ড. ইউনূস আপাত অনাড়ম্বর জীবনযাপনের কারণে তাঁর ভক্তমহলে সমাদৃত। তাঁর গ্রামীণ চেকের পাঞ্জাবি তাঁর পেশাগত সততা ও নিষ্ঠার একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নোবেলজয়ের অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে তিনি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের কাছে সমাজসেবা, দেশপ্রেম ও দুর্নীতিমুক্ত নেতৃত্বের আইকন হিসেবে কিঞ্চিৎ প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে খোদ সরকার প্রধান ইউনূস সম্পর্কে রুষ্ট বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের চোখে ইউনূসের কার্যক্রম সম্পর্কে সরকারের মনোভাব অনুসন্ধানী না হয়ে প্রতিশোধপরায়ণ হিসেবে বিবেচিত হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অতীতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, এ ধরনের বক্তব্য শেখ হাসিনা আগেও দিয়েছেন।
৪ জুন, ২০০৭ তারিখে বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত আরেকটি খবর [২] থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "কীভাবে হাজার হাজার গরীব নারী পুরুষের রক্ত চুষে মুনাফা করতে হয় ড. ইউনূস তা ভালোই জানেন।"
ইউনূসের প্রতি শেখ হাসিনার এই বিরূপ মনোভাবের কারণ নিয়ে তিনটি তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে, তবে এই পোস্টের স্কোপের বাইরে বলে এ নিয়ে আলোচনা করছি না।
মার্চের শুরুতে ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। ইউনূস আদালতের শরণাপন্ন হন, কিন্তু আদালতের রায় তাঁর অনুকূলে যায়নি। ড. ইউনূস ও তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কিছু কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি সরকার একটি কমিটি গঠন করে, এবং কমিটির প্রতিবেদনে [৮] বেশ কিছু অভিযোগ উঠে আসে। পাশাপাশি ইউনূসের প্রতি সরকারের বিরূপ মনোভাবের কারণে ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সাংবাদিকদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, এবং তার ফলে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া কিছু তথ্য সংবাদ মাধ্যমে পরিবেশিত হয়।
সরকারী কমিটির সদস্যরা হলেন:
উত্থাপিত এই অভিযোগগুলোর একটি সামারি আমি এই পোস্টে প্রস্তুত করতে চাই।
অভিযোগগুলোর বিপরীতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের জনসংযোগ শাখা থেকে প্রতিবাদ এসেছে [৩]। কিন্তু এই প্রতিবাদে অভিযোগ খণ্ডনের পরিবর্তে অস্বীকারের সুরটিই বেশি প্রবল।
ড. ইউনূস বাংলাদেশের একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব, তাঁকে পীরজ্ঞানে ভক্তি করেন, এমন শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকারের চক্রে কোথাও যুক্তিসমর্থিত ফ্যাক্টনির্ভর আলোচনা হচ্ছে না। ইউনূসভক্তরা হয় অভিযোগগুলোকে আমলে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন, অথবা আবেগসর্বস্ব কথা বলছেন, যার মূল্য খুব একটা নেই। আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য, ইউনূসের ভক্তদের মাঝে যারা যুক্তিচর্চার অনুরাগী, তাঁদের কাজটি সহজ করে দেয়া।
সরকারি কমিটি সরকারের মনোভাবের ফান্ডামেন্টাল ফ্রিকোয়েন্সি এবং হায়ার হারমোনিকস ধরতে কখনোই তেমন অদক্ষ নন। সাংবাদিকদের কাছ থেকেও সবসময় বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপস্থাপিত হয় না। তাই এই অভিযোগগুলোর মেরিট যাচাই করার কাজটা বড় বড় মানুষদের পাশাপাশি আমাদেরও করতে হবে। মানীর মান ঈশ্বর সবসময় রক্ষা করতে পারেন না।
ইউনূসের আবেগসর্বস্ব যুক্তিপঙ্গু ভক্তদের সংখ্যা কম নয়, এবং ইন্টারনেটে তাদের বিচরণও প্রবল। তাদের প্রতি একটিই অনুরোধ, নিজে না পারলেও অন্যকে যুক্তিচর্চার সুযোগ করে দিন। যুক্তিকুশলদের কাছ থেকে এই অভিযোগগুলো খণ্ডিত হতে দেখার অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ।
পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দান
সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৪], "প্যাকেজেস কর্পোরেশন" ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৯০ হতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের সোশ্যাল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড (এসভিসিএফ) থেকে প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে ৯ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ওই ঋণের মধ্যে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা মওকুফ করে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। এখানে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই পণ্য/সেবা ক্রয় করা হয়েছে এবং অর্থায়ন ও ঋণ মওকুফ করা হয়েছে, যাতে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ বিদ্যমান।
এ ছাড়া প্যাকেজেস কর্পোরেশন উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই প্রিন্টিং ও কম্পিউটার সামগ্রী কিনে ব্যাংকের নিজস্ব ক্রয় নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।
সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৬], গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে ১৯৯৭ সালেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন ব্যাংকের তখনকার মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোজাম্মেল হক। সেই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন,
আপনার পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশনে বিনিয়োগকৃত সুদে আসলে প্রায় ২ কোটি টাকা। আপনার পরিবারের পক্ষে আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করা সম্ভব নাও হতে পারে। যদিও গ্রামীণ ব্যাংকের অধিকাংশ ছাপার কাজ অনেকের মধ্যে বাজার মূল্যের প্রায় ৪০% উর্ধ্ব ধরে কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়া আপনাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে দিয়ে ছাপানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ছাপার গুনগত মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের নীচে থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণ ব্যাংকে তা গ্রহণ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কোন সময়েই প্যাকেজেস কর্পোরেশনের সাথে আপনার সম্পর্ক এর আর্থিক লেনদেন নিরীক্ষণ করলে আপনারও গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য তা অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং লজ্জার ব্যাপার হবে।
ব্যক্তিগত কাজে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবহার
সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৪], ইউনূস সেন্টার নামীয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র ভাড়ায় ব্যাংকের ১১ হাজার বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ব্যক্তিগত আয়করদানে অনিয়ম
১২ এপ্রিল, ২০১১ তারিখে দৈনিক কালের কণ্ঠ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে জানাচ্ছে [৫], ইউনূসের ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে করমুক্ত আয় হিসেবে প্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ৫৪ কোটি ৫৩ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৫ টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউনূসের সাথে যোগাযোগ করে জেনেছেন, এ টাকা তিনি বিদেশে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করে আয় করেছেন। এ অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদি জমা (এফডিআর) হিসেবে রক্ষিত। কিন্তু এনবিআর 'বিদেশে উদ্ভূত আয় কর অব্যাহতি যোগ্য নয়' যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবেদনে বলছে, 'ড. ইউনূস যে এসআরওর উল্লেখ করে বিদেশে উদ্ভূত আয়ের ওপর কর অব্যাহতি নিয়েছেন তা আইনানুগ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। মূলত বাংলাদেশি ওয়েজ আর্নারদের আয়কে করমুক্ত করার জন্যই ওই এসআরও জারি করা হয়। তিনি কোনোক্রমেই একজন ওয়েজ আর্নার নন। তাঁর বিদেশে উদ্ভূত আয় বাংলাদেশে উদ্ভূত আয় হিসেবেই গণ্য হবে। যদি তা না হয়, তবে সব রপ্তানিকারকের আয় কর অব্যাহতিযোগ্য হতো। কারণ রপ্তানিকারকের আয়ও বিদেশে উদ্ভূত হয় এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে আসে।'
ড. ইউনূসের এ ছাড়া বেতন-ভাতা, নোবেল পুরস্কারের অর্থ ও বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া আরো কিছু অর্থ এই ৫৪ কোটি টাকার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
দায়িত্ব পালনে অনিয়ম
সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৬], গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে ১৯৯৭ সালেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন ব্যাংকের তখনকার মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোজাম্মেল হক। সেই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন,
ব্যাংকের এত সংকটের মধ্যেও আপনি মাসে গড়ে ১২দিন অর্থাৎ বছরে প্রায় ১৩০ দিন দেশেই থাকেন না। নভেম্বর' ৯৯ তে আপনার পক্ষে মাত্র ৩ দিন ব্যাংকে আসা সম্ভব হয়েছে। ক্ষমতা এবং দায়িত্ব হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আপনার অপারগতা গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যেহেতু আপনার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা থাকলেও কার্যত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই। তার কারণ আপনি ইতিমধ্যেই ব্যাংক ব্যবস্থাপনার Chain of command এর ভারসাম্য নষ্ট করেছেন এবং নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন। উপরন্তু আপনি বছরে ৪ মাস যেসব উদ্দেশ্যে বিদেশ সফর করেছেন তাতে আপনার ব্যক্তিগত লাভ ও প্রচার বাড়ছে, কিন্তু ব্যাংকের কোন লাভ হচ্ছে না বরং ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আপনার খ্যাতি ও প্রতিপত্তি এমন এক পর্যায়ে এসেছে যে আপনি কোন প্রকার জবাবদিহিতার অনেক উপরে অবস্থান করছেন। জুলাই' ৯৭ এর মেমোতে আমি যেসব সংকটের কথা উল্লেখ করেছিলাম সেসব সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে যার কারণে বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্মুখীন।
অননুমোদিত দায়িত্ব পালন
সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৭], গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ১৪(৪) ধারানুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রামীণ ব্যাংকের পূর্ণকালীন প্রধান নির্বাহী। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়মিত কর্মকর্তা হওয়ায় ড. ইউনূসসহ অন্যান্য গ্যারান্টি প্রদানকারীগণ পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ব্যতীত নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনে সংযুক্ত হয়েছেন ও গ্যারান্টি প্রদান করেছেন যা আইন বর্হিভূত হয়েছে। কোনরকম অনুমোদন ছাড়াই তারা এসব প্রতিষ্ঠান গঠনে সম্পৃক্ত হয়েছেন। পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনে সংযুক্ত হওয়া ও গ্যারান্টি দেওয়াও নিয়ম বর্হিভূত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদন ব্যতিরেকেই ২০০৩ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ পরিবারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান বা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে বিষয়টিকে পরবর্তীতে বৈধতা দিতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৩ তারিখে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় তাঁকে ২০টি প্রতিষ্ঠানের চেয়্যারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে "কার্যোত্তর অনুমতি" দেয়া হয়।
কর অব্যাহতির শর্ত লঙ্ঘন
১২ এপ্রিল, ২০১১ তারিখে দৈনিক কালের কণ্ঠ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে জানাচ্ছে [৫], গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৫ সাল থেকে যে কর অব্যাহতি পেয়েছে, তা অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছে এবং এতে সরকারের সম্ভাব্য রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৫১৪ কোটি সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। কর অব্যাহতির অর্থ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ ব্যাংক সদস্যদের পুনর্বাসনকাজে ব্যয় করার কথা থাকলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শর্ত ভঙ্গ করে সেই টাকা লাভজনক সহযোগী প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গ্রামীণ ব্যাংকের আয়কর অব্যাহতি সংক্রান্ত এসআরও নং-৩৬/আইন/২০০৩ এবং এসআরও নং-৯৩/আইন/২০০০ থেকে দেখা যায়, অব্যাহতিপ্রাপ্তির জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গীকার ছিল : আয়ের ওপর আরোপনীয় কর, সুপার ট্যাঙ্ ও ব্যবসার মুনাফা কর প্রদান থেকে গ্রামীণ ব্যাংককে অব্যাহতি দেওয়া হলে ব্যাংকটি পুনর্বাসন তহবিল গঠন করে সব লভ্যাংশসহ করের অর্থ তহবিলে জমা করবে। এ তহবিল প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের পুনর্বাসনকাজে ব্যবহার করবে। এনবিআর বলেছে, 'কিন্তু প্রতীয়মান হয় যে, গ্রামীণ ব্যাংক ওই অর্থ গ্রামীণ কল্যাণ ও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানান্তরের মাধ্যমে কর অব্যাহতিপ্রাপ্তির মূল শর্ত লঙ্ঘন করেছে।'
অস্বচ্ছ তহবিল স্থানান্তর
সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৬], গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে ১৯৯৭ সালেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন ব্যাংকের তখনকার মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোজাম্মেল হক। সেই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন,
গ্রামীণ ব্যাংক মে' ৯৭ তে গ্রামীণ কল্যাণের সাথে একটি চুক্তি সম্পাদিত করে যা ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৬ থেকে বলবৎ করা হয়। এই চুক্তির ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকগণ বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে অনুদান হিসাবে প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা পান, সমূদয় অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকের একটি ঘুর্ণায়মান তহবিল (রিভলবিং ফাণ্ড) থেকে সদস্য/সদস্যদের ঋণ কর্মসূচীকে ক্রমাগতভাবে ব্যবহার করার লক্ষ্যেই মূলতঃ দেয়া হয়েছিল। এবং এক অর্থে এটাকে ব্যাংক ইকুইটি হিসাবে দেখানো হলে ব্যাংকের আর্থিক ভিত অনেক মজবুত দেখাবে। গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকগন তাদের অনুদানে পাওয়া রিভলবিং ফাণ্ড প্রথম গ্রামীণ ব্যাংক সৃষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানকে উপহার/দান হিসাবে দেয়। যে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য/সদস্যাদের কোন প্রকার প্রতিনিধিত্ব নেই, এবং এই উপহার/দানের অর্থ আবার গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকেরা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ধার নেয়। যদিও এ ধার পরিশোধের কোন সময়সীমা বা সুদের হারের কোন উল্লেখ নেই। এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ায় অনেকেই এখন প্রশ্ন করবেন যে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রায় ২২ লক্ষ শেয়ার হোল্ডার আসলেই কি ব্যাংকের মালিক? নাকি জনগণ যেভাবে দেশের মালিক তারাও সেভাবে ব্যাংকের মালিক ? দাতা সংস্থা থেকে এভাবে কেন ধার নেয়া হলো এবং তা চুক্তির পরিপন্থি, এ বিষয়ৈ জানতে চাওয়া হলে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসাবে আপনি দাতা সংস্থাকে জানিয়েছেন যে গ্রামীণ ব্যাংক এত বড় অংকের টাকা দক্ষতার সাথে ম্যানেজ করতে পারবে না। গ্রামীণ ব্যাংকের সৃষ্ট অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণ এটা দক্ষতার সাথে ম্যানেজ করতে পারবে। যদিও ব্যাখ্যা করা হয়নি যে, গ্রামীণ কল্যাণের কি ধরণের বাড়তি দক্ষতা আছে যেটা গ্রামীণ ব্যাংকের নেই।
প্রতিষ্ঠানকে বিধিবহির্ভূত ঋণ প্রদান
সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৬], গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে ১৯৯৭ সালেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন ব্যাংকের তখনকার মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোজাম্মেল হক। সেই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন,
১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মত সরকার গ্রামীণ ব্যাংকে অডিট করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে বলা হয় যে, গ্রামীণ ব্যাংক কেবলমাত্র ভূমিহীন ও বিত্তহীনদের আহরিত তহবিল থেকে ক্ষুদ্র ঋন বিতরণ করতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই গ্রামীণ ব্যাংক কোন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করতে পারে না। কাজেই গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ঋন প্রদান গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৯নং ধারার লঙ্ঘন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট গ্রামীণ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে গোপন রাখা হয়েছে এবং খুব সম্ভবত গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেও এ অডিট রিপোর্ট সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি।
বিধিবহির্ভূত পন্থায় প্রতিষ্ঠান পত্তন
সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৭], গ্রামীণ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল পৃথক করে গ্রামীণ ফান্ড ও গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পরে এসব সংস্থার অর্থায়নে ও ঋণে আরো প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক এসব প্রতিষ্ঠান গঠন ও অর্থায়ন করতে পারে না। পুরো প্রক্রিয়াটি গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষমতা বহির্ভূত।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্রামীণ ফান্ডের অর্থায়ন ও ঋণে ১৫টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে। এগুলো হলো, গ্রামীণ ব্যবসা সেবা লিমিটেড , গ্রামীণ বাইটেক লিমিটেড, গ্রামীণ সাইবারনেট লি, গ্রামীণ নীটওয়্যার লি, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি, গ্রামীণ সলিউশন লি, গ্রামীণ আইটি পার্ক লি, টিউলিপ ডেইরী এন্ড ফুড প্রোডাক্টস লি, গ্লোব কিডস ডিজিটাল লি, গ্রামীণ ইনফরমেশন হাইওয়ে লি, গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি, রফিক অটোভ্যান ম্যানুঃ ইন্ডাঃ লি, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ সামগ্রী। গ্রামীণ কল্যাণ কর্তৃক অর্থায়নকৃত (ইকুইটি/ঋণের মাধ্যমে) ১৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো- গ্রামীণ নীটওয়্যার লি, গ্রামীণ ব্যবসা বিকাশ, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি, গ্রামীণ আইটি পার্ক লি, গ্রামীণ সলিউশন লি, গ্রামীণ ডানন ফুডস লি, গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস লি, গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি, গ্রামীণ টেলিকম লি, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লি, গ্রামীণ ফেব্রিক্স এন্ড ফ্যাশনস, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন। অন্যদিকে গ্রামীণ কল্যাণের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম অর্থায়ন করেছে আরো ১২টি প্রতিষ্ঠানকে।
[১] অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী
[২] ড. ইউনূস একজন 'ভাল ব্যবসায়ী': হাসিনা
[৩] 'স্পষ্ট ধারণা ছাড়াই প্রতিবেদন দিয়েছে কমিটি'
[৪] পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণও নীতিমালা ভেঙে
[৫] এনবিআরের প্রতিবেদন - ব্যাংকে জমা ইউনূসের নিজস্ব ৫৪ কোটি টাকাও করমুক্ত!
