অন্ধকার আর আলোর মাঝে একটি উঁচু চেয়ারের ওপর বসেছিলেন মিসেস হোসেন, ফেরদৌসকে দেখে তাঁর মুখে হাসি ফোটে। "আসুন, আসুন হাসান সাহেব। অ্যাই পপি, হাসান সাহেবকে কাগজটা দে তো ভাই!"
সহকারী নির্দেশক মারজানা পপি প্রেতের মতো নিঃশব্দে এগিয়ে আসে অন্ধকার ফুঁড়ে, তার হাতে এক শিট সাদা অফসেট কাগজ।
ফেরদৌস চুপচাপ কাগজটা টেনে নিয়ে খসখস করে লেখে একটা শব্দ, সপ্রশ্ন চোখে মারজানা পপির দিকে তাকায় তারপর।
পপি ঘড়ঘড়ে গলায় বলে, "আপনার কাছেই রাখেন।"
কাগজটা হাতে নিয়ে এদিক সেদিক তাকায় ফেরদৌস। চারদিকেই প্রায় একই দৃশ্য, গুদামঘর মিলিয়ে গেছে অন্ধকারে, শুধু পেছনে সামান্য খোলা প্রবেশপথের ওপাশে সরু সুতোর মতো উঁকি দিচ্ছে বাইরের আলো।
"কোথায় বসবো?" ফেরদৌস গলা খাঁকরে জিজ্ঞেস করে মিসেস হোসেনকে।
মিসেস হোসেন অবহেলাভরে তাকান ফেরদৌসের দিকে, তারপর থলথলে একটা হাত তুলে নির্দেশ করেন এক কোণার অন্ধকারের দিকে। "ঐ যে ঐখানে একটা সিট আছে। বসে পড়ুন।"
ফেরদৌস এগিয়ে যায় অন্ধের মতো, সেই অন্ধকারের দিকে। গুদামঘরের মাঝখানটা একটা আলোর দ্বীপ হয়ে জেগে থাকে যেন এক পাতাল অন্ধকার সমুদ্রের মাঝে। হাতড়ে হাতড়ে সিটটা খুঁজে নিয়ে বসে ফেরদৌস।
মারজানা পপি বলে, "আপু, শুরু করবো?"
মিসেস হোসেন গা দুলিয়ে হাসেন, বলেন, "হ্যাঁ, শুরু হোক শিল্প!"
মারজানা পপি কর্কশ স্বরে বলে, "ক্যামেরা!"
অন্ধকার থেকে মন্থর শূকরের মতো এগিয়ে আসে একটা ক্যামেরা, তাতে একটি চোখ ঠেকিয়ে বসে আছে ক্যামেরাম্যান।
পপি কফবদ্ধ গলায় বলে, "পাত্রপাত্রী গেল কই?"
এবার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে এক বৃষস্কন্ধ পুরুষ, তার পরনে স্যাণ্ডো গেঞ্জি আর খাকি হাফপ্যান্ট। তার হাতের মুঠোয় ধরা এক তরুণীর হাত। তরুণীর পরনে কেবল ব্লাউজ আর পেটিকোট, তার চোখে ভয়ের ছাপ, তার ঠোঁটের কষে রক্তের ক্ষীণ ধারা।
ফেরদৌস চিনতে পারে তরুণীকে। ঐ তরুণী ফেরদৌসের মা। অতীতের মা। চল্লিশ বছর আগে মা। এখানে তার বয়স কত? কুড়ি? একুশ?
মারজানা পপি চিৎকার করে ওঠে, "অ্যাকশন!"
বিশালদেহী পুরুষটি এবার এক ঝটকায় শূন্যে তুলে ফেরদৌসের মাকে ছুঁড়ে মারে মেঝের ওপর। ফেরদৌসের মা মাটিতে আছড়ে পড়ে বিনা প্রতিবাদে, তার হালকা শরীর মেঝে থেকে সরিয়ে দেয় ধূলোর স্তর। পুরুষটি হাফপ্যান্ট খুলে মাটিতে ফেলে দেয়, তারপর এক হাতে নিজের শিশ্নটি মর্দন করতে থাকে, তার মুখে কুৎসিত হাসি বিস্তৃত হয় আস্তে আস্তে।
মিসেস হোসেন সামনে একটু ঝুঁকে পড়ে গিলতে থাকেন দৃশ্যটা, তার মুখ হাঁ হয়ে আসে একটু।
ফেরদৌসের মা ফুঁপিয়ে ওঠেন, অস্ফূট স্বরে কী যেন বলেন, কেউ বুঝতে পারে না। লোকটা এগিয়ে গিয়ে এক হ্যাঁচকা টানে ছিঁড়ে ফেলে তার ব্লাউজ, তারপর ফড়ফড় করে ফেড়ে ফেলে তার শায়াটা। সরীসৃপের দাঁতে বিদ্ধ পতঙ্গের মতো ছটফট করতে থাকে ফেরদৌসের মা।
এবার অন্ধকার থেকে এগিয়ে আসে আরেকটি উলঙ্গ পুরুষ, হাতে উদ্যত শিশ্ন।
প্রথম পুরুষটি ফেরদৌসের মায়ের দুই পা টেনে পৃথক করে, তারপর সজোরে নিজেকে প্রবিষ্ট করে তার যোনিতে। এক তীব্র আর্তনাদে ভরে যায় গুদামঘর, মিসেস হোসেন জোরে জোরে শ্বাস নেন, মারজানা পপি কুঁতকুঁতে দুই চোখ মেলে দেখতে থাকে দৃশ্যটা, ক্যামেরা ঘুরতে থাকে আপন আহ্নিক গতিতে।
দ্বিতীয় পুরুষটিও এগিয়ে আসে, দুই হাতে চেপে ধরে ফেরদৌসের মায়ের স্তন দুটি, তারপর দাঁত বসিয়ে দেয়। তার কামড়ে ফেরদৌসের মায়ের একটি স্তনবৃন্ত ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে রক্ত। পুরুষটি জিভ দিয়ে চেটে খায় সেই রক্ত। ফেরদৌস বুঝতে পারে, শৈশবে যে স্তনবৃন্ত তাকে পুষ্টি দিয়েছে, তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, আজ যে শুধু রক্তস্রোতের উৎস।
চিৎকারে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় গুদামঘরের ভেতরের বাতাস। ফেরদৌসের মা হাহাকার করে ওঠেন, "বাজান ... বাজান ... বাজান ...!"
ফেরদৌস হাতে ধরা কাগজটার দিকে তাকায়, সেখানে সে বড় বড় করে নিজেই লিখেছে, "মনুষ্যত্ব"। কাগজটা দুমড়ে মুচড়ে পাশের ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দেয় সে। তারপর চোখ ভরে দেখতে থাকে শিল্প। তার মাকে ধর্ষণ করছে দুটি পুরুষ বরাহ। ক্যামেরা ঘুরছে। ক্যামেরার ফিল্মে বন্দী হচ্ছে ফেরদৌসের মায়ের সেক্সুয়ালিটি, ফেরদৌসের মায়ের কামজ প্রয়োজন।
আর বাতাসে একবার, দুইবার, আড়াই লক্ষবার আত্মহত্যা করছে বাজান শব্দটা।
চার জোড়া চকচকে চোখ আর একটা লজ্জিত ক্যামেরা দেখে চলে দৃশ্যটা। সবাই স্পেলবাউণ্ড।
মন্তব্য
ইয়ে, হিমুদা, আপনার অন্য পোস্টটা এখনও প্রথম পাতায় আছে দেখছি...
আমার অন্য পোস্টটা বুদ্ধবাবুর মতো চুপচাপ সরে পড়েছে...
মানী লোকেদের প্রতি এই প্রতিহিংসা-বিদ্বেষ-প্রসূত অপমানজনক পোস্ট ব্যান করা হৌক।
'চল্লিশ বছর আগে(র) মা' হবে না? ..... স্পেলবাউণ্ড!
হাসান ফেরদৌস মানী লোক নন। গল্পটা একটু আধটু না, খুব খারাপ লাগলো।
খারাপ লাগার জন্যই তো লেখাটা। যাঁদের ওইসব লেখাগুলো পড়ে খুব খারাপ লাগে না, তাদের একটা শক দেওয়ার জন্যই। সবকিছুই ভালো ভালো লাগতে থাকলে তো এটা লেখার প্রয়োজন পড়ত না।
অসাধারণ লেখা, দরকারী লেখা... নিষ্প্রাণ, বশে থাকা ক্যামেরাও লজ্জিত হয়, কিন্তু প্রাণধারী 'বুদ্ধিজীবী' আর 'সত্যসন্ধানী'রা এখন বশীভূত, লজ্জাশূন্য আর বোধহীন।
স্পেল্বাউন্ড।
আমি হাসান সাহেবের মায়ের জন্য দুঃখিত। উপরের গল্পটি হাসান সাহেবের মায়ের জন্য নিঃসন্দেহে খুব আপত্তিকর অশ্লীল অবমাননাকর। কিন্তু হাসান সাহেবকে গল্পটি হজম করতে হবে। হাসান সাহেবের মা একাত্তরে ধর্ষিতা হন নি। ধর্ষিতা হয়েছিলেন অন্য কারো মা। অন্যের মা ধর্ষিতা হলে তাকে নিয়ে শিল্পের গর্ব করা যায়। ধর্ষনের মধ্যেও প্রেমের গল্প সেঁদিয়ে দেয়াকে উৎসাহিত করা যায়। অবশেষে হাসান সাহেবও তাই করলেন। কারণ তিনি ব্রেখট পড়েছেন, ব্রেখট বলেছেন "শিল্প হচ্ছে সেই হাতুড়ি, যা দিয়ে শিল্পী পরিচিত, চলতি বাস্তবতাকে ভেঙে, দুমড়ে নতুন করে নির্মাণে সক্ষম......."
সুতরাং বদলে দাও বদলে দাও পরিচিত অস্বস্তিকর সব বাস্তবতা বদলে দাও শিল্পের হাতুড়িতে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এরকম শিল্পের মুখে মুতে দেই ...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
"উত্তম বীজ উত্তম ফসল" অবাক হওয়ার কিছু নাই।
love the life you live. live the life you love.
স্পেলবাউন্ড!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
স্পেলবাউন্ড
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
স্পেলবাউন্ড
গল্পে একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ গেছে। মাতৃকামজপ্রয়োজন মেটাতে ফেরদৌস নিজেই শেষদৃশ্যে অবতারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কথা। তার মা যখন চিল্লায় 'বাজান, বাজান' বলে, সে তখন 'ইয়া ওডিপাস' বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেশমাতার ইতিহাসকে ধর্ষণ করা এই মহান ওডিপাসকে এই সুযোগ থেকে পরিচালিকা বঞ্চিত করবেন না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মন্তব্যে লাইক অপসনটারে খুব মিস করি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আসলেই মিস করি! এটা অভ্যাসের দাবি।
এরকমই লেখার প্রয়োজন ছিল। তাতেও যদি এদের হুঁশ হত!!!!
আমিতো এখানে এই মন্তব্যটি 'জবাব' হিসেবে করি নি, এখানে আসলো কীভাবে!! ইন্ডিভিজুয়াল মন্তব্য ছিল!
ওডিপাসের সাথে এদের পার্থক্য আছে। ওডিপাস যা করেছিল, তা নিজের অজান্তে, আর এরা সজ্ঞানে মাতৃধর্ষক।
এটি একটি সত্যি ঘটনা।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কাজ হবে না। তাহারা বিক্রিত ও বিকৃত।
অতীত
প্রথম আলোয় সেই 'কামজ প্রয়োজনের' কথা পড়ার পরে গা রি রি করে উঠেছিলো। এই লেখাটাও নিশ্চই সেই ব্যক্তি কোনো একটা ডিসকোর্স হিসাবেই নেবে। দেশের সবচেয়ে বড় 'মিডিয়া' অমানুষদের মুখপত্র হয়ে উঠছে দিনে দিনে। এর কি কোনো বিহিত নেই?
যতোসব বিক্রিত ও বিকৃতের দল।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কখনো কখনো জ্বর ছাড়াই কাউকে কাউকে সাপোজিটরি দিতে হয়, ফেরদৌস সাহেবের জন্য এটা খুব দরকার ছিল।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
http://www.bd-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=Car&pub_no=377&cat_id=3&menu_id=12&news_type_id=1&index=6
পাকিজান রুবাইয়াত এইবার কাজল কে কাষ্ট করে নতুন মিশনে নামছে...সে এখনও নাকি বাংলাদেশে মেহেরজানরে ফেরত আনার খোয়াব দেখে...বুঝেন অবস্থা...
কিরকম নির্লজ্জ ও মেধাহীন হলে একজন ফিল্মমেকার এভাবে দর্শক টানার চেষ্টা করতে পারে.......
পাকবাহিনী বা কোন রাজাকারের চোখে দেখা একজন বাঙালী মায়ের ধর্ষন দৃশ্যের এমন রগরগে উপাখ্যান মনটা খারাপ করে দিল। অন্যকে শক দিতে গিয়ে নিজেরাই কি শকড্ না? আমি নিশ্চিত এই শক সবার জন্য দরকার নেই-- কারন সবাই ছাগু নয়, কেউ কেউ ছাগু
-----------
চর্যাপদ
এইসব নিখুঁত উপমার স্বচ্ছতোয়া প্রবাহ আপনার গদ্যকে বহতা নদীর মতো বয়ে নিয়ে যায়।
এই অংশটুকু ছেঁটে দিলে গল্পের কি কোন অঙ্গহানি হয় নাকি বিভাবৃদ্ধি ঘটে?
অ. ট.
আপনার যুদ্ধচেষ্টার মৌনবাক বিমুগ্ধ দর্শক আমি। আমরা তো সবাই প্রতিনিয়ত ভেতরে-বাহিরে যুঝছি। তবু কেন জানি মনে হয়, সময়-সন্ধির অতলান্ত গহ্বরে আমাদের যুদ্ধচেষ্টা উপলক্ষ্যমাত্র, নিয়ামক নয়। টগবগে যৌবনে যেসব গুণীর লেখনী অজগরের মতো ফুঁসে উঠতে দেখি, পরিনত বয়সের প্রচেষ্টায় তাঁদেরই বলতে শুনি, “চলো যাই পরোক্ষে”। জানি, আপনাকে শ্লীলবাক হবার পরামর্শ দিয়ে কোন কাজ নেই। কারণ দুটো। এক, শ্লীলতার সংজ্ঞা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিচিত্ররূপে বহুবিভক্ত। দুই, প্রকৃত শিল্পী কিম্বা জাত লেখকেরা কারুরই উপদেশ গ্রহণ করেন না। ভালো থাকুন, আরো অনেক অনেক লিখুন।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন