বার্মার সাথে বাংলাদেশের আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ০৫/০৯/২০০৯ - ১১:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


প্রতিবেশী যদি মারমুখো অগণতান্ত্রিক হয়, তাহলে সমস্যাগুলি নিয়মিত বিরতিতে মাথাচাড়া দিতে শুরু করে। অদূর ভবিষ্যতে বার্মাকে নিয়ে আমরা এসব সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি।

বার্মার সাথে বাংলাদেশের সমস্যাগুলো সাদা চোখে এমনঃ

  • বার্মার সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। বার্মার কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় নাফ নদীতে প্রায়শই বাংলাদেশী ট্রলারের ওপর হামলা হয়, এমনকি গভীর সমুদ্রে বর্মী জলদস্যুরা যথেচ্ছ দস্যুবৃত্তি করে, বর্মী বা বাংলাদেশী কোস্টগার্ডের কাছ থেকে প্রতিকার মেলে না। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিতর্কের কারণে সমুদ্রবক্ষে তেল বা গ্যাসের অনুসন্ধান নিয়েও জটিলতায় ভুগছে বাংলাদেশ।

  • মুসলিম অধ্যুষিত আরাকানে বর্মী বাহিনী অস্ত্রের মুখে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে পুশ-ইন করছে নিয়মিত। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের প্রভাবশালীদের কারণে এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সেটল করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, এমনকি বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকে বিপন্ন করছে।

বার্মার সাথে সুসম্পর্ক বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই বজায় রাখতে চায়। সড়কপথে বার্মার সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধির আলাপ চলছিলো গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এ-ও শুনেছিলাম, বার্মার বিস্তৃত সমুদ্রতীরবর্তী পোড়ো জমি বাংলাদেশী কৃষকদের দিয়ে চাষ করানো হবে মুনাফা ভাগাভাগির ভিত্তিতে। এসব সম্ভাবনা এখন দূরবর্তী মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশে সম্প্রতি প্রাকৃতিক গ্যাসের যে সংকট দেখা দিয়েছে, এর প্রেক্ষিতে বার্মার সাথে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে গ্যাস বাণিজ্যের পথ উদার করার উদ্যোগ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া উচিত। প্রয়োজনে আমাদের বাপেক্স বার্মায় গ্যাস অনুসন্ধানের প্রস্তাব দিতে পারে বার্মার জান্তা সরকারকে, যেভাবে ইউনোকল-অক্সিডেন্টাল-কেয়ার্ন-শেভরন আমাদের দেশে অনুসন্ধান চালায়। গ্যাসক্ষেত্রে আবিষ্কৃত হলে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে এই গ্যাসের কিছুটা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আর কিছুটা বাজারদরে কিনে এনে দেশের গ্রিডে সংযোগ করা যেতে পারে। এতে করে বাংলাদেশ যেমন জ্বালানি সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে পারে, তেমনি বাপেক্সকে পঙ্গু করে রাখার চর্চাটাও বন্ধ থাকতে পারে কিছুদিন।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

উত্তর কোরিয়ার সাথে বার্মার দহরম মহরম চিন্তার বিষয়। এমনিতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমানা তেমন সুরক্ষিত নয়। নিজেদের বঙ্গোপসাগর এর তেল, গ্যাস রক্ষা বাংলাদেশ এর জন্য মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়াবে। পররাষ্ট্র আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেটা নিয়ে কতটুকু ভাবছে !

ফরিদ এর ছবি

বাপেক্সের কথা বলতে গেলে ওএনজিসির (ONGC) নামও চলে আসে। এখন ওদেরকে রেখে রেখে বাপেক্সরে কাজ দেবে জান্তারাজ তেমনটি হওয়া মুশকিল।

ওএনজিসিও কদিন আগ পর্যন্তও বাপেক্স টাইপের সরকারী ঘুষদালালীতে গিজগিজে কোম্পানী ছিল, তারপরে মনে হয় সেমি বেসরকারী করার ফলে জাদুর প্রদীপের ঘষায় এক ধাক্কায় ওয়ার্ল্ড ক্লাস পেট্রোকোম্পানীতে পরিণত হয়।

ঠিক আমাদের সরকারী প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারী করলে যা হয় তার সম্পুর্ণ ১৮০ ডিগ্রী অপজিট রিএকশন মন খারাপ

