১.
কুড়ানকে তার বাবা কেন কুড়ান বলে ডাকতেন, কে জানে?
কিন্তু মা-ও কুড়ানকে কুড়ান বলেই ডাকতে শুরু করলেন। সেই থেকে কুড়ানের বয়স যখন মোটে কয়েক ঘন্টা, তার নাম হয়ে গেলো কুড়ান। তার দুই খালা, দুই মামা তাকে কুড়ান বলে ডাকেন। দুই কাকা, এক ফুপি ডাকেন কুড়ান বলে। কাজের বুয়া দিলুর মা, যে কি না কুড়ানের বাবা যখন কুড়ানের বয়সী ছিলো, সেই তখন থেকে কুড়ানদের বাড়িতে কাজ করে, সে-ও তাকে কুড়ান বলে ডাকে।
নিজের নাম নিয়ে তো কুড়ানের কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু তার বন্ধুর বাবা-মা সবাই মুখ টিপে হাসেন তার নাম শুনে। যেন কুড়ান একটা বোকা নাম। যেন কুড়ান কারো নাম হতে পারে না।
কুড়ানের সবচেয়ে ভালো বন্ধুর নাম টুনটুন। তার নামটার সাথে মাঝে মাঝে কুড়ান নিজের নাম মিলিয়ে দেখে। টুনটুনের নাম শুনে তো কেউ হাসে না। তাহলে কুড়ানের নাম শুনে বোকা লোকগুলি হাসে কেন?
কুড়ান নিজের নাম মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে জপতে থাকে অনেকক্ষণ, একনাগাড়ে। "কুড়ান কুড়ান কুড়ান কুড়ান কুড়ান কুড়ান ...।" তার মোটেও খারাপ লাগে না নিজের নামটাকে। তাহলে বাকিরা হাসে কেন?
দিলুর মা মাঝে মাঝে কুড়ানকে এরকম বিড়বিড় করতে দেখে ছুটে আসে। "কী হইছে? কী হইছে তর? পটপটাইয়া কী কস?"
কুড়ান হি হি করে হাসে। দিলুর মা একটা ছুতো পেলেই চেঁচামেচি করে। কুড়ানের ভারি ভালো লাগে।
কিন্তু দিন শেষে দিলুর মা-ই কুড়ানের সঙ্গী। বাবা অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে, মা-ও অফিস নিয়ে ব্যস্ত, কুড়ানকে স্কুল থেকে নিয়ে আসে ড্রাইভার, আর দেখাশোনা করে দিলুর মা।
ছুটির দিনেও বাবা-মাকে ঠিকমতো কাছে পায় না কুড়ান। বাবা গম্ভীর হয়ে খবরের কাগজ পড়ে, নয়তো অফিসঘরে গিয়ে লেখাপড়া করে, মা ল্যাপটপে কী যেন খুটখাট করে। কুড়ান কম্পিউটারে গেমস খেলে, টিভি দেখে, মাঝে মাঝে টুনটুন বেড়াতে এলে তার সাথে নিনটেন্ডো উই খেলে।
কুড়ান মানে কী, বাবাকে জিজ্ঞেস করার সুযোগই পায় না সে।
অবশ্য বইদাদুকে জিজ্ঞেস করা যায়। কিন্তু বইদাদু বড় গম্ভীর লোক, তাকে খুব ভয় পায় কুড়ান।
ছাদের বাসাটায় থাকেন বইদাদু। তার দুটো ঘর, দুটো ভর্তি রাজ্যের বই। প্রকান্ড সব বইয়ের শেলফ আর আলমারি, তার মাঝে হাজার হাজার বই। বইদাদু সারাদিন ঘরে শুয়েবসে বই পড়েন, কোথাও বেরোন না। মাঝে মাঝে বড় বড় প্যাকেটে করে তার জন্যে বই নিয়ে আসে বইয়ের দোকানের লোকজন। বই দাদু বই কেনেনও ফোনে।
কুড়ান বইদাদুর কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে। অবশ্য এমন নয় যে বইদাদু খুব বদরাগী, কুড়ানকে তিনি কক্ষণো বকেন না, জোরে কথাও বলেন না। কিন্তু খুব গম্ভীর গম্ভীর কথা বলেন, কুড়ান শুনে ভয় পায়। আর বইদাদুর গলাও তেমন, উহ, কী ভারি! কুড়ানের বাবা পর্যন্ত বইদাদুকে ভয় পায়, আর কুড়ান পাবে না?