[৬] ইউনূসকে সতর্ক করেছিলেন মোজাম্মেল
মন্তব্য
যদ্যপি ড. ইউনূস শুঁড়িবাড়ি যায়
তদ্যপি ড. ইউনূস নিত্যানন্দ রায়।
আরে নাহ। উনি নোবিল পেয়ে সুশীল সমাজ ও এনআরবিদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এইসব ছোটখাটো ব্যাপার ধরতে নেই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বিষয়টা চিন্তা করেন।
ড. ইউনূস দেশকে কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর পরনে গ্রামীণ চেকের লুঙ্গি, গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি। দেশের ওজনে তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। এমন সময় হিমু গিয়ে তাঁর লুঙ্গি উল্টে দেখতে চেষ্টা করছে তলায় কী আছে। কত বড় বদ পোলা!!!!!!
"পাবিনারে তুই, পাবিনা নুবেলরে। ব্যথা দিয়ে তার য়ূনুইচ্চার মনে!"
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এখনতো বাংলেদেশের সবুজ পাসপোর্ট দেখলেই ইমিগ্রেশন অফিসাররা 'তুমি ইউনুসের দেশের লোক!' এই বলে বুকে জড়িয়ে ধরে সরাসরি ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে বসায়!!
love the life you live. live the life you love.
গ্যালারীতে বসলাম। উপরের মন্তব্যগুলোর প্রসঙ্গে আমার মনে হয় এই পোস্টের মনোযোগকে ভিন্নখাতে পরিচালিত করতে পারে। অন্তত এই একটা লেখায় খোঁচামারা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে সহসচলদের অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমি সাফির সাথে একমত। সারকাজমের বদলে যুক্তিনির্ভর অংশগ্রহণ প্রয়োজন এই পোস্টে।
সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের করা আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর
"অন্য কোনো চেয়ারম্যানকে এ প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেবো না আমরা। দুই সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যানকে প্রত্যাহার করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চেয়ারম্যান বানাতে হবে "
(গ্রামীণ ব্যাংক কর্মচারী সমিতির সমিতির সাবেক সভাপতি ও সমিতির বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা ছগীরুর রশিদ চৌধুরী)
প্যাকেজেস কর্পোরেশন ইস্যুটা নিয়ে আমি আমার পরিচিত মহলে ইউনুস ভক্তদের সাথে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম তারা যে যুক্তিগুলি দেখায়
১) বাংলাদেশে কেউ সাধু না সবাই কম বেশী চুরি চামারি করে সেই তুলনায় ( হাসিনা খালেদা অপেক্ষা) ইউনুস অনেক সৎ
২) বিদেশে যেখানে নিউর্ক টাইমস এবং ইকনোমিষ্ট এর মতো পত্রিকা এবং দেশে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার তার স্বপক্ষে প্রতিবেদন দিচ্ছে তখন আমি কোন হনু এই সব প্রশ্ন করার ! দৈনিক কালের কন্ঠের ইউনুসের সমালোচনা করা প্রতিবেদনগুলার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করলে বলে এটার মালিক বসুন্ধরার শাহ আলম এইটা হলদে সংবাদিকতা করে তখন বিডি ২৪ নিউজ এর কথা বললে এইটার মধ্যে নাকি সালমান এফ রহমানের শেয়ার আছে অবশেষে নিউজ এজ হতে কোন খবর কোট করতে চাইলে বলে এইটা সম্পাদক নরুল কবির চিনা বামপন্থায় বিশ্বাসি ! কাজেই আলোচনা ওখানেই সমাপ্ত !
নোরাডের ফান্ড নিয়ে কচলা-কচলির সময় একপর্যায়ে নোরাডের সি,ই,ও কে জনাব ইউনুস নিম্নোক্ত ভাষায় একটি চিঠি লেখেন--
এই "who are not" কারা যারা গ্রামীণের জন্য "real problem" তৈরী জরবার ক্ষমতা রাখত সেটা কি জনাব ইউনুস পরিষ্কার করে বলতে পারবেন?
বাংলাদেশের সরকারে হাসিনা-খালেদা যা বলে তার ব্যাতিক্রম কখনও হয়েছে বলে এখনও দেখিনি। ১৯৯৮ সালে গ্রামীণের প্রতি "অসহযোগিতামূলক" অবস্থা পোষণ কারী যেই হোক না কেন, অন্তত "real problem" তৈরী করার মানুষগুলো প্রধানমন্ত্রীর দুয়ারে গিয়ে তা মুখ থুবড়ে পড়ত, যদি না স্বয়ং হাসিনাই ১৯৯৮ সালের সেসব "not supportive towards" গ্রামীণ গ্রুপের গডমাদার হন!
যাহোক, আসলেই কি বাংলাদেশের সরকার ১৯৯৮ সালে গ্রামীণের প্রতি অসহযোগীতামূলক মনোভাব পোষণ করত? অনেকেরই হয়তো জানা আছে যে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামীণের ট্যাক্স-ফ্রি পাবার অনুরোধ প্রত্যাখ্যিত হয়েছে। হতেই পারে, হয়তো চলমান কুস্তা-কুস্তির ফল সেটা। কিন্তু গ্রামীণ তার জন্মের পর থেকেই ট্যাক্স এক্সেম্পশন নিয়ে আসছে এবং এন,আর,বি এর ভাষ্য মতে--
সহজ বাংলায়, সরকারের সহযোগীতামূলক মনোভাব ছিল বলেই গ্রামীণের ট্যাক্স-ফ্রি জীবন দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং তা ১৯৯৮ তেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিজের পিঠ বাঁচাতে বাংলাদেশের সরকারের কাঁধে বন্দুক রেখে ইউনুস সাহেবের এই নোরাড-শিকার কতটুকু ন্যায় সঙ্গত? নোরাডের সি,ই,ও কে ১৯৯৮ লেখা এই চিঠির ভাষার সাথে তদানীন্তন বাস্তবতার একটু বেশীই তফাত ছিল বলেই মনে হচ্ছে। নিজের ভুল থেকে বাঁচবার আশায় ১৯৯৮ সালের সরকারকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কিঞ্চিত প্রচেষ্টাও এখানে পরিলক্ষিত হয়।
নোবেল যারা পায় তারা বোধয় নো-ভুল হওয়া মানুষ হয়ে যায়!
আমি ইউনূসের মুরিদ পক্ষের লোক না। ইউনূসের অপসারণকে আমার কাছে যৌক্তিকই মনে হয়, যদিও গ্রামীন ব্যাংকের কার্যক্রম অব্যাহত রেখে ইউনূসের অপসারণ আসলে আমাদের রাজনীতিবিদদের ইগো সমস্যারই আপাত সমাধান, বড় আকারের কোনো শুভ ফল আসবে কি না আমি সন্দিহান।
আলোচনার খাতিরে এই পোস্টের অভিযোগের কিছু পাল্টা যুক্তি খাড়া করে দেখা যাক। যদিও এগুলো যে খুব শক্তযুক্তি এমন নয়।
১. প্যাকেজস প্রসঙ্গ: ব্যাংক নিজেই ম্যানেজমেন্ট দেখছে, এমন প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করার সুবিধা হচ্ছে অনটাইম ডেলিভারি এবং মুদ্রন মান নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। মুদ্রনমান নিয়ে যদি প্রশ্ন উঠে তাহলে সেটির দায় ব্যাংকের উপরই বর্তায়, কারণ ব্যাংকই এর ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করে । বাজারমূল্যের চাইতে ৪০% বেশি দামে কেনার ব্যাপারটি আসলে প্রশ্নসাপেক্ষ, এর পক্ষে কোনো প্রমান নেই- এটি একটি ধারণা মাত্র। বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে এরকম করা যেতে পারে, যেহেতু গ্রামীন ব্যাংকের কোটি কোটি টাকার মুদ্রনকাজ হয়ে থাকে সেগুলোর সুষ্ঠ বিপননের জন্য সময়মতো ডেলিভারি গুরুত্বপূর্ণ, এবং ক্ষেত্র বিশেষে এজন্য যদি কিছু বেশি দাম দিয়ে কেনাও হয় সেটি যুক্তিযুক্ত। ম্যানেজমেন্ট পরিচালনাসূত্রে এটি গ্রামীন ব্যাংকের ছায়া প্রতিষ্ঠান, এক্ষেত্রে বাইরে থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে কেনার সুযোগ কম। সরকার নিজেও এরকম করে থাকে, সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটানোর জন্য যেসব সেনাকল্যান প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো থেকেই কেনা হয়, টেন্ডারের মাধ্যমে নয়। বিদ্যুৎ খাতেও এখন একই অবস্থা।
গ্রামীন ব্যাংক এখানে বড় আকারের ঋণ দিয়েছে, এই ঋণ দেয়ার ঘটনাটি গ্রামীন পরিচালনা পর্ষদের সমষ্ঠিগত দায়, ইউনূসের একক দায় নয়। অনেক সময় এসব খেলাপি ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকের মধ্যে তো বটেই, এমনকি এক দেশের ঋণ অন্যদেশ মওকুফ করে থাকে। এটি ব্যাংকিংয়ে প্রচলিত আছে, এজন্য আলাদা করে দোষ ধরা যায় না।
(চলবে)
রিপোর্টগুলি পড়া হয়নি। হিমু কোম্পাইল করায় পড়া হল।
আপনার 'অভিযোগের পাল্টা যুক্তি' যুক্তিযুক্ত হত যদি প্যাকেজেস কর্পোরেশন গ্রামীণের সাবসিডিয়্যারি/এফিলিয়েট প্রতিষ্ঠান হত। এখানে একটা ছোট্ট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে। প্যাকেজেস কর্পোরেশন" কিন্তু গ্রামীণের কোন সাব/এফিলিয়েট নয় (হিমুর ব্লগ অনুযায়ী), ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। যেহেতু তিনি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন সেজন্য এখানে কনফ্লিক্ট অভ ইন্টারেস্টের সৃষ্টি হচ্ছে, যেটা পৃথিবীব্যাপি যেকোন প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রহনযোগ্য নয়।
আরিফ ভাই, আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন, ৪০% অতিরিক্ত মূল্যের "ধারণা"টি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপকের। কাজেই এই ধারণাটি একেবারে অমূলক নয়, এমনটি আমরা ধরে নিতে পারি।
বিশেষ ক্ষেত্রে এমন করা যায় নিশ্চয়ই, কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রটা যদি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হয়, তখনই কথা ওঠে। যেমন সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটানোর জন্য যদি সেনাপ্রধানের ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করা হয়, সেনাপ্রধানের প্রতি স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠবে। আর বিদ্যুৎ খাতে জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনা বিনা টেন্ডারে সরকারি ক্রয়ের জন্যে সম্ভবত আলাদা আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। প্যাকেজেস কর্পোরেশনের ক্ষেত্রেও কি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কার্যবিধিতে পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে এমন কিছু প্রণয়ন করা হয়েছে?
আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক, তবে দায়টি পরিচালনা পর্ষদের সকলের হলেও, সুবিধাটি একান্তই ইউনূসের পরিবারের। আর প্রতিষ্ঠানকে ঋণ মওকুফের আগে ঋণ প্রদানের এখতিয়ারের প্রসঙ্গ চলে আসে, যেটি অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তো গরীবের ব্যাঙ্ক, গরীবের মাঝে ঋণ বিতরণ করার জন্যে তার তহবিল, সেখান থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণই বা দেয়া হবে কেন, মওকুফই বা করা হবে কেন? অধ্যাদেশের ১৯ নং ধারা লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক, আপনি কি এ ব্যাপারে আমাদের একটু আলোকিত করতে পারেন?
এটারে অন্যভাবে দেখা যায়। ইউনূস তাঁর পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটিকেও গ্রামীন ব্যাংকের জন্য নিয়োজিত করেছেন। চুক্তির শর্তানুযায়ী, প্যাকেজেস কোম্পানির মুনাফার ৫০% পাবে গ্রামীন ব্যাংকের গ্রামীন ট্রাস্ট, কিন্তু লোকসানের জন্য তাঁকে নগদ কোনো টাকা দিতে হবে না। ঋণের দায়ভার একান্তই মালিকদের, কিন্তু ম্যানেজমেন্ট পরিচালনার কারণে গ্রামীন ব্যাংক মুনাফার ৫০% পাচ্ছে।
এদিক থেকে দেখলে সাদাচোখে এটাকে ভালো চুক্তি মনে হয় ;)।
-
অধ্যাদেশ লঙ্ঘনের ব্যাপারে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। যতটুকু বুঝতে পারছি গ্রামীন ব্যাংকের বাকি সবগুলো ভেঞ্চারই আসলে অবৈধ, মূল অধ্যাদেশ অনুযায়ী গরীবদের ঋণ দেয়া ছাড়া তাঁদের কোনো ঋণ দেয়ার সুযোগ নেই। সেটি প্যাকেজেস হোক কিংবা গ্রামীন ফোন হোক।
সহমত নই। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পরিচালনা পরিষদের উপর জনাব ইউনুসের প্রভাব এখানে বিবেচ্য। তাছাড়া ঋণগ্রহীতা যদি হন ইউনুস পরিবার, তবে এধরণের ঋণমওকুফ আরও বেশী প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
যুক্তির খাতিরে সেনাবাহিনীকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া ঠিক হচ্ছেনা। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সাথে ব্র্যাকের তুলনা হতে পারে, বা বাংলাদেশের অন্যকোন ব্যাঙ্ক আসতে পারে। এমনিতেই সেনাবাহিনীর ডিমের ভয়ে সব সরকারই তটস্থ থাকে, তাই সেনাবাহিনীর কোন আবদারে কোন সরকার না বলতে পারে কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ। যার ফলে, সেনাবাহিনীর উদাহরণের সাথে অন্যকিছুরই তেমন একটা সামঞ্জস্যতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
কোটি কোটি টাকার মূদ্রণ কাজ বাইরের প্যাকেজিং কোম্পানি দিয়ে করিয়ে যদি অন্যান্য ব্যাঙ্ক-বীমা-অফিস-আদালত যথাযথ কাজ চালিয়ে নিতে পারে, তবে গ্রামীণের বাধা কোথায়? প্রতিযোগীতামূলক বাজারে সময়,দাম,কোয়ালিটি, এই মাল্টিওবজেক্টকে অপ্টিমাইজড করেই সরবরাহ দিতে প্যাকেজিং কোম্পানীগুলো প্রস্তুত থাকে। তাই সময় মত সরবরাহ করতে পারবেনা বলে এই অযুহাতে ইউনুসপরিবারের প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান এরকম কোটি কোটি টাকার কাজ পাবেন এটা যৌক্তিক মনে হলোনা।
আমার তো মনে হয়, গরীবদের নিয়েই যেহেতু কাজ-কারবার, গ্রামীণের লক্ষ্য হতে পারত কেমন করে আরও বেশী অর্থ সাশ্রয় করে কাজ উদ্ধার হয় (যেমনটা জনাব ইউনুস লিখেছিলেন নোরাডের কাছে, ট্যাক্স জনিত অর্থ খরচ থেকে বাঁচতে গ্রামীণ কল্যাণে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে) এবং প্রতিযোগীতামূলক বাজারে সুযোগ উন্মুক্ত না করে তা অর্জন সম্ভব নয়।
না, সুবিধাটা একান্তুই ইউনূস পরিবারের নয়। অবকাঠামো ব্যবহারের জন্য তাঁরা মুনাফার ৫০% পাচ্ছে, আর ম্যানেজমেন্ট পরিচালনার জন্য গ্রামীন ট্রাস্ট পাচ্ছে ৫০%। সময়মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা গ্রামীনের ম্যানেজমেন্টের ব্যর্থতা, দুলামিয়া এন্ড সন্স শুধু অবকাঠামো দিচ্ছে, পরিচালনা করছে না।
-
আপনার বাকি সব যুক্তির সঙ্গে একমত। টেন্ডার দিয়ে কাজ করিয়ে ব্যয় সংকোচনটাই হচ্ছে সঠিক পদ্ধতি।
৩ নম্বর সোর্সে গ্রামীণের "ইমেইল" এর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু পুরো ইমেইলটি দেখার সুযোগ ঘটেনি। পুরো ইমেইল পাওয়া গেলে গ্রামীণের অবস্থানটা আরো পরিষ্কার বোঝা যেত। এটা কোথাও পাওয়া যাবে কিনা, ভাবছি।
২. আয়কর প্রসঙ্গ :
এটা এনবিআর এর একটি অতি ফাজলামো যুক্তি। রফতানিকারকরা কিন্তু দেশে উৎপাদন করেন, দেশের অবকাঠামো ব্যবহার করেন এবং এজন্য কর দেন। প্রবাসীরা একই শ্রম বিদেশে দেন, যে শ্রম বাইরে দেওয়া হয়, সেই শ্রমের কোনো আয়কর বাংলাদেশে দিতে হয় না। ইউনূস বাইরে বক্তৃতা দিয়ে যে আয় করেন, বাইরে বই প্রকাশ করে যে আয় করেন, এই আয়গুলো রেমিটেন্স আকারে দেশে আসে। উনি এসব আনতে বাধ্য নন, যেরকম প্রবাসীরা নিজেদের টাকা দেশে আনতে বাধ্য নন। সুতরাং তারা দয়াকরে টাকা পাঠান, এই ডলারের প্রয়োজন এই দেশে। এ কারণেই তাদের আয় কর মুক্ত।
কিন্তু রফতানিকারকরা দেশে টাকা ফেরত আনতে বাধ্য, কারণ দেশীয় ব্যাংক তাঁদের পূঁজি বিনিয়োগ করে যা ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে পরিশোধ হয়।
সুতরাং ইউনূসের আয়কে অবশ্যই রেমিটেন্স হিসেবে দেখতে হবে, দেশের আইন তেমনই বলে।
৩. দায়িত্ব পালনে অনিয়ম প্রসঙ্গঃ
ইউনূসের বিদেশ সফরে ব্যাংকের কোনো লাভ হয় না, শুধুই ইউনূসের লাভ হয়, এমনটা নয়। ইউনূস বাইরে গিয়ে ক্ষুদ্রঋণ বিক্রী করেন, সেটাকে মহৎ হিসেবে প্রমান করেন-এর ফল গ্রামীন ব্যাংক পায়। মিরপুরে বসে থাকলে অনুদানের এই অংকগুলো হয়তো এমন হতো না। প্রচারেই প্রসার, আর এই প্রচারের দায়িত্বটা প্রধান নির্বাহীর উপরই বর্তায়।
ট্যাক্সের ব্যাপার বুঝি কম। কিন্তু ডঃ ইউনুসকে কি আমরা প্রবাসী বা এনবিআর হিসাবে ট্রিট করব ? উনি তো যতদূর জানি বাংলাদেশের নাগরিক এবং বাংলাদেশেই বাস করেন। ধরেন সাকিব আল আহসান ইন্ডিয়াতে যেয়ে আইপিএল খেলল এবং ম্যাচ ফি পেল। তাকে কি সেই টাকার উপর কর দিতে হবে ?
