দেখা হয় নাই জিহ্বা মেলিয়া

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: রবি, ০২/০১/২০১১ - ১২:১৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

"চলুন, চা খাই। সাথে পুরি।" চৌধুরী বেশ উদাত্ত আহ্বান জানান।

দুলাল সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়। "চলেন চলেন!"

আমার পাপী মনটা খুঁতখুঁত করতে থাকে। ব্যাপার কী? চৌধুরী কি আজ এত দূর থেকে আমাদের ডেকে এনে চা আর পুরির ওপর দিয়েই চালিয়ে দেবে?

তেলেভাজার দোকানের ভেতরে ঢুকে চৌধুরী বেশ জাঁকিয়ে বসেন একটা বেঞ্চে, আমরা উল্টোদিকের বেঞ্চে বসি। বাইরে আমগাছের ডালে বসে একটা কাক কা-কা করে ডেকে ওঠে।

"বলুন, কোন পুরি খাবেন। ডাল না আলু?" চৌধুরী মধুর হেসে বলেন।

দুলাল বলে, "ডাইলপুরিই হোক।"

আমি আলুপুরির পক্ষে যাই।

চৌধুরী বিকট হাঁক ছাড়েন, "ওরে ছোকরা, এদিকে তিন পনেরো পঁয়তাল্লিশটা পুরি পাঠা। বিশটা আলুপুরি আর পঁচিশটা ডালপুরি। তিন কাপ চা দিয়ে যা তার আগে। তুরন্ত!"

দুলাল ঘাবড়ে গিয়ে বলে, "পয়তাল্লিশটা পুরি খাইবো ক্যাঠায়?"

চৌধুরী হাসিমুখে বলেন, "বারেবারে ভুলে যাই যে আপনারা নাজুক শহুরে যুবা। গায়ের ওপর শিশির পড়লে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে হয়। আমরা যখন আপনাদের বয়সী ছিলাম, চায়ের সাথে পনেরোটা পুরি কোনো ব্যাপারই ছিলো না। তখন চায়ের কাপের সাইজও ছিলো এখনকার গোসলের মগের মতো। আর পুরির ডায়ামিটার ছিলো এক বিঘত। আর বিঘত মানে আপনাদের এই নাজুক কলমিলতা মার্কা হাতের বিঘত নয়, পালোয়ানদের হাতের বিঘত ...।"

আমি বলি, "পনেরোটা পুরি খেলে পোলাও খাবো কীভাবে?"

চৌধুরী হাসিমুখে বলেন, "পোলাও খাওয়ার দরকারটা কী? পনেরোটা পুরিতে পেট ভরে যাবে। তারপর বাসায় চলে যাবেন।"

দুলাল মুষড়ে পড়ে। হতভাগা চৌধুরী পোলাওয়ের লোভ দেখিয়েই আসতে বলেছিলো আজ আমাদের। সাথে মুরগি ভুনা। পোলাওয়ের চাল বাছতে হবে না, সেই আশ্বাসও দিয়েছিলো ব্যাটা। আর এখন পুরির ওপর চালাচ্ছে। বাটপার আর কাকে বলে!

আমি বলি, "চলেন তাহলে উল্টাদিকের দোকানে গিয়ে পারাটা দিয়ে মুরগির চাপ মেরে আসি। এইসব পুরিটুরি থাক।"

চৌধুরী চোখ বুঁজে স্নিগ্ধ হাসেন। "কোন দোকান?"

আমি এবার ভালো করে উল্টোদিকের দোকানের দিকে তাকাই। লখনৌ কাবাব হাউস। দোকান খোলা, কিন্তু লোকজন কেউ নেই। ক্যাশে একজন বসে আছে গালে হাত দিয়ে।

এক ছোকরা এসে ঠক ঠক করে তিন কাপ চা রেখে চলে যায় ঊর্ধ্বশ্বাসে। বাইরে আরো কয়েকটা কাক উড়ে এসে বসে ডাকতে থাকে।

চৌধুরী বলেন, "লখনৌ কাবাব হাউসে তো দারুণ সব ঘটনা ঘটে গেলো গত কয়েকদিনে। জানেন না?"

দুলাল মাথা নাড়ে। কাজেই গল্প শুরু হয়ে যায়।

২.

ম্যাজিস্ট্রেট খোকনউদদৌলার নাম শুনেছি কি আমরা? উত্তরে নেতি পেয়ে হতাশায় নেতিয়ে পড়েন চৌধুরী। খোকনউদদৌলার নাম না শুনলে জীবন আধেক বৃথা।

সংক্ষেপে তারপর যা জানতে পাই, তা হচ্ছে, খোকনউদদৌলা সরকারের পক্ষ থেকে এক ক্রুসেডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভেজালবিরোধী অভিযান। সারা দেশেই নামে বেনামে, স্ববেশে ছদ্মবেশে, একা এবং কয়েকজন নিয়ে খোকনউদদৌলা ভেজালের বিরুদ্ধে এই জেহাদে নেমেছেন।

ঘটনার শুরু শেখ আলমকে দিয়ে। গুঁড়া মরিচের ব্যবসা করতেন এই জনৈক শেখ আলম। জয়দেবপুরে তার আবার ইঁটের ভাঁটা আছে কয়েকটা। দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে খোকনউদদৌলা হানা দিলেন একদিন। মরিচের কারখানায় নয়, ইঁটের ভাঁটায়।

তাওয়া থেকে নামানো গরম গরম পুরি চলে আসে তিনটা প্লেটে। দুলাল একটা পুরি তুলে ঘ্যাঁচ করে কামড় দেয় বেজির মতো। "ক্যান ক্যান ইঁটের ভাঁটায় ক্যান?"

চৌধুরী একটা পুরি নিয়ে চিবাতে চিবাতে বলেন, "সরকারী কর্তাদের হাবভাব বোঝা একটু মুশকিল। খোকনউদদৌলা সেই আলম ব্রিকস অ্যাণ্ড কোঙে গিয়ে প্রথমেই সার্ভেয়ার দিয়ে চিমনির উচ্চতা পরীক্ষা করান। তারপর ভাঁটায় ব্যবহৃত কয়লায় গন্ধকের পরিমাণ মাপজোক করান কেমিস্ট দিয়ে। ইঁট বানাতে ব্যবহৃত মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করান। ইঁটের আকার, ওজন, রং, গন্ধ সবই হাতেকলমে মেপে দেখেন। তারপর পাঁচশো টাকা জরিমানা করে চলে আসেন দলবল নিয়ে।"

আমি বলি, "কেন, পাঁচশো টাকা জরিমানা কেন?"

চৌধুরী বলেন, "ইঁটগুলো বেশি হালকা ছিলো, সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী দশ ইঞ্চি ইঁটের ওজন আরো কয়েকশো গ্রাম বেশি হবার কথা। লোকে বলে, আলম ব্রিকসের সাথে নাকি হরতাল মকবুলের বেশ ব্যবসা আছে।"

আমি বলি, "হরতাল মকবুল কে?"

চৌধুরী চায়ে চুমুক দিয়ে বলেন, "আপনারা শহরে বাস করলে কী হবে, শহরের কোনো খোঁজখবরই রাখেন না। হরতাল মকবুল হচ্ছে দেশের টপ হরতাল-ব্যবসায়ী। কোথাও হরতাল হলে সেখানে সে ইঁটের আধলা, কাঁচের বোতল, গজারির ডাল, পটকা এইসব সাপ্লাই দেয়। ইদানীং সে ভিডিও সার্ভিসও দেয় শুনেছি। পয়সা দিলে কয়েকজন ক্যামেরাম্যান হরতালে পুলিশের কাণ্ডকারখানা সব রেকর্ড করে রাখবে, বিয়ের ভিডিওর মতো আর কি। আজকাল সবকিছুই ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে, এজন্যে শুনলাম শিগগীরই টুইটার সার্ভিস খুলবে সে, পিকেটারদের হয়ে টুইট করে দেবে তার লোকজন ... তো যা-ই হোক, স্ট্যান্ডার্ড ইঁটের আধলা একটু ভারি। ওজনটা কয়েকশো গ্রাম কমিয়ে দিলেই সেটা একটা দারুণ প্রোজেক্টাইল হয়ে যায়। আপনাদের মতোই তো ললিত ফুলবাবু সব, আমাদের আমলে আধলা-ফাধলা না, আস্ত ইঁট ছুঁড়তাম আমরা!"

দুলাল বললো, "লখনৌ কাবাব হাউসের সাথে হরতাল মকবুলের কী সম্পর্ক?"

চৌধুরী বললেন, "কোনো সম্পর্ক নাই। হরতাল মকবুলের সম্পর্ক আলম ব্রিকসের শেখ আলমের সাথে। শেখ আলমের পাতলা ইঁটগুলোই আধলা হয় হরতাল মকবুলের ওয়ার্কশপে। তারপর সেগুলো মনোরম খবরের কাগজ দিয়ে মুড়ে সাপ্লাই হয় হরতালের সময়। দাঙ্গা পুলিশ অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিলো, তাই খোকনউদদৌলা আলম ব্রিকসে হানা দেয়।"

আমি বললাম, "তো?"

চৌধুরী সুড়ুৎ করে কাপে চুমুক দিয়ে বলেন, "পাঁচশো টাকা জরিমানার ব্যাপারটা ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্যে লজ্জাস্কর নয়? খোকনউদদৌলা সারা দেশে যেখানে ভ্যাজালকে নানা ফ্রন্টে পেঁদিয়ে একশা করছেন, কাউকে তিন লাখ, কাউকে ছয় লাখ, কাউকে পঞ্চাশ হাজার জরিমানা করছেন, সেখানে মোটে পাঁচশো টাকা তো ক্যারিয়ারের গায়ে পানের পিকের দাগের মতো। তাই ব্যাপারটা খোকনউদদৌলার আঁতে ঘা দেয়। তিনি হন্তদন্ত তদন্তে নামেন।"

আমি আলুপুরি খেতে খেতে বলি, "কিন্তু লখনৌ কাবাব হাউসের সাথে পাঁচশো টাকা জরিমানার কী সম্পর্ক?"

চৌধুরী গল্পের বাকিটা বলে চলেন।

ট্রেড লাইসেন্সের সূত্রে ধরে খোকনউদদৌলা জানতে পারেন, শেখ আলমের গুঁড়া মরিচেরও ব্যবসা আছে, সেখানে কাঁদুনি ব্র্যান্ডের গুঁড়া মরিচ বাজারে ছাড়া হয়। খোকনউদদৌলা নিজের রসুইখানা ঘুরে এসে জানতে পারেন, তিনিও কাঁদুনি ব্র্যান্ডের গুঁড়া মরিচই গত কয়েক বছর যাবৎ খেয়ে আসছেন। এবার তিনি টের পান, ইদানীং তাঁর পান থেকে চুন খসলেই আঁতে ঘা কেন লাগছে। আঁত, অর্থাৎ অন্ত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে তার, শরীরটাও ম্যাজম্যাজ করে, ডাক্তার হতভাগাগুলো ঠিকঠাক ওষুধ দিতে পারে না ... খোকনউদদৌলা দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে এবার হানা দিলেন আলম মশল্লা অ্যান্ড কোঙে। সেটাও জয়দেবপুরেই, আলম ব্রিকস অ্যান্ড কোঙের উল্টোদিকেই, টাঙ্গাইল মহাসড়কের এপারে।

এবার খোকনউদদৌলার জরিমানাবান্ধব মনটা একটু শান্ত হয়। আলম মশল্লা অ্যান্ড কোঙে প্রভূত বিটকেলপনা চলছিলো। এক বস্তা শুকনো মরিচের সাথে সেখানে এক রিকশাভ্যান ইঁট গুঁড়ো করা হয়। তারপর সুদৃশ্য মনোরম ফুড গ্রেড পলিপ্যাকে মোড়কজাত করা হয়। প্যাকেটের গায়ে নানা ক্যালরি আর ভিটামিন-মিনারেলের হিসাব লেখা।

খোকনউদদৌলার সাথে পুলিশ ছিলো, তারা ফ্যাক্টরির কর্মরত সব শ্রমিককেই আটক করে। র‍্যাবের হাতে ধরা পড়ে পলায়নরত ফ্যাক্টরি ম্যানেজার। তার অফিসে বসেই খোকনউদদৌলা দশ লাখ টাকা জরিমানা করেন আলম মশল্লাকে। তারপর সব কাগজপত্র সিজ করে বাড়ি চলে আসেন।

দুলাল চায়ে হিরোশিমার বোমা ফাটার মতো আওয়াজে চুমুক দিয়ে বললো, "কিন্তু লখনৌ কাবাব হাউস ...?"

চৌধুরী বললেন, "আছে। ঐ কাগজের মধ্যে লখনৌ কাবাব হাউসের নামও আছে। আলম মশল্লার কর্পোরেট ক্লায়েন্ট তারা। সারা দেশে লখনৌ কাবাব হাউসের যত শাখা আছে, সবখানে যায় আলম মশল্লার গুঁড়া মরিচ।"

আমার একটু সন্দেহ হয়, জানতে চাই, "কবে ঘটে এই ঘটনা?"

