গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও আড়ড়ড়ড়জে অপহরণ রহস্য

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ৩০/১০/২০০৯ - ৪:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


১.

দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি, যিনি স্বাভাবিক অবস্থায় চতুর্দিকেই বেশ ধারালো, কিন্তু বিপদে পড়ে ঘাবড়ে গেলে নিতান্তই ভোঁতা হয়ে যান, উদভ্রান্ত মুখে বললেন, "স্যার, এখন আমার কী হবে?"

গোয়েন্দা ঝাকানাকা আনমনে একটা কানকাঠি দিয়ে কান চুলকাচ্ছিলেন, তিনি নিমীলিত চোখে উদাস গলায় বলেন, "একটা এমপিথ্রি প্লেয়ার কিনে ফেলুন। কিংবা আইপড।"

কিংকু চৌধারি ফোঁসফোঁস করে বলেন, "না স্যার! তা হয় না! দুধের স্বাদ মাঠাতে মেলে না!"

ঝাকানাকা বলেন, "মাঠা খারাপ কী? দুধের মধ্যেই তো মাঠা থাকে। আর যেসব বাড়তি জিনিসপত্র দুধে থাকে, সেগুলো নিতান্তই বাহুল্য।"

কিংকু চৌধারি ফুঁপিয়ে ওঠেন, "না স্যার! বাহুল্য নয়! এফএম রেডিও না শুনলে আমার শরীর চাবায় স্যার!"

ঝাকানাকা এবার কানকাঠির অন্য প্রান্ত দিয়ে অপর কান চুলকাতে থাকেন, আরামে তাঁর চোখ বুঁজে আসে। "তারা কি সব এফএম রেডিওর দোকান গুটিয়ে বাড়ি বসে আছে নাকি? রেডিও তো শুনলাম দিব্যি চলছে। একটু আগেও শুনছিলাম "জাম নিয়ে গিয়ানজাম" ...।"

কিংকু চৌধারি চোখের জল মোছেন ইউনিফর্মের হাতায়। "বাছা বাছা সব আরজেগুলিকে তুলে নিয়ে গেছে স্যার! ওরা না থাকলে এফএম রেডিও শুনে লাভ কী?"

ঝাকানাকা বললেন, "কাদের?"

কিংকু চৌধারি এবার উঠে দাঁড়িয়ে পকেট হাতড়ে একটা কাগজ বার করেন। "রেডিও ঝাঞ্জাইলের আরজে ছোলায়মান, রেডিও তুলকালামের আরজে নূরজাহান, রেডিও পটাশিয়ামের আরজে আবুল লেইছ, রেডিও গিলগামেশের আরজে গুলবদন ... আর," গলাটা ধরে আসে কিংকু দারোগার, "রেডিও হুটোপুটির আরজে মুনমুনমুন!"

ঝাকানাকার হাত থেমে যায় হঠাৎ। কানকাঠিটা কান থেকে বার করে নিয়ে তিনি ঘাড় ফেরান, মানে কান ফেরান আর কি। "কাম অ্যাগেন?"

কিংকু চৌধারি বিরসমুখে আবার বলতে শুরু করেন, "রেডিও ঝাঞ্জাইলের আরজে ছোলায়মান ...।"

ঝাকানাকা বাধা দেন। "উঁহু। উঁহুহু। ওসব না। শেষ নামটা আবার বলুন।"

কিংকু চৌধুরির চোখ ছলছল হয়ে আসে সদ্যোজাত বাছুরের মতো। "রেডিও হুটোপুটির আরজে মুনমুনমুন স্যার!"

ঝাকানাকা একটি ভুরু ওপরে তুলে শুধান, "মুনমুনমুন? একটা মুন বেশি হয়ে গেলো না?"

কিংকু চৌধারি সটান দাঁড়িয়ে বলে, "নো স্যার! ঠিকই শুনেছেন! মুনমুনমুন! ওর ফ্যানরাও হরদম এই ভুলটাই করে স্যার! রায়েরবাজার থেকে ঝুমা, তৃষা, দীপ্তি, লিটন, সদরুল আর বেবি এসেমেস পাঠিয়ে বলে, ডিয়ার মুনমুন আপু আমরা তোমাকে অনেক লাভ করি! তখন মুনমুনমুন হেসে শুধরে দেয় স্যার! বলে, আমিও তোমাদের অনেক লাভ কড়ি ড়ায়েড়বাজাড়েড় ঝুমা, তৃষা, দীপ্তি, লিটন, সদড়ুল আড় বেবি! কিন্তু আমাড় নাম মুনমুন নয়, মুনমুনমুন! ডোন্ট মিস দ্য লাস্ট মুন, দ্যাটস হোয়াট মেইক্স মি মুনমুনমুন, অন ইওর ডিয়াড়েস্ট মিউজিক প্রোগ্রাম, গুনগুনগুন উইথ মুনমুনমুউন, ঔনলি অন ড়েডিও হুটোপুটিইইইই!"

ঝাকানাকা রক্তিম চোখে কিংকু চৌধারিকে আপাদমস্তক মাপেন একবার, মুখে কিছু বলেন না।

কিংকু দারোগা রুমাল বার করে চোখ মোছেন।

ঝাকানাকা আবার কানকাঠিটা ঢোকান ভালো করে না চুলকানো কানটায়। "তা কিংকর্তব্য স্থির করেছেন কিছু?"

