বইটির শুরুতে যে কথাগুলো লেখা আছে, পড়ে বেশ উৎসাহিত হয়েছিলাম। এক ঔপন্যাসিক লিখছেন তাঁর প্রিয় কবির জীবনকে নিয়ে, ওদিকে উপন্যাসের পৃষ্ঠাসংখ্যাও ১৩৩, কাজেই মনের মধ্যে প্রত্যাশার পাগমার্ক বেশ গভীর হয়েই ফোটে। বইয়ের শেষে দুই পৃষ্ঠা জুড়ে বিবলিওগ্রাফি দেয়া, আশাবাদ আরো গাঢ় হয়।
কিন্তু বইটা যতই পড়ি, সেই আশার লণ্ঠনের চারপাশে কুয়াশা জমে।
বই শুরু হয়েছে জীবনানন্দের বালকবেলার বর্ণনা দিয়ে। ঔপন্যাসিক আগাগোড়া রচনা করেছেন জীবনানন্দকে "আপনি" সম্বোধন করে ... আপনি করলেন, আপনি বললেন, আপনি হেসে উঠলেন ... জীবনানন্দকে মুখোমুখি বসিয়ে যেন তাঁকে পড়ে শোনানো হচ্ছে তাঁর জীবনকাহিনী, কবিতা, তাঁর ডায়রির পাতা। ভঙ্গিটি অভিনব, কিন্তু ঠিক যেন পুরোপুরি ফোটেনি সবকিছু, চিনি-লিকার-দুধ মেশেনি ঠিকমতো। কেন এমন মনে হলো, সে প্রসঙ্গে আসছি।
এ কথা সত্য, প্রচুর তথ্য নেয়া হয়েছে বিভিন্ন গবেষণাগ্রন্থ থেকে, কিন্তু সে তথ্য সন্নিবেশনের কাজটি যেন ঔপন্যাসিক পটু হাতে করে উঠতে পারেননি। উপন্যাসটি দাঁড়িয়েছে একটি ড়্যানসমনোটের মতো, এক এক ফন্টে এক একটি অক্ষর দিয়ে তৈরি করা বাক্যসমারোহের মতো, একটি তথ্যের পরিবেশন মসৃণভাবে মিশতে পারেনি পরবর্তী তথ্যের সাথে। কোথাও দেখতে পাচ্ছি সরাসরি উদ্ধৃত করা হচ্ছে ড, আলী আকবর খানের বই থেকে, কোথাও জীবনানন্দের উপন্যাস থেকে, কোথাও তাঁর ডায়রি থেকে, কোথাও অপর কোনো গবেষণাগ্রন্থ থেকে, উদ্ধৃতির ভিড়ে উপন্যাসটি লজ্জাবনতা কিশোরীর মতো মুখ লুকিয়েছে কোথাও, গোটা বইতে তাকে খুঁজে পাওয়া ভার।
কালানুক্রমে জীবনানন্দকে আঁকতে গিয়েও ছন্দপতন হয়েছে। প্রসঙ্গান্তরে চলে এসেছেন অন্য কোনো জীবনানন্দ, একটি দৃশ্য থেকে লেখক লাফিয়ে সরে যাচ্ছেন ভিন্নদৃশ্যে, এই কক্ষপথ পরিবর্তন পাঠকের মনে অস্বস্তি তৈরি করে বলে আমার মনে হয়েছে। বালক মিলুর চারপাশ আঁকতে গিয়েও যেন তুলি সরে আসছে কাগজের ওপর থেকে, তারপর অকস্মাৎ দেখতে পাই জোয়ান জীবনানন্দকে। সেই জীবনানন্দ কখনো সিটি কলেজের চাকরি খোয়াচ্ছেন, আবার কখনো সেখানেই চাকরি করছেন, স্পষ্ট নয়, ঔপন্যাসিক কি পাঠককে তেলমাখা বাঁশে তিনফুট চড়িয়ে আবার ফুট দেড়েক নামিয়ে আনছেন, নাকি স্বয়ং জীবনানন্দই পর্যায়কালীন চাকরি ধরা-ছাড়ার মধ্যে রয়েছেন।
