টুটুলের চিঠি লিখতে যে খুব ভালো লাগে, এমনটা নয়। কিন্তু বাসার লোকজন এক এক সময় যা করে, তা চিঠি লিখে না জানিয়ে চুপ করে বসে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। টুটুল প্রতিবাদী আত্মা। তবে যেসব জায়গায় প্রতিবাদ করলে একটু সমস্যা হয়, কিংবা কোনো লাভ হয় না, সেসব জায়গায় সে মুখ বুঁজে সব সহ্য করে নিয়ে বড়বুকে চিঠি লিখতে বসে পড়ার ফাঁকে।
টুটুল বড়বুকে চিঠি লেখে বড়বুর দিয়ে যাওয়া প্যাডের কাগজে। কাগজগুলি খুব সুন্দর, পাতলা, ধবধবে সাদা, কিন্তু কোথাও না কোথাও একটা বিশ্রী ওষুধের ছবি থাকবেই থাকবে। টুটুল একটা স্কেল বসিয়ে সাবধানে সেই ছবিগুলি ছিঁড়ে ফেলে দেয়। তারপর একদম সাদা কাগজে লিখতে বসে।
বড়বুকে চিঠি লিখতে গেলে টুটুল ড্রয়ার থেকে ফাউন্টেন পেন বার করে আনে। সে এমনিতে লেখে বলপয়েন্ট পেন দিয়েই, কিন্তু কালির গন্ধ তার কাছে খুব ভালো লাগে। বড়বুকে চিঠি লেখার সময় কাগজ আর কালির গন্ধ মিলিয়ে একটা টাটকা, চনমনে গন্ধ ভাসে আশেপাশে, যত বেশি লেখা তত বেশি গন্ধ। কিন্তু ফাউন্টেন পেন অনেক ভারি লাগে টুটুলের কাছে, বেশিক্ষণ লিখলে হাত টনটন করে তার। অনেক সময় লাইনগুলি বেঁকে একটু নিচে নেমে যায়, পরের লাইনটা আবার একটু নিচ থেকে শুরু করে সেটাকে সোজা করতে হয়।
এত ঝামেলা করেও টুটুল চিঠি লেখে। কারণ সে প্রতিবাদী আত্মা।
সেদিন যেমন মায়ের সাথে দূরে একটা বাসায় গিয়ে টুটুলের ভালো লাগছিলো না। কেমন যেন অন্ধকার অন্ধকার বাসা, টুটুলের সমবয়সী কেউ নেই সেখানে, একেবারেই ছোটো একটা বাচ্চা একটু পর পর ট্যাঁ করে চিৎকার করে ওঠে, আর তার মা তাকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ ভুলিয়েভালিয়ে আবার ছেড়ে দেয়। টুটুলের ছোটবুর বয়সী একটা মেয়ে একটু পর পর এসে টুটুলের দিকে কড়াচোখে তাকিয়ে আবার কোথায় যেন চলে যায়। টেলিভিশনও বন্ধ। কোনো বই নেই পড়ার জন্যে। টুটুল আনমনে এ ঘর সে ঘর করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে এক পর্যায়ে মায়ের পাশে গিয়ে ফিসফিস করে বলছিলো, "মা চলো বাসায় যাই। ভাল্লাগছে না।"
মা টুটুলের কথায় পাত্তা না দিয়ে হড়বড় করে সেই মহিলার সাথে কী যেন কথা বলেই যাচ্ছিলো, বলেই যাচ্ছিলো। তাই টুটুল বাধ্য হয়েই একটু গলা চড়িয়ে মাকে অনুরোধ করছিলো বারবার। এক পর্যায়ে মা চটেমটে সবার সামনেই কষে ধমক দিয়েছিলো টুটুলকে, "আহ, থামলি! অসহ্য এই ছেলেটা! একটু যদি শান্তি দিতো!"
টুটুল বাড়ি ফিরে মুখ গোঁজ করে চিঠি লিখতে বসেছিলো বড়বুকে। কাজটা মা ঠিক করেনি। বড়বুর উচিত মাকে একটু শাসন করা। এবারের ছুটিতে এসেই যেন সে মাকে বকে দেয়।
বাবাকে টুটুল অনেক ভয় পায়, কিন্তু বাবার নামে কিছু লিখতে সে সাহস পায় না। তাছাড়া বড়বুও মনে হয় বাবাকে একটু ভয় পায়, তাই টুটুল বাবার নামে অভিযোগগুলি সরাসরি লেখে না। যেমন সেদিন বাবা তার ওপর অনেক রাগ করেছে, সে নাকি লেখাপড়া করে না, সে নাকি শুধু খেলে আর টিভি দেখে, তাই বাবা অনেকক্ষণ বসিয়ে বসিয়ে ট্র্যান্সলেশন করিয়েছে টুটুলকে। "বালকটির আচরণ দেখিয়া তাহার পিতা বাকরুদ্ধ হইয়া পড়িলেন", এ ধরনের শুধুশুধু কঠিন কঠিন সব সেনটেন্স।
কিন্তু সবচেয়ে অসহনীয় যার আচরণ, সে হচ্ছে ছোটবু। ছোটবু হিংসুটির হদ্দ, আর অতি চতুর, তাই সে সবসময় টুটুলকে শোষণ নিপীড়নের ওপর রাখে। সে টুটুলকে কিলঘুষি মারে, কিন্তু অনেক অত্যাচার সহ্য করার পর উল্টে টুটুল মোটে একটা কিল মারতেই সে হাউমাউ করে গড়িয়ে কেঁদে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যে মা দৌড়ে এসে টুটুলকে চটাশ করে চড় বসিয়ে দেন। টুটুল যতই বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে, সে মোটে একটা মেরেছে, আর ছোটবু অনেকগুলি, কিন্তু মা শোনে না। "মেয়েদের গায়ে হাত তুলিস, ছোটলোক কোথাকার" বলে চেঁচামেচি করে। আর ছোটবু এত বড় শয়তান, সে সন্ধ্যাবেলা বাবা অফিস থেকে ফিরলে একটু পর তার কাছে গিয়েও কাঁদো কাঁদো গলায় নালিশ দেয়। বাবা তারপর টুটুলকে অ্যায়সা কড়া ধমক লাগায় যে টুটুলের মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। এরপর আর টিভি দেখার জো থাকে না, ট্র্যান্সলেশন করতে হয়।
ছোটবু আর টুটুল পাশাপাশি টেবিলে বসে পড়ালেখা করে। টুটুল তার ড্রয়ারটায় নিজের সবকিছু রাখে, সে একটু উঠে আশেপাশে কোথাও গেলে ছোটবু তার ড্রয়ার হাঁটকে রেখে দেয়। কিছু বললে বলে, গুছিয়ে দিলাম তো! টুটুল অনেক রেগে যায়, কারণ সে তো ছোটবুর ড্রয়ার হাঁটকাতে যায় না! আর ছোটবুর কী দরকার পড়েছে তার ড্রয়ার গোছানোর? কাজের সময় ছোটবুকে বললে সে কিছু করে দেয় না, কেবল গায়ে পড়ে বদমাইশি করে। ড্রয়ারে একবার একটা বড় তেলাপোকা কীভাবে যেন ঢুকে বসে ছিলো, টুটুল এতবার করে গিয়ে ছোটবুকে বলেছে তেলাপোকাটা বের করে দেবার জন্যে, ছোটবু শোনেনি, সে দাঁত বের করে হাসে আর বলে, তোর ড্রয়ার তুই পরিষ্কার কর!
রাতে মাঝে মাঝে টুটুলের বাথরুম পায় খুব, কিন্তু তার ভয় লাগে একা যেতে। সারাটা বাড়ি তখন নিঝুম হয়ে থাকে, পাশের গাছগুলি বাতাসে খড়খড় শব্দ করে, আর রাতে বাথরুমে একটা মাকড়সা কোত্থেকে যেন বের হয়ে আসে। সে ছোটবুর কাঁধ ধরে ঝাঁকায়, ছোটবু ছোটবু, একটু আসবি আমার সাথে? ছোটবু ঘ্যানঘ্যান করে, তাকে ঠেলে গুঁতিয়ে তুলতে হয়। সে হাই তুলতে তুলতে বাথরুমের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ, টুটুলের বাথরুম শেষ হলে তারপর সে আলো নিবিয়ে দিয়ে আবার শুয়ে পড়ে। কিন্তু সে এতবড় পাষণ্ড যে সেদিন টুটুল বাথরুমের ভেতরে থাকতেই আলো বন্ধ করে দিয়েছে। অন্ধকারে ভয়ে টুটুলের দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।
ছোটবুর নামে অভিযোগ গুণে শেষ করার নেই, তাই টুটুল একটা রুল টানা খাতার পেছনে সব সংক্ষেপে টুকে রাখে।
ছোটবু এত বড় বদমাশ যে সেই রুল টানা খাতাটার পৃষ্ঠা একদিন ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। কত কত নোট ছিলো তাতে!
টুটুলের স্মৃতিশক্তি ভালো। সে একেবারে প্যাডের পাতায় আবার সব লিখতে থাকে গুটি গুটি হরফে। বাবাকে দিয়ে একবার বানান দেখিয়ে নিতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু তার চিঠি কেউ পড়ুক, এটা টুটুল চায় না।
এ কারণেই টুটুল কখনো চিঠিগুলি বাবাকে পোস্ট করতে দেয় না। বাবা যদি খুলে পড়ে? মাঝে মাঝে বড়বুকে লেখা দুয়েকটা এমনি চিঠি সে বাবাকে দেয়, যেমন ছোটবু দেয়, বাবা সব ক'টা একটা হলুদ খামে ভরে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু বাবা নিশ্চয়ই পড়ে, তারা কী লিখেছে।
টুটুল তাই পুরনো চিঠির খামগুলি জমিয়ে রাখে, বুবুকে লেখা চিঠিগুলি সে সেগুলিতে ভরে রাখে। ড্রয়ারে রাখতে সে সাহস পায় না, ছোটবু ড্রয়ার হাঁটকায়। তোষকের নিচে সে রাখতো আগে, কিন্তু ছোটবু মাঝে মাঝে তোষকের নিচটাও হাঁটকায়। টুটুল তাই চিঠি লেখা শেষ হলে গিয়ে মাকে ধরে ঝুলোঝুলি করে, আলমারিতে একটা ড্রয়ারের মালিকানা টুটুলের, সেটাতে সে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে রাখে চিঠিগুলি।
ছুটিতে বড়বু ফেরে হোস্টেল থেকে, দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয় তারা বাসায় ফিরতে ফিরতে, সেদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে টুটুলের পা টনটন করতে থাকে। রাস্তায় সব ক'টা হুড তোলা রিকশাকেই তার মনে হতে থাকে বড়বুর রিকশা। কিন্তু সেসব রিকশা সব আস্তে আস্তে তাদের গেট পেরিয়ে ডানে বাঁয়ে সোজা অন্যদিকে চলে যায়, অনেক অনেকক্ষণ পর বড়বুর রিকশাটা ঢোকে বাসায়। টুটুল দৌড়ে গিয়ে বড়বুকে জাপটে ধরে, তার ব্যাগটা নিজেই টেনেটুনে ওপরে নিয়ে আসে, তারপর মায়ের কাছে গিয়ে খোঁচাতে থাকে আলমারিটা খুলে দেবার জন্যে। মা চটে যায়, বলে, আহ মাত্র বাসায় এলো তো, পরে দেখাবি, পরে দেখাবি। রাতে খুলে দিবো, ঠিকাছে? এখন যা।
টুটুল তারপর খেলতে চলে যায়, কিংবা বড়বুর গোসল করা শেষে তার সাথেই খেতে বসে এক পাতে। মা বড়বু ছোটবু কলকল করে কথা বলতে থাকে, সন্ধ্যায় বাবা বাজার নিয়ে বাসায় ফেরে উৎফুল্ল মুখে, টুটুলের আর সময় হয় না চিঠিগুলি দেখানোর।
রাতে খাবার পর টুটুল মাকে গিয়ে ফিসফিস করে বলতে থাকে আলমারি খুলে দেবার জন্যে। মা খুলে দিলে সে ঐ প্লাস্টিকের ব্যাগটা নিয়ে ছুটে যায় বড়বুর কাছে। বড়বু ছুটিতে বাড়ি এলে টুটুল আর ছোটবুর সাথে বড় বিছানাতে ঘুমায়, সে কোন পাশ ফিরে শোবে সেটা নিয়ে টুটুল তার ছোটবুর সাথে ঝগড়া করে। টুটুল বিছানায় উঠে ব্যাগ থেকে চিঠিগুলো বের করে, তারপর বড়বুকে পড়তে দেয়। ছোটবু হিহি করে হাসে, বলে, মুদির হিসাব লিখে রেখেছে! শয়তান, বুবুর কাছে চুকলি কাটে খালি!
টুটুল চোখ রাঙিয়ে শুয়ে থাকে বুবুর পাশে।
টুটুলের বড়বু হয়তো সেই ভোরে ঢাকায় ট্রেনে চেপে বসেছে, সারাটা দিন জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছে, ঘুমে তার চোখ বুঁজে আসে, কিন্তু সে টুটুলের প্রত্যেকটা চিঠি খুলে খুলে পড়ে, পুরানো ভাঁজ খোলার পর আবারও কালির মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ঘরের বাতাসে। বাবা ভারি গলায় ডাকে কয়েকবার, "ঘুমাও না মা? আলো বন্ধ করে শোও!" বড়বু বলে, "এইতো বাবা, যাই!" নচ্ছাড় ছোটবু বলে, "বাবা, বুবু টুটুলের চিঠি পড়ে! অনেকগুলি চিঠি!"
টুটুল জোর করে চোখ টেনে জেগে থাকে, সব ক'টা চিঠি পড়া শেষ হবার পর সে ক্ষীণ কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "পড়েছো? পড়েছো সব?"
টুটুলের বড়বু উঠে গিয়ে আলো নিবিয়ে দিয়ে এসে টুটুলকে জড়িয়ে ধরে বলে, "হ্যাঁ, সব পড়েছি! কালকেই সব বিচার করবো। এখন চলো ঘুমাই!"
টুটুল বড়বুকে জাপটে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে, তার খুব হালকা লাগে সবকিছু।
মন্তব্য
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
অসাধারণ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চমৎকার লাগলো। আপনার অনেক গল্পেই একটা মৃদুসুরে সমাপ্তি হতে দেখি, সেটা খুব ভালো লাগে, এবং যথাযথ মনে হয়।
সমাপ্তি ভালো লেগেছে, তৃপ্তিদায়ক
.........................................
I think what I think because that's how I am. You think what you think because that's how you are.
...........................
Every Picture Tells a Story
চমৎকার পিচ্চিতোষ গল্প...
______________________________________________________
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
খুব মায়া মায়া গল্প...
- পুরো গল্পটা জুড়েই ছোট্ট টুটুল আমার চোখের সামনে দিয়ে ছুটোছুটি করে গেলো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভীষণ মিষ্টি লাগলো।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
ছোটদের গল্প হিসেবে চমৎকার হয়েছে !
গল্পটা বড়দের পড়ার জন্যে হলে কোন কথা নেই। যদি ছোটরা এর প্রধান পাঠক হয় তাহলে ছোট্ট একটু নিবেদন রাখি বিবেচনার জন্য। শোষণ, নিপীড়ণ, বদমাইশ জাতীয় খটমটে শব্দগুলো বোধয় শিশু-মনস্তত্ত্বে ঠিক মানায় না। একটু হালকা-জাতীয় শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা গেলে মনে হয় গল্পটা নিখুঁত হয়ে যাবে।
এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আহাহাহাহাহাহ............ কি মিষ্টি গল্পটা। মন ছুয়ে গেল।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
চোখ ছলো ছলো, ঠোঁটের কোনে হাসি-----বেশ ভালো হয়েছে গল্পটা।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
দারুন লাগল।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
খুব ভালো লাগল। পুরো গল্পটা জুড়েই টুটুল আমার চোখের সামনে দিয়েও ছুটোছুটি করে গেলো। আর ছোট্ট টুটুল, তার বড়বু , এমনকি ছোটবুর জন্যও অনেক , অনেক মায়া লাগল।
হিমুদা, বড় বোন/ বুবু/ দিদি/দি কে নিয়ে কোন লেখা পেলে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। বোঝার চেষ্টা করতাম... আদর মাখা এই পারিবারিক চরিত্রটি নিয়ে বাংলা সাহিত্যের অনেক মহারথিরা অনেক কালি খরচ করেছেন। আমি নাদান ইন্সানের মতো শুধু পড়ে যেতাম আর নিজেকে ভাগ্যবিড়ম্বিত এক অসহায় ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম। অনেক অনেক দিন হলো এই বিষয়ে আর পড়ি না... নিজেকে প্রবোধ দেই, 'অনেকতো বড় হইস; আর কতদিন আফসোস করবা?!?'
এই পোস্টটা আবার সেই পুরোন ঘাঁ এর উপর নুনের ছিটা দিলো।
অসাধারণ এই পোস্টটার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তঃস্থল হতে ধন্যবাদ।
মনজুর এলাহী
খুবই মিষ্টি একটা গল্প....
কী অপরূপ মায়াময় একটা গল্প! খুব ভালো লাগলো!
আরেকটু হলে চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল এমন মৃদু ঝিরঝিরে বাতাসের মত গল্পটা।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
ভালু
লেখাটা পড়তে পড়তে চোখ ভিজে উঠলো আমার ছোট ভাইএর কথা মনে পড়ে। যদিও সে এখন বড় হয়ে গেছে, নালিশ করা বন্ধ হয় না।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
আমার বড় বোন যখন ময়মনসিংহ মেডিকেলে পড়াকালীন তাকে মাঝেমধ্যে চিঠি লিখতাম।বাবা মা ফোনে কথা বলতো প্রতি সপ্তাহে, নির্দিষ্ট সময়ে। মুঠোফোন তখনো এতটা সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। সেই সময় ওই ছিলো পরিবারের একমাত্র সদস্য যে বাসায় থাকতোনা। চিঠি দিয়ে চমকে দিয়ে ওর মন ভালো করে দেব ভেবেই চিঠি লেখা শুরু করেছিলাম। একবার কিছু পুরনো কাগজপত্রের মধ্যে কতগুলো অনেক aerogram পেয়েছিলাম। আগে কখনো aerogram দেখি নাই। সবকিছু বোঝার পর নগদে নগদে চিঠি লিখে ডাকবাক্সে ফেলে দিয়ে আসলাম। কয়েকদিন পর ফোনে শুনলাম যে ওই aerogram এত পুরনো যে ওতে ঠিক শুল্ক বসানো ছিল না আর তাই ডাকপিয়ন নাকি ওকে খুজে বের করে বাকি টাকা আদায় করেছিলো! ও ময়মনসিংহ থাকতে থাকতেই আমি চলে এলাম আরো অনেক দূরে। এখন e-mail, facebook, sms, chat etc. থাকলেও কথা বলি কালেভদ্রে। যোগাযোগের আলস্য আমাকে জড়িয়ে রাখে আষ্টেপৃষ্ঠে।
আপনার পুরনো লেখা পড়তে পড়তে এই লেখায় এসে আগের সেই দিনগুলো আবার ফিরে এলো। ব্লগে পাঁচতারা দিতে পারলাম না কেবল কৃতজ্ঞতা থাকলো।
নতুন মন্তব্য করুন