আমার আরো দুর্বলতা বাঘের প্রতি। বাঘ আমাদের প্রতীকই কেবল নয়, মানুষকে বাদ দিলে বাঘই সুন্দরবনের সুপ্রিম প্রিডেইটর, সুন্দরবনের সংবেদনশীল পরিবেশব্যবস্থায় বাঘ এক বিরাট চরিত্রে আছে। আরো জরুরি দিক হচ্ছে, বাঘের এই প্রজাতি সংকটাপন্ন। আমাদের বন বিভাগের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া উচিত সুন্দরবন আর তার বাঘের ব্যাপারে।
আমি প্রস্তাব করছি, সুন্দরবনের অভিভাবক হিসেবে একটি পৃথক, শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হোক। এর সদর দপ্তর হবে সাতক্ষীরায়। সুন্দরবন সম্পর্কে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত আসবে এই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
খবরের কাগজে পড়লাম, বাঘকে চেতনানাশক ডার্ট ছুঁড়ে নিশ্চল করার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে ৩০ জন বনকর্মীকে। খবরটা পড়ে আরেকটা চিন্তা আমার মাথায় এলো। সুন্দরবনে কেউ বেড়াতে গেলে সাথে বনরক্ষী দেয়া হয়, তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকে, যেহেতু সুন্দরবনে বাঘের চেয়ে ভয়ঙ্কর মানুষও থাকে। কিন্তু কিছুদিন আগে মুস্তাফিজ ভাইয়ের অভিজ্ঞতা পড়ে আমরা জানলাম, বাঘ যদি সত্যি সত্যি পর্যটকদের ওপর আক্রমণ করে, এই বনরক্ষীদের হাতে শেষ পর্যন্ত একটি আগ্নেয়াস্ত্রই থাকবে তাকে নিরস্ত করার জন্যে। অর্থাৎ, শেষ বিচারে বাঘকে বন্দুকের গুলির মুখোমুখিই করা হচ্ছে। আমি তাই আরো প্রস্তাব করছি, জঙ্গলে বেড়াতে যান যেসব পর্যটক, তাঁদের সাথে ট্র্যাংকুইলাইজার গানসহ একজন বনকর্মী নিয়োগ করা হোক। এর ব্যয় পর্যটকরা বহন করবেন।
বাঘ লোকালয়ে এসে মানুষের গরু ছাগল মারে, মানুষ মারে, আবার মানুষের পিটুনি খেয়ে মারা পড়ে, কিন্তু বাঘ লোকালয়ে আসে কেন? সুন্দরবনে সাম্প্রতিক সময়ে সুপেয় পানির একটা ভয়ঙ্কর সঙ্কট চলছে সিডরের কারণে, খসরু চৌধুরীর এক লেখা পড়ে জেনেছিলাম। কাজেই বাঘের প্রধান খাদ্য হরিণ জড়ো হয়েছে সেইসব এলাকায়, যেখানে মিষ্টি পানি আছে। ফলে যেসব বাঘের এলাকায় লোনা পানি ঢুকে পড়ে আটকে আছে, তারা নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্য বাঘের এলাকা বা মানুষের এলাকায় ঢুকে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। এ ব্যাপারে বন বিশেষজ্ঞরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন কি না, আমি জানি না। খসরু চৌধুরী আরো একটা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। উপকূলীয় বনাঞ্চলে অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে ছেড়ে দেয়া চিত্রা হরিণ সেখানকার খাদ্য শৃঙ্খলের চূড়ার অবস্থান করছে, অর্থাৎ হরিণের কোনো খাদক সেখানে নেই। সেখানেও সুপেয় পানি ও আহার্যের তীব্র সঙ্কট, চৌধুরী প্রস্তাব করেছিলেন, এই হরিণের একটা বড় অংশ আবার সুন্দরবনে এনে ছেড়ে দিতে। আমি পাশাপাশি আরো প্রস্তাব করছি, কিছু বাঘকে ঐ উপকূলীয় বনে ছেড়ে দিয়ে কিছু "পকেট সুন্দরবন" তৈরি করা হোক। সেইসাথে তাদের অভিভাবক হিসেবে বনরক্ষী ও বনকর্মী নিয়োগ করা হোক, যাতে কোনো শুয়োরের বাচ্চা গিয়ে চুরি করে বাঘ মারতে না পারে। এই উপকূলীয় বনাঞ্চলের "পকেট সুন্দরবন" তখন পর্যটকও টানতে সক্ষম হবে।
