কিন্তু সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তা পর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত এই অফিসারদের নিয়োগ নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বলুন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বলুন, বা পেট্রোবাংলাই বলুন, পরিচালক, কমিশনার, চেয়ারম্যান পদে একজন করে অবসরপ্রাপ্ত অফিসারকে আমরা দেখি।
আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামষ্টিক অভিজ্ঞতা থেকে আমার ধারণা জন্মেছে, বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর অফিসাররা সশস্ত্রবাহিনীর কাঠামোর বাইরে প্রশাসক হিসেবে নিম্নমানের হন। বেসামরিক প্রশাসন কাঠামো সম্পর্কে তাঁদের ধারণা অপ্রতুল থাকে, এবং বেশিরভাগ সময়েই অশ্বশক্তি আর হাঁকডাক দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে তারা ব্যর্থ হন। সর্বোপরি, এসব নিয়োগের পেছনে সরকারের কী যুক্তি কাজ করে, সেটিও স্পষ্ট নয়। আমার ধারণা, মোটা বুদ্ধির এই অবঅফিসারদের সামনে রেখে ধূর্ত আমলারা পেছনে চুরিচামাট্টামি যা করার করে নেন।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারদের পরিচালনায় কোনো প্রতিষ্ঠান রীতিমতো খোলনলচে পাল্টে উন্নতি করেছে, এমন কোনো উদাহরণ কেউ জানলে মন্তব্যে এসে আলোকিত করুন আমাকে, প্লিজ। কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হবেন সেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির অধিকারী কেউ। কয়েক দশক সেনাবাহিনীতে সৈনিক আর ছোটো অবকাঠামোর নেতৃত্ব দিয়ে কী করে এই অবঅফিসাররা সরকারের জ্বালানি সন্ধান, টেলিযোগাযোগ কমিশন, বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষসহ সম্ভাব্য সকল অঙ্গের মুণ্ডু হয়ে সেই প্রজ্ঞা আর দূরদৃষ্টির দাবিদার হন, সেটা বুঝতে পারি না।
অবঅফিসারদের অবসরের পর এইসব আলঙ্কারিক পদে ডাম্প করার সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসুক। এনাদের যোগ্যতা থাকলে মেজর, কর্ণেল, ব্রিগেডিয়ার পদে থেকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার কথা নয়, বরং সেনাবাহিনীতেই আরো পদোন্নতি পেয়ে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন দায়িত্ব পালনের কথা। সেনাবাহিনীতেই যখন তারা সেসব পদোন্নতির যোগ্য নন, তখন নিজের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বাইরে সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির একটি প্রতিষ্ঠানের আগায় বসে তারা কী করেন, সেটি রীতিমতো আশঙ্কা জাগায়।
মন্তব্য
দ্বাদশ শ্রেণীর পরেও ওদের নিজস্ব লাইনে মনে হয় পড়াশুনা করতে হয়।
হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই। স্টাফ কলেজ পাশ না করতে পারলে প্রমোশনও খুব একটা হয় না। কিন্তু সেই শিক্ষা সম্ভবত সশস্ত্র বাহিনী পরিচালনার বিভিন্ন দিকের ওপর বিশেষায়িত, সেটাকে সম্বল করে জ্যাক অব অল ট্রেইডস হওয়া সম্ভব হয়তো। আমাদের সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাথায় মাস্টার অব অ্যাট লিস্ট ওয়ান দরকার। পেট্রোবাংলার সভাপতি হবেন এমন কেউ, যিনি সারাজীবন পেট্রোবাংলায় কাজ করে এসে এর মেকানিজমটা পরিষ্কার বোঝেন, এবং এর মন্দ দিকগুলি সারিয়ে ভালো দিকের ওপর জোর দিতে সমর্থ ও সচেষ্ট।
পাখির গু দেখতে সাদা, কিন্তু লোকে সেগুলি ভাস্কর্য থেকে সরিয়ে দিতেই চেষ্টা করে, বালতি করে ভরে ঢালে না।
