আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত লাল ডিমাই সাইজের (নাকি ডাবল ডিমাই?) সেই সমগ্র শিশু সাহিত্য আমার হাতে পড়ে মাজার জোর হারিয়ে খণ্ডবিখণ্ড হয়েছে কয়েকবার। শেষবারের মতো গুঁড়ো গুঁড়ো করার পর আমার ভাই রেগেমেগে একটা হার্ড কাভার সুকুমার সমগ্র কিনে আনলেন কোত্থেকে যেন। কিন্তু কিমাশ্চর্যম, ওতে আমাদের কারোই রুচি হয় না, না আমার ভায়ের, না আমার, না আমার ছোট্ট ভাগ্নির, বইটা পড়ে পড়ে বুকশেলফের কাঁচের ওপাশ থেকে আমাদের দেখে আর ধূলো খায়। বইয়ের ভেতরে যা লেখা আছে, তা কয়েকশো বার পড়া হয়ে গেছে, বই বার করা হয় ছড়ার কোনো লাইন নিয়ে তর্ক বাঁধলে রেফারেন্স হিসেবে। তা না হলে হেড আপিসের বড় বাবু, কাঠবুড়ো, কাতুকুতু বুড়ো, রামগরুড়ের ছানা, হিজবিজবিজ, পাগলা দাশু, হেশোরাম হুঁশিয়ার, ভজু আর রামার ছিলকা কুকুর, সবই বই থেকে ছেঁকে নিয়ে সেই কবে বুকে রেখে ঘুরছি।
কোনো জটিল তত্ত্ব নেই, কানে ধরে ভারি ভারি কথা বোঝানোর চেষ্টা নেই, কিন্তু তারপরও সুকুমার কণ্ঠস্থ হয়ে থাকেন কী করে, এই এতগুলি বছর ধরে? প্রফেসর ইউনুস বিদেশে সংবর্ধনা নিতে যান, মৃদু হেসে বলি, অতুল কীর্তি রাখলো ভবে চণ্ডীদাসের খুড়ো। সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে সেনানায়কেরা নানা বুকনি ঝাড়েন, দূরে বসে বিড়বিড় করে বলি, হাতে আমার মুগুর আছে তায় কি হেথায় থাকবে না? সংবিধান নিয়ে সংকটের আমলে বড় বড় আইনজীবীরা কথার ফানুস ফোলাচ্ছেন আর ফাটাচ্ছেন টক শো-তে এসে, তাদের কথা শুনে আপনা থেকেই মুখে চলে আসে, নাহয় আমি বাতলে দেবো বাঁচবে মামা কী খেলে! সাধু সেজে ব্লগে শয়তানের লেজ ধরে ঘুরপাক খাচ্ছেন কোনো জাতেমাতাল, লিখে ফেলি, ট্যাঁশগরু গরু নয়, আসলেতে পাখি সে!
সুকুমারের হাত থেকে মুক্তি নাই আর এই জীবনে। তাঁর মৃত্যুতে শোক করি না এই ৮৬ বছর পর, শোক করি সুকুমারমুগ্ধ নিজের শৈশবের মৃত্যু নিয়ে। ঢাকা থেকে সুকুমারের সমগ্র শিশু সাহিত্য পাঠানো হয়েছে আমাকে, বোনকে ফোন করে ঘ্যানঘ্যান করছিলাম, বইটা আর আগের মতো নাই। কাগজ খারাপ করে ফেলেছে, বাঁধাই অন্যরকম, ছাপা কেমন যেন। আমার বোন সব শুনে শুধু বললেন, ভাইয়া, তুমিও তো আর আগের মতো নাই। সবকিছুই পাল্টায়।
সবকিছু পাল্টে যায়, এই সত্যিটুকু স্বীকার করে নিয়ে চোখ মুছে শ্রদ্ধা জানাই আপনাকে, সুকুমার। আপনি ছিলেন বলে অতীত জীবনটা লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধে আনন্দময় কেটেছে, যেমন কাটবে আরো অগণিত শিশুর।
মন্তব্য
সুকুমারমুগ্ধ শৈশবের মৃত্যু নাই আসলে
এই মানুষটা আরও কিছুদিন বাঁচতেন যদি!