বাবা আর মা মাঝে মাঝে ঝগড়া করে। কুড়ান সব কথা বোঝে না, কঠিন কঠিন শব্দ, অত ইংরেজি সে বোঝে না। দুয়েকটা টুকরো টুকরো কথা সে ধরতে পারে কেবল। বাবা মা যখন ঝগড়া করে, তখন ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দেয়। কুড়ান মাঝে মাঝে দরজায় কান পাতে, তা-ও স্পষ্ট করে কিছু বোঝা যায় না। কিন্তু চাপা গলায় অনেকক্ষণ ধরে ঝগড়া করে দু'জন।
সেদিন রাতে দু'জনের কেউই একসাথে টেবিলে বসে খায় না। বইদাদু তো সবসময় নিজের ঘরে খাবার খায়, কুড়ানকে তখন দিলুর মা টিভির সামনে কোলে বসিয়ে নিয়ে খাইয়ে দেয়। কুড়ানের মনটা একটু ভার হয়ে থাকে, কিন্তু টিভি দেখতে দেখতে সে আবার ভুলে যায়।
বাবা অবশ্য মাঝে মাঝে কুড়ানকে রাতে ঘুমের আগে দেখতে আসে। গলা খাঁকরে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ঘুরে ফিরে।
"তোমার স্কুল কেমন চলছে বাবা?"
"তোমার বন্ধুরা সবাই ভালো আছে তো?"
"নতুন একটা গেমিং সেট কিনে দেবো সামনে, ঠিকাছে?"
"তোমার বইদাদুর কাছে গিয়েছিলে? কেমন আছে দাদু?"
"তোমার টিচার তোমাকে পড়াচ্ছে তো ঠিকমতো?"
বাবা একবারও জিজ্ঞেস করে না, কুড়ান কোথাও বেড়াতে যাবে কি না। কতদিন হয়ে গেলো, কুড়ানের বাবা মা তাকে নিয়ে একসাথে কোথাও বেড়াতে যান না।
বাবা তো তা-ও মাঝে মাঝে এসব বলে এসে, কুড়ানের মা আরো গম্ভীর হয়ে থাকেন। তিনি শুধু এসে হুকুম দিয়ে যান।
"কুড়ান, দুধটুকু খেয়ে ঘুমাও।"
"কুড়ান, কম্পিউটার বন্ধ করে শুতে যাও।"
"কুড়ান, টিভি দেখার সময় শেষ। শুতে যাও।"
"কুড়ান, অত শব্দ করে হেসো না।"
"কুড়ান, অত শব্দ করে গেম খেলো না।"
কুড়ান বড় ভয় পায় মাকে। সে চুপচাপ সব কথা শোনে।
বইদাদু সেদিক দিয়ে অনেক ভালো। কুড়ান তার ঘরের দরজায় টোকা দিলে তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ডাক দেন, "কে, কুড়ান? ভেতরে এসো!"
কুড়ান দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সবসময় বইদাদুকে একই জামা পরা অবস্থায় দেখে। সাদা গেঞ্জি, সাদা পায়জামা। চোখে একটা মোটা কালো চশমা। দাদু খুব রোগা আর ফর্সা আর লম্বা, নাকটা বাজপাখির ঠোঁটের মতো।
কুড়ান ভেতরে ঢুকলে দাদু চশমাটা খুলে রাখেন। হাতের বইটাও বন্ধ করে রাখেন। তারপর তাকে ইজিচেয়ারে বসতে দেন। ঐ চেয়ারটা কুড়ানের খুব পছন্দ, সে পা তুলে উঠে বসে।
"কেমন আছো কুড়ান?" দাদু সবসময় এই কথাটাই জিজ্ঞেস করেন শুরুতে। কুড়ান একটু ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ে, সে ভালো আছে।
দাদু তারপর কুড়ানকে অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্রশ্ন করেন, মাঝে মাঝে কীসব গল্প শোনান। সব গল্প কুড়ান বোঝেও না, কিন্তু দাদু চোখ বন্ধ করে আপনমনে বলে যান।
তবে মজার গল্পও মাঝে মাঝে বলেন দাদু। একটা রুটির গল্প আছে, সেটা কুড়ান বার বার শুনতে চায়। গল্পটার মধ্যে একটা মজার ছড়া আছে, সেটা দাদু খুব সুন্দর করে বলেন।
তবে দাদু মাঝে মাঝে চুপ করে থাকেন। গল্প সেদিন বলেন না। বলেন, "দেখেছো, কুড়ান, আজকে আকাশটা কতো সুন্দর?" কিংবা, "দেখেছো, কুড়ান, বৃষ্টি হবার পর চারপাশটা কী সুন্দর লাগছে?"