ব্যক্তির জীবনকে আঁকতে গেলে তাঁর জীবদ্দশায় যেসব ঘটনা তাঁর আশপাশের পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে, সেদিকেও ঔপন্যাসিকের মসীর স্পর্শ কামনা করে পাঠকের মন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো বড় বড় ঘটনার কোনো প্রভাবই কি জীবনানন্দের ওপর পড়েনি? ঢাকার তরুণেরা রাইটার্স বিল্ডিঙে ঢুকে পিস্তল হাতে যুদ্ধ করছে বৃটিশের গুর্খাবাহিনীর সাথে, জীবনানন্দের বয়স তখন ৩১, এ ঘটনার কোনো ছাপই কি পড়েনি তাঁর মনে? বৃটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের তুমুলতম সময়টিতে জীবনানন্দের যৌবনকাল, তিনি কি একেবারেই অস্পৃষ্ট ছিলেন সেই প্রতিবেশে? এর কোনো হদিশ মেলে না "এতদিন কোথায় ছিলেন"-এ, কারণ রহস্যে মোড়া। হয়তো বিবলিওগ্রাফিতে বর্ণিত বইগুলিতে ও নিয়ে কিছু লেখা ছিলো না, কে জানে?
উপন্যাসটিতে শুধু মুগ্ধ হয়েছি "বনলতা সেন" কবিতাটির ঠিকুজি সন্ধানের কুশলতায়। বোধ করি এ নিয়ে গবেষকরা গান্ধার-মগধ-লঙ্কা-কামরূপ-বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে একশো আটটি আইডিয়া-গরু খুঁজে এনেছেন, কে এই নাটোরিকা, এবং ঔপন্যাসিক সেই হাইপোথিসিসগুলি সাজিয়েছেন সুবিন্যাসে। তাঁর পুস্তকটি পাঠ করিলে জানিতে পারা যায়, হয়তো বনলতা সেন ছিলেন জীবনানন্দের নাটোর হয়ে দার্জিলিংগামী ট্রেনে নাটোর স্টেশন থেকে ওঠা কোনো তরুণী, হয়তো বনলতা সেন ছিলেন রাণী ভবানীর বাড়িতে আতিথ্যমগ্ন কবির পরিবেশন নিয়োজিতা কোনো রূপসী পরিচারিকা, হয়তো বনলতা সেন ছিলেন রূপোপজীবিনীদের পসরার জৌলুসে খ্যাত নাটোরের কোন দেহপসারিণী, হয়তো বনলতা সেন কিছুই ছিলেন না কবির কবিত্বের জলছাপ ছাড়া ... কিন্তু এই কবিতাটির স্থানকালপাত্র গবেষকদের আতশ কাঁচের নিচে পড়ে পড়ে তার অন্ত্রের ভাঁজের রহস্যটুকুও হারিয়েছে, নানা প্রকল্পে জর্জরিত বনলতাসেনের যাবতীয় সম্ভাবনা সেই গবেষকদের গ্রন্থ থেকে উঠে এসেছে হকের উপন্যাসে। বনলতা সেনের পরিচয়হীনতার ক্ষমা নেই, তার রহস্য কবিতার পাঠক খঞ্জর হাতে মোচন করবেই। পাখির নীড়ের মতো চোখ থেকে শুরু করে থাকে শুধু অন্ধকার, সবই গবেষকের এক্সরে ভেদ করে দেখে ফেলে। মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন এমন অন্তহীন রিমান্ডে গবেষকের মুখোমুখি বসে, কে বলবে, আদৌ কোনো অন্ধকার থাকে শেষ পর্যন্ত?
