কত যে বকতে পারে সগীর! হেন বিষয় নাই, যা নিয়ে সে পঞ্চাশ মিনিট আগে মতিঝিল থেকে একসাথে বাসের টিকিট কাটার পর থেকে বকে যাচ্ছে না। সারাদিন অফিস করার পর এত কথা বলার এনার্জি পায় কোথায় সগীর?
আর কী কাকতাল, সগীর এনার্জি নিয়ে কথা বলা শুরু করে। "বুঝলেন হিমু ভাই, ইনভেস্টমেন্ট দরকার এনার্জি সেক্টরে।"
আমি চেষ্টা করি ভাবলেশহীন মুখে সামনে তাকিয়ে থাকতে। যাতে সগীর ভেবে না বসে, আমি তার কথা শুনছি।
কিন্তু সগীর আমার দিকে চেয়েও দেখে না। লোকভর্তি বাসের ভিড়ের ফাঁক দিয়ে এক মাংসল তরুণীর দিকে ঘাড় কাত করে চেয়ে সে বকতেই থাকে, বকতেই থাকে।
"ইনফ্রাস্ট্রাকচারে বিনিয়োগ করতে হবে। না না না, আপনি আজকে পয়সা ঢেলে কালকেই লাভ আশা করতে পারেন না। মনে করেন নতুন গ্যাসের লাইন বসানো হবে। এটাকে ছেড়ে দিন পিপিপিতে। প্রাইভেট আর পাবলিক, দুজনে দুজনার। পাবলিককে যেমন পয়সা ঢালতে হবে, প্রাইভেটকেও পয়সা ফেলতে হবে। তারপর হবে অবকাঠামো। সেই গ্যাসের লাইন বেয়ে হড়হড় করে নতুন গ্যাস ঢোকানো হবে গ্রিডে। তাতে নতুন কলকারখানা চলবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। অর্থনীতির চাকা ঘুরবে ...।"
বাসের চাকাটা ঘুরে ওঠে সামান্য, আর আমার মাথাটা অর্থনীতির চাকার অনাগত ঘূর্ণনের সাথে তাল রেখে চক্কর দিয়ে ওঠে। চারটা রিল্যাক্সিন খাইয়ে দিলে কেমন হয় চুদির ভাইকে?
সগীর রুমালে ঘাম মুছতে মুছতে বকতে থাকে। "আমাদের দেশের মানুষ, তর সইতে জানে না। আরে ব্যাটা, পেট থেকে বাচ্চা বের হতে মানুষের নয় মাস লেগে যায়, আর এ তো টাকার পেট! এর পেট থেকে বাচ্চা বের হতে তো কমসেকম নয় বছর লাগবে?"
সামনের সিটের এক ভদ্রলোক এবার ঘাড় ঘোরান। "ক্যান? ব্যাঙ্কে পয়সা রাখলে বছর বছর সুদ পামু তো।"
সগীর খেপে ওঠে। "এভাবে পয়সা ব্যাঙ্কে রাখলে চলবে? সবাই যদি পয়সা ব্যাঙ্কে রেখে দেয়, তাহলে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে কীভাবে?"
বাসের চাকা আবারও নড়েচড়ে একটু।
সম্মুখবর্তী ভদ্রলোক বলেন, "ক্যান? আপনে লোন লইয়া দুকান খুলেন? মানা করছি নিকি?"
সগীর হতাশ হয়। "দোকান? আরে দোকান-মাকান দিয়ে তো শহরটাকে পাকা করে ফেললেন ভাই! বৃষ্টির পানি মাটির নিচে যাইতে পারে না আপনাদের দুকানের যন্ত্রণায়! অবকাঠামো লাগবে, অবকাঠামো। অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে হবে।"
ভদ্রলোক বলেন, "করেন না! মানা করছি নিকি?"
সগীর বলেন, "ব্যাঙ্কে টাকা রাখার মানসিকতা ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতে হবে। বিনিয়োগ করতে হবে। লাভ হবেই। হতে বাধ্য। কিন্তু ধৈর্যে বুক বাঁধতে হবে।"
ভদ্রলোক বলেন, "আর প্যাটে পাত্থর।"
সগীর ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে, এমন সময় জ্যামের আগল একটু খোলে। বাসটা কয়েক কদম এগিয়ে তারপর আবার দাঁড়িয়ে পড়ে অর্থনীতির মতো।
"অবকাঠামোতে বিনিয়োগের অভাবে দ্যাখেন, দেশে বিদ্যুৎ নাই। পানি নাই। গ্যাস নাই। টাটকা সবজি নাই।"
ভদ্রলোক বলেন, "বিয়া করার মতো মাইয়া নাই।"
সগীর বলে, "আরে ধুরো ভাই কইতাছি সিরিয়াস কথা মাঝে দিয়া খালি প্যাচ লাগান! আজকে যদি নতুন রাস্তা বানানো হইতো, এই ট্রাফিক জাম থাকতো না! কিন্তু আমরা কি রাস্তা বানাই? না! আমরা গাড়ি কিনি! জাম তো বাড়বেই!"
ভদ্রলোক বলেন, "গাড়ি তো দুকানে পাওন যায়। রাস্তা কি দুকানে পাওন যায়? রাস্তার উপরেই তো দুকান খুইলা বয়া থাকে লুকজন!"
সগীর খেই হারিয়ে বলে, "অবকাঠামো ... আর দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। খালি তো থাকেন বছর ঘুরলেই সুদের আশায়। উঁহু স্যার! তিষ্ঠাতে হবে। পাঁচ বছর! দশ বছর!"
