টয়লেটের খোলা দরজা গলে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে শুভ্রদার চিৎকার। শুনতে পাই, "কাশেম! অ্যাই কাশেম! অ্যাই কাশেমের বাচ্চা! আইকার কৌটাটা কই রাক্সস?"
ক্রিকইনফোর পাতা খুলে পুরনো রেকর্ড ঘাঁটছিলাম, শুভ্রদার আচমকা চেঁচামেচিতে মনোযোগ নষ্ট হয়। তবে এই চিৎকারে কোনো গণ্ডগোলের আভাস নেই। শুভ্রদা বেশ মুডে আছেন আজ, দুপুর থেকেই। গুনগুন গান গাইছেন, মাই নেইম ইজ শিলা, শিলা কি জাওয়ানি, আই অ্যাম টু সেক্সি ফর ইউ ... হু হু হু হু হু হু। কিছুক্ষণ চুপচাপ নিজের ডেস্কে কাজ করে উঠে গেছেন টয়লেটে, আর গিয়েই শুরু করেছেন চিৎকার।
কাশেম অনেকদিন কাজ করছে এই হাউসে, সময়ের সাথে ক্রমশ নির্বাকতর হয়ে যাচ্ছে সে। শুভ্রদার চিৎকারের জবাবে কোনো সাড়া না দিয়ে কিছুক্ষণ পর ভূতের মতো নিঃসাড়ে প্রকাণ্ড সাইজের প্লাস্টিকের এক আঠার কৌটা নিয়ে সে টয়লেটের দিকে এগিয়ে গেলো।
শুভ্রদা এবার খ্যাঁক করে ওঠেন, "কী রে তর জবান বন্ধ ক্যা? ডাকি উত্তর দ্যাস না ক্যা?"
কাশেম কোনো উত্তর দেয় না এবারও।
শুভ্রদা বলেন, "আইকা দিয়া ঠিকমতো এইটা লাগা। টেপ দিয়া লাগাইলে থাকে না। মজবুত কইরা লাগা।"
কাশেম লাগাতে থাকে। শুভ্রদা টয়লেটের কাজ না সেরেই বেরিয়ে আসেন।
আমি সহাস্যে বলি, "খুব মুডে আছেন বস! ঘটনা কী?"
শুভ্রদা এক পাক নেচে বলেন, "আর বইলো না। কালকে দিনটা দারুণ গেছে! কেমন চোদা খাইলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ? কইছিলাম না? কইছিলাম না, যে এই ঢাকার মাটিতে তোদের আবার আসতে হবে? এসে চোদা খাইতে হবে? হে হে, এখন পর্যন্ত যা কিছু বলছি অক্ষরে অক্ষরে মিল্লা গেছে!"
আমি বলি, "খাওয়ান মিয়া! আমাগো দোয়াদরূদের জোরেই তো এমন অক্টোপাস পল হইছেন!"
শুভ্রদা নিজের ডেস্কের ওপর পা তুলে বসেন। "উফফ, আফ্রিদি কী খেললো গতকাইল! আর খালি গতকাইল ক্যা, পুরা টুর্নামেন্টেই ও টপ ফর্মে আছে! এরেই বলে ক্রিকেটার। শোনো তারেক, আমি লেইখা দিলাম, আফ্রিদি এমন এক রেকর্ডের দিকে আগাইতেছে যেইটা কোনো শালা চুতমারানি ক্রিকেটার ভাঙতে পারবো না! ব্যাটে শচীন আর বলে শহীদ ... তুখোড়!"
আমি ইয়াহু খুলি মেইল চেক করার জন্য। শুভ্রদা একটা সিগারেট ধরায়।
"আমাগো পোলাপাইনগুলি শালার গায়ে জোর নাই।" শুভ্রদা বলে যান। "এই যে আশরাফুল। কত্ত ট্যালেন্টেড একটা পোলা। কিন্তু শইলে জোর নাই। আসল সময়ে গিয়া মাজায় বল পায় না। কত দিন কইছি, আশরাফুল তুমি স্টেরয়েড খাও। শইলেও গোস্ত বাড়বো, তাগদও বাড়বো, সব শট খেইলা মজা পাবা। সে ভালো কথা শোনে না। এখন তার ফল কী হইলো? আছিলি জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন, হইলি এ দলের ক্যাপ্টেন। শিং ভাইঙ্গা বাছুরের দলের সর্দার হইলি। ক্যান রে বাবা? শুভ্রদার কথাটা শুনলে ক্ষেতিটা কী ছিলো?"
আমি মিটিমিটি হেসে বলি, "আমরা তো চেষ্টার কম করলাম না বস। এখন ও যদি কথা না শোনে, কী করবেন?"
শুভ্রদার কালোপানা মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। "আফ্রিদির গায়ে অনেক জোর! সেইবার সাউথ আফ্রিকা গিয়া একদম হাতেনাতে টের পাইছি।"
আমি মেইল চেক করতে করতে শুভ্রদার স্মৃতি উসকে দিই। "কী টের পাইছেন?"
শুভ্রদা লাজুক হেসে বলেন, "অনেক জোর পোলাটার গায়ে। ইন্টারভিউ করতে গেছিলাম, তখন টের পাইলাম।"
আড়চোখে শুভ্রদার দিকে তাকিয়ে দেখি, উদাস মুখে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছেন। বললাম, "তারপর?"
শুভ্রদা সন্দিহান চোখে আমার দিকে তাকিয়ে সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে গুঁজে বলেন, "আজকে আফ্রিদির উপর আরেকটা স্টোরি করতে হইবো। ওর কিছু গেঞ্জি গায়ে ফটো পাইছি, কমনস ফোল্ডারে দেখো, সেই মোতাবেক একটা আর্টিকেল খাড়া করাও। আমি আইতাছি।"
দীর্ঘশ্বাস ফেলি, কাজের পর কাজ জমে যায়। সামনে আবার যেতে হবে জিম্বাবুয়ে। শুভ্রদা যাবে দুবাই, হারুণ লরগাতের কী একটা সাক্ষাৎকার নিতে। একেই বলে কিসমত।
শুভ্রদা টয়লেটের দরজা বন্ধ করে দেন আলগোছে। বের হতে সময় লাগবে মনে হচ্ছে।
কাশেম করিডোরে টুলের ওপর বসে ঝিমাচ্ছে। আইকা দিয়ে টয়লেটের দরজার ভেতরের দিকে শহীদ আফ্রিদির খালি গায়ে পোস্টারটা ভালো করে সেঁটে দিয়ে এসেছে সে।
কাজ করতে ভালো লাগে না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। অস্থির কারওয়ানবাজারের ওপর রোদ ঢেলে দিয়ে যায় ঢাকার সূর্য। চাপা গলার গোঙানি ভেসে আসে দরজার ওপাশ থেকে।
মন্তব্য
ছোটগল্প সরস হয়েছে
হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা......সুস্বাদু
ঠিকাছে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
চাল্লু হইছে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
সবই বুঝলাম কিন্তু বাথরুম এ পোস্টারটা কি জন্যে ?
যদ্দুর মনে পড়ে, 'আফ্রিদি প্লিজ ম্যারি মি' এই প্ল্যাকার্ডটা দেখানো হয়েছিল ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ চলাকালীন সময়ে, ১৯৯৮ সালে। মাঠে আফ্রিদি, গ্যালারীতে সংগীতা বিজলানী। তখন পড়তাম ক্লাস ফাইভে। 'ম্যারি' শব্দটার অর্থ জানতাম না। যখন এই প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক যুবতীকে লাফাতে দেখলাম, এক বড়ভাই আসল অর্থ বলে দেবার আগে আমি ভেবেছিলাম এর অর্থ হল- 'আফ্রিদি আমাকে খুশি করে দাও'। আফ্রিদি ভদ্রমহিলাকে খুশি করেছিলেন কিনা পরে জানা যায়নি। তবে গতকালও নাকি 'আফ্রিদি উই লাভ ইউ' এই লেখা হাতে মেয়েদের লাফাতে দেখা গেছে, কতটুকু সত্য জানিনা।
ধৈবত
বস কি কইলেন!?
গলায় কি যেন আটকে গেলো! বা, মুখে।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
আপ্নে খ্রাপ লুক!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
ভাল লাগলো
উৎপাতকে নিয়ে আর কথা বলতেই রুচি হয়না ইদানিং!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
পুরাই সাদা আইকা।
হিম ভাই, আপনে ওস্তাদ মানুষ।
আমার পোস্টে এক ম্যারি মি আফ্রিদি পাইলাম, সে পাকিদের মধ্যেই শুধু গ্ল্যামার খুঁজে পায়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
কিছু উদ্ধৃতি খুবি ফালতু।
কুরুচিকর কিছু কথা খুবি ফালতু লাগল
কিছু কথা খুবি অশ্লীল এবং কুরুচিকর। সব মিলিয়ে ফালতু।
আরো একবার অশ্লীল, কুরুচিকর ও ফালতু বলে হালি পূরণ করে যাবার কাতর অনুরোধ ফরমাইলাম।
আপু, আলোচ্য প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে ধরা সেই লম্ফপটিয়সী, নৃত্যপটিয়সী কী আপনি ছিলেন?
ধৈবত
দিবাস্বপ্নদোষ !!!!!
গল্পটা ভালো লাগেনি। -রু
সারাহ কারিগান এর মন্তব্যের হিমু ভাইয়ের প্রতিমন্তব্য লাইকাইলাম
বেটা উটপোঁদ ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
আমার ফেইসবুকে এক বড় ভাই তার স্ট্যাটাসে লিখেছেনঃ
সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।
-সায়ন
একারনেই মনে হয় মেয়েরা বিদেশী ক্রিকেটরদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। এছাড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশের নারীরা সত্তরের দশকে আঞ্জু মাহেন্দ্র, আশির দশকে নীনা গুপ্তা এবং সাম্প্রতিক সানিয়া মির্জা, এরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমার মনে হয় আমাদের মেয়েরা দেশী ক্রিকেটারদের পছন্দ করতে চায়না পাছে আনস্মার্ট বনে যায়।
ছোটবেলা থেকে ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে পছন্দ করি। কিন্তু কোনও দেশের কোনও ললনা একটা বারের জন্যেও লিখলোনা-
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আরে ভাই কি কন? আমার ''হইলেও হইতারে গার্লফ্রেন্ড'' সাকিবের জন্য এত পাগল যে কি কমু। সবাই যখন সাকিবরে বাহবা দেয় তখন আমি এরে গাইল পারি।
-সায়ন
এক্কেবারে জায়গামতো!
নতুন মন্তব্য করুন