লগ্ন তো সম্রাটের হাতে

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: রবি, ২০/০৩/২০১১ - ১০:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাঁচটি বিচারকাণ্ড পরবর্তী ঘটনা নিয়ে আমার এই পোস্ট। বিচারকাণ্ড নিয়ে আমার কোনো মতামত নেই, সেটি আইনজ্ঞদের বিবেচ্য বিষয়। ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক অথবা নিকট অতীতের। তবে চেষ্টা করলে তাদের এক সুতোয় গাঁথা সম্ভব।

পাঁচটি বিচারকাণ্ডের মধ্যে পঞ্চমটি স্বতন্ত্র, বাকি চারটিকে একটি বিচিত্র সমতলে সাজানো সম্ভব। আমার পর্যবেক্ষণ কয়েকটি দেশে কয়েকটি দেশের নাগরিকের কয়েকটি বিচারকাণ্ড নিয়ে বিচার পরিচালনাকারী দেশের সমাজ ও সরকার এবং বিচারাধীন ব্যক্তি যে রাষ্ট্রের নাগরিক, সে রাষ্ট্রের সমাজ ও সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। আমি চারটি ঘটনাকে চার কোয়াড্র্যান্টে রেখেছি। নিচের ছবিটা দেখলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে।

প্রথম কোয়াড্র্যান্টের ব্যক্তিটি বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের নোবেলজয়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক তাকে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে তাঁর পুনর্মনোনয়নের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে তিনি এই পদে আর আসীন থাকতে পারবেন না। ইঊনূস এ আদেশের বিরোধিতা করে আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের আদেশকে বহাল রাখেন। ইউনূস আদালতের এই আদেশের বিরোধিতা করে বর্তমানে উচ্চ আদালতের শরণ নিয়েছেন। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে শুনানি এখনও শুরু হয়নি। [১]

সূত্র [১] এ ইউনূসের অপসারণকে ঘিরে সরকার, ইউনূস, আদলত, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, সুশীল সমাজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক মহল ও মিডিয়ার নিজস্ব বক্তব্যের একটি গ্রাফিক টাইমলাইন রয়েছে। আমরা এই টাইমলাইনে চোখ রাখলে দেখতে পাবো, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউনূসের কণ্ঠে কথা বলছে। এ ঘটনাটির নিরসন আদালতে হওয়াই শ্রেয় ছিল, কিন্তু সেটি ক্রমশ ঢুকে পড়েছে রাজনীতি আর কূটনীতির আঙিনায়। বাংলাদেশের আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার রাষ্ট্রদূত ও সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গকে পাঠিয়ে বলছে, ব্যাপারটি "সমঝোতা"র মাধ্যমে একটি "সম্মানজনক" পরিণতি পেলে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।

এর পর যে ঘটনাটি আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, সেটি হচ্ছে রেমণ্ড ডেভিসের মুক্তি। সিআইএ-র কনট্র্যাক্টর রেমণ্ড ডেভিস এ বছরের জানুয়ারি মাসে লাহোরে দুজন সশস্ত্র পাকিস্তানী গোয়েন্দা কর্মীকে [যদিও পাকিস্তানী পুলিশ বলছে তারা দস্যু] পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করে আত্মসমর্পণ করে। ডেভিস একটি রহস্যময় মার্কিন নাম্বার প্লেটযুক্ত টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারকে এসকর্ট করছিল, এবং দুই পাকিস্তানী গোয়েন্দাকে হত্যার পর সেই গাড়িটি একজন মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডেভিসকে একজন কূটনীতিক দাবি করে তার জন্য ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক দায়মুক্তি দাবি করে। পাকিস্তান এ দাবি অস্বীকার করে ডেভিসের বিচার চালিয়ে যায়। বিচার চলাকালীন একজন নিহতের বিধবা আত্মহত্যা করেন। [২] গত ১৬ মার্চ দুই নিহতের নিকটাত্মীয়রা আদালতে হাজির হয়ে জানায়, তাদের ২০ কোটি পাকিস্তানি রূপি ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। শরিয়া আইন অনুযায়ী রক্তের ঋণ শোধ করে দিলে হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে পারে নিহতের আত্মীয়স্বজন। পাকিস্তানি রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের ক্ষতিপূরণ না নেয়ার জন্যে নিহতের আত্মীয়দের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিলো। ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে এক নিহতের আইনজীবী আসাদ মনজুর বাট জানায়, ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে তিনি জানেন না, কারণ তাকে তার মক্কেলদের কাছ থেকে চার ঘন্টার জন্য দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিলো। এ সময় এ ধরনের কোনো চুক্তি হয়ে থাকলে তা তার অজান্তে ঘটেছে। ডেভিসের মুক্তির ঘটনার পর থেকে নিহতের আত্মীয়স্বজনরা নিখোঁজ রয়েছে। রেমণ্ড ডেভিসকে বিনা অভিযোগে হস্তান্তর করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর প্রবল কূটনৈতিক চাপ দিচ্ছিলো, এবং এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছিলো। [৩]

পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা ডেভিসকে উত্তরাঞ্চলে ড্রোন হামলার সাথে সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহ করে।

তৃতীয় যে ঘটনাটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, তা হচ্ছে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেনেথ লুইসের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির প্রতারণার মামলা [৪]। শেয়ার হোল্ডারদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা অর্থনৈতিক মন্দার সময় মেরিল লিঞ্চকে অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণের আগে মেরিল লিঞ্চ নিজেদের কর্তা ও কর্মীদের ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার বোনাস বিতরণ করে। অন্যদিকে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা সরকারের কাছ থেকে ৪৫০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রণোদনা গ্রহণ করে মেরিল লিঞ্চসহ অন্যান্য কোম্পানিকে চাঙা করার জন্য [৫]। এ কথা জানাজানি হবার পর স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে অপরাধ স্বীকার না করার শর্তে ৩৩ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেয়ার সমঝোতায় আসে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা, যা বিচারক জেড রাকফ অবৈধ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার তথ্য গোপনের কুফল ভোগ করছে এর শেয়ারহোল্ডাররা। জরিমানার দায়ও তাদের ওপরই গিয়ে পড়বে, যা ভুক্তভোগীকে সাজা দেয়ার নামান্তর। [৬] কেনেথ লুইস কংগ্রেস কমিটির সামনে শপথ নিয়ে বলেন, রিপাবলিকান সাংসদেরা তাকে মেরিল লিঞ্চ অধিগ্রহণের জন্য চাপ দেন।