শৈশব থেকে আজ অবধি তিনি আমার মাথাটা নষ্ট করে গেলেন, যাচ্ছেন..
গুরুচরণে শত কোটি প্রণাম
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
একদম সত্যি!!! আমিও ওই সবুজ বেড়াল আঁকা, লাল মলাটের বইটাই এখনও রেখে দিয়েছি। মাঝে মাঝে মেয়েকে ওটা থেকে ছড়া পড়ে শোনাই।
আহ্ সুকুমার ......!
ঐ লাল বেড়ালঅলা বইটা হারিয়ে গেছে। বাঁধাইয়ের দোষ নাকি অতিপঠনের দোষ কে জানে, সুতোর বাঁধাই আলগা হয়ে পৃষ্ঠাগুলো ঝরছিল। একসময় অজস্ত্র বইয়ের ভিড়ে হারিয়ে গেছে।
সুকুমারের বাধাই করা বই কিনলাম তারপরে, নেট থেকে নামালাম ইবুক একটা, কিন্তু সেই লাল মলাটের বইয়ের ছোট হরফে দুই কলামে ছাপা আর মজার মজার ছবিগুলো আর কোন বইয়েই পেলাম না।
অমিত ভালো বলেছেন,সুকুমারমুগ্ধ শৈশবের মৃত্যু নাই ...
সেটাই... আমি বইটার যে নতুন সংস্করণটা থেকে মেয়েকে ছড়া পড়ে শোনাই, বুঝি যে আমার মেয়ের ওই বইটার 'ফিজিক্যাল' দিকটার প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই। সুকুমারের আঁকা ছবিগুলো যেন ঠেসেঠুসে ভরে দেয়া হয়েছে লেখার ফাঁকে ফাঁকে। লেখা, আঁকা সবই তো এই ভদ্রলোক করে দিয়ে গ্যাছেন, প্রকাশকেরা ছবিগুলোকে এমফ্যাসাইজ করে আকর্ষনীয় একটা সংস্করণ বের করতে পারেন না! নাকি সেটাও আমাদের প্রকাশায়তনকেই করতে হবে!
অপরিসীম শ্রদ্ধা এই গুনী মানুষের জন্য। কৃতজ্ঞতার শেষ নেই, একটা স্বপ্নীল বর্ণীল শৈশব উপহার দিয়ে যাবার জন্য।
ব্যানারটা ভালো হয়েছে, হিমু।
ব্যানারটার কথা বলতে ভুলেছিলাম, মনে করিয়ে দিলেন আপনি!
'কেমন যেন' ধরনের সুন্দর ব্যানার হয়েছে এটা, সুকুমারের ছবিটা দেখে আর ছড়ার লাইনটা পড়ে এক ঝলক ছোটবেলা ফিরে আসলো! ধন্যবাদ, হিমু!
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
এই লাইনগুলির জন্য স্পেশাল জাঝা
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
লাল বেড়ালওলা বইটা এখনো আছে দেশে...আনা হয়নি। এবার নিয়ে আসব। মন খারাপ হলে এখনো সুকুমার পড়ি। তার লেখাগুলোকে বিশ্বের দরবারে হাজির করা যায়না? এত ব্যতিক্রমী সব্যসাচী লেখক মনে হয় না দুনিয়ার কোথাও আছে! এমন বংশের ধারাটা সত্যজিতেই শেষ হয়ে গেল... সন্দ্বীপ রায় কোন প্রতিভার কিছুই পেলনা...
...জীবনের প্রথম পড়া নাটক ছিল 'লক্ষণের শক্তিশেল'...প্রতিটি ছড়া-কবিতা-গল্প যত পড়ি তত ভাল লাগে...সারাজীবনই ভাল লাগবে! আহা সন্দেশ!