কুড়ান বোঝে, দাদুর মন সেদিন কোনো কারণে খারাপ। কুড়ান সেদিন বেশিক্ষণ বসে না, "দাদু, এখন যাই?" বলে চলে আসে। দাদু বলেন, "যাবে? আচ্ছা, এসো।" তারপর আবার চোখে চশমা লাগিয়ে বই পড়তে থাকেন। কুড়ান আস্তে করে দাদুর দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে নিচে নেমে আসে। বইদাদুর বইগুলিতে কোনো ছবি নেই। খুদি খুদি অক্ষরে কী কী যেন লেখা, কুড়ান বোঝে না কিছু।
দিলুর মা অবশ্য কুড়ানকে বইদাদুর অনেক গল্প বলেন। বইদাদুর নাকি খুব সুন্দর একটা বউ ছিলো। সেই বউ মারা যাবার পর বইদাদু বই কেনা শুরু করলেন। কিনতে কিনতে এমন অবস্থা, বাড়িতে বই আর আঁটে না। বইদাদুর অনেক টাকা, তাই তাকে কোনো কাজও করতে হয় না, তিনি শুধু বই কেনেন আর পড়েন।
দিলুর মাও বইদাদুকে খুব ভয় পায়। "ছোডোমিয়া খুব রাগী লুক, বুচ্ছনি কুড়ান? কুন দুষ্টামি করবা না। সবসময় সালাম দিয়া কথা বলবা।"
কুড়ান হি হি করে হাসে। বইদাদুকে সে কখনোই সালাম দেয় না। দাদু সেজন্যে কখনো রাগ করেননি।
অবশ্য বইদাদুকে মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়। দিলুর মা-র ধারণা, রাগের মাথায় বইদাদুর মাথায় রক্ত উঠে যায়। সেই রক্ত নামাতে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কুড়ান কয়েকবার দেখেছে, বাবা আর ড্রাইভার মতি ভাই মিলে দাদুকে ধরাধরি করে ছাদের বাসা থেকে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ডাক্তারের কাছে। দাদুকে তখন খুব অসুস্থ লাগে দেখতে।
আজ যখন কুড়ানের বাবা আর মা ঝগড়া করছিলেন দরজা লাগিয়ে, তখন দরজায় কান পেতে কয়েকটা কথা শুনে কুড়ান ঠিক করলো, বইদাদুকে এর মানে জিজ্ঞেস করতে হবে। বাবা আর মা সবসময় এই কথাটা একজন আরেকজনকে বলে।
কুড়ান টিপটিপ পায়ে ছাদের ঘরে গিয়ে টোকা দেয়। কুড়ানের দাদু একটু পর ডাক দেন, "কে, কুড়ান? ভেতরে এসো!"
কুড়ান গুটিগুটি পায়ে ভেতরে ঢুকে ইজিচেয়ারে উঠে বসে। দাদু বিছানায় শুয়ে, গায়ে একটা চাদর।
"কেমন আছো কুড়ান?" বইদাদু জানতে চান।
কুড়ান বিষণ্ণ মুখে মাথা দোলায়, সে ভালো আছে।
"তোমার মুখটা এমন ভার কেন?" দাদু জানতে চান।
কুড়ান বলে, "কুড়ান মানে কী?"
দাদু হাসেন। "কুড়ান মানে নেই। এমনি একটা আদরের নাম।"
কুড়ান বলে, "আমার নাম নিয়ে সবাই হাসে।"
দাদু চুপ করে যান, তারপর বলেন, "যারা হাসে তারা বোকা। তারা নিজেরাও কুড়ান মানে জানে না। তাই হাসে।"
কুড়ান ভেবে দেখে, সত্যি তো। দাদু ঠিকই বলেছে।
দাদু বলেন, "তোমার নামের মানে জানেন তোমার বাবা-মা। তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলে?"
কুড়ান মলিন মুখে বলে, "হেল মানে কী?"