বাংলাদেশে দিতে হবেনা, তবে ভারতে দিতে হবে। আমি দেশের বাইরে চাকরী করা অবস্থায় বেতন যা পেয়েছি তার জন্য দেশে ট্যাক্স দেওয়া লাগেনি। তবে, বাংলাদেশে বসবাস করার ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এটার কারণে বিদেশের আয় দেশে ট্যাক্সেবল হবে বলে মনে হয়না। আমার চেনা লেখক আছেন, যারা বিদেশে বই পাব্লিশ করেছেন। যতদূর মনে পড়ে বইয়ের রয়্যাল্টির উপরে তারা ট্যাক্স দেন না। আমি নিজেও দেশে থাকা অবস্থায় গুগুল এডসেন্সে কিছু অর্থ কামিয়েছিলাম, সেটাও ট্যাক্স ফ্রি ছিলো
ট্যাক্সের ব্যাপারে আমিও বিস্তারিত জানি না। তবে ব্যাপারটি মনে হয় নির্ভর করে যে আপনি যে দেশে আয় করছেন সেই দেশে ট্যাক্স দিচ্ছেন কিনা তার উপর। আমি যতটুকু বুঝি, যেমন দেশের বাহিরে আমি যে টাকা পাচ্ছি সেগুলোর ট্যাক্স আমি সেই সরকারকে দিচ্ছি। এখন এই টাকা যদি আমি দেশে আনি, সে ক্ষেত্রে মনে হয় আমাকে আর ট্যাক্স দিতে হবে না (ভালো কথা, আমি কিন্তু নিশ্চিত নই, এই বিষয়টি কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে? আসলেই কি আমাকে আবার ট্যাক্স দিতে হবে কি যদি আমি টাকা দেশে আনি, জানা দরকার), একই নিয়ম যতটুকু জানি কানাডাতেও। অর্থাৎ আমি যদি বাংলাদেশে কোন আয় করি এবং সেটার ট্যাক্স বাংলাদেশে দেই, সে ক্ষেত্রে কানাডা সরকারকে জানাতে হয়, কিন্তু দ্বিতীয়বার ট্যাক্স দিতে হয় না।
এখন ডঃ ইউনূস যে আয় করেছেন সেই আয়ের ট্যাক্স কি উনি বিদেশে দিয়েছেন কিনা সেটা বড় প্রশ্ন। অনেক সময়, যারা অর্থ দেয়, তারা সরকারের ট্যাক্স কেটে রেখে বাকিটা দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সেই আয়ের উপর ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে আরো একটি প্রশ্ন আসলো। সেনাবাহিনীর লোকেরা শান্তি মিশনে যে আয় করেন সে টাকার উপর কি ট্যাক্স প্রদান করেন? বা নীচে যেমন অমিত ভাই প্রশ্ন করেছেন সাকিবেরা দেশের বাহিরে যে আয় করেন সেটার ট্যাক্স কি দেন? ডঃ ইউনূসের বিষয়টি এই দু'দলের সাথে বেশি মিল, যত না মিল রপ্তানীকারকদের সাথে। এই প্রসঙ্গে আসলেই আইন কি?
এটা দুই দেশের ভেতরে দ্বৈতকর চুক্তির ওপর নির্ভর করে। দেশ দুটির মধ্যে দ্বৈত কর চুক্তি থাকলে আপনাকে বিদেশে নন-রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। তারপর আপনি যে দেশে বসে আয় করছেন, সেই দেশে উৎসে কর্তিত করের তথ্য আপনার স্বদেশের কর কর্তৃপক্ষকে দেখালে তারা ঐ আয়ের ওপর আর কর ধার্য করবে না। ইউনূস যদি তাঁর বক্তৃতা বা বইয়ের জন্য বিদেশে বসে আয় করে থাকেন, আর তার জন্যে সংশ্লিষ্ট দেশকে কর দিয়ে থাকেন, তাহলে সে তথ্য তিনি রাজস্ব বোর্ডকে জানালেই পারেন।
সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিদেশী মিশনে অর্জিত আয়ের ওপর কর এবং ক্রিকেটারদের বিদেশে খেলায় উপার্জনের ওপর কর সম্পর্কে জানার অপেক্ষার রইলাম। আরিফ ভাই যেহেতু রাজস্ব বোর্ডের "ফাজলামো" সম্পর্কে অবগত, উনি মনে হয় বলতে পারবেন।
স্বাধীন ভাই, এই নিয়ম কানাডার ক্ষেত্রেও। আপনি বাংলাদেশে আয় করলেও যদি কানাডিয়ান রেসিডেন্ট বা deemed রেসিডেন্ট হন, তাহলে কানাডায়ও ট্যাক্স দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের আয় যেহেতু ডলার অংকে কম হবে, সেহেতু আপনি ব্যক্তিগত এক্সেম্পট এর আওতায় পড়বেন এবং বাড়তি ট্যাক্স দিতে হবে না।
হুম, কানাডার ব্যাপারটি পরিষ্কার হওয়ায় ভালো হলো। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কর মওকুফ ঠিক আছে। আমি দেশে আসার আগে সোনালী ব্যাংকে একটি বৈদেশিক একাউন্ট খুলেছিলাম এবং যতটুকু মনে পড়ে আমাকেও কর মওকুফের কথা বলেছিল ব্যাংক কর্মকর্তা। যা হোক নিশ্চিত হতে হবে আরো।
আমার যতটুকু ধারণা, তাতে মনে হয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা শান্তি মিশনের আয়ের উপর কর দেন না। অন্তত ইউএন এর ওয়েবসাইটে বলছে যে বেশির ভাগ দেশই কর মওকুফ করে ।
বাংলাদেশ কি মওকুফ করে কিনা নিশ্চিত নই। ক্রিকেটারদের কথা বলতে পারি না, হয়তো বা তারাও মাফ পায়। তবে তথ্যটি কেউ নিশ্চিত করলেই ভালো। এই ক্ষেত্রে ডঃ ইউনূসের জন্যে কিংবা ব্যক্তিগত মানুষের জন্যে আইনের ভিন্ন প্রয়োগের কোন কারণ দেখি না।
এই তথ্য জানা ছিল না। ধন্যবাদ।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
প্রবাসী বাংলাদেশীদের তুলনায় সঠিক যুক্তি হিসেবে শান্তিমিশনের সেনাসদস্য এবং আইপিএল এর প্রাপ্ত অর্থটাই ভালো পয়েন্ট। আমি চেষ্টা করব খোঁজ নিয়ে এখানে তথ্য যোগ করতে।
ইউনূস সেন্টার প্রসঙ্গ:
ইউনূস সেন্টার নাম হলেই সেটা ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পদ হয় না। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ইউনূস কোনো বানিজ্যিক লাভ করেন না। এটি হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক প্রচার প্রপাগান্ডা জাতীয় প্রতিষ্ঠান।
নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের কাজে এই প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহৃত হয়, যেখানে গ্রামীন ব্যাংক নিজেও নোবেল পুরস্কারের অর্ধেকটা বিজয়ী। এটির নাম 'ইউনূস সেন্টার' হয়েছে, যেরকম শাহজালালের নামে বিমানবন্দরের নাম, এরকমই।
আরিফ ভাই, ইউনূস সেন্টার কি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কোনো অঙ্গপ্রতিষ্ঠান? যদি হয়ে থাকে, তাহলে সে প্রসঙ্গে কিছু বলা যাবে। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কার্যালয়, যার মালিক দরিদ্র ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতাগণ, কেন অন্য একটি লাভজনক বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে স্বল্পমূল্যে ফ্লোর স্পেস বরাদ্দ ও ভাড়া দিয়ে এর মালিকদের আর্থিক ক্ষতিসাধন করবে? যদি বলেন ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক প্রচারের জন্যে, তাহলে কি আজ আপনিও গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ক্ষুদ্রঋণের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্যে "বাণিজ্যিক লাভ"বিহীন জেবতিক সেন্টার খোলার জন্যে ফ্লোর স্পেস বরাদ্দ পাবেন?
দ্বিতীয়ত, ইউনূস বাণিজ্যিক লাভ যদি না-ও করে থাকেন [উনি এখান থেকে বাণিজ্যিক লাভ করেন না, এটা আপনার ধারণামাত্র, কোনো প্রমাণ নেই], বাণিজ্যিক লসও কিন্তু করছেন না। এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য অন্য কোথাও ফ্লোর স্পেস ভাড়া নিতে গেলে, সেই ভাড়ার খরচ কে বহন করতো? গ্রামীণ ব্যাঙ্কের দরিদ্র ঋণগ্রহীতারাই কি? নাকি ইউনূস নিজে? নাকি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান?
এবং বাণিজ্যিক লাভের সাথে ইউনূসের ব্র্যান্ড ইকুইটির প্রশ্নটাও বাদ দেয়া যাইতেছে না। ইউনূসের পলিটিকাল অভিলাষ এই কারণেই এই পুরা অনিয়মের পরম্পরার সাথে বিযুক্ত করা যাবে না।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ভালো যুক্তি। কুপোকাত হইছি।
রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন বলছে:
" গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নোবেল লরিয়ে ট্রাষ্ট এর সেটলার/গ্রান্টার। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে ট্রাষ্ট প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। এই ট্রাষ্ট ইউনুস সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং এর কার্যক্রমে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান এবং গ্রামীনব্যাংকের ফ্লোর স্পেস নিয়ে তা ইউনুস সেন্টারকে ব্যাবহারের সুযোগ দেয়া ইত্যাদি উদ্দেশ্যে ট্রাস্টটি গঠিত হয়। এক চুক্তির মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে ১০০০ টাকায় ব্যাঙ্কের ১৬ তলায় ১১০০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ নিয়ে আরেকটি চুক্তি মাধ্যমে তা একই ভাড়ায় ইউনুস সেন্টারকে বরাদ্দ দেয়।"
অর্থাত ইউনুস সেন্টার নোবেল লরিয়ে ট্রাষ্ট দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং নোবেল লরিয়ে ফান্ড এর টাকা গ্রামীনব্যাংক/ইউনুসের যৌথ টাকা, এবং তদুপরি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ট্রাস্টের সেই টাকার তবিলদার। এর পরিচালনায় আছেন গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ও গ্রামীণের অন্যান্য কর্মকর্তা। একটি প্রতিষ্ঠান আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে মূলধন, সহযোগিতাচুক্তি, কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির যেকোনো একটি দিয়েই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গ্রামীন ব্যাঙ্ক ইউনুস সেন্টারের মূলধঞ দাতা, এর সাথে তার সহযোগীতাচুক্তি আছে এবং কার্যত ইউনুস সেন্টারের নিয়ান্ত্রঞ গ্রামীন ব্যাঙ্কের হাতে।
তাহলে ইউনুস সেন্টারকে গ্রামীনের অংগপ্রতিষ্ঠান বলতে বাধা কোথায়?
তার মানে, ইউনূস ছাড়া অন্য কেউ যদি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হন, তাহলে তিনি পদাধিকার বলে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে এই সেন্টারটি সরিয়ে দিতে পারবেন, তাই না?
আর এই "অঙ্গ প্রতিষ্ঠান"টি সম্ভবত ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দরিদ্রের দারিদ্র্য দূরীকরণ কার্যক্রমের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং প্রায় বিনামূল্যে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মূল্যবান ফ্লোরস্পেস বরাদ্দ নিয়ে এটি দরিদ্রের পকেট থেকে পয়সা বের করেই চলছে। ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা কেন ইউনূসের নিজস্ব দামামা বাজানোর জন্যে পয়সা দেবে? ওনার তো ব্যাঙ্কে আয়করমুক্ত প্রায় ৫৪ কোটি টাকা আছে দেখতে পাচ্ছি। উনি মাসে মাসে সামান্য কয়েক হাজার টাকা সেখান থেকে ব্যয় করলেই তো পারতেন, গরীবের পকেট থেকে তো সেই খরচ তুলতে হতো না।
" ইউনূস ছাড়া অন্য কেউ যদি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হন তাহলে সেটা সরিয়ে দিতে পারবেন"
ঠিক। বর্তমান চেয়ারম্যান (জনাব খন্দকার মোজাম্মেল হক) চাইলে এই সেন্টার সরিয়ে দিতে পারে। সেন্টার তৈরী সময়ের চেয়ারম্যান চাইলেই অন্যরকম ভাড়ার চুক্তি হতে পারতো। 'ইউনুস নিজের প্রভাব খাটিয়ে কম ভাড়া বাগিয়েছে' এর সপক্ষে, অথবা 'ইউনুস সেন্টারের করা প্রপাগান্ডার ফলে গ্রামীনব্যাঙ্ক লাভবান হয়' এর বিপক্ষে কোন তথ্য আমি এখনো দেখিনি।
আপনি হয়তো ভালো করে খুঁজে দেখেননি, তাই কোনো তথ্য দেখেননি।
ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটের দুটি ইউআরএল দেখতে পাচ্ছি, একটি www.yunuscentre.org, অপরটি www.muhammadyunus.org । প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সেখানে ব্যক্তির সাইনবোর্ডই মুখ্য। অবশ্য একবার লগ-ইন করলেই দেখবেন, সেখানে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বদলে ইউনূস সাহেবের সেই অপূর্ব বিভামণ্ডিত হাসিটিই শোভা পাচ্ছে।
আসুন দেখি, ওয়েবসাইটে ইউনূস সেন্টার সম্পর্কে কী বলা আছে।
ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে কিছুক্ষণ ব্রাউজ করে যা দেখলাম, এটি ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগের একটি অনলাইন সাইনবোর্ড। সেইসাথে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক প্রসঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু প্রেস বিজ্ঞপ্তির সারমর্ম সেখানে ঝোলানো আছে।
যতদূর জানি, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এবং পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলো ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দরিদ্রের দারিদ্র্য দূরীকরণের মহান ব্রতের সাইনবোর্ড অবলম্বন করে। সেখানে সামাজিক ব্যবসার কথাবার্তা ছিলো না। ইউনূস সেন্টার পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবটাই মুহাম্মদ ইঊনূসের সামাজিক ব্যবসা সংক্রান্ত।
আমি সবিনয়ে জানতে চাই, ইউনূস সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হবার পর এ যাবত গ্রামীণ ব্যাঙ্কের জন্যে লাভজনক কী কী প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েছে, এবং তা থেকে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালিক দরিদ্র ক্ষুদ্রঋণীরা কীভাবে কতটুকু উপকৃত হয়েছে। এই তথ্য বিশদ জানানোর আগে ইউনূস সেন্টারকে "গ্রামীণ ব্যাঙ্কের জন্যে উপকারী প্রোপাগাণ্ডা প্ল্যাটফর্ম" হিসেবে দেয়া ঘোষণাকে গ্রহণযোগ্য মনে করার কোনো কারণ দেখতে পাই না। তবে যদি বলেন, এটি ব্যক্তি ইউনূসের জন্যে উপকারী প্রোপাগাণ্ডা প্ল্যাটফর্ম, আপত্তির সুযোগ দেখি না।
আর কম ভাড়ার ব্যাপারে ইউনূসের প্রভাবের ব্যাপারে জিজ্ঞাস্য, গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ইউনূসের প্রভাববলয়ের বাইরে নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী কে বা কারা আছে বা ছিলো? গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পরিচালনা পর্ষদে দরিদ্র ঋণীদের প্রতিনিধি হিসেবে যারা বসেন, তারা কীভাবে নির্বাচিত বা উৎকলিত হন, এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মতো একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণগত যোগ্যতা তাঁদের আছে কি না, জানতে আমি দীর্ঘদিন ধরে কৌতূহলী। যদি তাঁরা গ্রামের অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, কিংবা ব্যাঙ্কিংজ্ঞানবর্জিত মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে ইউনূসের এসব সিদ্ধান্তের বিপরীতে মত দেয়ার মত পরিস্থিতি, যোগ্যতা, দৃঢ়তা বা সামর্থ্য তাদের আছে কি না, তা আবারও সবিনয়ে জানতে চাই।
একটি উদাহরণও দেখতে চাই, যেখানে ইউনূসের কোনো সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করে ঋণীদের প্রতিনিধি এইসব পরিচালক কোনো ডকুমেন্টেড আপত্তি তুলেছিলেন।
সাগ্রহে অপেক্ষা করছি।
১। আরিফ ভাইয়ের কাছে তোমার প্রশ্ন ছিল, "ইউনূস সেন্টার কি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কোনো অঙ্গপ্রতিষ্ঠান? যদি হয়ে থাকে, তাহলে সে প্রসঙ্গে কিছু বলা যাবে। ?"
আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি ইউনুস সেন্টার কিভাবে গ্রামীনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিগণিত হতে পারে। যদি ইউনুস সেন্টার গ্রামীনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে তাহলে সেটা নিয়ে আলাদা আলোচনার অবান্তর। মূল প্রশ্ন হতে পারে ইউনুস গ্রামীনের যোগ্য চেহারা কিনা, যেটা গ্রামীন ও তার সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে ব্যাবহার করা যায়? যদি নবেল পুরস্কার দেখে বিচার করি, তাহলে মনে হতে পারে যে, আন্তর্জাতিক মহলে ইউনুস/গ্রামীনকে
আলাদা করে দেখা হয় না।
২। " সেখানে সামাজিক ব্যবসার কথাবার্তা ছিলো না। "
গ্রামীনব্যাঙ্ক অর্ডিন্যান্সের ১৯ তম অনুচ্ছেদে গ্রামীনকে ভূমিহীনের কল্যানে পুঁজিবাজার, বীমা, ট্রাস্টফান্ড গঠন, শিল্প ও কৃষিদ্রব্য ও যন্ত্রাদি ক্রয়, মজুদ, সরবরাহ, ইত্যাকার আরো অনেক বানিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি দেয়া আছে।
১. আপনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সেই চেষ্টা তো ফলপ্রসূ হয়নি। অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হতে গেলে সেই প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও ব্যবস্থাপনায় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। আপনি দেখিয়েছেন, ইউনূস সেন্টার একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে গঠিত, যেই ট্রাস্টের সভাপতি পদাধিকারবলে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান। এইটুকুই কি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অঙ্গসংগঠন হিসেবে পরিগণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট? ইউনূস সেন্টারের কার্যক্রমে কি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পরিচালনা পর্ষদের ঐ কয়েকজন "নির্বাচিত" পরিচালক, যারা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের দরিদ্র ঋণী মালিকদের প্রতিনিধিত্ব করেন, কোনো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে? যদি না থাকে, এটা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অঙ্গসংগঠন নয়, এটা একটা প্যারাসাইটিক প্রতিষ্ঠান, যা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের রিসোর্সের ওপর ভর করে ভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে।
"আন্তর্জাতিক মহলে" কীভাবে দেখা হয়, সেটা বোধহয় কোম্পানি আইন কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য আইনে প্রাসঙ্গিক না। ইউনূস আর গ্রামীণ ব্যাঙ্ক যে দুটি পৃথক এনটিটি, এটা আপনি যেমন জানেন, আমিও তেমনি জানি। তাই আমার প্রশ্ন, ইউনূস গ্রামীণ ব্যাঙ্কের রিসোর্স ব্যবহার করে
তাঁর নিজস্ব কার্যক্রম চালাতে পারেন কি না। আপনাকে আরো অনুরোধ করেছিলাম, এ যাবত ইউনূস সেন্টারের কোন "প্রোপাগাণ্ডায়" গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গরীব মালিকেরা কতটুকু উপকৃত হয়েছেন, তা দেখাতে। আপনি হয় তা দেখাতে পারছেন না, নয়তো এড়িয়ে যাচ্ছেন। কোনটা করছেন, সেটাও স্পষ্ট করে জানাতে পারেন। সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হলে সমস্যা নেই, অপেক্ষা করছি।
২. এই "আরো অনেক বাণিজ্যিক কার্যক্রমের" মধ্যে ইউনূস কর্তৃক সংজ্ঞায়িত সামাজিক ব্যবসা কি আছে? যদি থেকেও থাকে, সেগুলো গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রত্যক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণের আওতায় থেকে হওয়ার কথা। একটা প্রতিষ্ঠানের নামের গোড়ায় গ্রামীণ জুড়ে দিলেই তো সেটা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আইনানুগ অঙ্গ হয়ে যায় না। উদাহরণ হিসেবে গ্রামীণ ফোন বা গ্রামীণ ডানোন বা গ্রামীণ ভিওলিয়ার কথা বলতে পারি। এগুলোর কোনোটির আংশিক/পূর্ণাঙ্গ মালিকানা কি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের তথা "ভূমিহীন" বা দরিদ্র ঋণীদের?
আগেই যে কথাগুলো বলেছি, নবেল লরিয়ে ট্রাস্টের অর্ধেক টাকা গ্রামীনের, তাই ট্রাস্টের সম্পদের ও এই ট্রাস্টের শতভাগ মালিকানার সকল প্রতিষ্ঠান, যেমন ইউনূস সেন্টার, এর সম্পদের মালিকও গ্রামীন। আইন মোজাম্মেলকে (বা তার অনুসারী চেয়ারম্যানকে) ইউনুস সেন্টারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা দিয়েছে। মোজাম্মেল নিজের আইনী ক্ষমতা ব্যাবহার না করে ইউনুসের 'প্রভাব' এর কাছে হেরে বসে থাকলে সেটা অন্য সমস্যা। কিন্তু সম্পদ ও আইনী নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বলে তো ইউনুস সেন্টারকে গ্রামীনের অঙ্গসংগঠন না বলার কোন সুযোগ আমি দেখিনা।
তার মানে, ইউনূস সেন্টার গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সম্পদকে কাজে লাগাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের স্বার্থের বাইরে কিছু কাজে, যা আবার পুরোপুরি ইউনূসের স্বার্থে কাজে লাগে। বিশ্বব্যাপী যেসব সামাজিক ব্যবসা আছে, সেগুলোর হাব হিসেবে ব্যবহৃত [রেফারেন্স: ইউনূসের স্বাক্ষরিত উপরোক্ত বিবৃতি] হচ্ছে ইউনূস সেন্টার, কিন্তু এই বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যবসাগুলোর সাথে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আইনী সম্পর্ক কোথায়? উদাহরণ, গ্রামীণ ভিওলিয়া। গ্রামীণ ভিওলিয়ার আংশিক মালিকানা কি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের? গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ঐ দরিদ্র ঋণীরা কি গ্রামীণ ভিওলিয়ার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন? কিংবা সামাজিক ব্যবসার কথা বাদ দিয়ে ট্র্যাডিশনাল ব্যবসার কথাই ধরুন, গ্রামীণফোন, এর ৩৮%-এর মালিকানা নাকি গ্রামীণ টেলিকমের। কিন্তু দরিদ্র ঋণীদের প্রতিনিধি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ঐ কয়েকজন "নির্বাচিত" পরিচালকবৃন্দ কি চাইলে এই ৩৮% মালিকানার জোরে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? গ্রামীণ টেলিকমের সাথে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আইনী সম্পর্কটা কোথায় আর কেমন?
১। গ্রামীণ ভিওলিয়ার আংশিক মালিকানা কি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের? গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ঐ দরিদ্র ঋণীরা কি গ্রামীণ ভিওলিয়ার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন?
২। গ্রামীণ টেলিকমের সাথে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আইনী সম্পর্কটা কোথায় আর কেমন?