উপন্যাস এগিয়েছে জীবনানন্দের মানসপ্রিয়াদের সন্ধান করে করে। খুড়তুতো বোন শোভনা মজুমদারই কি বারে বারে জীবনানন্দের ফ্যান্টাসির উদ্দিষ্টা হয়ে তাঁর ডায়রি আর গল্পের চরিত্র হয়ে এসেছেন? নাকি অন্য কেউ ছিলেন? উপন্যাসে তাই এক কবির প্রেয়সীদের হারিকেন হাতে খুঁজতে থাকে পাঠক। সেই সন্ধানের ভুলভুলাইয়াতে চলতে চলতেই জীবনানন্দের বিয়ে হয় লাবণ্যপ্রভার সাথে, তাঁর কন্যা আসেন পৃথিবীতে, তাঁর বিবাদ-বিষাদের কাহিনীটুকু হুবহু উঠে আসে তাঁর ডায়রি আর তাঁর উপন্যাসের পেপারকাটিঙে চড়ে। ঔপন্যাসিকের নিজস্ব কল্পনাশক্তি তখন জরুরি অবস্থায় সংবিধানের মতোই যেন, অস্তিত্বশীল কিন্তু স্থগিত। তিনি কেবল সাজিয়ে নেন এই টুকরো টুকরো পৃষ্ঠাকে। এই প্রচেষ্টা চলে উপন্যাসের শেষ স্তবক দুটির আগ পর্যন্ত।
যাঁরা বইটির সন্ধান আমাকে দিয়েছেন, তাঁদের কয়েকজনের কাছ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পেয়েছি জীবনানন্দের হস্তমৈথুনের বর্ণনার বিরুদ্ধে। ফেসবুক এবং ব্লগে হালের কতিপয় আজিজীয় কবির নিজের কলমে নিজেকে রমণের পুনরাবৃত্ত সব ঘটনায় তাদের স্বমেহনপারঙ্গমতা এবং স্বমেহনপ্রবণতার নিদর্শন দেখে আমি বিস্মিত নই, যে কবিরা বাস্তব জীবনেও স্বমেহন করতেই পারেন, এবং জীবনানন্দও স্বমেহন করে থাকতে পারেন, তাঁর যৌনজীবন আমার কাছে আগ্রহের বিষয় নয় বলে এই বর্ণনায় আমি উৎফুল্ল বা বিমর্ষ হবার মতো কিছু পাইনি। তবে বেশ কিছু ইংরেজি প্রতিশব্দ ঘুরে ফিরে ব্যবহৃত হয়েছে উপন্যাসে, হাত মারাকেও মাস্টারবেশন লিখে একটু আবছা করে দেয়ার কৌশল চোখে পড়েছে।
উপন্যাসটি শুরু হয়েছে ঔপন্যাসিকের চোখের জল দিয়ে, শেষও হয়েছে অশ্রু দিয়েই, জীবনানন্দের মৃত্যুর করুণাধারাসিক্ত বর্ণনার পর, তবে সে অশ্রু আবার সামষ্টিক, লেখক সচেতনভাবেই পাঠককেও অশ্রুপাতের সহযাত্রী হিসেবে ধরে নিয়েছেন। পাঠকের অশ্রু জীবনানন্দের নিরানন্দ, বিমর্ষ, বেদনাতুর, ভালোবাসাহীন জীবনের জন্যে যতটা গড়িয়ে নামে, তারচেয়ে বোধ করি বেগবান হয় জীবনানন্দের প্রতি মমত্বের যে অঙ্গীকার উপন্যাসের প্রাগকথনে মূর্ত, তা ভঙ্গ হওয়ায়। এই উপন্যাসটি আরো ব্যাপ্তি নিয়ে, আরো সময় নিয়ে রচিত হওয়া উচিত ছিলো, তাতে ঔপন্যাসিকের "জিগর কা খুন" আরো একটু রঞ্জিত থাকার কথা ছিলো, জীবনানন্দের জীবনটি আরো অধিক হয়ে ফোটার প্রয়োজন ছিলো, তার কিছুই ঘটেনি। শেষ বিচারে উপন্যাসটি কিছু গবেষণাগ্রন্থের কাটিংবুক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার মাঝে অল্প কিছু জায়গায় শুধু চোখে পড়ে, এক কবি আরেক কবিকে স্মরণ করে দুয়েকছত্র লিখেছেন প্রগাঢ় ভালোবাসায়, বাকি অংশগুলিতে সেই কবিকে আইপিসহ ব্যান করে একজন ব্যস্ত কলামিস্ট উপন্যাস লেখার অভিনয় করে যাচ্ছেন কেবল।
