১.
বিনয় বসু, আপনি যখন ব্রিটিশ শাসকের নির্যাতক লোম্যানকে হত্যা করেন, আপনার বয়স ছিলো বাইশ। আপনার সামনে সম্ভাবনা ছিলো অনেক। আপনি চিকিৎসক হতে পারতেন, মানুষের কল্যাণে কিংবা নিছক অর্থোপার্জনে মনোনিবেশ করতে পারতেন, একটা দীর্ঘ জীবন কাটিয়ে বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রী, সন্তান, পৌত্রদৌহিত্রবেষ্টিত হয়ে কাটাতে পারতেন। আপনি সেটা করেননি। আপনি গুলি করে হত্যা করেন আইজি লোম্যানকে, জখম করেন এসপি হডসনকে, আপনারই মেডিকেল স্কুলের হাসপাতালে।
আপনি পালিয়ে গেলেন তারপর কলকাতায়। সেই একই বছর, ১৯৩০ সালে, আপনি আপনার মতোই বীর আরো দু'জনের সাথে মিলে হামলা করলেন খোদ সিংহের মুখে গিয়ে, রাইটার্স বিল্ডিঙের ভেতরে গিয়ে হত্যা করলেন কর্নেল সিম্পসনকে। আপনার সঙ্গী বাদল (সুধীর গুপ্ত) আর দীনেশের বয়স আপনার চেয়ে কম ছিলো। আপনারা লড়াই করলেন, জখম করলেন আরো বৃটিশ অফিসারকে, শেষ গুলি নিজেদের ওপর চালিয়ে দিলেন। বাদল মারা গেলেন বিষ খেয়ে, আপনি মারা গেলেন নিজের ক্ষতকে দূষিত করে, দীনেশ কেবল সুস্থ হয়ে মৃত্যুদণ্ডকে বরণ করে নিলেন।
কী ছিলো আপনাদের মনে? আপনাদের রক্তস্রোতে? আপনাদের অস্থিতে, মজ্জাতে?
যুদ্ধাপরাধীদের স্পর্ধিত উচ্চারণের একটা বলিষ্ঠ প্রতিবাদও চোখে পড়ে না যখন, তখন নিষ্ফল ক্রোধে মনে হয়, বিনয় বসু হয়ে যাই।
আরো বিনয় চাই আমাদের, চাই আরো বাদল, আরো দীনেশ! আরো আত্মাভিমানী, আত্মগর্বী, আত্মসম্মানে দর্পী তরুণ-যুবকদের চাই।
২.
মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে, কিংবা কলেজ ভবনের সামনে বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত আর দীনেশ গুপ্তের ত্রয়ী একটি ভাস্কর্য চাই। তাঁরা আমাদের আত্মগৌরবের প্রতীক। তাঁরা আমাদের বরাহশিকারী।
৩.
. . |
বিনয় বসু |
. . |
বাদল গুপ্ত |
দীনেশ গুপ্ত |
ছবিকৃতজ্ঞতাঃ উইকিমিডিয়া।
মন্তব্য
এই ডিজুস যুগে তেমন লোক বেশি একটা পাবেন বলে মনে হয় না। পেলে বড় ভালো হতো!
=======================
দাদ্খানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দু’টা পাকা ডাল, ডিম-ভরা দৈ!!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
নতুন প্রজন্মের উপর এত অনাস্থা বোধ হয় একটু ক্লিশে এবং অনভিপ্রেত। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো-- আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত না কারও উপর আস্থা রাখছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তার/তাদের কাছ থেকে কিছু আশা করতে পারেন না।
এই নতুন প্রজন্ম কী গত নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বয়কট করে নি?
আমাদের গর্বের এই তিন সন্তানকে নিয়ে কিন্তু কলকাতার একটা রাস্তার নাম হইছে বিবাদী বাগ। আর এই ঢাকা শহরের শতকরা দশমিক ০৫ ভাগ মানুষও এদের নাম জানে কী না সন্দেহ...
আমাদের ভাস্কর্য মোঘল মৃনাল বাবু যদি উদ্যোগ নেন, তাইলে হবে। আর নয়তো হবে না।
এদেশে এখন বিনয় বসুদের বেইল নাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমাদের ভাস্কর্য মোঘল মৃনাল বাবু যদি উদ্যোগ নেন, তাইলে হবে। আর নয়তো হবে না।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
একজন উধাম সিং।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আপনার একটা পোস্ট ছিলো তো বস! খুঁজে পাই না কেন?
অনুবাদ করা শেষ হলো। দিনেশ নাকি দীনেশ হবে নামটা? ইংরেজি উইকি তে দিনেশ ব্যবহার করা হয়েছে বলে সেভাবেই রেখে দিলাম যদিও মনে হচ্ছে দীনেশ হওয়াই সংগত।আপনাদের মতামত পেলে ভালো হবে এ ব্যাপারে। অন্য যে কোন ব্যাপারেও যে কোনো মতামত জানাতে পারেন। আমি এই ফাঁকে রাগিব ভাইয়ের দেয়া লিংকে যেয়ে দেখি কিভাবে যুক্ত করতে হবে এটা বাংলা উইকিতে।
---------------------------------------------------------------------------------------
দিনেশ গুপ্ত
দিনেশ চন্দ্র গুপ্ত অথবা, দিনেশ গুপ্ত (১৯১১ থেকে ১৯৩১) ছিলেন একজন বাঙালি ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং বিপ্লবী ।
সূচিপত্র
১. প্রাথমিক কর্মকাণ্ড
২. রাইটার্স বিল্ডিংয়ের যুদ্ধ
৩. বিচার এবং ফাঁসি
৪. গুরুত্ব
৫. তথ্যসূত্র
প্রাথমিক কর্মকাণ্ড
দিনেশ গুপ্ত ১৯১১ সালের ৬ই ডিসেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার যশোলং গ্রামে জন্মেছিলেন।ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ১৯২৮ সালে দিনেশ 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস'-এর কলকাতা সেশনের প্রাক্কালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সংগঠিত 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে যোগদান করেন।শীঘ্রই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স একটি সক্রিয় বিপ্লবী সংগঠনে পরিবর্তিত হয় এবং কুখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারদেরকে হত্যা/ নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে।স্থানীয় বিপ্লবীদের আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শেখানোর জন্য দিনেশ গুপ্ত কিছু সময় মেদিনীপুরেও ছিলেন।তাঁর প্রশিক্ষিত বিপ্লবীরা ডগলাস(Douglas), বার্জ(Burge) এবং পেডি(Peddy)--এই তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রটকে পরপর হত্যা করেছিল।
রাইটার্স বিল্ডিংয়ের যুদ্ধ
সংগঠনটি জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এনএস সিম্পসনকে টার্গেট করেছিল যে কিনা জেলখানার বন্দীদের উপর পাশবিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল।এই বিপ্লবীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তাঁরা শুধু সিম্পসনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হবেন না, বরং কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রিটিশ সেক্রেটারিয়েট ভবন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে
আক্রমণ করে ব্রিটিশ অফিস পাড়ায় ত্রাস সৃষ্টি করবেন ।
১৯৩০ সালের ৮ ই ডিসেম্বর দিনেশ তাঁর দুই সঙ্গী বিনয় বসু এবং বাদল গুপ্তসহ ইউরোপীয় পোশাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন এবং সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন।
ব্রিটিশ পুলিশ গুলি শুরু করে।যার ফলশ্রুতিতে এই তিন তরুণ বিপ্লবীর সাথে পুলিশের একটি সংক্ষিপ্ত বন্দুকযুদ্ধ হয়।টোয়াইনাম (Twynum), প্রেন্টিস(Prentice) এবং নেলসন(Nelson)-এর মত অন্য কিছু অফিসার গোলাগুলিতে আহত হয়।
পুলিশ দ্রুতই তাঁদেরকে পরাভূত করে ফেলে।কিন্তু এই তিনজনের গ্রেফতার হওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না।
বাদল গুপ্ত পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নিয়েছিলেন, অন্যদিকে বিনয় এবং দিনেশ নিজেদের রিভলবার দিয়ে নিজেদেরকেই গুলি করেছিলেন।বিনয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তিনি ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ (১৯৩০ সাল) মৃত্যুবরণ করেন।
বিচার এবং ফাঁসি
দিনেশ কোনোরকমে এ চরম আঘাত থেকে বেঁচে ওঠেন।তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল এবং বিচারের রায় ছিল সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং খুনের জন্য ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু।
১৯৩১ সালের ৭ ই জুলাই আলীপুর জেলে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর।
গুরুত্ব
বাংলাসহ ভারতের অন্যান্য অংশে বিনয়, বাদল এবং দিনেশকে শহীদ হিসেবে সম্মান করা হয়।স্বাধীনতার পর বিনয়, বাদল এবং দিনেশত্রয়ের নামানুসারে ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম পরিবর্তন করে বি.বি.ডি বাগ রাখা হয়।
তথ্যসূত্র
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Dinesh_Gupta
জুড়ে দিলাম রাজিব।
অনেক ধন্যবাদ হিমু ভাই।
দীনেশ হবে।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
আহ! মুন্সিগঞ্জ জেলা কী বীরপ্রসবা! এরকম তিনজন সন্তান তার আছে! বিক্রমপুর আসলেই বিক্রান্ত সব মানুষে ভরা!
ভাস্কর্য মুন্সিগঞ্জ শহরের কোনো কেন্দ্রীয় চত্বরেও চাই।
পোস্ট এবং সংশ্লিষ্ট মন্তব্যগুলোতে অভিনন্দন জানাই।
নজুভাই'র কথামতোই বলতে হয়, ভাস্কর মৃনাল হক চাইলে এই ঢাকা শহরে তাঁদের ভাস্কর্য হতে পারে। কিন্তু মৃনাল হক'কে এটা জানাবে কে ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কবে যেন জেনে আবার কবে ভুলেই গিয়েছিলাম নামগুলো
ধন্যবাদ হিমু
০২
শুধু ভাস্কর্য নয়
প্রায় সময়ই আমরা যারা লেখার সাথে ইতিহাসের টুকটাক টুকরোগুলো তুলে আনি বিভিন্ন সময়
সেই জায়গাগুলোতে যদি এই নামগুলোও যুক্ত থাকে তবে আপনাতেই নামগুলো আবার নতুনদের কানে উঠে আসবে
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
-- চাইলে পাওয়া যাবে, মানুষের প্রতি এ বিশ্বাসটুকু এখনও আছে ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
উনাদের নাম আসলেই হয়তো সুকৌশলে বাদ দেয়া হয়েছে ইতিহাসে...। যা জানার উনাদের সম্পর্কে- তা কেবল অন্য কোন বিষয়ের বই এর মাঝে। বি-বা-দী ...
_________________________________________
সেরিওজা
ভালো লেখা। তবে ভারতও বোধহয় এমন আরও তিনজনকে পাচ্ছে না। ধন্যবাদ আপনাকে।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
হিমু ভাই, রাজীব ভাই, রাগীব ভাই। তিনজনকে জানাই কৃতজ্ঞতা।
এদের মতো মানুষের এখন খুব দরকার ।
ধন্যবাদ হিমু বিনয়, বাদল আর দীনেশ ত্রয়ীকে এখানে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
ধন্যবাদ হিমু ভাই। উঁনাদের নিয়ে আসলেই অনেক জানার আছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই ঠিকমতো জানিনা, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন তো বহুদূর ... ...
==============================================
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
সমস্যাটা হচ্ছে, হিমু চেঁচাবেন "আরো বিনয় চাই আমাদের, চাই আরো বাদল, আরো দীনেশ! " তবু নিজে একজন বিনয় অথবা বাদল অথবা দীনেশ হয়ে উঠবেন না, হতে চেষ্টাও করবেন না।
আমিও এর বাইরের কিছু নই, কমেন্টে একটা মরিচ-গুঁড়ো টাইপ সহমত জানিয়ে যাব, তবু আমিও হতে চেষ্টা করবো না বিনয় অথবা বাদল অথবা দীনেশ।
এই সীমাব্দ্ধতা (অথবা সুশীলতা) কবে শেষ হবে বলতে পারেন?
যেদিন আমি বিনয় বা বাদল বা দীনেশ হবো, আর আপনি এসে মরিচ-গুঁড়োর বদলে একটা জারুল ফুল রেখে যাবেন।
যারা বিনয়-বাদল-দীনেশ সম্পর্কে এবং আরো এমন অনেক সম্পর্কে জানতে চান, তাঁরা পড়ে দেখতে পারেন শৈলেশ দে লিখিত দারুণ সুপাঠ্য 'আমি সুভাষ বলছি' বইটা।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
নতুন মন্তব্য করুন