আর বাঘ আসলে সংখ্যায় কতো? এক এক গণনাকারী পক্ষ এক এক সংখ্যা বলে। আমি সবচে পেসিমিস্টিক গণনাফল ২৫০কে সত্য বলে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা করার পক্ষপাতী। পরিবেশমন্ত্রী দেখলাম এক অনুষ্ঠানে বলছেন, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি কীসের ভিত্তিতে এ কথা বলছেন তা জানা যায়নি। ঢাকায় বসে এ ধরনের বিবৃতি না দেয়া সুন্দরবনের বাঘের জন্যে মঙ্গলকর হবে।
বাঘ টেরিটোরিয়াল বা এলাকাকাতর জীব। সুন্দরবনে গাইগরু পালার মতো করে বাঘের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। বাঘের সংখ্যা বেঁধে দেবে সুন্দরবনের জৈবভৌগলিক আয়তন। সেটা যতদূর জানি, নিয়তই কমছে মানুষ ঢুকে পড়ায়। তাই বাঘের সংখ্যাও কমতে বাধ্য। এই অনধিকার প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যে কোনো মূল্যে।
আমি পাঠকদের কাছে অনুরোধ করবো, সুন্দরবনের পশুসম্পদ রক্ষার জন্যে কোনো আইনের কথা যদি জানেন, আমাকে অবহিত করুন। পাশাপাশি সুন্দরবন নিয়ে কী কী খয়রাতি প্রকল্প দেশে চলমান, সেটারও একটা তালিকা করে খতিয়ে দেখা উচিত, আসলে তাঁরা কী করেন।
মন্তব্য
সুন্দরবন নিয়ে শোরগোল তুললে বনেরই লাভ হবে। সুন্দরবন হারিয়ে গেলে এর বিরাট খারাপ প্রভাব পড়বে সমগ্র অঞ্চলে। আমিও অপেক্ষায় থাকলাম তথ্য সূত্রের।
পিপিদার সাথে আলাপ করছিলাম একটা আইডিয়া নিয়ে।
উপকূলে নতুন জেগে ওঠা চরগুলিতে প্যারাবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, এমন একটা কিছু পড়েছিলাম কাগজে।
সরকার কি একটা মিনি-সুন্দরবন তৈরি করতে পারে না? ট্যুরিজম এবং গবেষণা, এই দুটোরই নতুন দুয়ার খুলে যেতো এমন কিছু করা গেলে।
সুন্দরবনকে টেমপ্লেট ধরে উপকূলীয় কোনো বড় চরে বনায়ন শুরু করা হোক। তারপর তাতে ছেড়ে দেয়া হোক কয়েক জাতের হরিণ, শূকর, বানর, সাপখোপ, পাখি, সরীসৃপ, কাঁকড়া ... আর একটা মদ্দা আর একটা মাদী বাঘ। জঙ্গলের ভেতরে পরিকল্পিত বেষ্টনীসহ মিষ্টি পানির পুকুর, ওয়াচটাওয়ার, রোপওয়ে, ফিল্মিঙের জন্যে বার্ডস নেস্ট নির্মাণ করা হবে।
এই জঙ্গলের ব্যয় উঠে আসবে ট্যুরিজম আর ফিল্মিং থেকে। বছরে নির্দিষ্ট সংখ্যক ট্যুরিস্ট এখানে আসতে পারবেন। টিকেট অনলাইনে নিলামে তোলা হবে, যে বেশি পয়সা দিতে পারবে, সে-ই আসবে। পর্যটকদের জন্যে অভিজ্ঞ গাইড, ক্যামেরাম্যান, বনরক্ষী, চিকিৎসক থাকবে এই ট্যুরে। সারা জঙ্গল ঘুরে দেখার পর রাতে জাহাজে থাকার ব্যবস্থা করা হবে, জঙ্গলের ভেতরে থাকার সুযোগ র্যাফল আউট করা হবে। টিকেট ছাড়া এই জঙ্গলে কেউ প্রবেশ করলে বনরক্ষীরা তাদের গ্রেপ্তার করে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করবে। প্রশিক্ষিত বনরক্ষীরা চোরাশিকারিদের হাত থেকে জঙ্গলকে রক্ষার জন্যে তৈরি থাকবে, কোস্টগার্ড তাদের সহায়তা করতে বাধ্য থাকবে।