চৌধুরী বলেন, "মাস তিনেক আগে।"

দুলাল চমকে উঠে বলে, "আরে, তিন মাস ধইরাই তো লখনৌ কাবাব হাউসে মুরগির ঝাল ফ্রাই আর আগের মতো ঝাল নাই!"

চৌধুরী মৃদু হাসেন। বলেন, "ডিজিটাল যুগ। সব খবর সবাই জেনে ফেলে খুব দ্রুত। খোকনউদদৌলা রেইড করার পাঁচ মিনিটের মাথায় শেখ আলম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বসেছে, আমার মরিচের কারখানায় খোকনউদদৌলার কালো হাত কেন কর্তৃপক্ষ জবাব চাই!"

আমি বলি, "কারখানা কি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো?"

চৌধুরী বলেন, "না, কারখানা বন্ধ হয়নি, তবে কড়াকড়ি বেড়েছে আর কি। ওখানে প্রায়ই সরকারি লোকজন গিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। মরিচের প্যাকেট খুলে দেখে সেটাতে ইঁটের সালফার পাওয়া যায় কি না। এক পরিবেশ আন্দোলন সমিতি আগে ইঁটের ভাঁটা তুলে দেবার জন্যে আদালতে রিট পিটিশন করেছিলো, তারা নতুন রিট পিটিশন ঠুকেছে, ইঁট ভাঁটার দশ কিলোমিটারের মধ্যে মশলা কারখানা চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে।"

দুলাল বলে, "কিন্তু লখনৌ কাবাব হাউস বন্ধ কেন?"

চৌধুরী পুরি চিবাতে চিবাতে বলেন, "বলছি।"

খোকনউদদৌলার ক্রুসেড চলতে থাকে। মধ্যযুগীয় নাইটদের মতোই তিনি একের পর এক দোকান কারখানার ভেজালের কারবারের বারোটা বাজিয়ে ছাড়তে থাকেন। ঘটনাচক্রে তিনি একদিন হানা দেন সায়দাবাদের আলম অটোমোবিল ওয়ার্কশপে।

না, এই আলম শেখ আলম নয়, জানে আলম। জানে আলম জানে খোকনউদদৌলা কী চিজ। সে তাই নিজে উপস্থিত থেকে তার গোটা গ্যারেজ ঘুরিয়ে দেখায় খোকনউদদৌলাকে। খোকনউদদৌলা প্রতিটি রেঞ্চ, প্রতিটি অ্যালেন কী, প্রতিটি নাট বল্টু দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেখেন। গ্যাস কাটিঙের সিলিণ্ডার আলাদা করে খুলে অক্সিজেন আর এসিটিলিনের কোয়ালিটি পরীক্ষা করান কেমিস্ট দিয়ে। গাইগার কাউন্টার দিয়ে গ্যারেজের প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে তেজস্ক্রিয়তা মাপেন। কিন্তু জানে আলম বড়ই পটু মেকানিক, খোকনউদদৌলা কিছুতেই তাকে পাঁচশো টাকার বেশি জরিমানা করতে পারলেন না।

আমি জানতে চাই, "পাঁচশো টাকা কেন?"

বাইরে গাছে বসে কাকের দল কা-কা করে ডেকে আমার প্রশ্নে সমর্থন জানায়।

চৌধুরী পুরি খেতে খেতে বলেন, "একটা গাড়ির ব্যাটারি থেকে সীসার পাত খুলে বাইরে ফেলে রেখেছিলো মিস্ত্রির দল। সেই সীসার পাত দিনরাত বৃষ্টিতে ভেজে, সেই পানি আবার গড়িয়ে পাশের পুকুরে পড়ে। পুকুরের পানিতে লেড পয়জনিং হতে পারে, এই আশঙ্কায় মৃদু সতর্কতামূলক জরিমানা আর কি।"

দুলাল ঘাবড়ে যায়। বলে, "বাপরে! এত করা ম্যাজিস্ট্রেট?"

চৌধুরী বলেন, "নৃশংস!"

আমি বলি, "কিন্তু মাত্র পাঁচশো টাকা ... ?"

চৌধুরী বলেন, "হুঁ, আঁতে ঘা লাগে আবার। খোকনউদদৌলা খুবই চটে ওঠেন আলম অটোমোবিল ওয়ার্কশপের ওপর। সারা দেশের বাসট্রাকের সার্ভিসিং করে জানে আলম, কিন্তু তার ওয়ার্কশপে কোনো ভ্যাজাল নেই, ব্যাপারটা তিনি মোটেও মেনে নিতে পারেন না। দিনরাত তিনি কাজের ফাঁকে ফাঁকে এ নিয়ে ভাবেন।"

জানা যায়, বেশিদূর ভাবতে হয় না, ট্রেড লাইসেন্সের জাবদা খাতা আর জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেস থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে জানা যায়, জানে আলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ গুলবদনের নামে জানে গুল এডিবল অয়েলস এর লাইসেন্স বরাদ্দ করা আছে। সেটার কারখানাও সায়দাবাদেই, মহাসড়কের এপারে।

খোকনউদদৌলা এক ভোরে পাইকলস্কর নিয়ে হানা দেন সেখানে। সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুষ্টিবিজ্ঞানে পিএইচডি করা এক বিজ্ঞানী, আণবিক শক্তি কমিশনের এক প্রকৌশলী আর ৯৮ সংমিশ্রিত ব্রিগেডের এক ট্রাক সৈন্য।

খোকনউদদৌলার আঁত একটু ঠাণ্ডা হয় সেদিন। আলম অটোমোবিলে যাবতীয় বাসট্রাকের পোড়া মবিল সব বড় বড় ড্রামে করে চলে আসে জানে গুল এডিবল অয়েলসে। সেখানে পাম অয়েলের সাথে মেশানো হয় সেসব। তারপর একটু সেন্ট্রিফিউজ করে মনোরম পেট বটলে ভরে বেদুইন মার্কা খাঁটি সয়াবিন তেল হিসেবে বাজারে ছাড়া হয়। বোতলের গায়ে ক্যালোরি, ভিটামিন আর মিনারেলের রূপকথা লেখা। খোকনউদদৌলা নিজের হেঁসেল বরাবর মোবাইল মেরে জানতে পারেন, ওখানে বেদুইন মার্কা তেলেই রান্না হয়ে আসছে গত কয়েক বছর ধরে।

দশ লাখ টাকা জরিমানা ঠুকে দেন খোকনউদদৌলা। পুলিশের লোকজন কারখানার সব শ্রমিককে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যায় হাজতে। র‍্যাবের লোকজন ফ্যাক্টরি ম্যানেজারকে লুকিয়ে রাখা অস্ত্র উদ্ধার করতে নিয়ে যাবার ভয় দেখায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানী টেস্ট টিউবে করে যাবতীয় নমুনা নিয়ে যান। আণবিক শক্তি কমিশনের প্রকৌশলী বিরস মুখে ৯৮ সংমিশ্রিত ব্রিগেডের ইউনিট কমাণ্ডার এক ছোকরা ক্যাপ্টেনের সাথে গল্পগুজব করতে থাকেন, কারণ হুদাই এদের ডেকে আনা হয়েছে।

খোকনউদদৌলা সব কাগজপত্র জব্দ করেন কারখানা থেকে।

দুলাল জানতে চায়, "কবেকার ঘটনা এইটা?"

চৌধুরী আরো তিন কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বলেন, "মাস দুই হয়ে গেলো।"

দুলাল রুদ্ধশ্বাসে বলে, "আরে, গত দুই মাস ধইরাই তো লখনৌ কাবাব হাউসের পারাটাগুলি এইরাম কাচা কাচা লাগে!"

চৌধুরী বলেন, "হাঁ! লাগাই স্বাভাবিক। জব্দ করার কাগজপত্র থেকে দেখা যায়, জানে গুল এডিবল অয়েলসের অনেক কর্পোরেট কাস্টোমারদের মধ্যে একটি হচ্ছে লখনৌ কাবাব হাউস চেইন। সারা দেশে লখনৌ কাবাব হাউসে তেল যেতে জানে গুল এডিবল অয়েলস থেকে। ঘটনার পর পরই মোছাম্মৎ গুলবদন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলো, দুর্নীতিবাজ খোকনউদদৌলা দেশের ভোজ্য তেলের বাজারকে সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে!"

আমি চুপচাপ পুরি খাই।

দুলাল টেবিল কিল মেরে বলে, "তারপর?"

চৌধুরী উদাস গলায় বলেন, "তারপর কী হয় শোনেন।"

তারপর খোকনউদদৌলাকে বিশেষ মিশনে হানা দিতে হয় বালু নদীতে। সেখানে জেগে ওঠা চরের বালুমহাল ইজারা নিয়েছে আলম ফাইন স্যান্ডস। না, শেখ আলম বা জানে আলম নয়, এর মালিক সৈয়দ আলম। খোকনউদদৌলা মেজারিং চেইন, জিপিএস, লেজার গাইডেড মেজার গান আর কোস্ট গার্ডের এক নৌকা সেপাই নিয়ে সেই চরে হানা দেন এক বিকালে।

কিন্তু না। সৈয়দ আলমের বালু মহালে নিয়ম মেনেই বালু তোলা হচ্ছে। নদীর প্রবাহকে বিপন্ন করে সেখানে কিছু হচ্ছে না। খোকনউদদৌলা মিলিমিটার ধরে সব কিছু মেপে দেখলেন, দাঁড়িপাল্লা দিয়ে বালুর বস্তা ওজন করে ডেটা নিয়ে ল্যাপটপে ঢুকিয়ে তার মিন মিডিয়ান মোড আর স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন বার করলেন, স্কাউট মাইক্রোস্কোপে বালির দানা পরীক্ষা করে দেখলেন, ঠিক মাপের বালুই তোলা হচ্ছে কি না, বালুমহাল থেকে নদীতে কোনো কনটামিন্যান্ট ফেলা হচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করলেন। তারপর বিষণ্ণ মনে পাঁচশো টাকা জরিমানা করে চলে এলেন।

পাঁচশো টাকা জরিমানা করা হয়েছে শিশু শ্রমের জন্যে। একটা বাচ্চা ছেলেকে দিয়ে বালুমহালের অফিসে চা তৈরি করানো হচ্ছিলো।

স্বাভাবিক ভাবেই খোকনউদদৌলার অন্ত্র আবার আহত হয়। তিনি আলম মশল্লার পরিবর্তে মশাল মার্কা গুঁড়া মরিচ আর বেদুইন মার্কা সয়াবিন তেলের বদলে শেভরন সয়াবিন দিয়ে ভাজা মুচমুচে সমুচা খেতে খেতে সৈয়দ আলমের ঠিকুজি সন্ধানে হাত দেন।

বেশি কষ্ট করতে হয় না, সৈয়দ আলমের ছেলে সৈয়দ আলম জুনিয়রের নামে বরাদ্দ আলম আটা অ্যান্ড কোঙের লাইসেন্সের হদিশ পেয়ে যান খোকনউদদৌলা। ফ্যাক্টরিটাও পরিচিত এলাকায়, বালু নদীতে, বালুমহালের কাছেই, নদীর তীরে।

একদিন দুপুরে কয়েকজন ফ্রগম্যান, নৌ-পুলিশ আর বাপেক্সের একজন ভূতত্ত্ববিদকে সঙ্গে নিয়ে খোকনউদদৌলা আলম আটা কোম্পানিতে হানা দেন। ফ্রগম্যানরা পলায়নোদ্যত ফ্যাক্টরি ম্যানেজারকে পিছু ধাওয়া করে বালু নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকড়াও করে আনে। শ্রমিকদের সবাইকে বেঁধে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়।

কারণ আর কিছুই নয়, খোকনউদদৌলার হৃষ্ট অন্ত্র। আলম আটা কোম্পানিতে এক বস্তা আটার সাথে সমপরিমাণ মিহিদানা বালু মিশিয়ে মনোরম পলিপ্যাকে মোড়কজাত করা হচ্ছে। আটার প্যাকেটের গায়ে লেখা, আলমের ময়ূরীমুনমুন মার্কা আটা, খেলে বাড়ে বুকের পাটা। সেইসাথে ক্যালরি ভিটামিন মিনারেলের আমলনামা। খোকনউদদৌলা মোবাইল টিপে যোগাযোগ করেন, তার গরীবখানার রান্নাঘর থেকে রিপোর্ট আসে, আলমের ময়ূরীমুনমুন মার্কা আটা দিয়েই গত কয়েক বছর সকালে রুটি পরোটা আর বিকেলে সিঙাড়া সমুচা ভাজা হচ্ছে। কাজেই তৎক্ষণাৎ দশ লাখ টাকা জরিমানা।

দুলাল গপগপ করে পুরি খেতে খেতে বলে, "কিন্তু লখনৌ কাবাব হাউস ... ?"

চৌধুরী বলেন, "হ্যাঁ। জব্দ করা কাগজপত্রে লখনৌ কাবাব হাউসের নাম ওপরের দিকে। তারা আলম আটা কোম্পানির বড় ক্লায়েন্টদের একজন। সারা দেশে তাদের দোকানে আলমের আটা কেনা হয়।"

দুলাল বলে, "এইটা কি এক মাস আগের ঘটনা?"

চৌধুরী মাথা নাড়েন। হ্যাঁ।

দুলাল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। "হ, গত এক মাস ধইরা লখনৌ কাবাবে পারাটা চিকন কইরা বানায়, আর আগের মত মচমচা নাই।"

চৌধুরী বললেন, "বানাবে না কেন বলুন? ঘটনার পরপরই তো সৈয়দ আলম জুনিয়র ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলো, সরকারকে করি মানা, করবেন না আলম আটাকে জরিমানা, পথের বাধা সরিয়ে দিন, দেশকে এগোতে দিন।"

দুলাল বলে, "তারপর?"

চৌধুরী বলে যান গল্প।

খোকনউদদৌলার কার্যপরিধি সারা দেশে বিস্তৃত। শুধু ঢাকাতেই আরবান গেরিলা হয়ে থাকলে কি চলবে? ঢাকার বাইরেও তাকে ক্র্যাক কমাণ্ডো অপারেশনে যেতে হয়। একদিন তিনি তাই অতর্কিতে লোকলস্কর নিয়ে ঢুকে পড়লেন বগুড়ার আঞ্জুমানে শফিদুল গবাদিপশু হাসপাতালে।

আঞ্জুমানে শফিদুল একেবারে মরণাপন্ন পশুর চিকিৎসা করতে আগ্রহী। যেসব গরুমহিষ বা ছাগল ভেড়া জটিল কোনো রোগ বা বার্ধক্যের ভারে কাবু হয়ে প্রায় মরো মরো, সেগুলোকে তাদের মালিকেরা গায়ে ছালা চাপিয়ে সাইকেল ভ্যানে চড়িয়ে নিয়ে আসে এই হাসপাতালে। জনস্বাস্থ্যের খাতিরে ইন্তেকাল করা জন্তুটির দাফনকাফনের দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেয়, উল্টে কিছু টাকা পয়সাও দেয় মালিককে। উত্তরবঙ্গের যাবতীয় অসুস্থ গরুমহিষের মালিকের ভরসার জায়গা আঞ্জুমানে শফিদুল। সেই হরিয়ানা থেকে মরণাপন্ন গরু মহিষ এসে এই ৩০ শয্যার হাসপাতালের একটায় অন্তিম শয্যা বরণ করে।

খোকনউদদৌলা হাসপাতালের জরুরি চিকিৎসা বিভাগ ঘুরে দেখেন, অ্যানেসথেশিয়া আর শল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করেন, সঙ্গে করে আনা একটি গরুকে অজ্ঞান করে দেখেন সে ঠিকঠাকমতো অজ্ঞান হচ্ছে কি না। ওষুধের মেয়াদের তারিখ, সিল, এক্সরে যন্ত্রপাতি সব তন্নতন্ন করে পরীক্ষা করে তিনি চটেমটে পাঁচশো টাকা জরিমানা করে আবার ফিরে আসেন ঢাকায়।

পাঁচশো টাকা জরিমানা করা হয়েছিলো হাসপাতালের ডিসপেনসারিতে মশার কয়েল আর বাটারবন বিক্রির জন্যে।

কিন্তু ইরাক যুদ্ধের মতো এমন একটি ব্যয়বহুল আন্তর্জেলা অপারেশনে বেরিয়ে মাত্র পাঁচশো টাকা জরিমানা খোকনউদদৌলার অন্ত্রের জন্যে অবমাননাকর। তিনি বগুড়া জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে ব্যাপক তোলপাড়ের পর বিডিআর সেক্টর দপ্তর থেকে দুই গাড়ি বিডিআর সেনা নিয়ে হানা দিলেন আঞ্জুমানে শফিদুল পশু হাসপাতালের অদূরে আলম বিফ অ্যান্ড মাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে।

শফিদুল আলম নামক জনৈক নরাধমের এই মাংসের ফ্যাক্টরিতে গিয়ে খোকনউদদৌলার মনটা ভালো হয়ে গেলো। ফ্যাক্টরির ভেতরে পশু হাসপাতাল থেকে আনা সদ্যমৃত গরুমহিষের ছাল ছাড়ানো হচ্ছে আধুনিক মেশিনে। মাংসগুলোও ঝোপ বুঝে কোপ মেরে কেটেকুটে ওজন করে প্যাকেটে ভরছে প্রশিক্ষিত কসাই। প্যাকেটের গায়ে লেখা, আলমের পপি বিফ, সেরা বিফ।

ফ্যাক্টরির তাবৎ লোককে দড়ি বেঁধে থানায় নিয়ে গিয়ে দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হলো আলম বিফ অ্যান্ড মাটনকে। শফিদুল আলমের ও লেভেল পাশ মেয়ে পপি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো, da bstd plce arstd ma men and dmnd ghush ... fck u gvmnt!

আলম বিফ আর আলম মাটনের বড় ক্রেতা খুব বেশি নেই, দুয়েকটা চিড়িয়াখানা, দুয়েকটা জেলখানা, দুয়েকটা এতিমখানা আর, লাস্ট বাট নট লিস্ট, লখনৌ কাবাব হাউস।

দুলাল এক কামড়ে আদ্ধেকটা পুরির মুণ্ডু চিবিয়ে খেয়ে বলে, "বুচ্ছি বুচ্ছি, দুই সপ্তাহ আগের কথা! গত দুই সপ্তা ধইরা লখনৌ কাবাবে খাসির চাপ আর গরুর চাপের দাম বাইড়া রইছে!"

আমি বলি, "কিন্তু লখনৌ কাবাব হাউস বন্ধ হলো কেন? কাঁচামালের অভাবে?"

চৌধুরী হাসেন, আর চায়ে চুমুক দেন।

খোকনউদদৌলা একদিন টাউন হলে বাজার করতে গিয়ে ভাবেন, পরোটা দিয়ে মুরগির চাপ খাবেন। তিনি করিৎকর্মা মানুষ, বাজারের ব্যাগ গাড়িতে ফেলে রেখে সোজা চলে আসেন লখনৌ কাবাব হাউসে। দুটো পরোটা আর একটা চাপ অর্ডার দিয়ে একটা কোল্ড ড্রিংক নিয়ে বসেছেন, স্ট্র লাগিয়ে মৃদু মৃদু স্মার্ট চুমুক দিচ্ছেন, আচমকা তার মনে পড়লো, লখনৌ কাবাব হাউসেই তো আলম মশল্লার মরিচ, জানে গুল অয়েলের তেল, আলম বিফ ইন্ডাস্ট্রিজের মহিষের মাংস আর আলম আটার আটা আসে। তিনি মোবাইলে ফোর্স তলব করেন। তারপর পরোটা দিয়ে রসিয়ে রসিয়ে মুরগির চাপ খান। তারপর এক কাপ চা নিয়ে বসেন। এর মধ্যে ফোর্স চলে আসে। মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ আর র‍্যাবের প্যারাকমাণ্ডো ইউনিট। থানার পুলিশ জ্যামের কারণে আসতে একটু দেরি হয়েছে, আর প্যারাকমাণ্ডো ইউনিট ময়মনসিংহে প্যারাস্যুট জাম্পিং প্রশিক্ষণে ছিলো, খবর পেয়ে জোর বাতাসে ভেসে একেবারে শহীদ পার্কে ল্যাণ্ড করেছে।

সবাইকে নিয়ে খোকনউদদৌলা হানা দেন লখনৌ কাবাব হাউসের রান্নাঘরে।

এদিকে লখনৌ কাবাব হাউসের প্রোপ্রায়েটর চৌধুরী মনসুর আলি খান লখনবি গণ্ডগোলের খবর শুনে দোকানের সলিমুল্লাহ রোড শাখায় এসে হাজির।

দুলাল বলে, "বাপরে বাপ! খুবই খানদানি লোক মালুম হইতেছে! ইনি কি বলদিয়ার জমিদার বংশের কেউ নাকি?"

চৌধুরী হাসেন। "না, বলদিয়ার জমিদার না।"

আমি বললাম, "খাস লখনৌ থেকে আমদানি নাকি? কাবাব হাউসের নাম লখনৌ কাবাব, আবার নামের শেষেও লখনবি?"

চৌধুরী বলেন, "না, সাতকানিয়ার লোক, কিন্তু হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে এখন দিনরাত হিন্দিতে কথা বলে। চৌধুরী মনসুর লখনবির চেহারাটাও বেশ মোগলাইমার্কা। মোটাসোটা গোলগাল নাদুসনুদুস, হাতে হীরার আংটি, কানে আতর মাখানো তুলা, পরনে ফিনফিনে কুর্তা আর চুড়িদার পায়জামা, পায়ে নাগরা। সে এসে খুব হম্বিতম্বি শুরু করে দিলো খোকনউদদৌলার ওপর।"

কিন্তু খোকনউদদৌলা ঘাগু মাল। তার সাথের লোকজন ছবি আর ভিডিও ক্যামেরায় সব রেকর্ড করতে থাকে।

লখনৌ কাবাব হাউসের রান্নাঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ফ্রিজের ভেতরে কোথাও কাঁচা মাংস নেই, সব ফ্রিজারে বরফ দিয়ে রাখা। ফ্রিজে শুধু মশলা মাখানো মাংস, সেখান থেকে টপাটপ বার হয়ে চলে যাচ্ছে চুলোতে। সব্জির জন্য আলাদা ফ্রিজ, ড্রিঙ্কসের জন্যে আলাদা ফ্রিজ। সবকিছু পরিচ্ছন্ন। টিপটপ।

কিন্তু রান্নাঘরের পাশে কসাইঘরে এক ভিন্ন দৃশ্য।

সেখানে একটা বড় ট্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক লোক। তার সামনে একটা মুরগি। মুরগিটা জবাই করা নয়, কিন্তু জিভ বার করে এলিয়ে পড়ে আছে ঢাকাই সিনেমার স্মৃতিভ্রষ্ট নায়িকার মতো, নড়ছে-চড়ছে না।

খোকনউদদৌলা মুখে বিজয়ীর হাসি নিয়ে চৌধুরী মনসুর লখনবিকে বললেন, "চৌধুরী সাহেব, আমি গরীব হতে পারি, কিন্তু আমার সঙ্গে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ওস্তাদ বিলাতফেরত ডাক্তার আছে! ডাক্তার সাহেব, লাগান স্টেথো!"

বিবেকের মতো ধবধবে সফেদ কোট পরা গম্ভীর ডাক্তার এগিয়ে এসে মুরগির বুকে স্টেথোস্কোপ চেপে ধরলেন, কিছুক্ষণ শুনলেন, তারপর গম্ভীর মুখে স্টেথো নামিয়ে বললেন, "আই য়্যাম সরি!"

খোকনউদদৌলা পকেট থেকে জরিমানার রসিদ বই আর একটা ইকোনো ডিএক্স কলম বার করে অট্টহাসি দিয়ে বললেন, "মরা মুরগির মাংস খাওয়ানো হচ্ছে? য়্যাঁ?"

চৌধুরী মনসুর লখনবি ডুকরে উঠে ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মুরগির বুকে, "নেহিইইইইইইইইইইই! য়্যায় আমার মুরগা, আঁখ খোলো!" তিনি মুরগির ঠোঁট ফাঁক করে সিপিআর দিতে লাগলেন দুই হাতের তালু এক করে।

জরিমানার রসিদ লিখতে লিখতে খোকনউদদৌলা বলতে লাগলেন, "মৃত প্রাণীর মাংস বিক্রি ১৮৯৩ সালের প্রাণীজ আমিষ (জনস্বাস্থ্য) আইনের ২৯ নং ধারার গ উপধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আপনাকে পাঁচশো টাকা জরিমানা করা হলো।"

চৌধুরী মনসুর লখনবি পাগলের মতো মুরগির বুকে কিল মারতে মারতে বলতে লাগলেন, "কেনু কেনু কেনু? কিঁউ কিঁউ কিঁউ? এ হতে পারে না, পারে না, পারে না!"

তখনই মুরগিটা একটা চোখ পিটপিটিয়ে খোলে। তারপর কেশে ওঠে কক কক করে।

লখনবি দারুণ এক চিৎকার করে ওঠেন, "জিন্দা হায়! এ জিন্দা আছে! মাজিস্টার সাহাব, জরিমানা মৎ করো, এ মুরগি জিন্দা আছে!"

মুরগিটা এবার শ্বাস নিতে শুরু করে, তার বুক ওঠানামা করতে থাকে নৃত্যরতা অঞ্জু ঘোষের মতো। লখনবি তাকে সাশ্রুনয়নে কোলে তুলে নিয়ে বলেন, "মেরা মুরগা জিন্দা হায়!"

খোকনউদদৌলা ক্ষেপে গিয়ে ডাক্তারকে বলেন, "ব্যাপার কী ডাক্তার সাহেব?"

ডাক্তার গম্ভীর মুখে বললেন, "ব্যাপার আবার কী? মুরগি বেঁচে আছে!"

খোকনউদদৌলা হাতে কিল মেরে বললেন, "ঠিক আছে, কিন্তু এই মুরগি আমি বাজেয়াপ্ত করছি। একে সিএমএইচে নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কোনো অসুখ বিসুখের আলামত পেলেই ...!"

লখনবি হুঙ্কার দিয়ে বললেন, "দরকার হলে থাইল্যাণ্ডের বুমরুঙরাদে নিয়ে হামি হামার মুরগার চিকিৎসা কোরবে, লেকিন বাজেয়াপ্ত কোরতে দেবে না!"

তুমুল ঝগড়াঝাঁটি শুরু হয়, আর মুরগিটা রাজ্জাকের আলিঙ্গনে নিশ্চিন্ত শাবানার মতো সজল নয়নে মুখ গুঁজে রাখে লখনবির বুকে।

শেষ পর্যন্ত আর জরিমানা হয় না। সব পাখি ঘরে ফেরে, সব নদী, পুলিশ আর র‍্যাবও তাদের ডেরায় ফেরে কিছু লেনদেনের পর, আর অন্ধকারে বসে সিগারেট টানতে টানতে চিন্তাভাবনা করতে থাকেন খোকনউদদৌলা।

সাংবাদিকরা লিড নিউজ করে টিভিতে, ম্যাজিস্ট্রেটের চুলচেরা পরীক্ষায় পাশ করলো লখনৌ কাবাব। মধ্যরাতের টকশোতে ভ্রাম্যমান সম্পাদক আলতামাস কায়কাওয়াদ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নিজামরুল তুমুল প্রশংসায় ভাসিয়ে দিলেন লখনৌ কাবাবকে, আর খোকনউদদৌলার মুণ্ডপাত করলেন। শেয়ার বাজারে লখনৌ কাবাবের শেয়ারের দর চড়চড়িয়ে বেড়ে গেলো।

দুলাল বলে, "মানে কী? লখনৌ কাবাবে কোনো কিছু পাওয়া যায় নাই?"

চৌধুরী স্মিতহাস্যে বললেন, "না।"

আমি বললাম, "তাহলে খোকনউদদৌলা দোকান বন্ধ করে দিলো কেন?"

চৌধুরী একটা সদ্য পরিবেশন করা ধূমায়িত আলুপুরি মুখে পুরে বললেন, "খোকনউদদৌলা দোকান বন্ধ করেনি।" তারপর গল্পের শেষটা বলতে লাগলেন।

সমস্যাটার শুরু নাকি শেয়ারাবাজারেই। খোকনউদদৌলার কমাণ্ডো হামলায় আলম মশল্লা, জানে গুল এডিবল অয়েলস, আলম আটা আর আলম বিফ অ্যান্ড মাটন শুধু জরিমানাই দেয়নি, শেয়ার বাজারে চড়চড়িয়ে তার দর পড়ে গেছে। আর গত হপ্তায় লখনৌ কাবাবের দর বাড়তে বাড়তে তার প্রাইস আর্নিং রেশিও চার থেকে পঞ্চাশে গিয়ে ঠেকেছে।

গোপন সূত্রে জানা গেছে, লখনৌ কাবাবের বেশ কিছু শেয়ার খোকনউদদৌলার বউ বিক্রি করেছে চড়া দামে।

দুলাল বললো, "কিন্তু লখনৌ কাবাব বন্ধ ক্যান?"

চৌধুরী বললেন, "খোকনউদদৌলা খুব ধুমধাম করে লোক দেখিয়ে লখনৌ কাবাবের রান্নাঘরে হানা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আসল অ্যানালাইসিস করে দেখেনি।"

আমি বললাম, "কী অ্যানালাইসিস?"

চৌধুরী হাসি হাসি মুখে বললেন, "এই এলাকায় একেবারেই কাক দেখা যেতো না। লখনৌ কাবাব চারদিন আগে বন্ধ হবার পর থেকে আবার কাক দেখা যাচ্ছে!"

দুলাল চোখ বড়বড় করে বলে, "মানে কী?"

চৌধুরী বলেন, "মানে সহজ। লখনৌ কাবাবে মুরগির নাম করে কাকের মাংসের চাপ বিক্রি হয়। কে বা কাহারা সেই কাক প্রসেস করার ছবি তুলে চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। খোকনউদদৌলাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে বড়কর্তারা, আর লখনবি হতভাগা শুনলাম দোকানপাট বুঁজিয়ে দিয়ে সৌদি আরব চলে গেছে।"

আমি বললাম, "আপনি কি বলতে চান, আমরা এতদিন ইটের গুড়া মেশানো কাকের মাংস আর অসুখে মরা মহিষের চাপ খেয়েছি পোড়া মোবিলে ভাজা বালু মেশানো পারাটা দিয়ে?"

চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, "হুঁ!"

দুলাল ক্ষেপে ওঠে, বলে, "তাইলে কোনো কিছু টের পাইলাম না ক্যান?"

বাইরে কয়েকটা জ্যান্ত কাক কেশে উঠে বলে, "ক্ক্যা?"

চৌধুরী পরিতৃপ্ত প্রসন্ন মুখে বললেন, "আলম কেমিক্যালসের মালিক আলম খানের রঙের ফ্যাক্টরির লাগোয়া আলম স্পাইসেজ থেকে আসা মশলা মিক্সের কারণে।"


মন্তব্য

বেনামা এর ছবি

অমানুষিক!
গড়াগড়ি দিয়া হাসি

রু [অতিথি] এর ছবি

মজা লাগলো। গল্পে এতো বেশি মোড় ঘোরা হয়েছে যে পড়া শেষ করে দেখি শুরুতে কী হয়েছে মনে নাই। ভালো লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

হো হো হো হো হো হো হো হো হো হো হো হো

তয় একখান কথা কইবার চাই। ইশকুল বেলায় আমগো এক ঘাউরা ফিজিক্স টিচার আছিল, নাম 'আলম স্যার'। জনাবের ঘাউরামিতে অতিষ্ট হইয়া আমরা কতিপয় জাউরা পোলাপাইন "আলম কন্ডম" নামক এক স্পুফ ইশটোরি ফাঁদছিলাম। ভাইজানের গল্পখান পইড়া আবার হেইডার কথা স্মরণে আয়া পড়ল... দেঁতো হাসি

ধৈবত

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

ওরে কড়া ... পুরাই কড়া ...।

মারহাবা ... মারহাবা ... !!!

===============================================
ভাষা হোক উন্মুক্ত

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

নৈষাদ এর ছবি

পড়া শুরুর প্রথমদিকে ভাবলাম লেখকের ‘একটি বিশেষ আইটেম খাবার ইচ্ছাজনিত একটি ফেসবুক স্টেটাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত কিনা’? তারপর কোথায় কী - অনেক অতিথি কুশলিব মাঠে চলে এলেন। গল্প ভাল লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিবেকের মতো ধবধবে সফেদ কোট পরা গম্ভীর ডাক্তার এগিয়ে এসে মুরগির বুকে স্টেথোস্কোপ চেপে ধরলেন, কিছুক্ষণ শুনলেন, তারপর গম্ভীর মুখে স্টেথো নামিয়ে বললেন, "আই য়্যাম সরি!"

হাসতে হাসতে শ্যাষ।

গুরু ভাই

অদ্রোহ এর ছবি

আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, গল্পটাতে লেখকের স্বভাবসুলভ উইটের কারিকুরি আছে, গল্প বলার নিজস্ব তরিকাটাও এখানে বেশ ভালমত ঠাহর করা যায়। কিন্তু সবকিছুর পরেও পাঠকের মনে দাগ কাটার মত কিনা এমন সওয়াল উদয় হলে আমি দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ব। এমন গল্প লেখক হামেশাই লিখতে পারেন, কিন্তু সেটা বাঁধাগতের হয়ে পড়লেই মুশকিল। তাই ভাল লেগেছে বলবই, কিন্তু দুর্দান্ত? না বোধহয়...

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

সুডোকু খেলার মত কিছু উপাদান থাকলে আরো জমতো বোধহয়।

_________________________________________

সেরিওজা

শামীম এর ছবি

ক্যাটেগরীতে "যুবা (১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ)" লেখার জন্য লেখককে ৫০০টাকা জরিমানা করা যায় ... ... আয়রে খোকন ঘরে আয়, হিমু যুবার সিল ঝুলায় ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

মুস্তাফিজ এর ছবি

ক্যাটেগরীতে "যুবা (১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ)" লেখার জন্য লেখককে ৫০০টাকা জরিমানা করা যায়

হো হো হো

...........................
Every Picture Tells a Story

হিমু এর ছবি

আচ্ছা আচ্ছা ... পরের গল্পে সুদেমূলে ... চোখ টিপি



বুকে BOOK রেখে বরাহশিকার ♪♫ কালাইডোস্কোপ

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

কৌস্তুভ এর ছবি

হিম্ভাইয়ের সিগনেচার এই পোস্টগুলো পড়তে বড়ই আমোদ পাই। উপমাগুলো খুব জম্পেশ হয়।

অপছন্দনীয় এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সাইফ তাহসিন এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

হিমু ভাই,
তুসি গ্রেট হো, তোহফা কবুল করো...

বাউলিয়ানা এর ছবি

হে হে হে...খাসা হয়েসে।

দু-তিনবারের চেষ্টায় পড়ে শেষ করলাম- সবটাতেই মজা ছড়িয়ে। চলুক

দুর্দান্ত এর ছবি

'৯৮ সংমিশ্রিত ব্রিগেড'

তুমুল!

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

চাখা হয় নাই?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখকের ছায়াগোলাপ নামে একটা লেখা পড়ে আনন্দ পেয়েছিলাম। সেই ভরশাতেই এটা পুরোটা পড়লাম। একটু হতাশই হলাম। লেখাটির জনরে মাথায় রেখেই বলছি, পুরা লেখাটিতে যেটি প্রকটভাবে অনুপস্থিত সেটি হল হিউমার।

-রাখাল বালক

মনোমাঝি এর ছবি

আয় হায় হায় হায় !!! আপনি কি বলতে চান, আমি এত বছর ইটের গুড়া মেশানো কাকের মাংস আর অসুখে মরা মহিষের চাপ খেয়েছি পোড়া মোবিলে ভাজা বালু মেশানো পারাটা দিয়ে ??? জানেনই তো, আমি টাঊন হলের পেছনেই কাঠপট্টিতে থাকি। বলতে গেলে এই লখনৌ কাবাব হাউসে চাপ-কাবাব-পরটা খেতে খেতেই বড় হয়েছি। এত মজা লাগতো ওদের রান্না, যে পাশের গ্রীন রেস্টুরেন্ট, জান্নাত বা শওকত মাড়াতামই না। কি যে মজা আর সোয়াদ ছিল না ওদের কা...কি বলে, মুরগির রোস্টে। বলে বোঝানো যাবে না ! এখনো জিভে পানি আসে ভাবলে। অথচ আপনি বলছেন এগুলি.... ছিঃ ছিঃ ছিঃ ! তাই তো বলি এত চালু দোকানটা এভাবে বন্ধ হয়ে গেল কেন।

যাগ্‌গে, একটা সুসংবাদ দেই। আমাদের পাড়ার ঘেয়ো নেড়ি কুত্তাগুলির সঙ্খ্যা কমতে শুরু করেছে হঠাৎ. করেই.... সেবার যে আপনি এদের কয়েকটার ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তারপর থেকে তো আর এমুখো হননি। এবার নির্ভয়ে আসতে পারেন। কোন ভয় নেই। কুত্তাগুলির উৎপাত একদম কমে গেছে। আর এদিকে আসলে আপনাকে নতুন একটা রেস্তোরাঁয় দারুন গরুর চাপ খাওয়াবো। খুব ভালো রেস্তোরাঁ এই এলাহাবাদ রেস্তোরাঁ। আপনার দাওয়াত রইল।

অপছন্দনীয় এর ছবি

আপনি নিশ্চিত ওটা গরু, খাসী নয়? কুকুর কমতে শুরু করার সাথে গরুর সম্পর্কটা ঠিক বুঝতে পারছি না... সব লখনৌ, এলাহাবাদ নিজের জায়গা ছেড়ে টাউনহলে হাজির হয়েছে নাকি? হাসি

মনোমাঝি এর ছবি

সম্পর্ক আবার কি! লখনৌ কাবাব হাউস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এলাকায় কাকের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার যে সম্পর্ক, ঠিক ততটুকুই সম্পর্ক বোধহয়। তাছাড়া আমাদের নতুন এলাহাবাদ রেস্তোরাঁর মালিকের ফ্যামিলি খুবই সামাজিক ভাবে দায়িত্ববোধ-সম্পন্ন পরিবার। CSR সম্পর্কে খুবই সচেতন। উনার ছোটভাই আমাদের আগামি ওয়ার্ড কমিশনার পদপ্রার্থী। শুনেছি উনিই এলাকার সব টোকাইদের কাজে লাগিয়ে এলাকাটাকে ঘেয়ো নেড়ি কুত্তা মুক্ত করার মহান ব্রত নিয়েছেন। এবার বুঝেছেন ? যাগ্‌গে, আপনারও দাওয়াত রইল অপছন্দনীয় ভাই। আমাদের কুকুরবিহীণ এলাকার এলাহাবাদ রেস্তোরাঁর রসালো গরুর চাপ আপনার খুবই 'পছন্দনীয়' হবে বলেই আমার বিশ্বাস। হো হো হো

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভিন্টেজ হিমু ভাই চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

মজা পেলাম... সাক্কজরব রেখে গেলাম হাসি

মোহনা'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।