ক্রিকেট সাহেবদের খেলা। ওনারা টপাটপ এদেশ ওদেশ জয় করেছেন, তারপর নীল-তামাক-চা-আখ চাষ করিয়েছেন, পান থেকে চুন খসলে চাবকে পেছনের চামড়া লাল করেছেন, কিংবা তুলেই নিয়েছেন, আর ধাওয়ার মুখে চলে যাবার সময় পেছনে ফেলে রেখে গেছেন ক্যাট-ব্যাট-ওয়াটার-ডগ-ফিশ, ফুলপ্যান্ট আর হাফশার্ট, সকল অপরাধের দায়মুক্তিদাতা অমোঘ "সরি", রেললাইন, পোস্টেজ স্ট্যাম্প আর ক্রিকেট।
সবই আমাদের কাজে লাগে। "সরি"টা বেশি কাজে লাগে।
এখন ডার্কিরাও ক্রিকেট খেলে। শুধু তা-ই নয়, সাহেবদের চেয়ে খুব একটা খারাপ খেলে না। সাহেবরা সেই সত্তরের দশক থেকেই কালা আদমীর হাতে ক্রিকেটের মাঠে গোয়ামারা খেয়ে চলছে। সাহেবদের মাঝটুর্নামেন্ট থেকে পেঁদিয়ে খেদিয়ে দিয়ে কালা এবং অন্যান্য ধলারা শোরগোল করতে থাকে বাকিটা সময়।
কিন্তু প্রতি খেলা শেষে যখন খেলোয়াড়দের মিডিয়ার মুখোমুখি হতে হয়, তখনই যেন সেই দুই-আড়াইশো বছর আগের সাহেবদের ভূত এসে দাঁড়ায় চাবুক হাতে। হারুকাপ্তান হও কি চালুকাপ্তান, মিডিয়া তখন ক্যাট-ব্যাট-ওয়াটার-ডগ-ফিশ নিয়েই তোমাকে চেপে ধরবে। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলে তো কোনো কথাই নেই। মিডিয়াই একবিংশ শতাব্দীর সাহেব।
সেদিন আমাদের শফিউল চার উইকেট নিলো আয়ারল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে। ছেলেটা বল হাতে মোটামুটি, ব্যাট হাতে আরেকটু খারাপ, কিন্তু ইংরেজি মুখে একেবারেই কাঁচা। তার ওপর এতো বড় দর্শকসমাজের মুখে পড়ে একেবারে গলবস্ত্র অবস্থা। বল হাতে যে ছেলেটা চোয়াল শক্ত করে ভুরু কুঁচকে নিজের চেয়ে ছয় ইঞ্চি উঁচু ব্যাটসম্যানকে তোপের মুখে রেখেছিলো, তাকেই দেখি দরদর করে ঘামতে ঘামতে, ঢোঁক গিলতে গিলতে কাঁপা কাঁপা গলায় ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলতে।
ইনজামাম উল হকও ইংরেজিতে কাঁচা। তাকে রমিজ রাজা বাঁচিয়ে দেয় বরাবর। টস জিতে ইংরেজি প্রশ্নের মুখোমুখি হয় তাই তোতলাতে তোতলাতে শেষ পর্যন্ত ইনজামাম বলে, হাম পেহলে ব্যাট কারেঙ্গে।
আজ লসিথ মালিঙ্গাকেও দেখলাম, দ্বিবেহীতে গড়গড়িয়ে কথা বলে গেলো উপস্থাপকের সাথে। সে আলাপের সারমর্মটুকু তিনি অনুবাদ করে দিলেন পরে, দর্শকদের জন্যে।