আমি জানি না, ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাসের মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "সেই সময়", "একা এবং কয়েকজন", "প্রথম আলো", কিংবা "মৈত্রেয় জাতক" (বাণী বসুর নয় কি?) অথবা ভার্গাস ইয়োসার "ফীস্ট অব দ্য গোট" পড়ে বিরাট ব্যাপ্তির মধ্যে ইতিহাসের ঘটনাগুলি দেখার আগ্রহ আমার মাঝে তৈরি হয়েছে কি না, কিন্তু স্বল্পায়তনের মধ্যে জীবনানন্দ দাশকে পড়তে গিয়ে এই বইটির কাছে আমার পাঠক মন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আমি ভবিষ্যতে আনিসুল হকের কাছ থেকে মহত্তর উপন্যাসের প্রত্যাশায় থাকবো।
মন্তব্য
চমৎকার রিভিউ। বইটি আমার পড়া হয়নি। ইচ্ছেটাও কমে গেলো।
তবে জীবনানন্দ এর ডাইরিটা পড়তে উৎসাহিত হলাম। ওনার ডাইরিতে কি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা একদমই আসেনি?
আমি কেনো যেনো সব তথ্য সবাই জানুক এটা মেনে নিতে পারিনা। 'বনলতা সেন'এর রহস্যটা রহস্য থাকাই উচিত।
'যাঁরা বইটির সন্ধান আমাকে দিয়েছেন, তাঁদের কয়েকজনের কাছ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পেয়েছি জীবনানন্দের হস্তমৈথুনের বর্ণনার বিরুদ্ধে। '--এটাই কি স্বাভাবিক নয়? পিচ্চিকাল থেকে শেখানো সংস্কারে যেগুলো খারাপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, বড়ো হয়ে ঐ ট্যাবু কাটানো অনেক কঠিন। আমরা কাজটা করবো কিন্তু প্রকাশ্যে এই বিষয়ে কথা বলাটা অস্বস্তিকর। আর আমরা কেনো যেনো প্রিয় মানুষদের এই রূপ দেখতে ভালোবাসিনা।
আমার মনে হয় কি ইতিহাসনির্ভর যেকোনো রচনা লিখতে গেলে গবেষণা করা ছাড়াও সাইকো এ্যানাসাইলিস করাটা জরুরী।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
অন্য কেউ পড়ে থাকলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন একটু শুনি।
পড়া হয়নি এখনো। পড়তে হবে তাইলে।
সেই ফাঁদ আর আয়েশামঙ্গল-র পরে কিছুই পড়া হয়নি।
আনিসুল হকের বই কেন যেন আমার তেমন পড়া হয় নাই। ভোকা আমলের গদ্যকার্টুনগুলাসমগ্রগুলা ছাড়া।
এমনকি তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস "মা"ও পড়া হয় নাই। ভাবলাম কেনার আলসি, কিন্তু মা'র পিডিএফ বছর খানেক ধরে জমা আছে পিসিতে। তবু পড়া হয় নাই। এই অনাগ্রহের কারণ আমি জানি না।
তবে কুন্ডেরার একটা গল্পের ভাবানুবাদ পড়ে খুব ভালো লাগছিলো।
এইটা আসলে অন্যায়। উনার বই পড়া উচিত। ভাবলাম এবছর থেকেই শুরু করবো। আর সেই লক্ষ্যেই গত বইমেলা থেকে কিনলাম "এতদিন কোথায় ছিলেন"
হক সাহেব না হোক, অন্তত জীবুবাবুর প্রভাবে যদি বইটা পড়া হয়।
কিন্তু হায়, পড়া হইলো না। এর মাঝে কতো চন্দ্রভূক রাত্রি কেটেছে ভিন ভিন বই পড়ে। এই বইটা ধরেই দেখা হইলো না।
সেদিন কনফুর স্ট্যাটাসেও দেখলাম বইটা তার পছন্দ হয় নাই। আপনিও কইলেন। এইবার তো মনে হইতেছে আর পড়াই হবে না আমার। বিপদে ফেললেন, টাকাটা তো উসুল করতে হবে...