নৈষাদ এর ছবি

মায়ানমারের সাথে বাংলাদেশের আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ব্যাপারে আমরা মনে হয় খুব একটা এগোতে পারছি না। রোহিঙ্গা শরণার্থীর ব্যাপারটাই ধরা যাক। একসময় জানতাম উখিয়াতে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প দু'টাতে জন্ম-বৃদ্ধির হার ছিল ৫+, সেই তুলনায় প্রত্যাবাসনের হার ছিল একেবারেই নগন্য। মায়ানমার সরকার প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না। এত ছিল অফিসিয়াল হিসাব। আন-অফিসিয়ালি কী পরিমানে রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করত তার কোন হিসাব ছিল না। অপরাধী তৈরীর একটা কারখান হয়ে গেছল। এখন কী অবস্থা জানিনা।

বাপেক্সের প্রস্তাবটা ইন্টারেস্টিং। ফরিদ সাহেব ওএনজিসির কথা বলেছেন, যা আমাদের পেট্রোবাংলারই সমতুল্য। ওএনজিসি বিদেশ (Videsh), যা ওএনজিসির একটা সাবসিডিয়ারী এবং ভারতের বাইরে জ্বালানি অনুসন্ধান করে, এই মুহূর্তে মায়ানমারে ব্লক A1 এবং A3 তে কাজ করছে। বাপেক্সের দেশের বাইরে কাজ করার জন্য একটা ইউনিটতো হতেই পারে।

মায়ানমার কিন্তু বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারতে গ্যাস রপ্তানীর প্রস্তাব বাংলাদেশকে দিয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার 'হুইলিং চার্জ' জাতীয় কিছু পেত। এখন এই জ্বালানি সংকটে হয়ত মধ্যবর্তীকালিন কোন সমাধান পাওয়া যেত। আমাদের ভয় ছিল ভারত আমাদের এখান থেকে গ্যাস রপ্তানীর কোন ষড়যন্ত্র করছে কিনা। দুঃখজনক হল, আমাদের অতীত অভিজ্ঞতার জন্য আমরা আমাদের নীতি নির্ধারকদের বিশ্বাস করতে পারছিনা, ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি অনেক কিছুতে। তারপর আছে রাজনীতি। এ ধরনের বড় বড় পরিকল্পনাগুলোতে আলাপ আলচনার মাধ্যমে কোনটা দেশের জন্য ভাল কোনটা খারপ এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছিনা।

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

বাংলাদেশ- বার্মার সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশের এখনই সতর্ক হওয়া দরকার।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

সবজান্তা এর ছবি

এ বিষয়ে অনেকটা দায় নিতে হবে খালেদা জিয়ার জোট সরকারকে। তারা দৃশ্যত ভারতের বিরোধিতা করে, "লুক ইস্ট" নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে বার্মাকে প্রচুর আস্কারা দিয়েছে। প্রতিদানে বার্মাও এখন এসে আমাদের ইয়ে মেরে দিয়ে যাচ্ছে।


অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

বাংলাদেশের উচিত খুব দ্রুত বিভিন্ন দেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের মাধ্যমে জনশক্তি স্থানান্তরের ব্যবস্থা গড়ে তোলা। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে মালদ্বীপ বা পশ্চিম আফ্রিকার কথা। মালদ্বীপে উচ্চশিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত জনবলের চাহিদা রয়েছে, আমরা অনায়াসে সেই শূন্যস্থানগুলি পূরণ করে মালদ্বীপে একটি ছোটো বাংলাদেশি কমিউনিটি গড়ে তুলতে পারি। একই কথা খাটে পশ্চিম আফ্রিকাতেও। বাংলাদেশ সরকার সিয়েরালিওন বা লাইবেরিয়ার সাথে চুক্তি করতে পারে, সড়ক-বিদ্যুৎ-স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ আংশিক বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি দিয়ে সেখানে একটি প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটি স্থাপন করতে পারে। বাংলাদেশের জনশক্তি শুধু কামলা হিসেবে "রপ্তানি"র ধারণা থেকে সরে এসে এই জনশক্তিকে দেশের বাইরে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের চিন্তা করতে হবে এখন থেকে। প্রতিবেশী বার্মার সাথে এমন কিছু পাইলট প্রকল্প শুরু করা যেতে পারে, গ্যাস এক্সপ্লোরেশন সম্ভাব্য সকল প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ফরিদ এর ছবি

জনসংখ্যা বিস্ফোরনের লাগাম টানার কাঁদুনি গেয়েই যারা হাল ছেড়ে দেন তাদের প্রতি আমার মহা বিরক্তি। প্রতি বছর যে ত্রিশ পয়ত্রিশ লাখ মুখ আসছে তাদের একটা সাইজেবল অংশকে দিব্যি রলোকেট করা যায় 'সরকারী উদ্যোগ' নিলে। আমার প্রায়ই মনে হয় আমরা তৃতীয় বিশ্ব চতুর্থ বিশ্বকে বিশাল আগিয়ে নিতে পারি। (আফ্রিকা, লাতিন আম্রিকা)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।