-------------------------------------------------------------
চন্দ্রবিন্দুর 'চ বেড়ালের তালব্য 'শ রুমালের 'মা...চশমা।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
বইটার কথা আমারও মনে পরে গেল হিমু। দেশে হয়তো এখন সেও ধূলো খাচ্ছে। তবে আশার কথা, আমার দুই ভাগ্নে বড় হচ্ছে, ওদের নজর নিশ্চয়ই এড়াবে না বইটা
ভালো একটা লেখা দিয়ে মন ভালো করে দিলা। ধন্যবাদ।
আমার ছোটোবেলাটা রুশ উপকথার সাথে মিশে আছে। আমি সুকুমার রায় অতো ভালো করে পড়িনি। খালি সৎপাত্র ছড়াটি সুর করে প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি করতাম আর একবার মাত্র পুরোটা পড়েছি। হিমুর লেখা পড়ে খুব পড়তে ইচ্ছা করছে আবার--- বুঝে বুঝে। ধন্যবাদ।
দারুণ লেখা। সুকুমারকে নিয়ে লিখতে হলে এমনই হওয়া উচিত সে লেখা।
- তাই তো বলি, আমাকে তোর বাসায় নিতে চাস না ক্যানো?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মন ভালো না থাকলে সুকুমার পড়তাম
মন ভালো থাকলেও
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
সুকুমার রায় কে শ্রদ্ধা----
একটা চমৎকার লেখা আর ব্যানারের জন্যে হিমু কে বিশ লক্ষ তারা---
পণাইছিলাম যে আপাতত কিছুদিন সচলের ছায়াও মাড়াবো না। কিন্তু আপনি আমাকে কানে ধরে নিয়ে এলেন টেনে হিঁচড়ে।
সুকুমার রায়কে নিয়ে এরচেয়ে ভালো লেখা হতে পারে না। আপনে জানেন না কী সব্বোনাষটা করলেন... দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছি সুকুমার সমগ্রটা জুল জুল চোখে তাকিয়ে আছে, মনটা চাইতেছে এখনি গোগ্রাশে গিলে খাই... সুকুমার পড়ার মজাই আলাদা।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
যে কপালপোড়া বাঙালী শৈশবে সুকুমার রায়ের লেখার খোঁজ পাননি তার জন্য করুণা। আর যারা পেয়েছেন তারাই জানেন এই অমৃতের স্বাদ কী!
লাল প্রচ্ছদের বইটাকে ছোটবেলায় কখনো বা কারো কাছে আস্ত-অক্ষত দেখেছি বলে মনে পড়েনা। ক্লাশে এক একটা অংশ একেক জন আলাদা আলাদা করে নিয়েও পড়েছি। ব্ল্যাকবোর্ডে-খাতায় "পরীক্ষাতে গোল্লা পেয়ে হাবু ফেরেন বাড়ী"র কার্টুন স্ট্রীপ আঁকার প্রানান্ত চেষ্টা করতাম আমরা। বড় হয়ে লাল প্রচ্ছদের বইটা যখন কিনলাম তখন দেখি জ্যাবজ্যাবে প্রিন্ট, লালচে ত্যানা ত্যানা কাগজ, ঢিলে বাঁধাই। এই বই কোন অশিক্ষিত এমন অবহেলায় ছেপেছে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
'সুকুমারের হাত থেকে মুক্তি নাই আর এই জীবনে। তাঁর মৃত্যুতে শোক করি না এই ৮৬ বছর পর, শোক করি সুকুমারমুগ্ধ নিজের শৈশবের মৃত্যু নিয়ে।'
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
ঠিক
আর পোস্ট পড়ে ই-বুক খুলে বসতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজো বসের ঝাড়ি'র কনসিলিয়েশন হিসাবে সুকুমার অনবদ্য!
অসাধারণ লেখাটার জন্য হিমু ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ।
সুকুমারে মজেছি সেই শৈশবে আর এখনো মজেই আছি। আমৃত্যু মজেই থাকবো।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এই গুনী মানুষটি কে।
রেনেসাঁ
মেয়েকে ঘুমুতে যাওয়ার ঘুষ হিসাবে মাঝে মাঝে পাগলা দাসু পড়ে দিই। মেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু আমার পড়া শেষ হয় না।
লাল মলাটে সবুজ হজবরল বিড়াল।
"বাইরের" পড়াশোনায় আমার তো হারিক্যান অবস্থা! আগে ছোটাছাটা সুকুমার-ছড়াটড়া পড়া হৈছিল কিছু ওইখানে সেইখানে, কিন্তু ওই মহান বইটা আমার পড়া হৈছিলো আমার ইউনিভার্সিটি'র শুরুর কালে। ছোটবোনরে নিয়া একসাথে পইড়া দুইজনে ছন্দে ছন্দে পাগল হইছিলাম প্রত্যেকটা কোনায় কানায়। শৈশব তখনও পাইছি, এখনও পাই। এখনও সুকুমার রায়রে ভালোবাসি, তা শুধু বেঁচে থাকা শিশু হিসাবেই না, আরো অনেক হিসাবে। প্রণাম রায়বাবু-রে। আর, হিমু-রে আরো একবার এইখানেও উত্তম জাঝা, এই সুন্দর যথার্থ লেখাটার জন্য।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
প্রায়ই খুলে বসি সেই লাল রঙের বই। কোথাও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাই, কোথাও মুগ্ধ হয়ে বসে থাকি। লোকটা না থাকলে কি ভয়ঙ্কর অবস্থা হতো আমাদের শৈশবের!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
আমি কিন্তু সুকুমারের মৃত্যুদিবসে তোর কাছ থেকে একটা ছড়া আশা করছিলাম।
আমিও করেছিলাম।
আজে বাজে কাজে সময় নষ্ট করে অবশেষে ছাইপাশ একটা নামিয়ে ফেললাম। গুরু ক্ষমা করলে হয়...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
সুকুমার না পড়তে পড়তে আমাদের সুকুমার বৃত্তিগুলো হাপিস হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটা স্কুলে বাচ্চাদের সুকুমার রায় পড়ার ব্যবস্থা করা উচিৎ। সুকুমার পড়া থাকলে বড় হয়ে গন্ডার হতে বাধবে।
হৃদয় ছোঁয়ে গেল। শৈশবের এবং শৈশব-কৈশরের সন্ধিক্ষণের নিঃসঙ্গ দিনগুলোতে সুকুমার রায়ের প্রভাব যে এখনো কতটা গভীরে, চমৎকার এই লেখায় আমার প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা গেল। আমিতের কথাই ঠিক, সুকুমারমুগ্ধ শৈশবের মৃত্যু নাই আসলে।
যে-সব লোকে পদ্য লেখে,
তাদের ধ'রে খাঁচায় রেখে,
কানের কাছে নানান্ সুরে,
নামতা শোনায় একশো উড়ে,
সামনে রেখে মুদীর খাতা---
হিসেব কষায় একুশ পাতা॥
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
আহ! আমি কয়েকজন কবিকে চিনি যাদের হিসাবের হাত খ্রাপ্না। তেনাদের হাতেও অফুরান সময়। কিছু মুদির খাতা যোগাড় করতে পারলেই ... ।
ক্লাস সেভেনে রচনা আসছিলো তোমার প্রিয় কবি। সব পোলাপান মুখস্ত বই দেইখা লিখলো জীবনানন্দ দাশ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,কাজী নজরুল ইসলাম। আমি সুকুমার সমগ্রর পুরা ভূমিকা মুখস্ত কইরা লিখলাম- আমার প্রিয় কবি নাই কেউ, তয় প্রিয় ছড়াকার সুকুমার রায়।
... সুকুমার মানে আমার কাছে 'ননসেন্স ক্লাব', সুকুমার মানে আমার কাছে পাগলা দাশু [এখনো মনে আছে, চীনে পটকায় দাশুর 'পটকায় আগুন দিচ্ছিলাম' সংলাপ পড়ে কী পরিমাণে হেসেছিলাম], সুকুমার মানে অসাধারণ কিছু স্কেচ, সুকুমার মানে আবোল তাবোল [আমার সবচেয়ে বেশিবার পড়া বইয়ের তালিকায় এটা বেশ উপরের দিকে থাকবে], সুকুমার মানে 'শুনলুম ভাই পোস্তা গিয়ে...'- হায় সুকুমার রায় !!! আপনাকে আরো অনেকদিন মিস করবো, আবোল তাবোল আমার সাথী থাকবে আরো বহুদিন...।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
ক্লাস সেভেনে রচনা ছিলো 'তোমার প্রিয় কবি', পোলাপান মুখস্ত কইর্যা লিখলো জীবনানন্দ দাশ,রবি ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম। আমি সুকুমার সমগ্র-এর পুরা ভূমিকা মুখস্ত কইর্যা লিখলাম- আমার প্রিয় কবি নাই কেউ,তয় প্রিয় ছড়াকার সুকুমার রায়...