চতুর্থ ঘটনাটি সাম্প্রতিক। ১৮ মার্চ, ২০১১ তারিখে যুক্তরাজ্যের উলউইচ ক্রাউন কোর্ট বাংলাদেশি-বৃটিশ রাজীব করিমকে সন্ত্রাসের চেষ্টার অভিযোগে ৩০ বছরের কারাদণ্ড ও দণ্ডভোগ শেষে বহিষ্কারের আদেশ দেয়। রাজীব করিম অভিযোগ স্বীকার করে জানিয়েছে, বাংলাদেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় এমন উগ্রপন্থী দলের সাথে সে সংশ্লিষ্ট ছিলো।

চারটি ঘটনা থেকে আমরা দেখতে পাই, প্রতিটি বিচারই সংঘটিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনের আওতায়। একটি বিচার নিয়োগবিধি সংক্রান্ত, একটি হত্যা সংক্রান্ত, একটি আর্থিক প্রতারণা সংক্রান্ত, অপরটি সন্ত্রাসের চেষ্টা সংক্রান্ত। চারটি বিচারের মধ্যে দু'টির ক্ষেত্রে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখি, কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে একটি দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি দেখাতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্কের সিইওকে আদালত ও সংসদীয় কমিটির মুখোমুখি হতে হয়, আর পৃথিবীর অন্য প্রান্তে দুর্বল বাংলাদেশে একজন ইউনূসের নিয়োগবিধি কিংবা দুর্বল পাকিস্তানে দুজন মানুষকে হত্যা নিয়ে আদালতে সম্পাদ্য বিচারকে উপেক্ষা করে "সমঝোতা"র প্রস্তাব দেয় সেই একই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আজ ইউনূসের নিয়োগবিধি নিয়ে মামলাকে উপেক্ষা করছে যুক্তরাষ্ট্র, কাল কি তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়কেও তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে "সমঝোতা"য় যাওয়ার জন্য চাপ দেবে? লক্ষণ তো সেরকমই বলে।

রাজীব করিমের ব্যাপারে সব পক্ষ একমত, এমনকি রাজীব করিম নিজেও। উগ্রপন্থী জিহাদী না হয়ে আজ সিআইএর কনট্র্যাক্টর কিংবা ক্লিনটন পরিবারের শান্তিতে নোবেল লরিয়েট বন্ধু হলে হয়তো পরের দিনই দেশে ফেরার বিমান ধরতে পারতো সে, জন্ম বাংলাদেশেই হোক কি যুক্তরাষ্ট্রে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে আরো অনেক কিছু বলা যেতো, কিন্তু মাথা নিচু হয়ে যায়, যখন খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে আমাদের রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেন [৮]। এর আগে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহাদাব আকবরের দণ্ডও তিনি মওকুফ করে দিয়েছিলেন [৯]।

সম্রাটের ইচ্ছায় রাত দিন হয়ে যায়। আমাদের পঞ্জিকা কী বলে, তাতে কিচ্ছু আসে যায় না।


[১] ঘটনাপঞ্জি: গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে ইউনূসের অপসারণ

[২] Raymond Davis and Lahore shootings - unanswered questions

[৩] CIA contractor Ray Davis freed over Pakistan killings

[৪] Bank of America’s Ex-Chief Denies Fraud, নিউ ই্য়র্ক টাইমস

[৫] ফেডারেল বেইলআউট

[৬] Bank of America faces trial over bonuses 'lies'

[৭] Terror plot BA man Rajib Karim gets 30 years

[৮] রাষ্ট্রপতির ক্ষমা

[৯] শাহাদাব আকবরের সাজা মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি


মন্তব্য

সাইদ এর ছবি

এসব দেখলে একটা কথাই খালি মনে হয়

জোর যার মুল্লুক তার


আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

হীরক রাজা ছাড়া আর কারো বচনে কি আর কোন কাজ হয়? যার নাম নাই, তার বচনেরও দাম নাই!

--- থাবা বাবা!

এম তানজিরুল আজিম এর ছবি

একটা কথা আছে যাকে double principle rule বলে মনে হয়, নিজ দেশের ব্যাপারে তোমার সততা হতে হবে পাথরের মত অটল, আর দেশের বাইরে হতে হবে শেয়ালের মত ধূর্ত। বিশ্বের মোড়ল শ্রেণীর রাষ্ট্র সমূহে এই নীতির অবিকল প্রতিফলন দেখতে পাই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইস্রাইলের গণতন্ত্র আর বিচার ব্যবস্থার সাথে যদি তাদের বৈশ্বিক নীতির পর্যালোচনা করি তাহলেও একি চিত্রই ফুটে ওঠে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার অপব্যবহারে হিমুর অবজার্ভেশনের সাথে পূর্ণ সহমত রেখে রেমন্ড ডেভিসের ঘটনাটায় একটু ব্যাক্তিগত মতামত রাখছি-

গোটা ঘটনাটার সবথেকে বড় বেনিফিশিয়ারি হয়ে গেলো পাঞ্জাবের চিফ মিনিষ্টার ও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিয়া মুহাম্মাদ নাওয়জ শরীফের ছোট ভাই 'ছোটে মিয়া' মুহাম্মাদ শাহবাজ শরীফ তথা পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নাওয়াজ)। রেমন্ডকে ছেড়ে দেওয়ার পরে সারাদেশে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। আমি ইসলামাবাদে বাসায় বসে রাতভর গুলির শব্দ শুনেছি। একদল জনতা আমেরিকান এ্যমব্যাসির দিকে ধাবমান হলেও পুলিশ ও আর্মি তাদের এগোতে দেয়নি। শুক্রবার সারাদেশে ব্যাপক গণবিক্ষোভ হয় এবং আমরা অফিস বন্ধ রেখে বাসায় বসে কাজ করেছি। এরপর আমি রাতের একটা বাস ধরে লাহোর যাই। আমার লাহোরের বন্ধুদের সাথে রেমন্ডের বিষয় নিয়ে অনেক কথা হয়। এরা লাহোরের সাধারন মানুষ এবং ওদের মতে এগুলো মূলত লাহোরের সবারই কথা। ওদের সাথে কথার জের ধরে আমি কিছু পয়েন্ট দাঁড় করিয়েছি যে কিভাবে এই ঘটনাটা শাহবাজ শরীফকে রাজনৈতিকভাবে লাভবান করলো-

১. পাকিস্তানের রাজনীতিতে ঐতিহাসিকভাবে আমেরিকার ব্যাপক প্রভাব থাকে। এই ঘটনা শাহবাজকে আমেরিকার অনেক কাছে নিয়ে আসার রাস্তা সুগম করলো। তবে কথা থেকে যায় যে আমেরিকা তার এই আনুগত্যের কতখানি পুরষ্কার দেবে। দেখা যাক, সময়ই তা বলে দেবে।

২. পাকিস্তানের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচারকাজে শরীয়া আইনেরও গ্রহনযোগ্যতা আছে তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ব্যবহৃত হয় প্রচলিত আইনের পরিপূরক বা সম্পূরক হিসেবে। তবে এরকম গুরুতর ও জটিল ক্ষেত্রে শরীয়া আইনের প্রয়োগ নজিরবিহীন। পাঞ্জাবের জনগনের কাছে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে যে এটা ছাড়া মুসলিম লীগ সরকারের আর কোনও কিছু করার ছিলো না। অন্যদিকে প্রোপাগন্ডা ছড়ানো হয়েছে যে কেন্দ্রীয় সরকারের পিপিপি অংশের নমনীয় বৈদেশিক নীতি এই মামলাকে প্রভাবিত করেছে। এতে করে কৌশলে মুসলিম লীগকে পিপিপির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে শাহবাজ শরীফ নিজের অবস্থান অনেকটাই নিষ্পাপ এবং 'লাচারী' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। পাঞ্জাবের সাধারণ জনতা তার এই টোপ গিলেছেন। আমার বন্ধুদের মতে পাঞ্জাবের অধিকাংশ মানুষ এই ঘটনায় শাহবাজকে আর দোষী ভাবছেন না।

৩. শাহবাজ ইচ্ছে করলেই রেমন্ডকে ঘটনার পরপরই সরিয়ে দিতে পারতেন। পাকিস্তানে খুন-খারাবী নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু তিনি তা না করে রেমন্ডকে বিচারের সামনে নিয়ে আসেন। এতে করে পাঞ্জাবের জনগনের সামনে তার একটা অকুতোভয় এবং আপোষহীন ইমেজ তৈরী হয়। তিনি স্পষ্টত প্রচারমাধ্যমে ব্যাক্ত করেছেন যে আইন রেমন্ডকে একবিন্দু্ও ছাড় দেবে না। কিন্তু পরবর্তীতে পাঞ্জাবের সরকারী প্রোপাগন্ডা শরীয়া আইনের বিচার এবং রেমন্ডের মুক্তিটাকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব বলে বাজারে ছেড়ে দেয়। যদিও এক্ষেত্রে শাহবাজ কোনওরকম বিবৃতি দেননি বা প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেননি।

এখন অপেক্ষা করতে হবে তিনটা বিষয় দেখার জন্যে-

১. দেখা যাক, পিপিপি এই পরিস্থিতিকে পলিটিক্যাল কনটেক্সটে কিভাবে মোকাবেলা করে।
২. দেখা যাক, পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন) পাঞ্জাবের বাইরে কিভাবে এই ঘটনা থেকে ফায়দা লোটে। আর,
৩. দেখা যাক, এই ঘোলা পানিতে ড. কাদির খান এবং ইমরান খান কিভাবে মাছ শিকার করেন।

দীর্ঘ মন্তব্য বিরক্তি উৎপাদনের কারণ হলে ক্ষমাপ্রার্থী।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানভীর এর ছবি

ইউনূসের ব্যাপারে তেমন কিছু বলার নাই। নোবেল লরিয়েট ছাড়াও ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘প্রেসিডেনশিয়াল ফ্রিডম’ পাওয়া ব্যক্তি, কোনো দেশের যুদ্ধাপরাধী নন। ধরা যাক, বাংলাদেশ কোনো বিদেশী নাগরিককে ‘স্বাধীনতা পদক’ বা ‘একুশে পদক’ দিয়ে সম্মানিত করলো। সে ব্যক্তির সাথে তখন দেশের সম্মানও জড়িত হবে। এখন যদি সেই ব্যক্তি অন্যায়ভাবে তার নিজ দেশে হেনস্থার শিকার হয়, তখন বাংলাদেশ যেমন উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান উৎকন্ঠাও তার চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। আর বাংলাদেশ ব্যাংক, আদালতের পেছনে কে বা কারা কলকাঠি নাড়ছে সেটা সবাই জানে। এটা যে স্রেফ ক্ষমতা ব্যবহার করে পেশি প্রদর্শন এবং এর পেছনে যে কোনো শুভবোধ নাই, তা বলে দিতে হয় না। কাজেই এইসব আইনের হাইকোর্ট দেখিয়ে বিষয়টাকে জাস্টিফাই করা যায় না। গুআযমকে তো বাংলাদেশের আদালত নিষ্পাপ, মাসুম বলে ছেড়ে দিয়েছে। তাতে কি মহামান্য আদালতের আদেশ আমাদের জন্য শিরোধার্য হয়ে গেছে? বাংলাদেশে আইন-কানুন কেম্নে চলে, কারা এর মা-বাপ এটা আমরা যেমন জানি, যুক্তরাষ্ট্রও জানে।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, রেমন্ড ডেভিস একজন মার্কিন নাগরিক। কোনো মার্কিন নাগরিক যদি বিদেশে কোনো অপরাধ করে ধরা পড়ে এবং মনে করে সেখানে সে নিজদেশের মতো সুবিচার পাবে না, তবে সে রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানাতে পারে হস্তক্ষেপ করার জন্য। এটা নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে তার অধিকার। আমাদের দেশের হাজার হাজার লোক বিদেশের জেলগুলিতে পচে-গলে মরছে, তাতে সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ না করা রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু পৃথিবীর সব দেশই তো আর বাংলাদেশ নয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, মাদক চোরাচালানের দায়ে একবার মার্কিন এক তরুণীর বাংলাদেশে শাস্তি এবং জেল হয়েছিলো। তাকে আমেরিকা প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। ওই মার্কিন তরুণীর সাথে আমেরিকার কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত ছিলো না। স্রেফ নিজ নাগরিককে রক্ষার তাগিদেই রাষ্ট্র হিসেবে তারা এ গ্লানিটুকু হজম করেছে। আর যখন স্বার্থ জড়িত থাকে তখন হস্তক্ষেপ করা তো কেবল সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশ যেদিন তার কোনো নাগরিককে বিদেশের জেল থেকে নিয়ে আসা বা অন্য দেশে বিচারের হাত থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে, আমি সেদিন আমার দেশের জন্য গর্বই অনুভব করবো।

হিমু এর ছবি

তানভীর ভাই, আমি দ্বিমত পোষণ করতে চাই। ড. ইউনূস কিংবা এলিয়াদা ম্যাকর্ড, এদের দু'জনের একজনকেও কিন্তু কোনো কালা কানুনের শিকার করা হয়নি। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের আওতাতেই বিচার হয়েছে, এই আইন সম্পর্কে কি যুক্তরাষ্ট্র কোনো আপত্তি তুলেছে?

বিচারের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ছে, তাদের আমরা পছন্দ করতে না পারি, কিন্তু আইনটাকে কি আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারছি এ ক্ষেত্রে?

আপনাকে প্রেসিডেনশিয়াল ফ্রিডম মেডেল দিয়েছি, বাংলাদেশের আইন থেকে ইনডেমনিটি তো দেইনি। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যের সাথে আপনার বক্তব্যের মিল নেই। তাদের লোক এসে পরিষ্কার করে বলে গেছে, "সমঝোতা" করে "সম্মানজনক" সমাধান করতে হবে। এ কথা তারা বিল ক্লিনটনকে মনিকার মুখে নুনু ঢুকানোর অপরাধে ইমপিচ করার সময় বলেনি। নিজের দেশের প্রেসিডেন্টকে তো বিনা সমঝোতায় সম্মানের পশ্চাত মেরে কানে ধরে ঠিকই নামিয়েছে আইনের বইপুস্তক দেখিয়ে। দেখায়নি? আপনি কি মনে করেন, একজন ইউনূসের প্রতি দরদ একজন প্রেসিডেন্টের প্রতি দরদের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের জন্য বেশি?

বাংলাদেশের নাগরিক অন্য দেশে অপরাধ করে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে বেঁচেছে। কথিত আছে শিল্পপতি জহিরুল ইসলাম সৌদি আরবে চুরির দায়ে হাত খোয়াতে বসেছিলো, জিয়াউর রহমান তাকে বাঁচিয়ে আনে। এতে করে চুরি হালাল হয়ে যায় না। এলিয়াদা ম্যাকর্ডের ২৫ কেজি হেরোইন বহনও জায়েজ হয়ে যায় না।

তানভীর এর ছবি

এলিয়েডা ম্যাকর্ডকে কোনো কালা কানুনে ধরা হয় নি। আমেরিকা আইনের বিরুদ্ধেও কিছু বলে নি। বিচারে শাস্তি হওয়ার পর মার্সি চাওয়া হয়েছিলো, ওই পর্যন্তই। কিন্তু ইউনূসেরটা অবশ্যই কালা কানুন। গ্রামীণ ব্যাংক বিশেষ অর্ডিন্যান্সে পাস হওয়া একটি ‘বিশেষায়িত ব্যাংক’। অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো এখতিয়ার নাই গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর খবরদারি করার। আর সবচেয়ে বড় কথা- যে যত যুক্তিই দেখাক, সরকার যতই এর অংশীদার থাকুক ‘গ্রামীণ ব্যাংকের’ পরিচয় এটা মুহম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান, এটা তার ‘ব্রেইন চাইল্ড’। এ প্রতিষ্ঠান একদিনে তৈরী করে নি, তিলতিল করে তাকে শ্রম দিয়ে তৈরী করতে হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের জন্যে যদি দরদী কেউ থাকে তবে সেটা ইউনূসের চেয়ে বেশি আর কেউ হতে পারে না। আজ যদি সচলায়তনের ২৫ ভাগ শেয়ার সরকারকে দেয়া হয়, সরকার যদি আইন-কানুন দেখিয়ে বলে মুর্শেদ-হিমুকে সচলায়তন থেকে সরে যেতে হবে, তাদের বয়স সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের চেয়ে বেশি, তাদের নিয়োগে পূর্বানুমোদন নাই ইত্যাদি হেনতেন; সেটা যেমন কালা-কানুন হবে, এক্ষেত্রেও তাই।

জহিরুল ইসলামের টাকার জোর আছে। তাই জিয়াউর রহমানও তাকে বাঁচিয়ে এনেছিলো। আজ জয়-তারেক-কোকোও যদি বিদেশের মাটিতে ধরা খায় হাসিনা-খালেদাও তাদের পাছা বাঁচাতে এগিয়ে আসবে। কিন্তু আমাদের মতো ম্যাঙ্গোদের জন্য কেউ আসবে না। এলিয়েডা ম্যাকর্ড আমেরিকার একজন ম্যাঙ্গো পাবলিক। অথচ তাকে বাঁচাতেও আমেরিকা প্রয়োজনে বাম হাত ঢুকায়। এই হলো পার্থক্য।

হিমু এর ছবি

অর্ডিন্যান্সেই তো লেখা আছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের পূর্বানুমোদনের কথা। আপনি অর্ডিন্যান্সটা পড়ে দেখেন।

অবশ্যই গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ইউনূসের ব্রেইন চাইল্ড। আর যে তিলতিল শ্রমের কথা বলছেন, সেই শ্রম ছাড়াও অনুগ্রহ করে এই বিশেষায়িত ব্রেইন চাইল্ডের ওপর অর্ডিন্যান্স জারি করে মেলে ধরা রাষ্ট্রের ছাতার কথা বলুন। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক দীর্ঘদিন ধরে করমুক্তি পেয়ে আসছে, অন্য সকল ব্যাঙ্কের চেয়ে সে এক ধাপ এগিয়ে আছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে।

সরকার শেয়ারের জোরে ইউনূসকে সরায়নি, সরিয়েছে অর্ডিন্যান্সের জোরে। এর পেছনে উদ্দেশ্যটা ভালো নয় সেটা তো পরিষ্কার, কিন্তু আইনের দোষ আপনি দিতে পারেন কি? আর এই একই যুক্তি তো দিচ্ছে যুদ্ধাপরাধীরাও, যে এতদিন বিচার করলো না এখন করে কেন, অতএব এটা কালা কানুন।

প্রসঙ্গটা ম্যাঙ্গো কিংবা স্ট্রবেরির নয়। প্রসঙ্গটা ভিনদেশের আইন সম্পর্কে কোনো রাষ্ট্রের মনোভাবের। এলিয়াদা ম্যাঙ্গো হোক বা স্ট্রবেরি হোক, সে অপরাধী। তাকে "বাঁচাতে" কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো "সমঝোতা"র কথা বলেনি, "সম্মানজনক" সমাধানের কথাও বলেনি, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলো তাকে ক্ষমা করে আরেকটা সুযোগ দেয়ার। ইউনূসের ক্ষেত্রে তো তা ঘটছে না। ইউনূসের ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসে আমাদের বিচারিক সিদ্ধান্তকে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো সমাধান সাজেস্ট করছে। এটা সার্বভৌমত্বের ওপর চিমটি কাটার শামিল। আমি এর বিরোধিতা করি, কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি, তাদের পেয়ারের জামাতিদের বিচার নিয়েও তাদের মনোভাব একই রকম।