দাদু বলেন, "কীসের হেল?"
কুড়ান বলে, "গো টু হেল মানে কী?"
দাদুর চেহারাটা লালচে হয়ে যায়। তিনি উঠে বসে বলেন, "কুড়ান, এ কথাটা তুমি কোথায় শুনলে?"
কুড়ান বলে, "আব্বু আর আম্মু দরজা লাগিয়ে কথা বলে। অনেক রাগারাগি করে। তখন একজন আরেকজনকে বলে, গো টু হেল।"
বইদাদু উঠে দাঁড়িয়ে পায়ে চটি গলাতে গলাতে বলেন, "তুমি একটু বোসো কুড়ান, আমি তোমার বাবার সাথে একটু কথা বলে আসি।"
কুড়ান বসে থাকে, দাদু আস্তে আস্তে নিচে নেমে যান।
কুড়ান অবশ্য বেশিক্ষণ বসে থাকে না, সে চুপিসারে বেরিয়ে দাদুর পেছন পেছন নিচে নেমে যায়।
সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে কুড়ান শুনতে পায়, দাদু প্রচণ্ড রেগে ধমকাচ্ছেন বাবা আর মাকে। "মনসুর! শাহানা! তোমাদের লজ্জা করে না? তোমাদের মেয়ে বড় হচ্ছে, আর তোমরা ঝগড়া করো! আজেবাজে কথা বলো! তোমাদের মেয়ে শেখে না এসব? সে কি বধির? সে কি বোকা? সে একটা শিশু! তোমরা নিজেরা এক একজন অপূর্ণ মানুষ, আর তোমাদের কচি মেয়েটাকে তোমাদের মূর্খামির ভিকটিম বানাচ্ছো!"
কুড়ান আরো কয়েক ধাপ নিচে নেমে দেখে, তার বাবা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে দাদুর সামনে। দাদুর মুখটা লাল।
কথা বলতে বলতে দাদু হঠাৎ বুক চেপে ধরে বসে পড়েন মেঝেতে। কুড়ানের বাবা চিৎকার করে জড়িয়ে ধরেন তাকে, "ছোটকা, ছোটকা!"
কুড়ান খুব ভয় পেয়ে কেঁদে ওঠে।
বইদাদুকে কুড়ানের বাবা তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কুড়ান কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।
দিন দুয়েক বাদে দাদু আবার ফিরে আসেন।
কুড়ান ভয়ে ভয়ে দাদুকে দেখতে যায়। দাদু বিছানায় শুয়ে। চোখ বন্ধ।
কুড়ান দাদুর পায়ের বুড়ো আঙুল নেড়ে ডাকে। "বইদাদু! আমি কুড়ান!"
দাদু চোখ মেলে তাকান। তারপর দুর্বল গলায় কাছে ডাকেন কুড়ানকে।
কুড়ান দাদুর মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
দাদু আস্তে আস্তে বলেন, "কুড়ান! আমি যা বলি, মন দিয়ে শোনো। এই যে আমার বইগুলি, এই সবগুলি বই আমি তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি। আমি আর বেশিদিন থাকবো না তোমাদের বাড়িতে। অন্য একটা জায়গায় চলে যেতে হবে। তুমি আমার বইগুলি দেখে রেখো। পারবে না?"
কুড়ান কাঁদো কাঁদো মুখে বলে, "তুমি কোথায় যাবে?"
বইদাদু একটু হেসে বলেন, "আমি মারা যাবো কুড়ান।"
কুড়ান কেঁদে ফেলে। "না না না। তুমি মারা যাবে না!"
বইদাদু কুড়ানের কাঁধে হাত রেখে বলেন, "সবাই একদিন মারা যাবে। আমি, দিলুর মা, তোমার বাবা, তোমার মা, তুমি ... সবাই।"
কুড়ান বলে, "মারা গেলে মানুষ কোথায় যায়?"
বইদাদু হাসেন। "মারা গেলে মানুষ স্বর্গে যায়। নরকে যায়। তুমি সেদিন জানতে চেয়েছিলে না, হেল মানে কী? হেল হচ্ছে নরক।"
কুড়ান বলে, "সেখানে কী হয়?"
বইদাদু বলেন, "সেখানে মানুষকে শুধু বই সেলাই করতে হয়। আর কাগজ কাটতে হয়। আর আঠা লাগাতে হয়। বইতে মলাট দিতে হয়। অনেক খাটনি!"
কুড়ান বলে. "তুমি ওখানে যাবে?"
বইদাদু হাসিমুখে মাথা নাড়েন। "না, আমি স্বর্গেই যাবো।"
কুড়ান বলে, "সেখানে কী আছে?"
দাদু বলেন, "সেখানে আছে অনেকগুলি ঘর! প্রত্যেকটা ঘরে অনেকগুলি আলমারি! আলমারিতে অনেকগুলি বই! সেখানে আকাশ সুন্দর, বাতাস সুন্দর, রোদ সুন্দর, বৃষ্টি সুন্দর! সেখানে মানুষ সারাদিন শুধু বই পড়ে। সেখানে একটা ছোটো নদী আছে, সেই নদীতে ছোটো ছোটো নৌকোতে করে আরো নতুন নতুন বই ভেসে আসে!"
কুড়ান বলে, "সেই বইতে কি ছবি আছে?"
বইদাদু হাসেন, "হ্যাঁ, সেখানে সব বইতে সুন্দর সুন্দর ছবি আছে! সেখানকার একটা বই আমার কাছে আছে। দেখবে কেমন?"
কুড়ান মাথা নাড়ে।
দাদু বালিশের নিচ থেকে একটা প্যাকেট বার করেন। "এটা তোমার জন্য। নিচে গিয়ে খুলে দেখো। আমি একটু ঘুমাই।"
প্যাকেটের ওপর বাংলায় লেখা, "কুড়ানের জন্য।" কুড়ান প্যাকেটটা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। দাদু আবার ডাকেন, "কুড়ান!"
কুড়ান বলে, "কী দাদু?"
দাদু বলেন, "তোমার বাবা মা আমার বইগুলির যত্ন করবে না। তুমি কোরো দাদু। মনে থাকবে তো?"
কুড়ান ঘাড় নাড়ে। সে যত্ন করবে। দাদুর সব কটা বইয়ের সে যত্ন করবে।
দাদু চোখ বোঁজেন। কুড়ান বেরিয়ে আসে।
নিচে নামতে নামতে সে প্যাকেটটা খোলে। ভেতরে লাল একটা বই, তার মলাটে একটা বেড়ালের ছবি। বেড়ালটা চোখ টিপ দিচ্ছে। কুড়ান হেসে ফেলে। কী সুন্দর একটা বই!
মন্তব্য
আপনি তো অতি খ্রাপ লোক, দিব্বি আমার গপ্পোটা চূড়োয় ছিলো, এক্ষুণি আপনাকে পোস্ট করতে হলো? কতো কষ্টে লিখলাম সে কথা আর কী বলবো!
যাক পড়ে নিয়ে মতটত জানাবো, আপাতত ক্ষোভটাই জানিয়ে গেলাম।
হে হে হে
খুব কমন সব কথা। তারপরে ও পড়তে ভালো লাগে। আরাম হয়।
আপনাকে পিচ্চি সেলাম।
শুভাশীষ দাশ
অসাধারণ লাগলো!!
- বেশ!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দারুণ লাগলো। এই প্লটের কাছাকাছি গল্প দুর্লভ নয়, এমন কী পিকুও খানিকটা এই ভাবেই শুরু হয়। তবে শেষটা ভালো হয়ে সে সব অনুযোগ বাদ হয়ে যায়। বেড়ালের অংশটা চমৎকার। এমন নিরুচ্চার সমাপ্তিই কাম্য ছিলো।
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
খুব ভাল্লাগলো... সকালটা সুপ্রভাত হয়ে গেলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গল্পটা খুব ভাল্লাগলো...
ভালোইতো..
