বই নিয়ে ০২

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৯/০২/২০১২ - ৯:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[প্রথম পর্ব]

অনেক বছর আগে একমাসের জন্যে আমার প্রতিবেশিনী হিসেবে নাদিয়া নামে এক রুশ যুবতীকে পেয়েছিলাম। ব্রেয়ানস্ক নামে একটা ছোটো শহরে সে লাইব্রেরিয়ানের কাজ করতো। একদিন টিভি রুমে হলিউডি লা মিজেহ্রাবলের জার্মান ডাবড সংস্করণ দেখাচ্ছে, আমি আর নাদিয়া ছাড়া আর কেউ দেখছে না সেটা। সিনেমা দেখা শেষ করে নাদিয়া মুখ বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি হেসে বললো, আমেরিকানরা না পারে উপন্যাস লিখতে, না পারে সিনেমা বানাতে।

কেন এমন ধারণা হলো তার, জানতে চাওয়ার পর নাদিয়া আবার চেয়ার টেনে বসে বিরাট একটা লেকচার দিলো। মার্কিন উপন্যাস সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা ছিলো না তখন (এখনও নেই), নাদিয়া লাইব্রেরিয়ান বলে সে বেশ কিছু মার্কিন উপন্যাসের রুশ অনুবাদ পড়েছে, তার কাছে ওগুলোকে আবর্জনা মনে হয়েছে। চার-পাঁচটা চরিত্র দিয়ে তারা কাজ চালিয়ে দেয়, এটাই নাদিয়ার সবচেয়ে বড় অভিযোগ। উপন্যাস লিখতে জানে কেবল রুশরা, জানালো সে। রুশ উপন্যাস নিয়েও আমার তেমন ধারণা ছিলো না (এখনও নেই)। ব্রাদার্স কারামাজভ পড়ার পরামর্শ দিলো নাদিয়া। তার মতে, একটা বই খুলে মাসখানেক ধরে যদি সেটা না-ই পড়া যায়, কুড়ি পঁচিশটা জটিল চরিত্র যদি তাতে না-ই থাকে, এক এক অধ্যায় শেষ করে যদি রাতে ঘুমানোর আগে সেগুলো নিয়ে একটু চিন্তা না করা যায়, তাহলে ওটা একটা ছাতার উপন্যাস। লা মিজেহ্রাবল? হুঁ, নাদিয়ার খারাপই লাগছে বলতে, কিন্তু ওটাও ছাতার উপন্যাস। আনা কারেনিনা পোড়ো, ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমাকে হুকুম দেয় সে।

এক মাস পর নাদিয়া ফিরে গেলো ব্রেয়ানস্কে। তার ঘরে এসে উঠলো আরেক নাদিয়া। সে-ও রুশ, এবং কী তাজ্জব, সে-ও লাইব্রেরিয়ান। তবে প্রথম নাদিয়া একটু বিষণ্ণ গম্ভীর ছিলো, দ্বিতীয় নাদিয়া ছটফটে। তার সাথেও আমার ভাব হয়ে গেলো (নাদিয়া নামের মেয়েদের সাথে আমার সহজে খাতির হয়ে যায়)। অলিভার টুইস্টের জার্মান ডাবড সংস্করণ দেখছি একদিন গভীর রাতে বসে, নাদিয়াও এসে বসে দেখা শুরু করলো। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর শুনলাম একটা পরিচিত শব্দ, হুঁহ!

এবার মেজাজটা খারাপই হয়ে গেলো। ঘটনা কী? রাশিয়ার সব নাদিয়াই কি লাইব্রেরিয়ান? তারা সবাই কি লাইব্রেরিতে বসে বসে বই পড়ে? দ্বিতীয় নাদিয়ার কথা শুনে মনে হলো ঘটনা সেরকমই। তার মতে, অলিভার টুইস্ট একটা ফালতু উপন্যাস। উপন্যাস লিখতে পারে শুধু রুশরা। তাতে অনেকগুলো চরিত্র থাকে, অনেক ঘটনা থাকে, এক একটা সংলাপ নিয়ে চিন্তা করেই নাকি দিন কাটিয়ে দেয়া যায়। ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট পড়ার হুকুম দিয়ে সে ঘুমোতে চলে যায়, অলিভার টুইস্ট একটা বিষ্ঠা, এই মত রেখে।

পরে আবার জার্মানিতে এসে আরেক রুশ লাইব্রেরিয়ান নাদিয়ার সাথে আলাপ হওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নাদিয়া নামের কোনো রুশ মেয়ের সাথে বই নিয়ে আলাপ করতে যাবো না। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?