ভদ্রলোক বলেন, "হ। করসিলাম একবারই।"
সগীর সোৎসাহে বলে, "কীসে?"
ভদ্রলোক বলেন, "বহুদ্দিন আগে একবার ঢাকা থিকা চিটাগাং গেছিলাম পেলেনে।"
সগীর বলে, "তো?"
ভদ্রলোক বলেন, "গ্যাদা আছিলাম। হাপপেন্ট পরি। বিমানবালা আইসা কয়, বাবু লজেনছ খাইবা?"
সগীর বলে, "আরে বিনিয়োগ করলেন কীসে?"
ভদ্রলোক বলেন, "আরে মিয়া কইতাছি তো! দীর্ঘমেয়াদী গল্প। মোড়ে মোড়ে আওয়াজ দ্যান ক্যালা?"
সগীর থতমত খেয়ে বলে, "আচ্ছা বলেন।"
ভদ্রলোক বলেন, "আমি কইলাম, হ, আলবাত খামু। লগে লইয়া ভি যামু আমার আন্টির লিগা।"
সগীর বলে, "কোন আন্টি?"
ভদ্রলোক বলেন, "আমগো উপরের তলায় থাকতো এক আন্টি। বহুত মহাব্বত করত আমারে। বাচ্চাকাচ্চা আছিলো না তো। আমি ছিলাম গুড়াগাড়া। আমারে হাওলাত লইয়া যাইত মার কাছ থিকা। অনেক আদর করত। আহারে, আন্টির বাচ্চা হইতেছিল না।"
সগীর বলে, "তো?"
ভদ্রলোক বললেন, "বিমানবালাগুলি তখন ভদ্রসভ্য আছিল। এক বোন্দা লজেনছ আইনা দিয়া কইল, এই লও, কয়টা লইবা। খাবলাইয়া লইলাম কতডি পকেটে।"
সগীর বলে, "তো?"
ভদ্রলোক বললেন, "চিটাগাং গিয়া আন্টিরে দিলাম। কইলাম তুমার জন্য কী আনছি দেখ।"
সগীর বলে, "তো?"
ভদ্রলোক বললেন, "ঐ লজেনছ খাইয়াই তো আন্টির বাচ্চা হইল।"
সগীর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, "ক্যাম্নে?"
ভদ্রলোক বললেন, "খোদার ইশারা। আর আন্টির ঐ মাইয়ার লগেই প্রেম করছি বহুদ্দিন। অ্যালা কন, এইরাম লং-টার্ম ইনভেস্টমেন্ট করার চাঞ্ছ আছে কুনু?"
মন্তব্য
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
লোল।
চিটাগাংয়ের আন্টিদের ব্যাপারে এ ধরণের অপপ্রচার জাতি রুখে দাঁড়াবে।
আমিও একটু ইনভেস্ট করতে চাই। কোন আন্টির মেয়ে থাকলে গোপনে আওয়াজ দিয়েন।
লাইনে খাড়ান। খাড়াইয়া বাইনোকুলার লাগাইয়া আমরা যারা লাইনের সামনের দিকে আছি, তাগো দ্যাখেন। আর দোয়া কুনুত পড়তে থাকেন। কিস্মতে থাক্লে ঠ্যাকায় কে?
ঢাকা-চিটাগাং ফ্লাইটে বিমানবালারা এখন কিন্তু বড়দেরও লজেনছ খেতে দেয়। বাংলাদেশী বিনিয়োগ দর্শন অনুযায়ী ভাবছি ঠিকমত বিনিয়োগ করতে পারলে অল্প সময়েই রিটার্ন আসতে পারে...(ভাল বিনিয়োগকারী থাকলে মাছের তেলে মাছও ভেজে ফেলতে পারে।)। চিটাগাং যাওয়ার সময় মনে রাখব। ভাল লাগল গল্পটা।
নাহ এমন বিনিয়োগের চিন্তাই করা লাগবো
-------------------
আমার ফ্লিকার
---------------------
আমার ফ্লিকার
মজার হইসে। রিটার্ন আইসবে ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাকিব সুলতানঃ
মজা পেলুম।
খুপক্ষ্রাপ!!
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
একে বলে স্বার্থক মোচড় গল্প। সাবাস!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
কঠিন বিনিয়োগ।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
খারাপ কথা মাথায় আইছিলো। কমু না।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
"ভদ্রলোক"কে
=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
আমি জাতীয় বিনিয়োগকারী হিসেবে নিয়োগ পাইতে চাই। হিমুদা উপায় বাতলান...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
মিয়া- এডি গল্প লেখসেন ?? পুরা গপটা ভালা ভালা কথা কয়া শেষে এই??
... আপনে মিয়া খ্রাপ লুক।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
খুপ বেশিই খ্রাপ!
----------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
হ, ঠিকাছে। তয় আমার কিস্মত খ্রাপ। আমি লজেন খাইতে দিলে আন্টির আলবৎ একটা পুলা হইতো।
#ওসিরিস
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নাউজুবিল্লাহ!
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ভালো লাগলো।
বাহ্। হিমুর 'বিনিয়োগ বোর্ডের' প্রধান হইতে আর দেরী নাই...
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
বাহ্ বেশ মজার !
নৈশী।
চ্রম... চ্রম... ইনভেস্মেন্ট জটিল অইছে
ডাকঘর | ছবিঘর
নতুন মন্তব্য করুন