তবে লিখে ভালো করছেন, প্রস্তুতি নিয়ে পড়া যাবে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমি আনিসুল হকের একটা বইই পড়েছি 'মা' তাও মাগনা পিডিএফ পেয়েছি বলে ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
এই বৈশাখে জীবনানন্দ গবেষক ডাঃ ভূমেন্দ্র গুহ ঢাকায় এসেছিলেন। তখন এক আলোচনা সভায় থাকার সুযোগ হয়েছিল যেখানে তিনি একক আলোচক হিসেবে জীবনানন্দের জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছিলেন। আলোচনাসভায় আনিসুল হকও উপস্থিত ছিলেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে আনিসুল হক জীবনানন্দের মৃত্যুর ব্যাপারে তার উপন্যাসে যেমন লিখেছেন সেটাকে ডাঃ ভূমেন্দ্র গুহকে দিয়ে সার্টিফাই করার চেষ্টা করছিলেন। ডাঃ গুহ খুব স্পষ্টভাবে নিজের বক্তব্য দিলেন (যা তাঁর নিজের চোখে দেখা, নিজের কানে শোনা), যা আনিসুল হকের উপন্যাসের বর্ণনার বিপরীত। তখনই মনে হয়েছিল উপন্যাসটা লেখার আগে আনিসুল হক কি ডাঃ গুহের সাথে একবার ফোনেও কথা বলেন নি!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কেউ খেয়াল করছেন কি না জানি না, আজকাল সচলে বইয়ের সমালোচনা করে লেখা গুলো আসল বই থেকে ভালো হচ্ছে। বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বীচি।
আনিসুল হকের "ফাঁদ" আমার খুবই প্রিয়। তবে আলোচ্য বইটা শেষ করা হয় নি।
ভাল লাগল আপানার আলোচনা।
ব্যাপক আলোচনায় যাব না, তবে কিছুটা আপনার মতই আমার আশাভঙ্গ হয়েছিল – তবে আমারটা বেশি ছিল।
বিরাট ব্যাপ্তির ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাসের কথা বাদই দিলাম, ছোট পরিসরে হাসনত আব্দুল হাইয়ের নভেরা কিংবা সুলতান পরে আমি চমৎকৃত হয়েছিলাম। আনিসুল হকের কাছে আমার প্রত্যাশাটা হয়ত তাই অনেক বেশি ছিল।
আনিসুল হক কখনোই ঠিক লেখক হয়ে উঠতে পারেননি। তাঁর লেখায় সাংবাদিকতা অর্থাৎ তথ্য সংগ্রহ অংশটাই প্রধান হয়ে উঠে।
ভাই হিমু, আপনি আনিসুল হক সাহেবের মৃত মা উপন্যাসটা যদি একবার পড়তেন তাহলে তার আর কোনো (ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে লেখা) বই হাতে নেওয়ার দু:সাহস করতেন না।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
এই হকের মোট ৬টি বই পড়েছি আমি। তবে এইটা পড়ে মনে হলো উনি এখানে পন্ডিতি বেশি করতে চেয়েছেন এবঙ সেটা করতে পারেন নি। আর বইটি যেহেতু জীবন দাস কে নিয়ে, সে কারণে আরো বেশি বাজে লাগে। আপনার রিভিউ ভালো লাগলো বস।
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