ই-ইউ এর রাষ্ট্রদূত কিন্তু এটাকে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য থেকে বিরত ছিলেন।

তানভীর এর ছবি

ইউনূস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিয়েই বোর্ড কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। পুনঃমেয়াদের সময় দ্বিতীয়বার হয়তো অনুমোদন নেয়া হয় নি। যাকে বাংলাদেশ ব্যাংক একবার অনুমোদন দিয়েছে, বোর্ড যদি তার কাজের মেয়াদ বাড়ায়, তবে আবারো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের কী প্রয়োজন, সে পুনঃঅনুমোদনে কী হাতি-ঘোড়া হবে এবং এই খোঁড়া অজুহাত তুলে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতাকে সরালে ব্যাংকের কী কী উপকার হবে তা বুঝতে আমি অপারগ। শুধু বুঝি এইসব ফাঁকফোকর খুঁজে কাউকে টেনে নামানোর উদ্যোগ হঠকারি ও অন্যায়। আর যেখানে বিচারের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত- কর্তার ইচ্ছায় কর্ম, তা বিচারের নামে প্রহসন ও দেশের বিচার ব্যবস্থার অপমান ছাড়া আর কিছুই নয়। আমেরিকা নাক গলালে আমরা অপমানিতবোধ করি, অথচ সারা বিশ্বের সামনে প্রহসনের নাটক সাজিয়ে নিজেরাই নিজেদের অপমান করি তা চোখে দেখি না!

প্রসঙ্গটা ম্যাঙ্গো কিংবা স্ট্রবেরির নয়। প্রসঙ্গটা ভিনদেশের আইন সম্পর্কে কোনো রাষ্ট্রের মনোভাবের।

একভাবে দেখলে এমন মনে হতে পারে। তবে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে একে নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের কমিটমেন্ট হিসেবেও দেখা যায়। দেশ মানে তো শুধু ভূখন্ড নয়, দেশের সব মানুষও। সেই নাগরিকদের কেউ যদি বিদেশে কোনোভাবে আটকা পড়ে, রাষ্ট্রের তাতে উদাসীন থাকাটাই আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়।

হিমু এর ছবি

কল্পনা করুন, হাসিনার ক্ষমতার মেয়াদ শেষ। হাসিনা ভোটের তোয়াক্কা না করে আরো দশবছর শাসন করতে চায় দেশ। আইন দেখালে বলে, "আবার অনুমোদনের কী প্রয়োজন, সে পুনঃঅনুমোদনে কী হাতি-ঘোড়া হবে এবং এই খোঁড়া অজুহাত তুলে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সরালে দেশের কী কী উপকার হবে তা বুঝতে আমি অপারগ। শুধু বুঝি এইসব ফাঁকফোকর খুঁজে কাউকে টেনে নামানোর উদ্যোগ হঠকারি ও অন্যায়।" আশা করি সেদিন আপনি হাসিনার পাশেই থাকবেন।

বিদেশে "কোনোভাবে" আটকা পড়া আর বিদেশে কোনো ফৌজদারি অপরাধে আটকা পড়ার মধ্যে পার্থক‌্যটাই তো আপনি আমলে নিচ্ছেন না। তাহলে ছাত্রলীগের মাস্তানগুলিকে যখন মন্ত্রী-এমপিরা থানা থেকে ছাড়িয়ে আনে, সেটাও স্বাভাবিক?

তানভীর এর ছবি

বাংলাদেশ তো হাসিনা বা হাসিনার বাপের প্রতিষ্ঠান নয়। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক ইউনূসের প্রতিষ্ঠান। দুটোর তুলনা তাই চলে না।

আমি এখানে 'ফৌজদারি' বা কোনো অপরাধ বিষয়ে কথা বলছি না। অপরাধী সে সব বিচারেই অপরাধী। কিন্তু রাষ্ট্র তাদের ছাড়িয়ে আনতে পারে কি পারে না সেটাই বলছিলাম। মন্ত্রী যখন তার পান্ডাদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনে তখন সেটা ব্যক্তিগত বা দলীয় ব্যাপার হয়ে যায় নিশ্চয়ই।

হিমু এর ছবি

আমি সবিনয়ে দ্বিমত পোষণ করছি। গ্রামীণ ব্যাঙ্কও ইউনূস কিংবা ওনার পিতার প্রতিষ্ঠান নয়। তিনি এই ব্যাঙ্কের আইডিয়ার প্রোপোনেন্ট এবং সফল ব্যবস্থাপনা পরিচালক। হাসিনা আর ইউনূস, দু'জনের ওপরই দায়িত্ব আইনবলে অর্পিত। আপনি যদি মনে করেন গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ইউনূসের পৈতৃক সম্পত্তি, তাহলে সেটা পরিষ্কার করে বলুন।

রাষ্ট্র যে পারে সেটাই তো এই পোস্টের আলোচ্য। কিন্তু এই পারাটা অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে কাঁচকলা দেখিয়ে পারা কি না, সেটাই তো বিবেচনা করতে হবে। ইউনূসের "সমঝোতা"র জন্য আমেরিকার হস্তক্ষেপ আর মন্ত্রী-এমপি কর্তৃক লীগের পাণ্ডাদের পাছা বাঁচানোর মধ্যে পার্থক্য কী?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

গ্রামীন ব্যাংকের ইউনূস আর বাংলাদেশের হাসিনা— দুইটা উদাহরণ কি এক হলো?

গ্রামীন ব্যাংকে ইউনূস থাকলো নাকি ধলাচোর থাকলো তাতে বাংলাদেশের মানুষের কিছুই আসে যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের শাসনের গদিতে কে থাকবে আর কে থাকবে না, এটার উপর তো টপ টু বটম অনেক কিছুই নির্ভর করে।

দিগন্ত এর ছবি

রেমন্ড ডেভিসের কেসটার সাথে বাকিগুলো একটু আলাদা কারণ রেমন্ড ডেভিসের ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি। ১৯৮৪ সালে লিবিয়ার দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভকারীদের পুলিশ যখন নিয়ন্ত্রণ করছিল তখন দূতাবাসের ভেতর থেকে গুলি করে দশজনকে আহত করা হয়। গুরুতর আহত পুলিশকর্মী পরে মারা যান হাসপাতালে। কিন্তু ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি মেনে দূতাবাসের কাউকে ব্রিটিশ আইনে খুনের দায়ে জেলে দেওয়া হয়নি, বরং লিবিয়াতে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। লিবিয়ার সরকার (পড়ুন গাদ্দাফি) দায় স্বীকার করে, কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় নি।

এর ব্যতিক্রমও আছে। জর্জিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত আমেরিকায় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে ধাক্কা দেন, মেরেও ফেলেন একজনকে। তাকেও জেলে দেওয়া হয়নি, কিন্তু কিছুদিন পরে জর্জিয়া ওই ব্যক্তির ওপর থেকে ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি তুলে নেয়। এর পরে মার্কিন আদালতে তাকে তোলা হয় ও বিচারে তার একুশ বছরের জেল হয়। অবশ্য বছর তিনেক পরেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মনে করা হয় দুই দেশের যোগসাজেশে ব্যাপারটা কমের ওপর দিয়ে রফা করা হয়, যেমনটা হচ্ছে রেমন্ড ডেভিসের ক্ষেত্রে।

তবে এই ব্যাপারে দেশগুলো নিজেদের ওজন বুঝে চলে। রাশিয়ার কূটনীতিক কানাডায় গাড়িচাপা দিয়ে দুইজনকে মেরে ফেলার পরে কানাডাও একইভাবে ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি তুলে নেবার অনুরোধ জানায় রাশিয়াকে। রাশিয়া তার ইমিউনিটি তুলে নেয়নি, কিন্তু দেশে ফিরিয়ে নিয়ে ঘটনার বিচার করে ও ওই কূটনীতিক চার বছরের জন্য জেলও খাটেন।

আমাদের উপমহাদেশের সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল শ্রীলঙ্কায় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত নিজের বাড়িতে বৌকে গুলি করে মেরে প্রতিবেশীদের সামনেই তার মৃতদেহ পুড়িয়েছিলেন। পুলিশ তার বাড়িতে ঢুকতে চাইলে তিনি ইমিউনিটি দেখিয়ে বলেন যে তার বাড়ি মায়ানমারের সার্বভৌম অধিকার ও উনি চাননা পুলিশ সেই সময় তার বাড়িতে ঢুকুক। পুলিশ উপায়ান্তর না দেখে ফটক থেকে বিদায় হয়।

নিউ ইয়র্ক শহরে ডিপ্লোম্যাটদের পার্কিং টিকিট ভায়োলেশন নিয়ে একটা ভাল রিসার্চ পেপার আছে।

ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি একটা কালা-কানুন ছাড়া কিছুই না, যে সুযোগ বুঝে দেশের রাঘব-বোয়ালদের প্রোটেকশনের জন্য ব্যবহার করা হয়। অথচ এই কালা-কানুন সব দেশই মেনে চলে। হঠাৎ করে আপনার কোনো প্রিয় ব্যক্তি কারো গুলিতে মারা যাবার পরে জানতে পারলেন যার গুলিতে মারা গেছে সে ইমিউনিটির আওতায় পরে বলে খুনের বিচার হবে না। কেমন লাগবে?

আমার মনে হয় ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটির পরিবর্তে এই বিষয়গুলোর বিচার জাতিসংঘের বা আই-সি-জের অধীনে করলেই ভাল হয়। নাহলে প্রায়ই অপরাধী পার পেয়ে যায়, শুধু তাই নয় অপরাধী ইমিউনিটির ছাতার তলায় বসে ইচ্ছামত অপরাধ করার সুযোগও পায়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

গ্রামীণ ব্যাংক দেশের দারিদ্র্য দূর করতে ভূমিকা রাখছে, এটায় সরকার অংশভাক্ হলেও ইউনূসের কর্মদক্ষতা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি বিবেচনায় তিনি আমৃত্যু প্রধান থাকতে পারেন, তিনি দেশের উন্নতির জন্যে আরও অনেক কিছু করতে পারেন---সব, সব যদি বিনা প্রশ্নে মেনেও নেই, তারপরও প্রশ্ন হলো তাঁর হাতে-গড়া এই মহান প্রতিষ্ঠানের সেকেন্ড লিনিয়েজ অব ম্যানেজমেন্ট তিনি তৈরি করলেন না কেন? সম্ভবত, তিনি ভেবেছিলেন "আমরা তো চিরজীবী, নাহি হব ক্ষয়"! কিমাশ্চর্যতঃপরম!

ধরা যাক, বাংলাদেশ কোনো বিদেশী নাগরিককে ‘স্বাধীনতা পদক’ বা ‘একুশে পদক’ দিয়ে সম্মানিত করলো। সে ব্যক্তির সাথে তখন দেশের সম্মানও জড়িত হবে।

শর্ষিনার পিরও কিন্তু 'স্বাধীনতা প্রদক'প্রাপ্ত। খুউপ খিয়াল কৈরা!

দেশের সম্মান এতোই কি সুলভে বিক্রেয়?

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

দ্রোহী এর ছবি

দৈনিক মতিকণ্ঠে পড়লাম ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়টা তিনদিনের মধ্যে ফয়সালা না হলে নাকি বিমান হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র!

অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ

অপছন্দনীয় এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি আপনি এইসব খুঁজে বের করেন কোত্থেকে?

ফাহিম হাসান এর ছবি
ফাহিম হাসান এর ছবি

আজ ইউনূসের নিয়োগবিধি নিয়ে মামলাকে উপেক্ষা করছে যুক্তরাষ্ট্র, কাল কি তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়কেও তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে "সমঝোতা"য় যাওয়ার জন্য চাপ দেবে?

চলুক

হিমেল নাগ রানা  এর ছবি

America I've given you all and now I'm nothing. /
America two dollars and twenty-seven cents January 17, 1956. /
I can't stand my own mind. /
America when will we end the human war? /
Go fuck yourself with your atom bomb /
I don't feel good don't bother me. / ... ... ...
[America, Allen Ginsberg]

http://writing.upenn.edu/~afilreis/88/america.html

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সুন্দর একটা উদাহরণ আমাদের আশেপাশেই আছে। কে জামাত কে শিবির সেটা না বিবেচনায় এনে খবরটা পড়া যাক।

জবিতে দুই ছাত্রকে পেটালো ছাত্রলীগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মার্চ ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে 'শিবির কর্মী সন্দেহে' দুই ছাত্রকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। পরে তাদের পুলিশে দেওয়া হয়।

সোমবার বিকেল তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হামলার শিকার ওই দুই ছাত্র হলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মো. রফিকুল ইসলাম ও ইউসুফ হোসেন।

তারা জানান, মাস্টার্স শেষ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে শ্রাবণের নেতৃত্বে ১০/১২ জন ছাত্রলীগ কর্মী তাদের ওপর হামলা করে।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অশোক কুমার সাহা ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে নিজের কক্ষে নিয়ে যান। পরে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ছাত্রলীগ কর্মী শ্রাবণ বলেন, "এরা চিহ্নিত শিবির কর্মী। ক্যাম্পাসে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করায় তাদের আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।"

কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শরীফ হোসেন জানান, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যারা মার খেল তাদেরকেই আবার পুলিশে দেয়া হলো, কারণ তারা সম্ভবত শিবির করে। ভালো কথা। কিন্তু যারা পেটালো তাদের কিছু হলোনা! হবে কিভাবে? ...

