২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের দুই দাবিদারের একজন, কৃতী ব্যবসায়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের একটি বিবৃতি দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত [১] হয়েছে। ইউনূস এই বিবৃতিতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁর সন্দেহ, সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তার কর্মসংস্কৃতি হারিয়ে ফেলতে পারে। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিয়ে ইউনূসের উদ্বেগ প্রকাশের পূর্ণ অধিকার রয়েছে, যেহেতু এটি বহুলাংশে তার মস্তিষ্কপ্রসূত, এবং তার সরাসরি তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় প্রায় পুরোটা সময় পরিচালিত হয়েছে। বয়সের কারণে কর্তৃপক্ষীয় হস্তক্ষেপে এবং পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের রায়ে ইউনূস গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন, নইলে হয়তো এখনও তিনিই ব্যবস্থাপনা পরিচালক রয়ে যেতেন।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। কয়েকদিন আগেই "বিজনেস ফর পিস" পুরস্কার পেয়েছেন ট্রান্সকম গ্রুপের মালিক লতিফুর রহমান। তিনি দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারেরও মালিক। দৈনিক প্রথম আলো এই পুরস্কারটিকে ব্যবসায় নোবেলের সমকক্ষ বানানোর জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে। বিজনেস ফর পিস ফাউন্ডেশন গঠিত হয়েছে ২০০৭ সালে [৩], এটি পরিচালিত হয় নরওয়ে থেকে। নরওয়ে থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারও ঘোষিত হয়। উকিলের বাড়ির বিড়ালও যেহেতু উকিল হয়, তাই "নরওয়ে" ও "পুরস্কার" শব্দ দুইটি এক বাক্যের মধ্যে থাকায় প্রথম আলো একে "ব্যবসায় নোবেল" হিসেবে চালিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা বা অর্থনীতিতে লতিফুর রহমানের নোবেলপ্রাপ্তির সম্ভাবনা নেই, কামনা করি তিনি যেন শান্তি বা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মানসপটে গুমরে মরা নোবেলক্ষুধার নিবৃত্তি ঘটান এবং নরওয়ে থেকে পাওয়া যে কোনো টুকিটাকি পুরস্কারকে "অমুক ক্ষেত্রে নোবেল" হিসেবে চালিয়ে দেয়ার বদলেযাউবদলেদাউপনা থেকে মতিউর রহমান ভাইয়াকে উদ্ধার করেন। নরওয়ের জনগণের প্রতিও আহ্বান জানাই, আপনারা বেশি বেশি করে ফাউন্ডেশন স্থাপন করুন, এবং আরো বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্ষেত্রে পুরস্কার দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের বাহ্বাক্ষুধিত অশিক্ষিত মানুষগুলোকে নাকের পরিবর্তে নরুণ দিয়ে তুষ্ট করুন। "সম্পাদনায় নোবেল", "উপসম্পাদকীয় লেখায় নোবেল", "কলাম লেখায় নোবেল" এবং "কলামের ভেতরে বইয়ের বিজ্ঞাপন লেখায় নোবেল" দেয়ার জন্যে অন্তত পক্ষে আরো চারটি নরওয়েজিয় ফাউন্ডেশন গঠন এখন সময়ের দাবি।
বিজনেস ফর পিস ফাউন্ডেশনের পুরস্কার পর্ষদ আলোকিত করে আছেন আমাদের ঘরের নোবেলপতি ড. ইউনূস স্বয়ং, এবং অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ড. মাইকেল স্পেন্স। এই ফাউন্ডেশনের পুরস্কার পর্ষদের সদস্য হওয়ার মানদণ্ডই এটি, শান্তি বা অর্থনীতিতে নোবেল জয় করতে হবে। দুই দুইজন নোবেল জয়ী যখন "সততা"র জন্য লতিফুর রহমানকে এই পুরস্কার গছিয়ে দেন, তখন লতিফুর রহমানের সততাকে চ্যালেঞ্জ করার আর কোনো জো থাকে?
লতিফুর রহমান সৎ, নাকি অসৎ, সেটা নিয়ে আমার আপাতত মাথাব্যথা নেই। তবে প্রথম আলোর ঐ খবরে [২] দু'টি আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার চোখে পড়েছে। এক, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এ উপলক্ষ্যে গান পরিবেশন করেছেন, তুমি কোন কাননের ফুল। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি প্রশ্ন, বিশদ আলোচনার দাবি রাখে বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে। আর দুই, ড. ইউনূসের একটি বক্তব্য সে খবরে প্রকাশিত হয়েছে। খবরটিকে সত্য বলে মেনে নিলে, ইউনূস বলেছেন,
"বিজনেস ফর পিস পুরস্কারপ্রাপ্তিতে লতিফুর রহমানকে অশেষ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এমনিতেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তির কথা বললে প্রথমেই চলে আসে দুর্নীতির প্রসঙ্গটি। তার মধ্যে ব্যবসার কথা এলে লোকজন সন্দেহ করে যে, এ থেকে দুর্নীতির সূত্রপাত। সেখানে একজন ব্যবসায়ী সফল হবেন, সততা ও শান্তির জন্য পুরস্কার পাবেন, সেটা জাতির জন্য গৌরবের ও খুশির খবর। জাতিকে এ গৌরবের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য লতিফুর রহমানকে অভিনন্দন।"
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে, তা জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীও বলেছেন বলে জানিয়েছে প্রথম আলো।
বহির্বিশ্বের কাছে আমরা মুখ দেখাতে পারতাম না, যদি আমাদের একজন ইউনূস আর একজন লতিফুর না থাকতো। তারা কোন কাননের ফুল? কীভাবে তারা বাংলার এই দুর্নীতিসিঞ্চিত মাটিতে গজালেন?