সুকুমার মানে আমার কাছে পাগলা দাশু, সুকুমার মানে ননসেন্স ক্লাব, সুকুমার মানে অদ্ভূত সব স্কেচ, সুকুমার মানে 'শুনলুম ভাই পোস্তা গিয়ে'...
সুকুমার মানে 'বেড়ালের তালব্য শ', সুকুমার মানে আমার আমি- আমার ছেলেবেলা...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
ক্লাস সেভেনে কলেজে ঢোকার পর অর্ডার আসলো, হাউস লাইব্রেরির জন্য সবাইকে কমপক্ষে একটি করে বই নিয়ে আসতে হবে। অসংখ্য তিন গোয়েন্দা, হুমায়ূন আহমেদের ভীড়ে আমি নিয়ে গিয়েছিলাম তরতাজা একটা সুকুমার সমগ্র- এরচেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে ...
আর একটা কথা। সচলে ব্যানার সংস্কৃতি জাস্ট জটিল। কত ফাটাফাটি ব্যানার আসে। তবে ভোটাভুটি হলে, আমি মনে আজকেরটাকেই ফার্স্ট দিবো। ঘুম থেকে উঠে সচলে খুলে ঘুম ঘুম চোখে অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম ব্যানারটির দিকে। ছোটবেলায় হারিয়ে গেলাম চট করে ...
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
পিচ্চিকালে চাচার বাসা থেকে কি মনে করে জানি সুকুমার সমগ্রটা নিয়ে আসছিলাম। এরপর আর ফেরত দেই নাই
মনে হয় সুকুমার না পড়লে জীবনের ষোল আনাই মাটি হতো!!
----------------------
আমার ফ্লিকার
---------------------
আমার ফ্লিকার
আমার বুকসেলফ থেকে যে বইটা সবচেয়ে বেশি হারায়, সেটাই সুকুমার সমগ্র। এবং বুকসেলফটা কখনোই সুকুমারবিহীন থাকবে এটা ভাবাও যায় না।
প্রায় এক শতাব্দি ধরে বাংলা ছড়া সাহিত্যে সুকুমার ঘরানা নামে যে স্বীকৃত প্রকরণ চালু রয়েছে তা এমনি এমনি টিকে থাকে নি। সুকুমারই ছড়ায় প্রথম হাস্য-রস, হিউমার বা কটাক্ষ যুক্ত করার মধ্য দিয়ে আধুনিক ছড়ার যে প্রকরণ তৈরি করে দেন, তা আজ আধুনিক ছড়ার অনিবার্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত। অনেকেই এই সুকুমার ঘরানার নাম দিয়েছেন 'ননসেন্স রাইম', যার সাথে আমি মোটেও একমত নই। এটা যে আসলে নিজেদের অক্ষমতা বা ব্যর্থতা ঢাকতেই করা হয়েছে, সুকুমার পাঠ করলেই সহজে তা বোধগম্য হয়ে যায়। প্রতিটি ছড়াই সুনির্দিষ্ট অর্থ-জ্ঞাপক, তীব্র শ্লেষাত্মক, সামাজিক বা ব্যক্তিক অসংগতির প্রতি তীব্র কটাক্ষপ্রবণ। তাঁর ছড়ার অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো- শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই সমান মজা উপভোগ করতে সক্ষম ! একেক পর্যায়ে একেকধরনের অর্থ বা অর্থ-দ্যোতনা তৈরির এই বিরল প্রতিভা বাংলা সাহিত্যে আজো দ্বিতীয়টি আসেনি।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদেরকে বোধ ও বোধনে শিক্ষিত হতে হলে সুকুমার আরো অনেককাল যে অবশ্যপাঠ্য হয়ে থাকবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
কৃতজ্ঞতার সাথে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ঋণ স্বীকার করি।
হিমু ভাইটিকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন, দারুণ এই কাজটা করে আমাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হিমুর প্রত্যেকটা লেখা পড়ার পর আক্ষেপ হয়! ইশ!! এমন করে যদি লিখতে পারতাম!