সরকারি তদন্তকমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী গ্রামীন টেলিকম ও ভিওলিয়ার মালিকানা কাঠামো নিম্পরূপঃ
- গ্রামীনব্যাঙ্ক, গ্রামীন কল্যানের একমাত্র মালিক, আবার গ্রামীনকল্যান, গ্রামীন টেলেকমের একমাত্র মালিক। (১০০%)
- গ্রামীনব্যাঙ্ক, গ্রামীন ব্যাবসা বিকাশের একমাত্র মালিক। (১০০%)।
- গ্রামীন ব্যাবসা বিকাশ ও গ্রামীন টেলেকম গ্রামীন হেল্থকেয়ার সারভিসেস লিমিটেডের যুগ্নমালিক, এভাবে আদতে গ্রামীনব্যাঙ্কই গ্রামীন হেল্থকেয়ার সারভিসেস এর ১০০% মালিক।
- গ্রামীন হেল্থকেয়ার সারভিসেস, গ্রামীন ভেওলিয়া ওয়াটারের ৫০% মালিক।
অর্থাত আইনত গ্রামীনব্যাঙ্ক গ্রামীন টেলিকমের শতভাগ ও গ্রামীন ভেওলিয়া ওয়াটারের ৫০% এর মালিক। তাই গ্রামীন টেলিকমের পরিচালক যারাই হোক না কেন, তারা সরাসরি গ্রামীন ব্যাঙ্কের পরিচালক পরিষদের কাছে জবাবদিহী করতে আইনত বাধ্য। যেহেতু গ্রামীন ভেওলিয়া ওয়াটার ৫০-৫০ সরিকের উদ্যোগ, তাই এখানে কার 'কন্ট্রোলিং ইন্টারেস্ট' আছে, সেটা জয়েন্ট অপারেটিং চুক্তি দেখে বলা যাবে। তদন্ত প্রতিবেদন এ বিষয়ে কিছু বলছেনা। তবে যেহেতু সম্পদের ৫০% গ্রামীনের, আবার ৬ পরিচালকের তিনজনই গ্রামীনের, তাই এখানে গ্রামীনের নিয়ন্ত্রনে ঘাটতি হবার সুযোগ কম।
৩। দরিদ্র ঋণীদের প্রতিনিধি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ঐ কয়েকজন "নির্বাচিত" পরিচালকবৃন্দ কি চাইলে এই ৩৮% মালিকানার জোরে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? গ্রামীণ টেলিকমের সাথে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আইনী সম্পর্কটা কোথায় আর কেমন?
কোন প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের কথা বলা হচ্ছে?
গ্রামীন টেলিকমের ওপর গ্রামীনব্যাঙ্কের পরিচালনা পরিষদের কর্তৃত্ব একক।
প্রয়োজনীয় প্রশ্ন হল, মূল গ্রামীনব্যাঙ্কের পরিচালনা পরিষদে গ্রামীনব্যাঙ্কের দরিদ্র ঋণীদের প্রতিনিধিরা কতটুকু ক্ষমতাশীল। এটা আমি জানিনা।
তবে গ্রামীনফোনের দৈনন্দিন কাজে গ্রামীন টেলিকমের খুব বেশী কিছু বলার নেই, কৌশলগত সিদ্ধান্তও নির্ভর করবে জয়েন্টভেন্চার চুক্তি গ্রামীন টেলিকমকে কিরকম ক্ষমতা দিয়েছে তার উপর। কিছু কিছু জরুরী বিষয়ে ছোট সরিকের ভেটো অধিকার থাকতে পারে।
একটা ছোট্ট সংশোধনী: অধ্যাপক ড. মনোওয়ার উদ্দিন আহমদ অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। বর্তমান চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ড. আহমদ এই কমিটির চেয়ারম্যান, অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান বোঝাতে চাইনি। তবে এই সংশয় যে দেখা দিতে পারে, লেখার সময় মাথায় আসেনি। অশেষ ধন্যবাদ।
ওহ হো!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
এটা একটি ভালো কাজ হয়েছে। সবগুলো বিষয় এক সাথে উঠে এসেছে যা রেফারেন্স হিসেবে বেশ ভালো কাজে দিবে।
ভালো উদ্যোগ। দেখি, অপরপক্ষের বক্তব্য শোনা যায় কিনা।
১. গ্রামীন ফান্ড (গ্রা-ফা) প্যাকেজেস কর্পোরেশান (প্যা-ক) এর সম্পর্ক কি পুরোটাই ঋণ দাতা-গ্রহিতা, নাকি গ্রাফা প্যাক এর অংশীদারও। চুক্তি সাপেক্ষে অংশীদার তার দেয়া ঋনকে অংশীদারত্বে পরিনত করতে পারে। আবার ঋণদাতা যখন একটি ঋণগ্রহিতা প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থাপনা অধিগ্রহন করে, তখন সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা যাই হোক, সেই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যাবলীতে ঋণদাতার সিদ্ধান্তমতেই ঘটে। ব্যাঙ্ক প্রতিবেদন গ্রাফা-প্যাকের অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনায় না গিয়ে শুধু বলেছে প্যাক এর মালিকানা ইউনুসের পরিবারে। প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পরিবার হতে পারেনা। ইউনুস পরিবারের কোন কোন ব্যাক্তি, বা ইউনুস নিজেই বা গ্রাফা বা অন্য কেউ কি আকারে প্যাকের মালিক, এই তথ্য আমাদের বলে দেবে প্যাককে টাকা খাটানো/ঋণ দেয়াটা কতটুকু আইনত ছিল।
প্রতিবেদন দেখাচ্ছে যে গ্রা-ফা, প্যা-ক এর নেয়া ঋণের ওপরে আরোপিত সুদ পুনঃতফশীল করছে, অথচ বলছে যে ঋণ মৌকুফ করা হচ্ছে। এত বাঘা বাঘা অর্থনীতিবাগিশেরা সুদ পুনঃতফশীলকে ঋণ মৌকুফ বললেন কেন, বুঝতে পারছি না।
২. খন্দকার মোজাম্মেল হকের বক্তব্যগুলো ১৯৯৭ সালের। এটা কি ধরে নেয়া যায়, এগুলোর সবগুলো একটিমাত্র চিঠি থেকেই উদ্ধৃত? এটা কি ঠিক যে আওয়ামী লীগ তাকে গ্রামীনের চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসাবার আগ পর্যন্ত তার এই চিঠি আলোর মুখ দেখেনি? এটা কি ঠিক যে বিডিনিউজের অনেকগুলো কথাই এই চিঠি থেকে এসেছে, যেটা দ্বিতীয় কোন তথ্যসুত্র দিয়ে যাচাই করা হয়নি?
২. এটা কি ঠিক যে এগুলো সন্দেহ, কোনো প্রামাণ্য ভিত্তি ছাড়াই?
এগুলো প্রশ্ন।
অনেকগুলো পালটা যুক্তি ছিলো। যেমন,
১। হাসিনা-খালেদা খারাপ, তাই ইনুচ ভালো।
২। বাংলাদেশে স্বজনপ্রীতি কোন প্রতিষ্ঠানে না হয়? স্বজনপ্রীতি একটি ভালো জিনিস। বাঙালির মধ্যে এক অর্থে স্বজনপ্রীতি নাই, বাঙালির দোযখে ফেরেশতা লাগে না। এদিক দিয়ে দেখলে এক বঙ্গবন্ধু, দুই ডাক্তার ইনুচ এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
৩। সালমান এফ রহমানরা ব্যাঙ্কলোন মেরে দিলে এইদেশে কিছু হয় না, সামান্য ট্যাক্স ফাঁকি দিলে কি হয়?
৪। ট্যাক্স জনগণের সম্পদ, গ্রামীণ জনগণের সংস্থা। সুতরাং গ্রামীণের ট্যাক্স সরকারের হাত না ঘুরে সরাসরি জনগণের হাতে পৌঁছে গেলে আপনাদের এত লাগে ক্যান?
৫। যে গরু দুধ দেয়, তার লাথি খাওয়াও ভালো।
বুঝলাম, এসব যুক্তি আপনারা মানবেন না। তাই দিলাম না।
তবে পোস্ট থেকে অনেক কিছু জানলাম। এতদিন গ্রামীণ চেকের ফতুয়া দেখে একটা সন্দেহ ছিলো ইনুচের নিজেরই ক্ষুদ্রঋণ দরকার হয় কিনা। আলহামদুলিল্লাহ, সে সমস্যা নাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এই যুক্তির প্রথম অংশ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। ইউনূসকে ছাড় দেয়ার জন্য বলছিনা, বলছি সালমান/ইকবালদের কিছু হয়না কেন সেটা।
ড। ইউনূস আম্লীগে যোগ দিলে সব ঠিক হয় যাবে
ইউনূসের ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে করমুক্ত আয় হিসেবে প্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ৫৪ কোটি ৫৩ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৫ টাকা!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
তদন্ত কমিটির রিপর্টের বেপারে গ্রামীণের অফিশিয়াল বক্তবে্যর দুইটা লিংক পেলাম (ওদের এই সাফাই এখনো পড়ে দেখিনি যদিও, আপনারা দেখতে পারেন, তেনারা কী বলে):
গ্রামীণ ব্যাংকের মন্তব্য: বাংলা (পিডিএফ) | ইংরেজী (গ্রামীণ ওয়েবসাইট লিংক)
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নোবেল পুরস্কার পেলে বক্তৃতা দিয়ে ৬০ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে ? এতদিন সিরিয়াসলি চেষ্টা করি নি, এই মুহূর্ত থেকে শুরু করলাম।
নতুন মন্তব্য করুন