সততার সনদপত্র দিয়ে বেড়ানো ইউনূসকে নিয়ে বিডিনিউজে দেড় বছর আগে একটি খবর [৪] প্রকাশিত হয়েছিলো, যেটি পরবর্তী হট্টগোলের কারণে মানুষের মন থেকে মুছে গেছে প্রায়। এর কৃতিত্বও মিডিয়াকেই দেয়া চলে। সেই খবর অনুযায়ী,
দারিদ্র্য দূর করার জন্য ভর্তুকি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯৯৬ সালে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয় ইউরোপের কয়েকটি দেশ। নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির দেওয়া অর্থ থেকে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণ নামে নিজের অন্য এক প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেন ইউনূস। ঢাকার নরওয়ের দূতাবাস, নরওয়ের দাতাসংস্থা নোরাড এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এ অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকে ফেরত নিতে চেয়েও পারেনি। ১০ কোটি ডলারের মধ্যে সাত কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ ইউনূসের গ্রামীণ কল্যাণ নামের প্রতিষ্ঠানেই থেকে যায়। এরপর গ্রামীণ কল্যাণের কাছে ওই অর্থ ঋণ হিসেবে নেয় গ্রামীণ ব্যাংক।
আমরা যদি ফিরে যাই গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউনূসের বিবৃতির কাছে, সেখানে দেখি তিনি লিখেছেন,
আমি নিজের উদ্যোগে বহু প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছি। আমার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলির নামের সঙ্গে আমি ‘গ্রামীণ’ নাম ব্যবহার করে এসেছি। এই প্রতিষ্ঠানগুলির বেশির ভাগই হলো ‘মুনাফার জন্য নয়’, এমন প্রতিষ্ঠান। আইন অনুসারে এদের কোনো ‘মালিক’ নেই। কোম্পানি আইনের সেকশন ২৮ দিয়ে বেশির ভাগ কোম্পানিগুলি সৃষ্ট। এগুলিতে শেয়ার বিক্রি করার ব্যবস্থা থাকে না (নন স্টক), এগুলি থেকে কেউ মুনাফা পায় না, যেহেতু কারও এতে মালিকানা নেই, এবং এগুলি স্পনসরদের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দ্বারা সীমিত, অর্থাৎ কোম্পানি দায়দেনা শোধ করতে না পারলে স্পনসররা ব্যক্তিগতভাবে তাদের দেয়া গ্যারান্টি পর্যন্ত অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন। কাজেই এমন প্রতিষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা থাকারও প্রশ্ন আসে না। আর কিছু আছে মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান। মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলির মালিক হচ্ছে এক বা একাধিক ‘মুনাফার জন্য নয়’, এমন প্রতিষ্ঠান। এখানেও গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা থাকার কোনো অবকাশ নেই।
দু'টি খবর যদি আমরা মিলিয়ে পড়ি, তাহলে বুঝতে পারি, গ্রামীণ কল্যাণের মালিকানা কোনোভাবেই গ্রামীণ ব্যাঙ্কের হতে পারে না। আর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালিকানা তো আমাদের দেশের দরিদ্র নারীদের। তার অর্থ হচ্ছে, ইউনূস সেই দরিদ্র নারীদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন মালিকানাহীন একটি প্রতিষ্ঠানে, তারপর সেই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে সেই দরিদ্র নারীদের ঘাড়ে ঋণের দায়ও চাপিয়েছেন। অর্থাৎ, দরিদ্র নারীর প্রাপ্য সম্পদকে ইউনূস দরিদ্র নারীর দেনা ও দায়ে পরিণত করেছেন।
এটা কি সততা? এটা কি এথিক্যাল প্র্যাকটিস?
ইউনূস যখন দরিদ্র নারীদের মালিকানাধীন গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সম্পর্কে বিভিন্ন জায়গায়, দেশে ও বিদেশে, বিবৃতি দেন, তিনি দুর্নীতি শব্দটি উচ্চারণ করেন বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বাইরে যে বাংলাদেশ রয়েছে, তার কোলে তিনি অবলীলায় দুর্নীতির ভাবমূর্তি তুলে দেন। ইউনূসের কথা শুনলে মনে হতে পারে, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক আর ট্রান্সকম বাদে গোটা বাংলাদেশ দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন। ইউনূস নিজে কি দুর্নীতিমুক্ত? গরিব মহিলাদের সম্পদকে তিনি গরিব মহিলাদের দেনা বানিয়েই ক্ষান্ত হননি, এ প্রসঙ্গ ধামাচাপা দিতে নোরাডের কর্তাদের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন। সে চিঠিতে [৪] লিখেছিলেন,
১৯৯৮ সালের ১ এপ্রিল লেখা ওই চিঠিতে ইউনূস বলেন, "আপনার সাহায্য দরকার আমার। ... সরকার এবং সরকারের বাইরের মানুষ বিষয়টি জানতে পারলে আমাদের সত্যিই সমস্যা হবে।" নোরাড, ঢাকার নরওয়ে দূতাবাস এবং বাংলাদেশ সরকারের সংশ্ল্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে।
সেই ইউনূস আবার বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে বড়বড় কথা বলেন, সেইসাথে সততার সনদপত্রও দেন একে ওকে।
নিজের বিবৃতিতে ড. ইউনূস অভিমানভরে বলেছেন,
এই তদন্ত কমিশন গঠন করে আমরা একটা রেকর্ড স্থাপন করলাম। নোবেল পুরস্কারের ১১০ বছরের ইতিহাসে মোট ২০টি নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এশিয়ার একমাত্র নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর তদন্ত কমিশন বসিয়ে। আমাদের ইতিহাসে এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ইউনূস হয়তো বিস্মৃত হয়েছেন, ২০১০ সালে খোদ নরওয়ে সরকারই নোরাডকে দিয়ে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে তহবিল স্থানান্তর বিষয়ে তদন্ত করিয়েছিলো। তখন কি ইউনূস নরওয়ে সরকারের কাছে এই নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তদন্ত করা নিয়ে কোনো অভিমানজরজর অভিযোগ ঠুকেছিলেন? কোনো পত্রিকায় বিবৃতি পাঠিয়ে নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতি নরওয়ে সরকারের এই নজিরবিহীন তদন্তের মাধ্যমে স্থাপিত রেকর্ড নিয়ে কিছু বলেছিলেন? বলেননি সম্ভবত। বাংলাদেশ তদন্ত করলে মানসম্মান নষ্ট হয়ে যায়, আর নরওয়ে তদন্ত করলে কিছু হয় না?
পৃথিবীতে আর কোনো শান্তিতে নোবেলজয়ী কি গরিব মহিলাদের চেহারা দেখিয়ে চেয়ে আনা টাকা অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করে সেই টাকাকে গরিব মহিলাদের দেনাদায়ে পরিণত করেছেন? যদি না করে থাকেন, জনাব ইউনূস নিজেই একটি রেকর্ড স্থাপন করে বসে আছেন কিন্তু। এই রেকর্ডের জন্যে তাকে সাধুবাদ দিতে পারছি না।
লতিফুর রহমান যে মিডিয়াগোষ্ঠীর মালিক, সে মিডিয়াগোষ্টী ইউনূসের পয়গম্বরীকরণ সম্পন্ন করতে গিয়ে উঠতে বসতে একই কথা পুনরাবৃত্ত করছে, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খারাপ। আর মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর হুমায়ূন আহমেদ সেই মিডিয়াগোষ্ঠীর কাগজে কলম ধরে লিখছেন, ইউনূস একাই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। যদি ইউনূস দরিদ্র নারীদের সম্পদকে তাদের দেনায় পরিণত করেন এবং সেই কুকীর্তি ধামাচাপা দেয়ার জন্যে দাতাদের কাছে চিঠিও লিখে থাকেন, আর তার পরও যদি বহির্বিশ্বে তিনি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেন, তাহলে বহির্বিশ্বের বিবেচনাবোধ সম্পর্কে খুব একটা ভরসা পাই না।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেছেন,