যখন কিশোর ছিলাম, আমাদের ক্রিকেটারদের ইংরেজিপারঙ্গমতা নিয়ে হাসাহাসি আমিও করেছি। কিন্তু সময়ের সাথে শিখেছি, খেলার মাঠে ইংরেজি না জানাটা কোনো অপরাধ হতে পারে না। আমরা ওখানে ইংরেজির পরীক্ষা দিতে যাইনি। আমরা দেখাতে গিয়েছি, কতটা ভালো ক্রিকেট পারি আমরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে শুক্রবারের খেলায় শফিউলকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ দেখতে চাই। শুনতে চাই শফিউল পরিষ্কার বাংলায়, মিরপুরের দর্শক আর গোটা পৃথিবীর দর্শকের সামনে তিরিশ কোটি লোকের ভাষায় বলছে তার যা বলার। যারা সেগুলো বোঝে না, তাদের অনুবাদ করে দেয়ার মতো অন্তত একটি লোক আশা করি সে ম্যাচে মাইক হাতে উপস্থিত থাকবে। ইনজামাম আর মালিঙ্গা বলতে পারলে আমরাও পারবো।
বিসিবির সদয় মনোযোগ আকর্ষণ করছি।
মন্তব্য
সহমত।
আমাদের ক্রিকেটাররা ব্যাট বা বল হাতে কতটা পারদর্শী সেটাই দেখতে চাই আমি। ইংরেজিতে পারদর্শিতা দেখানোর মত লোকের অভাব হওয়ার কথা না (তাই বলে আল্লাহর ওয়াস্তে চৌধুরি সাহেবকে যেন না আনা হয় )
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
সহমত। সাহেবদের ভাষায় মিউ মিউ বাদ দিয়ে বাঘের বাচ্চারা বাংলায় হুন্কার দিক।
হক কথা। খেলার মাঠে ভালো খেলাটাই মুখ্য। ইংরেজিতে মুখ্যু হলেও কিচ্ছু যায় আসে না। হীনমন্যতায় ভোগার কোন কারণ নেই।
সত্যি হোক।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সহমত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সহমত।
গোরাদের ভাষায় নয় নিজের মায়ের ভাষায় বুলি শুনতে চায়।
এই চাওয়াটা আমার অনেকদিনে'র।
কাঠপেন্সিল
----------------------------------------------
ভিড় ঠেলে আয়....সামনে দাড়া....
হুদাই... ইংলিশ ধুইয়া কি পানি খামু?????
মারদাঙ্গা খেলা চাই.........
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
সহমত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ঠিক
প্রচন্ড ভাবে সহমত।
-আয়নামতি
খেলার শেষ অংশ, যখন ম্যাচটা বেশ টানটান, আর তার পরেই ওই ইন্টারভিউটা, দেখেছিলাম। খারাপই লেগেছিল। আর পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের কথাই মনে পড়ে যাচ্ছিল। আর আমার মনে যতদূর মনে পড়ছে, কয়েক বছর আগে কিছু উঠতি ভারতীয় খেলোয়াড়দের ভারতেই হওয়া কিছু ম্যাচে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল হিন্দিতে। এখানে যিনি ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন তিনি কি বাঙালি? তাহলে শফিউলের অসুবিধা হচ্ছে দেখে বাংলায় চলে গেলেই পারতেন।
সাক্ষাতকারটি নিয়েছিলেন আমাদের আতাহার আলী খান... আর তিনি নিঃসন্দেহেই বাঙ্গালী, বা বলা ভাল বাংলিশ!
--- থাবা বাবা!
ইংরেজি বলতে পারলে ভালোই, এটা যেহেতু আন্তর্জাতিক ভাষা। কিন্তু ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকলে আমি কোনও সমস্য দেখিনা। জোরজার করে মুখস্থ ইংরেজি বলতে গেলে তা মোটেও শ্রুতিমধুর হবেনা। সেক্ষেত্রে বাংলায় বলাই বাঞ্ছনীয়। অনুবাদক পাওয়া যাবে, শামীম আশরাফ আছেন, আর্থার আলি খান আছেন, সমস্যা নেই। বিকৃত ইংরেজিতে কথা বলা এবং ইংরেজি বলতে গিয়ে গলদঘর্ম হওয়া মোটেই সূখকর কিছুনা।
সচলায়তনে অনেকদিন আগে একটা জোক শেয়ার করেছিলাম ইনজামামের ইংরেজি নিয়ে। আজ আবার শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা-
এমন প্রশ্নের এমন উত্তর যেনো আমাদের ছেলেরা কখোনোই না দেয়। বাংলাই ঢের ভালো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
প্রচন্ডরকম সহমত। শুধু ইনজামাম না, পাকিস্তানের অনেক খেলোয়ারই ইংরেজি পারে না, ভারতের শেভাগ, ইরফান পাঠানকেও আমি দেখেছি ম্যান অব দা ম্যাচ হয়ে নিজের ভাষায় বলতে, শাস্ত্রী-রমিজ এই কাজ হরহামেশাই করেন, তাহলে আমরা নই কেন?
- দিগন্ত বাহার
পুরোপুরি সহমত। 'আমি সর্ট ওয়েভ মেথডে ১০ মিনিটে ইংরেজি শিখিয়াছি' - এটা দেখানোর জন্য তো আর কেউ মাঠে খেলতে নামে না। এই নিয়ে নানা কটূ কথা শুনি অনেকের মুখে যে, আমাদের খেলোয়াড়েরা ঠিকমতো ইংরেজি বলতেই জানেনা। আরে ভাই, তাগড়া খেলা চাই, চোস্ত ইংরেজী না ... ...
বাঘের গর্জন শুনুক বিশ্ব এবং তা বাংলায় ... ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
আমরাও তাই চাই
মোহাম্মদ রফিক, যিনি ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ক্রিকেটীয় চেতনার খেলোয়াড়, তিনিও ইংরেজীতে পারদর্শী ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তিনি কিন্তু বাংলাতেই ইংরেজী প্রশ্নের ভাবটা বুঝে উত্তর দিতেন।...
আমাদের অল্প বয়স্ক দলটির উচিৎ রফিককে অনুসরণ করা। নিজের ভাষায় উত্তর দেয়াতে নিশ্চয়ই অগৌরবের কিছু নেই।
সেটাই।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সহমত। হিন্দী বা উর্দুতে যদি দিব্যি কাজ চালান যায় তবে বাংলায় কেন নয়?
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
সহমত
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সহমত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লেখাটার জন্য ধন্যবাদ হিমু। আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিৎ - আন্তর্জাতিক পরিসরে বাঙলা বলতে ও শুনতে লজ্জা পাওয়ার জন্য।
সহমত
সাক্ষাৎকার নিজের ভাষায় দেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই একমত।
বেচারা শফিউলের জন্য ওইদিন ব্যাপক মায়া লাগসে। আতাহার আলি খান ওকে ডাকার সময় মাইকে বললেন, হিয়ার ইজ দ্য ম্যান অফ দ্য মোমেণ্ট..." আর সেই বেচারা ভাবলো ও বোধহয় ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হইসে। সঙ্গে সঙ্গে সে, "এইটা আমার জীবনের প্রথম বিশ্বকাপের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ..." এইরকম কিছু একটা বলে বসলো।