কিংকু চৌধারি মাথা নাড়েন বিহ্বল মুখে। "আমি তো বিমূঢ় হয়ে পড়েছি স্যার!"

ঝাকানাকা বললেন, "তা এই ঘটনা ঘটলো কীভাবে, খোঁজ নিয়েছেন?"

কিংকু চৌধারি বসে পড়েন সোফায়। "গতকাল সকালে এরা কেউ কাজে রিপোর্ট করেনি স্যার! অফিসের লোকজন বাড়িতে ফোন করে শুনেছে, তার আগেরদিন নাকি কেউ কাজ সেরে বাড়ি ফেরেনি!"

ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম, তার মানে পরশুর ঘটনা।"

কিংকু চৌধারি বলেন, "জ্বি স্যার! এরপর অফিসের লোক আর বাড়ির লোক, সকলে চিলুবিলু করে থানায় ফোন করেছে। সাথে হানা দিয়েছে পত্রিকা অফিসে। তারা একখান করে রিপোর্ট ঠুকে দিয়েছে পুলিশের নামে।"

ঝাকানাকা ঢুলুঢুলু চোখে বললেন, "দেখেছি। দৈনিক আমোদী রসময়ে পড়েছি। আরজে উধাও, পুলিশ কান চুলকায়। আপনাদের এক বড়কর্তার ছবিশুদ্ধু ছাপিয়েছে। কানখুষ্কি দিয়ে কান চুলকাচ্ছেন ডেস্কের ওপর পা তুলে, নবাবের ব্যাটা।"

কিংকু দারোগা বলেন, "ওপর থেকে জোর চাপ এসেছে স্যার, দুইদিনের মধ্যে নিখোঁজ আরজেদের খুঁজে বার করে কর্মস্থলে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বড়কর্তাদের ছেলেমেয়েরা রাতে ভাত খেতে পাচ্ছে না।"

ঝাকানাকা বললেন, "তাদেরও শরীর চাবায়?"

কিংকু দারোগা বললেন, "জ্বি স্যার!"

ঝাকানাকা বললেন, "তা আপনি কী করলেন এই বিকেল পর্যন্ত?"

কিংকু দারোগা দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, "রায়েরবাজার এলাকায় জোর হুড়ো লাগিয়েছি স্যার! যতগুলি ঝুমা, তৃষা, দীপ্তি, লিটন, সদরুল আর বেবি পাওয়া যাবে, সবগুলিকে কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় জমা করা হবে!"

ঝাকানাকা অসন্তুষ্ট গলায় বললেন, "আপনি দেখছি এই রেডিও হুটোপুটির মুনমুনমুনের প্রতি কিঞ্চিৎ পক্ষপাতদুষ্ট!"

কিংকু চৌধারি রুমাল বার করে চোখ মোছেন। "আমার কতগুলি এসেমেস রিড আউট করেছে সে, জানেন স্যার?"

ঝাকানাকা বললেন, "না। কতগুলি?"

কিংকু চৌধারি বলেন, "বাহাত্তরটা! রেজিস্টার করার পর বাহাত্তরটা এসেমেস পাঠিয়েছিলাম, বাহাত্তরটাই পড়ে শুনিয়েছে স্যার! ... এমন ভালো আরজে আর নেই ঢাকায়!"

ঝাকানাকা বললেন, "আপনি এত এসেমেস লেখার সময় পান কোত্থেকে? আপনার তো কাজের ঠ্যালায় দম বের হয়ে যাবার কথা! পুলিশের চাকরি করেও এসব লেখার সময় পান?"

কিংকু চৌধারি বললেন, "এ তো আর সচলায়তনের পোস্ট না স্যার। দুই তিনটা করে শব্দ, তাও আবার ভেঙেচুরে। মোবাইলে তো স্যার সবকিছু লিখতে হয় না, ভাওয়েলগুলি বাদ দিয়ে শুধু কনসোন্যান্ট লিখলেও চলে!"

ঝাকানাকা মুখ কুঁচকে বললেন, "বেশ। আপনার মেসেজগুলি পরে দেখাবেন নাহয়। এখন চলুন দেখি, রেডিও স্টেশনগুলিতে একবার করে চক্কর মেরে আসি।"

Zhakanaka 2

২.

রেডিও ঝাঞ্জাইলে একটা শোকস্তব্ধ ভাব। সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরে প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আবুল মক্সুদ শেখ বসে ছিলেন নিজের অফিসে। তাঁর চোখ দু'টি ভেজা ভেজা।

ঝাকানাকা বাজখাঁই গলায় বললেন, "এই ছোলায়মানের স্বভাব চরিত্র কেমন ছিলো?"

মক্সুদ শেখ ধরা গলায় বললেন, "রেডিও স্টেশনে দিনরাত ডিউটি দিতো বেচারা, স্বভাব চরিত্র খারাপ হবার সময় কই?"

কিংকু চৌধারি চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, "ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলবেন না জনাব শেখ! সোজা উত্তর দিন, ছোলায়মানের স্বভাব চরিত্র কেমন ছিলো?"

মক্সুদ শেখ আড়চোখে কিংকু চৌধারিকে আগাপাস্তলা দেখে নিয়ে গলা খাঁকরে বললেন, "আমি যতদূর জানি, ভালোই ছিলো। কিন্তু ...।"

ঝাকানাকা মিটিমিটি হাসেন। "কিন্তু?"

মক্সুদ শেখ বললেন, "ছেলেমেয়েরা বড় বিরক্ত করতো তাকে।"

কিংকু চৌধারি বললেন, "ছেলেমেয়েরা মানে? ছেলেরাও তাকে বিরক্ত করতো নাকি!"

মক্সুদ শেখ বিব্রত কণ্ঠে বললেন, "ইয়ে, আমাদের স্টেশনে মেয়ে আরজে টেকে না বেশিদিন। ছোলায়মান মাঝে মাঝে সকালের শিফটে আরজে আনারকলি সেজে কাজ চালিয়ে নিতো ...।"

কিংকু চৌধারি সটান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। "মাই গড!" হুঙ্কার ছাড়েন তিনি। "আপনি বলতে চান, আরজে আনারকলি আর আরজে ছোলায়মান একই ব্যক্তি?"

মক্সুদ শেখ হাত নেড়ে বলেন, "আরে আস্তে বলুন! এত চেঁচাচ্ছেন কেন? সংবাদঅলারা শুনলে আমার ব্যবসা লাটে উঠবে!"

কিংকু চৌধারি বলেন, "ইয়ু ড্যাম ফুল! ধোঁকাবাজির আর জায়গা পান না? জনগণের সাথে প্রতারণা! চারশো বিশ ধারায় ফাঁসিয়ে কাস্টডিতে নিয়ে গিয়ে অ্যায়সা কোঁৎকা লাগাবো যে ...।"

ঝাকানাকা বাধা দেন তাকে। "আরে থামুন তো! তখন থেকে হাউমাউ করছেন! ছোলায়মান আনারকলি সাজলে আপনার সমস্যা কী?"

কিংকু চৌধারি সগর্জনে বলেন, "এটা একটা কথা নাকি স্যার! দেখাবে মুরগি খাওয়াবে ডাইল!"

মক্সুদ শেখ একটি ভুরু তির্যক করে কেবল অপাঙ্গে দেখেন কিংকু চৌধারিকে।

ঝাকানাকা নিচু গলায় বলেন, "আপনি কি আনারকলিকেও এসেমেস পাঠাতেন নাকি?"

কিংকু চৌধারি সরোষে বলেন, "কক্ষণো না! এতগুলি বছর পুলিশে চাকরি কি খামাখা করেছি নাকি? আরজে আনারকলির ঐ নাকি গলায় আদিখ্যেতা শুনেই আমি বুঝে গেস্লাম, এ ছোলায়মান না হয়েই যায় না!"

মক্সুদ শেখ মিটিমিটি হাসেন এতক্ষণে। বলেন, "স্টেশনে তো আমরা একটা ডাটাবেজ রাখি। সেটা পরীক্ষা করলেই দেখা যাবে, আনারকলির বড় ফ্যান কারা! কারা তাকে নানারকম গদোগদো এসেমেস পাঠাতো! কারা তাকে রোজ রোজ শুভসকাল জানাতো! কারা তাকে মেঘলা দিনে একলা হৃদয়ের হুলুলুলু ডাক শোনাতো!"

ঝাকানাকা সোজা হয়ে বসেন চেয়ারে, তীক্ষ্ণ চোখে তাকান মক্সুদ শেখের দিকে। "বলেন কী? এমন ডেটাবেজ রাখেন, সে কথা পুলিশকে জানিয়েছেন?"

মক্সুদ শেখ ডানেবামে মাথা নাড়েন। "না স্যার!"

কিংকু চৌধারি বজ্রকণ্ঠে বলেন, "কেন? এমন জনগুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশকে না জানানোর অপরাধে আপনাকে কাস্টডিতে নিয়ে অ্যায়সা কোঁৎকা লাগাবো যে ...!"

ঝাকানাকা আবারও বাধা দেন তাকে। "জানাননি কেন?"

মক্সুদ শেখ বলেন, "আমার কী ঠ্যাকা পড়েছে পুলিশকে আগ বাড়িয়ে এত কিছু জানানোর? প্রসঙ্গ উঠলো দেখে বললাম। আপনারা কী জানতে চান বলুন, উত্তর জানলে সব বলবো। কিন্তু হড়বড়িয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলে আমার আরজেরা, আমি না।"

কিংকু চৌধারি সরোষে মক্সুদ শেখকে অগ্নিদৃষ্টিতে বারবিকিউ করতে করতে বলেন, "স্যার, এই লোকের আচরণ খুবই সন্দেহজনক! একে তো ছোলায়মান ছোকরাটাকে আনারকলি সাজিয়ে জাতির সাথে প্রতারণা করছেই, আবার ছোলায়মান অপহরণের সাথে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ সব আলামত গোপন করার তালে আছে ব্যাটা! বলেন তো ওকে থানায় নিয়ে একটু পুলিশি সিরাপ খাইয়ে দিই। কোঁৎকা লাগালেই হড়বড়িয়ে বলে দেবে মুনমুনমুন কোথায়!"

মক্সুদ শেখ বললেন, "মুনমুনমুনের আমি কী জানি!"

ঝাকানাকা বললেন, "আহ কিংকু সাহেব! হচ্ছে কী?" মক্সুদ শেখের দিকে ফিরে তিনি বলেন, "আপনাদের ডেটাবেজখানা প্রিন্ট করে দিন আমাকে এক কপি। গত এক মাসে কারা আপনাদের স্টেশনে এসেমেস পাঠিয়ে আরজে আনারকলি আর আরজে ছোলায়মানকে কী বলেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ চাই। কোনো কিছু যেন বাদ না পড়ে।"

কিংকু চৌধারি ফুঁসতে থাকেন। মক্সুদ শেখ ফোন তুলে ডায়াল করেন।

ঝাকানাকা নিচু গলায় জানতে চান, "এই মেঘলা দিনের একলা হৃদয়ের হুলুলুলু ডাক ... ব্যাপারটা কী?"

কিংকু চৌধারি আবারও ক্ষেপে ওঠেন, "জানিনা স্যার! এই ব্যাটা পুলিশের ভাবমূর্তিতে কালিমালেপনের অপপ্রচেষ্টায় লিপ্ত! রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ফাঁসিয়ে অ্যায়সা হুড়কো দেবো না ...!"

মক্সুদ শেখ বললেন, "পুলিশকে আমি আবার কী করলাম? আপনাকে ডেটাবেজ ছাপিয়ে এনে দিচ্ছি স্যার, ওতে আপনি নিবন্ধিত শ্রোতাদের নাম ফোন নাম্বার মেসেজ সব পাবেন! আপনিই পরখ করে দেখবেন, আনারকলির আশেকান কারা ছিলো!"

ঝাকানাকা বললেন, "তা ছোলায়মানকে কি সরাসরি বিরক্ত করতো নাকি ছেলেমেয়েরা?"

মক্সুদ শেখ ডানেবামে তাকিয়ে একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বললেন, "এক মেয়ে বড় জ্বালাতন করতো তাকে!"

কিংকু চৌধারি বললেন, "রাস্কেল! লম্পট!"

ঝাকানাকা বললেন, "কীরকম জ্বালাতন করতো?"

মক্সুদ শেখ বললেন, "রিসেস টাইমে অফিসে ফোন করে নখড়ামো করতো স্যার। বলতো, ছলু ভাইকে দিন, আমি লাবণী বলছি!"

ঝাকানাকা বললেন, "ইন্টারেস্টিং! লাবণী, য়্যাঁ? কিংকু সাহেব, নোট করে ফেলুন।"

মক্সুদ শেখ নিচু গলায় বললেন, "নারীঘটিত ব্যাপার হতে পারে স্যার! আজকালকার ছেলেছোকরাগুলি অত্যন্ত খতরনাক! উঠতে বসতে মেয়ে নিয়ে হট্টগোল!"

ঝাকানাকা বললেন, "তা এই লাবণীর ফোন নাম্বারখানা আছে আপনাদের কাছে?"

মক্সুদ শেখ বললেন, "আপনি ছোলায়মানের ডেস্ক হাঁটকে দেখতে পারেন স্যার, কোনো ডায়রিটায়রি পান কি না। আমার কি সময় সুযোগ আছে এইসব দেখার? আমি ব্যস্ত থাকি আমার কাজে।"

কিংকু চৌধারি ঘোঁৎ করে একটা শব্দ করেন শুধু, কিন্তু কিছু বলেন না।

ঝাকানাকা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, "আরেকটা কথা। আপনার স্টেশনে মেয়ে আরজে টেকে না বলছিলেন। টেকে না কেন?"

কিংকু চৌধারি গর্জে উঠলেন, "আবার কেন স্যার! তাকিয়ে দেখুন ব্যাটার দিকে। আস্ত লুল্পুরুষ! চেহারাতেই দেখুন লাম্পট্য ফেটে পড়ছে! এর কবলে পড়লে দুনিয়ার কোনো মেয়েই টিকতে পারবে না কোথাও! আর মেয়ে না টিকলেই বা লস কোথায় ওর? ছোলায়মানকে আনারকলি সাজিয়ে খুব তো ব্যবসা করেই যাচ্ছে ব্যাটা। বাটপার!"

মক্সুদ শেখের চেহারা লালচে হয়ে ওঠে। "দেখুন দারোগা সাহেব, না জেনে উল্টাপাল্টা কথা বলা ঠিক না! মুরোদ থাকলে ছোলায়মানকে খুঁজে বের করে জিজ্ঞেস করে দেখুন, কেন রেডিও ঝাঞ্জাইলে মেয়ে আরজে টেকে না! আর কে লম্পট, সেটা আমাদের ছাপানো ডেটাবেজ ঘাঁটলেই গোয়েন্দা সাহেব সব রগে রগে টের পাবেন!"

কিংকু চৌধারি ফোঁসফোঁস করেন শুধু।

ঝাকানাকা বলেন, "বটে? আপনি বলতে চাইছেন, ছোলায়মানের কারণেই আপনার স্টেশনে মেয়ে আরজে টেকে না?"

মক্সুদ শেখ গর্জে ওঠেন, "আবার কেন! ছোকরা আস্ত একটি ইয়ে! কলিগদের সাথে ছোঁকছোঁকছোঁকছোঁক ...!"

কিংকু চৌধারি গজগজ করতে করতে সব নোট করে রাখেন।

ঝাকানাকা বললেন, "তা এখন কি কোনও মেয়ে আরজে নেই আপনাদের স্টেশনে?"

মক্সুদ শেখ বললেন, "তা কেন হবে? অবশ্যই আছে। আরজে কুহু আর আরজে বাম্বি তো নিয়মিত একটা প্রোগ্রাম করে, শোনেন না?"

কিংকু চৌধারি বললেন, "আপনার এই ফালতু স্টেশনে লোকে টিউন করলে তো! ঐ আরজে কুহু তো ঠিকমতো ড় বলতেই পারে না! পুরাই ক্ষ্যাত। আর আরজে বাম্বিকে এক পাতা হিস্টাসিন কিনে দ্যান না কেন? সর্দিবসা নাক নিয়ে নাকি গলায় খাটতে খাটতে হয়রান বেচারা!"

মক্সুদ শেখের মুখটা কালো হয়ে যায়।

ঝাকানাকা বললেন, "স্ট্রেইঞ্জ! এই দু'জন কাজ করতো কী করে ছোলায়মানের সাথে?"

মক্সুদ শেখ বললেন, "আরজে কুহু ঠিকমতো ডয়ে শূন্য দিতে না পারলেও কারাতে শেখে, হলুদ না লাল কী রঙের বেল্টও নাকি বাগিয়েছে। ছোলায়মান তার সাথে লুলামো করতে গিয়ে গোড়াতেই কারাতের কিল খেয়ে ঠাণ্ডা হয়েছে। আর আরজে বাম্বির সাথে নষ্টামি করার মতো বুকের পাটা মনে হয় না ছোলায়মানের আছে, তার বয়ফ্রেন্ড বিশাল মস্তান, আপনারা চিনবেন হয়তো, বাট্টু দিলদার।"

ঝাকানাকা বললেন, "বটে? তা বাট্টু দিলদারের হাত নেই তো ছোলায়মানের উধাও হওয়ার পেছনে?"

মক্সুদ শেখ বললেন, "আমি কিছু জানি না! আপনি ওদের জেরা করে দেখুন না?"

ঝাকানাকা বললেন, "তা তারা কোথায় এখন?"

মক্সুদ শেখ বললেন, "তারা এখন অন এয়ার। একজন একজন করে ডাকিয়ে আনি, কথা বলে দেখুন।"

ঝাকানাকা বললেন, "বেশ! কিংকু সাহেব, আপনি বরং ছোলায়মানের ডেস্ক থেকে যাবতীয় জিনিস আলামত হিসেবে বাজেয়াপ্ত করে আনুন। আমি আরজে কুহু আর আরজে বাম্বিকে জিজ্ঞাসাবাদ করি।"

কিংকু চৌধারি ক্ষুণ্ণ মনে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। মক্সুদ শেখ ফোন ঘুরিয়ে কাকে যেন নিচু গলায় বলেন আরজে কুহুকে অফিসে পাঠাতে।

একটু বাদেই আরজে কুহু এসে ঢোকে ঘরে। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে কারাতেকুশলী মেয়ে, সাধারণ আটপৌরে চেহারা।

ঝাকানাকা বাজখাঁই গলায় বলেন, "মিস কুহু! আপনি নিখোঁজ ছোলায়মানকে অফিসে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন, ঠিক?"

কুহুর কারাতেশিক্ষিত চোখ জ্বলে ওঠে। "একদম ঠিক! ছলু ভাই অতি দুষ্ট লোক ছিলো স্যার! মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে হাত ধরতে চাইতো! প্রথম প্রথম কিছু বলিনি, কিন্তু একদিন হাত ছেড়ে পা ধরতে গেলো, অমনি ঘাড়ে দিয়েছি বসিয়ে এক শুতো-উচি!"

ঝাকানাকা সন্তুষ্ট মুখে মাথা নাড়েন। "বেশ করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সে কি পরে আর আপনাকে জ্বালাতন করেছিলো?"

কুহু গর্বিত মুখে মাথা নাড়ে। "না স্যার! তার সেই সাহসই নেই!"

ঝাকানাকা কঠোর মুখে বলেন, "এবার বলুন, আপনি কেন তাকে মস্তান লাগিয়ে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন?"

কুহু কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, "আমি তাকে কোন দুঃখে উঠিয়ে নিয়ে যাবো? আর তাকে উঠিয়ে নিতে হলে মস্তান লাগবে না আমার! আমি নিজেই তাকে অজ্ঞান করে ঘাড়ে তুলে নিয়ে যেতে পারি!"

ঝাকানাকা বলেন, "বটে? তাহলে ছোলায়মান নিরুদ্দেশ হলো কী করে?"

কুহু বলে, "তার আমি কিছু জানি না স্যার! সে মনে হয় ঐ লাবণীর সাথে ভেগেছে!"

ঝাকানাকা ঝুঁকে পড়ে বলেন, "কে এই লাবণী?"

কুহু বলে, "আমি চিনি না স্যার। ছলু ভাইকে খুব ফোনটোন করতো। ছলু ভাইও খুব গদোগদো হয়ে কথা বলতো। পরশু দিন ঐ মেয়ে একটা গাড়িতে করে এসে ছলু ভাইকে বিকেলে অফিসের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেলো!"

ঝাকানাকা বলেন, "সে কী! মেয়েটা দেখতে কেমন?"

কুহু বলে, "আমি বলতে পারি না স্যার, অন এয়ারে ছিলাম তখন। বাম্বি জানে, সে দেখেছে।"

ঝাকানাকা বলেন, "ঠিকাছে, তাহলে আরজে বাম্বির সাথেই কথা বলি। আপনি আসুন এখন।"

মক্সুদ শেখ শুকনো গলায় বলেন, "বদমাশ ছোকরা, কোথায় মেয়ে নিয়ে ফূর্তি লুটতে গেছে কে জানে! এদিকে আমার নাভিশ্বাস! আর মিডিয়ার লোকজন উঠতে বসতে ফোন করে জ্বালাতন করছে!"