প্রফেসর ইউনূস সারা পৃথিবীর মাঝে একজন অত্যন্ত সম্মানী মানুষ। তিনি শুধু যে ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তা নয়, কিছুদিন আগে তাকে স্টিভ জবস, বিল গেটস কিংবা গুগল বা ফেসবুকের প্রবর্তকদের মতো সমান কাতারের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আমি তাকে অসম্ভব পছন্দ করি (আশির দশকেই আমি একটা লেখায় তাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছিলাম) কাজেই তাঁর সম্পর্কে আমার লেখায় যুক্তিতর্ক খুঁজে লাভ নেই! কিন্তু প্রফেসর রেহমান সোবহান তাঁর লেখায় লিখেছিলেন এই মানুষটি সারা পৃথিবীর অল্প কয়েকজন মানুষের ভেতর একজন, যিনি যেকোনো সময় পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে টেলিফোন তুলে কথা বলার অধিকার রাখেন, কাজেই বাংলাদেশের উচিত হবে এই অসাধারণ সুযোগটি দেশের মঙ্গলের জন্য গ্রহণ করা।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের কথা শুনলে মনে হয়, ইউনূস বাংলাদেশের বাইরের একজন মানুষ, যাকে নিরন্তর স্তব করে বাংলাদেশের মানুষ বিদেশী রাষ্ট্রনায়কদের কাছে টেলিফোন করিয়ে কৃপা প্রার্থনা করবে। বাংলাদেশের মানুষ কি পৃথিবীর যে কোনো রাষ্ট্রনায়কের কাছে আবদারের জন্য লালায়িত? আর ইউনূস নিজের গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে কবে কোন রাষ্ট্রনায়কের কাছে টেলিফোন করে কী সুবিধা আদায় করেছেন বাংলাদেশের জন্য? আমরা তো দেখি তিনি নিজের তহবিল স্থানান্তরের কথা ধামাচাপা দেয়ার অনুরোধ করে চিঠি লিখতেই ব্যস্ত। আর জাফর ইকবালের লেখায় আমরা যুক্তিতর্ক খুঁজবো না তো কি আমিনীর লেখায় খুঁজবো? রাজনীতি নিয়ে ভাবতে বসে সে লেখায় যুক্তিতর্ক না থাকলে সেই লেখার আদর্শ ব্যবহার হতে পারে মুড়ির ঠোঙ্গা বানানোতে।
ইউনূসের পয়গম্বরীকরণে যারা ব্যস্ত, তারা একটু যেন ব্যাখ্যা করেন, ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, যার মালিকানা লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মহিলাদের হাতে, সেই গ্রামীণ ব্যাঙ্কে দরিদ্র মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব কেমন করে নিশ্চিত করা হয়। নামকাওয়াস্তে কয়েকজন পরিচালক তাদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হয় বলে শুনেছি, কিন্তু সেই পরিচালকেরা ব্যাঙ্কিং সম্পর্কে কতটুকু বোঝেন, বা পরিচালনা পর্ষদে বসে এই ধরনের তহবিল স্থানান্তর গোছের সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণের জন্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা তাদের রয়েছে কি না, সেটা আমরা জানি না। এ ব্যাপারে তাদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় কি না, তা-ও জানি না। এ ব্যাপারে কি কেউ আমাকে আলোকিত করতে পারেন?
মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে অনুরোধ, যে ব্যক্তিটি যে কোনো সময় পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়কদের ফোন মেরে বসতে পারেন, তাঁর সাথে দেখা হলে তিনি যেন এই গরিব, দুর্নীতিগ্রস্ত, বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি সঙ্কটে ভোগা দেশকে কর দেয়ার অনুরোধ করেন। একজন নোবেলজয়ী মানুষ নিজের দেশকে নানা অজুহাতে কর দেয়া থেকে বিরত থাকলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে না, আমি নিশ্চিত। কালের কণ্ঠের এক খবরে [৬] বলছে,
ইউনূসের ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে করমুক্ত আয় হিসেবে প্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ৫৪ কোটি ৫৩ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৫ টাকা। ইউনূস বিদেশ থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ অর্থ আয় করার দাবি করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদি জমা (এফডিআর) হিসেবে তা রেখেছেন। কিন্তু এনবিআর 'বিদেশে উদ্ভূত আয় কর অব্যাহতি যোগ্য নয়' যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবেদনে বলছে, 'ড. ইউনূস যে এসআরওর উল্লেখ করে বিদেশে উদ্ভূত আয়ের ওপর কর অব্যাহতি নিয়েছেন তা আইনানুগ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। মূলত বাংলাদেশি ওয়েজ আর্নারদের আয়কে করমুক্ত করার জন্যই ওই এসআরও জারি করা হয়। তিনি কোনোক্রমেই একজন ওয়েজ আর্নার নন। তাঁর বিদেশে উদ্ভূত আয় বাংলাদেশে উদ্ভূত আয় হিসেবেই গণ্য হবে। যদি তা না হয়, তবে সব রপ্তানিকারকের আয় কর অব্যাহতিযোগ্য হতো। কারণ রপ্তানিকারকের আয়ও বিদেশে উদ্ভূত হয় এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে আসে।'
ইউনূস প্রকৃতপক্ষে কোন কাননের ফুল, আর কোন কেতাবি নন্দন কাননের ফুল হিসেবে তাকে চিত্রিত করলে বাংলাদেশে বিরাজনৈতিকীকৃত সুশীল সমাজের গায়ে চুলকে করা ঘায়ে মলম লাগাতে সুবিধা হয়, সেটা আমরা জানি। ইউনূসকে সামনে রেখে এর আগেও একবার আখের গোছাতে মাঠে নেমেছিলেন যারা, তারা আবার এই লোকটাকে সামনে ঠেলতে চাইছেন। ওনাকে লতিফুর রহমানের মতো শান্তিতে ব্যবসা করতে দিন, সেই ব্যবসা সামাজিক হোক বা না হোক।
সংযোজন:
যারা ইউনূসের তহবিল স্থানান্তর অধ্যায়টি ইতিমধ্যে বিস্মৃত হয়েছেন বা ভুলে থেকে স্বস্তি পেতে চান, তাদের বোঝার সুবিধার্থে শুভাশীষ দাশের "প্রফেসর ইউনূস, গ্রামীণ ও সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র" পোস্টটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সেখানে পরিস্থিতির সসূত্র বর্ণনা রয়েছে।
তথ্যসূত্র:
[১] ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিবৃতি - গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ: আমার শঙ্কা, প্রথম আলো, ৩১.০৫.২০১২
[২] সততা ও মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখবে এই পুরস্কার, প্রথম আলো, ৩১.০৫.২০১২
[৪] দরিদ্রদের 'ইউনূসফাঁদ', বিডিনিউজ২৪, ০১.১২.২০১০
[৫] সাদাসিধে কথা: রাজনীতি নিয়ে আমার ভাবনা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রথম আলো, ২৬.০৫.২০১২
মন্তব্য
ওনাকে লতিফুর রহমানের মতো শান্তিতে ব্যবসা করতে দিন, সেই ব্যবসা সামাজিক হোক বা না হোক।
শান্তিতে ব্য়াবসার জন্য়ই না এই পুরস্কার দেওয়া হল!
আপনি আবার আপনার ভাঙ্গা ল্যাপটপটা নিয়ে বসছেন?
আপনার কাছ থেকে আরো চুলচেরা বিশ্লেষণ আশা করেছিলাম, হিমু ভাই। বাজারে প্রচলিত অভিযোগগুলিকেই আপনি তুলে ধরলেন মাত্র! আপনি বারবার বলেছেন, গরীব মহিলাদের চেহারা দেখিয়ে আনা সম্পদ কৌশলে তাদের দায়-দেনায় পরিণত করা হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর বহুল আলোচিত 'গরীবের রক্তচোষা' থিউরিকেই সমর্থন করে আসলে! গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণে ফান্ড ট্রান্সফার হয়েছিল সত্য, কিন্তু ঐ টাকাই যে গ্রামীণ ব্যাংক আবার ঋণ হিসাবে গ্রহণ করেছিল, তার নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে? অনেকেই একে এমনকি 'ফান্ড এমবেযলমেন্ট' বলে প্রচার করেছে, কিন্তু বিজনেস ওয়ার্ল্ডে সিস্টার কনসার্নে ফান্ড ট্রান্সফার খুব অলৌকিক ঘটনা নয়। তবে মারাত্মক ভুল হয়েছে, ফান্ড গ্রহণের চুক্তিনামায় এই প্রভিশনটি রেখে দেয়া উচিত ছিল। যাহোক, যেই প্রতিষ্ঠানের ফান্ড নিয়ে এত কথা, তারা বলেছে বটে কাজটি সঠিক হয়নি, কিন্তু তাই বলে এর ভিতরে ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্রও খুঁজে পাননি এবং বাংলাদেশ সরকারের স্টান্ডের সাথেও তারা একমত নন। আর সবচেয়ে বড় কথা, ইউনুস সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক তদন্তের ফলাফল বা রায় কি আমরা পেয়ে গেছি?
গ্রামীণ ব্যাংকের চড়া সুদের একটা কারণ হল, তারা ঋণগ্রহীতাকে ট্রেনিং দিয়ে থাকে। পৃথিবীর যেকোন থিয়োরির মত ইউনুসের থিয়োরিরও টনকে টন সমালোচনা হয়েছে এবং তা হয়েছে তার কথিত বন্ধু দেশগুলিতেই। ইউনুস দারিদ্র্য বিমোচনে সফল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করাকেও অযৌক্তিক মনে হয় না! কিন্তু তিনি কিছু একটা করেছেন, এটা তো সত্য! তিনি সমাজের সেই ভালনারেবল গ্রুপকে লোন দেয়ার কথা বলেছেন, যাদেরকে কনভেনশনাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা লোন দেয়ার যোগ্য মনে করে না, অথচ যাদেরই আবার লোনের সবচেয়ে প্রয়োজন। এরই সুযোগ নিত মানি লেন্ডাররা, যারা দুইশ/তিনশ পারসেন্ট রেটে লোন দিত যে শুধু তাই নয়, একেবারে নিঃস্ব করে ছাড়ত। জোবরা গ্রামের ভালনারেবল গ্রুপকে ইউনুস লোন দিয়ে প্রমাণ করলেন তাদের লোন দেয়া যায়। ইউনুসের আইডিয়া মৌলিক নয়, কিন্তু তার কাজটা মৌলিক (মানে বাস্তবে প্রমাণ করা)। তার কাজে মানুষের দারিদ্র্য দূর হওয়ার চেষ্টা রয়েছে; আর দারিদ্র্যের সঙ্গে শান্তির যে কি সম্পর্ক, তার প্রমাণ যুদ্ধ পীড়িত পূর্ব আফ্রিকা জুড়েই! অথচ ইউনুসকে যেভাবে বারবার ব্যবসায়ী নোবেল লরিয়েট বলা হয়েছে, তাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল।
শান্তিতে বা দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য নোবেল পেয়েছেন বলেই ইউনুস দারিদ্র্য দূর করে ফেলবেন চিরতরে তা কিন্তু নয়। দেখুন প্যালেস্টাইন শান্তি চুক্তির জন্য প্রায় দুদশক আগে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেয়া হয়েছিল। এখনো সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইউনুসের পদ্ধতির হাজারো ব্যর্থতা রয়েছে; তবু এটি তো সত্য, এটি একটি পদক্ষেপ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে, ছোট্র করে হলেও!
হিমু ভাই, আমার উপরের আলোচনার মানে এই নয় যে, আমি আপনার লেখার বিরোধী! বরং আপনি যেভাবে যুক্তির বানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে ঘায়েল করেন, তা আমি মুগ্ধতা নিয়ে পাঠ করি। এই লেখাতে সেই হিমু ভাইসুলভ যুক্তির বড্ড অভাব পেয়েছি, বরং তা যেন হয়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী-সুলভ যুক্তির ছায়া! আপনি প্রথম আলোকে ইউনুস/লতিফুর স্তাবক হিসাবে নিন্দা করলেন, আর কালের কণ্ঠ (যার গায়ে গু সাংবাদিকতার লেবেল পরিয়ে দিয়েছে অনেকেই) থেকে উদ্ধৃতি দিলেন?
আপনার কাছ থেকে আবারো ফাটাফাটি যুক্তিপূর্ন কোন লেখা আশা করছি, হিমু ভাই! কারণ আমি আপনার লেখার মুগ্ধ পাঠক।
এই "বাজারে প্রচলিত অভিযোগের" উত্তর আপনি যা দিলেন, সেটা হচ্ছে, এটা "প্রধানমন্ত্রীর থিয়োরি", কাজেই সাথে সাথে পরিত্যাজ্য, নাকি?
"নিশ্চিত প্রমাণ" বলতে আপনি ঠিক কী ধরনের সূত্র গ্রহণ করবেন, আমি সেটা জানতে ইচ্ছুক। আমি বলিওনি, এটা কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু "বিজনেস ওয়ার্ল্ডে" "সিস্টার কনসার্নের" মালিকানা কীরকম, তা নিয়েই কথা বলেছি, এবং ইউনূসের কথার সূত্র ধরেই দেখিয়েছি, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মালিক দরিদ্র মহিলারা, কিন্তু গ্রামীণ কল্যাণের মালিকানা তাদের নয়। আপনার পকেট থেকে টাকা নিয়ে আমি আবদুল্লাহ আল মামুনের পকেটে ঢোকালে দুজনের নামই মামুন এই যুক্তিতে একে অপরের সিস্টার কনসার্ন হয়ে যায় না।
গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সুদের হার নিয়ে তো কিছু বলিনি। ইউনূস "একটা কিছু" করেছেন বলে যেমন প্রশংসিত, তেমনই তিনি "আরেকটা কিছু" করেছে বলে সেটাও দেখালাম। নাকি "একটা কিছু" করলে "আরেকটা কিছু" নিয়ে কথা বলা যাবে না?
ইউনূস কি ব্যবসায়ী নন? বেলা শেষে তিনি একজন ব্যবসায়ী। নোবেল পেয়েছেন বলে কি ব্যবসায়ী পরিচয় গা থেকে উনি ধুয়ে ফেলে দিয়েছেন নাকি? তার নোবেল পাওয়া নিয়ে হাসিনা বা তার ল্যাংবোট মন্ত্রীদের দুঃখ থাকতে পারে, আমার নাই। হেনরি কিসিঞ্জারও শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলো, সেই তুলনায় ইউনূস তো খুবই ডিজার্ভিং ক্যান্ডিডেট, উনি তো "একটা কিছু" করেছেন।
ইউনূসের কর না দেয়া নিয়ে আপনি বিডিনিউজ বা প্রথম আলো বা দৈনিক হাটিকুমরুলের খবরের লিঙ্ক আমাকে দিন, আমি কালের কণ্ঠের রেফারেন্স বদলে দেবো। কালের কণ্ঠের রিপোর্টের প্রতিবাদ যদি ইউনূস করে থাকেন, সেটাও দিতে পারেন। আর যদি সেরকম কিছু না থাকে, কষ্টেসৃষ্টে সহ্য করে নিন।
আপনার মন্তব্য পড়ে মনে হয়েছে, ইউনূসের সমালোচনা দেখলেই সেখানে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নয়তো কোনো পাতিমন্ত্রীর বক্তব্যের গন্ধ শুঁকে বের করে ফেলার চেষ্টায় আছেন। আমি যতোই "ফাটাফাটি" যুক্তি দিই না কেন, লাভ নাই। পীরভক্তি এক বিরাট সমস্যা।
আমার কোন পীরভক্তি নেই, হিমু ভাই! লতিফুরের পুরুষ্কারকে নোবেলসম প্রমানের জন্য যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে তল্পিবাহকবৃন্দ, তার বিরুদ্ধে আপনার কাছ থেকে কড়া জবাবই কামনা করছিলাম; আর কড়া জবাব দিয়েছেনও আপনি। যেমন, নিজের লাইনটি তো দুর্দান্ত লেগেছেঃ
অথবা,
তাছাড়া, ইউরোপ/আমেরিকা যেভাবে ইউনুসকে বাংলাদেশের ডেভলেপমেন্ট ফান্ডের সাথে শর্তাধীন করে, তাও খুব অরুচিকর বা দৃষ্টিকটু মনে হয়! অনেক সময় মনে হয়, বিদেশিদের দিয়ে নিজের সাফাই গাওয়ানার কাজটি ইউনুস বেশ উপভোগই করেন! তাছাড়া, ইউনুসের দারিদ্র্য বিতাড়ন তত্ত্বের কার্যকারিতা নিয়ে হাজারো সমালোচনা রয়েছে! এমনকি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে অনেক ঋণগ্রহীতা আত্মহত্যা করেছে!
তবে আপনার লেখায় আমি যেটা অনুপস্থিত দেখতে পেয়েছি, তা হলো, ইউনুসের বিরুদ্ধে উচ্চারিত অভিযোগগুলোর উপর নতুন ও ভিন্ন মাত্রার আলোকক্ষেপন! ইউনুসের দুর্নীতির অকাট্য প্রমান! আরো বিশদ বিশ্লেষন! এমন সব যুক্তি আপনি দেবেন, যাকে বধ করা সম্ভব হবে না! আপনার লেখার মুগ্ধ পাঠক হিসেবে সেটাই চেয়েছিলাম!
আমার অত পড়াশোনা নেই, কিন্তু অনেকেই আছেন, যাদের হাতে হয়ত আপনার কথিত ও বহুল প্রচারিত অভিযোগগুলোর উত্তর প্রস্তুত রয়েছে!
আশা করি, আমাকে ভুল বুঝবেন না!
যেসব যুক্তি আমি দিলাম, সেগুলিকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে বধ করার জন্য আরো বড় যুক্তি খুঁজলে তো হবে না। বড় যুক্তি দিলে আপনি আরো বড় যুক্তি, আরো আলোকক্ষেপণ চাইবেন।
এটা ভীষণ তর্কসাপেক্ষ। এই যুক্তিতে বলা যায় গ্রাম্য মহাজনরাও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধেই লড়েছেন, আরো আরো অতি ছোট্ট করে হলেও। কিন্তু উল্টোভাবে এটাও বলা যায় যে দেনার সাথে দারিদ্র্যের সম্পর্ক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু এটা যে একটা ব্যবসা এতে কোনো সন্দেহ নেই। কপর্দকশূন্য দেনাগ্রস্তের কাছ থেকেও শুষে দেনা আদায় না করলে বুঝতাম যে "একটা কিছু" করেছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে এই ব্যবসা আদৌ টিকতো বলেও মনে হয় না।
প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটা কথা বলি। গ্রাম্য মহাজনদের আমরা কোন যুক্তিতে গালি দেই? তারা সুদ নেয় বলে? উচ্চহারে সুদ নেয় বলে? ঋণের টাকা ফেরত না পেলে জায়গা-সম্পত্তি কেড়ে নেয় বলে? এই কাজগুলোর কোনটা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বা মাইক্রোক্রেডিটওয়ালারা করে না? গ্রামের ঐ প্রায় নিঃসম্বল মানুষগুলোকে ঐ মহাজন ছাড়া আর কে ঋণ দিয়ে দরকারের সময় সাহায্য করে? গ্রাম্য মহাজন কোন বিবেচনায় মহৎ মানুষ নয়। তাহলে শহুরে মহাজনদেরকেও একইভাবে ব্যবসায়ী হিসেবে গণ্য না করে তাদেরকে অনন্য-অসাধারণ বানানোর চেষ্টা করি কেন? আর গ্রাম্য মহাজনকে বাড়তি গালিটা দেই কেন?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এটা ঠিক যে, মাইক্রোক্রেডিটওয়ালাদের কিছু নির্মমতার খবর মাঝে মাঝে মিডিয়াতে আসে এবং তা মিথ্যেও নয়। কিন্তু তাই বলে, সেই নির্মমতার স্কেল কখনোই মানিলেন্ডারদের সমান হতে পারে না! মানি লেন্ডারদের উদ্দেশ্যই থাকে শোষন। আর মাইক্রোক্রেডিটওয়ালারা কাকে লোন দেয় দেখেন? মেয়েদের! তাদের প্রশিক্ষিত করা হয়। গ্রুপ ফর্মেশন করা হয়। গ্রুপ সচেতনতা গড়ে তোলা হয় লোন পরিশোধের ব্যাপারে! আর রিসার্চ বলে, মেয়েদের দায়িত্ববোধ আর পরিশোধ ইচ্ছা ছেলেদের থেকে বেশী। এইসব বিভিন্ন কারনে, মাইক্রোক্রেডিটওয়ালাদের রিকভারি রেট অনেক বেশী, নব্বই শতাংশের উপরে। আর মানি লেন্ডারদের? প্রায় শূন্য, যেহেতু রিকভারি তাদের উদ্দেশ্য নয়। অন্যদিকে, মাইক্রোক্রেডিট ইন্সটিটিউশন রিকভারি করতেই হয়, অন্তত বিদেশী ফান্ড আকৃষ্ট আর সাফল্যগাঁথা প্রচারের জন্য!
তাই কিছু আউটলাইয়ার উদাহরনের ভিত্তিতে যে উপসংহার আপনি টানলেন, তা কতোটা যুক্তিযুক্ত হল, পান্ডবদা?
মহাজনদের উদ্দেশ্যই থাকে শোষণ - এই উপসংহারে পৌঁছানোর ভিত্তি কী?
মহাজনদের রিকভারী রেট প্রায় শূন্য - এই তথ্যেরই বা ভিত্তি কী?
