পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওস এখন একটা প্রতিশ্রুতির সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পিক্সার মানেই দুর্দান্ত, মনে ছাপ ফেলে যাওয়া কোনো অ্যানিমেশন।
আপ [UP] এর পরিচালক পিট ডক্টার এর করা আগের অ্যানিমেশনের নামটা শুনলেই চোখকান বুঁজে আপ দেখতে বসে পড়া উচিত। ইনিই মনস্টারস ইনকরপোরেটেড এর পরিচালক।
আপের কাহিনীর কিসিম মনস্টারস ইনকরপোরেটেডের মতোই অভিনব। কার্ল ফ্রেডরিকসন আর তার স্ত্রী এলির ভালোবাসার কাহিনী গোটা সিনেমা জুড়ে, যদিও এলি কয়েক মিনিটের মধ্যেই কার্লের সাথে তার গোটা জীবন কাটিয়ে মারা যায়। আনফরগিভেন-এ যেমন বিগতা স্ত্রীর প্রতি উইলিয়াম মানি-র ভালোবাসাই গোটা সিনেমার উপজীব্য, আপ-এও তেমনি।
কার্ল ফ্রেডরিকসন স্বভাবে একটু গম্ভীর, এলি ছটফটে, চঞ্চল। শৈশব থেকে তার পরিকল্পনা, দক্ষিণামেরিকায় এক জলপ্রপাত দেখতে যাবে সে, ওটাই তার জীবনের লক্ষ্য। সেই অ্যাডভেঞ্চারের স্বপ্নে সঙ্গী হয় প্রতিবেশী বালক কার্ল, যাকে নিয়ে এলি সংসার শুরু করে এক পর্যায়ে, একসাথে তারা বুড়ো হয়, একসাথে বেড়াতে যায় বাড়ির কাছের ছোট্ট টিলার ওপরে. এবং একদিন বেড়াতে গিয়ে এলি আর টিলার চূড়ায় পৌঁছুতে পারে না। কার্ল একটা বেলুন হাতে একা বাড়ি ফেরে এলির সৎকার করে।
কিন্তু ঐ যে প্রতিশ্রুত অ্যাডভেঞ্চার, দু'জনে মিলে তারা বেড়াতে যাবে জলপ্রপাতে, যার নাম প্যারাডাইস, তার কী হবে? নিঃসঙ্গ কার্লের মন টেকে না ঘরে। আর ঘরের চারপাশটাও অচেনা হয়ে ওঠে আস্তে আস্তে, চেনা চারপাশ পাল্টে যেতে থাকে ডেভলপারের দৌরাত্ম্যে। একদিন কার্ল হাজার হাজার ফানুশ ফোলায় হিলিয়াম দিয়ে, তারপর বাড়ির সাথে বেঁধে সে উড়াল দেয় বাড়িশুদ্ধু। গন্তব্য, দক্ষিণামেরিকা। ননস্টপ প্যারাডাইস জলপ্রপাত, গেটলক।
অবশ্য গেটলক আর থাকে না শেষ পর্যন্ত। কার্লের সেই অ্যাডভেঞ্চার মোচড় নেয় অন্যদিকে, সঙ্গী হয় ক্ষুদে ক্যাম্পার বালক রাসেল, এবং আরো বিস্ময়কর সব চরিত্র। সিনেমার রাস্তা বার বার মোচড় খায়। পঁচানব্বই মিনিটের সিনেমা গোটা সময় ধরেই দর্শককে চুম্বকের মতো ধরে রাখতে পারে। পিট ডক্টারের সার্থকতা ওখানেই।
হোক অ্যানিমেশন, আপ ঠিক যেন শিশুতোষ নয়। কিন্তু তারপরও মনে হয়, এমন সিনেমাই তো বাচ্চাদের দেখানো উচিত। অনিঃশেষ ভালোবাসার গল্প, যা মানুষকে ধরে রাখে মানুষের সাথে, কার্ল আর এলির মতো একসাথে ভালোবেসে বুড়ো হবার পথ দেখায়। এলির অ্যাডভেঞ্চারের খাতা যেন সে কারণেই শুরু হয় নানা ফ্যান্টাসি দিয়ে, সামনে বাড়ে আর শেষ হয় কার্লের সাথে তার যাপিত জীবনের টুকরো টুকরো সব ছবি দিয়ে। সিনেমা শেষ করে স্তব্ধ মনে বসে ভাবি, মানুষ মানুষের জন্যে ... সে এক অ্যাডভেঞ্চারই বটে!
.
.
পার্টলি ক্লাউডি
.
.
.
.
.
আপ
মন্তব্য
খুব ভালো রিভিউ হলো। আমার প্রথম সিনেমা হলে গিয়ে দেখা ফুল লেন্থ থ্রি-ডি মুভি। এক বিবাহিত ছেলে ( বউ দেশে ) আর আমি ডিজনি ফানি মুভি মনে করে দেখতে গেছি। ভাবিনি এই প্লট হবে। মুভির মাঝপথে দেখি সে কাঁদছে। আমার চোখও প্রায় টলোমলো। কি যে ভালো লেগেছে মুভিটা।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
আপ দেখার জনে অপেক্ষা করতে করতে হাঁফ ধরে গেল, টরেন্টে খুজতেছি বহুতদিন যাবত, আবার খুজে দেখতে হবে।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সাইফ ভাই, এইখানে দেখতে পারেন। আমি মনে হয় এটা নামাবো। কমেন্ট তো বলতেসে প্রিন্ট খুবই ভালো। তারপরও অপেক্ষা করতে পারেন। আমার নামানো হইলে, আমি আপনাকে জানাতে পারবো প্রিন্ট আসলেই কেমন।
নামাইলাম, প্রিন্ট ভালো। সিডিং ভালো ছিল, ধুম ধাম নেমে গেসে। ধন্যবাদ বস।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আপ দেখেছিলাম থ্রি-ডি তে। মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো গল্প। রাসেলটা এত্ত কিউট!
পার্টলি ক্লাউডি-ও অসাধারন লেগেছে।
আশা করছি তৃতীয় টয় স্টোরিটাও খুব ভালো হবে।
- এলি'র স্বপ্নটা কেবল দক্ষিণ আমেরিকার জলপ্রপাত দেখাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। তার স্বপ্ন ছিলো জলপ্রপাতের ঠিক পাশেই একটা নির্দিষ্ট জায়গায় তার বাড়ি করবে যেখানে সে থাকবে। এই স্বপ্নটাকে ঘিরেই সে তার এ্যাডভেঞ্চার বুক বানায়। কার্লকে সেটা জানায়, দেখায়। কার্ল আর এলি তাদের জীবনের সব সঞ্চয় এক করেও সেই সামর্থ্যে পৌঁছুতে পারে না।
এলি মারা যাবার পর কার্ল তার বাড়ি শুদ্ধ এলি'র সেই নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানোর পর যখন এলি'র এ্যাডভেঞ্চার বুকটা খুলে দেখে তখন সে আমার চেয়েও বেশি অবাক হয়। এলি তার জীবদ্দশায় যেটাকে তার 'লাইফ টাইম এ্যাডভেঞ্চার' বলতো সেই এ্যাডভেঞ্চার আসলে দক্ষিণ আমেরিকার জলপ্রপাতের পাশে তার বানানো বাড়িতে থাকা নয়। বরং কার্লের সাথে যে জীবনটা একই সূত্রে পার করে দিতে পারলো, সেটাই। এই জায়গায় কেনো জানি না, দর্শক হিসেবে আমি অনেক বড় একটা ধাক্কা খাই। কার্লের দীর্ঘশ্বাসের সাথে সাথে আমারও একটা অব্যক্ত কষ্ট বের হয়ে যায় বাতাস হয়ে। এখানে এসে আমার মনে হয়, পৃথিবীতে কেবল এবং কেবলমাত্র একটা জিনিষই পারে সবকিছু জয় করতে, আর তা হলো ভালোবাসা।
আপ-এর থ্রী-ডি ভার্সনটা দেখেছি বলেই কিনা, সবকিছু মনে হয়েছে আমি নিজে খুব কাছ থেকে অনুধাবন করেছি। এমনকি কার্লের অনুভূতির প্রতিটা বিন্দুও।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দুর্দান্ত রিভিউ হিমু ভাই আর অসাধারণ মন্তব্য ধূগো ভাই । এই পোস্টটা পড়ার পরে আমার একটা স্বপ্ন আরও চাঙা হলো । অসংখ্য ধন্যবাদ।
রাজিব মোস্তাফিজ
ধুগোর মন্তব্যে
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
মুক্তির প্রথম দিনেই দেখেছিলাম। কী অসাধারণ ছবি! আফসুস, পবিত্র দেশে এসে হলে গিয়ে ছবি দেখার পরিমাণ রাতারাতি কমে গেছে!!!!!
টয় স্টোরী ৩ এর জন্য রেডি হন (মুক্তির তারিখ জুন-২০১০)
খুব সুন্দর রিভিউ! ডিভিডি কিনে ফেলবো । তবে ধুগোদার কথাবার্তায় কেনো জানি মনে হচ্ছে ছবিটাতে মন খারাপ করার মতো ব্যাপারস্যাপার থাকতে পারে।
---------------------------------------
right church, wroing pew!
আমি যে লেভেলের দৌড়ের উপর আছি, সিনেমা যে আবার কবে দেখতে পারি !
যাই হোক, " আপ", "ডাউন"-লোড করবো মনে হয় আগামী সোমবার...
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
এনিমেশনের মহা ভক্ত হওয়ায় টরেন্ট পাওয়া মাত্র নামিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু প্রথমে আমার ভালো লাগেনাই হিমুদা। আমি আবার একটু বেশি বুঝিতো, তাই ধূগোর মতো সিনেমার ঐ অংশে এসে কান্তে কান্তে পুরা গালে কাজল মাখিয়ে ফেলেছিলাম, দেখছিলাম বন্ধুর বাসায়, আমি সিনেমা দেখছিলাম, আর ওরা আমাকে দেখছিলো! সেদিন ওরা আর মুভিটাই শেষ করতে দেয়নাই আমাকে! বাকি সময় ধরে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি! বাসায় এসে আবার দেখলাম, কার্লের মতো আমিও সিনেমাজুড়ে মিস করেছি এলি কে, রাসেলের সাথে পাখিটার দৃশ্যগুলো সুন্দর ছিলো! শেষমেশ কি আর করা! ভালো লেগেই গেলো!
রিভিউ আর ধূগোর মন্তব্য চমৎকার হয়েছে!
----------------------------
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু।
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।।
- ললিতবিস্তর
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
রিভিউ খুব জোস হইছে হিমুদা। আর মহো'দার মন্তব্যে প্লাস।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
দারুন রিভিউ। আপ দেখার আগ্রহটা অনেক বেড়ে গেল। যত তাড়াতাড়ি পারি দেখে ফেলব।
মহসীন রেজা
রিভিউ ভালো লাগলো।
ভালো প্রিন্টের জন্যে ওয়েইটাইতেসি...
কোথায় ওসিরিস, নামায়ে লও !!!
-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
হিমু ভাইয়া, রিভিউ পড়েই ডাউনলোড দিয়া দিলাম।
আজকে রাতেই দেখে ফেলব।
দেখতে হবে
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
দেখে আসলাম হলে যেয়ে। এমনিতেই পিচ্চি বাচ্চা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। আজকে হল ভর্তি পিচ্চি। অ্যানিমেশন বলেই বোধকরি। রাসেল এর মজাগুলো দারুণ লাগলো। আর শেষের দিকে এসে চশমার কাঁচটা কেমন জানি হঠাৎ বেরসিকের মত ঝাপসা হয়ে গেল। ভাগ্যিস পকেটে টিস্যু ছিল।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
খুব ভালো লাগলো, খুব ভালো, খুব ভালো। কিন্তু এতবার লিখেও আসলে কত ভালো লাগলো তার কিছুই বলতে পারলাম না।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এই মাত্রই দেখে এলাম, ভীষণ ভালো লাগলো। মনে হলো শুধু ওপেনিং সিক্ওয়েন্সটাই একটা দারুণ ছবি হয়ে যেতে পারত, বাকীটুকু বাড়তি পাওনা। আর রেশনুভাইয়ের মত চোখটোখ তো বারবারই বিচ্ছিরি রকম ঝাপসা হয়ে এলো, চশমা পড়ি না বলে রক্ষা।
রেকমেন্ডেশনের জন্য অনেক ধন্যবাদ হিমুভাই, আর ধুগোর চমৎকার মন্তব্যের সাথে একমত।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
এনিমেশন মুভির আমি তেমন ফ্যান না। তবে সবাই যেভাবে বলছে 'আপ' দেখতেই হবে। আমার এখনো দেখা হয়ে ওঠেনি। দেখি এখনই নামাই...
আর হিমুদাকে ধন্যবাদ দারুন একটা রিভিউ লেখার জন্য।
--------------------------------------------------------
--------------------------------------------------------
টয় স্টোরি দেখে শুরু করেছিলাম। বহু পরে দেখেছিলাম হ্যাপি ফিট (পিক্সারের কিনা জানি না), কয়দিন আগে মাদাগাস্কার ২। আপ দেখতে হবে মনে হচ্ছে।
আপ অতটা ভালো লাগে নাই। তবে এটাচ করা প্রথম ভিডিওটা জোস লাগছে। দ্বিতীয়টা দেখতে পারলাম না।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আপ দেখতে হবে বুঝতেসি
পিক্সারের সাথে কারোর তুলনা হয়না। মনস্টার ইনক আমার পারসোনাল ফেভারিট। আপ দেখে ফেলব জলদি।
==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।
কিছুক্ষণ আগে দেখে উঠলাম... একটা অনন্য এনিম। এলির জন্যে মন খারাপ হলো অনেক...
-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
একদম সোনার সোহাগা। দারুচিনি থেকে সিনেমা নামাইলাম, আর হিমু ভাই-এর রিভিউ পড়লাম। কি দারুণ!
নতুন মন্তব্য করুন