আর কী কাজে লাগবে এই জঙ্গল? মেরিন বায়োলজি, বোটানি, জুওলজি, ফরেস্ট্রি, অর্নিথোলজির গবেষণার এক নিরাপদ অভয়ারণ্য হতে পারে এটি। এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত করা হবে বিশ্ববিদ্যালয় আর গণমাধ্যমকে।
শৌখিন শিকারিদের জন্যে বছরের একটি সময় মোটা টাকার বিনিময়ে হরিণ শিকারের লাইসেন্স বিক্রির পরামর্শ দিলেন পিপিদা। আর এ-ও আশঙ্কা করলেন, এরকম কোনো বন ম্যাচিওর করতে ১০ বছর সময় লেগে যাবে, ততদিনে সরকার পাল্টাবে, সবকিছু আবার উলটপুরাণ হয়ে যাবে।
এরকম একটা প্রকল্প কি পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত করে শেয়ার ছেড়ে একে আরো অনেক লোকের কাছে দায়বদ্ধ করে তোলা যায় না? দুবাইতে আরবরা সমুদ্রে বালু ফেলে খেজুরের আকৃতিতে দ্বীপ বানায়, আর আমরা জেগে ওঠা চরে একটা জঙ্গল বানিয়ে তাকে টিকিয়ে রাখতে পারবো না? এটা কি খুব কঠিন কাজ হবে? ভারতীয়রা চাঁদে নভোচারী পাঠাবে, আর আমরা একটা জঙ্গল তৈরি করতে পারবো না?
- সরকার যদি প্যারাবন নির্মানের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে থাকে তাহলে সেটায় সুন্দরবনের ছায়া প্রতিফলিত করতে তো কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু ভয় আছে।
কয়দিন আগে কাগজেই তো পড়েছিলাম জনৈক সংসদ সদস্য কোনো এক বন কর্মকর্তা (বা এই জাতীয় কেউ)'র সঙ্গে বেশ হাদুমপাদুম করছিলেন ক্ষমতার বলে। চরাঞ্চলে নির্মিত মিনি সুন্দরবন বা প্যারাবন যা-ই বলি, সেখানে যে লোটাস জাতীয় কামাল ফুল ফুটবে না তার নিশ্চয়তা কী! অন্তত আমাদের দেশতো সব সম্ভবের দেশ।
আমাদের কোস্টগার্ডদের তৎপড়তা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই আমার। এমনকি তারা যে বহাল তবিয়তে আছে, এইটাই আমার জ্ঞানে নেই। কোস্টগার্ডদের ব্যাপারে আমার কেবলই মনেহয়, "ঈশ্বরের গরু, গোয়ালে নয়- খাতাতেই বিদ্যমান!"
পাঁচ বছর পরপর সরকার পরিবর্তন আর নামকরণের সংস্কৃতি থেকে জিনিষটাকে বের করে আনার উপায় একটাই- প্রাইভেট উদ্দোগে ছেড়ে দেয়া। এতে করে অবশ্য অন্যান্য খাতের মতো এটা থেকেও কোচরভর্তি পয়সা অন্যের গোলায় উঠে যাবে, কিছু করার নেই। সরকারী খাইছলত দোষ।
মিনি সুন্দরবনে শিকারের ব্যাপারটা বোধ'য় বুমেরাং হবে। শখের শিকারীদের শিকারে হরিণ পরিণত হলে কোনো কথা নেই, কিন্তু যদি "অ্যাক্সিডেন্টলি" বাঘ শিকারে পরিণত হয়ে যায়, তাইলে বিশাল সমস্যা। তবে বনের ভেতরে সাফারীর পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থা থাকলে সেটা হবে প্রশংসনীয়। আমি নিজেই এমন একটা পরিবেশ পছন্দ করবো বেশ লম্বা একটা হানিমুনের সময়ে বিভিন্ন পরিবেশে উদযাপন করার অংশ হিসেবে এক বা দুই দিন অমন একটা জায়গায় কাটাতে।
রাঙ্গামাটিতে এমন একটা জায়গা দেখেছিলাম বটে। ঝুলন্ত ব্রীজের নিচ থেকে ট্রলারে করে বেশ খানিক দূরে একটা দ্বীপের মতো জায়গা। কৃত্রিম বন তৈরী করে সেখানে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বানর, হরিণ জাতীয় পশু আর নানা রকম পাখি। তার থে একটা জায়গায় কটেজ মতো একটা বাড়ি, উপরে শণের ছুপড়ির মতোন। ভেতরে আধুনিক সব সরঞ্জাম। একটা রেস্তোরাঁও আছে, চমৎকার। সেই রেস্তোরাঁয় খেতে খেতে শুনলাম বাড়িটা ভাড়া নেয়া যায়, ঢাকা থেকে। কেয়ারটেকার, নিরাপত্তাকর্মী সবই আছে সেখানে। হানিমুন প্যাকেজে কেউ রাঙ্গামাটি গেলে জায়গাটা পছন্দ করবে নিঃসন্দেহে।
বলছিলাম, বেশ ছোট পরিসরে হলেও এমন একটা জিনিষ যেহেতু চোখের সামনেই উদাহরণ হিসেবে আছে, তবে মিনি সুন্দরবনের আইডিয়াটা বাস্তবায়ন করতে খুব যে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে তা না। এটা একটা দেশের সরকারের জন্য ডালভাত মার্কা ব্যাপারই হওয়ার কথা, যদি সদিচ্ছা থাকে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অনেক দরকারি একটা পোস্ট। খসরু চৌধুরীর আরো কিছু লেখা প্রথম আলোতে ছাপান হয়েছিল। সেগুলোর লিঙ্ক কেউ দিতে পারলে ভাল হত।
একটা লিংক রেলিভ্যান্ট: বাঘ কেন সুন্দরবনে হামলা করে। খসরু চৌধুরীর লেখা, প্রথম আলোতে প্রকাশিত। আমি নিসর্গে তুলে রেখেছিলাম।
http://www.nature.com.bd/article/137
মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকার 'বৃক্ষ সংখ্যা', 'বৃক্ষ ও পরিবেশ সংখ্যা' ,'পক্ষী সংখ্যা', 'নদী সংখ্যা' আপনার নিসর্গে আর্কাইভ করে রাখতে পারেন। মির্জা ভাইয়ের সাথে কথা বলেন তাড়াতাড়ি।
মীজান আংকেল বেঁচে থাকলে উনাকে 'বাঘ সংখ্যা' করতে বলতাম।
মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকার 'বৃক্ষ সংখ্যা', 'বৃক্ষ ও পরিবেশ সংখ্যা' ,'পক্ষী সংখ্যা', 'নদী সংখ্যা' আপনার নিসর্গে আর্কাইভ করে রাখতে পারেন। মির্জা ভাইয়ের সাথে কথা বলেন তাড়াতাড়ি।
মীজান আংকেল বেঁচে থাকলে উনাকে 'বাঘ সংখ্যা' করতে বলতাম।
উপকূলীয় বনাঞ্চল আরো প্রয়োজন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে প্রতিরক্ষার জন্য, সিডরের সময়ই দেখা গেছে যা অত্যন্ত কার্যকর। সদিচ্ছা থাকলে 'জলবায়ু তহবিল' ব্যবহার করেই এ প্রজেক্ট করে ফেলা যায়।
দুশ বছর আগে সুন্দরবনের আয়তন ছিল ১৬হাজার বর্গকিমি যা বর্তমানে এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে নেমে আসবে। বনের আয়তন কমার অর্থ বনের অধিবাসীদের বিচরনস্থল কমে যাওয়া, খাদ্যের সংকট দেখা দেয়া। ফলে মানুষের অস্ত্রের মুখোমুখি হতে হয় তাদের। বনবিভাগের তথ্যমতে ৪৪০টি বাঘ অবশিষ্ট ছিল ২০০৪ সালের গননা অনুসারে। সংখ্যাটা কমছে বলে মনে হচ্ছে।
সুন্দরবনকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ ভারতকে একসাথে কাজ করতে হবে। কারন সুন্দরবনের প্রায় চল্লিশ শতাংশ ভারতীয় অংশে।
কিন্তু যে তথ্যটা জেনে সবচেয়ে আশ্চর্য হয়েছি তা হলো ভারতীয় ৪০% অংশে বাঘের সংখ্যা আমাদের তিনগুনেরও বেশী। ওদের বাঘের সংখ্যা ১৪১১(সুত্র: উইকিপিডিয়া)। এর মানে কি এটাই বোঝায় আমরা ভারতের তুলনায় কম অতিথি পরায়ন? আমাদের বনে বাঘেরা থাকতে চায় না, নাকি ভারত আমাদের বাঘ ফুসলিয়ে নিয়ে গেছে। বাঘেদের তো পাসপোর্ট ভিসার বালাই নেই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমাদের সুন্দরবনের আয়তন কিন্তু বাউন্ডারির হিসাব ধরে। আমি শুনেছি বনের মাঝে বিস্তৃত এলাকা নাকি আর বন নেই, ফাঁকা হয়ে গেছে। সত্যাসত্য বিচার করতে পারবেন এক্সপার্টরা।
একটা নির্দিষ্ট বয়স আর আয়তন অতিক্রম করলে একটা জঙ্গল নিজেই নিজেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারে বলে শুনেছি। কিন্তু সুন্দরবনকে প্রয়োজনে নার্স করতে হবে। সুন্দরবন তো শুধু বাঘকে নিয়েই নয়, এর ফ্লোরা-ফনার সবটুকুকেই রক্ষা করতে হবে, এবং নতুন জেগে ওঠা ভূমিতে সুন্দরবনের ভ্রুণ ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের পুরো উপকূল জুড়েই সুন্দরবনকে চাইলে ছড়িয়ে দেয়া যায়। এতে করে উপকূলীয় বনের বেষ্টনী দৃঢ় হবে। তা না হলে দুইদিন পর কোনো এমপির বাচ্চা গিয়ে সেই বন সাফ করে জাহাজ কাটার কারখানা খুলে বসবে।
এই লেখাটা দৈনিক পত্রিকায় ছাপানো গেলে ভালো হতো। বাঘ বাঁচাতে ব্যাপক জনমত তৈরী করা দরকার।
এই লেখাটার আলোচনা, তথ্যউপাত্ত মিলিয়ে দৈনিক পত্রিকায় বা গণমাধ্যমে লেখা হোক। মানুষের মাঝে সচেতনতার-ও দরকার আছে।
সরকার তো আগ্রহী হবে না, মনে হয়। বেসরকারী কোন উদ্দ্যোগ (পরিবেশবাদি কিংবা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মসূচী) কি করা যায়? নিয়ম আছে?
আমার কাছে সবচেয়ে যেটা বড় মনে হলো- সুন্দরবনের স্থানীয় বাসিন্দা, জেলে সম্প্রদায়, বনমালী সম্প্রদায় এদেরকে কাজে লাগাতে হবে। ফলে কাজ দ্রুত হবে, মজবুত হবে। কারণ, এলাকাটা তাদের হাতের তালুর মতো চেনা। আর এরাই বাঘ, অন্য প্রাণীদের মারে।
==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার দেখবেন, সরকারের ওপর থেকে আমাদের আস্থা কমতে কমতে এখন নেতিবাচক ... আমরা সবকিছুতে বেসরকারী হস্তক্ষেপ কামনা করি। সরকারের উচিত এই ব্যাপারটা অনুধাবন করা।
আসেন হিমুর লোগো বাঁচানো আন্দোলনে, থুক্কু বাঘ বাঁচানো আন্দোলনে যোগ দেই! জাস্ট কিডিং
আচ্ছা, আমার একটা সিরিয়াস প্রশ্ন আছে - বিবৃতিদানকারী পরিবেশমন্ত্রীর সমীপে এই লেখাটা এবং রিলিভেন্ট লিঙ্কগুলি পাঠানো যায় না? ব্যাপারটা অসম্ভব বলে মনে হয় না - চেষ্টা করে দেখবেন না কি?
minister@moef.gov.bd
এটি পরিবেশ মন্ত্রীর ই-মেইল ঠিকানা
Climatic Change জর্নালের সর্বশেষ সংখ্যায় (ভলিউম ৯৮, সংখ্যা ১-২, জানুয়ারী ২০১০) বাংলাদেশের বাঘ নিয়ে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ বের হয়েছে, হয়তো দেখে থাকবেন। সেখানেও বেশ কিছু সমাধান/উপদেশ দেয়া হয়েছে। করনীয় নিয়ে কোন সংকলন হলে এগুলোর থেকেও কিছু যুক্ত করতে পারেন।
ধন্যবাদ পোস্টটির জন্য। ২০১০ সন নাকি বাঘ-বছর হচ্ছে... সেক্ষেত্রে এখনই সময় এটা নিয়ে কাজ করার।
আর কাজের ফাকে, অবসরে দেখার জন্য একটা ভিডিও (হয়তো আগেই দেখেছেন, তবু দেয়া)... আমাদের কাপুরুষতার কী নান্দনিক উপাস্থাপনা!
