গোয়েন্দা ঝাকানাকা বললেন, "আপনাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে কিংকু সাহেব! আরে রিল্যাক্স!"
গোয়েন্দা বিভাগের দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি, যিনি কি না চৌদিকেই ধারালো, বিমর্ষ মুখে বলেন, "স্যার ওপর থেকে এমন হুড়ো দিচ্ছে কী আর বলবো আপনাকে! মন্ত্রী এম্পিদের ব্যাপার, বোঝেনই তো!"
ঝাকানাকা হাই তুলে বললেন, "হুমমম। তা চিঠিতে কী লিখেছে বদরু খাঁ?"
কিংকু চৌধারি গলা খাঁকরে বলেন, "খুব কড়া ভাষায় চিঠি লিখেছে স্যার ... ইয়ে, পড়ে শোনাবো?"
ঝাকানাকা বলেন, "শোনান।"
কিংকু চৌধারি খুক খুক কেশে গলা পরিষ্কার করে নেন, তারপর গামছুদ্দিন হালিমের মতো মোটা গলায় পড়তে থাকেন চিঠিটা,
"বরাবর, মহাপরিচালক, সরকারী টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। বিষয়ঃ হুমকি। জনাব, আচ্ছালামু আলাইকুম। আমি আপনাদের নিয়মিত দর্শক। নানারকম আইনবিরোধী কাজে প্রায়শ দেশের দুর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনাগোনা করিবার সুবাদে আপনাদের সম্প্রচার কার্যক্রমই অধুনা আমার বিনোদনের একমাত্র ভরসা। আপনারা বাংলা সিনামা দেখাইয়া থাকেন, উহা আমি ও আমার ল্যাংবোট দস্যুবৃন্দ উপভোগ করিয়া থাকি। যদিও আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকিবে শাবাহানার সিনামা কম দেখাইয়া পপিপি ও ময়ূহুরীর সিনামা অধিক দেখানোর। শাবাহানার সিনামা দেখিয়া আমার দস্যুদলের অপেক্ষাকৃত তরুণ সদস্যরা ক্রন্দনপ্রবণ হইয়া উঠিতেছে। তাহারা এদানিঙ পুলিশ ইনস্পেক্টর নায়কের সপক্ষে ও বর্বর রক্তলোলুপ নারীধর্ষণকারী লুটেরা মাতবর ভিলেনের বিপক্ষে নারা তুলিতেছে। ময়ূহুরী ও পপিপির সিনামায় প্রচুর রক্তপাত ও খুনধর্ষণ থাকে, উহা তাহাদের চরিত্র গঠনের জন্য অধিকতর উপযোগী। আপনারা কার্টুন ছবির পরিবর্তে বেওয়াচ দেখাইলে আরো আনন্দিত হইব।"
কিংকু চৌধারি দম নেন। ঝাকানাকা বলেন, "বাস, এ-ই?"
কিংকু বলেন, "না স্যার, আরো আছে।" এই বলে তিনি পড়ে চলেন,
"কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান কিম্বা পল্লীগীতির অনুষ্ঠান আমরা তেমন দেখি না, রাতের ঐ সময়ে আমি আমার দস্যুদলের সদস্যদের নানাপ্রকার অস্ত্রচালনা ও কুংফুবিদ্যা প্রশিক্ষণ করাইয়া থাকি। প্যাকেজ নাটক চলিবার সময় তাহারা ভাত খায় আর রাত্রি দশ ঘটিকার সংবাদের পর সকাল সকাল নিদ্রার প্রস্তুতি লয়। শুধু রাত্রিকালীন প্রহরায় নিয়োজিত সান্ত্রীর ডিউটি মারিবার জন্য কয়েকজন পালা করিয়া রাত্রি জাগরণ করে।"
ঝাকানাকা বলেন, "হুমমমম।"
কিংকু চৌধারি পড়তে থাকেন, "কিন্তু জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলা কালে আপনার মহাপরিচালিত টেলিভিশনে জাতীয় সংসদের অভ্যন্তরের কার্যকলাপ সরাসরি সম্প্রচার করা হইয়া থাকে। ইহা আমার দস্যুদলের সদস্যদের উপর এক মারাত্মক হানিকর প্রভাব বিস্তার করিয়া চলিতেছে। তাহাদিগকে আমি প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারেই দস্যুবৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় গালিগালাজ ও কটুবাক্যদি বর্ষণের উপর একটি কোর্স শিক্ষা দিয়াছি, তাহারা ব্যবহারিক শিক্ষানবিশি দস্যুতার সময় ভিক্টিমের উপর ঐসব গালাগালি প্রয়োগ করিয়া থাকে। আমি গর্বের সহিত উল্লেখ করিতে চাহি, আমার অধীনে প্রশিক্ষিত নবিশ দস্যুদের গালি খাইয়া ইতিপূর্বে জনৈক পুলিশ সুপার ও জনৈক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাউমাউ করিয়া কাঁদিয়াছেন। তাদৃশ ঘটনা ঘটিয়া থাকা সত্ত্বেও সংসদ অধিবেশনে কতিপয় সাংসদের গালাগালির তুবড়ি শুনিয়া আমার শিষ্যদের মধ্যে দস্তুরমতন ত্রাসের সঞ্চার হইয়াছে। বিশেষত সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কয়েকজন মহিলা সাংসদ যেইরূপে কটিদেশে পরিধানের বস্ত্র প্যাঁচাইয়া তর্জনী উত্তোলনপূর্বক প্রতিপক্ষের মহিলা সাংসদদের প্রতি কলতলীয় কলহবাণী উচ্চারণ করেন, তাহা শুনিয়া এই তরুণদের চিত্তশক্তি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাইয়াছে। তাহাদিগকে জনৈকা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ...।" বাধা পেয়ে থেমে যান কিংকু চৌধারি।
"সংরক্ষিত বনাঞ্চল লিখেছে?" ঝাকানাকা শুধান।
"হাঁ স্যার!" কিংকু চৌধারি চিঠি নাকের সামনে ধরে আরেক দফা পড়েন। "সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মহিলা সাংসদ।"
ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে বলেন, "সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদ বলতে চেয়েছে বোধহয়।"
কিংকু চৌধারি বলেন, "তা হবে ... ঐ একই কথা স্যার ... যাই হোক!" এই বলে তিনি আবার চিঠি পড়ে চলেন, "তাহাদিগকে জনৈকা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মহিলা সাংসদের হলুদবাগস্থ বাসভবনের প্রতিবেশীর বাড়িতে নৃশংস ডাকাতি করিবার আদেশ দিবার পর তাহারা আমার বাহিনীর ইনটেলিজেন্স শাখা হইতে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করিবার পর এই অভিযানে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। তাহারা আমার বরাবর একটি দরখাস্তে জানায়, মহিলা সাংসদদিগের বাড়ির দুইশো গজের অভ্যন্তরে তাহারা কোনো প্রকার অ্যাকশনে যাইতে সাহস পাইতেছে না। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতেও নাকি এইরূপ কতিপয় কাপুরুষ সেনাধ্যক্ষের আদেশ অমান্য করিয়া ফিলিস্তিনে হামলা করা হইতে বিরত আছে, এই রেফারেন্সও তাহারা চিঠিতে উল্লেখ করিয়াছে। আমি তাহাদিগকে আশ্বাস দেই যে দস্যুবাহিনীর আর্টিলারি শাখার গোলন্দাজেরা তাহাদের দূর হইতে ভারি গোলাবর্ষণ করিয়া ব্যাকাপ প্রদান করিবে, তাহারা যেন অযথা ভীত না হয়। কিন্তু দিনের পর দিন সংসদ অধিবেশন দেখিয়া তাহাদের মনোবল এতটাই ক্ষণভঙ্গুর যে তাহারা তাহাতেও সম্মত হইতে পারিতেছে না।"
ঝাকানাকা বলেন, "হুমমমম!"
কিংকু চৌধারি পড়ে চলেন, "দশ বৎসর পূর্বে এইরূপ বেয়াদবি কেউ করিলে আমি পত্র রচনার জন্য কলম টানিয়া না লইয়া একটি কালাশনিকভ টানিয়া সংশ্লিষ্ট হতভাগাদের কতল করিতাম। কিন্তু ইদানিং যোগ্য ল্যাংবোট সংগ্রহ কঠিন হইয়া পড়ায় এবং সাংবাদিক হতভাগাগুলি পদে পদে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার করিয়া বিষম গিয়ানজাম করায় আমার ডেপুটিগণ আমাকে নিবৃত্ত করে এবং সমস্যার গোড়ায় হস্তক্ষেপের পরামর্শ দেয়। ইনটেলিজেন্স শাখার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আপনার টেলিভিশনই আমার শিষ্যদের মানসিক দৌর্বল্যের প্রত্যক্ষ কারণ। অতএব, বিনীত নিবেদন এই যে, চিঠি হস্তগত হইবার কার্যদিবস হইতে আপনার টেলিভিশনে এই সংসদ অধিবেশনের দৃশ্যাদি সম্প্রচার করা সম্পূর্ণরূপে স্থগিত করিবেন। না করিলে আপনার ও আপনার পরিবারকে প্যাঁদাইয়া লোহিত ও নীল বর্ণের সুতা বাহির করা আমার ও আমার বাহিনীর প্রশিক্ষিত দস্যুদের পক্ষে মোটেও কঠিন কার্য নহে।"
ঝাকানাকা বলেন, "হুমমম!"
কিংকু চৌধারি বলেন, "আমি জানি আপনি এই পত্র পাইয়া পুলিশকে ডাকিয়া কান্দিতে কান্দিতে বিচার ঠুকিবেন। তাহাদিগকে লইয়া আমি চিন্তিত নহি। আমি চিন্তিত আপনাকে লইয়া। কারণ সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী স্থানীয় পঙ্গু হাসপাতালের সবকয়টি আসনই কোনো না কোনো মারাত্মকরূপে প্রহৃত ব্যক্তি দখল করিয়া আছেন। শীঘ্রই তাহারা আরোগ্য লাভ করিবেন এমন সম্ভাবনা দেখি না। প্রহারের পর দারাপুত্রপরিবারের ভগ্নাংশগুলি লইয়া কোন হাসপাতালে ভর্তি হইবেন তাহা আমার ইনটেলিজেন্স শাখার ভারপ্রাপ্ত বদরুমেজর গবেষণা করিয়া বাহির করিতে পারে নাই ...।"
ঝাকানাকা প্রশ্ন করেন, "বদরুমেজর? সে আবার কী?"
কিংকু চৌধারি, "বদরু নিজের বাহিনীকে আর্মির ছাঁচে সাজিয়েছে স্যার! বদরুলেফটেন্যান্ট, বদরুক্যাপ্টেন, বদরুমেজর ... এগুলি সব পদের নাম। এই তো গ্যালো বিষুদবারেও তো দুটো বদরুক্যাপ্টেন ধরা পড়লো স্যার!"
ঝাকানাকা বলেন, "হতভাগাটার তো সেইরকম বাড় বেড়েছে দেখি! তারপর কী বলছে সে?"
কিংকু চৌধারি পড়ে চলেন, "আপনার হাতে সময় মাত্র চব্বিশ ঘন্টা। আমার আদেশ পালন না করিলে শরীরের হাড্ডিগুলিকে পুনরায় জোড়া লাগিবার [যদি আদৌ লাগে] আগ পর্যন্ত আলবিদা জানাইয়া রাখিতে পারেন। ইতি, আপনার একান্ত বাধ্যগত দস্যু, বদরু খাঁ।"
ঝাকানাকা বলেন, "বটে? হুমমমমম! ... তা মন্ত্রী এম্পি হুড়ো দিচ্ছে কেন আপনাকে?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "মহাপরিচালক সাহেব সোজা মন্ত্রী এম্পিদের কাছে কাঁদতে কাঁদতে নালিশ করেছেন স্যার! আর তারা বেজায় চটেছেন। ওপরঅলাদের ডেকে কড়কে দিয়েছেন আর ওপরঅলারা কড়কাচ্ছেন আমাকে!"
ঝাকানাকা বললেন, "কেন?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার এই মন্ত্রী এম্পিদের তো টিভিতে চেহারা দেখানোর সুযোগ তেমন একটা মেলে না। ঐ সংসদ অধিবেশনই যা ভরসা। এখন সেটাও যদি বদরু খাঁ লোকজনকে দেখতে না দেয় তাহলে ক্যাম্নেকী?"
ঝাকানাকা বললেন, "বটে? আর এই যে বেসরকারী চ্যানেলগুলিতে টক শো হয়? সেখানে তো রোজ দেখি দুটো করে এম্পি আসে দুই দল থেকে। সেইরকম চ্যাঁচামেচি করে।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার ওসব টক শো দেখায় যখন তখন লোকে মাগছেলেপুলে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত জেগে ওসব হট্টগোল সবাই দেখার সময় পেলে তো? সংসদ অধিবেশন তো সকাল সকাল হয়, সবাই দেখতে পায়।"
ঝাকানাকা বললেন, "বটে? আর তাই বুঝি হুড়ো খেয়ে এই গভীর রাতে আমার ঘুমটা পণ্ড করার জন্যে আপনি ছুটে এসেছেন?"
কিংকু চৌধারি কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, "কী করবো স্যার ... আপনিই আশা ভরসা!"
ঝাকানাকা খবরের কাগজটা নিয়ে বললেন, "হুমমমম। তা কী নিয়ে এত গালাগালি হয় সংসদে?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার গালি দেয়ার জন্যে কি আর "কী" এর অভাব পড়েছে? যখন যা মর্জি হয় তাই নিয়ে খিস্তিখেউড় হয়।"
ঝাকানাকা কাগজ খুলে এক জায়গা থেকে পড়তে শুরু করেন। "আহ, আজ বিকেলেই লালকালি দিয়ে দাগিয়ে রেখেছিলাম। খুবই সঙিন পরিস্থিতি। শুনুন ... পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, অতীতে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে যথেচ্ছ লুটপাট, চুরিদারির নানা তথ্য তুলে ধরা নিয়ে কাউকাউ, চিগ্লাচিগ্লি এবং কয়েক দফা ওয়াকআউটের কারণে গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশন ছিল উত্তপ্ত। অধিবেশনে বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ উপসভাপতি মোবারেক চুন্নুকে সরকারি দল ‘চাম্পু চুট্টা" আখ্যা দেয়। আর স্বাধীনতার অব্যবহিত পর সরকারি দলের শাসনামলে দেশে সাইক্লোন সৃষ্টি ও লুটপাটের অভিযোগ তোলে বিরোধী দল।"
কিংকু চৌধারি বলেন, "হ্যাঁ এখন এ নিয়েই চলছে স্যার।"
ঝাকানাকা পড়ে চলেন, "স্পিকার মহব্বত বৈরাগীর সভাপতিত্বে বিকেলে অধিবেশন শুরু হলে বিরোধী দলের ইমদাদ সরকার পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দেন। তিনি চুন্নু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের সমালোচনা করেন। এ সময় প্রথম দফা ওয়াকআউট করে বিরোধী দল। ইমদাদ সরকারের বক্তব্য চলাকালেই সরকারী দলের সংরক্ষিত আসনের মহিলা এম্পি মাজেদা মাশরুম এবং বিরোধী দলের খোদেজা খারতুম প্রবল চিত্কার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তাদের হাউকাউয়ে সংসদের ভেতরে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয় এবং নবীন তরুণ কয়েকজন সাংসদ ভয়ে কেঁদে ফেলেন। সংসদের ভেতরের স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা এ সময় চালু হয়ে যায় এবং সকলকেই প্রাণ হাতে বাহিরে ছুটে বেরিয়ে আসতে হয়। একে রানআউট বলা হবে না ওয়াকআউট বলা হবে এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলীয় নেতাদের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কলহ শুরু হয়। এক পর্যায়ে মাজেদা মাশরুম ও খোদেজা খারতুম একে অপরের সাথে বিষম চুলাচুলিতে লিপ্ত হন। এ অবস্থায় সরকার দলীয় এম্পি বেচারাম চৌধুরি সংসদে ভীতিকর পরিস্থিতির কথা বলে স্পিকারের কাছে এ থেকে মুক্তি চান। স্পিকারের আদেশে কর্তব্যরত সারজিয়েন্ট অ্যাট আর্মস দুই লড়াকু মহিলা এম্পিদের পৃথক করেন এবং পরস্পরের হাত থেকে অপরের কয়েক গাছি চুল উদ্ধার করেন। এরপর মাজেদা মাশরুম ও খোদেজা খারতুমকে সংসদ ভবন হাসপাতাল কক্ষে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কে আগে চিকিৎসা পাবেন এ নিয়ে পুনরায় বিতর্ক শুরু হয়, এবং এক পর্যায়ে মাজেদা মাশরুম ও খোদেজা খারতুম পুনরায় চুলাচুলিতে লিপ্ত হন। কর্তব্যরত সারজিয়েন্ট অ্যাট আর্মস পুনরায় তাদের পৃথক করেন এবং পরস্পরের দাঁত থেকে প্রতিপক্ষের কানের লতির আংশিক উদ্ধার করেন। এরপর তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসায় আর কুলাবে না বলে উত্তমরূপে মাধ্যমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। বিরোধী দলীয় সাংসদ খোদেজা খারতুমের ডান কানে ব্যান্ডেজ কেন কর্তৃপক্ষ জবাব চাই বলে বিরোধী দলীয় সাংসদরা কিছুক্ষণ স্লোগান দেন।"
কিংকু চৌধারি শিউরে ওঠেন। বলেন, "স্যার, বদরুর চ্যালাপ্যালাগুলি মনে হয় এ কারণেই এত ভয় পেয়েছে। রোজ রোজ এমন হড়ড় শো দেখলে একটু তো পেগ্লে যাবেই ওরা!"
ঝাকানাকা মন দিয়ে পড়তে থাকেন, "গতকাল অধিবেশনের শুরুতেই স্পিকার ইমদাদ সরকারকে ফ্লোর দিয়ে বলেন, কাউকে অসম্মান ও কটাক্ষমূলক বক্তব্য যেন কেউ এ সংসদে না দেন। কেউ যেন কাউকে চুর বৈতল প্রভৃতি না বলেন। কানাকে কানা ও খোঁড়াকে খোঁড়া বলা অনুচিত বলে তিনি ন্যায়শাস্ত্র থেকে কয়েকটি শ্লোক উদ্ধৃত করেন।"
কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার স্পিকারের কথা এম্পিরা শোনে না। মাইক পেলেই হট্টগোল করে।"
ঝাকানাকা পড়ে যান, "বিরতির পর গুটি গুটি পায়ে সকলে আবার ভেতরে ফেরার পর সরকারী দলের বেচারাম চৌধুরি শুরুতেই সংসদে ভীতিকর পরিস্থিতির কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘স্যার গো, আমি বিয়াপক শঙ্কিত, কারণ পেছনে বসা নারী এম্পিরা যেভাবে বেঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে আঁচল কোমরে পেঁচিয়ে হাতপায়ের আঙুল উঁচিয়ে আলাজেহোভা বার করে চিগলাচ্ছেন, তাতে কেবল বক্তব্য সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিলেই চলবে না; তাদের শান্ত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। মাননীয় স্পিকার, সম্প্রতি আমাদের বিজ্ঞ বন ও পরিবেশমন্ত্রী জনাব শার্দুল মেহগনি বন বিভাগের পঞ্চাশ জন বনরক্ষীকে বন্য জন্তু নিশ্চলীকরণের উপর এক সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। আমার মনে হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই তাদের কয়েকজনকে সংসদের ভিতরে মোতায়েন করা উচিত। চেয়ে দেখুন মাননীয় স্পিকার, দুই নারী সাংসদই কামড়ে তাদের প্রতিপক্ষের কানের লতি দুই সুতা চিবিয়ে নিয়েছেন।’ তাঁর এই বক্তব্য শেষে অবশ্য স্পিকার বলেন, ‘ভয়ের কোনো কারণ নেই। পেম দিয়ে, ভালুবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করে নেব, মা কসম ঠাকুর!’ এরপর তিনি অ্যাকশন হিরো নাড়ুবেল ও মিষ্টি মেয়ে দোদোয়েল অভিনীত একটি পুরনো বাংলা সিনেমার গানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, নাঞ্চাকুতে নয়, সামুরাইতে নয়, পেম পেম পেম দিয়ে মন করেছি জয়। আজ বিষুদবার বিকেল তিনটায় আবার অধিবেশন শুরু হবে।"
কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার একটু গরম দুধ কি হরলিক্স হবে আপনার বাসায়? মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে!"
ঝাকানাকা বলেন, "বদরুর পুরনো চ্যালাচামুণ্ডাদের গেরেফতার করায় সে এখন কলেজ ফেল ছেলে ছোকরা দিয়ে তার গুণ্ডাবাহিনী চালাচ্ছে বলে উড়ো খবর এসেছে কানে। তারা তো দুধের ছোক্রা, এরকম ভয়ঙ্কর কায়কারবার টিভিতে দেখলে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। আপনি মহাপরিচালককে বলবেন ক্যামেরাম্যানদের দুয়েকটা অ্যাকশনের ক্লোজআপ নিতে। আর মাসখানেক এরকম চালিয়ে গেলে বদরুর বাহিনী আমরা পুরো কব্জা করে ফেলতে পারবো! তারপর দেখা যাবে হতভাগা বদরুর বদমায়েশি কোথায় যায়! এমন ইসকুরু টাইট দোবো ...!"
কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার মহাপরিচালক মনে হয় শয্যাশায়ী। ভীষণ ভয় পেয়েছেন। এসএসএসএফ ডেকে বাসায় গেছেন।"
ঝাকানাকা বললেন, "ভীতু লোকজন নিয়ে বড় মুশকিল। যাই হোক, আসুন আজকের টক শোটা দেখা যাক।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার অনেক রাত তো হলো। আমাকে একটা বুদ্ধি বাতলান, নয়তো আমিও বাড়ি যেয়ে একটু ঘুমাই।"
ঝাকানাকা বললেন, "আমার মনে হয় আজকে ষোড়শী টিভির টক শোটা দেখলে কিছু ক্লু পাওয়া যাবে!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "কেন স্যার কেন?"
ঝাকানাকা খবরের কাগজ তুলে নিয়ে বিনোদন পাতা বার করে পড়লেন, "আজ রাত ন'টায় প্রচারিত হবে টক শো ষোড়শীর রাত। এতে উপস্থিত থাকবেন সংরক্ষিত আসনের মাননীয়া সরকারদলীয় সাংসদ মাজেদা মাশরুম ও মাননীয়া বিরোধীদলীয় সাংসদ খোদেজা খারতুম!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, এনারাই না গতকাল মারপিট করেছিলেন সংসদে?"
ঝাকানাকা বললেন, "হুঁ! দেখি আজ সংসদের বাইরে বেসরকারী টিভির ছোটো রিঙে তারা কেমন লড়াই করেন!"
রিমোট টিপে ষোড়শী টিভিতে টিউন করতেই এক ক্ষয়াটে চেহারার উপস্থাপককে দেখা গেলো। তার চোখের চাহনি ভীরু চঞ্চল, পরনে স্যুট টাই, লাল মোজা। তিনি সন্তর্পণে একটি চেয়ারে বসা। দুই পাশে দুটি প্রকাণ্ড সিংহাসনে বসে আছেন দুই সংরক্ষিত আসনের মহিলা এম্পি। দুজনেরই দশাসই শরীর। একজনের বাম কানে, অপরজনের ডান কানে ব্যাণ্ডেজ।
উপস্থাপক মিনমিনে ভেজাবেড়ালের গলায় বললেন, "সুধী দর্শক, আজ ষোড়শীর রাতে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই আমি চারুবাক মুনসি। আজ আমাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন মাননীয়া সরকারদলীয় সাংসদ মাজেদা মাশরুম।"
বাম কানে ব্যান্ডেজপরিহিতা বৃষস্কন্ধ মহিলাটি মাথা নাড়লেন।
"আরও উপস্থিত আছেন মাননীয়া বিরোধী দলীয় সাংসদ খোদেজা খারতুম।"
ডান কানে ব্যান্ডেজভূষিতা শালভূজ মহিলাটি বললেন, "ঘোঁৎ!"
টিং করে একটা ঘন্টা বেজে ওঠে বক্সিং রিঙের মতো, দুই এম্পি গা ঝাড়া দিয়ে বসেনে। উপস্থাক ঢোঁক গিলে বললেন, "ইয়ে, মাননীয়া বিরোধী দলীয় সাংসদের কাছে জানতে চাইবো, গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্যে আমাদের সামনে এখন কী পথ খোলা আছে?"
খোদেজা খারতুম কাংস্যবিনিন্দিত কণ্ঠে বললেন, "ধন্যবাদ চারু মিনসে! আমি শুরুতেই আমার নির্বাচনী এলাকার বিরোধী দলের ব্যালটে সিলমারা ভোটারদের শুভেচ্ছা জানাই। যারা সরকারী দলে ভোট দিয়েছেন তাদের জানাই মুর্দাবাদ! আপনাদের জন্যেই এরকম একটি ফ্যাসিবাদী জঘন্য সরকার আজ ক্ষমতায়। দেশ জাতি ধর্ম এয়ারপোর্টের নাম আজ বিপন্ন। আমাদের নেতা শহীদ চুন্নুর নাম আজ সারা দেশ থেকে মুছে ফেলার জঘন্য ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রান্ত চলছে। সরকারী দল ভারতের কাছে দেশ বেচে দিতে চাইছে। সরকারী দলের নেত্রী, ভোটচোর ঢালী বিলকিস আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভারতে গিয়ে দেশটিকে আন্তর্জাতিক দরের অর্ধেক দরে বিক্রি করে এসেছেন। তাদের যৌথ ষড়যন্ত্রের কারণে গত মাসে আমার ভাইঝির বিয়ের সময় কলকাতায় শাড়ির দাম আমাদের গত সরকারের আমলের দামের প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। একটা লেহেঙ্গার দাম নিয়েছে প্রায় চল্লিশ হাজার ভারতীয় রূপি। দেশের মানুষ এই জঘন্য ব্রাহ্মণ্যবাদী অপশাসনের ষড়যন্ত্রে আজ দিশেহারা। চারিদিকে অরাজকতা। কলকাতায় বিয়ের শপিং করতে গিয়ে দরিদ্র মানুষের আজ নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশের ভিতরেও পরিস্থিতি খারাপ। আমাদের আমলে আমার বড় ছেলেকে মাসে দশ হাজার টাকা হাত খরচ দিতাম, সে এএফসি বিএফসি সিএফসিতে তার বান্ধবীকে নিয়ে খেয়ে হেসেখেলে চলতে পারতো। আর এই ইয়াজোট সরকারের আমলে দেখুন আপনারা! আমার ছোটো ছেলে বিশ হাজার টাকার এক পয়সা কম দিলে চিৎকার চেঁচামেচি হট্টগোল করে কেঁদে ভাসায়। একটা বাচ্চা ছেলে তার বান্ধবীকে নিয়ে ঢাকা শহরে খেয়ে পরে চলতে গেলে বিশ হাজার টাকা খরচ হয়! কেন? এই ইয়াজোট সরকারের অপশাসনের কারণে! টেন্ডার চান্দাবাজিতে আজ জনগণ দিশেহারা। সরকারদলীয় এম্পিরা দুহাতে কামাচ্ছে। প্লট আদায় করছে। চান্দাবাজির তোল্লা আদায় করছে। আর আমরা? গ্যালোবার জমানো টাকা টিপে টিপে খরচা করছি। দুটো প্লট পেয়েছিলাম তার একটায় মাত্র ফাউন্ডেশন করতে পেরেছি, আরেকটায় বাঁশ পুঁতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখেছি এই জমির মালিক বেগম খোদেজা খার্তুম! ধিক সেই জাতিকে যে জাতির সংরক্ষিতাদের প্লটে বাড়িটুকু পর্যন্ত ওঠে না!" চোখে আঁচল দিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।
চারু মুনসি শুধরে দিতে চান, "সংরক্ষিতা নয় মাননীয়া সাংসদ, কথাটা হবে সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ...।"
খোদেজা খারতুম বসা গলায় বলেন, "ধন্যবাদ চারু মিনসে! আমি এই কথা সংসদে বলতে গিয়েছিলাম। তখন এই মাজেদা মাশরুম আমাকে আবাগী বলে গালাগালি করে আক্রমণ করে। দেখুন আমার ডান কানের লতি সে চিবিয়ে দুই সুতা খেয়ে ফেলেছে। সারা দেশটা এরা খেয়ে শেষ করেছে, পেট ভরেনি, এখন আমাদের কানের লতি ধরে কামড়ায়!"
চারু মুনসি বিব্রত দৃষ্টিতে তাকান মাজেদা মাশরুমের দিকে। কিন্তু মাজেদা মাশরুম ভাবলেশহীন! তিনি কিছুই বলেন না, কেবল বিষদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন খোদেজা খারতুমের দিকে।
খোদেজা খারতুম চিৎকার করে বলে চলেন, "আপনারা কোন সাহসে চুন্নু এয়ারপোর্টের নাম পাল্টাতে যান? আমাদের নেতা মরহুম চুন্নুর নাম দেশ থেকে মুছে ফেলা এত সহজ? আমার বোনের ছোটো ছেলেটার নাম চুন্নু! পারবেন ওর নাম পাল্টিয়ে মধু ঢালী রাখতে? পারবেন?"
মাজেদা মাশরুম প্রকাণ্ড একটা হাই তোলেন শুধু। চারু মুনসি অস্বস্তিভরে ডানে বামে তাকান।
খোদেজা খারতুম মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে তুলে মীর জুমলার কামানের মতো মুখ করে গর্জাতে থাকেন, "আপনারা বলেছেন আমার দলের নেত্রীর সোনার ছেলে মোবারেক চুন্নু নাকি চুট্টা! কোন সাহসে আপনারা তাকে চুট্টা বলেন? সে কী চুরি করেছে? সে আমাদের নেতা! সাগরের মতো বিশাল তার বুক। আমাদের প্রতিটি কর্মী মোবারেক চুন্নু বলতে অজ্ঞান। আর আপনারা তাকে গুন্ডা লাগিয়ে পিটিয়ে পোঁদের হাড় ফাটিয়ে জখম করেছেন! সে এখন সিঙ্গাপুরে, নড়তে চড়তে পারে না, পটিতে বসে হাগু করে আর দেশের জন্য কাঁদে! তাকে আপনারা চুট্টা বলেন, অথচ তার চিকিৎসার খরচ পর্যন্ত আমাদের গরীব কর্মীরা বাড়িগাড়ি বেচে চান্দা তুলে যোগাড় করছে রোজ রোজ! আমার ভাবী তার হামার গাড়িটা বেচে দিয়েছেন মোবারেক চুন্নুর চিকিৎসার জন্য, জানেন? আর জানবেন কোত্থেকে? চুরির পয়সা ঠিকমতো খরচ করার রুচি আপনাদেরে থাকলে তো? দুটো পয়সার মুখ দেখলে ট্রাক কিনে রাস্তায় নামিয়ে দ্যান আপনারা, হামার গাড়িতে চড়ার বুকের পাটা থাকলে তো!"
কিমাশ্চর্যম, মাজেদা মাশরুম আবারও একটি হাই তোলেন শুধু।
একটানা কথা বলে খোদেজা খারতুম হাঁপিয়ে ওঠেন, জগ তুলে পানি খান ঢকঢক করে।
চারুবাক মুনসি কম্পিত গলায় বলেন, "মাননীয়া সরকারদলীয় সাংসদ, আপনি বলুন, গণতন্ত্রকে কার্যকর করে তোলার জন্যে আসলে বিরোধী দলের ভূমিকা কতটুকু?"
মাজেদা মাশরুম ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলেন, "ধন্যবাদ চারু মিনসে! আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই ষোড়শী টিভির দর্শকদের। আপনার প্রশ্নটা আমি বুঝিনি, কিন্তু জাতির উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, আমাদের, এই মহিলা এম্পিদের আরো সংযত হতে হবে। কথা বলতে হবে আরো মিষ্টি করে, আরো নরম করে, আরো সুন্দর করে। এক বিঘৎ হাঁ করে ওরকম গাঁক গাঁক করে চ্যাঁচানো আমাদের শোভা পায় না ...।"
খোদেজা খারতুম চিলচিৎকার করে ওঠেন, "ওরে পোড়ারমুখী, তুই কী বলতে চাস রে ছোটোলোক, আমি চ্যাঁচাই? তোর কথা ছেড়েই দিলাম, তোর দলের ঐ যে এম্পি যেটা আহাম্মদপুরে আমার পাশের বিল্ডিঙে থাকে, সেই হামিদা হারপুন যে পেত্যেক জুম্মাবার মাছের বাজারে গিয়ে মাছঅলাদের সাথে চিল্লাচিল্লি করে, তার কোনো খোঁজখবর রাখিস? এই তোদের জন্যই দেশে গণতন্ত্র নাই! আবার বলিস আমার নেত্রী মর্জিনা চুন্নু অশিক্ষিত? বলিস আমার নেতা মোবারেক চুন্নু অশিক্ষিত? অশিক্ষিত তোরা! দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। এখন ইন্টারনেটে লেখাপড়া করা যায়। আমার নেতা সিঙ্গাপুরে বসে গবেষণা করছে! তোর নেত্রীর মতো চোরাই ডক্টরেটের আড়ত নই, আর তার ছেলের মতো টুকে পাস করা আইটিকুতুব নই বলে কি আমাদের কোনো দামই নেই?"
কিমাশ্চর্যম, মাজেদা মাশরুম চুপ করে কথাগুলো শোনেন কেবল। চারু মুনসি অস্বস্তিভরে তাকান তার দিকে।
খোদেজা খারতুম আবারও জগ তুলে পানি পান করেন কোঁতকোঁত করে। মাজেদা মাশরুম সেই অবসরে আবারও বলেন, "যা বলছিলাম, সাংসদা যারা আছি আমরা, তাদের হতে হবে ভদ্র মিষ্টি লক্ষ্মী। সাত চড়েও আমাদের রা কাড়া চলবে না। আমরা কথা বলবো আস্তে আস্তে, এবং কদাচ বেঞ্চের ওপর উঠে চিৎকার করবো না। কান কামড়ে ছিঁড়ে নেয়া ... ও বাব্বাহ আমি ভাবতেই পারি না!"
ঝাকানাকা লাফিয়ে ওঠেন, "জনাব কিংকু! এক্ষুণি ষোড়শী টিভিতে ফোর্স পাঠান! বলুন মাজেদা মাশরুমকে গ্রেফতার করতে! এটা আসল মাজেদা মাশরুম নয়, বদরু খাঁ! আর যত তাড়াতাড়ি পারেন আসল মাজেদা মাশরুমের বাড়িতে লোক পাঠান। আমার ধারণা ভুল না হলে হতচ্ছাড়া বদরু তাঁকে অজ্ঞান করে বেঁধেটেধে রেখেছে!"
কিংকু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওয়্যারলেস টিপে নির্দেশ দিতে থাকেন। তারপর এক ফাঁকে বলেন, "স্যার বুঝলেন কী করে?"
ঝাকানাকা হাতের তালুতে কিল মেরে বললেন, "তাকিয়ে দেখুন! টিভির এই মাজেদা মাশরুমের বাম কানে ব্যান্ডেজ!"
কিংকু বোকার মতো তাকিয়ে দেখে বলেন, "তো কী হয়েছে স্যার? খোদেজা খারতুম কামড়ে দিয়েছে ... পেপারে পড়েননি?"
ঝাকানাকা উত্তেজিত গলায় বললেন, "কিন্তু খোদেজা খারতুমের ব্যান্ডেজ তো ডান কানে!"
কিংকু বলেন, "হ্যাঁ, পেপারে তো তা-ই লিখেছে! বিরোধী দলের সাংসদরা তা নিয়ে মিছিলও করেছে।"
ঝাকানাকা বলেন, "মনে করুন, মারপিট লেগেছে। আপনার প্রতিপক্ষের ডান কান আপনি কামড়ে ধরেছেন। এ অবস্থায় সে কি পাল্টা আপনার বাম কানে কামড়ে ধরতে পারবে?"
কিংকু কিছুক্ষণ মনে মনে ভেবে বাতাসে আঙুল দিয়ে ছক কেটে বলেন, "না স্যার!"
ঝাকানাকা বলেন, "বদরুও সেই ভুল করেছে। মনে হয় আসল মাজেদা মাশরুমের মুখোমুখি বসে মেকআপ নিতে গিয়ে বাম ডান গুলিয়ে ফেলেছে! আজ ব্যাটাকে পেয়েছি বাগে!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, আমি অবশ্য ভাবছিলাম, এরকম মিষ্টি মিষ্টি কথা সরকারী দলের সংরক্ষিত আসনের মহিলা এম্পিরা বলেন না দেখে আপনি হয়তো সন্দেহ করেছেন! হতচ্ছাড়াটা নিজের চ্যালাচামুন্ডাকে কনভিন্স করার জন্যে নিরীহ নখদন্তহীন মহিলা এম্পি সেজেছে কেমন দেখুন!"
ঝাকানাকা কিছু বললেন না, টেলিভিশন স্ক্রিনের দিকে চেয়ে রইলেন। সেখানে এক বিস্ময়কর দৃশ্য। মাজেদা মাশরুম আর খোদেজা খারতুম গলাগলি করে হাপুস নয়নে কাঁদছেন। চারু মুনসি টাই তুলে চোখ মুছছে।
প্রাসঙ্গিক সংযোজন
[সমাপ্ত]
.
.
.
গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too
[/justify]
মন্তব্য
আপনি কিভাবে যে এগুলো লেখেন!
কিন্তু বদরুবাহিনীর সদস্যদের মনোবল কমে যাচ্ছে কেন সেটা ঠিক বুঝতে পারিনি। মনে হয় আবার পড়তে হবে।
ওরে বাবা মরে গেলাম।
উত্তমরূপে মাধ্যমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়! ওরে বাবা।
হি হি হো হো হো হো মাগো হাসতে হাসতে মারা গেলাম।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হা হা হা হা হা...পুরা লেখাটা কোট করতে মঞ্চায়...
অসামান্য! এমন অদ্ভুত ভালো লেখা অনেকদিন পড়িনি। মুগ্ধতা রইলো।
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
হুম্।
মাজেদা মাশরুম বেশ গুণের আছে। ভাবলেশহীন থেকেও বিষদৃষ্টি হানতে জানে।
...............................................................................................
জগতে সকলই মিথ্যা, সব মায়াময়,
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয় ।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
"সংরক্ষিতা"
এটা পড়ে হাসতে হাসতে শেষ... দূর্দান্ত...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
) ) )
ঝাকানাকা রক্স
----মনজুর এলাহী ----
হা হা হা...
লেখা যথারীতি সেইরকম।
ভিডিও দেখে পুরা 'থ।
চ্রম চ্রম
হা...হা...
এরা পারেও বাবা! tv তেও বাদ যায় না!
অসাধারণ লেখা। ফেসবুকে ভিডিওটি দেখার পর থেকে কান্না পাচ্ছিলো। এখন বিবরণ পড়ে হাসি থামাতে পারছি না।
থাম্বস আপ।
হিম্ভাই, অনেক মজা করে লিখেছেন। কিন্তু হাসতে পারতেছি না। কেবল বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, 'হা ভগবান...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লেখা নিয়া তো কোনো কথা নাই, তবে ভিড্যু নিয়া দুইখান কথা আছে। এসব ভিড্যু লেখায় সংযোজন করলে আগে একটা সাবধানবানী দিয়ে নেয়া দরকার, আমি নিজেই চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম ভয়ে।
ছোটোবাচ্চাদের ভিডিওটা একবার দেখাতে পারলে তাদের ভাত খাওয়ানো নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না। "ভাত খাও নয়তো মহিলা এম্পি চলে আসবে" বলে কার্যোদ্ধার করা যাবে।
দারুন গল্পটা...মজা পেয়েছি বিস্তর।
আজকে দেখব বাচ্চাদের এমপি থেরাপি দিয়ে, ভাত না খেয়ে যাবে কই?
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আরিফ জেবতিক ভাইয়ের মন্তব্য কপিপেস্ট হিসেবে এখানে পড়তে হবে।
টেলিভিশন তেমন একটা দেখা হয় না, কথাম্যালা জাতীয় প্রোগ্রামগুলো তো আরো না। তাই মাঝে মাঝে একটু অপরাধবোধে ভুগতাম, এখন বুঝতেছি এগুলোর থেকে তফাতে থেকে আসলে ভালোই আছি।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
... গতকাল ভিড্যুটা দেখে আউলায় গেসিলাম, কী চিৎকাররে বাবা!
হাসতে হাসতে মাটিতে পড়ে গেলাম লেখা পড়ে! পুরোটাই কোট করা যায়!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
টপ থ্রি ঝাকানাকার মধ্যে এইটা থাকবেই থাকবে!! (এখন পর্যন্ত )
সকালে পড়ছিলাম । এখন আবার পড়লাম । চ্রম ।
বোহেমিয়ান
ভয়ানক মজার!
এঁয়ারা তো পুউরো আমাদের কাকলি-সোনালি জুটি দেখি!
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
সকালেই পড়ে নিসিলাম
প্রাপ্য পাঁচতারা দিয়া গেলাম্বস।
_________________________________________
সেরিওজা
এই লেখা এত ভালো হওয়ার পেছনে কার সবচে বেশি অবদান? কার আবার আমার। B-) অনলাইনে আমার সাথে চ্যাট করতে করতেই তো হিমু ভাই "দাঁড়াও একটা ঝাকানাকা মাথায় আসছে" বলে কেটে পড়লেন।
আমি এই অনুষ্ঠান যারা সরাসরি দেখেছেন তাদের একজন। আরেকবার এমন একটা অনুষ্ঠান দেখতে পারলে আমার জীবিতকালের সব পাপ কাটা যাবে বলে আমার ধারণা। বদরু খাঁ এর কথায় মনে পড়ল, ঝগড়ার এক পর্যায়ে এক নেত্রী অপরকে অশিক্ষিত বলে অভিহিত করেন। তখন আরেকজন বলেন, আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি, আপনি পড়েছেন বদরুন্নেসাতে। আপনি কীভাবে আমাকে অশিক্ষিত বলেন?
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
এই গল্পের বেশির ভাগ মালমশলাই জিয়েমের সাপ্লাই করা। আমি শুধু একটু চুনকাম করে দিসি। পাত্রপাত্রীরা এত কালারফুল একেকজন, গল্প লিখতে তেমন কিসু লাগেই নাই।
মালমশলা আর কিসের, কেবল ঘটনার হালকা বর্ণনা। তাদের রঙের উপরে আপনি যা চড়িয়েছেন, তার জবাব নাই।
"সং+রক্ষিতা" তো পুরাই উরাধুরা! আরও কোট করতে ইচ্ছা করছিল, লেখার থেকে কোটেশন বড় হয়ে যাবে সেক্ষেত্রে।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
হোহোহোহোহো... মায়রে বাপ... মইর্যা গেলাম হাস্তে হাস্তে...
_________________________________________
সেরিওজা
উফ্ কিভাবে পারেন এরকম লিখতে?
হাসি আটকাতে পারছি না।
এই এমপিদের মনে হয় না কোনদিন বোধোদয় হবে।
আগামী মেলায় গোয়েন্দা ঝাকানাকা সিরিজ চাই কিন্তু।
পাপিষ্ঠ প্রকাশক এই বইমেলায় আমার বই বের করে সর্বস্বান্ত হবার মুখোমুখি। ঝাকানাকার কথা বললে সে আমার পেছনে কোনো এক বদরুমেজর লেলিয়ে দিতে পারে।
সামনের বইমেলায় ঝাকানাকাকে মোড়কবন্দী দেখতে চাই।
==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
খুব ভাল লেগেছে। কয়েকজায়গায় হাসতে গিয়ে পেট ব্যাথা অবস্থা!
কয়েকটা প্যারা কি একটু বেশী বড় হয়ে গিয়েছে? মাঝখানের দিকে গিয়ে হয়ত কোন কোন পাঠক লাফ দিয়ে পরের প্যারায় চলে যাবে।
আপনি প্রায়ই বলেন গঠনমূলক মন্তব্য করতে, তাই বলা।
এই মাশরুম খারতুমদের বকরবকরকে বাস্তবানুগ করতে গিয়েই ...
দুর্দান্ত। পুরো ঝাকানাকা লেখা। আর ভিড্যুটা সবার মন্তব্য পড়ে ভয়ে আর দেখলাম না।
তবে এবার যেন ঝাকানাকার গোয়েন্দাগিরি বড় কম মনে হল। দুই মহামাননীয়াই সব ফুটেজ মেরে দিয়েছেন। সামনের বার ঝাকানাকার কীর্তিকলাপ আরেকটু চাই।
কৌস্তুভ
- আমি তো ভাবছিলাম, ঝাকানাকা বুঝি একটা উন্মুক্ত হাডুডু খেলার আয়োজন করবে। আর সেখান থেকেই বেরিয়ে পড়বে বদরু খাঁ'র আসল রূপ!
এই দুই মহিলার কাইজ্যা দেখে কাবাডি খেলা ছাড়া আর অন্যকিছু আমার ক্ষুদ্র মাথায় আসে নাই এখনো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
'হাডুডু' না ধুগোদা, 'হাঁটুটু' ।।
***********************************************
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
'সংরক্ষিতা' পড়ে আক্ষরিক অর্থেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলাম।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
আপনে মানুষ না...সাক্ষাৎ মজিদ
হাঃ হাঃ হাঃ..... সবাইকে দারুন এক খোঁচা দিলেন....
(৩১৬৭)
নতুন মন্তব্য করুন