বাংলা উপন্যাস নিয়ে কোনো নাদিয়ার সাথেই তেমন আলাপ হয়নি। উপন্যাসের বিস্তৃতি দিয়ে তার মহত্ত্ব বিচার করতে গেলে রুশদের সাথে আমাদের টক্কর না লাগাই মঙ্গল। ক্লাসিক উপন্যাসগুলো দিয়ে মুখ রক্ষা করা গেলেও, এখন যে কলেবরের উপন্যাস আমাদের দেশে লেখা হয়ে চলছে, সেগুলো সম্বল করে আমরা পশ্চিমবঙ্গের সাথেই কি তুলনা করতে পারবো?

উপন্যাস নামে যা বিক্রি হয় আমাদের বইমেলায়, তার একটা বড় অংশ আসলে উপন্যাসিকা। প্রথম পর্বে বলেছিলাম কাগজ নিয়ে। এই কাগজের দাম আমাদের একটা অদ্ভুত কাচদেয়ালে ঘিরে ফেলছে। বইমেলায় বইগুলোর একটা ম্যাজিক দাম থাকে, প্রতি তিন চার বছর পর পর এই ম্যাজিক দামটা বাড়ে। এই সীমাটা টপকে গেলে পাঠক আর ক্রেতা হয়ে উঠতে পারে না, বইটা নেড়েচেড়ে রেখে সে চলে যায়। এই ম্যাজিক দামটা পাঁচ ফর্মার বইয়ের মূল্যের আশেপাশে।

এই আকারের বই বাংলাদেশে জনপ্রিয় করেছেন যারা, প্রকাশনা শিল্পের ওপর তাদের অনেক প্রভাব। তারা প্রচুর নতুন পাঠক যেমন তৈরি করেছেন ও ধরে রেখেছেন, সেইসঙ্গে বাজারে বইয়ের গ্রহণযোগ্য একটি আকৃতিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে কেউ হুট করে একটা মোটাসোটা বই লিখে সুবিধা করতে পারবেন না। নতুন লেখকের বৃহদায়তন বই প্রায় কোনো প্রকাশকই প্রকাশে আগ্রহী হবেন না, যেহেতু ঝুঁকি বেশি, আর পুরনো লেখকরাও এই প্রতিষ্ঠিত কলেবর ছেড়ে দূরে গিয়ে তেমন একটা লেখেন না। দশ ফর্মা কেন লিখবেন, যদি পাঁচ-ছয় ফর্মা লিখেই কাজ হয়? বইয়ের বিবর্তনের ধারায় পাঁচ-ছয় ফর্মা একটা স্থিতিশীল পরিসর। যদি পাঁচ ফর্মার কম লেখা হয়, তাহলে ফন্টের আকার বাড়িয়ে, লাইন স্পেসিং বাড়িয়ে, মার্জিন বাড়িয়ে, প্রয়োজনে দুই পাতা সাদা রেখে একে পাঁচ ফর্মায় তুলে আনা হয়। গত কুড়ি বছরে আমরা এটিকে বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত করে ফেলেছি কি?

যুক্তি আসতে পারে, চাহিদা আছে বলেই হয়তো এমন পরিসরের উপন্যাস বা গল্পসংকলনের সরবরাহ বেশি। রুশরা মাসের পর মাস ধরে গোদা গোদা বই পড়ে বলে বাঙালিকেও সেটা করতে হবে নাকি?

পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালে দেখি, সেখানে বিস্তৃত পরিসরের উপন্যাস লেখার চল বহুদিন ধরেই। সেই উপন্যাসগুলো জনপ্রিয় আর লাভপ্রদও বটে, এমনকি বাংলাদেশেও অনেকে সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেশের অনেক বৃহদায়তন উপন্যাসকে ক্লাসিক জ্ঞান করে পড়েন। পশ্চিমবঙ্গে বৃহদায়তন উপন্যাস প্রকাশের পেছনেও সেখানে কাগজের কম দাম একটা বড় প্রভাবক বলে আমি মনে করি। আমাদের বইদোকানীরা কুলিকামিনের মতো করে ঐ বইগুলো পিঠে মোট বয়ে নিয়ে এনে বিক্রি করেন সারা বছর ধরে। কিন্তু যখন আমাদের বইমেলা হয়, আমাদের প্রকাশক আর লেখকেরা কোনো এক অদ্ভুত কারণে সেই পাঁচ-ছয় ফর্মার লক্ষ্মণরেখায় বন্দী হয়ে লেখেন। ব্যতিক্রম যে নেই, তা বলছি না, কিন্তু সেটা ব্যতিক্রমই।

নিচে কবিতা, গল্প, উপন্যাসিকা, উপন্যাস আর মহোপন্যাসের শব্দসংখ্যার একটা তুলনামূলক লেখ দিলাম, তুলনা করে দেখুন। নন্দিত নরকে আর পদ্মা নদীর মাঝির শব্দসংখ্যা = পৃষ্ঠা সংখ্যা x লাইনসংখ্যা x গড় শব্দসংখ্যা, এই সূত্র ধরে হিসাব করা। বাকি তিনটি একেবারে গুণে বার করা।

ওয়ার অ্যান্ড পিস বেছে নেয়ার কারণ, উপন্যাসের সম্ভাব্য একটি প্রান্তিক আকারের সাথে তুলনা করে দেখতে চেয়েছি। পনেরো হাজার শব্দ আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় পরিসর, এই পরিসরে প্রচুর লেখা প্রকাশিত হয়। যেহেতু অনেকেই কাগজের ঈদ সংখ্যায় লেখেন, ঈদ মৌসুমে তারা এই আকারের একাধিক লেখা লিখে থাকেন এবং একাধিক পত্রিকায় প্রকাশ করেন। এগুলোর অনেকগুলোই পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। আর পশ্চিমবঙ্গে পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত লেখার সংখ্যা বেশি, সেগুলো লম্বা সময় ধরে পাঠকের সামনে থাকে এবং যখন গ্রন্থিত হয়, বেশ বড় আকার নিয়েই হয়। আমাদের দৈনিক পত্রিকার সাপ্তাহিক সাময়িকীতে ধারাবাহিক লেখা প্রকাশিত হয়, কিন্তু সেটি অল্প কয়েকটি পত্রিকায়, এবং অল্প কয়েকটি বইয়ের। লেখককে দীর্ঘ পরিসর নিয়ে লিখতে যদি পাঠক উৎসাহিত করতে না পারেন, তাহলে লেখক বড় উপন্যাস লিখবেনই বা কেন? পদ্মা নদীর মাঝির মতো আরেকটি উপন্যাস রচনা করার শ্রম কে দেবেন, কেনই বা দেবেন?

বড় উপন্যাস আদৌ লেখা জরুরি কেন, এই প্রশ্নটা সামনে আসতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, যে পরিসরটি বইমেলার অর্থনীতি, পত্রিকার কূটনীতি আর লেখক-পাঠকের যোগাযোগের অভাবের সমন্বিত ফল হিসেবে এখন জনপ্রিয় বা মান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, এই পরিসরে একাধিক চরিত্র নিয়ে বড় কোনো ঘটনাকে খুঁটিয়ে দেখা দুরূহ। কিন্তু সেই খুঁটিয়ে দেখার কাজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্য শুধু ঘন্টাখানেক সময় কাটানোর জিনিস নয়, সাহিত্য একটা সমাজের চলার চিহ্নও। যুবক যেমন দেয়ালে নিজের শিশু হাতের ছাপ ফিরে দেখার জন্যে একদিন উদভ্রান্ত হয়ে ছুটে আসে পুরনো বাড়িতে, সমাজকেও তেমনি একটা প্রজন্ম পর পেছনে তাকিয়ে অনেক কিছু খুঁজতে হয়। খুঁজে কিছু পাওয়ার প্রশ্ন পরে আসে, খুঁজতে চাওয়ার প্রবণতাটি প্রতি মুহূর্তে ধরে রাখতে হয়। এক পুরুষ পেরিয়ে গেছে, আমরা বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বৃত্ত লোকটিকে ক্ষমতা থেকে লাথি মেরে সরিয়েছি, কিন্তু পেছনে তাকিয়ে নিজেদের পায়ের ছাপ খোঁজার প্রবণতাটিকে আমাদের সাহিত্যিকেরা নির্মাণ করতে পারেননি বলে আজও অনেক তরুণ জানে না, এরশাদ কত নির্মম ভয়ঙ্কর একটি স্বৈরশাসক ছিলো, কেমন ছিলো তার থাবার নিচে বাংলাদেশ। এই ব্যর্থতার দায় আমাদের সাহিত্যিকদের, তারা সেই সময়টিকে সাহিত্যে ধরে রাখতে পারেননি। পাঁচ-ছয় ফর্মার উপন্যাসে মানুষের জীবনই ধরা মুশকিল, আর সমাজের জীবন তো দূরের কথা।