খুব ছেলেবেলায় স্কুলের ফাংশানে "শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে" কবিতাটি আবৃত্তি করেছিলাম। তারপর সুকুমারে হাতেখড়ি। এখনো মাঝেমাঝে মনে পড়ে "কিন্তু সবার চাইতে ভালো, পাউরুটি আর ঝোলাগুড়"। কি দারুন কম্বিনেশন!
সুকুমার-বিহীন শৈশব কেমন হয় জানতে ইচ্ছে করে। নিশ্চয়ই খুবই বর্ণহীন।
আপনার লেখাটি পড়ে অনেক কথাই মনে পড়ে গেল। ভাবতে ভালো লাগছে যে এত লোকে সুকুমারকে ভালবেসেছে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
সেথায় সন্ধে ছ'টার আগে
হাঁচতে গেলে টিকিট লাগে
হাঁচলে পরে বিন টিকিটে
দমদমাদম লাগায় পিঠে
কোটাল এসে নস্যি ঝাড়ে
একুশদফা হাঁচিয়ে মারে....
সুকুমার রায়ের মতো ছড়ার ভাষায় পলিটিক্যাল স্যাটায়ার বাংলা তো বটেই সম্ভবত বিশ্বসাহিত্যেও বিরল।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
সুকুমার মানেই শৈশব!
লাল রঙের এই বইটা কতো জনকে যে উপহার দিয়েছি!
লেখাটা পড়েই বইটার কথা মনে পড়লো।
এখনই বইটা বের করে পড়া শুরু করবো।
ধন্যবাদ
সবচেয়ে বেশি শৈশবপ্রভাবক এই লোকটাকে নিয়ে আলাদা করে বলার মত কিছুই নাই।
"গঙ্গারামকে পাত্র পেলে? শুনতে চাও সে কেমন ছেলে?" লাইনটা মনে পড়লো, এমনি এমনিই।
"Life happens while we are busy planning it"
আমি আর পলাশ একসাথে চাকরী করতে ঢুকলাম এক পত্রিকায়। অফিসের জন্যে আমরা প্রথম যে বইটা কিনলাম, সেটা সুকুর। লাল বিড়ালের বইটা।
সুকু ছাড়া কি চলে? চলে না। আমি সুকুর জন্যেই পিচ্চিকালে পড়ে আছি। আর পিচ্চিকালে আছি বলেই বানান ভুল করি।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
পড়েছিলাম আগেই, পঁচা নেটের লাইন! মন্তব্য করতে দেয়নি...
হিমুদা, লেখা আর ব্যানারের জন্য ধন্যবাদ। সুকুমার না থাকলে আমি থাকতাম না...
-----------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
অসাধারন লেখা, তবে যেমন কাটবে আরো অগণিত শিশুর। ব্যাপারে এখন কিছুটা সন্দিহান, যেভাবে ৩.৫ বছর বয়েসে ঘাড়ে বস্তা তুলে বাচ্চা আর বাচ্চার মা স্কলে যায়, গল্পের বই পড়বে কখন , মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের শৈশব বড়ই মধুর ছিল
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আজ আমরা কয়েকজন আরো কিছু কপি কিনলাম এই লাল বইটার।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হে হে, হিমুদা ভালো বলেছেন। হাসেঁরা সজারুই থাকে, ব্যকরণ মানে না।
মারা যাবার সময়ও লাল বইটা চাই শিয়রের কাছে, প্রতিদিন এর মত।
আমার ছোট কাকা আমাকে বইটা উপহার দিয়েছিলেন ছোটবেলায়...বেশ চওড়া লাল মলাটের বই...সবাই দেখি প্রচ্ছদের লাল বেড়ালের কথা বলল...এর পরেই বিশাল পাতাজুড়ে সুকুমারের ছবিটাই আমার দুর্দান্ত লাগত...দুই ভাই মিলে কত মারামারি করেছি...কে আগে পড়বে তাই নিয়ে।পরে হার্ডবোর্ড দিয়ে বাধাই করে নিয়েছিলাম নীলক্ষেত থেকে...আজও আছে সেই বই আমার শৈশবের স্মৃতি নিয়ে।
লাল বেড়ালওলা বইয়ের এই লোকটা যে কোন সময় আমার মন ভাল করে দিতে পারে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ছোটবেলা খুব ইচ্ছে করত পাগলা দাশু হয়ে যেতে। 'ওকে চেনো না? চিন্তা নেই, ওকে দেখলেই চিনতে পারবে। কারণ 'তার মুখের চেহারায়, কথাবার্তায়, চলনে বলনে বোঝা যাইত যে তাহার মাথায় একটু ছিট আছে। মাথা ভর্তি এক বস্তা ঝাঁকড়া চুল।''
সুমনের একটা গান আছে না?'' আমাকে ভাবায় সুকুমার রায়, আমাকে ভাবায় সুকুমার রায় !''
[সেপ্টেম্বর ১০ এ বাংলা সাহিত্যে ননসেন্স্ এর প্রবর্তক সুকুমারের মৃত্যু, মাত্র ৩৬ বছর বয়সে, আর ওইদিন কিনা আমার জন্মদিন]
এখন এই লেখাটা পড়ে আবার নিয়ে বসতে ইচ্ছে করছে 'সুকুমার সমগ্র'
সুমনের একটা গান আছে না?'' আমাকে ভাবায় সুকুমার রায়, আমাকে ভাবায় সুকুমার রায় !''
[সেপ্টেম্বর ১০ এ বাংলা সাহিত্যে ননসেন্স্ এর প্রবর্তক সুকুমারের মৃত্যু, মাত্র ৩৬ বছর বয়সে, আর ওইদিন আমার জন্মদিন]
এই লেখাটা পড়ে আবার ইচ্ছে করছে 'সুকুমার সমগ্র'-টা নিয়ে বসতে...
ছোটবেলা খুব ইচ্ছে করত পাগলা দাশু হয়ে যেতে। 'ওকে চেনো না? চিন্তা নেই, ওকে দেখলেই চিনতে পারবে। কারণ 'তার মুখের চেহারায়, কথাবার্তায়, চলনে বলনে বোঝা যাইত যে তাহার মাথায় একটু ছিট আছে। মাথা ভর্তি এক বস্তা ঝাঁকড়া চুল।''
'আবার পড়ো দুই' কম্পলিট, থ্যান্কু হিম্ভাই
ছোট্ট কিন্তু চমৎকার
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
সুকুমার না পড়লে ছেলেবেলার "ষোলআনাই মিছে"।
আহা, আমার বোন সুকুমার না পড়েই বেয়াড়া রকমের বড় হয়ে যাচ্ছিল কারন তাঁর কপিটা হার্ডকভার বিতিকিচ্ছিরি, আর আমার টা এক্কেবারে আর্কাইভে রাখা "রাজ এ পেনহানে আলমাস" এঁর মত...
আমার এইচ এস সি পাস বোনকে তাই গত মাসে দেড় দশক পুর্তি উপলক্ষে "লাল বেড়ালঅলা" বইটা কিনে দিলাম... আগে আমি আর আম্মা স্বাভাবিক (!) কথা বার্তা বললে বেচারা হাঁ করে চেয়ে থাকত... এখন সবাই একসমান...
নতুন মন্তব্য করুন