ছিলাম কত আয়েশ করে আরামসে
এক ঘায়ে সব ঘুচিয়ে দিলো আরাম সে
ফাঁসতে হলো তার জিলিপির চক্করে
নইলে বিভুঁই জঙ্গলে এই পাথর দিয়ে কুড়াল গড়ে মস্ত বড় শক্ত এমন বৃক্ষ কাটি, ভাবছো সে কি শখ করে?
স্বর্গে ছিলাম ঝুটঝামেলা বাদ দিয়ে
ফলটা শুধু পাড়তে হতো হাত দিয়ে
মূলটা শুধু খুঁড়তে হতো ভুঁই ফেঁড়ে
এমন সুখের জায়গা ছেড়ে য়্যাম্নে আমায় পটিয়ে এনে বিদঘুটে জঙ্গলের মাঝে কুড়াল দিয়ে কাঠ কাটানোর তুই কে রে?
সকল কথা এখন নাহয় কই খুলে
কুড়ালখানা নামিয়ে রেখে বই খুলে
সেদিন ছিলো স্বর্গে চিরবসন্ত
ঈভের গায়ে রঙিন পাতার বসন তো
মিষ্টি হাওয়ায় ভাসছে পাখির কূজন গো
আমার কানে মুখ রেখে আর আমার কাঁধে হাত রেখে আর আমার গায়ে হেলান দিয়ে ফিসফিসিয়ে ঈভ বলে কী, সুজন গো,
আর এখানে ভাল্লাগে না, পালাই চল
ঐ পৃথিবী, ঐখানে সব চালাই চল
স্বর্গে শুধু নিষেধ বিধি লাখ কোটি
তারচেয়ে চল বাজিয়ে দেখি ভাগ্যটি
ঐ পৃথিবী, সব আমাদের মুঠোয় রে
এইখানে ক্যান থাকবো বাঁধা সুতোয় রে
চল ওখানে নিয়ম কানুন তুই আর মুই
নতুন করে লিখবো গিয়ে আমরা দুই
হাঁপিয়ে গেছি, বুকে ধরে না দম রে,
চল না সোনা যাই পালিয়ে ঐ যে দূরের নীল পৃথিবী, চারটি ঋতুর সাত সায়রের তেরো নদীর তেপান্তরের মাঠের পারে যাই পালিয়ে আদম রে!
দিব্যি ছিলাম খোশ মেজাজে, হয় তো তাই
চুপটি আমি, ঈভ একেলা কয় কথাই
বিকেল সেদিন ঢালছিলো রোদ স্বর্ণালি
রামধনুতে পেখম খোলা বর্ণালি
গাছের পাতায় হাসছিলো রোদ ঝলমলে
ঝিলের জলে ভাসছিলো ফুল টলমলে
ঈভের কথায় নিষিদ্ধ কোন সুর ছিলো
হাওয়ায় সে কোন ঘর পালাবার বাঁধন ছেঁড়ার শেকল খোলার নিয়ম ভাঙার ফিসফিসে গান মন্ত্র হয়ে ঝাপটে ডানা উড়ছিলো
যতই বলি, স্বর্গ ছেড়ে যাই যদি
কী করবো ধর ঐ পৃথিবী, ঐখানে ফলমূল কোনোটা নাই যদি?
কী খাবো আর কই ঘুমাবো তুই আর মুই?
কীসের নিচে গুঁজবো মাথা আমরা দুই?
নতুন খিদে নতুন তিয়াস পায় যদি
নতুন নিয়ম লিখতে গিয়ে নতুন নতুন সমস্যাতে নিত্য ফেঁসে আমরা দু'জন পুরোনো লোক হাঙ্গামাতে হঠাৎ টেঁসে যায় যদি?
স্বর্গে সময় থমকে আছে, তুই আর মুই
চিরযুবা রইবো টিকে আমরা দুই
ঐ পৃথিবী, চারটি ঋতুর চার ডানা
ঝাপটে সময় চালাচ্ছে তার কারখানা
ঐ পৃথিবী, ঐখানে সব হয় বুড়ো
সুর বুড়ো আর তাল বুড়ো আর লয় বুড়ো
স্বর্গে সবাই জোয়ান, কেউই নয় বুড়ো
এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে চারটি ঋতুর সাত সায়রের তেরো নদীর তেপান্তরে আমরা দু'জন নতুন নিয়ম লিখতে গিয়ে হবোই হবো নির্ঘাত নিশ্চয় বুড়ো!
ঈভ, পাজি সে, আমার বুকে মুখ ঘষে
(চাল চালে খুব বিটকেলে আর সূক্ষ্ম সে)
ফিসফিসিয়ে ভোলায় আমায় কানকথায়
আসল কথা এড়িয়ে গিয়ে আনকথায়
নিষেধ বিধি হাজার মেনে রই জোয়ান
তফাত তাতে কী, বুড়ো আর হই জোয়ান?
মন দিয়ে শোন, একটা কথা কই জোয়ান
একটা কথা বলবো তোকে, রাখবি মনে, লাগবে কাজে, ঐ পৃথিবীর সাত সায়রের তেরো নদীর তেপান্তরে আমরা যখন বুড়িয়ে গিয়ে আগের মতো এমনটি আর নই জোয়ান!
কী কথা, সে শুধাই যখন, ঈভ হাসে
সন্ধ্যা ঘনায়, স্বর্গে তারার দীপ ভাসে
হাওয়ায় জ্বলা জোনাক বলে সঙ্কেতে
হিসাব মেলে সর্বদা কি অঙ্কেতে?
হাস্নুহেনার গন্ধ বলে, ভয় কি রে?
স্বর্গে শুধু একঘেয়েমির ভূতটা এসে ঝাপটে ডানা কানের কাছে গুনগুনিয়ে যায় বলে ঐ আদম রে, এই ঈভটা এসব কয় কী রে?
হঠাৎ বুঝি, খুব পুরোনো স্বর্গ রে
চলছে ধুঁকে তার কাঠামো নড়বড়ে
তার ভরসা কেবল আমার বিশ্বাসে
দিচ্ছে আমায় কেবল তারই হিস্যা সে
হাওয়ায় রোদে জল জ্যোছনায় ফলমূলে
কিন্তু রাখে লুকিয়ে সে তার ছল মূলে
প্রতিটি দিন একই শুরু, এক অন্ত
কাটতো তখন কাটছে যেমন এখন তো
নেই নতুনের চিহ্ন, কোনো চমক নাই
মেঘ আছে, নাই বজ্রপাতের ধমক নাই
সূর্য আছে, চাঁদ আছে, তা-ও গ্রহণ নাই
চকমকি আর বৃক্ষ আছে, দহন নাই
হাওয়ার ছোঁয়ায় পুলক আছে ঘূর্ণি নাই
শীতের ভোরে ঝুলকুয়াশার উড়নি নাই
কাটবে বছর যদি "নাই"য়ের গীত শুনাই
ঈভের কথাই ঠিক, আমাদের খুব পুরোনো স্বর্গে শুধু ভান আছে আর মুখোশ আছে, কিন্তু নতুন নাই, অজানা নাই, অচেনা নাই, এখানে আমার জন্য কিচ্ছু নাই!
ঈভের হাতে হাত রেখে কই, চল কাটি
যাই পৃথিবী, গোছাই তল্পিতল্পাটি
কিন্তু হঠাৎ আকাশ চিরে বিষস্বরে
হুহুঙ্কারে হাজির স্বয়ং ঈশ্বরে!
আদম, বাছা, হচ্ছে কীসব দুষ্টুমি?
দিব্যি ছিলে স্বর্গে ভীষণ খুশ তুমি
কান দিও না ঈভের ওসব ফিসফাসে
সুখ সকলই স্বর্গে, আর এই বিশ্বাসে,
আদম তুমি পা বাড়ালে ঐ পানে
থাকতে হবে জীবন বাকি ঐখানে
রইবে না আর যুবা, হবে বৃদ্ধ রে
কী লাভ বলো ফালতু এসব জিদ ধরে?
স্বর্গে থাকো, স্বর্গে খেলো, স্বর্গেতে
কাটাও সময় তোমরা দুজন ঘর পেতে।
ঈভ ছোটে আর আমিও ছুটি প্রাণপণে
খিড়কি খোলা পাছদেয়ালের ডানকোণে
পেরিয়ে গেলে আমরা দুজন মুক্ত রে
শ্বাস নেবো ঐ নীল পৃথিবীর বুক ভরে
স্বর্গ তোমায় বিদায় জানাই দুইজনই
নিচ্ছি মোরা নতুন করে ভুঁইযোনি
দোর পেরোনোর সময় বজ্রনির্ঘোষে
ঈশ্বরের শ্বাস শুনি, বেশ দীর্ঘ সে
আমায় একা স্বর্গে ফেলে যাস তোরা
জানিস না কি করলি সর্বনাশ তোরা
করলি আমায় এমন বড় হতাশ তুই!
আগল ঠেলে মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখি, একলা বুড়ো হাতটি গালে ঠেকিয়ে কাঁদে অঝোর ধারে, ফিসফিসিয়ে সঙ্গে বলে, তথাস্তুই!
স্বর্গ থেকে এই পৃথিবী দূর অতি
ঈভ জানে না, তাই হলো এই দুর্গতি
দুজন ছিলাম এক অপরের হাত ধরে
হাওয়ার তোড়ে তার কি আছে সাধ্য রে
ফসকে বাঁধন দুজন গেলাম দুইদিকে
এদিক পানে আমি, আর ঈভ উইদিকে
আকাশ চিরে দুজন নামি ভিন দেশে
অচিন দেশে ঈভ, আমি অচিন দেশে
ভাগ্যে সুখের বরাদ্দখান কম বলে
আছড়ে পড়ি সাগরতীরের জঙ্গলে
ঈভ কোথা কোন মেরুর দেশ কি মরুর দেশ
কোথায় আছে হতচ্ছাড়ি নিরুদ্দেশ
গাছ কেটে তাই নৌকা বানাই তার খোঁজে
পাত্তা পেলে অ্যায়সা থাপড় মারবো যে
চুল ধরে তার ঠেঙিয়ে বেদম তার পরে
শুনতে হবে সেই কথা তার ঘাড় ধরে
কোন কথাটা শুনলে পরে এইখানে
সাতটি সায়র তেরো নদী যেইখানে
হাওয়ার হাতে পাথর পাহাড় ক্ষয় গুঁড়ো
চারটি ঋতুর চাকায় চড়ে হয় বুড়ো
লাগবে কাজে আমরা যখন হই জোয়ান
কিংবা যখন ঘুরলে বছর নই জোয়ান
আমরা দুজন, যখন একা, এই ভুঁয়ে
রইবো একে অন্যজনের হাত ছুঁয়ে
গ্রীষ্ম দুপুর, সন্ধ্যা শরত, হিম রাতে
বর্ষা আকাশ মেঘের চাদর নিংড়াতে
সাতটি সায়র, তেরো নদীর এই পারে
ভাবছি ঈভের কথা, কেবল সে-ই পারে
ঐ কথাটা বলতে আমায়, তাই আগে
পেরিয়ে সায়র ঈভের কাছে যাই আগে
মারো জোয়ান হেঁইয়ো সামাল হেঁইয়ো রে
ঈভের দেখা পাওয়ার আগে কে জেনেসিস কী জেনেসিস কোন জেনেসিস? নেই জেনেসিস নেই ওরে!
মন্তব্য
বাহ বাহ বাহ
facebook
চমৎকার
বিশাল লাইনগুলার ছন্দ চমৎকার। কিন্তু নিচের লাইনগুলোর ছন্দ একটু কেমন কেমন লেগেছে। একই শব্দের সাথে অন্ত্যমিল আমার ঠিক ভাল লাগে না।
লাগবে কাজে আমরা যখন হই জোয়ান
কিংবা যখন ঘুরলে বছর নই জোয়ান
আকাশ চিরে দুজন নামি ভিন দেশে
অচিন দেশে ঈভ, আমি অচিন দেশে
নিষেধ বিধি হাজার মেনে রই জোয়ান
তফাত তাতে কী, বুড়ো আর হই জোয়ান?
মন দিয়ে শোন, একটা কথা কই জোয়ান
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
বাহ বাহ বাহ
আধেক পড়ে দম নিলাম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
জটিল!!
ডাকঘর | ছবিঘর
বাহ বেশ।
এখানে কি "হঠাৎ টেঁসে যাই যদি?" হবে?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
দারুণ!
কোনো কোন লাইন (কখনও দৈর্ঘ্যের জন্যে, কখনও এমনি) দুইবার পড়তে হয়েছে তাল ঠিক করে নেওয়ার জন্য।
অপূর্ব!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
পুরাই রস-মালাই!!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
দারুণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বাহ- বাহ-
কড়িকাঠুরে
ভয়ঙ্কর ছড়া!!
দেব মুখার্জি
[db.dev.m@gmail.com]
--------------------------------------------------------------
দেব এর উঠোন॥ফেইসবুক॥গুগলপ্লাস
দারুন
সচলায়তনে আমি নতুন, তাই আপনার অনেক লেখাই আগে পড়া হয় নাই। এখন ধীরে ধীরে পড়ে নিচ্ছি। আপনার অন্যসব লেখা থেকে এ লেখাটি ব্যতিক্রম তো অবশ্যই। তবে, আমার তেমন ভালো লাগেনি। সেটা শুধু আপনার অন্য লেখার ধার, ষ্ট্যাইল ও গভীরতা এর সাথে কমপেয়ার করে। অবশ্য যার মোটামুটি সব লেখাই ভালো লাগে, সেখানে গুটিকয়েক লেখা একটু কম ভালো বা খারাপ লাগতেই পারে।
অথবা, আমি হয়তো লেখাটা ঠিকমতো বুঝতে পারি নাই।
শুভকামনা।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
এতো বওড়ও ও ও ও ও ও ও!!!
হিমু ভাই আবৃতি করে শুনান
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
আমাকে ভাত রান্না করে দিয়ে যান।
গ্রীষ্ম দুপুর, সন্ধ্যা শরত, হিম রাতে
বর্ষা আকাশ মেঘের চাদর নিংড়াতে
#শুধু দারুন বললে এড়িয়ে যাওয়া হবে, এক কথায় চমৎকার ও নূতন কিছু, ধরনটাই দারুন!
#ভাল থাকুন
দাঁড়ান, একটু দম নেই ! বাপ্রে বাপ পড়তে পড়তে এক্কেবারে হাঁপিয়ে উঠেছি । আপনার কোন ছড়া এর আগে পড়েছি বলে মনে পড়ে না । এক কথায় জটিলস্ব জটিল
রয়েসয়েতে তোমার ছড়া পড়েছিলাম। তখনি ভাবছিলাম বলি মাঝে মাঝে ছড়া লিখতে। দারুন হয়েছে আজকের ছড়া। দীর্ঘ লাইন গুলো চমৎকার।
চমৎকার!
বিস্ময়করভাবে অতিদীর্ঘ কিন্তু ছন্দোবদ্ধ!!!
_____________________
Give Her Freedom!
দারুণ কনসেপ্ট। কয়েকটা জায়গায় ছন্দ ধরতে পারিনি অবশ্য।
কয়েকদিন ধরেই শুধু এই পোস্টে উঁকি দিচ্ছি। সাইজ দেখে সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। আজ পড়েই ফেললাম। দুই এক যায়গায় হোঁচট যে খাইনি তা নয়; তবে সেটা হয়তো আমার পড়তে না পারার দোষেই। সবমিলিয়ে বেশ চমৎকার। আমি শুধু জানতে চাই যে এইটা লিখতে কয়দিন লেগেছে হিম্ভাইয়ের?
ইডা কিতা!!!!!!!!!!
এক কথায় অসাধারণ । বিষয়বস্তুর নির্বাচনের পেছনের গল্পটা জানতে পারলে ভালো লাগতো ।
দীর্ঘ ছড়া লিখতে এবং সেটাকে কন্ট্রোলে রাখতে কব্জির জোর লাগে। সেই জোরটা হিমুর কব্জিতে আছে।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
অনেক ধন্যবাদ রিটন ভাই! আপনি ছড়ার প্রশংসা করলে একটা আলাদা আনন্দ পাই।
নতুন মন্তব্য করুন