সিরাত এর ছবি

চলুক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দারুণ অবজারভেশন!

দুর্দান্ত এর ছবি

ওপরে ইউনুসের নবেল ও মার্কিন সম্মাননা নিয়ে কথাবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সংবিধানের পরিচ্ছেদ ৩ ধারা ৩০ উতকলন করলামঃ

"30. Prohibition of foreign titles, etc.
No citizen shall, without the prior approval of the President, accept any title, honour, award
or decoration from any foreign state."

সোজা বাংলায় বলা হল, প্রজাতন্ত্রের যেকোন নাগরিক বিজাতীয় সরকারপ্রদিত সম্মাননা গ্রহন করার আগে রাষ্ট্রপতির অনুমতি নেবে।

মনে প্রশ্ন জাগে, ইউনুসের নোবেল ও আমেরিকান সম্মাননা কি রাষ্ট্রপতি অনুমোদিত? যদি সরকার ইউনুসকে নবেল গ্রহণে অনুমতি দিয়ে থাকে, তাহলে যে কাজ করে ইউনুস এই সম্মাননা পেল, তাকে সেই কাজ থেকে হঠানোতে সরকারের আইনী রাস্তায় হাটাকে সরল সোজা চোখে দেখা যায়কি?

যদি ইউনুসের নবেল ও মার্কিন সম্মাননা বেআইনী হয় তাহলে সেই কথাগুলো পরিস্কার করে মিডিয়ায় ফলাও করে দেয়া হোক। পাবলিক আর ইউনুসের নোবেল নিয়ে আজাইরা আলাপে যাবেনা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তাহলে যে কাজ করে ইউনুস এই সম্মাননা পেল, তাকে সেই কাজ থেকে হঠানোতে সরকারের আইনী রাস্তায় হাটাকে সরল সোজা চোখে দেখা যায়কি?

আমার জানামতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের জন্য ইউনুস নোবেল পান নাই, পেয়েছেন উদ্ভাবিত তত্ত্বের জন্য। এই তত্ত্বটা যে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রয়োগ করে দারিদ্র বিমোচনের চেষ্টা করতে পারে, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সেরকমই একটি প্রতিষ্ঠান

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হিমু এর ছবি

আপনার জানামত সঠিক নয়।

The Nobel Peace Prize 2006 was awarded jointly to Muhammad Yunus and Grameen Bank "for their efforts to create economic and social development from below"

[সূত্র]

হিমু এর ছবি

শান্তিতে নোবেল কোনো রাষ্ট্র দেয় না, দেয় নরউইজিয়ান নোবেল কমিটি। এ জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। দ্বিতীয়ত, সরকার আর রাষ্ট্রপতি এক জিনিস না।

দুর্দান্ত এর ছবি

শান্তিতে নোবেল কোনো রাষ্ট্র দেয় না, দেয় নরউইজিয়ান নোবেল কমিটি।

ঠিক আছে। তবে আমেরিকার সম্মাননার ক্ষেত্রে অনুমতির প্রয়োজন টা রয়েই গেল। আমেরিকার সরকার সেই পদক দিয়েছিলঃ

"in recognition of his contribution as a global leader in anti-poverty efforts, and for his work as a pioneer in the use of "micro-loans" to provide credit to poor individuals without collateral."

সহজ কথায়, গ্রামীনব্যাঙ্কের জন্যই আমেরিকার সরকার ইউনুসকে এই পদক দেয়।

সরকার আর রাষ্ট্রপতি এক জিনিস না।

পুঁথিগত বিচারে রাষ্ট্রপতি-সরকারের বিভাজন থাকতে বাধা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে কার্যত সরকারের মুখাপেক্ষি করেছে। সংবিধানে চতুর্থ অনুচ্ছেদের ৪৮(৩) নম্বর ধারায় বলছেঃ কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যাতিক্রম ছাড়া রাষ্ট্রপতির সব কাজ প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ/সুপারিশ অনুসারে হবে। এই হিসাবে যদি রাষ্ট্রপতি ইউনুসের সম্মাননাকে (নোবেল না হোক, আমেরিকান প্রেসিডেন্টের পদকই সই) অনুমোদন দিয়ে থাকে, তাহলে সেটা হাসিনার সরকারের সুপারিশেই ঘটেছে।

হিমু এর ছবি

তাহলে তো ল্যাঠা চুকেই গেল। ফ্রিডম মেডেলে টান দেয়ার পর [যদি দেয়া হয়] বাকি আলোচনা করা যাবে।

হিমু এর ছবি

আমি এই পোস্টে প্রতিযুক্তি আশা করছি ইউনূসসমর্থক কিংবা ইউনূসবিরোধীদের কাছ থেকে। বেনামে কমেন্ট আমি সরিয়ে দেবো। নিজের পরিচয় [নামই হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই] লুকিয়ে কথা বলতে আসা লোকজনকে কাপুরুষ মনে হয়। কাপুরুষদের সাথে তর্ক করতে গেলে সেই তর্ক আস্তে আস্তে ঝগড়ার দিকে চলে যায়। কাজেই যারা তর্কে যোগ দিতে চান, নিশ্চিন্তে একটা পরিচয় আশ্রয় করে শুরু করুন।

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

অনুপম ত্রিবেদি আর হিমু একই অফিসে চাকুরি করে। হিমু কোনো এক ডিপার্টম্যান্টের ম্যানেজার আর অনুপম মিয়া অন্য একটা ডিপার্টম্যান্টের সহকারি ম্যানেজার। কোনোভাবে ঘি-তেল দিয়া অনুপম মিয়া একবার 'বেস্ট এমপ্লয়ি অব দ্যা ইয়ার' পুরস্কার পাইলো। হালায় ভাবের ঠেলায় পোঙ্গা কান্ধে লয়া হাঁটে। ম্যানেজার-ফ্যানেজার কাউরে গুনায় ধরে না, মনে করেন যে পুরাই ভাবে বত্রিশ। তো একবার কোনোভাবে তারে পাওয়া গেলো একটা মাইনকা চিপায়, হিমু তার ম্যানেজার পদের জোরে এইচ আর ডিপার্টম্যান্ট থিকা অনুপমের নামে 'থার্ড স্লিপে কট' নোটিশ দিয়া কইলো - আপন রাস্তা মাপো।

অনুপম মিয়া হেইটারে লয়া গেলো এম ডি'র কাছে, হেয় কইলো - সব ঠিকাছে, তুই ব্যাটা বেল্লিক যাহ, ফুট! আবার গেলো চ্যায়ারম্যানের কাছে, হেই মিয়ায় কইলো - রাখো, কয়দিন আলোচনা কইরা জানাইতাছি। এর মাঝখান দিয়া অনুপম মিয়া কুখ্যাত কানকাটা রমজান আর নান্দাইলের ইউনুসরে কাওরান বাজারে ডাইকা চা খাইতে খাইতে এই বিষয়টা জানান দিলো। কারন হেরা বিগত জিন্দেগির ইয়ার-দোস্ত। পরেরদিন সক্কাল সক্কাল রমজার আর ইউনুস মিয়া অফিসে ঢুইকা সবাইরে জড়ো কইরা হেরে গলায় চিক্কুর পারলো - অনুপমের ঘটনা তিন দিনের মধ্যে "মানে মানে" "ভালো ভাবে" শ্যাষ করতে হইবো, নইলে কোপ আমার, নলি আপনার ... ...

=====================================================

শান্তিতে নোবেল পদক প্রাপ্ত অধ্যাপক ইউনুস সাহেব ঠিক এমনই 'বাইরের লোক' দিয়ে দেশের অভ্যন্তরের ব্যাপার নিয়ে ধমকা-ধমকি করাচ্ছেন। আর 'দেশের ভেতরের লোক'গুলোও যে সবসময় থার্ড স্লিপেই থাকে তা তো আমরা জানিই। রাজনীতিতে অনেক আকাম-কুকাম হয়, আমরা সব ভুলে গিয়ে সেই জয় বাংলা বা বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগানে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ভোট দেই ... তারা ক্ষমতায় আসে ... আকাম-কুকাম করে ... আবারও আমরা তাদের ডেকে আনি ... এই সার্কেলেই চলছে, হয়তো চলবে আরো বেশ কয়েক যুগ। কিন্তু ইউনুস সাহেব যে আকামটা করলেন তাতে করে বোঝাই যায় এই লোকের নোঙ্গরটা কোথায় আর তাকে দিয়ে 'কোন দেশের' স্বার্থরক্ষা হচ্ছে ও হবে। আমরা ম্যাঙ্গো পিপল 'হাবা' হতে পারি কিন্তু 'আবাল' নই।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

নাশতারান এর ছবি

সবই ঠিক। কিন্তু ক্যাচালটা 'বেস্ট এমপ্লয়ি অব দ্যা ইয়ার' পুরস্কার নিয়ে বলে মনে হয় না আমার। অনুপম ত্রিবেদি হিমুকে ডিঙিয়ে সহকারি ম্যানেজার থেকে ম্যানেজার হতে চেয়েছিলো। ঝামেলাটা সেখানেই।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সম্রাটের প্রতিনিধিরা তো এখন খোলামেলাই কথা শুরু করেছে। ঘটনা তাহলে কোনদিকে যাচ্ছে অনুমান করা যায়। আশা করি হিমু সবার বক্তব্য তার ব্লগের টাইমলাইনে যোগ করছে। ওটা একটা ভালো রেফারেন্স হবে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

খবরের শিরোনাম দেখেই তো মেজাজ বিগড়ে গেলো! এটা কি আমার মেজাজেরই দোষ নাকি পরের ধনে পোদ্দারী করা বিশ্ব-মাতব্বরদের আস্পর্ধার— সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। তবে, গরীবের বউ যে সবারই ভাবী, এই তত্ত্ব আরেকবার প্রমাণিত হলো।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমি থাকলে এখানে ত্যাড়ামি করতাম; মানে আইনে যা হয় তাই করতাম। যদিও সরকারের কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য আমার কাছে ভালো লাগেনি, তারচেয়েও বেশী বিরক্ত লাগছে আমেরিকার এই নগ্ন হস্তক্ষেপ।

সাফি এর ছবি

একমত। আরো অবাক ব্যপার হলো হিলারির বন্ধুত্বের কারণে এতখানি সামনে আসাটা। সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী না হলে ইউনুস সাবরে কেউ টয়লেট পেপারেও পুছতনা। আমি যদিও শুরুতে ডঃ ইউনুসের এইভাবে অপসারণকে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার চরিতার্থকরণের কারণে বিরক্ত ছিলাম কিন্তু এখন যা শুরু হয়েছে তা শুধুই বাড়াবাড়ি। হিলারির কাছে কান্তে কান্তে নালিশ করে ইউনুস নিজের দেশকেই ছোট করল

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

হিলারির কাছে কান্তে কান্তে নালিশ করে ইউনুস নিজের দেশকেই ছোট করল

আপনার কাছে কি কোনো তথ্যসূত্র আছে যেটি প্রমাণ করে যে ইউনূস হিলারীর কাছে কান্নাকাটি করছেন-- হিলারীরা স্বত:প্রণোদিত হয়ে এ রকম করছে না ? তবে হিলারীদের এমন হস্তক্ষেপে আমি যথেষ্ঠ বিরক্ত, যেমন বিরক্ত অসম্মানজনকভাবে ড: ইউনূসকে অপসারণের সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে !

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

নাশতারান এর ছবি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

খুবই বাজে লাগলো। নিজের দেশটাকে এতোটা অসহায় মনে হয় নি কখনো, ডঃ ইউনূসকে এতোটা অপছন্দও করি নি কোন দিন। এখন মনে হচ্ছে, ইউনূসকে আরো আটঘাঁট বেঁধে ধরাই উচিত ছিলো আগেই।

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

হিমু এর ছবি

পোস্টের রেফারেন্সে টাইমলাইন শুধু সংবাদ নিয়ে। আপাতত বিডিনিউজ আর প্রথম আলো থেকে নেয়া। আর ইউনূস সম্পর্কে [পক্ষে ও বিপক্ষে] আমাদের কাগুজে বুদ্ধিজীবীদের মত নিয়ে আরেকটা টাইমলাইন দেখতে পাবেন এখানে। এটাও কেবল বিডিনিউজ আর প্রথম আলো থেকে নেয়া। অন্য কোনো লিঙ্ক আমাকে সরবরাহ করা হলে যোগ করে দিতে পারবো।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

ওয়াহ, ওয়াহ্! কী দিয়ে করলেন কাজটা?

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।