ে উঠে মোয়াজ্জেমকে উত্তরে মেমফিসে যাবার হকুম দিলেন। মোয়াজ্জেম কাঁধ ঝাঁকিয়ে রাজি হয়ে গেলো।

প্রফেসর হক দু'জনকে সাতদিনের রসদ দিয়ে বিদায় জানালেন। এই সাতদিন তাঁকে একা একা এই বিরাট নির্জন মরুভূমিতে বসে বসে ছবিগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে।

কেবিনে ঢুকে প্রফেসর হক দরজা আটকে আবার বসলেন কম্পিউটারের সামনে। তাঁর সার্ভের তথ্যে কোন ভুল নেই, এ নিয়ে তিনি মোটামুটি নিঃসন্দেহ, মরুভূমির মাঝে মিশনের আগে এ নিয়ে পুরো একটি মাস তিনি পরীক্ষা করেছেন, স্যাটেলাইটের ডেটার সাথে মিলিয়ে ক্যালিব্রেট করেছেন সবকিছু। কাজেই ফড়িঙের তোলা ছবিগুলি ভুল ঠিকানার নয়, তিনি নিশ্চিত। বেলুন থেকে তোলা ছবিগুলিতে তো দুই মহাদেশের সব কিছুই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কোন ছবিতেই মানুষের বসবাসের কোন চিহ্ন নেই। এমন তো হতে পারে না।

তিনি আবার সব ছবি খুলে মন দিয়ে দেখতে লাগলেন এক এক করে।

৮.
ছয় দিনের মাথায় ফিরে এলো আম্বিয়া। ভয়ানক উত্তেজিত সে।

"স্যার, মাত্র একজন মানুষ পাইসি স্যার!" বেলুন থেকে নেমেই হাঁপাতে হাঁপাতে বললো সে।

প্রফেসর হক ছুটে এলেন, "ছবি কই?"

আম্বিয়া ক্যামেরা এগিয়ে দিলো। প্রফেসর হক বললেন, "স্কুটারটা প্যাক কইরা আসো আমার কেবিনে। শুনি কী ঘটসে।"

ক্যামেরা থেকে ছবি নিয়ে স্ক্রিনে দেখতে লাগলেন প্রফেসর হব। আম্বিয়া এক মগ চা হাতে ঢুকলো কেবিনে।

আম্বিয়ার দূর পাল্লার শক্তিশালী লেন্সে নিখুঁতভাবে ধরা পড়েছে মানুষটা। মাঝারি গড়ন, মুখে দাড়িগোঁফ, প্রায় উলঙ্গ, পরনে শুধু একটা লতাপাতার কৌপিন। গায়ের রং কালচে, চেহারার গড়ন আবিসিনীয়দের মতো। সব ছবিতেই তার হাত খালি। কোন অস্ত্র বা যন্ত্র নেই হাতে।

"মাত্র একজনরেই পাইলা?" প্রফেসর হক হতাশ হয়ে বললেন।

"জ্বি স্যার।" আম্বিয়া সড়াৎ করে চায়ে চুমুক দেয়।

"লোকটার সাথে যোগাযোগের কোন চেষ্টা করো নাই?"

"না স্যার।" আম্বিয়া চা খায় মন দিয়ে।

"ক্যান?"

আম্বিয়া হাসে। "স্যার, আমি যদি বেলুন থিকা নাইমা ওরে কিসু বলতে যাইতাম, ও আমারে দেবতা মনে কইরা পূজা শুরু করতো। তারপর স্যার আমরা আসল সময়ে ফিরলে দেখা যাইতো সারা দুনিয়ায় আমারে লোকে প্রাচীন দেবতা হিসাবে চিনে!"

প্রফেসর হক মাথা দোলান। "হুমম। খুব সত্য। ভালো করসো যোগাযোগ না কইরা। তাছাড়া লোকটা তোমারে মাইরও দিতে পারতো।"

আম্বিয়া ঢোঁক গেলে। "জ্বি স্যার। জংলি তো।"

প্রফেসর হক বলেন, "আশেপাশে কোন বসতি পাও নাই?"

আম্বিয়া বললো, "না স্যার। ছবিগুলি দেখেন একটু ... সব কমবেশি ফড়িঙের ছবির মতোই। একটা কোন ঘরবাড়ি নাই স্যার। দালানকোঠা ক্ষেতখামার কিচ্ছু নাই।"

প্রফেসর হক বলেন, "তাহলে এই লোকটা একা একা ঘুরতেসে ঐ জায়গায়?"

আম্বিয়া বললো, "জ্বি স্যার। ওরে আমি সারাদিন ফলো করসি। পুরাই জংলি স্যার। টিলার গায়ে একটা গর্তের মধ্যে থাকে। সারাদিন ঘুরেফিরে, ফলমূল খায়, খোলা ময়দানের মধ্যে পেচ্ছাপপায়খানা করে। পুরাই অসভ্য স্যার।"

প্রফেসর হক বলেন, "হুমম। দেখি মোয়াজ্জেম কী খবর আনে।"

আম্বিয়া কিছু বলতে যাচ্ছিলো, এমন সময় কেবিনের দরজায় টোকা পড়লো।

আম্বিয়া কেবিনের দরজা খুলে দিতেই হাস্যোজ্জ্বল মোয়াজ্জেম কেবিনে ঢুকলো দুপদাপ করে। "স্যার, দেখেন কী নিয়ে আসছি!"

প্রফেসর হক ভুরু কুঁচকে মোয়াজ্জেমের পেছন পেছন বাইরে বেরিয়ে এসে ধাক্কা খেলেন।

মোয়াজ্জেম বেলুনে করে এক তরুণীকে নিয়ে এসেছে সাথে। তরুণীর গায়ের রং ভূমধ্যসাগরীয়, খাড়া নাক, কালো চোখ আর চুল, পরনে লতাপাতার সংক্ষিপ্ততম পোশাক।

প্রফেসর হক মোয়াজ্জেমের কলার চেপে ধরে বললেন, "তুমি কোন বুদ্ধিতে এই মেয়েকে তুইলা নিয়া আসলা?"

মোয়াজ্জেম লজ্জিত মুখে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো, "স্যার, কী করবো, বলেন? একা একা ঘুরতেসিলো মেয়েটা। আশেপাশে জনমনিষ্যি নাই। আমিও স্যার একটু বোরড হইয়া গেসিলাম, ভাবলাম নিচে নাইমা গল্পসল্প করি।"

প্রফেসর হক প্রচণ্ড এক ধমক দিয়ে বললেন, "গল্পসল্প মানে? তুমি এর ভাষা জানো যে গল্পসল্প করবা?"

মেয়েটা ভড়কে গিয়ে বিচিত্র শব্দে ফুঁপিয়ে ওঠে।

মোয়াজ্জেম এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়। তারপর বলে, "স্যার আপনি লোকটা বেরসিক। মাইয়াটারে ভয় পাওয়ায় দিলেন।"

প্রফেসর হক মাটিতে পা ঠুকে বললেন, "তুমি ওরে তুলে নিয়ে আসছো কেন কেন কেন?"

মোয়াজ্জেম একটা সিগারেট ধরালো। "স্যার, আসলে হইছে কী, দিনের পর দিন এইখানে কোন মেয়েমানুষ ছাড়া এই হাবিজাবি কাজ করতে করতে আমি বিরক্ত হইয়া গেছিলাম। তাই স্যার ভাব জমানোর জন্য মাটিতে নাইমা এই মাইয়ার সাথে একটু আলাপ করলাম। আর ভাষার কথা বলেন স্যার? দুনিয়ার একটা ভাষা সবাই বোঝে!" অশ্লীল হাসি ফুটে ওঠে তার মুখে।

প্রফেসর হকের মুখ থেকে রক্ত সরে যায় রাগে। "তুমি ... তুমি এই মেয়েরে ... এই মেয়ের সাথে ... ?"

মোয়াজ্জেম লাজুক হাসে। "জ্বি স্যার। তবে স্যার দোষ আমার না। ঈভ স্যার ঐ জায়গায় একা একা ঘুরতেসিলো, আশেপাশে লোকজন নাই, আমি স্যার নামতে না নামতেই আইসা আমারে জাপটাইয়া ধরছে। আমি কী করুম কন?"

আম্বিয়া এসে ফুঁসে ওঠে, "মিছা কথা স্যার! মোয়াজ্জেম স্যার ধান্ধাতেই ছিলো আশপাশ থিকা মাইয়া তুইলা আনার। ওর পকেটে আপনি কনডম পাইবেন স্যার, খুঁইজ্যা দ্যাখেন!"

প্রফেসর হক আম্বিয়ার কথা শোনেন না. বিস্ফারিত চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললেন, "মোয়াজ্জেম, তুমি মাইয়াটার নাম কী কইলা?"

মোয়াজ্জেম বলে, "ঈভ, স্যার!"

প্রফেসর হক ধীর গলায় বলেন, "ক্যামনে জানলা ওর নাম ঈভ?"

মোয়াজ্জেম বলে, "স্যার, এইটা টারজান দেইখা শিখছিলাম। ঐ যে জেইন গিয়া বলে আই অ্যাম জেইন, ইউ আর টারজান ... তারপর টারজান বলে আই টারজান ইউ জেইন ... ঐ কায়দায় স্যার ... কইলাম আই মোয়াজ্জেম ... ইউ? কয়েকবার জিগানোর পর মাইয়া কয়, ঈভ। ওরে ঈভ ডাকলে সাড়াও দেয়। ডাইকা দেখেন?"

ডাকতে হয় না, নিজের নাম শুনে মেয়েটা কান খাড়া করে তাকায় মোয়াজ্জেমের দিকে।

প্রফেসর হকের মুখ থেকে রক্ত নেমে যায়। হঠাৎ করেই যেন গোটা ব্যাপারটা বুঝে ফেলেন তিনি।

লুক্সরের কাছে এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো সেই জংলি লোকটা আদম। আর মোয়াজ্জেমের বেলুনে তুলে আনা মেয়েটা ঈভ।

আশেপাশে কোন জনবসতি নেই, কারণ আশেপাশে কোন জন নেই। মানুষের সভ্যতা এখনও শুরু হয়নি। পৃথিবীতে মাত্র দুইজন মানুষ এই খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার সালে।

প্রফেসর হক অস্ফূটে বলেন, "আশারের ক্রোনোলজি!"

মোয়াজ্জেম বলে, "স্যার?"

প্রফেসর হক ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে বলেন, "মোয়াজ্জেম, ঠিক কইরা বলো, এই মাইয়ারে কিসু করসো তুমি?"

মোয়াজ্জেম বুক টান করে দাঁড়িয়ে বলে, "স্যার, যদিও এইটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়, তারপরও কই। হ, করসি। প্রথম যেদিন দেখা হইলো সেইদিন চারবার, আর বেলুনে বাকিটা পথ ফিরতে ফিরতে এগারোবার। মোট পনেরোবার। আর কিছু জানতে চান?"

প্রফেসর হক মুখ ঢাকেন। পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাস শুরু হবে যে যুগলকে দিয়ে, তারা এখনও বিচ্ছিন্ন। আদি মাতা ঈভের সাথে সঙ্গম করে বেড়াচ্ছে কোন এক মোয়াজ্জেম হোসেন। মানুষের ইতিহাস পাল্টে যেতে পারে চিরতরে। যে ভবিষ্যৎ বর্তমানে তাঁরা ফিরবেন, সে ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অন্যরকম হতে পারে। সেখানে তাঁর বা আম্বিয়ার জায়গা না-ও হতে পারে। মোয়াজ্জেমের জায়গা হয়তো হবে মানুষের জিনের গভীরে। প্রতিটি মানুষের ভেতরে থাকতে পারে মোয়াজ্জেমের জিনের স্বাক্ষর।

মোয়াজ্জেম ঝুঁকে পড়ে ডাকলো, "স্যার, ঠিকাছেন তো? কোন সমস্যা?"

প্রফেসর হক মুখ তুলে তাকিয়ে মোয়াজ্জেমকে চাপা গলায় শুধু বললেন, "মাদার্চোদ!"



গল্পে ব্যবহৃত সব ঘটনা ও চরিত্রের নাম কাল্পনিক, বাস্তবের সাথে সাদৃশ্য কাকতালমাত্র।


মন্তব্য

যুধিষ্ঠির এর ছবি

গুল্লি

গুল্লি

গুল্লি

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বস, হেএএএএএএএএএব্বি দিসেন, মামুন ভাইয়ের "রহিমার মা" পড়ে মনে হয়েছিল "নিউ এজ অফ ডন" আপনারটা পরে মনে হইতেসে "নিউ এরা" , কঠিন ... ...

গুরু গুরু

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হা হা।
জব্বর হইসে। পুরা জোসিলা চলুক
____________
অল্পকথা গল্পকথা

খেকশিয়াল এর ছবি

ওরে হো হো হো চলুক

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

মানে একবারে সেইরকম হইসে, পুরা উড়াধুরা দেঁতো হাসি হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

রেনেট এর ছবি

প্রাঞ্জল গল্প।
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

শামীম রুনা এর ছবি

Fantastic!!!!
এক নি:শ্বাসে পড়লাম।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

মারছে! ইয়ে, মানে...

--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অনেক দিন পর উরাধুরা একটা গল্প পড়লাম!! চিরায়ত হিমু ভাই!!

ওসিরিস [অতিথি] এর ছবি

মচৎকার ভায়ে......

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হো হো হো
যান, আপনের এই গল্পের সম্মানে আইলসামি বাদ দিয়া আইজকা কাইলকাই পোস্টামু! আম্বিয়ার মতো আর আইলসামি না কইরা মোয়াজ্জেম হইয়া উঠমু!
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ঠিক।

অমিত এর ছবি

খতরনাক

মিথিলা এর ছবি

বাহাহা...কঠিন অবস্থা! খুব মজা পাইলাম!

হিমু এর ছবি

ভাই, আপনি কি বাই এনি চ্যান্স উচ্চ তালুকদার বংশীয়া?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

অসাধারণ! আপনার রসবোধ ও গল্পের স্ট্রাকচার বানানোর দক্ষতা ঈর্ষণীয়। এমন জোরদার ঘটনা আছে যে গল্পে তার এমন এক টুকরো গালাগাল দিয়ে ক্লাইম্যাক্স কী করে আপনার মাথায় এলো! আহা এমন ভাবনা যদি আমার মাথায় আসতো!

হিমু এর ছবি

এমন একটা বাজেগল্পের উদার প্রশংসার জন্যে ধন্যবাদ। এই গল্পটা আগে দু'বার লিখে মুছে দিয়েছিলাম। এবার অনেক ফাঁকফোঁকর থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ করলাম।

গল্পটার উচ্চকিত রম্যভাবের নিচে একটা শীতল গল্প আছে প্রযুক্তির ব্যবহার, ব্যবহারকারী আর পিগিব্যাকিং নিয়ে। সাবধানী পাঠকের চোখে সেটা ধরা পড়বে আশা করি।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

তানবীরা এর ছবি

হ।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নিলগ এর ছবি

গপ্পো জোষ হইসে। দেঁতো হাসি
কিন্তু মেহেরগড়ের দশ হাজার বছর আগের লোকগুলি আইসা এইবারে দিবে মাইর! দেঁতো হাসি

হিমু এর ছবি

হা হা হা ... না রে ভাই, আমি ক্রিয়েশনিস্ট না একদমই। কয়েকদিন হলো আমাকে একজন কট্টর ডারউইনীয় মোল্লা বলে তিরস্কার করেছেন। কিন্তু ক্রিয়েশনিজম নিয়ে গল্প লিখতে তো সমস্যা নেই, তাই না?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইটার একটা স্ক্রিপ্ট লেখেন কেউ ...যারা পারেন...



অজ্ঞাতবাস

দুর্দান্ত এর ছবি

আদি মাতা ঈভের সাথে সঙ্গম করে বেড়াচ্ছে কোন এক মোয়াজ্জেম হোসেন।

জব্বর হইসে। দুই একটা মোয়াজ্জেমের বাচ্চাকে চিনি বলে মনে হয়।

রানা মেহের এর ছবি

হো হো হো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

বিপ্রতীপ এর ছবি

পুরা গুল্লি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর

হিমু এর ছবি

বাজে গল্পের সব সরব সমঝদারকেই প্রাণঢালা ধন্যবাদ জানাই।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দূর্দান্ত... স্রেফ দূর্দান্ত...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এনকিদু এর ছবি

হুমম


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

মণিকা রশিদ এর ছবি

অসাধারণ!
..................................
......সবটুকু বুঝতে কে চায়!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

জাহিদ হোসেন এর ছবি

গল্পের শিরোনাম আর গল্পের বিষয়বস্তু টাইম-ট্র্যাভেল দেখে ভেবেছিলাম অতীতে গিয়ে কারো একজনের মায়ের সাথে প্রেম-মহব্বত হবে। অনেকটা "ব্যাক টু দ্য ফিউচার" ছবিটির মতো। কিন্তু আপনি একেবারে আমাদের আদি মাকে ধরে টান দেবেন, তা বুঝিনি।

কিন্তু শেষমেশ ব্যাপারটি কি দাঁড়ালো? আমরা কেউই তাহলে আদমসন্তান নই? সবাই কি তাহলে মোয়াজ্জেম-সন্তান?
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কবিতার ব্যাখ্যা যেমন কবিই ভালো জানেন, তেমনি গল্পের লেখকই ভালো বলতে পারেন তিনি কী মনে করে লিখছিলেন বা কী মেসেজ দিতে চেয়েছিলেন (যদি তেমন উদ্দেশ্য আদৌ থাকে)। পাঠকের সুবিধা হলো সে যেমন ইচ্ছে তেমন করে বুঝে নেয়। গল্পে রম্য যেমন আছে, প্রযুক্তির কথাও আছে। সবকিছু ছাপিয়ে আমি যে সত্যটুকু উপলব্ধি করেছি তা শেষের দিকে বলা আছে --

মোয়াজ্জেমের জায়গা হয়তো হবে মানুষের জিনের গভীরে। প্রতিটি মানুষের ভেতরে থাকতে পারে মোয়াজ্জেমের জিনের স্বাক্ষর।
আমরা প্রতিটি মানুষই এরকম মোয়াজ্জেমের স্বভাব ধারণ করছি। গল্পটি পড়ে এমনটিই আমার উপলব্ধি।

লীন এর ছবি

আমরা প্রতিটি মানুষই এরকম মোয়াজ্জেমের স্বভাব ধারণ করছি। গল্পটি পড়ে এমনটিই আমার উপলব্ধি।

একমত চলুক

______________________________________
বৃষ্টি ভেজা আকাশ

______________________________________
লীন

স্বপ্নহারা এর ছবি

জটিল হইছে বস!!...মহা জটিল!! তবে আরেকটু পিছে গেলে ভাল হইত...

সিরাত এর ছবি

অতি পাগলা রকমের অসাধারণ! পাঁচ দিলাম। পঞ্চাশ দিলেও মনে হয় কম হয়ে যাইতো।

থ্যাংক ইউ হিমু ভাই। সকালটা বানাইলেন!

নিলগ এর ছবি

কিন্তু মোয়াজ্জেমের তো বেলুনগুলি ছিলো! ব্যবহার করে নাই নাকি উল্লুকটা? চিন্তিত

দময়ন্তী এর ছবি

মারাত্মক! ভয়ংকর !
শেষঅবধি পড়ে কেমন শীত শীত লাগতে লাগল৷
-----------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

সুজন চৌধুরী এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
মামুন হক এর ছবি

অবিষণসম্ভব!! কবে যে এইভাবে গল্প লিখতে শিখুম!

লীন এর ছবি

ভালো লাগল। চলুক
শিক্ষনীয় বিষয়ঃ সময় পরিভ্রমণ করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীদের দলে সহকারী হিসাবে পর্যাপ্ত সুন্দরী রমণী রাখতে হবে।
______________________________________
বৃষ্টি ভেজা আকাশ

______________________________________
লীন

সুমন সবুজের কাছে [অতিথি] এর ছবি

কঠিন। সাজেস্টীভ।

সবজান্তা এর ছবি

গল্পটা গতকাল রাতেই পড়ে ফেলেছিলাম, যখন একটাও মন্তব্য পড়েনি। কী মন্তব্য করবো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে মন্তব্য করলাম -

ভালৈছে। দেঁতো হাসি


অলমিতি বিস্তারেণ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কল্পবিজ্ঞান মানেই মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দেবার মত টার্ম আর প্লট থাকতে হবে এই কথাটা আমি একেবারেই মানি না। আপনার গল্পটা প্রমাণ করল হাবিজাবি জার্গন আর ঘুরালো-প্যাঁচালো প্লট ছাড়াই চমৎকার কল্পবিজ্ঞান লেখা যায়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক অতীতে পড়া সেবা প্রকাশনীর কিছু গল্প সংকলনের কথা মনে পড়ে গেলো, পঞ্চ রোমাঞ্চ, ছয় রোমাঞ্চ, ছায়া অরণ্য, তিনটি উপন্যাসিকা, স্বর্গসৌরভ, সেই সব রহস্য ... অন্তত পঞ্চাশ থেকে ষাটটা দারুণ দারুণ গল্প, কোনটাতেই নাম বা জার্গন নিয়ে আতিশয্য নেই। তারপর ধরুন প্রফেসর শঙ্কু, বা সত্যজিতের আরো কিছু কল্পবিজ্ঞানের গল্প, প্রত্যেকটাই সরল, কিন্তু কী ধারালো! আমার কাছে কল্পবিজ্ঞানের উদাহরণ হিসেবে এগুলি বেশি প্রিয়। মানে বলতে চাইছি, কল্পবিজ্ঞান না হয়ে কল্পবিজ্ঞান হওয়া বেশি প্রয়োজন।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সিরাত এর ছবি

ছোট গল্প হিসেবে এ বা সেগুলো মজা হলেও হার্ড বা মিডিয়াম সায়েন্স ফিকশনের মূল মজা কিন্তু আরো বড় দৈর্ঘ্যে, আর হয়তো স্কোপে; তখন ওসব জার্গন চলেই আসে, ইমারশনের খাতিরে। সায়েন্স ফিকশনের মধ্যে এখন সায়েন্স-ফ্যান্টাসি নামে একটা সাব-জনরাঁ আছে, সেভাবে দেখলে সায়েন্স-কমেডি থাকবে না কেন? হাসি

তবে আমার মনে হয় আপনার এ মন্তব্যের সাথে আয়ান ব্যাংকস রাজি হবেন, পিটার হ্যামিলটনও কিছুটা। দুজনেই অল্প পড়াতেই graspable, আর 'কল্প'টাই বড় কথা।

তবে, শেষ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন আমার কাছে all about ideas। সেদিক দিয়ে দেখলে এটা ঠিকাছে। হাসি

গোপাল ভাঁড় এর ছবি

Awe-সাধারণ। সেরম ভাল্লাগ্লো।

মোয়াজ্জেম বিশেষ স্যুপের প্যাকেট খুলে গরম পানিতে মেশাতে মেশাতে বললো, "আম্বিয়া, তোমার লজ্জা হওয়া উচিত! শরম করে না, এইসব আজেবাজে কথা বলো স্যারের সামনে? তোমার খারাপ লাগলে চলো মারামারি করি!"

- আউলাঝাউলা

--------------------------------------------
<ঘ্যাচাত, ঘ্যাচাত, ঘ্যাচাত> - আমার সিগনেচার

--------------------------------------------
বানান ভুল হইতেই পারে........

দ্রোহী এর ছবি

গল্পটা পড়ে একেবারে তবদা মেরে গেলাম!

হিমু ছাড়া এই জিনিস কারো মাথা থেকে বের হওয়া সম্ভব না। বিশ্বাস হয় না কথাটা? লাগবা বাজী?

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হিমু সবাইরে গাইল দিলো, আর তারেই সবাই এইরকম প্রশংসা করতেছে?!!??!!!

লাল ঢ্যাঁড়ার হিসাবটা ধরার চেষ্টা করতেছিলাম, পারি নাই। গল্প অতি উপাদেয়!

ফাহিম এর ছবি

অফিসে বইসা পড়াটা ঠিক হয় নাই। খিক খিক কইরা হাসতাসি, আর কলিগরা পাগল ভাবতেসে। ওগোরে বুঝাইতেও পারতেসিনা ব্যপারটা...

=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

পান্থ, সচলাসিক্ত কাটাতে আজকাল লগায় না এর ছবি

অসাধারণ গল্প।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গুল্লি

আর হিম ভাইয়ের ভেতরেও থাকতে পারে মোয়াজ্জেমের জিনের স্বাক্ষর। নইলে এমন বিটলামী লেখা কেমনে বাইরায়!

মাশীদ এর ছবি

এইসব খালি তোর মাথাতেই আসা সম্ভব!
চ্রম ভালু!


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

শামীম এর ছবি

আহারে James Ussher সাহেব যদি আপনার এই গল্পটা পড়তো ... ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

হিমু এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে, বাজে একটা গল্প পড়ার জন্যে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সিরাত এর ছবি

আপনে কি অতি বিনয়ী, বোকা না আর কিছু?

যাই হোক, এ ধরণের নিম্নমানের লেখা সচলায়তনে দেয়ার জন্য তীব্র ঘৃনা প্রকাশ করলাম আপনার প্রতি। অধম জাঝা! (সমালোচনা কাকে বলে!)

দেঁতো হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

গল্প পড়ার ঠিক তিন ঘন্টা পর আমি শেষ লাইনটার মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারলাম। অসাধারণ।


পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

তোমার প্রতিভার দীপ্তিতে অভিভূত আমি।

একজন বিখ্যাত আরেকজন বিখ্যাত সম্পর্কে বলেছিলেন--"সমস্ত প্রতিভা ইয়ার্কিতেই ফুরাইলো।" তোমার ক্ষেত্রে আশা করি তেমনটি হবে না।
তোমার কাছে অনেক কিছু পাবার আছে আমাদের।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

হিমু এর ছবি

রিটন ভাই, আপনি আমাকে টেনশনে ফেলে দিলেন!



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

মূলত পাঠক এর ছবি

রিটন ভাই খুব দামি একটা কথা বলেছেন। অনেক বৈঠকী মেজাজের লোক থাকেন যাঁরা লিখলে শুধু নামই করতেন তা নয়, সাহিত্যের ভাণ্ডারে মূল্যবান সংযোজন হতো। কিন্তু আলস্যের প্রভাবে এবং উদ্যমের অভাবে তাঁরা লিখিত মাধ্যম অবধি পৌছান না। এই ব্যাপারে মানুষকে কিছুটা গেরস্ত গোছের সৃষ্টিশীল হতে হয়। আপনি যেহেতু লিখছেন কাজেই সেই প্রাথমিক (মাধ্যমগত) সমস্যাটা নেই। কিন্তু আপনার সৃষ্টিকে ব্লগোস্ফিয়ারের বাইরে সাহিত্যজগতে পৌছে দেয়ার দায়িত্বও কিন্তু আপনারই। কাজেই আলস্য না করে আমাদের সাহায্য করুন যাতে আমরা ভবিষ্যতে বলতে পারি, "ওহ্ হিমু, হ্যাঁ তাঁকে তো চিনতাম, ওই সচলে লিখতো তো আমার সাথেই, কতো লেখায় ফুট কেটেছি, এখন না হয় বিখ্যাত হয়ে গেছে, শুনলাম এক জোড়া দ্বীপও কিনেছে সেন্ট অগাস্টিন না কোথায়"।

সিরাত এর ছবি

কিন্তু গেরস্ত গোছের হতে গিয়ে ট্যালেন্ট শুকায় গেলে?

মূলত পাঠক এর ছবি

ট্যালেন্ট শুধু বোহেমিয়ার গাছে ফললে তাই হতো, তবে ভরসা এই যে সেরকম হয় না। শক্তি চাটুজ্জে যেমন প্রতি রাতে মাতাল হয়ে অমর কবিতা দিয়ে গেছেন, তেমনই লিখে গেছেন বুদ্ধদেব বসু কিম্বা সুধীন দত্ত, টিপটপ ধুতি সামলিয়েই। যা লিখলাম তার বন্দোবস্ত আমি নিজে না করলে করবেটা কে।

দ্রোহী এর ছবি

আমি তো গত তিনবছর ধরেই অপেক্ষায় আছি বইমেলাতে হিমুর একটি বই বের হবার খবর শোনার জন্য।

তবে যদ্দুর জানি স্বাধীন মিত্র একটা বই লিখেছিলো। চোখ টিপি

অনিকেত এর ছবি

হিমু,
কি আর বলব ভাই---তোমাকে আমি ভীষন ঈর্ষা করি---এবং এইটা সর্ব সমক্ষে স্বীকার করতেও আমার লজ্জা নেই!! তোমার মত এমন সর্বত্রগামী লেখনী খুব কম লোকেরই আছে--এবং এইটা কেবল সচলায়তনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়।

কিছুদিন আগে তুমি আমার একটা লেখায় মন্তব্যতে বলেছিলে যে কল্প-বিজ্ঞানে তুমি দেশী নাম দেখতে চাও। তোমার আজকের লেখা দিয়ে তুমি দেখিয়ে দিলে--আসলে সত্যিই সেটা সম্ভব।খটমটে নাম আর হামবড়া জার্গন দিয়ে মূল কাহিনীটাকে বেশির ভাগ সময়েই ভারাক্রান্ত করা হয়(বিশেষ করে লেখক যদি আমার মত কুদ্দুস হয়---মুজাইকবাল অন্য ঘটনা, অন্য স্তরের এবং অনন্য)।

কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মতামত হল---সায়েন্স ফিকশনের ক্ষেত্রে আমি একটু খটমট নামের দিকে হেলে আছি। কেন? তার একটা কারণ হতে পারে এই যে, খটমট নামগুলো প্রথমেই একটা অচেনা আবহ তৈরী করে দেয় মনে। কিম জিবান শোনার সাথে সাথে মনটা যেন প্রস্তুত হয়ে যায় কোন টানটান ফিকশনের জন্যে। ক্রুগো বা শ্যালক্স গ্রুন নিমেষের মাঝে আমাকে জানিয়ে দেয়---আমি এখন আর আমার পরিচিত প্রতিবেশে নেই। সে ক্ষেত্রে জমিলা, মদন, আবুল---এই গড়পড়তা পরিচিত নামগুলো কেন জানি সে দ্যোতনা আনে না।

আর একই ভাবে কল্প-বিজ্ঞানে আমি বিজ্ঞানের ছোঁয়াচ পছন্দ করি একটু বেশি। আমার কাছে সেই কারণেই এরা কল্প-বিজ্ঞান। প্রফেসর শঙ্কু তার প্রতিবেশি অবিনাশ বাবুকে নিয়ে উশ্রী নদীর ধারে বেড়াতে গেলেও জীবনের সঙ্কটময় মূহূর্তে তাঁকে বাচাঁয় তাঁর আবিষ্কৃত 'অ্যানাইহিলিন' অস্ত্র,ক্ষুধা নিবৃত্তিতে এগিয়ে আসে 'বটিকা ইন্ডিকা'। কাজেই একটা সময় কিছু জার্গন ব্যবহার না করে সায়েন্স ফিকশনে ঠিক মুক্তি নেই।

কিন্তু এগুলো একেবারেই আমার নিজস্ব অভিমত। তোমার যে এতে একমত হতে হবে---এমন কোন কথা নেই। আর এই গল্প দিয়ে তো তুমি প্রমাণ করেই দিলে---তুখোড় লিখিয়ে হলে নাম-টাম জার্গন-টার্গন কোন ব্যাপার না।

অনিঃশেষ শুভেচ্ছা----

হিমু এর ছবি

অবশ্যই আপনি যেভাবে লিখে স্বস্তি পান, সেভাবেই লিখবেন! এমন নয় যে আপনার লেখায় চরিত্রের নাম খটোমটো হয়েছে বলে সে লেখার আবেদন কমে যাবে। আমার যতদূর মনে পড়ে, আমি শুধু বলেছিলাম, আমার ব্যক্তিগত প্রত্যাশাটা কমে আসে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশনের আমি মুগ্ধ পাঠক ছিলাম শৈশব-কৈশোরে, কিন্তু মনেপ্রাণে চাই, নতুন নতুন ধারা তৈরি হোক, সায়েন্স ফিকশনের নতুন কাণ্ডারীরা তাঁর প্রভাববলয়ের বাইরে থেকে লিখে চলুন, তাঁরা নিজেদের শৈলী নির্মাণ করুন।

টুকিটাকি জার্গন বোধহয় আসবে (লেখার শেষে যা আমরা টীকা হিসেবে দেখি), কিন্তু একে মিনিমাইজ করে রাখলে তো পাঠকেরই সুবিধা। জার্গন যেন ফুল হয়ে ফোটে, কাঁটা হয়ে না দাঁড়ায়, পাঠক হিসেবে আমার এ-ই শুধু প্রত্যাশা।

আপনার বর্তমান গল্পের পরবর্তী পর্ব আর পরবর্তী গল্পের জন্যে দাঁত মেজে রাখলাম। অনেক উদ্দীপনা পেলাম আপনার শুভাশিসে। অশেষ ধন্যবাদ।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অতিথি লেখক এর ছবি

অমিও আপ্নেরে আরেকটু টেনশনে ফালাতে চাই। ভাই হিমু আপনি গেছেন, গেছেন আপনি। আপনারে তো আর বাচানো যাবেনা। জামাতিরা কালই আপনার নামে মিছিল বাইর করবে, আর আপনি যে শহরে থাকেন ঐ শহরে যদি জামাত নাও থাকে তাহলে নতুন অফিস বানাইয়া তারপর করবে। আর ঐ সব শীঘ্রই হতে যাচ্ছে। সো............

অতিথি লেখক এর ছবি

আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি, সেইটা হলো, আপনার এই লেখাটা যদি সাচলায়তনের জন্মদিনের আগে হতো তাহলে আমার পছন্দ সেরা তিনটি লেখার মধ্যে একটি হতো। ধন্যবাদ গুরু।

বইখাতা [অতিথি] এর ছবি

দারুণ !
ভয়ানক মজা পেলাম !
দারুণ গল্প !

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

গল্পের সামাজিক দায়িত্ব এত বহুমুখী যে, কোনটা রেখে কোনটা ফোকাস করি। শক্তি সমস্যার সমাধান আছে, কল্পবিজ্ঞান আছে, তবে সবচেয়ে বেশি মনে হয় মোয়াজ্জেমের বংশধরেরা সব বাংলাদেশেই আছে এবং তাদের পেশা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পলিটিক্স।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

"তোমার মতো বাঙ্গু পাইসো আমারে? আমরা সচেতন। মোজা পইরা হাঁটি।"

আম্বিয়া বলে, "ফুলাইয়া বেলুন বানাইয়া কানের লগে বাইন্ধা রাখো গিয়া। স্যারে কী কইলো শুনো নাই? আশেপাশে জনমনিষ্যি নাই!"

মোয়াজ্জেম চোখ টিপে হাসে। "তাইলে রাত্রে সাবধানে ঘুমাইও!"

খুদার্কসম... চ্রমৈছে

নিবিড় এর ছবি

দারুন চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

রণদীপম বসু এর ছবি

হা হা হা ! রীতিমতো জেনেটিক সমস্যায় !

লা-জওয়াব !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নবীশ [অতিথি] এর ছবি

কয়লা যায়না ধুঁলে... চোখ টিপি

তাসনীম এর ছবি

দুর্দান্ত...অসাধারণ। আগে পড়ি নাই...তর্ক বিতর্ক ও লেখায় এই গল্পের নাম এসে পড়ায় খুঁজে নিয়ে পড়লাম। এই কয়েকদিন ব্যাপি ব্লগ যুদ্ধের এই একটাই ভালো দিক পেলাম, সেইটা হচ্ছে এই গল্পটা আবিষ্কার...

++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

এক্কেরে সিরাম হৈছে .. গুরু গুরু
___________________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

খাইছে

''চৈত্রী''

রেজওয়ান [অতিথি] এর ছবি

পুরাই জিনিস হইছে। চ্রম, চ্রমার, চ্রমেস্ট।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

রসঘন, রহস্যঘন।

ঠিক বিশেষণটা খুঁজে পাচ্ছি না। ঠিক বিশ্লেষণটাও। মাথাটাও ঠিক কাজ করছে না কদিন ধরে। ভালো থাকবেন।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

পথহীন পথিক [অতিথি] এর ছবি

অসাধারণ।।

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

মুহাহাহাহা

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

লেখাটা আজকে পড়লাম। প্রিয়তে নিলাম। এরকম ছোটগল্প খুব কম পড়েছি।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।