শিক্ষিত মাইক্রোক্রেডিটওয়ালারা নানা রকমের ঢং-ঢাং না করলে ডোনাররা তাদের ফান্ড দিতে যাবে কেন? অশিক্ষিত মহাজনদের সাথে আসলেই তাদের কোন তুলনা হয় না। কারণ, মহাজনেরা দারিদ্রকে জিইয়ে রাখার তেলেসমাতি কায়দাগুলো জানে না। এইজন্য মহাজনদের কায়দাগুলো বেশি নির্মম বলে মনে হয়।
আসলে দুই পক্ষই তো এখানে ব্যবসা করতে বসেছে। সে ব্যবসার মূলধন হচ্ছে দারিদ্র। মহাজনরা বোকা ছিল তাই তারা খাতককে লাঠিয়াল দিয়ে পেটাতো। মাইক্রোক্রেডিটওয়ালারা বোকা নয়, তাই তারা মেয়েদের টার্গেট করেছে - যাদের ধমক দিলেই কাজ হয়। গ্রামসুদ্ধ সবার টিনের চাল বা নাকের নোলক খুলে নিতে হয় না, একটা ঘটনাতে গোটা জেলা সিধা হয়ে যায়।
হাজার বছরের মহাজনী ব্যবসা যেমন এদেশ থেকে দারিদ্র দূর করতে পারেনি (সেটা তার উদ্দেশ্যও নয়), তেমন আগামী হাজার বছরেও মাইক্রোক্রেডিটওয়ালারা এদেশ থেকে দারিদ্র দূর করতে পারবে না (মুখে যাই বলুক - সেটা তাদের উদ্দেশ্য নয় এবং গত তিন দশকের অধিক সময়ে সেটা প্রমাণিত হয়েছে)। এই ব্যবসায় ট্রিক আর স্ট্র্যাটেজিতে মার খেয়ে মহাজনেরা পিছিয়ে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই লেখাটার একটা ইংরেজি অনুবাদ করা যায়না হিমু ভাই? ইউনুস আমাদের অনেক বিদেশি বন্ধুদের কাছে সততার একটা আইকন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিকভাবে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রেও তাকে নিয়ে কথা বলতে শুনি এরকম, " একটা লোক যে কিনা দরিদ্রদের অথৈ সাগর থেকে বাঁচানোর জন্য নোয়ার নৌকার মত ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা নিয়ে এসেছেন।" নবুয়তপ্রাপ্ত সদাহাস্য এই ব্যক্তির যে মানবীয় ত্রুটিও থাকতে পারে তাও অনেক দেশি/বিদেশি মূর্খ মানতে চায়না। '' আরে মিয়া, কেউ কিছু করতে চাইলে খালি তার নামে বদনাম করবা, নিজে কিছু একটা কইরা দেখাও তাইলে" এরকম কথা প্রায়ই শুনি অনেকের কাছে যাদের ইউনুস নিয়ে একটু নেতিবাচক কথা বলি। সেজন্য এরকম লেখাগুলোর একটা ইংরেজি অনুবাদ থাকাটা জরুরী মনে হয়, ইংরেজি সূত্র থাকলে আরো ভাল। অশেষ ধন্যবাদ।
হ্যাঁ, বাংলাদেশে চোদ্দো কোটি নিরানব্বুই লক্ষ নিরানব্বুই হাজার নয়শত নিরানব্বুইজন ফকিন্নির পুত, আর তাদের সবাইকে ভাসিয়ে রেখেছে একাকী রইস আদমী ইউনূস। দেশের এই মডেলটা নিয়ে অর্গাজমের আনন্দ পায় অনেক মানসফকিন্নি। কিন্তু তাদের জন্যে এই লেখা ইংরেজিতে অনুবাদের খাটনি ঠিক পোষাবে না।
যতদূর মনে পড়ে বিজিএমইএ একবার বাংলাদেশের গার্মেন্ট সেক্টরের উন্নতির লক্ষ্যে ইউনুস সাহেবকে দূত মানছিলো, লবিং করার জন্য বিদেশ পাঠাইছিলো। তাতে কতটুকু উপকার হয়েছিলো এই জাতির বা গার্মেন্টস সেক্টরের এই তথ্য কারো জানা আছে?
উনি যখন তখন যে কোনো রাষ্ট্রনায়ককে ফোন করতে পারে, এই যোগ্যতায় আমাদের ফায়দা কী? এখন পর্যন্ত উনার এই যোগ্যতা আমাদের কোনো কাজে এসেছে বলে জানা নেই, অকাজই হয়েছে ঢের।
উনি সব আব্দার অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছেন বিদেশে... দেশের ভাবমূর্তির কথা কি তখন তার মাথায় কাজ করছিলো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ইউনুস কূটনৈতিক দিক থেকে দেশের জন্য ক্ষতিকর, অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশের সার্বিক অর্থনীতির সাম্যাবস্থা নষ্ট করার জন্যও ক্ষতিকর। সে একজন ভণ্ড (অসৎ) ব্যবসায়ী, শিল্পপতি- আর কিছু নয়।
প্রিয় জাফর ইকবালের ইউনুস সম্পর্কে অবস্থান আমাকে পীড়িত করে। জাফর ইকবালের উচিৎ আরো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে ইউনুসকে/তার কার্যাবলিকে পর্যবেক্ষণ করা।
পোস্টটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
_____________________
Give Her Freedom!
এই ধরনের প্রমাণ থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ড: ইউনুসের পক্ষে এত কথা বলে, তার কারণ কি? ইউনুস তাদেরকে ঠিক কি ধরনের সুবিধা দিতে পারবে বা দিয়েছে?
নোবেল পেলেই কেউ প্রশ্নাতীত হয়ে যায়না, এই কথাটাও অনেকে বুঝতে চায়না। নোবেল যারা পায় এবং দেয়, সবাই তো দিনেশেষে মানুষ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
অপুষ্ট শিশুদের পুষ্টি দেয় শক্তি দই। সেই শক্তি দই হল ফ্রান্সের ডানোন কোম্পানি। পিপাসার্তকে পানি দেয় ফ্রান্সের ভেওলিয়া, গ্রামীণ ফোন নরওয়ের টেলিনর। ইউরোপিয় ইউনিয়নে এদের শক্তি কেমন বুঝ। পার্টনারকে খারাপ বলে কেমতে? অশ্রু মুছতে কাঁধ এগিয়ে দেয় হিলারি আপা, পক্ষে কথা বলবে না তো কি বিপক্ষে কথা বলবে নাকি?