ঝাকানাকা গোঁফে তা দিয়ে বলে, "না জনাব মক্সুদ! আমার সন্দেহ, এ কোনো ফূর্তিলুণ্ঠন কেস নয়। এর পেছনে কোনো ঘোরালো রহস্য আছে!"

৩.

গাড়িতে বসে গোমড়া মুখে কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, আরজে কুহু আর আরজে বাম্বিকে জেরা করার সময় আমি সাথে থাকলে ভালো হতো না?"

ঝাকানাকা আনমনে গোঁফে তা দিতে দিতে বললেন, "না! আমি লক্ষ্য করেছি, আপনার ওপর এই মেয়ে আরজেদের প্রভাব অত্যন্ত গভীর! সেটা আবার তদন্তের স্বাস্থ্যের জন্যে হানিকর। আপনি এই কেসে একটু ডালে ডালে থাকুন, আমি পাতায় পাতায় এগোচ্ছি।"

কিংকু চৌধারি গোমড়া মুখে বললেন, "এই যে স্যার, এই বস্তায় করে হতভাগাটার ডেস্কের সবকিছু নিয়ে এসেছি।" সামনের সিটে রাখা প্লাস্টিকের ব্যাগটা দেখান তিনি আঙুল তুলে।

ঝাকানাকা বললেন, "বেশ! ওরকম আরো চারখানা ব্যাগ জমবে গাড়িতে। চিরকুট সেঁটে রাখুন কোনটা কার, তা না হলে আবার পরে জড়িয়ে পেঁচিয়ে বিশ্রী দশা হবে।"

কিংকু চৌধারি বললেন, "আমি শুরুতেই লম্পট ছোলায়মান লেখা স্টিকি লাগিয়ে দিয়েছি স্যার! ... ইয়ে, আরজে কুহু আর আরজে বাম্বি কী বললো স্যার?"

ঝাকানাকা বললেন, "আরজে বাম্বির কাছ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। একটা মাইক্রোবাসে চড়ে সেই লাবণী এসে ছোলায়মানকে অফিসের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেছে। লাবণীর পরনে ছিলো গোলাপি সালওয়ার কামিজ। লাবণী দেখতে ফর্সা, উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুটের মতো। ছোলায়মান দাঁত বার করে হাসতে হাসতে লাবণীর সাথে গাড়িতে ওঠে। মাইক্রোবাসের রং সাদা। ছোলায়মানের দাঁতের রং হলুদ। গাড়ি চালাচ্ছিলো লাবণী নিজেই। ঘটনা ঘটে বিকেল পাঁচটায়।"

কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, আমার মনে হয় আমাদের রেডিও হুটোপুটিতে যাওয়া উচিত। মুনমুনমুনের ব্যাপারটা ...।"

ঝাকানাকা আড়চোখে কিংকু চৌধারিকে এক নজর দেখে নিয়ে বলেন, "তাড়াহুড়ো করা যাবে না চৌধারি সাহেব! পাঁচ পাঁচজন আরজে কেন একই সাথে গায়েব হয়ে গেলো, বুঝতে হবে। বুঝে ইজি থাকতে হবে!"

কিংকু চৌধারি রুমালে চোখ মোছেন।

গাড়ি গিয়ে থামে রেডিও তুলকালামের অফিসের সামনে।

রেডিও তুলকালামের পরিবেশও থমথমে। প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আবুল কালাম উদাস বিষণ্ণ মুখে অফিসে বসে জগন্ময় মিত্রের গান শুনছিলেন, "তুমি আজ কত দূরে", ঝাকানাকার পরিচয় পেয়ে গান থামিয়ে সোজা হয়ে বসলেন।

"গোয়েন্দা সাহেব!" ধরা গলায় বলেন তিনি। "যেখান থেকে পারুন আমাদের নূরজিকে খুঁজে এনে দিন!"

ঝাকানাকা বলেন, "নূরজি? মানে আরজে নূরজাহানের কথা বলছেন?"

কালাম সাহেব বিহ্বল মুখে মাথা নাড়েন।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি গর্জে ওঠেন, "এই নূরজাহানের স্বভাব চরিত্র কেমন ছিলো?"

আবুল কালাম ধরা গলায় বলেন, "ফুলের মতো স্যার! একটা টগর ফুলের মতো নিষ্পাপ ছিলো আমাদের নূরজাহান। কারো কোনো ক্ষতি করেনি সে! বদ লোকজন তাকে জ্বালিয়ে মারতো শুধু ...।"

ঝাকানাকা বললেন, "কোন বদ লোকজন?"

আবুল কালাম বললেন, "যত রাজ্যের ইষ্টুপিট স্যার! উল্টাপাল্টা এসেমেস করতো প্রোগ্রামে, অফ ডিউটির সময় মোবাইলে কল দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি বাজে কথা বলতো!"

ঝাকানাকা বললেন, "আই সি! তা আপনারা তো একটা ডেটাবেজ রাখেন এইসব কলের, নাকি?"

আবুল কালাম বললেন, "রাখি বৈকি! আপনাকে দেবো নাকি এক কপি প্রিন্ট করে?"