"জীবন দাস" কথাটা কানে বাজলো, নজরুলকে "কাজী নজু" বলে ডাকলে যেমন শোনাতো ... । আপনি নিজেও তো বোধহয় কবিতা লেখেন, জানেন হয়তো, জীবনানন্দ "দাশ" ছিলেন, "দাস" নন।
আনিসুল হক লেখেন- তার পাঠক আকর্ষণের ক্ষমতাও চোখে পড়ার মত। কিন্তু বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি কেবলই মাসুদ রানার জন্যে মাঝে মাঝে হালকা রগরগে বিষয় কেনো আনেন- এইটা আমি ঠিক বুঝতে পারি না...।
আনিসুল হকের সবচেয়ে ভালো লাগা বই হচ্ছে 'জিম্মি'- এটা থকে "মেইড ইন বাংলাদেশ" একটা কুখাদ্য ছবি নির্মাণ হয়েছিলো। 'ফাঁদ' ভালো, 'মা' ও ভালো লেগেছিলো...।
এই বইটা পড়ি নাই। কারো কাছে পিডিএফের লিঙ্ক থাকলে আমাকে একটূ মেইল করবেন, প্লিস ??
---------------------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
- নামাইছি, এখনো পড়ি নাই। তয় তোর লেখা পইড়া মনে হৈতাছে জীবন বাবু যুদ্ধের ময় কৈ আছিলো এইটা নিয়াই একটা রহস্য আছে, আর সেই জন্যই হক সাবের বই এর নাম "এতোদিন কৈ আছিলেন" বাবুজী!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
রিভিউটা বেশ সহায়ক৷ ঠিক করলাম বইটা পেলেও পড়ার চেষ্টা করব না৷
আচ্ছা এই বইটায় কোথায়ও জীবনানন্দের নারীবিদ্বেষ নিয়ে কিছু বলা হয়েছে? ভূমেন্দ্রবাবু সেই নিয়ে কিছু কথা বলেছেন৷
এখানে ভূমেন্দ্রবাবুর বই নিয়ে একটা ৭ পাতা জোড়া আলোচনা আছে পড়ে দেখবেন৷ যিনি লিখছেন তিনি একজন ডাক্তার৷ তাঁর মতে লাবণ্যদেবী ডিপ্রেশানের রোগী ছিলেন, যা তখন কেউ রোগ বলে জানতও না, চিকিত্সারও প্রশ্ন নেই৷ তার সাথে আর্থিক অনটন৷ ফলে অমন ব্যর্থ দাম্পত্য৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
আনিসুল হকের "মা" বইটি জনপ্রিয়তা পাবার একটা বড় কারণ হল বইটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গেরিলা আক্রমনের কাহিনী নিয়ে লেখা। লেখকের কৃতিত্বের চেয়ে ঘটনার অসাধারণত্বই বইটিকে জনপ্রিয় করতে বেশি ভুমিকা রেখেছে।তবে উনি ঘটনা এবং সব তথ্য ঠিকমতই সংগ্রহ করেছেন।তবে সেগুলো পুরোপুরি সাজানো নেই।
"এতদিন কথায় ছিলেন" বইতেও একই ঘটনা।তবে বনলতা সেনের পরিচয় বের করার চেষ্টাটা আপনার মতই আমারো ভালই লেগেছে। এই বইটি প্রথম আলো ঈদ সংখ্যায় গত বছর প্রকাশিত হয়েছিল।এবারে উনি শেখ মুজিব এবং তাজউদ্দিনের '৪৭-পুর্ব রাজনীতির কাহিনী নিয়ে লিখেছেন।এটায় ঘটনার ধারাবাহিকতা মোটামুটি ধরে রাখতে পেরেছেন।পরে দেখতে পারেন।
"উদ্ধৃতির ভিড়ে উপন্যাসটি লজ্জাবনতা কিশোরীর মতো মুখ লুকিয়েছে কোথাও, গোটা বইতে তাকে খুঁজে পাওয়া ভার। " -একদম ঠিক।
থ্যাংক্স। আমি এমনিতেও অ-লেখকের "ইতিহাস-আশ্রয়ী" কু-লেখা পড়তে আগ্রহী নই। তারপরও, আ.হক জনপ্রিয় লেখক, তাই জনপ্রভাবশালী, তাই সমাজঅনুসন্ধানীদের জন্য মাইনে রাখেন ... আপনার আলোচনাটা এই কারণে দরকারি।
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বইটা পড়েছি। তেমন ভালো লাগেনি। বনলতা সেন আসলে কে - এটা খুঁজে বের করাটাও জরুরী মনে হয়নি।
রিভিউটা ভালো লেগেছে। উপন্যাসটা বাণী বসুরই, তবে নামটা বোধহয় " মৈত্রেয় জাতক " ।
ঠিক। সংশোধন করে নিচ্ছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রথম আলো না অন্য কোথায় ঈদসংখ্যায় লেখা প্রকাশ হয়েছিল। তখন পড়েছিলাম। ভালো লাগে নাই। বইমেলায় কারে কারে জানি কইছিলাম, বইটা না কিনতে।
.............................................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
আমি কেন এই লেখায় প্রথম পাঁচ দিলাম, ৩৬২ বার পড়ার পর? আমি তো এখন হিমু ভাইরে পার্সোনাল মেসেজ করুম জানার লাইগা এইরকম পাগলা রিভিউ কেমনে ল্যাখে?
নাকি কিছু মিস করলাম?
আনিসুল হকের লেখা একটা মাত্র বই পড়েছি- প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের বাসায় চোর আসে।
আমিও এই একটা বই পড়েছি। বাসায় খুঁজলে এখনও পাওয়া যেতে পারে। ফিডব্যাক আর না দেই
নুসদিন।
দুর্দান্ত রিভিউ ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
--আরিফুল হোসেন
আনিসুল হকের লেখা বেশী একটা ভালো লাগে নাই কখোনোই। তার লেখা বেশ পলকা এবং গভীরতাহীন। চরিত্রগুলো এত কথা বলে যে ভাবার সময় পায় না। আর কথাগুলোও ভাবার মত নয়। আরেকটা সমস্যা যে আনিসুল হক মনে হয় উপন্যাস লেখার আগেই ভেবে নেন উপন্যাসের দৈর্ঘ কত হবে।
এইটা পড়ি নাই, আর মনে হয় না পড়া হবে। থ্যাংকস টু হিমু ভাই। বাজারী লেখকদের বইগুলার যা দাম, এর চেয়ে কয়েকটা সাহিত্যপত্র কিনে পড়া ভালো।
জীবনানন্দ পড়া শুরু করেছি আবার; এবার গদ্য মনোযোগের সাথে
আনিসুল হক এর এই বইটি আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে তা বলব না। তবে হক সাহেব যে খুব একটা সময় দেননি তা স্পষ্ট। এরকম একটা বই জীবনানন্দ এর সকল সৃষ্টি অন্তত কয়েকবার পড়ে লিখলে ভাল কিছু হয়ত বেরোত। তবে বইয়ের বিষয়টি আগ্রহোদ্দীপক। বইয়ের রেফারেন্সের কল্যাণে কিছু বইয়ের নাম পেয়েছি; কলকাতা যদি কখনো যাওয়া হয় কিনতে হবে। a poet apart বইটা পড়ার বহুদিনের শখ; আশা করি অচিরেই সেটা মিটবে। এই টাইপের কিছু একটা লেখার ইচ্ছে নিয়ে বেঁচে আছি।
এবার বই নিয়ে বলি... বইটার ফোকাস স্পষ্ট না; লেখক অসংখ্য উদ্ধৃতি আর আবেগঘন পাঠকের জবানিতে আসলে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন স্পষ্ট না; বইয়ের একেবারে প্রথম দিকে মনে হতে থাকে জীবনানন্দের সাহিত্য এবং তাঁর সাথে কবির বেড়ে উঠাকে একসূত্রে গাঁথা-ই লেখকের উদ্দেশ্য। প্রথম পর্ব পড়ার পর মনে হয় না, সমগ্র জীবনানন্দ রচনা নয় বনলতা সেনই লেখকের মূল আগ্রহের জায়গা। আবার একেবারে শেষের কয়েকটা পর্বে মনে হয় জীবনানন্দের কবিতায় আসা নারীচরিত্ররাই উপন্যাস(বা মুক্তগদ্য)টির উপজীব্য। যে কারণে বইটি আসলে কতটা সফল তা বলা কঠিন। তবে জীবনানন্দ সম্পর্কে পাঠকের মনে যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি করবে এটা ঠিক।
কবির ডায়েরিতে লেখকের প্রবেশাধিকার ছিল; আর ছিল কল্পনা। কবির জীবনীর নানান অংশ লেখক কাল্পনিক সংলাপ আর কবির সৃষ্টি থেকে উদ্ধৃত করে শূণ্যস্থান পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। যে কারণে এটা উপন্যাস আর পদ্ধতিগত গবেষণার জগাখিচূড়ি ছাড়া আর কিছুই হয় নি।
তবে জীবনানন্দ অথবা তাঁর কবিতাকে ভালবাসেন এমন পাঠকের অন্তত একবার বইটা পড়া দরকার। কবির গদ্যগুলোকে সামনে নিয়েই।
যারা লেখক আনিসুল হক কে তীব্র পছন্দ বা অপছন্দ করেন তাদেরও পঠিতব্য তালিকায় এই বইটিকে রাখাই উচিত।
সবশেষে হিমু ভাইয়ের রিভিউয়ে জাঝা...
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
আনিসুল হকের লেখা এক কথায় 'ভাল্লাগে না!'
রিভিউ না পড়লেও পড়া হতো না এই বই।
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
এই বইটার আইএসবিএন নাম্বারটা কি কেউ দিতে পারেন আমাকে?
ISBN 9847011400664
সুত্র
----------
- সায়ন
অনেক ধন্যবাদ, সায়ন।
এই লেখাটা আগেই আপনার ব্যক্তিগত ব্লগ থেকে পড়েছিলাম। আবারও পড়লাম, ভাল লাগল।
জীবনানন্দকে নিয়ে আমার পড়া সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বইটি হলো ভূমেন্দ্র গুহ'র 'জীবনানন্দ ও সঞ্জয় ভট্টাচার্য'। হক ভাইয়ের উপন্যাসের চেয়েও অনেক বেশি সুখপাঠ্য ও হৃদয়গ্রাহী।
উপন্যাসটার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, তিনি শেষটা কোথায় নিয়ে ফেলবেন তা আগে থেকেই জানতেন। তবু পাঠককে সাতপাঁচ বুঝিয়ে 'অনেক ক্যালকুলেশন করে সিদ্ধান্তে এলাম' ভঙ্গি করেছেন। ফলে শেষরক্ষা হয় নি।
রিভিউ পড়আর পর ত আর বই টা পড়তে ইচ্চা করচেনা। আনিসুল হক এর যারা ভর এন্চিল পড়এচি ভাল লাগেনি তেমন, মা বই তা অবস্স পড়নি। রিভিউ এর জন্ন অনেক ধন্নবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন