• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

মেঘদলের শহরবন্দী

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বুধ, ১৮/১১/২০০৯ - ৬:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


১.
জ্যারেড ডায়মন্ড তাঁর কোনো একটা বইতে [থার্ড শিম্পাঞ্জি সম্ভবত] পাপুয়া নিউগিনিতে এক অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছিলেন। বলে রাখা ভালো, "সভ্য" জগতের কাছে পাপুয়া নিউগিনি আবিষ্কৃত হয়েছে, একশো বছরও পেরোয়নি। বলা চলে, যন্ত্রসভ্যতা থেকে সুদীর্ঘ সময় দূরে থেকে পাপুয়া নিউগিনি একটা সময় আদিম মানব সমাজের একটা কপি হিসেবে বিবেচিত হতো দীর্ঘদিন। পাপুয়া নিউগিনির অনেক অঞ্চলে এখনও বহিরাগতদের পা পড়েনি, তাই ধরে নেয়া যায়, আজ থেকে তিন দশক আগে ডায়মন্ড যখন তাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তখন তারা অসংখ্য ছোটো ছোটো আদিম গোত্র হিসেবেই ছিলো। ডায়মন্ড দেখেছিলেন, এক গোত্রের সাথে আরেক গোত্রের সমানসংখ্যক মানুষের দেখা হলে তারা সাধারণত বসে আলোচনা করে, উভয়পক্ষের পরিচিত কোনো লোক আদৌ আছে কি না। তা না হলে, পরিচিতদের পরিচিত কেউ। তা-ও না হলে, পরিচিতদের পরিচিতদের পরিচিত কেউ ...। এই আলাপে আসলে উঠে আসে একটা কারণ, কেন এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ধরে খুন করবে না। জ্যারেড ডায়মন্ড একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ধর্মের উদ্ভবও অনেকটা এমনই, যখন ঘনসন্নিবিষ্ট গোত্রগুলি পরস্পরের সাথে সংঘাত কমিয়ে আনার জন্যে অভিন্ন কোনো টোটেমের আশ্রয় নিতো। যেন ডক্টর ইইইভল বলছে অস্টিন পাওয়ারসকে, "উই আর নট সো ডিফরেন্ট .. ইউ অ্যান্ড আই!"

গান নিয়েও গানশোনা মানুষের স্পর্শকাতরতা বেশি, অনেকটা টোটেমের মতোই ব্যাপারটা। গানের রুচি ভিন্ন হবার কারণে এমন মানুষকেও অপরের সাথে রূঢ়তম আচরণ করতে দেখেছি, যে হয়তো পারতপক্ষে গলা চড়িয়ে কথাও বলে না। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এক একটা গান মানুষের স্মৃতির এক একটা বড় চাঙড়ের সাথে জড়িয়ে থাকে, সেই গান সম্পর্কে অপরের প্রতিক্রিয়া শুনলে মানুষের সেই স্মৃতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতায় আঘাত পড়ে। উদাহরণ দিই, একটা পুরনো দিনের হিন্দি গান আছে, হাম তুম ইয়ে বাহার, দেখো রং লায়া পেয়ার, বরসাত কি মাহিনে মে। এই গানটার সাথে আমার টিনটিন ইন টিবেট পাঠের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যখনই এই গানটা আমি শুনি, আমার সেই দিনটার কথা মনে পড়ে। শুধু ঐ একটা দিন নয়, আমি ঐ সময়টায় ফিরে যাই। আজ কেউ যদি বলেন, এই গানটা একটা বালের গান (গানটা খুব আহামরি ভালো কিছু নয়), তাহলে আমার ঐ স্মৃতিসংযোগটুকুতেও আঘাত লাগবে।

কিন্তু এই ছাড়টুকু আমাকে দিতে হবে, কারণ আমি আশা করতে পারি না, ঐ গানের সাথে অন্য কারো সুখস্মৃতি জড়িতে থাকবেই থাকবে। আমার প্রিয় বহু গান নিয়ে আমি বন্ধুদের মুখে কটূক্তি শুনেছি, কিন্তু আমার বলার কিছু নেই, কারণ গান সম্পর্কে ভালো লাগা বা মন্দ লাগার পূর্ণ অধিকার সকলে সংরক্ষণ করে। আহত হই বা বিরক্ত হই, যখন গান ভালো বা খারাপ লাগার ঔচিত্য নিয়ে কথা হয়। আমার কোনো গান ভালো লাগলে কেন তা আমার ভালো লাগলো, সেটা ব্যাখ্যা করার বাধ্যবাধকতা আমার নেই, তেমনি খারাপ লাগলেও কোথাও কৈফিয়ত জমা দেবার প্রয়োজন আমার হবে না। কিন্তু দেখেছি, এই ভালো লাগা আর খারাপ লাগা ব্যাপারটা নিয়ে পাশাপাশি থাকা একটা খুব কঠিন কাজ। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে বিদ্রুপ করেন, তারপর তিক্ততা শুরু হয়, এবং তা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া থামে না।

ধর্ম নিয়ে আমরা সংবেদনশীল, কিন্তু গানের ব্যাপারে আমাদের সংবেদনশীলতা প্রায় ধর্মবোধের কাছাকাছিই। পাপুয়া নিউগিনির ঐ লোকগুলি কিন্তু "অসভ্য" নয়, তারা খুনোখুনি করে জৈবভৌগলিক সংস্কৃতির কারণে, টেরিটোরিয়ালিজম বা অঞ্চলকাতরতা সেখানে টিকে থাকার জন্যে একটা অবশ্যপালনীয় শর্তের মতো। গানের ছুতোয় বকাবকি গালাগালি মারামারি পর্যন্ত দেখেছি, যদিও আমাদের এমন কোনো শর্ত মানতে হয় না।

২.
পাপুয়া নিউগিনি পর্যন্ত হাতড়ে লেখা দীর্ঘ গৌরচন্দ্রিকার কারণ হচ্ছে, "মেঘদল" নামের গানের দলটার অ্যালবাম "শহরবন্দী" আমার কাছে ভালো লাগেনি। সচলায়তনে আমার পাঠকেরা আমাকে কিছু কড়া কথা শোনানোর আগে তাই ইস্পাতের অন্তর্বাস পরে নিলাম। অবশ্য বেহুলার বাসরও লৌহনির্মিত ছিলো, তাই খুব আশাবাদী থাকছি না।

আমার কাছে মনে হয়, গান ভালো লাগে চারটা কারণে। এক, যদি গানটা কোনো সুখময় ঘটনার সাথে গেঁথে যেতে সক্ষম হয়। দুই, যদি গানটা বিক্ষিপ্ত, আহত মনে পুল্টিশ লাগাতে পারে। পরবর্তীতে এই পুল্টিশের স্মৃতি শ্রোতার মনে টোটকার মতোই কাজ করে। তিন, যদি গানটার কথা ভালো লাগে। অধিকাংশ রবীন্দ্রসঙ্গীতকে এই ক্যাটেগোরিতে রাখা যায়। চার, যদি গানটার সুর ভালো লাগে, যেমন এ আর রাহমানের বেশ কিছু গান, সেগুলির লিরিক্স নিতান্তই রান-অফ-আ-মিল (এর বাংলা কী করা যায়? কলের সেমাই?), সুরের গুণে উতরে গেছে এবং মনে ছাপ ফেলেছে। আর পরিস্থিতি ভেদে এই চার কারণের মধ্যে যে কোনো সংখ্যক কারণের মিশ্রণে বহু যৌগ কারণে কোনো গান ভালো লাগতে পারে।

মেঘদলের নাম আমি শোনার আগে কয়েক বছর আগে দেখেছি পোস্টারে, "বৃষ্টি ও মেঘদলের গান" শিরোনামে। সম্ভবত তারা সেই একই মেঘদল। ভিন্ন মেঘদল হলেও আমার আপত্তি নেই। মেঘদলের দুই কণ্ঠশিল্পীর মধ্যে একজনের কণ্ঠ দুর্ধর্ষ। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে আমি তাঁর নাম জানি না, তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে সুকণ্ঠ বলে ডাকবো। দ্বিতীয় যিনি গাইছেন, তিনি দুষ্কণ্ঠ নন। সুকণ্ঠ থেকে তাঁকে আলাদা করার জন্যে তাঁকে ডাকছি অন্যস্বর।

সুকণ্ঠের গাওয়া গানগুলির মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে "নির্বাণ" আর "রঙিন ফেরেশতা"। তাঁর কণ্ঠের সাথে এই দু'টির সুর আর কথার ত্রিবেণীসঙ্গম সবচেয়ে যথাযথ হয়েছে বলে মনে হয়েছে। গান দু'টির সাথে সহকণ্ঠ আর অর্কেস্ট্রেশন মিশেছে মসৃণভাবে। গান দু'টি সহজ, ছিমছাম, অনাড়ম্বর ... কাঁচের চুড়ির মতো।


নির্বাণ


কিছু বিষাদ হোক পাখি
নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে
কাঁচপোকা সারি সারি
নির্বাণ, নির্বাণ ডেকে যায় ।।

কিছু ভুল রঙের ফুল
ফুটে আছে আজ পথে
কিছু মিথ্যে কথার রং
আমাদের হৃদয়ে ।।

এখনও এখানে নীরবে দাঁড়িয়ে
অগণিত প্রতিশোধ জাগে আত্মার ভেতরে
কিছু মাতাল হাওয়ার দল
শোনে ঝোড়ো সময়ের গান
এখানে শুরু হোক রোজকার রূপকথা

কিছু বিষাদগ্রস্ত দিন
ছিলো প্রেমিকার চোখে জমা
আলো নেই, রোদ নেই, কিছু বিপন্ন বিস্ময়
ক্ষমাহীন প্রান্তর জুড়ে আমাদের বেঁচে থাকা


রঙিন ফেরেশতা


মন গেছে মেঘের বাড়িতে
আকাশ দিয়েছে ডুব
মাতাল তারা রাতের সাথে
হেসেই হবে খুন।

আমার সারা গায়ে
তোমার শহরের ধূলো মেখে
জ্বলছি বিপুল অন্ধকারে
একই রাস্তায়, একই পৃথিবীর জলে
জ্বলছি বিপুল অন্ধকারে

শহরের কাছে রেখেছি জমা
ময়লা জামার দাগ
রঙিন ফেরেশতা উড়ে বসে ভাবনায়
চাঁদের ব্লেডে যাচ্ছে কেটে মুহূর্ত মুহূর্ত
রঙিন ফেরেশতা উড়ে বসে ভাবনায়

অন্যস্বরের গলায় খাপ খেয়েছে "চার চার চৌকো" গানটা। কিন্তু গানটার মধ্যে "কিক" নেই। মন্থর, গানের কথাও ঢিলেঢালা। কিন্তু শিল্পীর অন্য দু'টি গানের তুলনায় ("আবার শহর" আর "ঠিক ঠাক") এই গানের জন্যে তাঁর কণ্ঠ বেশি লাগসই মনে হয়েছে।


চার চার চৌকো জানালায়
আমায় দেখে হাতটা বাড়ায়
আকাশ দেখে দিচ্ছি ছুট
মাথার ভেতর শব্দজট
আমার চোখে লাগায়
চার চার চৌকো জানালায়

আকাশ আমার
আমি তোমার কাছে যাবো
আমার চৌকো আকাশ
আমি তোমার ... চার চার চৌকো জানালায়

ওপরের গানটার সাথে এটার তুলনা করলে বোঝা যাবে, গানটায় কেন "কিক" নেই।

শ্রোতার কানে "শহরবন্দী"র সম্পদ বোধহয় এর বাকি গানগুলিই। ফোনে, স্কাইপে, মেসেঞ্জারে, ফেসবুকে শুনছি আর দেখছি অন্য গানের পংক্তিগুলোই। কিন্তু গান হিসেবে আমার ভালো লাগেনি, মনে হয়েছে কবিতায় সুর দেয়া হয়েছে, কিন্তু তারা যেন একে অন্যের সাথে মেশেনি। সব কবিতা লিরিক্যাল হয় না বোধহয়। মেঘদলের এই অ্যালবামের বাকি গানগুলোতে হঠাৎ হঠাৎ চমৎকার কিছু পংক্তি ছিটকে বেরিয়ে এসেছে গান থেকে আলাদা হয়ে। তার কাব্যগুণের প্রশংসা না করে পারি না, কিন্তু সঙ্গীতগুণে স্পৃষ্ট হই না। তবে একটি বৈশিষ্ট্য প্রায় প্রতিটি গানেই স্পষ্ট, পারকাশন খুব চমৎকার। "মুঠোফোন" গানটি যেমন, অর্কেস্ট্রেশন চমৎকার, শিল্পীর স্পষ্ট, ভরাট উচ্চারণে গাওয়া গান, কিন্তু "হ্যালোজেন রোদ চিলতে বারান্দায় টিকটিকি তাই বলছে ভবিষ্যৎ" অংশে এসে গানটা তার শুরুর মাধুর্য হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে হয়েছে। "রোদের ফোঁটা" গানটির অর্কেস্ট্রেশন এক কথায় চমৎকার, কিন্তু মন্থর লয়ে সুর ভালো লাগেনি। "দূর পৃথিবী" গানটি শুরু হয়েছে চমৎকারভাবে, কিন্তু সুর পড়ে গেছে কিছুদূর যেয়ে। "কুমারী" গানটিকে মনে হয়েছে "তোমাকে প্রেমের আগে তোমার প্রেমকেই ভালোবাসি" পংক্তিটিকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠা একটি গান। ভালো লাগেনি "পাথুরে দেবী"। "শহরবন্দী" গানটির কথা, সুর, পরিবেশন সবই সুন্দর, কিন্তু এই গানটিই হয়তো পরের প্যারায় যা বলতে চেয়েছি, তার সারাংশ ধারণ করে, তাই ভালো লাগে না, চাপ লাগে বুকে।

বিষাদ গানের অন্যতম উপকরণ, মানুষ সবসময় কাঁদতে পারে না বলেই গান শোনে বা গান গায়। কিন্তু এই গানগুলি একটু মন দিয়ে শুনলে টের পাওয়া যায়, দুয়েকটা বাদে বাকি গানগুলিতে বিষাদ নেই, একটা আশ্চর্য হাল-ছেড়ে-দেয়া নৈরাশ্যবাদিতা আছে। গানগুলোর চোখে অশ্রুর আভাস নেই, ঠোঁটের কষে মার খাওয়া রক্তের দাগ আছে। বেশির ভাগ গানের কথাই শহরের হাতে বন্দী, সেসব গানে শহর ভিলেন, সেসব গানে শহর প্রত্যাক্রান্ত হচ্ছে শিল্পীর হাতে। নাম না বললেও এই শহরকে চিনি খুব ভালো করেই, বাংলাদেশে এমন নিষ্ঠুর, এমন কদর্য শহর আর দু'টো নেই। এই শহর মানুষকে নষ্ট করে এখন কবির ওপর চড়াও হয়েছে। এই শহরের ওপর অভিমান-মাৎসর্য্যের সময় মনে হচ্ছে ফুরিয়ে এসেছে, এই শুয়োরের বাচ্চা শহরকে লাত্থি মেরে চূর্ণ করে দেয়া দরকার।

শহরবন্দী নামটি খুব মানানসই হয়েছে অ্যালবামের জন্যে, কিন্তু গান কি শহরবন্দী হওয়া উচিত? এই শহরের মানুষ কি তাহলে নিজের ঘরে, চলতে ফিরতে এমপিথ্রি প্লেয়ারে, খোলা আকাশের নিচে সমাবেশে এই নৈরাশ্যে মাখা গান শুনে যাবে? কবিতা অনেকরকম, কিন্তু গান কি আসলেই অনেকরকম? গান বিষাদের হোক, হর্ষের হোক, ক্রোধের হোক, কিন্তু নিরাশাশ্রয়ী না হোক। মেঘদলের কবিরা যখন গান লিখছেন, এই কথাটি অন্তত বিবেচনা করুন।

তাঁদের পরবর্তী অ্যালবামের গানগুলি আগ্রহভরে শুনবো।



গানগুলি শুনেছি রায়হান আবীরের সৌজন্যে। তাকে ধন্যবাদ জানাই।


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

১ ...
সমালোচনা ব্যাপক ভালো হইসে ... আর শুরুর গৌরচন্দ্রিকার সাথে একমত, গান আর মুভির বেলার গণতন্ত্র কাজ করে না, যা শুনতে এবং যা দেখতে ভালো লাগে তাই আমার কাছে ভালো গান এবং ভালো মুভি ...

২ ...
এই এলবামটা আমার প্রায় জাতীয় সংগীত ... সবচে প্রিয় গান নির্বাণ, সেই গানের সবচে প্রিয় পংক্তিঃ
"কিছু বিষাদগ্রস্ত দিন
ছিলো প্রেমিকার চোখে জমা
আলো নেই, রোদ নেই, কিছু বিপন্ন বিস্ময়
ক্ষমাহীন প্রান্তর জুড়ে আমাদের বেঁচে থাকা"

স্পষ্টতই চরম নৈরাশ্যবাদী, তাও শুনি ... কেন শুনি বলতে পারবো না ... হতাশা হতাশায় কাটাকাটি করার জন্য মনে হয় ...

৩ ...
"আহত হই বা বিরক্ত হই, যখন গান ভালো বা খারাপ লাগার ঔচিত্য নিয়ে কথা হয়। "

"শহরবন্দী নামটি খুব মানানসই হয়েছে অ্যালবামের জন্যে, কিন্তু গান কি শহরবন্দী হওয়া উচিত? "

এই কথা দুইটা খানিকটা কন্ট্রাডিক্টরী হয়ে গেল কিনা বুঝতেসি না ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

হিমু এর ছবি

উচিত শব্দটা দুইটা বাক্যেই আছে, কিন্তু বিরোধ দেখতে পাচ্ছি না। প্রথম বাক্যে দেখতে পাচ্ছি বলছি, কেউ যদি বলেন একটা গান "ভালো লাগা উচিত" বা "খারাপ লাগা উচিত", তখন খারাপ লাগে। দ্বিতীয় বাক্যে জিজ্ঞাসা রাখছি, একটা গান কি শহরবন্দী হওয়া উচিত কি না। বলছি না, একটা গান শহরবন্দী হওয়া ভালো বা খারাপ। আমার স্বল্পজ্ঞান বলে, গানের এসেন্স হচ্ছে রিলিফে, মুক্তিতে, মানুষ গানের কাছে আশ্রয় খোঁজে রিলিফের জন্যে। এই হাঁপধরা শহরবন্দী গানগুলি গানের সেই মূলরসরেখা অতিক্রম করছে কি না, সেই প্রশ্নটা আছে উচিত শব্দটা ব্যবহার করে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

একুশ শতকে সবকিছু প্যাঁচ লেগে গেছে, নাগরিক বিচ্ছিন্নতাবোধ বিশশতকী ব্যাপারস্যাপার, জীবনানন্দ দাশকেও চাপিয়ে দেয়া লাগে কারো কারো, এর মধ্যে অন্যতর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আছে, কেউ কেউ আরো পিছনে চলে যায়, ধূসর পান্ডুলিপির পিছনে, রূপসী বাংলারও, আমি পূর্ববাংলাকে খুঁজলে মধ্যযুগীয়ও বলতে পারেন, তবু আমি বাংলা গানে আজো খুঁজি পূর্ববাংলাকে, মেঘদলে তা নাই, আমার সঙ্কীর্ণ ভূগোলে এরা নাই ...


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

হিমু এর ছবি

প্যাঁচ লাগাইয়া দিলেন তো। এখন প্যাঁচ ছুটান।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বীরভূমের মাটি লাল। কুমিল্লার মাটিও। ধরেন লালমাই । আবার রাঙামাটিও আছে। সব তো আর এক লাল না।
এক প্রকার গান হয় মাটিতে। আরেক প্রকারে মাটি লাগে না।
আজকের দিনটাই মাটি। তাই মেঘদল ভালো লাগে নাই। শহর কোনো 'উদযাপনের' বিষয় না। নাগরিক হওয়া মনে করেন একটা দশা। কিন্তু এরা কি নাগরিক না ন্যাকা নগরবিলাসী ?
ভাইজান, গান বুঝি কম। প্যাঁচটা ছুটাইতে পারলে তো ভালোই লাগত ...


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

দ্রোহী এর ছবি

শহরবন্দী শুনিনি। দ্রোহের মন্ত্রে ভালোবাসা শুনেছিলাম। তেমন ভালো লাগেনি।

হিমু এর ছবি
দ্রোহী এর ছবি

শুনলাম। ভালো লাগ্লো না খুব একটা।

মূলত পাঠক এর ছবি

যাক আপনি যখন বললেন তখন সাহস করে আমিও হাত তুলি। কেউ কোনো গান খুব ভালো লেগেছে বললে আমি সাভিনিবেশে শুনি, নাকচ করার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। সে ভাবেই শুনেছিলাম এঁদের গান। অনেক চেষ্টাতেও ধরতে পারি নি সেই ভয়ানক ভালো লাগার কারণটা। কথা ভালো হলেও ততো ভালো নয় যাতে করে সুর ও কম্পোজিশনের খামতি ঢাকা পড়ে, অন্ততঃ আমার তাই মনে হয়েছে। তবে এতো প্রশংসা অকারণে হয়েছে এটাও মানতে ইচ্ছে হয় না, তাই কান খোলা রেখেছি। কিছু শিল্পীর গান শুনেই বুঝি এগুলি ফালতু, উদাহরণ "কাঁটাগাছ" (বুঝ জন যে জানো সন্ধান)। না কথা ভালো, না সুর, না গানের গলা। নাগরিক ফুলবাবুরা কাজের বুয়ার দুঃখে মেকি গান বাঁধলে ঐ রকমই হয়। তাদের আর শুনি না। আবার কিছু শিল্পীর গান শুনেই বুঝি আমার ও তাঁর জুড়ি জমবে না। সুখের কথা (আমার পক্ষে) যে এঁদের ক্ষেত্রে সেটা হয় নি। কাজেই ভবিষ্যতে আশা আছে। যাঁরা এঁদের পাঙ্খা তাঁরা এইটা শুনে গোটানো আস্তিন খুলে ফেলবেন সেই আশাও রইলো তার সাথে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এ্যালবামটা এখনো আমার শোনা হয় নাই। :(

ওদের ওঁ গানটাই আমার সর্বকালের সেরা লাগে। বাকী অনেক গানই আমার কাছে ভালো লাগে নাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অবাঞ্ছিত এর ছবি

আমিও ভুল করসিলাম বস্। অ্যালবামের নাম - "শহরবন্দি" হবে । রায়হান আবীর ভাই এর ঝাড়ি খেয়ে ঠিক করসি । :)

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

হিমু এর ছবি
অবাঞ্ছিত এর ছবি

বলছিলাম যে অ্যালবামের নামকরণে তাঁরা "ই" কার ব্যবহার করেছেন, "ঈ" কার নয়। অ্যাজ ইন আ প্রপার নাউন শ্যুড বি স্পেল্ট দ্য ওয়ে ইট ইজ :)
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

হিমু এর ছবি

হুমমম, অ্যালবামের নামের জায়গাটা শুধরে দিবোনি। কিন্তু শহরবন্দি কেন? শহরবন্দ থেকে না তো?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অবাঞ্ছিত এর ছবি

হতে পারে, আমি ঠিক নিশ্চিত না। আমিও বেশ অবাক হয়েছিলাম।

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমিও সাহস করে হাত তুলি। আমারও তেমন ভালো লাগে নাই। কথা ভালো। কিন্তু গান গুলি ম্যাড়ম্যাড়ে। মনে হয় ন্যাতিয়ে যাওয়া মুড়ি খাচ্ছি। :-S

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

বেনামা এর ছবি

হিমু দা, আঁচড়-কামড় এর তৃতীয় খণ্ড কই ???

পরী [অতিথি] এর ছবি

খুব চমত্‍কার এবং দীঈর্ঘ গৌরচন্দ্রিকাসমেত মেঘদলের শহরবন্দি এলবামের 'সুগভীর' সমালোচনা এবং সাহস করে হাত তোলা এবং না তোলা মন্তব্যগুলি পড়ে প্রীত হলাম :-) :-) :-)

তানভী [অতিথি] এর ছবি

নজরুল ইসলাম ভাইয়ের মত আমার কাছেও ওদের সেরা গান ওঁ (ওম)।
এবারের এ্যলবাম টা প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগ্লেও,পরে ঐ নির্বান গান টা ভালো লেগে যায়।বাকি গুলা ঠান্ডা বলে হজম হয়ে যায়।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সব গান নয়, তবে সবমিলিয়ে আমার ভালো লেগেছে।
..........................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

তানভী [অতিথি] এর ছবি

নজরুল ইসলাম ভাইয়ের মত আমার কাছেও ওদের সেরা গান ওঁ (ওম)।
এবারের এ্যলবাম টা প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগ্লেও,পরে ঐ নির্বান গান টা ভালো লেগে যায়।বাকি গুলা ঠান্ডা বলে হজম হয়ে যায়।

তানভী [অতিথি] এর ছবি

নজরুল ইসলাম ভাইয়ের মত আমার কাছেও ওদের সেরা গান ওঁ (ওম)।
এবারের এ্যলবাম টা প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগ্লেও,পরে ঐ নির্বান গান টা ভালো লেগে যায়।বাকি গুলা ঠান্ডা বলে হজম হয়ে যায়।

খেকশিয়াল এর ছবি

আগের এ্যালবামটা ভালো লাগে নাই, এইটা শুইনা দেখি

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ওডিন এর ছবি

খুব সুন্দর, সুচিন্তিত লেখা।

গান বিষাদের হোক, হর্ষের হোক, ক্রোধের হোক, কিন্তু নিরাশাশ্রয়ী না হোক

কেন? নিরাশা কি গানের অংশ হতে পারে না? এই পৃথিবীটাতো এখনো আমাদের মনের মত হয়ে উঠলো না- গানে নিরাশা চলে আসতেই পারে।

প্রথম এ্যালবামটা আমার ভালই লেগেছিলো - বিশেষ করে আকাশ মেঘে ঢাকা, শহর আর ছেলেবেলা। এবারেরটা বেশি ভালো লাগে নাই, তবে আমি মেঘদলের গান, কম্পোজিশন বা মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টের চেয়ে ওদের লিরিক্সের ভক্ত। হিমু ভাইয়ের কথাই ধার করে বলছি

কাব্যগুণের প্রশংসা না করে পারি না, কিন্তু সঙ্গীতগুণে স্পৃষ্ট হই না

---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা। :-?

হিমু এর ছবি

কেন? নিরাশা কি গানের অংশ হতে পারে না? এই পৃথিবীটাতো এখনো আমাদের মনের মত হয়ে উঠলো না- গানে বিষাদ চলে আসতেই পারে।

বিষাদ আসতেই পারে, আসে, চাইও আসুক। কিন্তু নিরাশা আর বিষাদ এক জিনিস না। নিরাশা সংক্রামক, এটা মানুষকে অন্য অনেক কিছুর তুলনায় খুব দ্রুত অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়। আর গান অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় অনেক বেশি প্লাবনক্ষম। একে ব্যবহার করে নিরাশাকে তোল্লাই না দেয়া হোক।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ওডিন এর ছবি

$-) ইয়ে ওইটা নিরাশা হবে, স্লিপ অফ কিবোর্ড হয়ে গেছিলো, আপনার রিপ্লাই আসার আগেই ঠিক করে দিয়েছি।

আর এখনো আমি গানে নিরাশার ব্যবহার এর ব্যপারেএকমত হতে পারলাম না। তবে ঠিকই বলেছেন- নিরাশা খুবই খুবই সংক্রামক।

---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা। :-?

ভ্রম এর ছবি

সুকন্ঠের নাম শিবু কুমার শীল এবং অন্যস্বররের নাম মেসবাউর রহমান সুমন। :)
তারা এবং আরো কয়েকজন মিলে কিছুদিন হল একটা নতুন সংগঠন তৈরী করেছেন...নাটকের।
নাম রংমিস্তিরির দল।

নিঘাত তিথি এর ছবি

যাদের মেঘদলের "শহরবন্দি" ভালো লাগে নি, এই পোস্টে হাত তোলার জন্য তাদের আসলে সাহস করতে হয় নি, সবাই এখানে ওই বলছে :) (কিংকু ছাড়া)। আমি বরং ভয়ে ভয়ে সাহস করে বলি, "শহরবন্দি"র গান আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আগের এলবাম খুব তেমন করে শোনা হয় নি, যা টুকটাক শুনেছি, খুব একটা টানে নি, কিন্তু এটা একদম আটকে ফেলেছে। "কুমারী" গানের সুরটা খানিক একঘেয়ে লেগেছে, বাকি সব দারুন...কাব্যময়তা, সুর, গায়কী, কম্পোজিশান, লিড গীটারের কিছু কাজ-এই সমস্ত কিছু।

আমার ছোটবেলাটা থেকে শুরু করে কৈশোর ছিলো বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীতের তুমুল উত্তরণের সময়। "মেঘদল"-এর গান শুনে মনে হয়েছে, অনেক দিন পরে আজকের এই "ডিস্কো বান্দর" এবং ফুয়াদের ইন্সট্রুমেন্টাল চিল্লাচিল্লির যুগে একটা ভালো ব্যান্ড এলো ভালো কিছু গান নিয়ে।

তবে গানগুলো "নিরাশাবাদী"- হিমু ভাইয়ের এই কথার সাথে কিছুটা একমত। গান অনেক প্রকারেরই হতে পারে, এই গানগুলো খানিক হতাশা-নিরাশা-বিষাদ এই দিকে চলে গিয়েছে। এটা ভালো কি খারাপ- জোর গলায় বলা যায় না, সবই তো সেই ইনডিভিজ্যুয়ালের পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভর করে।

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

সংসপ্তক এর ছবি

অ্যালবামটা আমার বেশ পছন্দ। প্রথম অ্যালবামের মত অত ভালো না লাগলেও, কিছু গান, বিশেষ করে নির্বাণ, পাথুরে দেবী, শহরবন্দী এই গান গুলো দারুণ লেগেছে। এক 'কুমারী' আর 'চার চার চৌকো' বাদ দিলে, সব গানই ভালো। আর হিমুদা, 'সুকন্ঠ' সম্ভবত শিবু, মেঘদল এর লীড ভোকাল।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

সংসপ্তক এর ছবি

অ্যালবামটা আমার বেশ পছন্দ। প্রথম অ্যালবামের মত অত ভালো না লাগলেও, কিছু গান, বিশেষ করে নির্বাণ, পাথুরে দেবী, শহরবন্দী এই গান গুলো দারুণ লেগেছে। এক 'কুমারী' আর 'চার চার চৌকো' বাদ দিলে, সব গানই ভালো। আর হিমু ভাই, 'সুকন্ঠ' সম্ভবত শিবু কুমার শীল, মেঘদল এর লীড ভোকাল।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

আমি বাংলা ভাষা, বাংলা গানকে বিয়াপক ভালু পাই কিন্তু বাংলা ব্যান্ডের গান হাতে গোনা কিছু ছাড়া শোনা হয়নাই কখনো। আমি চিরজনম ওয়েষ্টার্ণ ভক্ত। ৩৩ বছরের জীবনে এই নিয়ে 'দেশী কুত্তার বিলাতী ঘেউ' টাইপ চরম বিরক্তিকর & নিন্মরুচির টিজ শুনতে হয়েছে কিছু অতিউতসাহী বাংলা প্রেমী'র মুখে যারা সারাদিন হিন্দি গান আর মুভি নিয়ে পড়ে থাকাকে 'ঘেউ' টাইপ কিছু মনে করেনা। তাই আমি কখনো বাংলা গানের ব্যাপারে হা-হু ছাড়া পারতঃ পক্ষে কারু সাথে কোন কথা বাড়াইনা। আজ এখানে অনেকেই দেখলাম সাহস করে কথা-বার্তা বলছেন, তাই আমিও চামে একটা মেরে দিলাম। আশা করি কেউ এটাকে 'ঘেউ' হিসেবে দেখবেননা।

-----------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

রাহিন হায়দার এর ছবি

আউচ! লাগলো হিমু ভাই। :D । আমি মেঘদলাসক্ত। 'শহরবন্দী' বোধহয় আমার সবচেয়ে বেশি টানা শোনা অ্যালবাম। খারাপ লাগলে তার কারণ যুক্তি দিয়ে বোঝানো যত সহজ, ভাল লাগলে ততই কঠিন। শুধু কিছু দ্বিমত জানিয়ে যাই।

কবিতা অনেকরকম, কিন্তু গান কি আসলেই অনেকরকম?

সুর বসার আগে গানের কথা তো কবিতাই থাকে। তাহলে গানের বৈচিত্র্যের পরিধি কবিতার চাইতে ছোট হবে কেন? মানুষ গানের কাছে আশ্রয় খোঁজে, কবিতার কাছে খোঁজে না? গানের প্লাবনক্ষমতার ওপর ভরসাতেই শিল্পী যদি গানের মাধ্যমে কোন বার্তা পৌঁছাতে চান, তাকে দোষ দেয়া যায় কি? গানের ক্ষেত্রে নৈরাশ্যের ব্যাপারে আপনার আপত্তির জায়গাটা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু শিল্পীর নিরাশার কারণ যদি হয় আমাদের বা নগরবাসীদের উদাসীনতা? তাছাড়া একটা দু'টো গানে নিরাশা প্রকাশ পাবার জন্য পুরো 'শহরবন্দী'ই নৈরাশ্যে ভরপুর, মানতে পারলাম না। নিরাশা মোটেও সার্বিকভাবে অ্যালবামের কণ্ঠস্বর নয়। 'কুমারী'র ভালোবাসা, 'পাথুরে দেবী'র ক্রোধ, 'চার চার চৌকো'র মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, 'রঙ্গিন ফেরেস্তা'র আনন্দ, 'ঠিকঠাক'-এর তাচ্ছিল্য ইত্যাদি আপনি এড়িয়ে গেলেন দেখে অবাক হলাম। আর 'দূর পৃথিবী'-তে তো শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার জয়গানই গাওয়া হল। নাকি এসব আমারই বোঝার ভুল? সাঙ্গীতিক কারণে গান ভাল লাগা না লাগা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ওটা নিয়ে কিছু বলার নেই।

"মুঠোফোন" গানটি যেমন, অর্কেস্ট্রেশন চমৎকার, শিল্পীর স্পষ্ট, ভরাট উচ্চারণে গাওয়া গান, কিন্তু "হ্যালোজেন রোদ চিলতে বারান্দায় টিকটিকি তাই বলছে ভবিষ্যৎ" অংশে এসে গানটা তার শুরুর মাধুর্য হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে হয়েছে।

এখানে পূর্ণ সহমত।

"দূর পৃথিবী" গানটি শুরু হয়েছে চমৎকারভাবে, কিন্তু সুর পড়ে গেছে কিছুদূর যেয়ে।

আরো কিছুদূর গিয়ে দেখতে পারতেন বোধহয়! :D

তবে সমালোচনাটি সুখপাঠ্য। মেঘদল ভক্ত হিসেবে আরো পোক্ত মনে হচ্ছে নিজেকে। আপনাকে ধন্যবাদ।

...............................
অন্ধকারে অন্ধ নদী
ছুটে চলে নিরবধি

হিমু এর ছবি

আসেন পরিচিত কাউকে খুঁজে বার করি। না থাকলে, পরিচিতদের পরিচিত। তা-ও না থাকলে, পরিচিতদের পরিচিতদের পরিচিত ... :D



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রাহিন হায়দার এর ছবি

=)) ভাই আপনে পারেনও!

...............................
অন্ধকারে অন্ধ নদী
ছুটে চলে নিরবধি

হিমু এর ছবি

আপনার পর্যবেক্ষণ আমার চেয়ে সঠিক, যে গাণিতিকভাবেই গানের বৈচিত্র্যের পরিধি কবিতার চেয়ে বেশি হবে, যেহেতু আরোপিত সুরেরও নিজস্ব বৈচিত্র্য আছে। কিন্তু সব মিলিয়ে একটা গান যে দৃশ্য তৈরি করে সব প্রত্যঙ্গ নিয়ে, সেটি কবিতার চেয়ে ভিন্ন হয়, এবং সুরের সাথে বাণীর কেলাস গঠনের সাফল্য-ব্যর্থতার কারণেই কি না জানি না, একটি গান কবিতা হিসেবে উত্তীর্ণ হলেও গান হিসেবে ঐ আবেদনটুকু রাখতে ব্যর্থ হতে পারে। কবিতার সেই ঝামেলা নেই।

একটা উদাহরণ দিই। সিলিঙে ঝুলছে রূপবতী লাশ, মহাশূন্যের মতো একা। গানের এই জায়গাটুকুর পরিবেশন গোটা গানের অন্য যে কোনো জায়গা থেকে প্রবল, কিন্তু মহত্তর কী? যে দৃশ্যটি আমার মাথায় তৈরি হয়, আমি গানে সেরকম দৃশ্য পেলে হোঁচট খাই। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, এমন তো হচ্ছে, তাহলে গানেই বা কেন থাকবে না? আমি কোনো পরিশুদ্ধি আন্দোলনের প্রস্তাব করছি না, শুধু বলছি, এই যে দৃশ্যটি আমি গান হিসেবে (এবং সেই সাথে বিনোদন হিসেবে) গ্রহণ করছি, কেন করছি? আমি একবার শুনবো, দশবার শুনবো, একশোবার শুনবো, আমার কাছে এই দৃশ্যের আবেদনের সাথে তখন আমার যাপিত জীবনের গান-শোনা, বিনোদিত স্মৃতি জড়িয়ে যাবে।

এই যে সিলিং থেকে রূপবতী লাশ মহাশূন্যের মতো একা ঝুলছে, আমি একে নিরাশাবাদী প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছি। তীব্র কোনো খারাপ লাগার মতো কিছু পরিবেশনের গুণে বিনোদনের উপলক্ষ্য হয়ে উঠছে, মনে হয়েছে আর কিছু করতে পারছি না এসব দৃশ্য নিয়ে, এইটা নিয়ে একটা গান গেয়ে ফেলি।

এরকম ছোটো ছোটো উদাহরণ বার বার পেয়েছি বাকি গানগুলি শুনতে শুনতে। "তোমার আমার যৌথ ডানার আকাশ" এর মতো প্যাশনেট, প্রেমরঞ্জিত কথাগুলি ঢেকে গেছে একটা হিচককীয় সুরের আবহে, এমনও ঘটেছে ঘন ঘন। আমি বলছি না কোনো গানেই প্রেম নেই, ক্রোধ নেই, মুক্তি চেয়ে আকুতি নেই, কিন্তু গানগুলি অনেকবার শুনে আন্ডারলাইন চোখে পড়েছে নিরাশার নিচেই।

তবে যেটা শুরুতেই বলেছি, এ একেবারেই ব্যক্তিগত উপলব্ধির ব্যাপার। অন্যের মুগ্ধতা নষ্ট করার কোনো চেষ্টা নেই আমার। বরং নির্বাণ আর রঙিন ফেরেশতার মতো আরো অনেকগুলি গান শোনার প্রত্যাশা জন্মেছিলো। মেঘদলের কাছে স্বাভাবিকভাবেই আমার চাওয়া বেশি থাকবে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রাহিন হায়দার এর ছবি

এই যে সিলিং থেকে রূপবতী লাশ মহাশূন্যের মতো একা ঝুলছে, আমি একে নিরাশাবাদী প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছি। তীব্র কোনো খারাপ লাগার মতো কিছু পরিবেশনের গুণে বিনোদনের উপলক্ষ্য হয়ে উঠছে, মনে হয়েছে আর কিছু করতে পারছি না এসব দৃশ্য নিয়ে, এইটা নিয়ে একটা গান গেয়ে ফেলি।

যতটুকু বুঝলাম, গান বা সঙ্গীতের কাছে আপনার চাহিদার ব্যাপারটাই আমারটার থেকে আলাদা। আমি নিজেও ধরতে পারিনি আসলে কী চাই আমি গানের কাছ থেকে। আপনি যত সহজে তা ব্যাখ্যা করতে পারলেন, আমি পারব না। তবে শিল্পীকে গান গাওয়ার জন্য বোধহয় দোষ দেয়া যায় না, যার যা ক্ষেত্র।

এ একেবারেই ব্যক্তিগত উপলব্ধির ব্যাপার

ইহাই সার। :)
...............................
অন্ধকারে অন্ধ নদী
ছুটে চলে নিরবধি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মেঘদল আর শিরোনামহীনের মতো দুয়েকটি ব্যান্ডকে ভালো লাগে সম্পূর্ণ অন্য কারণে...
হিম্ভাই, বাংলাদেশের এই সময়ের গানের খবর যদি রাখেন তাহলে সেই 'অন্য কারণ' আপনাকে আর বলে দিতে হবেনা...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রায়হান আবীর এর ছবি

এই লেখাটা পRe বুঝলাম, কেন ধর্ম নিয়ে হাজার ষৌক্তিক সমালোচনা করলেও ধার্মিকদের কিছু হয়না। :-D

তবে দুই একটা কথা বলার আছে। কিন্তু মোবাইল দিয়ে টাইপ করা কষ্ট ভীষণ। ধার্মিকদের মতো কেটে পRলাম আরকি! :-D


পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা

পেন্সিলে আঁকা পরী এর ছবি

তোমার আর আমার এক দশা, মোবাইল দিয়ে টাইপ করা কষ্ট ভীষণ!;) তবে আমাদের পক্ষে ভ্রম জবাব দিয়ে দিয়েছে :-P মুমিন মুমিন ভাইভাই(বোন) ;)

-------------------------------------------------------
আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নীরবে ফিরে চাওয়া, অভিমানী ভেজা চোখ।

-------------------------------------------------------
আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নীরবে ফিরে চাওয়া, অভিমানী ভেজা চোখ।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আজকাল বেশ কয়েকটা বাংলা রেডিও শোনা হয়। ঘরে যতক্ণ থাকি ওগুলো বাজতে থাকে। তুফান, ঢাকা, গুনগুন, এফ এম ৮৯.৬, মেট্রো ইত্যাদি।

ঐসব রেডিওতে যাদের গান শুনি তাদের (অর্ণব সহ) ৮০ ভাগ শিল্পীই সূরে গান না (Notes এর ওপরে থাকে না গলা)! সূরে গান গাওয়াটা গানের অ আ ক খ -র মতন বিষয়।

.... ... মেঘদলের সেই সমস্যা নাই। অন্তত সূরে গাইলো বলেই মনে হল :-) 'নির্বান'-টাই আপাতত শোনা হল। আমার কাছে মোটামুটি।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

শুনলাম, ভালো লাগে নাই, লিরিক্স ভালো, মাগার মিউজিকে কেমন একস্টিক আলকেমির প্রভাব খুব বেশি বলে মনে হল। ভোকাল আরো ভালো কাজ করতে পারত বলে মনে হল। কয়েক জায়গায় বেসুরা লাগল। ২ টা অ্যাল্বামই কেমন, সম্ভবত শুনতে শুনতে ভালো লাগে সবার। আমার আবার সমস্যা হল, প্রথম বারে কিক না পাইলে আমি ২য় বার শুনি না।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আমি শুনি নাই- তারেক ভাই জোর করে একটা আমার মোবাইলে ঢুকায়া দিসে; ঐটা একটু শুনে আর ভাল্লাগে নাই...।সুরটাই ক্যামন বিষাদ বিষাদ...

______________________________________________________

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

সিরাত এর ছবি

ওরেব্বাপরে! :)

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অ্যালবামটা খুব খারাপ লাগে নাই। তবে অ্যালবামের চাইতেও লেখাটা বেশি ভাল্লাগসে। :-D
__________

একটু যোগ করি, মেঘদলের 'নেফারতিতি' শুনসেন? আমার কাছে মেঘদল খুউব যে ভাল্লাগে, তা না। তবে এই গানটা মারাত্মক ভাল্লাগে।

শঙ্খচিল  এর ছবি

আমি বোধহয় একমাত্র শ্রোতা যার 'কুমারি' গানটা ভালো লেগেছে। অবশ্য এই গানটার পিছনে আমার ব্যাক্তিগত একটা ইতিহাস আছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।