বোনকে ফোন করলে তাঁর ছোটো মেয়েটা এসে খুব হইচই করে। মা ফোনে কারো সাথে কথা বলছে, এটা তার পছন্দ নয়। আবার সে নিজেও কথা বলতে নারাজ। জিজ্ঞেস করি, "ও চায় কী?"
বোন বলেন, "ও চায় ও দুষ্টামি করবে, আর আমি পিছে পিছে দৌড়াবো। শয়তানের আঁটি একটা!"
আমি বলি, "দাও দেখি ফোনটা, কথা বলি।"
পিচ্চি কথা বলবে না কিছুতেই, সে তারসপ্তকে চেঁচামেচি করে ম্লেচ্ছ ভাষায় কী কী যেন বলে। বোন অনেক কাকুতি মিনতি করেন, "কথা বলো একটু? হিমু মামা তো! বলো, হিমু মামা কেমন আছো? বলো?"
রিনরিনে কণ্ঠে ভাগ্নি বলে, "হ্যালো! আমি উদিতা! আমি ভালো আছি! আমি দুষ্টুমি করি! তুমি কে?"
এইটুকু বলেই সে ছুট দেয় অন্যদিকে, শুনতে পাই আবার হইচই করছে, ভাইকে তাড়া করছে, জিনিসপত্র ওল্টাচ্ছে।
খুব হাসি, কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে যায়, আমার ভাগ্নি আমাকে চিনবে না?
তারপর মনে হয়, কীভাবে চিনবে? তার জন্ম হয়েছে ভিনদেশে, কবে সেই টলোমলো পায়ে হাঁটার বয়সে এসে একবার দেখেছে আমাকে, আমি তো তার কাছে ফোনের ওপাশের আগন্তুকই, তার বেশি কিছু তো নই। তার বড় বোন যেমন আমার কোলে চড়ে বড় হয়েছে, তেমন সুযোগ তো সে পায়নি।
বড় ভাইয়ের ছেলেও জন্মেছে অন্য দেশে। তার সাথে ফোনে আলাপেরও সুযোগ হয়ে ওঠেনি। একদিন হয়তো তার বাবা তাকে ফোনে একটা অচেনা আগন্তুক কণ্ঠ ধরিয়ে দিয়ে বলবে, কথা বলো, তোমার হিমুকাকা, কথা বলো ...?
গত পরশু মেজ ভাইয়ের মেয়ে এসেছে পৃথিবীতে। হাসপাতালের আইসিইউতে ধুকধুক করছে তার নতুন প্রাণ। একদিন তার কাছেও আগন্তুক হয়ে যাবো। ফোনের ওপাশের কাকা হয়ে থাকবো, সে চিনবে কেবল একটা কণ্ঠস্বরকে। তাকে কোলে নিয়ে ঘোরা হবে না, ঘুঘুসই খেলা হবে না, ঘাড়ে চড়িয়ে গিটার বাজিয়ে গান শোনানো হবে না, তার মুখে রং দিয়ে চিত্রবিচিত্র এঁকে দেয়া হবে না, ঘুমপাড়ানোর জন্যে গল্প পড়ে শোনানো হবে না।
পৃথিবীটা নাকি ছোটো হয়ে আসছে। ছোটো ছোটো মানুষগুলোর পৃথিবী আরো ছোটো করে ফেলছি আমরা নিজেরাই। তাদের মাঠ নাই, আকাশ নাই, ঘুড়ি নাই। তাদের মামা নাই, কাকা নাই, আছে শুধু নিষ্প্রাণ টেলিফোনে কণ্ঠস্বরের ভিড়।
মা রে, ভালো থাকিস এইসব ছাড়াই। কীভাবে, আমি জানি না।
মন্তব্য
শৈশবের একটা অংশ আমরা নিয়ম করে গ্রামে গিয়ে কাটাতাম। বাবা-মা হয়তো গ্রামের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাননি বলেই এমনটা হতো। মামা, খালা, নানা-নানী কিংবা চাচা-চাচী, দাদা-দাদীদের সংস্পর্শে যারা আসেনি তারা এর মজা বুঝবে কী করে?