ডাব্লিউ ডাব্লিউ হান্টার ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিস্ময় প্রকাশ করে গিয়েছিলেন, এত সমৃদ্ধ একটি দেশ, অথচ এর কোনো সমাজবিবরণী নেই। এক একটি পরিবার সেখানে দ্বীপের মতো বাস করে, হিন্দু মুসলিম থেকে দূরে থাকে, ধনী থাকে দরিদ্র থেকে দূরে, অতিথি অন্দরমহলবাসিনীদের কুশল জিজ্ঞাসা করতে পারেন না, অথচ প্রতিটি ধনী বা বিদ্যোৎসাহী পরিবারের
রয়েছে নিজস্ব লিখিত পারিবারিক ইতিহাস। হান্টার পুরোনো খবরের কাগজ, সরকারী দলিল আর পারিবারিক ইতিহাস সংগ্রহ করে অ্যানালস অব রুরাল বেঙ্গল রচনা করেছিলেন, আর বার বার বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন, এ কেমন সমাজ, যে নিজের ইতিহাস লেখে না? আমরা সেই সময় ছেড়ে দূরে চলে এসেছি ঠিকই, কিন্তু বিচ্ছিন্ন দ্বীপই রয়ে গিয়েছি। আমাদের উপন্যাসগুলোও তাই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতোই, একটি বা দু'টি চরিত্র, দুয়েকটি নারী আর দুয়েকটি পুরুষের জোলো রোমান্টিক বৃত্তের ভেতরে পাঁচ থেকে ছয় ফর্মার ভেতরে আমাদের সাহিত্যের দায় নিষ্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। সাহিত্য কি শুধু বিনোদনই দেবে আমাদের, এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ থেকে কি উদ্ধার করবে না?

প্রতিটি বইমেলাতেই আমরা হয়তো একটু একটু করে নিজেদের ইতিহাসের মুখচ্ছবি মুছে আসছি। কাগজের দামটা হয়তো শুধুই অজুহাত।

বই হোক আরো বিস্তৃত, চরিত্রঘন, ঘটনাসঙ্কুল, ইতিহাসগর্ভ। বই হোক আরো সুলভ। অফসেট-হার্ডকাভারের দামী খাঁচা থেকে তার মুক্তি যেমন প্রয়োজন, তেমনই মুক্তি প্রয়োজন একঘেয়েমি থেকে, সমাজ সম্পর্কে নিস্পৃহা থেকে। সময়ের আত্মাকে ধারণ করতে না পারলে সে বই দিয়ে সাজানো বইমেলা আরেকটা বাণিজ্যমেলাই হবে শুধু।


মন্তব্য

স্বাধীন এর ছবি

চলুক

সাফি এর ছবি

অট- নাদিয়ারা কী গল্প, কবিতা না উপন্যাস ছিলো?

স্টয়িক রাসেল এর ছবি

চলুক

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

গুরু গুরু

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

আশফাক আহমেদ এর ছবি

কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

মৃত্যুময় ঈষৎ(অফলাইন) এর ছবি

সাহিত্য একটা সমাজের চলার চিহ্নও।

বই হোক আরো বিস্তৃত, চরিত্রঘন, ঘটনাসঙ্কুল, ইতিহাসগর্ভ। বই হোক আরো সুলভ। অফসেট-হার্ডকাভারের দামী খাঁচা থেকে তার মুক্তি যেমন প্রয়োজন, তেমনই মুক্তি প্রয়োজন একঘেয়েমি থেকে, সমাজ সম্পর্কে নিস্পৃহা থেকে। সময়ের আত্মাকে ধারণ করতে না পারলে সে বই দিয়ে সাজানো বইমেলা আরেকটা বাণিজ্যমেলাই হবে শুধু।

চমৎকার একটা সিরিজ। উত্তম জাঝা!

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

নিটোল এর ছবি

চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

লাবণ্যপ্রভা এর ছবি

চলুক
রুশ দের সাহিত্য সত্যি উঁচু মানের।

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ঠিক আছে! হাততালি

ধূসর জলছবি এর ছবি

চলুক

^_^ এর ছবি

"সময়ের আত্মাকে ধারণ করতে না পারলে সে বই দিয়ে সাজানো বইমেলা আরেকটা বাণিজ্যমেলাই হবে শুধু। " ভাল লাগ্ল।

বোকা মেঘ এর ছবি

চলুক
একদম মনের কথা...

উচ্ছলা এর ছবি

বই হোক আরো বিস্তৃত, চরিত্রঘন, ঘটনাসঙ্কুল, ইতিহাসগর্ভ। বই হোক আরো সুলভ। অফসেট-হার্ডকাভারের দামী খাঁচা থেকে তার মুক্তি যেমন প্রয়োজন, তেমনই মুক্তি প্রয়োজন একঘেয়েমি থেকে, সমাজ সম্পর্কে নিস্পৃহা থেকে।

চলুক

আমিও লক্ষ্য করেছি সেই বাল্যবেলা থেকে যে, স্বাস্থ্যবান-বই পাতলা-বই এর চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি সমৃদ্ধ নানাদিকে, নানা বিচারে এবং সে কারণে সুখপাঠ্যও হাসি

ধূসর জলছবি এর ছবি

আমারতো বই আকারে বিশাল না হলে মন খারাপ হয়ে যায়, তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে ভেবে । পড়ে তৃপ্তি পাই না। অনেক চরিত্র, অনেক ঘটনা না থাকলে বই পড়ে আসলেই আনন্দ কম পাওয়া যায়।

দিগন্ত এর ছবি

কাগজে বাঁধানো বই আরো কতদিন মানুষে পড়বে বলে আপনার মনে হয়? আমার তো ধারণা আরো বছর দশেকের (বড়জোর পনের বছর) মধ্যে ৫০-৫০ অনুপাতে ই-বুক আর কাগজে বাঁধানো বই চলে আসবে বাজারে। ওপেন সোর্স এ বিষয়ে সাহায্যে আসবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

দেখি কী হয়।

রেদওয়ান বাশার এর ছবি

"সাহিত্য একটা সমাজের চলার চিহ্নও।"

দুটা লেখাই দারুণ লাগলো।

"রাশিয়ার সব নাদিয়াই কি লাইব্রেরিয়ান?"
পড়তে গিয়ে মনে প্রশ্ন জাগলো, "সব রাশান মেয়ের নামই কি নাদিয়া, নাতাশা কিংবা আনা?" হাসি

দ্রোহী এর ছবি

সুপারভাইজারুদ্দিনের মেয়ের নামও নাদিয়া। চোখ টিপি

সাবেকা এর ছবি

লেখাটি খুবই ভালো লাগল । রাশিয়ান সাহিত্য সত্যিই অনন্য । কি উপন্যাস আর কি ছোটগল্প ।

রজনী এর ছবি

হিমু,
আপনার লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো। যে উপন্যাস এইভাবে জীবন থেকে ভীষন দূরে, তাকেই সম্ভবত হুমায়ুন আজাদ নাম দিয়েছিলেন 'অপন্যাস'। এরশাদের কথাটাও ভীষন ভাল বলেছেন। একমাত্র শওকত আলীর 'দলিল' উপন্যাস বাদে, আমার কোথাও এরশাদবিরোধী আন্দোলন বা ঐ সময়কালের কথা চোখে পড়েনি। আপনার লেখাটা পড়ে মনে গেলো অনেকদিন আগে কোন একটা পত্রিকায় পড়া লেখা। সম্ভবত সমরেশ মজুমদারের একটা ইন্টারভিউ ছিল। পুরোটা ঠিক ঠিক মনে নেই কিন্তু ভাবার্থ ছিল এই যে, বাংলাদেশের উপন্যাসে জাতীয় জীবনে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ন ঘটনার চিত্রায়ন ভীষন সামান্য। তিনি এও বলেছিলেন যে, হুমায়ুন আজাদ, শামসুল হক, আজিজুল হক বাদে তিনি কাউকে দেখেনন যাদের উপন্যাসে ছাপ আছে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের পরিপ্বার্শের। এই কথাটাও মনে আছে , তিনি বলেছিলেন যে ২১ আগষ্টের মত একটা ভংয়কর গ্রেনেড হামলা ঘটে যায় কিন্তু পরদিনই বাংলাদেশের উপন্যাসের জীবন আর দশটা দিনের মত স্বাভাবিক। এই ঘটনার লেশমাত্র নেই।

আরেকটা কথা বলি। যেটা হয়তো এই মুহুর্তে আপনার এই লেখাটার সাথে সামান্যই প্রাসঙ্গিক। আপনার পহেলা মার্চ ভারত বন্ধের লেখাটা পড়েছি। সমর্থন করেছি, এও মেনেছি যে, হ্যাঁ পরিহার করবো সবকিছু পহেলা মার্চ। কিন্তু গভীরভাবে ভেবে দেখেছি যতদিন না আমরা তৈ্রী করতে সমর্থ হবো মৌলিক কিছু কিম্বা ভালো কিছু উপন্যাস, নাটক কিম্বা টেলিভিশনের সাধারন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ততদিন কতটা নিরবিচ্ছিন্নভাবে আমরা পারবো এই বন্ধ চালু রাখতে। আপনার লেখাটা পড়ে মনে হয়েছিল, আজ আমার মাও পহেলা মার্চ ভারত বন্ধে অংশ নেবে। কিন্তু কি হবে ২ রা মার্চ, কি হবে মার্চের তিন তারিখ। মার্চের দুই তারিখ ঠিকই সে বা তারমত অসংখ্য মধ্যবিত্ত দেখতে বসে যাবে জী বাংলার ‘সূবর্নলতা’। আমার ছোট্ট বোনও অসীম আগ্রহ নিয়ে দেখতে বসে যাবে সৌরভ গাঙ্গুলীর উপস্থাপনায় ‘দাদাগিরি’র ফেলুদাকে নিয়ে কোন পর্ব! আমাদের ভারত বন্ধের বা আগ্রাসন প্রথম পর্ব নিশ্চিতভাবেই পহেলা মার্চ। কিন্তু দ্বিতীয় পর্ব সম্ভবত টেলিভিশনে কাজ করা নির্মাতাদের হাতে। যে নির্মাতারা দেখাতে পারবে প্রতিদিনের টেলিভিশনের নাটকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়া ছেলেমেয়েরা কেবল ফোনে কথাই বলেনা, অসংখ্য প্রেমই করেনা, এই সেই বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ঐ ছেলেমেয়েদের কোন বন্ধু, কোন সহপাঠী কিম্বা সামান্য চেনা মুখ গুলি খেয়ে মরে যায় প্রতিবছর। যতদিন আমরা না পারবো এই ঘটনা তুলে আনতে আমাদের উপন্যাসে বা নাটকে, ততদিন আমাদের মধ্যবিত্ত মায়েরা দেখতেই থাকবে সুবর্নলতা, আমাদের কিশোরীরা দেখতেই থাকবে দাদাগিরি আর পহেলা মার্চ হয়ে যাবে আমাদের মত খুব সামান্য কিছু মানুষের জন্য ভারত বন্ধের দিবস।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ধূসর জলছবি এর ছবি

চলুক

shamim khan এর ছবি

মনের গভীরে রেখাপাত করার মত লেখা। শুভেচ্ছা ।

ভালো মানুষ এর ছবি

আমি একবার আমার ম্যাম এর প্রেমে পড়েছিলাম উনার নাম অ নাদিয়া।।।।।।।।।।এখন খুবি মিসতাই।।।। চোখ টিপি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হাততালি চলুক

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

আমার কাছে 'লা মিজারেবল' বইখানা চরম লাগছে।

একটা বই খুলে মাসখানেক ধরে যদি সেটা না-ই পড়া যায়, কুড়ি পঁচিশটা জটিল চরিত্র যদি তাতে না-ই থাকে, এক এক অধ্যায় শেষ করে যদি রাতে ঘুমানোর আগে সেগুলো নিয়ে একটু চিন্তা না করা যায়, তাহলে ওটা একটা ছাতার উপন্যাস।

পরথম নাদিয়া রুশকন্যার এই একটা কথার সাথে কলিম আমি একমত!
লেখা মজারু হইছে। গড়াগড়ি দিয়া হাসি

মন মাঝি এর ছবি

একমত, আবার হয়তো খানিকটা দ্বিমতও। যে মহৎ উদ্দেশ্যে আপনি ৫ ফর্মার কাঁচের দেয়াল বা লক্ষণরেখা ভেঙ্গে বেঁরিয়ে আসতে চাচ্ছেন তা ঠিকই আছে। কিন্তু ধরুন, সেই কাঁচের দেয়াল বা লক্ষণরেখা ভাঙলো ঠিকই কিন্তু আপনার উদ্দেশ্য সাধিত হলো না - তখন ?

এই আকারের [৫ ফর্মার] বই বাংলাদেশে জনপ্রিয় করেছেন যারা, প্রকাশনা শিল্পের ওপর তাদের অনেক প্রভাব

লক্ষনরেখা ভাঙার পর যদি দেখা যায় এই প্রভাবশালী ধারার জনপ্রিয়তম লেখকদের অন্তঃসারশুন্য মস্তিষ্কবিনাশী জঞ্জালগুলির ইঙ্ক্রেডিবল হাল্ক্‌ সংস্করণে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে, কোন গুণগত পরিবর্তন না করেই এবং কেবল আকারগত বৃদ্ধি ঘটিয়েই কাঁচের দেয়াল ভাঙার সব সুযোগ-সুবিধা তাঁদের পাতেই যাচ্ছে - আল্টিমেট বেনিফিশিয়ারি তা্রাই (অর্থাৎ তাদের ধারা) হচ্ছেন, তখন কি হবে?

আমি কিন্তু এমনটা হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি দেখছি।

এবং আমার মতে, এইরকম একটা সম্ভাবনার চেয়ে অনেক গুলি গাছের প্রাণ রক্ষা বরং অনেক বেশি কাম্য!

আপনি হয়তো সুনীল-সমরেশদের থান ইটের উদাহরন দিবেন। আশা করবেন ওনাদের লোকাল ক্লায়েন্ট বেইসের একটা বড় অংশ হয়তো আপনার কাঙ্ক্ষিত ঘরানার দিকে সুইচ করবে। কিন্তু আমার ধারনা এটা সামান্যই হবে - বরং উল্টোটা হয়ে যাওয়ারও একটা আশঙ্কা থেকে যায় - ওপারের দিকে যদি নাও যায় অন্তত এপারের প্রভাবশালিদের লাভের গুড় খাওয়ার একটা নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়ে যাবে। আর কার কতটুকু লাভ বা মহৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ হবে, সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ রয়েই গেল।

আর ঐ সব থান ইটের সাথে আমাদের বাতাসাগুলির আসলেই কি মৌলিক গুণগত কোন পার্থক্য আছে, আয়তন আর একটু উপরিতলের পালিশ ছাড়া ? আমার অন্তত মনে হয় - নাই। যারা ঐসব বইকে ক্লাসিক জ্ঞান করেন, দেশীয় থান ইট পড়লে তাদের বেশির ভাগ আপনার ভাষায় ঐসব দেশি প্রভাবশালীদের থান ইট-ই পড়বেন বরং।

এর চেয়ে আমাদের বৃক্ষ (কাগজের কাঁচামাল) সম্পদ রক্ষা করাটাই কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ না ? চোখ টিপি

আপনার মতে -

সাহিত্য একটা সমাজের চলার চিহ্নও। বই হোক আরো 'ইতিহাসগর্ভ'। এর মুক্তি প্রয়োজন সমাজ সম্পর্কে নিস্পৃহা থেকে। এটা ধারণ করুক সময়ের আত্নাকে

নাদিয়াদের মতে -

রাতে ঘুমানোর আগে সেগুলো নিয়ে একটু চিন্তা.. করা যায়

আমি একটু যোগ করি -

চরিত্রবাহুল্য আর ঘটনাসঙ্কুলতার পাশাপাশি আমি আশা করি সাহিত্য ধারণ ও প্রকাশ করুক গভীর অনুভূতির রসে জারিত উপলব্ধি, বোধ আর ভিশনের ঘনীভূত নির্যাস।

কেবল পাতার পর পাতা টেনে টেনে লম্বা করা নয়, নয় অপ্রয়োজনীয় অগভীর একমাত্রিক চরিত্রবাহুল্য, বিবরন বা তথ্য ও ইতিহাসের কপি-পেস্ট পাঠ (যেমনঃ সুনীলের প্রথম আলোতে)। তথ্য, চরিত্র বা ঘটনাকে অতিক্রম করে যদি অতিরিক্ত কিছু না পাই, তাহলে কি সরাসরি ইতিহাস বা প্রবন্ধের বই পড়াই বেশি যুক্তিযুক্ত নয়?

এজন্যেই তারাশঙ্করের অনেক হ্রস্বকায় বইও আমার কাছে বিমল করের (?) 'কড়ি দিয়ে কিনলাম', বা মহাশ্বেতা দেবীর 'হাজার চুরাশির মা' সুনীলের দুই খণ্ড 'প্রথম আলো' (এমনকি তার উপন্যাস-সমগ্র), বা আর্থার কোয়েসলারের পিচ্চি কিন্তু তীব্র 'ডার্কনেস এট নুন' অন্য অনেক থান ইটের থেকে অনেক বেশি প্রিয় ও মূল্যবান।

আপনি যে রুশ সাহিত্যের উদাহরণ দিয়ে শুরু করেছেন - তারা অবশ্য আপনার, আমার, নাদিয়াদের চাহিদা একত্রে ধারণ করতে পেরেছে। তারা একাধারে চরিত্রের ঘনঘটা আর ঘটনাসঙ্কুলতায় সুবিশাল, অথচ সেইসাথেই ধারণ করে ইতিহাস ও সময়ের আত্না, মননের খোরাক, গভীরতম অনুভূতি-বোধ ও উপলব্ধির নির্যাস। টলস্টয়, দস্তয়েভ্‌স্কি, মিখাইল শলোখভরা এটা পেরেছেন। কিন্তু তারা সেটা পেরেছেন মনে হয় অংশত তাঁদের সাহিত্যচর্চার সামগ্রিক সংস্কৃতিতে সেই জায়গাটা ছিল বলেই। কিন্তু এই দেশের পাঠসংস্কৃতিতে কি সেই জায়গা আছে? আর আয়তনের দিক থেকে সেরকম জায়গা তৈরি করলে, সেই জায়গাটা কি হুমায়ুন আহমেদের (এমনকি সুনীল-সম্রেশদের) ফালতু মগজশুন্যকারক ফাত্রামি দিয়েই ভর্তি হয়ে যাবে না, রুশদের মেধাবী কন্টেন্টের আদর্শ অনুসরনের বদলে?

****************************************

হিমু এর ছবি

হ্যাঁ, আপনার আশঙ্কা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনাটাও বেশ থান ইঁট সাইজের। কিন্তু আশা করতে ভালো লাগে। নাদিয়া নামটা রুশ নাদিয়েঝদার সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, নাদিয়েঝদা মানেও আশা, আমার এই লেখায় নাদিয়ারা যেমন চরিত্র, আশাও তাই।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

চলুক

নিলয় নন্দী এর ছবি

ভালো লেখা যে কোন আকৃতি-প্রকৃতির হতে পারে। তবে মাঝে মাঝে উপন্যাস নামে যে লেখাগুলো বাজারে চলছে তা দেখে লজ্জিত হই। ইয়ে, মানে...
আগে বইমেলা বললেই 'মহান কিছু' বিক্রীর এক মহামিলন বলে মনে হতো। এখন রাম-শ্যাম-যদু-মধু সবাই লেখক হয়ে গেছে। কিচ্ছু বলার নাই। রেগে টং রেগে টং রেগে টং

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।