আমার মনে হয় সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমেই বুঝতে হবে সমস্যাটা কিভাবে সৃষ্ট। তাদের এভাবে পুনর্বাসনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? কোন তুলনামূলক স্টাডি হয়েছে কীনা কেউ জানলে জানান। ইদানিং শুনি অনেক জরীপ করার প্রতিষ্ঠান হয়েছে যারা এধরনের কাজ কর্ম করে।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
এই চর্চা বন্ধ করতে হবে। সেটার নাম হবে – অব-দমন।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশনের ব্যাপারে বলতে পারি, এটা হচ্ছে অবঃ সরকারী আমলাদের পূনর্বাসন কেন্দ্র। চেয়ারম্যান শুধু নয়, এর কমিশনার-রাও সবাই অবঃ আমলা। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশনে এবার সহ দ্বিতীয়বার অবঃ ফৌজি আসলো, ইতিপূর্বে ২ জন জনপ্রিয় (!) (মার্গুব আর ওমর) অবঃ সচিব এ পদে ছিলেন।
কিছু দ্রুত মন্তব্য। অবসরপ্রাপ্ত এই অফিসারা কোন সেক্টরে ছিল না? বিমান, স্পেশালাইসড ব্যাংক, বিটিআরআই, কৃষি....। একটা সময় ছিল যখন প্রাইভেট সেক্টারেও অবসরপ্রাপ্ত এই অফিসারদের ব্যাপক চাহিদা ছিল (এখনো আছে কিছু ক্ষেত্রে)।
খুব আন্তরিকভাবেই আমি নিজে বেশ কয়েক জনের সাথে কথা বলে বোঝতে চেয়েছি (তার মধ্যে আবঃও ছিল) অবসরপ্রাপ্ত এই অফিসারদের শক্তির দিকগুলো। কখনো কখনো মনে হয়েছে ধর্মীয় ব্যাপারের মতই স্পর্শকাতর মনে করে কেউ কেউ এব্যাপারে আলোচনাকে। আমার কিছু কিছু উপলব্ধি তুলে ধরলাম। বলে রাখা ভাল বিভিন্ন জনের সাথে কথার প্রেক্ষিতে এটা একান্তই আমার উপলব্ধি।
১। এখনো শিক্ষক এবং ব্যবসায়ী সহ প্রচুর লোকজনের ধারনা, ভাল ব্যবস্থাপকের অতি আবশ্যক গুণাবলীর মধ্যে প্রথমে আসে, আপনার ভাষায় 'অশ্বশক্তি আর হাঁকডাক দেয়ার'এবং রুঢ় আচরনে ক্ষমতা, অথবা তাঁদের ভাষায় মানুষ কন্ট্রোল করার ক্ষমতা। নিঃসন্ধেহে অফিসারদের এটা সবচেয়ে বেশি। এই ধারনার ব্যাপকতা এখনো কিন্তু খুবই বেশি। শিক্ষকদের কথা বিশেষভাবে বললাম একারনে যে তাঁদেরই যদি এই ধারনা হয়, আম জনতার দোষ কী?
২। কেউ কেউ বলেছে, অফিসারা সবচেয়ে 'ডিসিপ্লিন্ড' একটা সেক্টর থেকে আসে। ডিসিপ্লিন (!) শেখাবার জন্য তাঁদের থেকে ভাল কে হতে পারে?
৩। বিগত সামরিক শাসন আমলে বেশ কিছু আবঃ প্রশাসনে চলে এসেছে। তাঁরা অ্যাভারেজ সরকারী অফিসার থেকে নাকি অনেক বেশি 'পলিশড'। সরকারি সেট-আপে তাঁরা খুবই কার্যকরী। সুতরাং চাহিদা বেশি।
৪। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশের ভিতরে এঁদের পি,আর ভাল। দেশে এখনো অনেকে আবঃ কথাটা দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা মাটিতে ছোঁয়ায়, সহজে কাজ উদ্ধার হয়।
৫। আদেশ পালনের হারও বেশি। সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বেশি প্রশ্ন করা হলে ইম্লিমেন্টেশন 'অযথা' দেরী হয়।
৬। তার পরে আছে আমলাদের পছন্দের ব্যাপারটা, করনটা আপনি উল্লেখ করেছন।
৭। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসাবে, এখনো সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ একটা ফ্যাক্টর। অবঃরা হয়ত 'ইন্টারন্যাল কানেকশন' ঠিক রাখে।
ব্যবস্থাপনার এই প্রগ-ঐতিহাসিক ধারনার জন্যই...।
ডিসিপ্লিন শেখানোর জন্যে সেনাবাহিনী থেকে অফিসার ধরে আনতে হবে কেন? সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ডিসিপ্লিন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে না কেন?
এভাবে গর্হিত কাজও ত্বরিত গতিতে করা সম্ভব হয়।
দেশের দুইটা ক্ষমতাবান গোষ্ঠী হলো ব্যবসায়ী আর সেনাবাহিনীর সদস্যরা। যেই সরকারই আসুক, এদের খুশি রেখে চলতে হয়। যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোয় রাজনীতি না করেই রাজনীতিক হওয়া লোকগুলা এই দুই ক্যাটাগরির হয়ে থাকে, এর বাইরে অন্যকোন পদের লোক পাওয়া যায় না। অব হওয়া সেনারা যদি বাণিজ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদের মন্ত্রী সাংসদ হতে পারে, তাইলে আর প্রশাসক হতে দোষ কি?
এটা রাজনৈতিক দলগুলোর মিলিটারি তোষণ।
ধন্যবাদ হিমু,গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অবতারণা করার জন্য।
আপনি অব.সেনা অফিসারদের কথা বলেছেন। বর্তমান সেনা অফিসাররাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ দের কথা শুনুন।
দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সশস্ত্রবাহিনীতে কর্মরত অনেকেই বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন। দেশের প্রায় সবগুলো মেডিকেল কলেজের পরিচালক আর্মি অফিসাররা। তারা চিকিৎসাশাস্ত্রের কী বোঝে আমা মাথায় আসে না। (তাদের দক্ষতা সামরিক ক্ষেত্রে। সে প্রসঙ্গে আমার কোনো দ্বিমত নাই।)
ইপিজেড-এর প্রধান দায়িত্বে থাকেন আর্মি অফিসাররা। তারা ব্যবসার কী বোঝেন?
পাকিস্তানের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ। ওই দেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে সামরিক বাহিনী কর্মরত নেই।
৭৫ পরবর্তী রাজৈনিতক কাঠামোয় সেনা অফিসাররা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যেভাবে অংশীদার হয়েছে, তাতে কোনো কিছুই আর বাংলাদেশে অসম্ভব নয়। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তাতে তাদের সমস্যা হয় না। এসবই হচ্ছে একটি দেশে সামরিক শাসনের দীর্ঘমেয়াদি কুফল।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
"দেশের প্রায় সবগুলো মেডিকেল কলেজের পরিচালক আর্মি অফিসাররা। তারা চিকিৎসাশাস্ত্রের কী বোঝে আমা মাথায় আসে না।"
আমি তো জানতাম এরা সবাই আর্মি মেডিকেল কোরের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ভুল জানি নাকি?
ঠিকই জানেন।
"Life happens while we are busy planning it"
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আমাদের জাতীয় বীরের মর্জাদাতেও তো তেনারাই মনোপলি, যেন চুড়ান্ত বীরত্বের প্রথম শর্ত সেনাবাহিনীর সদস্যপদ।
মাসুদ রানা পইড়া আমি মেজর হইতে চাইছিলাম।
আমার মাইনর হইতে মন্চাইছিলো।
----------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
"অফিসাররা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে দুই বছর কঠোর শ্রমসাধ্য প্রশিক্ষণ নেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষণ একাডেমিগুলিতে, এবং সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দানের জন্যে কমিশনপ্রাপ্ত হন। তাঁদের নেতৃত্বের গুণাবলি সমর ও দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যে অর্জিত।"
তাদের বেসামরিক পড়াশোনার কথা জানাচ্ছি:
১।তারা অফিসার হবার আগেই প্রশিক্ষনের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ালয় থেকে (এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে) স্নাতক ডিগ্রি নেয়।
২। স্টাফ কলেজ করার পর (যেটা না করলে প্রোমোশন আটকে যায় সাধারনত, অতি কঠিন রাজনৈতিক আঁঠা না থাকলে), সেখনে লেখা commandant's paper জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিফেন্ড করে Master of Defense Studies ডিগ্রী নিতে হয়।
৩। সিনিয়ার অফিসার হিসেবে National Defense College (ndc) করে তাকে এম এস করতে হয়।
এ সবগুলোর উপরে অসংখ্য কোর্স তাদের প্রতি বছর করতে হয়, যার অনেকগুলোই সাধারন প্রশাসনিক কোর্স, যেমন এ্যডমিন কোর্স, লজিসটিক কোর্স, স্রেফ টিকে থাকার জন্যে।
এখন বলুন, সরকারী আমলাদের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে বিসিএস দিয়ে চাকুরীতে ঢোকার পর পেশাগত উন্নতির জন্য আর কি কি করতে হয়?
trishonku,
বিশদ বলতে পারবো না। আপনার মত কেউ এসে এ ব্যাপারে আলোকপাত করবেন, সে অপেক্ষায় আছি। ধন্যবাদ।
সরকারি কর্মকর্তারা চাকুরীতে ঢোকার আগে কয়েকমাস সাভারে অবস্থিত পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ট্রেনিং সেন্টার থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন, তার মধ্যে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণও থাকে। তবে জানিনা চাকুরীতে ঢোকার পরে কোন পড়াশুনা করতে হয় কীনা।
সুমন সবুজের কাছে এর মন্তব্য আমার কাছে বেশ যুক্তিযুক্ত মনে হোলো। দয়া করে আলাদা একটি পোষ্ট দিলে আর বিশদ ভাবে আপনার উপলদ্ধি ভালো মতো জানা যাবে। আসলে যদিও কোনো একটি প্রতিষ্টানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ লোককেই ঐ পদে বসানো উচিত স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী----আমাদের দেশতো স্বাভাবিক নয় ---কি আর করা!!!
আলঙ্কারিক পদে তো অলঙ্কারই প্রয়োজন হয়।
তবে সিভিল প্রতিষ্ঠানে আর্মি অফিসার ঢোকার প্রধান কারণ, আমার মতে, আমাদের প্রয়োজনাতিরিক্ত সেনা কর্মকর্তা। বাংলাদেশের জন্য যতোটুকু সেনা সাপোর্ট দরকার, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশিই সম্ভবত আমাদের আছে। সুতরাং অবঃ হওয়ার আগেই উনাদেরকে বেসামরিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে লাইনঘাট করে নিতে হয়। আর রাজনীতিতে তো উনারা ডাইরেক্ট এন্ট্রি পান। একটা প্রশ্ন কি কারো মাথায় আসে না, এমপি নির্বাচনে নমিনেশন পেতে যে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়, তার উৎস কি? সেনাবাহিনীতে আজীবন চাকুরী করে একজন কর্মকর্তা কি পরিমাণ অর্থ বৈধভাবে উপার্জন করেন? অর্থের উৎস হিসেবে জাতিসংঘ মিশন আসবে, আসবে সেনাবাহিনীর টেন্ডারবাজি, আসবে কর্মকর্তাদের ব্যবসায়। কিন্তু ফুলটাইম সেনাবাহিনীতে চাকুরী করে ব্যবসায়ের জন্য কতোটুকু বৈধ সময় পাওয়া যায়? ব্যবসায়ের মূলধন আসে কোথা থেকে?
প্রাতিষ্ঠানিক মাস্তানির বিষয়টিও সম্ভবত এর সাথে জড়িত। আম পাবলিকের কাছাকাছি থাকায় পুলিশের মাস্তানি সবার চোখে পড়ে। কিন্তু আর্মির মাস্তানি আরো উচ্চ পর্যায়ে হয়। মোড়ের ট্রাফিক পুলিশের মতো তাকে সিএনজিওয়ালার কাছ থেকে ২টাকা করে চাঁদা নিতে হয় না। এই মাস্তানির ফলেই বাংলাদেশ আর্মি সবসময়ই ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকে। হয়তো ৭৫এর ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত পারে নাই; কিন্তু এরপরে তারাই মূলত সরকার চালায়। জিয়া এরশাদের বাই প্রোডাক্ট দলগুলো তো ক্যান্টনমেন্ট থেকেই সৃষ্ট আর হাসিনার আওয়ামী লীগও এদেরকে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে সরানোর সাহস রাখে না। স্বভাবতই সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাথায় এরাই বসবে।
যোগ্যতার প্রশ্নটি আসলে অবান্তর। সেনা কর্তারা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কি শিক্ষা নিয়ে আসেন, সেটাও অবান্তর। দুর্ণীতিগ্রস্ত আমলারা ম্যানেজমেন্টে খারাপ না ভালো, সে প্রশ্নও অবান্তর। কারণ, একেবারে প্রথমেই যে বিভাজনটা হয়ে যায়, তা হলো যার যার সেক্টর তার তার। সেনা কর্তাদেরকে যদি সেনাবাহিনীর কাজে ব্যবহার না করে সিভিল প্রশাসনে ব্যবহার করতে হয়, তাইলে তাকে সেনাবাহিনীতে ঢুকিয়ে তার পিছনে অপেক্ষাকৃত বেশি টাকা ঢালার দরকার কি? সেনাবাহিনী একটা দেশের জন্য একটা চরম স্পেশিয়ালাইজড সংগঠন। এর পিছনে খরচাটা অনেক। এমপি সাহেবের নামের শেষে ব্র্যাকেটে অবঃ লেখার জন্য এই খরচা আমাদের মতো গরীব অর্থনীতির দেশের জন্য বোঝার ওপর শুধু শাকের আঁটি না, পাক্কা বুলডোজার।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
তেনাদের নিয়া কথা বলার সাহস নাইরে ভাই। আল্লাহ আপনার গুর্দাটারে আরো বড়ো করে দিক। আপনে আলোচনা করেন।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ঠিক বলেছেন.....তবে এখানেই শেষ না।তাদের নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন সময় দেশে ও দেশের বাইরে থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হয়।এবং তা মোটামুটি পুরো চাকুরী জীবন জুড়েই।
এর মধ্যে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী থেকে সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে একই সাথে তাদের একটি কোর্স করতে হয়।
তাই শুধু সামরিক কর্মকর্তারাই ট্রেনিং করেন,প্রশাসনে ট্রেনিং করানো হয়না;এটা সম্পূর্ন ভুল ধারনা।
লেখক : প্রীতম সাহা ।
আপনার প্রশ্নের জবাব আমি আগের পোস্টে দিয়েছি ।
আপনার কাছে আরেকটি প্রশ্ন,ইতিহাসে পাশ করুক অথবা বি.বি.এ তে , বিসিএস দিয়ে চাকুরীতে ঢুকতে পারা কি তাদের কৃতিত্ব না? আমি,আপনি বা আমরা সবাই কি চাইলেই প্রশাসক হতে পারব? তাদের মেধা নিয়ে কটাক্ষ করা বোধহয় সঙ্গত নয়।
ভুল বলেছি কি ???
লেখক : প্রীতম সাহা ।
কেন অব: অফিসার?
সেনাশাসনের সুযোগে এমন একটা নিয়ম চালু করা হয়েছে যে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অকার্যকর হয়ে যাওয়া আর্মি কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন করা হবে মানবিক কারণে। সেনাবাহিনীতে যারা শারীরিক বা অন্যান্য অদক্ষতার কারণে অবসরের চূড়ান্ত বয়স হওয়ার আগেই কর্মযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেন তাদের জন্য চাকুরি চেয়ে সেনাদপ্তর থেকে নিয়মিত চিঠি আসে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে। তারপর একটা তদবিরতো আছেই।
ক্ষমতায় সেনা সরকার থাকলে ফটাফট চাকুরি হয়ে যায়। নতুবা সেই ব্যক্তিগত লাইনে সচিব-মন্ত্রী ধরে তদবির।
মেজর সাহেব অবসরপ্রাপ্ত... কোথায় ফিট করা যায়... তিনি সিনেমা ভালবাসেন ...তো দাও তাকে এফডিসি'র ডাইরেক্টর (এডমিন) করে। এরকম অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর (এডমিন) পদে পাওয়া যাবে এদের। পরে দীর্ঘদিন চাকুরি করার সুবাদে তারা হয়তো ডাইরেক্টর জেনারেল হয়ে থাকেন।
ধর্মে মতি থাকলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাঁশি বাজাতে জানলে শিল্পকলা একাডেমি, স্ত্রী রবীন্দ্রসঙ্গীতের ছাত্রী হলে বাংলাদেশ টেলিভিশন, থেকে শুরু করে মিল-কল-কারখানা-ইটের ভাটা যেখানে সুযোগ আছে সেখানেই পদায়ন করা হয়...
তবে হিমু উল্লেখ না করলেও আমরা জানি... সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট দিয়ে শুরু হওয়া ধাপ জেনারেলে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও যারা আর্মিতে যান তারা শেষ ধাপের নাম হিসেবে প্রেসিডেন্ট শব্দটাও দেখতে পান। অনেকে বাগাতেও পারেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তার চাকুরির পোস্ট তার নামের আগে ঝুলে থাকে। যেমন: প্রেসিডেন্ট লেজেহোমো এরশাদ (অব:)।
যেখানে বন্দুক হাতে থাকলে সবকিছু জায়েজ তখন কার কি যোগ্যতা সে প্রশ্ন তোলাই অবান্তর। আর্মির সংস্কৃতিটাই এমন - একবার প্যারাসুট দিয়ে লাফ দিলে সারাজীবন শার্টে একটা স্পেশাল ব্যাজ লাগিয়ে ঘুরে যে সে প্যারাসুট জাম্প দিতে পারে। আর পদভিত্তিক সংস্কৃতির কথাতো সবার জানা। প্রতি পদোন্নতিতে এদের নাম বদলে যায়। ক্যাপ্টেন মান্নান প্রমোশন পেয়ে হয় মেজর মান্নান, তারপর লে: কর্নেল মান্নান।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ট্রেনিং-এর প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
আরে ভাই সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করেন দয়া করে। ট্রেনিং কোথায় না হয়।
ডাক্তাররা কি বিনা ট্রেনিং-এ ডাক্তার হয়? বিনা ট্রেনিং-এ হাসপাতালের পরিচালক হয়? তাদের কি শিক্ষাগত যোগ্যতা, ট্রেনিং-এর অভাব?
তাহলে হাসপাতালগুলোতে কেন আর্মি অফিসারদের টেনে আনা হয়?
আর ট্রেনিং যদি কেউ না পায় তবে সেটা তো রাষ্ট্রের পরিকল্পনার অভাব, যে পায়নি তার দোষ নয়। কেন রাষ্ট্র শুধু আর্মিদের ট্রেনিং দেয়, অন্যদের ট্রেনিং দেয় না বলে আপনাদের মনে হচ্ছে। আর সত্যি যদি আপনাদের ধারণাই সঠিক হয় তাহলে তো আরো ভয়ংকর কথা।
বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের প্রচুর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তারা যে কাজ করবেন তার জন্যই ট্রেনিং দেয়া হয়।
সব ক্যাডারদের একসাথে বিপিটিএসিতে ৬-৯ মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং দেয়া হয়। এটা রেসিডেনশিয়াল ট্রেনিং এবং এখানে সাধারণ প্রশাসন, সরকারী অফিস পরিচালনা, ইত্যাদি বিষয়ে দীর্ঘ ট্রেনিং দেয়া হয়।
তারপর প্রায় প্রতিটা ক্যাডারের নিজস্ব প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট আছে। হিসাব ও নিরীক্ষার কর্মকর্তারা তাদের ইন্সটিটিউটে আবার ৪-৬ মাস, প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের বিসিএস (প্রশাসন) একাডেমিতে ৪-৬ মাসের ট্রেনিং পান।
২ বছর প্রবেশন সময়ের বেশিরভাগ যায় নানারকম প্রশিক্ষণে। তারপর কর্মকর্তারা আবার পরীক্ষা দেন সরকারী কর্ম কমিশনে চাকুরি স্থায়ী করার জন্য। সেখানে তিনটি বিষয়ে (সরকারী নিয়ম-কানুন, হিসাব -নিরীক্ষা ইত্যঅদি) পরীক্ক্ষা দিয়ে পাশ করতে হয়। খুব কর্মকর্তাই একসাথে তিনটি বিষয় পাশ করতে পারেন। প্রায় সবাইকেই বেশ কয়েকবার পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
তারপর চাকুরি স্থায়ী হওয়ার পর সিনিয়র স্কেলে যাওয়ার জন্য তাদেরকে আবার কর্ম কমিশনের পরীক্ষা দিতে হয়।
এছাড়া একাডেমিগুলো বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষায়িত ট্রেনিং দিয়ে থাকে। নিয়মিত রিফ্রেশার্স কোর্স হয়। তাছাড়া যোগ্যতর কর্মকর্তাদের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। কর্মকর্তারা ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ইত্যাদি দেশের বৃত্তি নিয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি করে থাকেন।
গত আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকেই এরকম উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বৃত্তি চালু করা হয়েছে।
সিভিল প্রশাসনে বেশিরভাগ কর্মকর্তা মাস্টার্স পাশ করেই আসেন। তবু পত্রিকার পাতা উল্টালেই দেখা যাবে যে কর্মকর্তাদের অনেকেই পিএইচডি ডিগ্রির অধিকারী।
এসব প্রশিক্ষণের প্রশ্ন তোলা অবান্তর।
বিসিএস (টেলিকমিউনিকেশন) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা যিনি বুয়েট থেকে ঐ বিষয়ে শিক্ষা শেষ করার পর আইবিএ থেকে এমবিএ করেছেন, তারপর বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকুরি করছেন - তার এই যোগ্যতাকে ধামাচাপা দিয়ে সিগন্যাল কোরে কাজ করা একজন অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার বা মেজরজেনারেল সবসময়ই টেলিফোন সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ পদটা পেয়ে যাবেন - কারণ আর কিছু নয় ... কারণ দেশটার নাম বাংলাদেশ। তৃতীয় বিশ্বের আরো অন্যান্য দেশের মত এখানে এখনও ইউনিফর্মের জোর বেশি।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
এরপর আসলে কিছু বলার থাকে না
শুধু অবঃ দের তাদের নিজস্ব ক্ষেত্রের বাইরে নিয়োগ বন্ধ না করে তাদের পাশাপাশি পুরো আর্মিকেই তার নিজস্ব ক্ষেত্রের বাইরে কাজে লাগানো বন্ধ করা উচিৎ, কি বলেন? এই যেমন ঢাকার রাস্তার ট্রাফিকিং এর কাজ আর্মিকে না দিয়ে পুলিশেরই করা উচিৎ। বন্যা-জলোচ্ছাসে আর্মিকে না নামিয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থপনা মন্ত্রনালয়ের করা উচিৎ, রাস্তাঘাট বানানো, আশ্রায়নের ঘর বাড়ি বানানো, গরু-ছাগল পালন, বীজতলা তৈরী, ভূট্টা চাষ, ভিজিএফ এর চাল বিতরন ইত্যাদি কাজ থেকেও আর্মিকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিৎ।
(আচ্ছা তাহলে আর্মি করেটা খাবে কি? এরচেয়ে আর্মি জিনিষটাই তুলে দিলে হয়)
প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল
নতুন মন্তব্য করুন