আমি আমার মামাদের কাছ থেকে এখনো যে ভাব-ভালোবাসা আশা করি, তাদের সাংস্পর্শ যেমনটা কামনা করি, আমার ভাগ্নে-ভাগ্নী তো সেটা বুঝবে না।
আমার ভাগ্নের বয়স যখন ৪ কিংবা ৫, তখন একদিন ফোনে তাকে বলছি, 'আমি তোমার মামা হই'
উত্তর এলো, 'আমার মামা তো এখানে, তুমি তো আঙ্কেল'
তখনই বুঝেছি ওদের মামা আর আমাদের মামা'র মধ্যে অনেকখানি তফাত হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ আগে আপনার এই লেখাটা পড়লাম। আর তারপরেই দেখি আবার এইটা দিছেন। আপনি ভাই মহা খ্রাপ লুক। মনটাকে নিংড়ে সবটুকু জল নিয়ে গেলেন।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
আপনাকে বুঝে উঠতে পারি না। এই হাসাচ্ছেন তো এই কাঁদাচ্ছেন। আপনি অতিশয় খচ্চর প্রকৃতির মানুষ।
চোখে পানি আনার জন্য "তেব্র দিক্কার" এবং "কইষ্যা এক দাগানো হৈল"।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
"আমি দুষ্টুমি করি! তুমি কে?"-------------------আমারও এমন দুষ্টু ও মিস্টি একটা ভাগ্নি আছে হে দাদা।
এস হোসাইন
-------------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"
এই সময় ধুলাবালি এত বেশি- চোখমুখ কচকচ করে পুরা।
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
আমার ছেলেটার সাথেও কথা হয় ফোনে, Skypeeআর messenger এ।
"বাবা তুমি চলে আসো, আমিতো তোমার সাথে খেলবো,,,,,আসো না,,,,,"
আমি উত্তর দিই না, দিতে পারিনা,,,,,
চোখে বুনো পোকা হানা দেয়,,,গলা চেপে বসে কাবর্ন ডাই অক্সাইড,,,,
ভেজা নক্ষত্র
"রোজ রাতে ঘুমে দিচ্ছ হানা
বাস্তব নয় নিছক স্বপ্ন জানা"
পৃথিবী ছোট হচ্ছে কে বললো ?
মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল। আমরাও তাই একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
লেখা যথারীতি অনবদ্য
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
খুব সুন্দর একটা উক্তি।
একটু আগে আপনার ২/৩ ট্রিলজিটা পড়েও মন্তব্য করিনি বাকিটা পড়ার আশায়। কিন্তু এখানে ঠিকই করলাম, আপনার উপলব্ধিকে সহমত জানাতে। হয়তো এমনও দিন আসবে যখন এক সহোদর/সহোদরা জন্মাবে এক গ্রহে, অন্যজন জন্মাবে কয়েক আলোকবর্ষ দূরের অন্য কোন মিল্কিওয়ের আরেক গ্রহে। জগতটা বড় হচ্ছে, না কি ছোট হচ্ছে বুঝতে পারছি না !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
মায়া ...................... *তিথীডোর
মনটা খারাপ করে দিলেন রে ভাই।
মহসীন রেজা
গান শোনেন
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ভালো লাগছেনা হিমুদা, কেনই বা আমাদের হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাচ্ছেন?
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ঘুঘুসই কি জাতীয় খেলা? :-|
-------------------------------------------------------
আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নীরবে ফিরে চাওয়া, অভিমানী ভেজা চোখ।
-------------------------------------------------------
আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নীরবে ফিরে চাওয়া, অভিমানী ভেজা চোখ।
- ঘুঘু ধরে ঢিল মেরে হাত সই খেলা।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বেদনা জাগানো লেখা।
শিরোনাম'টা অনেক ভালো লাগলো।
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
...................
-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
খুব সুন্দর লিখেছেন......
এখন সেই নানী, দাদী, মামা, খালাদের ভরা হাসিমাখা শৈশবগুলো রূপকথার মতন লাগে।
আপনার এইসব জাতীয় লেখায় আমি মন্তব্য করি না।
সমবেদনা জানিয়ে গেলাম, আমার ২ ভাতিজা আর এক ভাতিজি দেশে, বড় ভাতিজা যদিও এখনো আমার পাগল, মেঝ জন ততটা না, আর ভাতিজি যেমন আমাকে চোখে দেখেন, আমিও তাকে ধরতে পারিনি। এ ধরনের কথা কখনও চিন্তা করতে চাই, অহেতুক কষ্ট পাহাড় থেকে পর্বত পরিমানে রূপান্তরিত হয়।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
- বুঝ্ এইবার কেমন লাগে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
উদিতা পিচ্চিটাকে খুব ভালো লাগলো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
দূরত্বটাকে যাঁরা এইভাবে ফিল করে আমি জানি এবং প্রার্থনা করি এই দূরত্ব তাঁদের কাছে সাময়িক হবে।
রাজিব মোস্তাফিজ
লেখাটা পড়লাম যখন আমি আমার প্রিয় ঋতু শীতের আসন্ন মাস গুলির জন্য পরিকল্পনা করছি... । ভাল লাগল। আরও ভাল লেগেছে শীত নিয়ে আপনার স্মৃতি-কাতরতায় আচ্ছন্ন কলকের মন্তব্য।
সচলায়তন সবসময়ই চমৎকার সব ব্যানার করে। তবে উজানগাঁর সময়োপযোগী এই ব্যানারটা অসাধারন লাগল...। (২০০৮ তে BAT এর ক্যালেন্ডারে শীতের সকালে রমনা পার্কে তোলা একটা সাদাকালো ছবি ছিল..., খুব ভাল লেগেছিল... সেরকমই ভাল লাগল।)
এ লেখার মন্তব্য হয় না। তাও বলি, আপনি সৌভাগ্যবান যে এখনো এই নিয়ে আপনার দুঃখ হয়। আমি আজকাল অবশ বোধ করি, কিছুতেই কিছু এসে যায় বলে মনে হয় না।
এই কষ্টগুলোর সংখ্যা এবং পরিমাণ কেবল বেড়েই চলছে। আচ্ছা, উদিতারা যখন বড় হবে তখন ওরাও কি এই কষ্টগুলো পাবে? নাকি এই সব অনুভূতিগুলো ব্যাকডেটেড হয়ে যাবে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
প্রজন্ম চলে যায়, শুধু কষ্টগুলো থেকে যায়, একভাবে না একভাবে...
=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
ধুরো হিমু তাই, আগের ২ লেখার পর এই লেখা দেয়ার মানেটা কি? মন খারাপ হয়ে যায়...
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
হিমু ভাইয়ের লেখা দেখেই পড়া শুরু করলাম। হিমু ভাই মন খারাপ করা লেখা। আমার একটা তিন বছরের ভাতিজা আছে, ও আমার সাথে ফোনে এইরকম করে, কথা বলতে চায় না, যাও বলে, শোনার আগেই দৌড় দেয়। আমার সাথে ওর দেখা হয় মাসে একবার কী দুইবার, ওদের বাসায় গেলে আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না।
সত্যি, আমাদের কাছে খেলার মাঠ মানেই ছিল সবুজ দুর্বা ঘসের বিরাট মাঠ, আর ওদের কাছে খেলার মাঠ মানে ছোট ড্রয়িং রুম। আধুনিক যন্ত্রপাতি ওদের খেলার সঙ্গী, আর আমরা খেলেছে খোলা মাঠে বল, হাডু-ডু, দাড়িয়াবান্দা, কাবাডি, কানামাছি, বৌচি, বরফ-পানি, ক্রিকেট, ভলিবল। কোথায় পাবে ওরা এই সব, সবাই যে যন্ত্রের কাছে বন্দী।
ধন্যবাদ।
দলছুট
একই রকম অনেকের অভিজ্ঞতা পাওয়া গেল। আমার ফুপাতো বোনের বড় ছেলেটা যখন জন্মায় আমি তখন কলেজে। ওদের বাসায় প্রায়ই যাওয়া হত। তাই পিচ্চিটার কাছে তানিম মামা খুবই পরিচিত এক মুখ। কিন্তু তার ছোটটা এখন আমাকে চিনেই না। প্রতি অনুষ্ঠানে দেখা হওয়ার পরে নিজেকে চেনাতে হয়। বদলে যায় সময় কিভাবে...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
উদিতা নামটা বড় মিষ্টি।
আপনার এধরণের সেন্টিমেন্টাল লেখাগুলি অত্যন্ত ভালো লাগে। ভাব-আবেগের একটুও বাড়াবাড়ি না করেও এমন করে মন-খারাপটাকে তুলে ধরেন যে মনের ভেতর ভীষণভাবে দাগ কেটে যায়। বিষন্ন লাগে।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
একটা প্রশ্ন বহুবার বিভিন্ন সময় নানাজনকে করেছি, আবারো করছি- 'কেন মানুষ প্রবাসে থাকে সব ছেড়ে? প্রাপ্তির পরিমান কি এতই বেশী? প্রাপ্তির তালিকাটাও চেয়েছি বহুবার...'
রেইনকোটের বাম পকেট থেকে
খুকির জন্য বের করি রুমাল,
নাও খুকি-
কংক্রিটের বারান্দায় গিয়ে
চোখ মুছে নাও।
এমন কষ্টমাখা কেন আমাদের এ বর্তমান?
মনজুর এলাহী
নতুন মন্তব্য করুন