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
সুন্দরবনে প্রাকৃতিক ভাবেই বন তৈরী হয়, নুতন করে বন সৃষ্টি করার তুঘলকীয় সিদ্ধান্ত না নিয়ে বনকে বরঞ্চ দস্যুমুক্ত করাটাই প্রধান বিষয় হওয়া উচিৎ।
টাইগার প্রজেক্ট নামে বেসরকারী এক সংস্থা সুন্দরবনে কাজ করছে, ওদের কাজের ধারা বা গতি শামুকের চাইতেও ধীর, এছাড়া ওদের সম্পর্কে বেশ কিছু নেতিবাচক কথাবার্তাও শোনা যায়, ওদের সাইটে ব্যাক্তিগত এবং বানিজ্যিক ছবির প্রাধান্য সেদিকেই আঙ্গুল তোলে।
অবশেষে বাংলাদেশ সরকার বিশদ এক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, এতে সহায়তা করছে জুয়োলজিক্যাল সোসাইটি অফ লন্ডন, ইউনাইটেড স্টেটস ফিশ এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ সার্ভিস ও মিনেসোটা ইউনিভার্সিটি। এ ব্যাপারে বিশদ জানতে চাইলে নীচের লিংকে দেখুন http://www.bforest.gov.bd/tiger_plan.php
...........................
Every Picture Tells a Story
সুন্দরবনে নয় মুস্তাফিজ ভাই, মিনি সুন্দরবন তৈরি করতে হবে আরো পূর্বদিকে, পটুয়াখালি বা নোয়াখালির দিকে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে। সুন্দরবনকে গোটা উপকূলীয় বেল্টে ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারের বিশদ পরিকল্পনায় যদি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও শামিল করা যেতো, মন্দ হতো না।
১। শুধু বাঘ রক্ষায় মনোযোগ দিলে ফলাফল আজকের চাইতে ভিন্ন কিছু হবে না। বংশানুক্রমিক বাওয়ালীদের জীবনের মান যদি উন্নত করা না যায়, তাহলে শুধুমাত্র জীবীকা ও আত্মসম্মানের ঘাটতি মেটাতে হলেও তারা বাঘ মারবে ও বাঘের খাবার মেরে খাবে। বংশানুক্রমিক বাওয়ালীদের যথাযথ মর্যাদা দেয়া হোক, এবং শুধু তাদেরই বন প্রতিরক্ষাসহ সুন্দরবনে ঢুকে কাজ করার অনুমতি দেয়া হোক। বাইরের লোককে সুন্দরবনে ঢুকে কাজ করা রহিত করা হোক। সুন্দরবনে বেড়ে ওঠেনি, এমন সবার কাছ থেকে এই বনের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন আশা করা যায় না।
২। ভারত সরকারকে দলে টানতে হবে, বাঘ দেশের সীমানা বোঝে না। বনদস্যু এই সীমানার সূযোগ নেয়।
৩। পর্যটনের জন্য কিছু জায়গা নির্দিষ্ট করে সুন্দরবনের বাকি এলাকায় পর্যটন নিশিদ্ধ করা হোক। পকেট সুন্দরবন তৈরী করে শুধু সেখানে পর্যটন সীমাবদ্ধ রাখার আইডিয়া আরো ভাল।
৪। শিকারের লাইসেন্স দেয়া হোক শুধু লোটাস নামের কামাল ফুলের প্রাইভেট জঙ্গলেই। সুন্দরবনের আশেপাশে যেন কোন ধরনের শিকারকে ছাড়পত্র না দেয়া হয়।
লোটাস কামাল ফুলের জঙ্গল বিষয়টা বুঝতে পারছিনা; কেউ কি একটু আলোকিত করতে পারেন? ধন্যবাদ।
আমি প্রস্তাব করছি, সুন্দরবনের অভিভাবক হিসেবে একটি পৃথক, শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হোক। এর সদর দপ্তর হবে সাতক্ষীরায়। সুন্দরবন সম্পর্কে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত আসবে এই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
আমি সমর্থন করলাম।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
০১
হিমু ভাই, ২টা কারনে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এক, প্রয়োজনীয় একটা ইস্যু নিয়ে লেখার জন্য, আর দ্বিতীয় করনটা অন্য এক জায়গায় বলছি।
০২
ভাইরে, এই কথা শুনে আমিও টাস্কি খেয়ে গেসিলাম। উনি শুধু বাঘের সংখ্যা বাড়ার কথাই বলেননি, সম্ভবত কয়টি বেড়েছে সেটিও বলেছেন।
০৩
সরাসরি সুন্দরবনের জন্য কোনো আইন নেই, নিচের আইনগুলো দেশের বন্যপ্রানীর সুরক্ষায় নিয়োজিত
ক) বাংলাদেশ বন আইন ১৯২৭
খ) বাংলাদেশ বন্যপ্রানি (সংরক্ষন) অধ্যাদেশ, ১৯৭৩
গ) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন আইন, ১৯৯৫
আইন ছাড়াও রয়েছে কিছু পলিসি ডকুমেন্ট যেমন "Integrated Forest Management Plan for the Sunderbans Reserve Forest 1998"।
এছাড়াও বাংলাদেশ বন্যপ্রানী বিষয়ক বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অনুসাক্ষরকারী, যেমন CBD, CITES, Ramsar ইত্যাদি।
এই আইনের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে কি লিখতে পারেন রানা ভাই?
ধন্যবাদ। আমি লিখে অভ্যস্ত না, তবে সামনে একবার চেষ্টা করতে পারি।
মিনি সুন্দরবনের আইডিয়া খুব ভালো
কিন্তু যেকোন মূল্যেই সেখানে হরিন শিকারের নির্দেশ দেয়া যাবেনা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
লাইসেন্স যদি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে নিলামে তোলা যায়, তাহলে হয়তো চলে। একটা হরিণ শিকার করার মতো সুযোগ দেয়া যায়। এটাকে একটা ট্রফি হিসেবে দেখা যায়। বড়লোকের বাড়ির বৈঠকখানায় একটা হরিণের মাথা শোভা পাবে, আর সেই বাবদ খরচ করা টাকা বাকি পশুপাখিদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। হরিণ মারতে গিয়ে কেউ বাঘ মেরে বসলে বিপুল অর্থদণ্ড দিতে হবে। বাঘের হাতে মৃত্যু হলে কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না। এরকম নানা শর্ত দিয়ে কাজটাকে চ্যালেঞ্জিং, এক্সপেনসিভ আর প্রেস্টিজিয়াস করে তোলা যায়।
স্পষ্টতই শিকারের ব্যাপারে অনেকের দ্বিমত আছে। আমি কিন্তু একটা নির্দিষ্ট এরিয়ার ভেতর, খুবই রেগুলেটেড পরিবেশে ছোট শিকারের কিছুটা পক্ষে। ব্যাখ্যা করি।
দূঃখজনক ভাবে উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় আমি শিকার/শিকারী খুব কাছ থেকে দেখেছি। দু’ধরেনের শিকারী আছে,
•প্রফেশন্যাল টাইপ, টাকার জন্য শিকার করে। তারা আবার খুব এক্সপার্ট শিকারী। খুব পরিস্কার প্রফিটের হিসাব। শটগানের দু’টা ডাবল বি পাওয়া যায় ধরুন ২০০ টাকার মধ্যে। অন্যান্য খরচও বেশি না। একটা শুকর কিংবা হরিণ শিকার করতে পারলে তো প্রফিট মার্জিন খুব বেশি।
•গেম হান্টার টাইপ। শিকার করাটাই আনন্দ। তেমন এক্সপার্ট না। ছবিটবি/চামড়া স্যুভেনিয়র হিসাবে থাকবে। টাকা এদের জন্য কোন ফ্যাক্টর না।
রেগুলেটেড পরিবেশে শিকারের জন্য শুধু টাইপ ২ আসবে। এখন টাকার কথায় আসুন। ধানমন্ডি লেকে এত দিন নিয়ম ছিল ৮,০০০ টাকা দিয়ে আপনি দুই দিনের জন্য ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন। তাও আবার কোন মেম্বারের রেফারেন্সে টিকিট পেতে হবে। মাছ পেতেও পারেন অথবা নাও পেতে পারেন। পেলে হয়ত দু’টা মাছ পেলেন মোট চার কেজির। টাকার হিসাবে কিছুই না।
এই হিসাবে গেম টাইপের শিকারে আসলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে।
তবে প্রচলিত আইনের সংশোধন, ভাল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ এখানে।
নতুন মন্তব্য করুন