ডঃ ইউনূস নোবেল পেয়েছেন এই খবর পাওয়ার পরে খুশী এবং গর্বিত দুইই হয়েছিলাম। ময়দানে নেমে কিছু মানুষকে গাছে তুলে মই নিয়া পিছুটান দেওয়া বিরক্ত হয়েছিলাম। আর এখন বিরক্ত হই নোবেল পেয়েছে বলে ডঃ ইউনূস সমালোচনার উর্ধ্বে এই মনোভাব দেখে। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক দারিদ্র্য দূরীকরণে কতখানি সফল সেই নিয়ে গ্রামীণ খালি দাবীই করে যায় অথচ খোদ গ্রামীণের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত কোন তথ্যভিত্তিক উপস্থাপনা দেখলাম না।
আসল কথা হইল নোবেল আর নবু্যয়ত শুনতে এক হলেও শব্দ ভিন্ন। এইটা বুঝতে হবে।
বাংলাদেশে ভিওলিয়ার পানিবাণিজ্য নিয়ে একটা পোস্টের লিঙ্ক দিয়ে গেলাম।
বিশ্বব্যাঙ্ক যেমন আবুলের নামে স্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নিতে বলেছে, নোরাড কিন্তু ইউনূসের নামে সেরকম ব্যবস্থা নিতে বলেনি। কারণটা পরিষ্কার, আবুলের সাথে বিশ্বব্যাঙ্কের পার্টনারশিপে কোনো ব্যবসা নাই, নরওয়ের প্রতিষ্ঠান টেলিনর বাংলাদেশে ব্যবসা করতে এসেছিলোই ইউনূসের হাত ধরে। ইউনূসকে চটালে তাদের ব্যবসার পথ প্রতিকূলই হবে। ইউনূস নোবেল পাওয়ার মাসখানেকের মধ্যে গ্রামীণ ফোনের দরিদ্রমহিলাসম্বলিত লোগোটা পাল্টে টেলিনরের লোগো চালু করা হয় তড়িঘড়ি করে। ইউনূস নরওয়েতে গিয়ে লোকদেখানো অভিযোগ করেছিলেন, বলেছিলেন টেলিনরের সাথে কথা ছিলো তারা আরো শেয়ার দরিদ্র নারী ওরফে গ্রামীণ টেলিকমের (নাকি গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স?) হাতে তুলে দেবে কিন্তু তারা দেয়নি, ঐ বিষয়ে কিন্তু আর কোনো মুলামুলির কথা আমরা শুনিনি। ইউনূস নিজের গদি বহাল রাখতে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে গিয়েছেন, কিন্তু দরিদ্র নারীদের কথা ভেবে টেলিনরের বিরুদ্ধে নরওয়ে বা বাংলাদেশ বা দুনিয়ার কোনো আদালতেই কিছু করেননি। ইউনূসের জন্য দুনিয়ার অনেক রাজাগজা ফ্রেন্ডস অব গ্রামীণ নামে সংগঠনের তাঁবুর নিচে মাথা ঢুকিয়ে বসে আছেন, এদের কাউকে শুনিনি বাংলাদেশে সিডর বা আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন দরিদ্র মানুষের জন্য একটা টুঁ শব্দ করতে। এনাদের সহমর্মিতা শুধু সেইসব গরিবের জন্য যারা গ্রামীণের কাছে ঋণ নেয়। যে দরিদ্র গ্রামীণের খাতক নয়, তাদের জন্য এদের কিছু যায় আসে না।
ইউনূস দশ কোটি ডলার দরিদ্র মহিলাদের মালিকানা থেকে সরানোর মতো অবস্থানে ছিলেন, তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন। আরো বড় পরিসরে যদি টাকা সরানোর ক্ষমতা তিনি পান, সরাবেন না তার নিশ্চয়তা কী?
ভাই আসলে কি দিছে? না আমাদের Media র ইউনুস আবেদ দের Glorify করার Desperate Attempt ?
কিছু মানুষ বিখ্যাত ব্যাক্তিদের নিয়ে দুইলাইন সমালোচনা করে একধরনের অমানুষিক বিমলান্দ লাভ করে। এই সচলায়তনে আপনার অসংখ্য পোষ্টই কারো না কারো সমালোচনা করে। নিজে যখন এতই কাবিল, আমাদেরকে একটু দেখান, জার্মানীতে থেকে এখন পর্যন্ত দেশের জন্য কোন বালটা ছিড়ছেন। আপনার দৌড় সচলায়তন আর মতিকন্ঠ পর্যন্তই। এখানে সুশীলের পাঠ নিবেন আর ঐখানে একটা দলের দালালি করে রিপোর্ট বানাবেন। চালিয়ে যান আপনি।
কিছু ফকিন্নির পুত তার পীরের সমালোচনা হতে দেখলেই প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে যায়। এই চুতমারানিরা নিজেরা পীরের গু আচার বানায় খায় দেখে ভাবে বাকি দুনিয়ারও সেইটাই কর্তব্য। শান্ত হন, লেখাপড়া করেন, কিছু শেখেন, নিজের বুদ্ধি প্রয়োগ করে দুনিয়াটাকে দেখতে চেষ্টা করেন।
আপনাকে ছেঁড়া বালের হিসাব দাখিল করে সমালোচনার লাইসেন্স নিতে হবে আমাকে? আপনি কোন নবাবের হোগা দিয়ে বের হইছেন ভাইডি? আর মতিকণ্ঠ পর্যন্ত দৌড়াইলাম ক্যাম্নে? কোন দলের দালালি করে কী রিপোর্ট বানাবো বলে গেলেন না যে?
ইউনুসের সমালোচনা করতে গেলে কি আমাকে বাল ছিঁড়ে একটা বড় আঁটি প্রথমে বানিয়ে নিতে হবে? সেই আঁটির দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা প্যাকিং ফ্যাক্টর কি আপনি ঠিক করে দিবেন? বলে যান না ফকিন্নির পুত ভাইয়া, কত্তো বড় বালের আঁটি বানালে ইউনূস নিয়ে দুটি কথা হাত ফসকে লিখে ফেলার যোগ্যতা হবে মানুষের? বলেন না বলেন না।
একটা লোককে দূর থেকে দেখা যাচ্ছে তার গায়ে কোন গন্ধ নেই। আপনি হচ্ছেন সেই লোক, যে তার বগলে নাক ঢুকায়ে বলবেন তার গায়ে অনেক গন্ধ। আপনার মুখ যে বস্তিবাসিদের থেকেও খারাপ জানলে নিশ্চয়ই এখানে মন্তব্য করতে আসতাম না। অনেককেই দেখেছি বিদেশে বেশীদিন থাকলে তার ব্যালান্স চলে যায়, আবোল তাবোল বকে।
উপরে দেখতে পাচ্ছি আপনিই জিজ্ঞাসা করছেন, দেশের জন্য কী বাল ছিঁড়েছি। তারপর যখন মৃদু ঝাড়ি দিলাম, আমার মুখ বস্তিবাসীদের চেয়ে খারাপ হয়ে গেলো। আর আপনি মাটি ফেড়ে বের হইছেন সাধুপুরুষ।
একটা লোককে আপনি দূর থেকে দেখে খুশি, আমি কাছ থেকে দেখে হতাশ। আমি সেটা নিয়ে একশোবার কথা বলবো, হাজারবার লিখবো। আমার যুক্তি পছন্দ না হলে পাল্টা যুক্তি দিয়ে যাবেন। সেইটা করার জন্য যে বুদ্ধি লাগে, সেটা আপনার নাই, সেজন্য আসছেন ধমক দিতে। আপনার মতো ফকিন্নিগুলিরে নিয়ে এইটাই সমস্যা, না পারে যুক্তি দিতে, না পারে চিন্তা করতে, পারে খালি ঘেউ ঘেউ করতে আর পীরের গুয়ের আচার চামচ চেটে খেতে।
আপনার যুক্তির পেছনে যে তথ্যগুলো দিয়েছেন সেগুলোর অকাট্য প্রমান আপনার কাছে আছে কী, নাকি সবই আপনার উর্বর মস্তিকের কল্পনাপ্রসূত ?
তথ্যসূত্র অংশে ছয়টা সূত্র দেয়া আছে। একটু কষ্ট করে সেগুলো পড়ে দেখেন। আমার তো মনে হচ্ছে, আপনি পোস্ট ঠিকমতো না পড়েই দৌড়ায় আসছেন আমার ছেঁড়া বালের হিসাব নিতে।
সংযোজন: এই পোস্টে ইউনূসের তহবিল স্থানান্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন, সূত্রসহ। পড়ে দেখুন। যদি মনে করেন এতে করে আপনার নাক ইউনূসের বগলে ঢুকে যাচ্ছে, তাহলে দূর থেকে বসে তাকে বন্দনা করুন। আমাকে ধমকাতে আসলে পাল্টা ধমক খাবেন।
ফয়সাল , একটা কথা বলেন ত ভাই Suddenly সব Right wing র লকজন ইউনুসের Follower হয়ে গেলেন কি করে?WAR CRIME Issue টা বহু লোককে চিনিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আপনি আপনার গুরু ইউনুস মিয়া কে উনার এই
Issue তে Position টা clear করতে বলবেন।
পত্রিকার রিপোর্টই আপনার অকাট্য তথ্যপ্রমান। আর কয়েকটা রিপোর্টের বিপরীতে যে প্রতিবাদলিপি এসেছে, সেইগুলো উল্লেখ করলেন না?
এগুলো একজন সুস্হ ব্লগারের ভাষা? নিজেকে এইরকম সুপিরিয়র আর অন্যকে ইনফিরিয়র ভাবতে ভাবতে তো পাগল হয়ে যাবার খুব বেশি বাকী নেই।
আপানার মানষিক অবস্হা আন্দাজ করতে পারছি। আপনার সাথে এখানে আর কোন যুক্তিতর্ক করতে আসছি না।
চুকচুকচুক, বাল ছেঁড়ার হিসাব নিতে এসে পাল্টা গালি খেয়ে এত গোস্বা করলে ক্যামনে হবে ভাইয়া? আপনি গালি দিবেন, আমি সেই গালি খেয়ে কেঁদে গড়াগড়ি খেয়ে নিজেকে আপনার চোখে সুস্থ ব্লগার প্রমাণের জন্য বেয়াকুল হয়ে যাবো, এমন কষ্টকল্পনা ভরসা করে আপনি বাল ছেঁড়ার হিসাব চাইতে বসেছিলেন? আপনার মতো ফকিন্নিরা পোস্ট না পড়ে এসে চোখ লাল করে ধমক দিয়ে আশা করবেন "সুস্থ ব্লগার"-এর রেসপন্স? আনফেয়ার না ব্যাপারটা?
পত্রিকার রিপোর্টের বিপরীতে যে প্রতিবাদলিপি এসেছে, সেটার লিঙ্ক আপনি কষ্ট করে দিয়ে যান না কেন? আপনার পাল্টা যুক্তি তো সেগুলো দিয়েই শুরু হতে পারতো। আপনি সেই কষ্টটুকুও করতে রাজি না। কারণ আপনার মনে হয়েছে বাল ছেঁড়ার হিসাব চাওয়াটাই বেশি সহজ আর কার্যকর। হয়তো আপনি দুনিয়াই মাপেন ছেঁড়া বাল দিয়ে।
তর্ক করতে চাইলে, আপনি স্বাগতম। আমি ধৈর্য ধরে আপনার যুক্তির বিপরীতে যুক্তি দেবো, দিতে না পারলে আপনার যুক্তি মেনে নেবো। কিন্তু যদি যুক্তি না দেন, তথ্য না দেন, তথ্যসূত্র না দেন, ফকিন্নির পুতের মতো আসেন বাল ছেঁড়ার হিসাব চাইতে, ইউ উইল বি ট্রিটেড হার্শলি। সুস্থ ব্লগার উইল গো অন আ হাইক।
আমি অপেক্ষা করছি আপনার যুক্তি বা তথ্যসূত্রের জন্য।
বাল তো ভাই আপনিই প্রথম ছিড়লেন, এখন কাঁদেন কেন? পত্রিকার রিপোর্টের বিপরীতে প্রতিবাদলিপির লিঙ্ক উল্লেখ করুন তাহলেই তো হয়। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কতজন নারীর ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে সেই হিসেবেটাও পারলে একটু যোগাড় করেন না।
সবকিছু মানুষ মুখে তুলে খাওয়ায় দিবে? যাকে পীরভক্তি করেন তার জন্য লড়াইটাও আরেকজন এসে করে দিবে? নিজে প্রতিবাদলিপির রেফারেন্স যে দিবেন তাও না, কারণ বেলাশেষে ড: ইউনুস তো তার কোন উপকারে আসবেনা আপনার তাই না? আপনি হইতেসেন স্বার্থপর মানুষ, নিজের ভাল না হইলে দুই পাতা পড়াশুনা করতেও আপনার তেল বাইরায়া যায়!
পারবেন তো খালি অন্ধ বিশ্বাসের উপর ভর করে গ্যাঞ্জাম করতে। পরে দাবড়ানি খাইলে 'ধুর কথা বলার পরিবেশই নাই!!!' এতই যখন আপনি নন-বস্তি পোলা তাইলে 'বাল' কথাটা আপনেরে কে শিখাইল?
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
পরিবেশ অনেকক্ষণ ধরেই গরম| আসেন আমরা "বালের উপর চাপ কমাই" কর্মসূচিতে দলে দলে যোগদান করি| চাপ কমানো হয়ে গেলে যুক্তির উপরে চাপ বাড়াই, তাতে শারীরিক অসুবিধে কমবে কিন্তু মনের জোর বাড়বে| মস্তিষ্কের জং লেগে থাকা অংশগুলোও এই ফাকে পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে| তাতে সুবিধে আপনারই| কষ্ট করে অন্যের বাল ছেড়ার হিসেব রাখতে হবেনা, এবং অন্যকেও নিজের বাল ছেড়ার হিসেব দিতে হবেনা| বাল বালের জায়গাতেই থাকবে। আপনার জায়গার পরিবর্তন হবে|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
মূল পোষ্ট ভাল লেগেছে।
পাঠক হিসেবে মনে হলো বস্তিবাসীরা,নিম্নআয়ের মানুষরা তুচ্ছার্থে ব্যবহার হলো।ভাল লাগলো না শব্দচয়ন।
ধন্যবাদ।
এই ছবিটাই প্রকৃত ইউনুস:
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
একটা মন্তব্য দেখে মনে হ'লো হিমু লিখেছেন, প্রফেসর ইউনুসের কাছাকাছি কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার। আমরা কি আরেকটু বিশদভাবে জানতে পারি কাছাকাছি জানা প্রসঙ্গে?
না, ইউনূসের কাছাকাছি কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, এমনটা আমি বলিনি। বলেছি, একটা লোককে কাছ থেকে দেখে হতাশ হওয়ার কথা। এখানে কাছ থেকে দেখা মানে ইউনূসের কোলে বসে ইউনূসকে দেখা নয়, তার কাজ আর কথাকে বিশ্লেষণ করে দেখা। যে পাঠক এই প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন, তিনি আমার নাক ইউনূসের বগলে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। আপনি কি সেসম্পর্কেও বিশদ জানতে আগ্রহী?
প্রসঙ্গ,অবতারনা, বিশদ কাইজ্যা সবই দেখা যাচ্ছে, পড়া যাচ্ছে। ঃ) আমি মন্তব্য পড়ে ভেবেছিলাম আপনি প্রফেসর ইউনূসের কাছাকাছি (কোলে কিংবা চেয়ারে বসে) কাজ করেছেন, তাই আগ্রহ জন্মেছিলো।
অফটপিক, আপনার ঝাকানাকার অসমাপ্ত অংশ আর নেভারেস্ট এর পরের এপিসোডগুলি আবার আসছে কবে?
ঝাকানাকার অসমাপ্ত অংশ শেষ করবো কবে জানি না। পর্বতারোহণ নিয়ে আবার কারো কোনো আঁশটে ক্লেইম আমার চোখে পড়লে তার ওপর খোঁজখবর নিয়ে নেভারেস্টের পরের এপিসোড লিখবো।
ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে নোরাডের ভাবনায় পরিবর্তন।
দুর্দান্ত লেখা।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন