নজরুল তাঁর "উচাটন মন ঘরে রয় না" গানটিতে মান্দের কোমল, ক্রন্দনভারাক্রান্ত একটি রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে মান্দের সবচেয়ে পরিচিত, পরিস্ফূট রূপটি বোধহয় "কেসারিয়া বালাম আওগে, পাধারো মারো দেস" (হে প্রিয়, কেশরী, আমার আঙিনায় এসো) গানটিতেই।
অতিথি সচল অনিন্দ্য রহমানের সৌজন্যে এ গানটির একটি অভিনব পরিবেশন পেলাম ইউটিউবের কল্যাণে। এমবেড অপশন নিষ্ক্রিয় করা বলে এমবেড করা গেলো না।
দেখুন, শিল্পীদের অভিব্যক্তি। রোগা, হাড় জিরজিরে এক একজন মানুষ, কোটরগত চোখ, শ্রমক্লিষ্ট এক একটি মুখ। পেছনে দেয়ালে ঝাড়ু হাতে ইঁট গাঁথছেন এক প্রৌঢ়, ছাগল চরে বেড়াচ্ছে উঠোনে, গানের মাঝে ছুটে এসে ঢোল হাতে বসছেন একজন, গ্রাম্য বালকেরাও যোগ দিয়েছে এই বৃন্দ পরিবেশনে। কিন্তু কী তীব্র তাদের সকলের কণ্ঠ! একটি ক্ষুদে জনপদ যেন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সমবেত হয়ে তারা ডুবে যাবে মান্দে। তাদের কণ্ঠই কেবল নয়, গাইছে তাদের সমস্ত শরীর। প্রত্যেকটি মানুষই যেন এক একটি গানের স্তবক সেখানে।
আমাদের দেশে গানের আসরগুলি খুব বেশি দেখার অভিজ্ঞতা হয়নি আমার। কিন্তু যতবারই দেখেছি, শরীর কণ্টকিত হয়েছে। শিল্পীরা এক একজন কী মগ্ন হয়ে যান সঙ্গীতে, সে দৃশ্য বর্ণনার অতীত। আমার অনুরোধ থাকবে আপনাদের কাছে, যদি সুযোগ পান, চলমান ক্যামেরায় এমন আসরের দৃশ্যগুলি ধারণ করবেন। ইউটিউব আছে নাহলে কোন কাজে?
মন্তব্য
রাজস্থানী সঙ্গীতে আমি সবসময় একটা মাদকতা পাই। এই সংগীতের প্রতি প্রথম মমতা জেগেছিল সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লা ছবি দেখার সময়। আজো মাঝে মাঝে শুনি সেই সুরগুলি। ধন্যবাদ হিমু।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
কী গলারে বাবা। আমার কাছে রাজস্থানী ফোক গানের চারটা ক্যাসেট ছিলো, অনেকদিন আগের কথা। দেখি কোথাও খুঁজে পাই কীনা
.........................................
I think what I think because that's how I am. You think what you think because that's how you are.
...........................
Every Picture Tells a Story
আরে বাঃ! দারুণ! গানটির অন্যান্য ভার্শন আগে শুনে থাকলেও এটা শুনিনি। অর্থও জানা ছিলো না।
উচাটন মন ভীষণ মিষ্টি লাগে, অজয় চক্রবর্তীর গলায় শুনুন:
[url]http://
[/url]
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
লিঙ্কটির জন্য ধন্যবাদ হিমু ভাই। জানাও হল অনেক কিছু।
...............................
অন্ধকারে অন্ধ নদী
ছুটে চলে নিরবধি
অপূর্ব একটি পরিবেশন শিরোনাম দেখে ফিউচারশর্টস ফেস্টিভল ইন প্যারিসের একটা ছোটদৈর্ঘ্যের কথা মনে পড়লো। দেখতে পারেন।
একটি অভিনব পরিবেশন।
খুব সুন্দর! আফতাব দত্তের ফেইসবুক প্রোফাইলে প্রথম এই ভিডিও দেখে বাক্রুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। রাজস্থানী সঙ্গীত আসলেই খুব ঋদ্ধ। নজরুলের আরো একটি সুন্দর গান রয়েছে মান্দ্ এর ওপরে করা ( আমি লিঙ্ক দিতে পারলাম না, কেম্নে দিতে হয় জানিনা) -----'এত জল ও কাজল চোখে'। আমার কাছে শ্রুতি শাদুলিকর এর গাওয়া দারুন একটি ঠুংরী রয়েছে মান্দ্ এর ওপরে, কারো শোনার ইচ্ছে হলে আওয়াজ দিয়েন।
_______________________________
শান্তিও যদি সিংহের মত গর্জায়, তাকে ডরাই।
--নরেশ গুহ
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
আওয়াজ দিলাম।
ভালো লাগল। বিশেষ করে যে জায়গাটায় লোকগানের সমবায়ী দিকটার দিকে আলো ফেলেছেন।
একটা বিষয় বলতে চাই, সেটা হল কেসরের, মানে ঐ শব্দটার একাধিক তাৎপর্য আছে। জাফরান বা কেসর রাজপুত রন্ধনের বিশেষ উপকরণ। লোকমত হচ্ছে এটি রান্নায় এক ধরণের বেদনা (সেনশুয়াল অর্থে , - বাংলা পেলাম না) যোগ করে।
কিন্ত আমার মত এই বস্তুর 'বস্তুগত' দিকটিও প্রেমময়। কেসর নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে পুরো রান্নায় মিশে যায়। কিন্তু মেশার পর, পুরো রান্নাটাকেই রাঙিয়ে দেয়। স্ব-অস্তিত্ববিনাশী প্রেমের এই প্রতীক নিশ্চয়ই কোনো একাকী স্বামীবিরহী রাজপুত নারী তার রসুইঘরে আবিষ্কার করে থাকবেন।
কেসরিয়া বিশেষণরূপেও অর্থেও ব্যবহৃত হয়। অর্থ - গেরুয়া
... আত্মহত্যার আগে ঐ রঙের বসন পড়বার নিয়ম আছে নাকি।
ইন্টারপ্রিটেশান আসলে বহুপ্রকারেরই হতে পারত।
মান্দ বা মাঁড় নিয়ে আমার গুরু বলতেন, ঐ রাগের আছে ২৮ প্রকার। তাই নিপাট মুগ্ধতাই শ্রেষ্ঠ সম্বল।
ধন্যবাদ।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
লেখাটা পড়ে এবং সুরটা শুনে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল ।জয়সল্মিরের পথে পথে এমন রত্ন খুঁজে পাওয়া যায় – বলতে পারেন, সোনার কেল্লার আনাচে কানাচে।রুক্ষ সোনালি মরুভুমি আর সোনালি পাথরের তৈরি ঘরবাড়ি যেখানে মিলেমিশে একেবারে একাকার- সেখানে এই মানুষগুলো ভীষণরকম রঙিন পোশাক-পাগড়ী পড়ে বসে থাকে। এই ভিডিও-তে যদিও হারমনিয়াম-এ গান গাইছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়- কোনো পরিবারের কর্তা একটা বাদ্যযন্ত্র হাতে নিয়ে বসে বাজাচ্ছেন আপন মনে, সামনে হয়ত তার মেয়েই নাচছে ঘুরে ঘুরে।আওয়াজটা সারেঙ্গির মতন। পরে wiki ঘেঁটে জানতে পারি যন্ত্রটার নাম ravanhatta।রাবণ নাকি এই যন্ত্র দিয়ে সুর বাজিয়ে শিবের স্তুতি গেয়েছিলেন।পাশ্চাত্যের ভায়োলিন এই যন্ত্রেরি আধুনিক রূপ।আমি সঙ্গীতের ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। তবে, ওই মরুভুমির দেশে, বন্ধু-পরিজন ছেড়ে একা একা যখন এই সুরটা শুনতাম- সত্যি বলতে কি, আমি আর এক পাও এগোতে পারতাম না, পাশেই বসে পরতাম। বিরহকাতরতা আমাকেও কাতর করত। আমরা শহরে বড় হওয়া মানুষ folk song বা লোকগীতির মুল্য কমই বুঝি।এমন গান যে জনপদের সাধারন মানুষের মুখে মুখে গীত হয়- তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে।
এই গানের রাগ এবং এর ইতিহাস জানতে পেরে ভীষন ভালো লাগলো।
হিমু, এমন বিষয় নিয়ে লেখা পড়ে খুব আরাম পেলাম। লিখুন আরো।
ঐ গানটি খুবই জনপ্রিয়, হিন্দি ছবিতেও বারবার উঁকি দেয় এর ছায়া, এমনকী প্রথম পংক্তিসমেতই। এর একটা উদাহরণ 'লেকিন' ছবিতে লতার কণ্ঠে রয়েছে।
নতুন মন্তব্য করুন