একটা কথা মনে হলো, গোটা গল্পে কোথাও বোঝার উপায় নেই কুড়ান ছেলে না মেয়ে, তার উপর তার নামটা নিয়েই আসল সমস্যা বলে নাম । এমন কী এক জায়গায় খানিকটা কনফিউজড হবারও সম্ভাবনা আছে যখন কুড়ানের বাবা জিজ্ঞাসা করেন, তোমার স্কুল কেমন চলছে বাবা? অনেকটা শেষের দিকে এসে দাদু রেগে গিয়ে এক জায়গায় তাকে "কচি মেয়েটা" বলে উল্লেখ করলে জানা যায় সেটা। ম্যাচিওর পাঠকের কাছে হয়তো ছেলে না মেয়ে জানাটা তেমন দরকারি নয়, তবে পিচ্চিতোষ গল্পের শিশুকিশোর পাঠকেরা হয়তো একটু ধন্দে পড়ে যেতে পারে।
হুঁ, কুড়ান নামটাই এমন।
তবে পিচ্চিতোষ গল্প ঠিক শিশুকিশোর পাঠককে উদ্দিষ্ট করে নয় কিন্তু। গল্পগুলি বুড়ো হয়ে যাওয়া আমাদের ভেতরের পিচ্চিদের জন্য।
আমার কাছে দুর্দান্ত লাগল, এটা নিয়ে নাটক বানালে বই দাদু চরিত্রে মানাবে আবুল হায়াতকে। আসলেই কি মানাবে না আমার বায়াসড চিন্তায় ফলাফল কে জানে?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
খুঊব ভালো- তবে শেষ লাইনকয়টা পড়ে আরও বেশি ভালো লাগলো। সেই লাল বই!
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
পাঠুদা ঠিক বলেছেন বলেই মালুম।... পিন্টুর দাদু নামের একটা গপ্পো ছিলো সত্যজিত বসের- এইটা শুরুর দিকে ঐরকম। পরে অবশ্য অন্যদিকে মোড় নিসে...
______________________________________________________
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
আহা লাল বই! ভীষণ ভালো লাগলো।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
ঘন্টা -> ঘণ্টা
প্রকান্ড -> প্রকাণ্ড
বই দাদু -> বইদাদু (এক জায়গায়)
লোকগুলি -> লোকগুলো (গোলাগুলি না থাকলে আরাম লাগে এই যা )
গুড।
সুকুমারের বই না?
ঘন্টা মনে হয় ঠিকাছে। বাকিগুলো শুধরে দেবো । ধন্যবাদ।
হুঁ, সুকুমারেরই বই।
আহ, দারুণ দারুণ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আহা! চমৎকার লাগলো! নিয়মিত গল্প না লিখে গণ্ডার-ফণ্ডারের পেছনে আপনি খামোখাই সময় নষ্ট করেন আর আমাদের বঞ্চিত করেন। বইদাদুর বকা আপনারও খাওয়া দরকার।
গণ্ডারকে তো আপাতত ছেড়ে দিয়েছি। চরে খাক নিজের জঙ্গলে। আমাদের ক্ষেতে মুখ দিলেই গুল্লি।
দারুণ, দারুণ লাগলো
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ঠিকই বলেছেন। একটা করে পিচ্চি সবার ভিতরেই থাকে। নাহলে পিচ্চিতোষ এই গল্পটা এত ভালো লাগবে কেন?
আমার লাল মলাটের বেড়ালের ছবি আঁকা বইটা এক পাষণ্ড বর্বর বদ পিচ্চি পিচ্চিকালে নিয়ে আর ফেরত দেয় নাই। মনে করায় দিলেন
বইদাদু আরেকটা 'পেন্সিল ও সর্বকর্মা' দিলেও তো পারত৷
এই যে কুড়ান ছেলে না মেয়ে এইটা একদম শেষে না এসে বোঝা যায় না ...... এইটা আমার বেশ পছন্দ হল৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
আহা কদ্দিন পরে শুনলাম এই বইটার কথা! কী যে ভালো ছিলো বইটা! একবার ছবিগুলোও যদি দেখতে পেতাম, সেই জলদস্যুর কালোছোপ কুকুরটা, কিম্বা সেই পায়রা তাড়ানো পাখসাট!
পেন্সিল ও সর্বকর্মা যেন কোন বইটা? রাশিয়ান রুপকথা নাকি?
...
----------------------------
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু।
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।।
- ললিতবিস্তর
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ওই লালমলাটের সবুজ বিড়ালওয়ালা বইটা আমার গোটা ছেলেবলাটাই পাল্টে দিয়েছিল, খাসা একখানা বই, এই বয়সেও আমি সুকুমারের পাগল
গল্পটা পড়ে এখনকার বাচ্চাদের জন্যে একটু খারাপ লাগছে।
"অকুতোভয় বিপ্লবী"
আমি এ স্বর্গে যেতে চাই...
জানিনা কেন যে ধর্মগুলোয় স্বর্গ নরক এভাবে তুলে ধরে না!!!
মনজুর এলাহী
নতুন মন্তব্য করুন