ম্যারাডোনা জাতি

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ০৯/০৭/২০১০ - ১১:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের মিডিয়াতে মানুষের আন্তর্জাতিক অর্জনগুলো যে বিস্তৃতি নিয়ে কাভার করা হয়, সেটি মনোযোগ দিয়ে দেখলে বাংলাদেশ সম্পর্কে ঠিক কী কী ধারণা হতে পারে? ধরা যাক, ভিনগ্রহ থেকে জনৈক আগন্তুক এসে হাজির হলো বাংলাদেশে, স্কাউটশিপ থেকে নেমে কোনো নিউজস্টল থেকে কিনলো এক কপি প্রথম আলো, কিংবা টিভি খুলে ধরলো এটিয়েনবাংলা। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস নোবেল পেলেন, মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট জয় করলেন [এ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু সংশয় আছে], মাকসুদুল আলম পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রকল্পে সফল নেতৃত্ব দিলেন ... বিরাট বিকট কাভারেজ নিয়ে মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ছে এইসব সাফল্যের কাহিনীর ওপর।

কোনো সন্দেহ নেই, ভিনগ্রহী ভদ্রলোক তার লগবুকে লিখবেন, এই জাতির নসিবে অতীব দুষ্প্রাপ্য মাণিক্যযোগ ঘটেছে।

কথাটা মিথ্যেও নয়। আমরা তো আগে নোবেল পাইনি, আগে এভারেস্টেও চড়িনি, আগে কোনো শস্যের জিনোম সিকোয়েন্সিং করিনি। আমরা এ নিয়ে পত্রিকায় বীভৎস বিশাল ফন্টে খবর ছাপিয়ে কিছুটা আনন্দ উল্লাস করবো না কেন?

অবশ্যই করবো। কিন্তু আমরা ঠিক ওখানে থামতে জানি না। ডক্টর ইউনুস তাঁর নোবেলখানা বগলস্থ করে রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসতে চান, আবার পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে রাজনীতির মাঠ থেকে সটকেও পড়েন। আলু-স্টার মিডিয়াগোষ্ঠীর আয়োজিত ও নিয়োজিত তারকা মুসা ইব্রাহীম ময়দানে নেমেছেন তরুণদের আইকন হিসেবে দুঃসাধ্য ইঁদুরদৌড়ে, তবে মাকসুদুল আলম এখন পর্যন্ত স্বীয় ধীশক্তির বলে ব্যবহৃত হওয়া থেকে দূরে আছেন।

এই যে কিছুদিন পর পর এক একটা মানুষের নাম ঝলক দিয়ে ওঠে আমাদের মিডিয়ার আকাশে, আমরা আসলে এঁদের বীরপূজা শুরু করি ঠিক কী ভাবনা থেকে? উচ্চশিক্ষিত প্রবাসীরা ডক্টর ইউনুসের রাজনৈতিক দলের পাণ্ডা হবার জন্যে কিলাকিলি করেন ঠিক কী ভেবে? মুসা ইব্রাহীমকে তরুণসমাজের রোল মডেল বানানোর চেষ্টায় আলু-গ্রুপ কেন ঘর্মাক্ত হয়?

আমি অনুভব করছি, এই মর্মান্তিক উচ্ছ্বাস আমাদের অন্তর্লীন দারিদ্র্যকে উল্টোপিঠে বহন করে চলে। বিজ্ঞান, ক্রীড়া, কলা, কৃষ্টি, অর্থনীতি, প্রযুক্তি সবকিছুতেই আমরা একটু একটু করে পিছু হঠতে হঠতে এখন পৌঁছে গেছি এমন এক পশ্চাদভূমিতে, যেখানে আমাদের ভূমিকা কেবল দর্শকের। একটিবার তাকান আমাদের দেশে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে উন্মত্ত মানুষের দিকে, দেখুন আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের পতাকা নিয়ে তাদের উৎকট উদ্দীপনা, ওখানে ফুটনোটে খুদি খুদি হরফে কী লেখা আছে? ওখানে আছে সেই পশ্চাদভূমির নিরুপায় দর্শকের হতাশাটুকু। আমাদের চারপাশে জীবন আর পৃথিবী হয়ে চলছে, ঘটে চলছে, করে চলছে, আমরা তা থেকে দূরে পড়ে আছি বহু অতীতে, স্পর্শ আর সাধ্যের বাইরে কোনো প্রিজনার অব আজকাবান হয়ে। আমাদের এই একশো ষাট মিলিয়ন মানুষের বেশির ভাগের মনেই ফুঁসছে দুর্দমনীয় সাধ, আমরা কেবল দেখে চলতে চাই না, আমরা শামিল হতে চাই এই সময় আর এই পৃথিবীতে। পারি না বলেই আমরা অশালীন তিনশো মিটার দীর্ঘ আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের পতাকা ওড়াই আকাশে, দেখাতে চাই, আমরা আছি, সমর্থক হয়ে আমরা অংশ নিচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে স্ফূরিত ঘটনায়। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশ খেলে, তিনশো মিটার দীর্ঘ একটি বাংলাদেশের পতাকা কি উড়েছে দেশে? ওড়েনি, কারণ যে সাধ আমাদের হৃদয়ে অভুক্ত বাঘের মতো গর্জন করে ফুঁসছে, তার নিবৃত্তি ঘটে, যখন তামিম ইকবাল প্যাড পরে মাঠে নামে।

আমাদের এই জাতিগত অনপনেয় তৃষ্ণা আর অতৃপ্তির কথা গোপন নয়, তার অস্ফূট অর্ধস্ফূট কল্লোলস্বর মিডিয়া কান পেতে শোনে। এই মিডিয়া তাই নোবেল গলায় ইউনুসকে জাতির ত্রাতা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে, পর্বতারোহীকে বানাতে চায় তরুণের ঈশ্বর। হিমশৈলের দৃশ্যমান সফল অংশটুকুর নিচে যে বৃহদাকার নিমজ্জিত ব্যর্থতা, তা কি ভিনগ্রহীর চোখে গোপন থাকে?

একটি সাফল্য নিয়ে অনির্দিষ্টকাল একে অন্যের পিঠ চাপড়ে উল্লাসের বিলাসিতা আমাদের নেই, যদি আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকাই। আমাদের একজন শান্তিতে নোবেলজয়ী আছে, কিন্তু দেশে শান্তির অনুকূল রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেই। একজন এভারেস্টজয়ী [আমার সংশয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করি] পর্বতারোহী আছে, দেশে কোনো পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণকেন্দ্র নেই। একজন জিনোম সিকোয়েন্সিঙে অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী আছেন, দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলট্রাসেন্ট্রিফিউজ নেই। সাফ গেমসে আমরা কারাতে ইভেন্টে চারটি সোনা জয় করি, দেশে কোনো কারাতে একাডেমি নেই। এভাবে প্রতিটি সাফল্যের পেছনে হাত দিলে আমরা লেজের মতো আবিষ্কার করি প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবটুকু। কে জানে, হয়তো প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিলেই আমাদের মধ্যে ব্যতিক্রম হিসেবে উঠে আসা সফল মানুষগুলো নষ্ট হয়ে যান। আমাদের আসল রোগ হয়তো প্রতিষ্ঠানের যত্ন নিতে না পারা। হয়তো আজীবন ব্যক্তি উদ্যোগেই আমরা বছরে একজন দু'জনের নাম শুনবো নানা ক্ষেত্রে, কিছুদিন চেঁচাবো, তার খবর ব্লগ আর ফেসবুকে শেয়ার করবো, তারপর ভুলে যাবো। হিমশৈলের চূড়ায় শুয়ে রোদের নিচে শরীর তাতাতে দিয়ে ভুলে যাবো কত নিমজ্জন ইতিহাস হয়ে চুপচাপ ভেসে চলছে আমাদের মনোযোগের আড়ালে।

বাংলাদেশের এই বিচ্ছিন্ন সাফল্য নিয়ে আনন্দ করতে এখন অভিমান হয়। কেন আমাদের একজন বিজ্ঞানী রসায়নে নোবেল পাবেন না? কেন এভারেস্টে পৃথিবীর কনিষ্ঠতম কিশোরীটি বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবে না? কেন বাংলাদেশে এমন একটি ইনস্টিটিউট গড়ে উঠবে না, যা বাংলাদেশের সকল প্রধান খাদ্যশস্য আর অর্থকরী শস্যের জিন সিকোয়েন্স করবে আগামী দশ বছরে? কেন বাংলাদেশের একজন নভোচারী ফেলে আসা পৃথিবীর গায়ে বাংলাদেশকে খুঁজবে না?

ম্যারাডোনা জাতির সন্তান তো আমিও। ২০১০ এর বিশ্বকাপ ফুটবলে মাঠের পাশে স্যুটপরা ম্যারাডোনার চেহারা দেখায় একটু পর পর। একটা করে বল হঠাৎ ছিটকে আসে ম্যারাডোনার দিকে, বুড়ো লোকটা কী ক্ষুধা, কী আকুতি, কী বেদনা নিয়ে ঝট করে তৈরি হয়ে দাঁড়ায় সেই নিরুদ্দিষ্ট ভ্রষ্ট বলের কক্ষপথে, হয়তো পা ঘুরিয়ে বলটা ফিরিয়ে দেয়, নয়তো হাত দিয়ে লুফে বুকে চেপে ধরে। সবাই ভাবে ম্যারাডোনা নেমেছে কাপের লোভে, আমি এই বুড়ো দাড়িঅলা লোকটার ভেতরে দেখতে পাই একজন হঠে যাওয়া ফুটবলারকেই। ম্যারাডোনা এখনও খেলতে চায় মাঠে। ওকে একটা দশ নাম্বার জার্সি এনে দিন, মাঠে নামতে দিন, ও আজও গোল করবে। করতে পারবে, এ বিশ্বাস আমার আছে। ঐ যে স্পর্শ আর সাধ্যের বাইরে থেকে শুধু দর্শক হয়ে থাকা, ম্যারাডোনার এই বেদনা গরীব বাংলাদেশের ছেলে হয়ে আমি অনুভব করি নিজের রক্তস্রোতে। ঐ যে গর্জমান সাধটুকু, তার ক্ষয়চিহ্ন আমাদের সবার পাঁজরের ভেতর দিকে আছে।

জুন ২৩, ২০১০


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

ঐ যে স্পর্শ আর সাধ্যের বাইরে থেকে শুধু দর্শক হয়ে থাকা, ম্যারাডোনার এই বেদনা গরীব বাংলাদেশের ছেলে হয়ে আমি অনুভব করি নিজের রক্তস্রোতে। ঐ যে গর্জমান সাধটুকু, তার ক্ষয়চিহ্ন আমাদের সবার পাঁজরের ভেতর দিকে আছে।

একমত।

আমার মনে হচ্ছে এটা আপনার নেভারেস্ট সিরিজের শ্রোতা ও বিশ্বাসের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে লেখার প্রিলিউড। যথারীতি খুব যুক্তিযুক্ত লিখেছেন।

সুরঞ্জনা এর ছবি

চলুক

ম্যারাডোনার এই বেদনা গরীব বাংলাদেশের ছেলে হয়ে আমি অনুভব করি নিজের রক্তস্রোতে। ঐ যে গর্জমান সাধটুকু, তার ক্ষয়চিহ্ন আমাদের সবার পাঁজরের ভেতর দিকে আছে।

অসাধারণ সত্যভাষণ।
কল্পিত পঞ্চতারকা খচিত করে দিয়ে গেলাম।
............................................................................................
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয়

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা করে বল হঠাৎ ছিটকে আসে ম্যারাডোনার দিকে, বুড়ো লোকটা কী ক্ষুধা, কী আকুতি, কী বেদনা নিয়ে ঝট করে তৈরি হয়ে দাঁড়ায় সেই নিরুদ্দিষ্ট ভ্রষ্ট বলের কক্ষপথে, হয়তো পা ঘুরিয়ে বলটা ফিরিয়ে দেয়, নয়তো হাত দিয়ে লুফে বুকে চেপে ধরে। সবাই ভাবে ম্যারাডোনা নেমেছে কাপের লোভে, আমি এই বুড়ো দাড়িঅলা লোকটার ভেতরে দেখতে পাই একজন হঠে যাওয়া ফুটবলারকেই।

একমত।

কুটুমবাড়ি

পৃথিবী [অতিথি] এর ছবি

ম্যারাডোনা জাতির সন্তান তো আমিও। ২০১০ এর বিশ্বকাপ ফুটবলে মাঠের পাশে স্যুটপরা ম্যারাডোনার চেহারা দেখায় একটু পর পর। একটা করে বল হঠাৎ ছিটকে আসে ম্যারাডোনার দিকে, বুড়ো লোকটা কী ক্ষুধা, কী আকুতি, কী বেদনা নিয়ে ঝট করে তৈরি হয়ে দাঁড়ায় সেই নিরুদ্দিষ্ট ভ্রষ্ট বলের কক্ষপথে, হয়তো পা ঘুরিয়ে বলটা ফিরিয়ে দেয়, নয়তো হাত দিয়ে লুফে বুকে চেপে ধরে। সবাই ভাবে ম্যারাডোনা নেমেছে কাপের লোভে, আমি এই বুড়ো দাড়িঅলা লোকটার ভেতরে দেখতে পাই একজন হঠে যাওয়া ফুটবলারকেই। ম্যারাডোনা এখনও খেলতে চায় মাঠে। ওকে একটা দশ নাম্বার জার্সি এনে দিন, মাঠে নামতে দিন, ও আজও গোল করবে। করতে পারবে, এ বিশ্বাস আমার আছে। ঐ যে স্পর্শ আর সাধ্যের বাইরে থেকে শুধু দর্শক হয়ে থাকা, ম্যারাডোনার এই বেদনা গরীব বাংলাদেশের ছেলে হয়ে আমি অনুভব করি নিজের রক্তস্রোতে। ঐ যে গর্জমান সাধটুকু, তার ক্ষয়চিহ্ন আমাদের সবার পাঁজরের ভেতর দিকে আছে।

এভাবে কখনও চিন্তা করিনি!

সবজান্তা এর ছবি

ম্যারাডোনার অংশটুকু পড়ে খারাপ লাগলো... মন খারাপ


অলমিতি বিস্তারেণ

অতিথি লেখক এর ছবি

দাদা, আমাদের উপলব্ধিতেই সমস্যা!

--- থাবা বাবা!

তারানা_শব্দ এর ছবি

লেখার শেষাংশ হৃদয় ছোঁয়া...

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

আগন্তুক [অতিথি] এর ছবি

কেন আমাদের একজন বিজ্ঞানী রসায়নে নোবেল পাবেন না? কেন এভারেস্টে পৃথিবীর কনিষ্ঠতম কিশোরীটি বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবে না? কেন বাংলাদেশে এমন একটি ইনস্টিটিউট গড়ে উঠবে না, যা বাংলাদেশের সকল প্রধান খাদ্যশস্য আর অর্থকরী শস্যের জিন সিকোয়েন্স করবে আগামী দশ বছরে? কেন বাংলাদেশের একজন নভোচারী ফেলে আসা পৃথিবীর গায়ে বাংলাদেশকে খুঁজবে না?

হয়ত বিচ্ছিন্ন ভাবে একদিন যখন এই ঘটনাগুলো ঘটবে তখন তাদের নিয়ে বর্তমানের ঘটনাগুলোরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে.......

অসাধারন লেখা.....

দুর্দান্ত এর ছবি

এর প্রতিকার কি?

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কাজ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

কি বলব বুঝে ঊঠতে পারছি না।

সাহাদাত উদরাজী
০৮/০৭/২০১০ইং

পরিবর্তনশীল এর ছবি

অসাধারণ একটা লেখা!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এসময়ের অনন্য একটা লেখা।

ন্যাশ এর ছবি

আমি নির্বাক, আসলেই অসাধারণ লেখা!

রণদীপম বসু এর ছবি

বুকের কোথায় যেন ছুঁয়ে গেলো লেখাটা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

কল্পিত পঞ্চতারকা! মন খারাপ

----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

টিউলিপ এর ছবি

অনেক দিন সচলে মন্তব্য করি না ব্যস্ততার কারণে, আজ এ লেখাটা পড়ে থাকতে পারলাম না আর।

মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

খেকশিয়াল এর ছবি

সকালেই পড়সি, দারুণ লেখসেন

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

হাসিব জামান এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ব্লগেই প্রথম পড়েছি। শেষ প্যারাটা হৃদয়ছোয়া। আর পুরা লেখাটাই অসাধারণ।

অনন্ত

অনিকেত এর ছবি

একটা অসামান্যরকমের আবেগী লেখা !!!
সরাসরি প্রিয়তে নিলাম!

শুধু এইটুকু বলতেই বহুদিন পর সাইন-ইন করা

তারাপ কোয়াস [অতিথি] এর ছবি

ঐ যে স্পর্শ আর সাধ্যের বাইরে থেকে শুধু দর্শক হয়ে থাকা, ম্যারাডোনার এই বেদনা গরীব বাংলাদেশের ছেলে হয়ে আমি অনুভব করি নিজের রক্তস্রোতে। ঐ যে গর্জমান সাধটুকু, তার ক্ষয়চিহ্ন আমাদের সবার পাঁজরের ভেতর দিকে আছে।

অসাধারণ!

তিথীডোর এর ছবি

অসাধারণ!
গুরু গুরু
প্রিয়তে রইলো।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

দ্রোহী এর ছবি

পড়েছিলাম। হাসি


কি মাঝি, ডরাইলা?

দময়ন্তী এর ছবি

ভারী ভাল৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমাদের সাফল্যের ক্ষুধাটা আসলে এক ধরনের বিলাসিতা। এটা কখনোই প্রয়োজন হয়ে ওঠেনি। ক্ষুধাটা যখন প্রয়োজন হয়ে উঠবে, তখন আমরা ঘরে বসে স্বপ্নে রাজা-উজির না মেরে ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য কাজে নেমে পড়বো। আবেগের তেমন কোনো দাম নাই, যদি না সেটা কাজে রূপান্তরিত করা যায়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নিজে খেলার মাঠে কখনো ভালো ছিলাম না। পড়ার ময়দান প্রথম সারি থেকে ছিটকে পড়েছি সেও বহুদিন। নিজে পরাস্ত হতে হতে পরাজিতদের প্রতি এক ধরণের মায়া অনুভব করি, স্বভাবতই। ফুটবলের বিশ্বকাপে ছিয়াশির কথা একেবারেই মনে নেই। ম্যারাডোনা সাথে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করতে শুরু করি ১৯৯০ থেকে। আমার প্রিয় দল বার বার পরাস্ত হতে থাকে। আমি তাও পরের বিশ্বকাপের জন্য আশা জিইয়ে রাখি।

ম্যারাডোনা মিডিয়ার কল্যাণে যতোটা হিরো, ততটাই ভিলেন। কাউকে তোয়াক্কা করে চলতে না চাওয়া, আপোষ করতে অনাগ্রহী, অন্যান্য ক্লাবের অঢেল টাকা প্রলোভন না গিলে বোকা জুনিয়ার্সে থেকে যাওয়া বোকা ম্যারাডোনা এখনকার পৃথিবীর সাথে বেমানান। ম্যারাডোনা পরাস্ত হতে হতে একবার শুধু মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারলেন না।

---

এই লেখাটা সুপার্ব।

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

হিমু অনুমতি দিলে আমি একটা ম্যারাডোনাগাথা লিখতে পারি, এই জীবন্ত কিংবদন্তীকে ফিফার বামন মানুষেরা চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলে, ডোপিং কলংকে নিভিয়ে দেয়া হয় ফুটবলের প্রমিথিউসের মশাল, তাহলে কী ফিরিয়ে নিতে হবে লেননের বিটলস মুকুট অথবা চে গুয়েভারার আগুনমুখো সিগার।

অভিবাদন হিমু এই একটি স্বপ্নগাথায় তারুণ্যকে গেঁথে দেওয়ায়। আশা করছি বুয়েটের ইডিয়েটসরা (ব্লগার-বিতার্কিক) বা হিমুর পাঠকেরা ও দেশে ঘুরতে গেলে, বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় একটা বুয়েট ব্লুজ পরিয়ে দেবে, যেটা প্রথম আলো-মেরিলের বা বাংলা একাডেমির জাঢ্য সুশীল বা রাজনৈতিক সমাজের অনুকম্পার তুলনায় অন্যরকম উচ্চতার পুরস্কার। জাস্ট একটা আইডিয়া।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

ওডিন এর ছবি

আমাদের এই একশো ষাট মিলিয়ন মানুষের বেশির ভাগের মনেই ফুঁসছে দুর্দমনীয় সাধ, আমরা কেবল দেখে চলতে চাই না, আমরা শামিল হতে চাই এই সময় আর এই পৃথিবীতে। পারি না বলেই আমরা অশালীন তিনশো মিটার দীর্ঘ আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের পতাকা ওড়াই আকাশে, দেখাতে চাই, আমরা আছি, সমর্থক হয়ে আমরা অংশ নিচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে স্ফূরিত ঘটনায়। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশ খেলে, তিনশো মিটার দীর্ঘ একটি বাংলাদেশের পতাকা কি উড়েছে দেশে? ওড়েনি, কারণ যে সাধ আমাদের হৃদয়ে অভুক্ত বাঘের মতো গর্জন করে ফুঁসছে, তার নিবৃত্তি ঘটে, যখন তামিম ইকবাল প্যাড পরে মাঠে নামে।

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নন্দিনী [অতিথি] এর ছবি

অসাধারণ লেখা এবং উপলব্ধি !!!

কনীনিকা এর ছবি

আপনি এত অসাধারণ লেখেন কি করে বলুন তো? এই লেখাটা যে আমি ঘুরে ফিরে কতবার পড়লাম! যতবারই পড়ি, বুক থেকে একটা করে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। নানান কারণে এবারের বিশ্বকাপটা আমার মেজাজ তেতো করে দিয়েছে। বিশ্বকাপ দেখার অজুহাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের মাস্টার্স পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছিল দেড় মাসের জন্য। বিশ্বকাপ শেষ হবার পর এখন আবার কিছু ছাত্র বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার অজুহাতে আবারো এক মাস পরীক্ষা পিছিয়ে ফেলল। আমরা যারা প্রতিবাদ করছি তারা সবাই 'স্বার্থপর', 'বাস্তববুদ্ধিহীন', 'সহপাঠীদের বেকারত্ব এবং আর্থিক দুর্দশা সম্বন্ধে উদাসীন', ইত্যাদি ট্যাগিং এর শিকার হয়ে গেছি। অথচ পরীক্ষা ফেলে রেখে খেলা দেখার বিলাসিতা করার সময় এসব কথা কারো মনে ছিল না। দু'বছরের সেশান জ্যামে এর মধ্যেই জড়িয়ে পড়েছি, আরো কতদিন পিছাতে হবে কে জানে? আসলেই আমরা 'ম্যারাডোনা জাতি'!
------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.

------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.

তানভীর এর ছবি

আমরা 'ম্যারাডোনা জাতি' কে কইলো! এই ম্যারাডোনাকে আজ থেকে ৫০-১০০ বছর পর কেউ মনে রাখবে না। ইতিহাস মনে রাখবে শিল্পী ম্যারাডোনাকে, বিশ্বকাপের 'গোল্ডেন বল' পাওয়া ম্যারাডোনাকে, ৮৬-৯০ এর ম্যারাডোনাকে। কোচ হয়ে সে হাত-পা ছুঁড়ে কি করলো, কারে বলবয় বললো- এগুলো ইতিহাসের বিচার্য বিষয় না। সেখানে এই জাতিকে পৃথিবীর মনে রাখার মতো কিছু কি আছে, কখনো কি কিছু ছিল?

আমরা হচ্ছি আসলে 'শেখ মোহম্মদ আসলাম জাতি'। লুইস ফ্যাবিয়ানোকে গোল করতে দেখে যার 'কীর্তিমান' খেলোয়াড়ি জীবনের কথা মনে পড়ে যায়। একটা জার্মান অক্টোপাসও শুধু নিজ দেশের টিমের ভবিষ্যদ্বাণী করে। অথচ ফুটবলে ১৫৮ নম্বর ক্রম হওয়া সত্ত্বেও আমাদের উৎপল অক্টোপাস ঠিক ঠিক বিশ্বকাপের নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করে ফেলতে পারেন। আর আমাদের খ্যাতিমান আনিসাইলও তাকে অভিনন্দন জানিয়ে জাতীয় পত্রিকায় কলাম লিখে ফেলেন। এভারেস্ট থেকে ওরাকল- তাঁর হাতের ফাঁক দিয়ে কিছুই গলে না। ছোহ, এত পতিভা ম্যারাডোনার কুতায়?

হিমু এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

জব্বর কমেন্ট!!!

ঘুমকাতুরে  [অতিথি] এর ছবি

ভালো লেগেছে ... :-bd

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।