পিচ্চিতোষ গল্প ০১২: গুড্ডুর সাইকেল শেখা

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বুধ, ০৯/১২/২০০৯ - ৫:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


গুড্ডুর বন্ধু বাবু মস্ত একটা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে।

গুড্ডুরা স্কুল ছুটির পর অনেকক্ষণ খেলে। স্কুলের মাঠে মর্নিং শিফটের ছেলেরা খুব একটা খেলাধূলার সুযোগ পায় না, হেডমাস্টার তাদের মেরেবকে খেদিয়ে দ্যান। বাসায় গিয়ে আবার খেয়েদেয়ে পড়তে বসতে বলেন। অ্যাসেম্বলি মাঠের সবুজ ঘাসগুলি গুড্ডুদের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচায়।

অ্যাসেম্বলি মাঠে না হোক, জিমনেশিয়ামের সামনে ছোট্ট মাঠটুকুতে তো অন্তত খেলতে দেয়া উচিত হেডুর? হেডু মানে হেডস্যার। গুড্ডুরা সেখানেও খুব একটা খেলার সুযোগ পায় না, ইয়া মোটা বেত নিয়ে হেডু তেড়ে আসেন। তখন যে যেদিকে পারে চোঁ-চাঁ দৌড় মারতে হয়। ঝানুরা দেয়াল টপকায়, গুড্ডু একটু ছোটোখাটো বলে তাকে পেছনের গেটের দিকে ছুটতে হয়। সে প্রায় কয়েকশো মিটারের ধাক্কা। গুড্ডু ভালো ছুটতে পারে বলে এখনও পর্যন্ত তাকে হেডুর ধোলাই খেতে হয়নি।

বেশ কিছুদিন ধরে গুড্ডুরা তাই সার্কিট হাউসের প্যারেড গ্রাউন্ডে খেলছে। ওখানে কেউ তেমন একটা জ্বালাতন করে না। তারা একটা ছোটো বল দিয়ে ইচ্ছেমতো ফুটবল খেলে, তারপর একসময় যে যার বাসার দিকে চলে যায়।

বাবু বাসায় যায় পাহাড়ের মতো উঁচু সাইকেলটায় চড়ে। বাবু খুব একটা লম্বাচওড়া নয়, গুড্ডুর চেয়ে কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে তার মাথা, কিন্তু ওরকম বড়সড় একটা সাইকেল সে নিপুণভাবে চালানো রপ্ত করে ফেলেছে। ওটা নাকি তার ভাইয়ের সাইকেল। আবার তার বাবারও সাইকেল। বাবুদের বাড়িতে সক্কলে ওটাতে চড়ে।

গুড্ডুর খুব শখ ঐ সাইকেলটা চালানোর, কিন্তু সাইকেল চালানো সে জানে না।

বাবু তাকে রোজই সাধে, "চালাবি তুই? এটা নিয়ে একটা চক্কর মেরে আয়। কিন্তু খবরদার রাস্তায় উঠবি না।"

গুড্ডু প্রথম দিনই ধড়াশ করে আছাড় খেয়ে কনুইয়ে চোট পেয়ে আর সাহস করেনি। বাসায় ফেরার পর মা চেঁচাচ্ছিল, "এতোখানি জায়গা ছড়ে গেলো কীভাবে রে শয়তান? কোথায় কী শয়তানি করতে গিয়ে চামড়া খুলে রেখে এলি?"

বিকেলে বাবু খেলতে আসে পিন্টুদের মাঠে। তার সেই ঐরাবতের মতো সাইকেলে চড়ে। পিন্টুদের মাঠে এন্তার ঘাস, গুড্ডু তাই একদিন সাহস করে বাবুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে সাইকেলটা নিয়ে ঠেলতে ঠেলতে ঘেসো জায়গায় চলে এলো। বাবু স্কুলের গল্প বকবক করে বকতে বকতে গুড্ডুর সাথে আসে।

"আমাকে ধরবি একটু?" গুড্ডু বাবুকে বলে।

বাবু মাথা নাড়ে। "ধরলে সাইকেল চালানো শেখা যায় না।"

গুড্ডু বলে, "আরে, আমি পড়ে যাবো তো!"

বাবু হাসে। বলে, "একবার দুইবার তো পড়বিই। তারপর আর পড়বি না।"

গুড্ডু আরো অনুরোধ করে বাবুকে, কিন্তু বাবু সাইকেলচালনশিক্ষায় অটল, সে একটা চুইংগাম বের করে চুপচাপ চিবায় আর হাত দিয়ে ইশারা করে।

গুড্ডু বহুকষ্টে সেই সাইকেলে চড়ে, কিন্তু সীটে বসতে পারে না, রডের ফাঁক দিয়ে পা ঢুকিয়ে কোনোমতে প্যাডেলে পা রাখে। এরপর চাপ দিয়ে একটু সামনে আগাতেই ... ধড়াশ! মাটি কাঁপিয়ে সে সাইকেল নিয়ে পড়ে, বাবু হো হো করে হাসে।

গুড্ডু উঠে পড়ে গোমড়ামুখে। বাবু আবার ইশারা করে। আবার চড়ে এগো।

বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ওরকম পাহাড়ের মতো একটা সাইকেল কব্জা করতে পারে না গুড্ডু। সে একবার ডানে, তো আরেকবার বামে হেলে পড়ে যায়।

বাড়ি ফিরে সে সন্ধ্যেবেলা বাবাকে বলে, "বাবা জানো, আজকে সাইকেল চালানো শিখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না। পড়ে যাই শুধু।"

গুড্ডুর বাবা একটু গম্ভীর হয়ে কী যেন ভেবে বললেন, "কোথায় শিখতে গিয়েছিলে?"

গুড্ডু অনেক উৎসাহ নিয়ে খুলে বলে বাবাকে, কীভাবে বাবু রোজ সাইকেলে চড়ে স্কুলে আসে আর বাড়ি ফেরে, ওরকম বড় একটা সাইকেল চালাতে যে তার কোনো অসুবিধা হয় না, আর কীভাবে বাবু চালাতে গিয়ে কয়েক পা এগোতে না এগোতেই আছাড় খেয়ে পড়ে।

গুড্ডুর বাবা গম্ভীর মুখে বললেন, "খবরদার সাইকেল নিয়ে রাস্তায় যাবে না। মনে থাকবে তো? মাঠে চালাচ্ছো চালাও। শিখতে পারলে খারাপ কী!"

গুড্ডু আবারও পরদিন খেলার মাঠে বাবুকে পাকড়াও করে। বাবু সহাস্যে রাজি হয়। দুইজনে সাইকেল ঠেলে নিয়ে আসে ঘেসো জমির ওপর।

গুড্ডু আজ আছাড় খায়, কাল আছাড় খায়, কিন্তু একদিন সে ঠিকই শিখে ফেলে! বাবুর ঐ বিরাট সাইকেলটা নিয়েই সে গোটা মাঠে চক্কর খায়, ব্রেক কষে, নামে, আবার ওঠে, আবার চক্কর খায়। বাবু এসে পিঠ চাপড়ে দেয়। বলে, "শিখে গেছিস। এখন রাস্তায় চালিয়ে শিখতে হবে।"

গুড্ডু একটু ভয় পায়, মাথা নাড়ে। বলে, "না, বাবা নিষেধ করেছে। এখনও পারিনা পুরোপুরি।"

বাবু বলে, "একটা সাইকেল কিনে ফ্যাল। কয়েকদিন চালালেই দেখবি রাস্তায় চালাতে পারছিস। কঠিন না।"

গুড্ডু বাড়ি ফিরে মা-কে ধরে। "মা একটা সাইকেল কিনে দিতে বলো না বাবাকে। চালিয়ে স্কুলে যাবো আর আসবো। খেলতেও যাবো।"

গুড্ডুর মা বলেন, "তুই আবার কী সাইকেল চালাবি?"

গুড্ডু ঝুলোঝুলি করতে থাকেন, গুড্ডুর মা বিরক্ত হয়ে ধমক দ্যান।

সন্ধ্যের পর বাবা অফিস থেকে ফেরেন, গুড্ডু গিয়ে মায়ের কাছে ঘুরঘুর করতে থাকে। কিন্তু মা কিছু বলেন না।

শেষে অধৈর্য হয়ে গুড্ডুই বাবাকে বলে, "বাবা আমাকে একটা সাইকেল কিনে দাও না। স্কুলে যাবো। খেলতেও যাবো চালিয়ে।"

গুড্ডুর বাবা গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষণ গুড্ডুর দিকে তাকিয়ে রইলেন, তারপর বললেন, "না, সাইকেল চালাতে হবে না তোমাকে। স্কুলে রিকশায় করে যেও। আর খেলতে যেতে সাইকেল লাগে নাকি? হেঁটেই তো যেতে পারো।"

গুড্ডু বলে, "না বাবা, আমি সাইকেল চালানো শিখে গেছি! খেলার মাঠে সেদিন অনেকক্ষণ চালিয়েছি। স্কুলেও যেতে পারবো। রাস্তাতেও চালাতে পারবো, বাবু বলেছে।"

গুড্ডুর বাবা বলেন, "না!"

গুড্ডু বলে, "দাও না বাবা! তুমিও চালাতে পারবে তো মাঝে মাঝে!"

গুড্ডুর বাবা এবার কড়া গলায় ধমকে ওঠেন, "তোমাকে না বলেছি, এক কথা বারবার বলবে না? বললাম সাইকেল চালাবে না, বাস, চালাবে না!"

গুড্ডুর মা এসে গুড্ডুকে সরিয়ে নিয়ে যান।

গুড্ডুর চোখে পানি চলে আসে, সে চোখ ডলতে ডলতে মায়ের সাথে রান্নাঘরে চলে আসে। কান্নাজড়ানো গলায় বলে, "বাবাকে বলো না মা বুঝিয়ে ... আমি তো সাইকেল চালাতে পারি!"

গুড্ডুর মা মলিন মুখে বলেন, "বাবাকে সাইকেল সাইকেল করে বিরক্ত কোরো না গুড্ডু। তোমার বাবার কাছে এখন পয়সা নেই।"

গুড্ডুর মনটা খারাপ হয়ে যায়। কেন তারা গরীব? কেন বাবা হেঁটে হেঁটে অফিসে যায়? কেন বাবার কাছে একটা সাইকেল কেনার টাকা নেই? বাবাও তো মাঝে মাঝে চালাতে পারতো সেটা।

গুড্ডু ঘুমিয়ে পড়ে।

মাঝরাতে গুড্ডুর ঘুম ভেঙে যায়। সে শুনতে পায়, পাশের ঘরে তার বাবা হাউমাউ করে কাঁদছেন। সে শুনতে পায়, মা চাপা গলায় সান্ত্বনা দিচ্ছে বাবাকে, দিও, পরে কিনে দিও, একদিন না একদিন একটা সাইকেল তো কিনে দিতে পারবে ছেলেকে? কাঁদে না। কাঁদে না।

গুড্ডুর বুকের ভেতরটা ঠাণ্ডা হয়ে আসে, সে গুটিশুটি মেরে কাঁথার নিচে শুয়ে থাকে। বাবা কাঁদছে? বাবা তো কাঁদে না। বাবা তো বড় মানুষ, বাবা কেন কাঁদে?

পরদিন খেলার মাঠে খেলা শেষে বাবু ডাকে, গুড্ডু, সাইকেল চালাবি?

গুড্ডু মাথা নাড়ে। বলে, চল সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে যাই আমার বাসা পর্যন্ত, তারপর তুই চলে যাস।

বাবু আপত্তি করে না, তারা দু'জন সাইকেল নিয়ে হাঁটতে থাকে রাস্তা ধরে।

বাবা কাঁদুক, গুড্ডু চায় না। লাগবে না তার সাইকেল।


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

"বাবা কাঁদুক, গুড্ডু চায় না .. লাগবে না তার সাইকেল "
দারুণ !!

-------------------------------------------
"সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু ভাই,
পিচ্চিতোষ গল্পে এতো দুঃখ কেন?
তবে গল্পটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগসে। অসাধারণ। পুরো মুডটা ভিজিয়ে দিলেন।

--নীল ভূত।

হিমু এর ছবি

কিছু গল্পে দুঃখ থাকা ভালো। তাতে পিচ্চিরা বুঝতে পারে, পৃথিবীটা মাঝে মাঝে অন্যরকম।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার সাথে কিঞ্চিৎ দ্বিমত পোষণ করলাম।
গল্পটা আমাদের বড়দের মনে দাগ কেটে দেয়ার মতো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেইসব দুঃখবোধ কি পিচ্চিতোষ গল্পে চারিয়ে দেয়া উচিৎ, যেখানে আমাদের অজান্তেই শিশুমনে ভয়ঙ্কর হিনমন্যবোধের জন্ম হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে ?
শিশু-মনস্তত্ত্ব নিয়ে যাঁরা নাড়াচাড়া করেন তাঁরাই হয়তো ভালো বলতে পারবেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

হিমু এর ছবি

যে শিশু এই গল্প পড়ে হীনমন্যতায় ভুগতে পারে, ধরে নিতে হবে এই গল্প না পড়েও হীনমন্যতায় ভোগার উপাদান তার আশেপাশে আছে। সেগুলি দূর করতে না পারলে এই গল্প এমন কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি করবে না।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রণদীপম বসু এর ছবি

বিষয়টা কি এতো সহজে সমাধান হয়ে যায় ! কে জানে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

হিমু এর ছবি

আসুন তাহলে পাঠ্যসূচি থেকে জসীমউদদীনের "আসমানী" পদ্যটা তুলে দেই।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

আমাগো হেডুর তাড়া আমি কয়েকবার খাইসি। আর হেডু মশায় সবসময় হাতে বেত নিয়েই ঘুরতেন। একবার কাউকে ধোলাই দিলে তাকে হাসপাতালে পাওয়া যাবে পরের দিন এমনভাবে মারতেন। গল্পটা পড়তে পড়তে আমাদের স্কুলের স্মৃতিগুলো মনে আসছিল।

গল্পটা অসাধারণ।
--------------------------------------------------------

--------------------------------------------------------

স্বপ্নহারা এর ছবি

মনটা খারাপ হয়ে গেল...আমাদের সময়ে অবশ্য ছেলের জন্য একটা সাইকেল কেনা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য কঠিনই ছিল!
অফটপিকঃ সারাজীবনে সাইকেল চালানো শিখলাম না...মন খারাপ

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মজা নিয়ে উদ্দেশ্যে পড়া শুরু করেছিলাম। মাঝ রাতে গুড্ডুর ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া পর্যন্ত আশায় ছিলাম বাবা বুঝি সাইকেল কিনে এনে বিছানার পাশে রেখেছে...কিন্তু আগে বুঝিনাই যে আপনি মিথ্যা কথা বলতে পারেন না...

হিম্ভাই, আপনে ভালুনা।
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রেশনুভা এর ছবি
কৌতুহলি [অতিথি] এর ছবি

ভাল লাগল হাসি

ঐরাবত শব্দটা অনেকদিন পর শুনলাম, বুঝতেই পারছেন আমার বাংলা পড়া এখন ব্লগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে!

আরেকটা ধন্দ, "মাথা নাড়া" বলতে কি "হ্যাঁ" বোঝায়, না "না" বোঝায়? কেন যানি এই কনফিউশন আমার অনেক দিনের মন খারাপ

হিমু এর ছবি

ধন্যবাদ। দুটোই বোঝাতে পারে, মাথা কীভাবে নাড়ানো হচ্ছে সেটার ওপর নির্ভর করে হাসি



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

কৌতুহলি [অতিথি] এর ছবি

হাসি
কোন লেখক যখন বলেন "সে মাথা নাড়ল", তখন সাধারণত তিনি কী বোঝাতে চান? সে হ্যাঁ বলল? সে না বলল? নাকি লেখক একটা ধোঁয়াশা রেখে দিতে চাইছেন?

হিমু এর ছবি

একটা সাময়িক প্রশ্ন পাঠকের মনে ঝুলিয়ে রাখার জন্যে। এরপর হয়তো সংলাপ বা দৃশ্য দিয়ে সেই মাথা কীভাবে নড়েছে, সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গল্পে যেমন মাথার মালিক তার বন্ধুর প্রস্তাবের বিপরীতে একটা বিকল্প উপস্থাপন করে বোঝাচ্ছে, তারা মাথা নাড়াটা নেতিবাচক ছিলো।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অবাঞ্ছিত এর ছবি

সুন্দর
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

ইশ্! আমি সাইকেল চালাতে পারি না। তিন তিন বার চেষ্টা দিয়েছিলিম, দুইবার ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটেছিল এবঙ দুইটা প্যান্ট ছিড়ে গিয়েছিল। এর মাঝে একবার প্রায় কেলেঙকারি অবস্থা! সেই থেকে সাইকেল দেখলে সুরু চোখে তাকাই।
----------------------------------------
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার লাগল।

মামুন হক এর ছবি

চমৎকার লাগলো! নাহ্‌ ছোটবেলার সাইকেল স্মৃতি নিয়ে না লিখে আর পারা যাচ্ছেনা।

বালক এর ছবি

দারুন। হাসি

*************************************************************************
ভুল করে যদি পেছনে তাকাই, ভুল ভেবো না
আমি অন্ধ পথিক সামনে- পেছনে কিছুই দেখি না।

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব সুন্দর একটি গল্প...ভাল্লাগছে।
----------------
আরাফাত

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

জটিল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমিও সাইকেল চালাতে পারি না। কেন জানি দ্বিপদী যন্ত্রে আমার আগ্রহ হয় না...

গল্পটা ভালো লেগেছে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

কচি খন্দকারের 'বাইসাইকেল' নাটকটা দেখেছিলেন? মে দিবস উপলক্ষে দেখিয়েছিল। অনেকটা এরকমি, তবে সেটা বড়দের জন্য।

আপনার লেখায় গল্পটা আরো ৃদয়গ্রাহী হয়েছে।

স্পার্টাকাস

হিমু এর ছবি

না রে ভাই, নাটক দেখা হয় না। তবে সাদৃশ্য পেলেন দেখে এখন দেখার আগ্রহ তৈরি হলো।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সাফি এর ছবি

খুব সুন্দর হিমু ভাই । তবে সব গুড্ডুদের এমন রিয়েলাইযেশন আসেনা মন খারাপ

"রডের ফাঁক দিয়ে পা ঢুকিয়ে কোনোমতে প্যাডেলে পা রাখে।"
-- এই সাইকেল চালানোর স্টাইলটা অনেক দিন দেখিনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

মুখে হাসি নিয়ে হেডু কাহিনী পড়তে বসেছিলাম কিন্তু শেষে প্রায় কাঁদিয়ে ছাড়বেন তাতো বুঝিনি। আগে জানলে আপনার এই পোস্টটি পড়া থেকে বিরত থাকতাম হিমু ভাই। ----(বাবা তো বড় মানুষ, বাবা কেন কাঁদে?"----
এস হোসাইন

---------------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের সুখ।"

দুর্দান্ত এর ছবি

সারা বাংলাদেশে স্কুলপড়ুয়া তাবত ছাত্ররা হেডু বলতে এক বান্দাকেই বোঝে। তবুও কেন যে এই লোককে হেডমাস্টার, প্রধান শিক্ষক, প্রিন্সিপাল ইত্যাদির মত বিটখিটে নামে ডাকা হয়। ভেবে দেখুন, ইস্কুলের সবচাইতে বড় অফিসঘরের সামনে বোর্ড ঝোলানো, অমুক তমুক বি এড, এম এড, হেডু চমুক উচ্চবিদ্যালয়। শুনতেই কেমন আপন আপন লাগছে না?
---
বাবাগুলোর এই দশা। এদিকে সন্তানের মুখের ওপর গম্ভীর না। ওদিকে রাতের আঁধারে স্ত্রীর বুকে মাথা রেখে হাঁউমাউ। সন্তানকে সামর্থের কথা মুখফুটে বলতে শিখিনা আমরা। যে ঘুমপাতলা শিশুটি কান্নাশুনে জেগে উঠল, সে না হয় আসল কথাটা জেনে গেল। আর যেগুলোর সহজে ঘুম ভাঙে না, সে তো বাবাকে একজন বাজখাঁই গম্ভীর কড়া মানুষ জেনে বেড়ে উঠল। পিতা-সন্তানের মধ্যে একটা অযাচিত দূরত্বকে লাই দেয়া হল।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

ছুঁয়ে গেল গল্পটা, হিমু ভাই। সাইকেল চালানো , স্কুল,হেড স্যার--এসব নিয়ে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। গল্পটার শেষটা মিলনাত্মক হলে হয়ত সেগুলো এখানে অপ্রাসঙ্গিক হত না।
অফটপিক-- আপনার স্কুল কোনটা জানতে ইচ্ছে করছে।

হিমু এর ছবি

স্কুল নিয়ে একটা ক্লু দেই, আমার স্কুলের বয়স এখন ১৭৩ বছর হাসি



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এইটা লিচ্চিত কুনো জিলা স্কুল। একটা ক্লু দ্যান তো হিমু বাই, দেকবেন- ভিকিগো ফালায়া আবার আমরাই বুতামে চাপ দিমু। দেঁতো হাসি

_________________________________________

সেরিওজা

সাফি এর ছবি

সিলেট পাইলট হাই স্কুল দেঁতো হাসি

ভ্রম এর ছবি

খুব সন্দর গল্প। মনটা খারাপ করে দিলেন..
আমি সাইকেল চালাতে পারিনা। সাইকেলের বদলে অন্য অনেক কিছুর জন্যে হয়তো গুড্ডুর মতো আমিও আমার বাবাকে কাঁদিয়েছি...
গুড্ডুর মধ্যে রিয়ালাইজেশান এসছে/ব্যাপারটা মেনে নিতে পেরেছে দেখে ভালো লাগলো।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

একটা কথা বলা হয় নাই, এই গল্পটা পড়ে আমার নিজের জীবনের একটা ঘটনার কথা মনে পড়লো। খুব খ্রাপ লাগে এই ঘটনাটা যখনই মনে পড়ে।
তখন আমি আর অতো ছোট নাই, কিন্তু কিছু চাইলে সেটার পেছনে জেদটা আছে গোয়াড়ের মতো। ক্লাস নাইনে থাকতে মনে হইলো গিটার না বাজাইলে জেবনটাই বৃথা। গিটার কেনার বায়না ধরলাম। তখন আমার বোনের অপারেশন চলছে। এমনিতেই সংসারে টানাটানি, বাবা বললো কয়টা দিন বাদে কিনে দেই। কিন্তু আমি অবুঝের মতো জেদ ধরে বসে রইলাম। এখুনি লাগবে, না দিলে যা খুশি তাই একটা কিছু করে ফেলবো। সেরাতেই মেলোডি থেকে গিটার কিনে ফিরলাম। পরদিন বোনের অপারেশন হলো।

গিটার আমার ঘরে সারাজীবন ধরেই শোপিস হয়ে ঝুলে থাকে। কিন্তু যখনই মনে পড়ে, তখনই মনে হয় কাজটা তখন ঠিক্করি নাই।

এই গল্পটা পড়ার পর থেকে গিটারটার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে বার বার (যদিও সেই গিটার নাই, এটা অন্য গিটার, তবু)। মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বাবা তো এখন নেই। মাও আজকেই আমেরিকা থেকে কানাডায় সেই বোনের কাছে গেলো। নাহ্... ইমোশনাল হয়ে গেলাম বেশি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাইফ তাহসিন এর ছবি

এই নিয়ে ৩ বার পড়লাম, পড়ে মন্তব্য দিতে ইচ্ছা করে না, যাতে আবার এসে পড়তে পারি। এত সুন্দর লেখা বারবার পরার মজাই অন্যরকম।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

মন খারাপ

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

লীন এর ছবি

অসাধারণ।
তবে বেদনা পাইছি মন খারাপ
______________________________________
লীনলিপি

______________________________________
লীন

দ্রোহী এর ছবি

আমার ছেলেবেলার দিনগুলোর মত!

দীপ্ত এর ছবি

ওহ সুন্দর।
বুঝিনাই শেষে গিয়ে আপনি এমন ধাক্কা দিবেন।

বাবা তো কাঁদে না। বাবা তো বড় মানুষ, বাবা কেন কাঁদে?

গুরু গুরু

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

মন ছুঁয়ে গেল হিমু ভাই, এত চমৎকার একটি গল্প। মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।