ঝাকানাকা বললেন, "নিশ্চয়ই!" আড়চোখে কিংকু চৌধারির দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, "আচ্ছা, এই মেঘলা দিনে একলা হৃদয়ের হুলুলুলু ডাক ... এমন কিছুর কথা জানেন কি?"

আবুল কালাম গর্জে ওঠেন, "জানি না আবার! এক নচ্ছাড় লম্পট রোজ নূরজিকে ঐসব এসেমেস পাঠিয়ে ত্যক্ত করতো! সব ডেটাবেজে টোকা আছে স্যার! আমি এক্ষুণি আপনাকে ছাপিয়ে দিচ্ছি।"

কিংকু চৌধারি ফোঁসফোঁস করেন শুধু।

ঝাকানাকা বললেন, "তা আপনার কি মনে হয় ... নূরজাহানের এই অন্তর্ধানের কারণ কী হতে পারে? তার কোনো ব্যক্তিগত শত্রু? অফিসে কোনো ঝামেলা? বহিরাগতদের উৎপাত?"

আবুল কালাম নিচু গলায় বললেন, "বেশ কিছুদিন ধরেই সুন্দর খান নামে এক ছোকরা নূরজিকে ফোন করে জ্বালাতো। নূরজিও বেশ হেসে কথাটথা বলতো তার সাথে। পরশুদিন বিকেল চারটার দিকে সে এসে হাজির হয়। নূরজাহান তার সাথে নাকি গাড়িতে ওঠে। এরপর আর কোনো খোঁজ নেই মেয়েটার!"

ঝাকানাকা ঝট করে সোজা হয়ে বসেন। বলেন, "এ ঘটনা কে দেখেছে?"

আবুল কালাম ধরা গলায় বললেন, "আমিই দেখেছি গোয়েন্দা সাহেব! অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, নূরজি হেসে গড়িয়ে পড়ছে হতভাগাটার গায়ে। তারপর তারা গাড়িতে চড়ে কোথায় যেন চলে গেলো!"

ঝাকানাকা বললেন, "তা এই সুন্দর খান দেখতে কেমন?"

কালাম নাক সিঁটকে বললেন, "লাল্টু চেহারা। দেখে মনে হয় বড়লোকের বখে যাওয়া দুলাল। লম্বাচওড়া, কিন্তু রুচি বলতে কিচ্ছু নেই, একটা গোলাপি গেঞ্জি গায়ে দিয়ে এসেছিলো!"

ঝাকানাকার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে, "গাড়িটার বর্ণনা দিতে পারেন?"

কালাম বলেন, "সাদামাটা একটা সাদা রঙের মাইক্রোবাস স্যার!"

ঝাকানাকা বললেন, "গাড়ি কি সুন্দর খান নিজেই চালাচ্ছিলো?"

কালাম বললেন, "হ্যাঁ ... কিন্তু আপনি জানলেন কী করে?"

কিংকু চৌধারি টেবিলে চাপড় মেরে গর্জে ওঠেন, "এবার জনাব আবুল কালাম ... বলুন দেখি আসল কথা! আপনি কী করে বুঝলেন ঐ লোকটিই সুন্দর খান, যদি আপনি তাকে আগেভাগেই চিনে না থাকেন? আমার তো মনে হয় এর পেছনে আপনারও হাত আছে!"

আবুল কালাম বললেন, "কী আপদ! সুন্দর খানের পেছনে আমি হাত দিতে যাবো কেন? আর নূরজিই তো লাফাতে লাফাতে এসে আগেভাগে ছুটি চাইলো, বললো সুন্দর খানের সাথে তার ডেট আছে ...!" গলাটা বুঁজে আসে তার।

ঝাকানাকার মুখে মৃদু একটা হাসি ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, "আমার মনে হয় ঘটনা আমি বুঝতে পারছি! তা জনাব কালাম, নূরজাহানের ডেস্কের যাবতীয় জিনিসপত্র ক্লু হিসাবে জব্দ করছি আমরা। আশা করি আপনার আপত্তি নেই!"

কালাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "সব নিয়ে যান! বদলে নূরজাহানকে ফিরিয়ে আনুন!"

ঝাকানাকা উঠে পড়লেন, কালাম এবার নতুন গান ছেড়ে উদাস মুখে শুনতে লাগলেন, "সখী কেমনে ধরিব হিয়া, আমার বধূয়া আনবাড়ি যায় আমারই আঙিনা দিয়া ...।"

...

[এই গল্পটা আপাতত প্রথম খণ্ড ধরে নিন। চা খাচ্ছি না, বাকিটুকু পরে শেষ করবো। চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, রংপুর আর কুষ্টিয়ার সংলাপ লাগবে, সৌরভ রংপুর আর মুর্শেদ কুষ্টিয়ার ভাষা খানিক জানে বলে জানিয়েছে, কিন্তু আরো পাকনা কেউ থাকলে আরো ভালো। এই চার আঞ্চলিক ভাষায় পরিপক্ক কেউ থাকলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।]


মন্তব্য

কনফুসিয়াস এর ছবি

পোস্ট খুলেই একবার নিচে এসে দেখে গেছি চা সংক্রান্ত ঘোষণা আছে কি না! হাসি
পড়লাম, বাকিটা ছাড়েন জলদি!

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

দুধের স্বাদ মাঠাতে মেলে না!"

চ্রম, এসব মৌলিক আইডিয়া মাথায় আসে কেমনে? লেখা ভালো মতন শুরু করলেন, আশা করি তাড়াতাড়ি শেষ ও হবে। এমনিতেই সচলে ঘুরঘুর করি, এবারে ঝাকানাকা পাচ্ছি লাইভ। দুনিয়া জুড়া আজকে পচুর গিয়ান্জাম।

এফএম রেডিও না শুনলে আমার শরীর চাবায় স্যার!"

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- তোর এই গল্পের জন্য দেখি এখন আড়জেএএএদের সাথে ঐ চার অঞ্চলের লুকেরেও অপহরণ করা লাগবো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

অংপুরের লোক দিয়া তোমারগুলার কাম কি বাহে।

স্বপ্নদ্রোহ

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

আড়জেরা এ গল্প পড়ে বেগুনবাড়ি খালে ডুব দিতে পারে
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভুল বললেন সিম সিম সিমন! আড়জেরা ডুব দিতে গেলে বেগুনবাড়ি খাল জায়গা থেকে উঠে চলে যাবে! খাইছে

----------------------------
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু।
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।।

- ললিতবিস্তর

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

ভুতুম এর ছবি

আঁই এক্কেনা গরি চাঁটিয়ার কতা গইতাম আরি, ন চলিবো আঁরে দি?

আর নোয়াখাইল্লা বাষাও হারি, আঁর দ্বোয়ারা কাম হইবো নি কন।

---------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

ফাহিম এর ছবি

এ মিয়াঁর লগে আঁই ও আসি, নোয়াখাইল্লা কইতে হারি। লাইগলে বোলাইয়েন...

=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

দূর মিয়া! তাড়াতাড়ি শেষ করেন, এই নতুন প্রজাতির দুয়েক্টাকে আমারও তুইলা নেয়ার পিলান আছেযে! আগে আপনার পিলান পোরোগ্রাম দেইখা নিজেরটা বাতামু...

----------------------------
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু।
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।।

- ললিতবিস্তর

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

মৃত্তিকা এর ছবি

বেগ্গুন ন হাইল্লেও, হেনী-নোয়াখালীরগুন কিসু কিসু কইতাম হারি........ বুইজ্জেন নি?

অতিথি লেখক এর ছবি

গুনগুনগুন করে মন, মুনমুনমুন যায় কন?
রেডিওতে কান খাড়া সারাক্ষণ, হিমু ভাই পরের অংশ তাড়াতাড়ি কন।
দলছুট।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ধুর মিয়া - বাজে কাজ হইসে। আগে শুরু করেন...

______________________________________________________
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

স্বপ্নাহত এর ছবি

দেঁতো হাসি

চায়ের টেবিল থিকা আপনারে আগে অপহরণ করা দরকার!

---------------------------------

তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস্‌ পাটুস্‌ চাও?!

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হাসি

দুর্দান্ত এর ছবি

রায়েরবাজারের পুলাপানের এত 'লাভের' মুনমুনমুন মেডামেরে তোমার গুয়েন্দা জাইক্কানাইক্কা আর কিংকু সদ্রী যুদি এই সোনিবার তলক ঢুইন্ডা না বাইর করার পারে, তাইলে হালায় অগর খবরই আছে।

সংসপ্তক এর ছবি

আহহহহহ! অ্যাকাউন্ট পেয়ে প্রথম কমেন্ট! এই বার কিন্তু বস কন্ধকাটা চাইইই চাই। চা খান, লাস্যি খান, বিরিয়ানি নাইলে হরিণের ঠ্যাং ই চাবান......দুই তিনটা আর-জের মুন্ডু কাটেন......আমার বহুতদিনের শখ......
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

আপ্নে খুপ খ্রাপ লুক। আধা লেখা ছাড়ার জন্যে মাইনাচ !!!

---------------------
আমার ফ্লিকার

সৌরভ এর ছবি

চা খাওয়া হইলো?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হিমু এর ছবি

মাঝেমাঝেই টুকিটাকি লিখে পোস্টের গোস্তো বাড়াই তো।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

হিমু এর ছবি
ওডিন এর ছবি

ঠিকাছে। দেঁতো হাসি
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা। চিন্তিত

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

আর বাকিটুক?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বস, ৯ মাস হইয়া গেল, আরেকটু গোস্ত ছাড়েন, কয়দিন আগেই কোরবানীর ঈদ গেল কিনা!

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

জি.এম.তানিম এর ছবি

ঠেলা!

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

রামগরুড় এর ছবি

ভাই, আড়ড়ড়ড়জে'র বাকি অংশটা আঁতিপাতি করেও খুজে পাচ্ছি না, একটু মদদ করেন ভাই কেঊ।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

২০০৯ সালের পোস্ট!!! এখনো শেষ করেন নাই!!!! ওঁয়া ওঁয়া
গতকাল বসে বসে "গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও জাদুঘরে চুরি রহস্য" পড়লাম। কয়দিন আগে ওইটা রাঙতা মেলায় নজু ভাই এর স্টল থেকে আমার চার বছর পূর্ণ না হওয়া ভাগ্নির জন্য কিনেছিলুম। (যদিও সে এখনো পড়তে শিখে নি,তবুও তার নামে অনেকগুলা বই অলরেডি কেনা হয়ে গেছে)
লোভে লোভে এইটা পড়া শুরু করলাম আর শেষ বেলা আইসা দেখি...
ওঁয়া ওঁয়া

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।