টিভি চ্যানেলের কোন নিয়মনীতি আছে কি না জানি না, না থাকলে আতাহার আলি চাইলে বাংলায় প্রশ্ন করে নিজেই দোভাষীর কাজ করতে পারতেন।
তবে ওই যে, ম্যান অফ দ্য মোমেণ্ট-কে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ শোনার ব্যাপারে... এইটুকু ঠিকভাবে বোঝার মত ন্যুনতম ইংরেজি মনে হয় একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের জানা উচিৎ। নাহলে বিদেশে খেলতে গিয়ে তো বাথরুম কোথায় এইটাও জিজ্ঞেস করতে পারবে না বা পছন্দের খাবারটা চেয়েও খেতে পারবে না।
তাছাড়া আরেকটা জিনিস, বিশেষ করে ফাস্ট বোলারদের জন্য, ফাস্ট বোলারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে ব্যাটসম্যান ভয় পাবে, কিন্তু সেই বোলার যদি মিনমিন করে (হ্যাঁ, অন্য ভাষা বা সংস্কৃতি না জানার, বা সেটা সম্পর্কে ভীত হওয়ার একটা ভূমিকা অবশ্যই বডি ল্যাঙ্গুয়েজের উপরে পড়ে), তাহলে সেটা বোলারের জন্য একটা ড্র-ব্যাক বলেই মনে করি আমি। ভাষা না জানলেও সেটা নিয়ে ভীতিটা যেন প্রকাশ না পায়।
অতোটুকু ইংরেজী জ্ঞান মনে হয় আছে। ঠেকে গেলেও কিছু কথা তো শফিউল বললো। ঐ মুহুর্তে বেশী উত্তেজিত থাকায় 'মোমেন্ট' আর 'ম্যাচ' আলাদা করতে পারেনি। তাছাড়া ওদের সব কোচ তো বিদেশী, উনাদের সাথে নিশ্চয়ই ইংলিশে কথা বলে।
আমার কখনও মনে হয়নি ইন্টারভিউকালীন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ খেলার মাঠে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবে।
-রু
বাংলায় কথা বলা, বাংলায় লেখার ব্যাপারে গুরুতর হীনমন্যতা, অবজ্ঞা ক্রমাগত বাড়ছে।
সেদিন অত ভাল খেলার পর ইংরেজিতে শফিউলের অসহায়ত্ব দেখে খুব মায়া লাগছিলো। বাংলাদেশ টিম টিমের ভেতরেই কাউকে দোভাষির দায়িত্বটা দিতে পারে।
এ ব্যাপারে বিসিবি'র কিছু করার নাইরে হামদু। এইটা, সম্প্রচারের দায়িত্ব পাওয়া চ্যানেলের নিয়োগকৃত ধারাভাষ্যকারদের দয়া! তবে যেহেতু বাংলাদেশের খেলা, এটা আশা করাই যায় বাংলাদেশের দুই ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান এবং শামীম আশরাফ চৌধুরী খেলায় ধারাভাষ্য দিবেন, খেলার পর বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের সামনে মাইকটা তুলে ধরবেন। এই আশাটা করা যায় তাঁদের প্রতি, আপনারা দয়াকরে আমাদের খেলোয়াড়দের আংরেজী বোলে অপ্রস্তুত করে দিবেন না, মাঠে উপস্থিত ২৫ হাজার দর্শকের দোহাই লাগে আপনাদের।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমার ধারণা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে তামিম ও সাকিবের নিয়মিত ভাল খেলার মূল কারণ সায়েবদের ভাষায় পারদর্শিতা। অন্যরা সাধ্যমত খারাপ খেলে পাছে ভাল খেললে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার নিতে গিয়ে সায়েবদের ভাষায় কথা কইতে হয় ভেবে।
সায়েবদের ভাষার যারা নাজুক তাদের যদি বাংলায় কথা কইতে দেয়ার বিধান করে দেয়া হয় তাহলে দেখবেন খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স ভাল হচ্ছে।
এই গুরুত্বপুর্ণ লেখাটির সঙ্গে পুরোপুরি একমত । বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড়দের জন্য একজন দোভাষীর ব্যবস্থা করা হোক ।
আমার মনে হয়, এই হীনমন্যতাবোধের শেকড় বেশ গভীরে । আমার এক বন্ধু একবার বলেছিল, আমাদের জাতীয়তাবোধ শুধু নববর্ষে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার মধ্যেই সীমিত ।
জাতীয়তাবোধের মানে এই নয় যে, অন্যকে হেয় করা । তবে, অবশ্যই নিজের স্বকীয়তা সম্পর্কে সচেতন হওয়া । মায়ের দেয়া মোটা কাপড় সগৌরবে মাথায় তুলে নিলে একদিন নিজেরাই উন্নত মিহিন সুতার কাপড় বানাতে পারব । তার আগে পর্যন্ত পরের ঘরের মিহিন কাপড় পরার লোভ সংবরন করব । জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ইন্ডিয়া দেশীয় শিল্পের বিকাশের জন্য বিদেশী পন্যের প্রবেশ নিষেধ রেখেছিল বলেই আজকের ইন্ডিয়া এতবড় শক্তি বিশ্ব অর্থনীতিতে ।
আমার ক্ষুদ্র পর্য্যবেক্ষনে মনে হয়েছে, আমাদের জাতিগত চরিত্র হচ্ছে নিজেদের স্বাতন্ত্রবোধের অহংবোধের অভাব । যা কিছু বিদেশী, তাই সেরা । তাই আমাদের দেশের কাতানের চেয়ে ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী জর্জেটের কদর অনেক বেশী (অবশ্যই সামর্থ্যবানদের মধ্যে)। টিভিতে হিন্দি সিনেমা/সিরিয়ালের সময় হাউজফুল । ন্যুনতম হোম ওয়ার্ক না করে আসা শাহরুখ খানের নিম্নমানের শোতে উপচে পড়ে দর্শক । অনেক পরিবারে বাবা মায়েরা ছেলেমেয়েদের হিন্দি ভাষায় দক্ষতা অন্যদেরকে দেখিয়ে/শুনিয়ে বিমল আনন্দ লাভ করেন ।
প্রবাসে বেশ কয়েকবার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার হিন্দি/উর্দু বলতে না পারা নিয়ে । পাকিস্তানীদের কেউ কেউ কথা শুরু করে, ভাই তোমরাতো আমাদের সঙ্গেই ছিলে, উর্দু জানো না কেমন কথা । প্রথম প্রথম শুনে ক্রোধে এমন বাক্যরহিত হয়ে যেতাম যে কিছু বলতে পারতাম না । এখন কেউ এমন কিছু বললে বলি, তোমরাও তো ছিলে আমাদের সাথে, কতটা বাংলা শিখেছিলে?
কিন্তু আমি দেখেছি আমার দেশের মানুষদের মধ্যে অনেকেই উর্দু/হিন্দিতে কথা বলতে পেরে প্রভূত গৌরব বোধ করেন । বাঙালি মালিকের গ্রোসারি দোকানের পাকিস্তানী কর্মচারীর সঙ্গে মালিক সারাক্ষণ উর্দুতেই বাতচিৎ করছেন । কাজেই, আমি যখন পাকিস্তানী কিংবা ইন্ডিয়ান কাউকে বলি, “I don’t speak in Urdu or Hindi.” বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওরা অবিশ্বাসী চোখে তাকায়, “How come? Everybody from your country can speak in Urdu/Hindi.” আমি কবুল করি যে, আমার ভাষাজ্ঞান সীমিত । কাজ চালানো গোছের ইংরেজী, ছিটেফোটা ফরাসী আর মাতৃভাষার বাইরে ঝুলিতে আর কিছু নেই ।
দেশে গিয়ে সবার হাতে হাতে মুঠোফোন দেখে ভালোই লাগে । দেশ এগিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু ধাক্কাটা খেলাম যখন ফোন করে বেশ কয়েকজনের Greeting টোনে শুনতে পেলাম হিন্দি গান । এই নিয়ে একজনের সঙ্গে কথা হয়েছিল । তার যুক্তি সংস্কৃতির কোন সীমানা নেই । খুব খাটি কথা । ইন্ডিয়ান/পাকিস্তানীরা যেদিন বাংলা বলতে শিখবে, বাংলা সিনেমা দেখতে শুরু করবে, বাংলা গান শুনতে শিখবে, আমার দেশের সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে কথা বলবে, শুধুমাত্র তারপরেই আমার পক্ষে এই সীমানাহীনতার উদারতা দেখানো সম্ভব হবে । তার আগে নয় ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
হিমু ভাই এর সাথে সম্পূর্ণ একমত। তবে আমাদের ধারাভাষ্যকার যারা আছেন তাদের কি এটা নজরে পড়েনা? অনেক আগে থেকেই দেখছি এই অবস্থা। রবি শাস্ত্রী কিংবা রমিজ রাজা যেখানে তাদের খেলোয়াড়দের সহযোগিতা করেন, সেখানে আমাদেরগুলো কোথায় থাকে বুঝিনা।
ভালো খেলার সাথে ইংরেজির তো কোনো সম্পর্ক নেই। তবে যেহেতু খেলাটা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে হচ্ছে, আর এটা আন্তর্জাতিক ভাষা তাই অন্ততঃ কিছু সাধারণ দক্ষতা থাকা উচিত যেনো মুখোমুখি কথা চালানো যায়। এজন্যে উচিত আমাদের ক্রিকেটারদের অবসর সময়ে একটা কার্যকর ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স ট্রেনিং এর সিস্টেম চালু করা। আর যেই খেলোয়াড় একান্তই ইংরেজিতে কথা বলতে অপারগ, তিনি সাক্ষাতকারের শুরুতেই এটা জানিয়ে দিলে বরং আমার মনে হয় ভালো হয়। সেক্ষেত্রে হয়ত তখন যিনি সাক্ষাতকার নিচ্ছেন তিনি একজন দোভাষীর ব্যবস্থা করতে পারেন। অথবা যদি তিনি বাংলা জানেন তাহলে তো বাংলাতেই প্রশ্ন করতে পারেন। তাহলে আর পরে প্রতিকথায় বিব্রত হতে হবেনা। আমাদের নিজস্ব ভাষাই অনেক গৌরবের এবং সম্মানের। সেখানে ইংরেজি না জানা এবং তা স্বীকার করাতে কোনো মানহানির সম্ভাবনা আমি দেখিনা।
-অতীত
সাক্ষাৎকারে আসা খেলোয়াড় ইংরেজীতে বলবেন নাকি তার নিজের ভাষায় বলবেন সেটা আগে জিজ্ঞেস করে আয়োজন করার দায়িত্ব কিন্তু সাক্ষাৎকার গ্রহনকারীর। তারা এতটাই ইংরেজীকেন্দ্রিক এলিটবাদীতায় ভোগেন যে সে ভদ্রতাটুকুর প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেননা।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
সহমত।
আমার কিনতু মনে হয় আমাদের cricketer দের ইংরেজি শেখাটা বেশি দরকারি। আমাদের কোচরা তো সবাই বিদেশি।
শফিউলের সাক্ষাৎকার দেখার সময় একদম একই কথা মনে হচ্ছিলো। যে ছেলেটা বীরের মতো মাঠ ছাড়লো, মাইকের সামনে তার অসহায় চেহারা, প্রশ্ন শোনার সাথে সাথে ক্যামেরার পেছনে দাঁড়ানো কোনো সতীর্থকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করছে, "কি কয়? কি কয়?"
মিডিয়ার এই এলিটবাদীতা বন্ধ করা উচিত। এত পয়সা ঢেলে এত রংঢং করতে পারে, আর ম্যান অভ দ্যা ম্যাচের সাক্ষাৎকারের জন্য একজন দোভাষী রাখতে পারেনা, এটা কেমন কথা? .... দোভাষী বিজ্ঞাপনের সময় খাবে মনে হলে একজন এডিটর রাখলেই হয় যিনি "প্রায় রিয়াল টাইম সাবটাইটেলে" খেলোয়াড়দের কথা অনুবাদ করবেন
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
সহমত।
অলস সময়
ব্রাজিল, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা সহ প্রায় সব দেশের ফুটবল খেলোয়াররা কিন্তু সংবাদ সম্মেলন সাক্ষাতকার সব তাদের ভাষাতেই দেন। উনাদের কাজ খেলা, কেমন খেলেন, সেটা জরুরি, কেমন বলেন সেটা না।আমাদের জাতিগত সমস্যাই হলো যে ইং রেজী না জানলে বাকা চোখে তাকানো হয়, এ মনোভাব বদলানো উচিত।
সহমত।
কিন্তু বাংলাদেশ টিমের খেলোয়াড়দের অবসর সময়ে ইংলিশ স্পোকেন এর শর্ট কোর্স করানো যেতেই পারে অথবা তারা নিজ উদ্যোগেই তা করতে পারেন , কারন আমাদের প্লেয়াররা এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খেলেন তাই একটু ইংরেজি জানা টা অপরিহার্য বই কি।
--
কালো ও সাদা
ঘটনার দুদিন আগে দেখলাম, কেনিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের-মানুষ উমর আকমলকে সরাসরি উর্দুতেই প্রশ্ন শুরু করলেন তার স্বদেশী রমিজ রাজা, ইংরেজীর তোয়াক্কা না করেই। আমাদের আতাহার আলী খান সাহেবও চাইলে একই কাজ করতে পারতেন সরাসরি বাংলাতেই তার সাথে কথোপকথন শুরু করে। শফিউল ছেলেটা এতই কাঁচুমাচু করছিল যে বলে বসল "ইটস মাই ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডকাপ ম্যান অব দ্যা ম্যাচ..."। তামিম সাহেবদের ভাষা বলতে পারে বলেই তাকে ম্যাচের-মানুষ বানিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা কে জানে।
ধৈবত
অজন্তা মেন্ডিস ম্যান আব দ্য ম্যাচ হলে পুরষ্কার আনতে দুইজন যায়। অজন্তা আর সাঙ্গাকারা। অজন্তা যায় ট্রফি/চেক নিতে আর সাঙ্গাকারা সাথে যায় সাক্ষাৎকারের তরজমা করে দিতে। এমনক্ষেত্রে আমাদের ইংরেজি না জানা বা কম জানাদের সাথে সাকিব/তামিম বা যাদের ইংরেজিটা ভালো, এমন কেউ যেতে পারে তরজমা করে দিতে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
সাকিব আমার চাওয়া পূরণ করলো, এক বছর পর। ধন্যবাদ।
আরও ১০ বার মরে বাঙালিই হবো।
আমার এক ব্যবসায়ী পার্টনার, ব্যবসার বিষয়ে ১৬ আনা সেয়ানা, কিন্তু ইংরেজিতে একটু কাঁচা।
বিদেশিদের সাথে মিটিং থাকলেই, ইংরেজি জানা লোক খোঁজে।
তাকে পরামর্শ দিলাম - যেহেতু বিদেশিদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করি, ইংরেজিটা একটু শিখে নিলে হয়না?
ভদ্রলোক সাফ জবাব:
ভাই, আমরা ব্যবসায়ী লোক, ইংরেজির মাস্টার না।
আমাদের কাজ দেয় ব্যবসার দক্ষতায়, ইংরেজির দক্ষতায় না।
আর তাছাড়া, ওই ২/১ দিনের মিটিং বাদে, ইংরেজি আমার কোন কামে লাগে?
এজন্য যতটুকু দরকার, সেটা পেশাদারি লোক দিয়ে করাই।
যত সময় ইংরেজি শিখবো, ততটুকু সময় ব্যবসা নিয়ে ভাবলে, মেলা উন্নতি হবে।
এর চোখ টিপে ইংরেজিতে বলে - "ইফ নিড, আই বাই ইংলিশ"
নতুন মন্তব্য করুন