প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সামহোয়্যার ইন এ বইপাগল নিক নিয়ে কেউ একজন ফ্লাডিং করে যাচ্ছে। আমার বইপাগল সিরিজ এর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই, এবং আমি এভাবে আমার সিরিজের নাম ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ। ওর উপর আল্লার গজব পড়ুক, লা'নত পড়ুক, ওর বাড়ির কড়িকাঠ খসে পড়ুক।
যাই হোক।
গতকাল রাতে, একটু দেরিতে হলেও টেনে পড়ে শেষ করলাম মেজর জেনারেল (অবঃ) মইনুল হোসেন চৌধুরীর এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক। সামরিক বাহিনীর অফিসাররা সাধারণত পয়েন্ট ধরে লিখতে অভ্যস্ত, এতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন --- এটা আমার পর্যবেক্ষণলব্ধ ধারণা। মইনুল হোসেন চৌধুরীর বইটির পরিসর খুব বেশি নয়, কিন্তু ঘটনা প্রচুর, তাই খুব একটা খারাপ লাগেনি এমন পয়েন্টানুগ লেখা।
মইনুল হোসেন চৌধুরীর বিভিন্ন লেখা ও সাক্ষাৎকার এর মাধ্যমে তাঁকে একজন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা, সাহসী ও দূরদর্শী মানুষ বলে আমার মনে হয়েছে। তাঁর বইটি পড়ে তাঁর ওপর আমার শ্রদ্ধা অটুট রয়েছে। তিনি নিজেকে অতিমানব বলে জাহির করেননি, সবসময় তাঁর সহযোদ্ধাদের অবদানের কথা উচ্চকণ্ঠে বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে তিনি কিছু সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বিভিন্ন সময়ে, তাঁর কথা শুনে আমার মনে হয়েছে, এমন একজন অধিনায়কের হুকুমে প্রাণ বিসর্জন দেয়ার মতো মানুষের অভাব হবে না দেশে।
বইতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের সংকট নিয়ে কথা বলেছেন, জানিয়েছেন কিভাবে পাকিস্তানফেরত অমুক্তিযোদ্ধা অফিসাররা সামরিক বাহিনীর ভেতরে বিরাজমান অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়ে নিজেরা ফায়দা লুটেছেন দেশের সাম্যাবস্থার বিনিময়ে। সহমুক্তিযোদ্ধা কিছু অফিসারের প্রসঙ্গেও তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। পেশাদারিত্বকে বিসর্জন দিয়ে নিজের স্বার্থ চরিতার্থের অনেকগুলো ঘটনা তিনি বর্ণনা করেছেন।
বইটা পড়ে আমি বিষণ্ন বোধ করেছি। একটাই কথা মনে হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ আর পরবর্তী এক দশকে আমরা অনেক দৃঢ়চেতা, সাহসী মানুষ হারিয়েছি, যাঁরা যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে থাকলে সেনাবাহিনী আর কোন সংশয় সৃষ্টি করতো না সাধারণ মানুষের মনে। কোন স্বৈরাচারী কুকুরের হাতে দেশ এভাবে ধর্ষিত হতো না বছরের পর বছর।
সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ জানাই লেখক জেনারেলকে।
মন্তব্য
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
পড়ি নাই, তারচেয়ে বড় কথা পড়ার সুযোগ নাই।
আচ্ছা, অনলাইনে বইয়ের আর্কাইভ নিয়া একবার দীর্ঘ আলোচনা হইছিলো, ওইটাকে আবার জাগানো যায় নাকি?
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
এ ব্যাপারে আসলে লেখক ও প্রকাশকদের সদিচ্ছা জরুরি।
কিছুদিনের মধ্যেই বইপাঠের ব্যাপারটি বহুলাংশে কম্পিউটার নির্ভর হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারটি অনুধাবন করা জরুরি লেখক-প্রকাশকদের।
একটা বই ১,০০০ কপি বিক্রি হলে ধরে নেয়া যায় ৭,০০০ লোক সেটা পড়বে। যদি ওয়েবে রাখা যায়, তাহলে ওয়েব সংস্করণের পাঠক আরো হাজার দুয়েক বাড়বে বলে আমার ধারণা।
আমার হাতে পুঁজি থাকলে আমি এরকম কিছু বইয়ের ওয়েব অ্যাকুইজিশনের উদ্যোগ নিতাম। অনেক লেখক আছেন যাঁরা নামমাত্র মুল্যেই হয়তো বইটি ওয়েবে তুলতে দেবেন, আবার অনেকে বেঁকে বসতে পারেন। পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা যায় অবশ্য।
আমরা কি সচলায়তনের পক্ষ থেকে এটাকে একটা প্রজেক্ট হিসেবে নিতে পারি না?
দাঁড়ান, আপনার মন্তব্য সহ আলাদা একটা পোষ্ট দেই।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ফরিদ তার বইমেলায় মনে হয় এমনটা করছেন। শিমুলের ছাদের কার্নিশে...তোলা হয়েছে যতদুর জানি।
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
দু একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে এই মানুষটার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে ।
৭৫ এর পরবর্তী সময়ে তার ভূমিকা নিয়ে পরিচিত মহলে কিছুটা সমালোচনা আছে কিন্তু এতে তার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের ভূমিকা কিছুতেই গৌন হয়না ।
১৬ই ডিসেম্বরের পরের দিনগুলোতে বিহারীদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্বার অভিযানের নেতৃত্বে তিনি ছিলেন ।
শুভ'র সাথে আমার একটা তর্ক হয়েছিল সামহোয়ার বাজারে । শুভ বলছিলেন, ১৬ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বিহারীদের হত্যা তিনি সমর্থন করেন কিন্তু তার পরের দিন থেকে নয় । এটা তিনি তারঁ মানবতাবোধ থেকে উচচারন করেন । তিনি ধরে নিয়েছেন ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ্ব থেমে গিয়েছে ।
কিন্তু মইনুল হোসেন চৌধুরী বীরবিক্রম জানান,মীরপুর এলাকায় যুদ্ধ্ব আসলে চলছিলো পুরো জানুয়ারী মাস জুড়ে । অবাংগালী বিহারীদের হাতে তখনো অনেক অস্ত্র । লেঃ সেলিম শহীদ হন জানুয়ারীতে । শহীদ হন জহির রায়হান । জহির রায়হানের অন্তর্ধানের সাথে তৎকালীন আওয়ামী নেতৃত্বকে জড়িয়ে একটা প্রচারনা সুক্ষভাবে চালানো হয় ।মইনুল হুসেন বীরবিক্রম এটা ও নাকচ করে দেন ।
তাঁর বই অবশ্য পাঠ্য ।
হিমুকে ধন্যবাদ
--------------------------
আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মইনলু হোসেন চৌধুরীর বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি সেনাশৃঙ্খলার সাথে কখনো আপোষ করেননি। তাঁর কথা হচ্ছে, সবার আগে হচ্ছে সৈনিক হিসেবে নিজের পেশাদারিত্ব সমুন্নত রাখা। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, মুজিব বা জিয়া হত্যা, কিংবা অন্য কোন কেলেঙ্কারিতে তাঁকে কেউ জড়াতে পারেনি, কারণ তিনি রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার বশবর্তী হয়ে নিজের পেশাদারিত্বকে কম্প্রোমাইজ করেননি। দেশপ্রেম, চেইন অফ কমান্ড রক্ষা এবং অধিনায়কসুলভ আচরণ বজায় রাখা, এসব প্রশ্নে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়।
মইনুল হোসেন চৌধুরী একদিন এক টিভি সাক্ষাৎকারে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে স্মরণ করছিলেন তাঁর যুদ্ধের দিনগুলির কথা, তাঁর অধীনে যুদ্ধ করেছেন এমন সৈনিকদের কথা, তাঁদের সাহায্য করেছেন এমন সাধারণ মানুষদের কথা। স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা নয়ছয় করেছে, তাঁরা সেদিনের অনুষ্ঠানের মইনুল হোসেন চৌধুরীর চোখের দিকে তাকিয়ে একটা টুঁ শব্দ করতে পারতেন কি না আমার সন্দেহ আছে। আমি যদি কখনো কোন গর্বিত, সাহসী যুদ্ধনায়কের ছবি আঁকতে চাই, জেনারেল মইনকেই আঁকবো।
আরো একটা বই এর নাম জানলাম। ধন্যবাদ হিমু।
হিমু বই বিষয়ক প্রজেক্টে পুঁজি বিনিয়োগে আমি রাজি।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
বইমেলার ফরিদ কে সচলায়তনে যুক্ত করা হোক।তার প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।অনলাইনে সে অনেকের বইই হোস্ট করছে।
বই আলোচনার সময়,বইয়ের প্রকাশক,মূল্য, প্রকাশকাল এসব তথ্য লেখার শেষে উল্লেখ করার জন্য হিমুকে অনুরোধ করছি।উৎসাহী পাঠকের পক্ষে তখন বইটি কালেক্ট করা সহজ হয়।
বিনিয়োগে আমার আপত্তি নেই। যদি লেখক পুরো বই না দিতে চান তাহলে আমাজনের মতো করা যেতে পারে, আংশিক তুলে দিয়ে। হয়তো আমাজন সাইটটাকেই ব্যবহার করা সম্ভব।
নতুন মন্তব্য করুন