তারেক মাসুদের "রানওয়ে" সিনেমাটি দেখলাম মাত্র।
"মাটির ময়না" দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সম্ভবত একই রকম ভালো লাগার প্রত্যাশা নিয়ে দেখতে বসেছিলাম, তাই হতাশ হতে হলো।
সিনেমা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে সিনেমার কাহিনী বলে দেয়াটা হয়রানির সমপর্যায়ে পড়ে। আমি ধরে নিচ্ছি এই পোস্ট পাঠক রানওয়ে সিনেমাটি দেখেননি, তাই কাহিনী নিয়ে যত কম বলা যায়, দর্শকের আসনে বসে পাঠকের রসভঙ্গ তত কম হবে। আর অনিচ্ছাসত্ত্বেও বারবার মাটির ময়নার প্রসঙ্গ উঠে আসবে, সেজন্যে আগাম ক্ষমাপ্রার্থী। আমার কাছে সিনেমা দুটি খোলা বইয়ের রেক্টো আর ভের্সোর মতো, একটির দিকে চোখ রাখতে গিয়ে আরেকটি চোখের সামনে ভেসে থাকছে।
মাটির ময়না আর রানওয়ে, দুটি সিনেমার গল্পই পরস্পর সাদৃশ্যবহুল। ধর্মীয় কট্টরপন্থার প্রতি ঝুঁকে পড়া কোনো একটি প্রধান চরিত্রের মোহভঙ্গ এই দুটি সিনেমার মূল উপজীব্য, বাকি সবকিছুই এই ঘটনাটিকে কাঠামো যোগায়, আর সিনেমাকারের চেষ্টা থাকে সেই কাঠামোর মধ্যে অনুচ্চস্বরে আরো কিছু গল্প বলার। মাটির ময়নার কাজী সাহেব আর রানওয়ের রুহুলের সাদৃশ্য উভয় সিনেমার দর্শককে স্মরণ করিয়ে দেয়, সময় পাল্টেছে, কিন্তু সংস্কার পাল্টায়নি। কিন্তু এই স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাঝে দর্শকের জন্যে মৃদু পীড়াও থাকে, কারণ রানওয়ে মাটির ময়নার মতো মসৃণ নয়। উভয় চলচ্চিত্রের সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাথরিন মাসুদ, কিন্তু দর্শক উপলব্ধি করবেন, রানওয়ের সম্পাদনায় কিছু অযত্ন রয়ে গেছে। সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন মিশুক মুনীর, ভালো লাগেনি তাঁর কাজ। মাটির ময়নায় আলোকসম্পাত ও দৃশ্যসজ্জা (কম্পোজিশন) শুধু চমৎকারই ছিলো না, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক ছিলো। রানওয়েতে এর অনুপস্থিতি আমাকে হতাশ করেছে। মিশুক মুনীর টিভি সাংবাদিকতার সাথে আমৃত্যু জড়িত ছিলেন বলেই হয়তো টিভি সাংবাদিকের চোখে সিনেমাটিকে ধারণ করেছেন। কয়েকটি অপূর্ব শট রয়েছে রানওয়েতে, কিন্তু সিনেমার একটা বড় অংশের সাথে সুবিচার হয়নি বলে মনে হয়েছে। ক্যামেরার সরণ-বিচরণ অনেক সীমিত ছিলো, যার ফলে কিছু দৃশ্য একঘেয়ে বা নিরুত্তাপ লেগেছে আমার কাছে।
রানওয়েতে ভালো লাগেনি নেপথ্য সঙ্গীত, তানভীর আলম সজীব দৃশ্যের মেজাজের সাথে আরো সঙ্গতিপূর্ণ সুরারোপ করতে পারতেন। রানওয়ের গল্প মাটির ময়নার মতো গীতিবান্ধব নয় বলেই নেপথ্য সঙ্গীত এখানে অনেক বেশি গুরুত্ববহ ছিলো। রান-অফ-দ্য-মিল নেপথ্য সঙ্গীত মনোযোগী দর্শককে বিরক্ত করবে একাধিকবার।
রানওয়ের কলাকুশলীরা প্রায় সবাই অপেশাদার অভিনেতা, কিন্তু তাদের অভিনয় ত্রুটিপূর্ণ, এমন অভিযোগ করা অনুচিত হবে। নাজমুল হুদা বাচ্চু অনেক দক্ষ অভিনেতা, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ও ভালো অভিনয় করেছেন। উর্দু ভাই চরিত্রে অভিনেতা মোসলেমউদ্দিন মাটির ময়নাতেও উগ্র মাদ্রাসা শিক্ষকের ভূমিকায় উতরে গিয়েছিলেন, রানওয়েতেও তাঁকে মানিয়েছে। তবে যে সমস্যা মাটির ময়নাতে ছিলো, তা রানওয়েতেও রয়েছে, সংলাপের ভাষায় অসঙ্গতি আর কৃত্রিমতা। পরিচালককেই এর জন্যে দায়ী করতে হবে, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নয়। অভিনয়ে কিছু জড়তা রয়েছে, যা খুব বেশি দৃষ্টিকটু নয়। একেবারেই মানায়নি তিশাকে (ইনি অভিনয় জানেন না, ডেরেক জুল্যান্ডারের মতো সকল চরিত্রেই এর একই ডেলিভারি), কিন্তু কুশলীদের তালিকায় তার নামটি হয়তো গতানুগতিক চলচ্চিত্রের দর্শককেও টেনে আনবে বলে বিবেচনা করেছেন নির্মাতা।
প্রত্যাশা পূরণ না হলেও, রানওয়ের অন্যতম শক্তিশালী দিকটি উল্লেখ না করলেই নয়, এর কাহিনী ও বিন্যাস প্রশংসনীয়। যে সময় আর যে সব গল্প সিনেমাকার তুলে ধরতে চেয়েছেন, তা নব্বই মিনিটে শেষ করতে গেলে সিনেমার লয় একটু চড়া থাকারই কথা। সে কারণেই হয়তো অনেক ছোটো ছোটো টুকরো শটে ধারণ করতে হয়েছে একে। প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষের পেছনে ফেলে যাওয়া পরিবারটিকে রানওয়ের একেবারে প্রান্তে রেখে দেখানোর ভাবনাটি অভিনব। রুহুল-ফাতেমা-রহিমার পরিবারটিকে প্রতি ভোরে সগর্জনে উড্ডীন বিমানগুলো স্মরণ করিয়ে দেয় প্রবাসী পিতার কথা, যে মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সন্ধানে গিয়েই মাৎস্যন্যায়ের মুখোমুখি হয়ে দিশাহারা আর অন্তর্হিত। আকাশে উড়ে যাওয়া বিমানের গর্জন ভেসে এসে বারে বারে থামিয়ে দেয় তাদের কথা, সেই অব্যক্ত সংলাপের মধ্যে সিনেমাটির আত্মা লুকিয়ে আছে অনেকাংশে। রহিমার ঘরের অদূরে পড়ে থাকা শূন্য রানওয়ে দর্শকের চোখের সামনে তুলে ধরে তাদের মনের নৈরাশ্যশাসিত শূন্যস্থান, যেখানে ক্ষুদ্র ঋণ আর উগ্র মৌলবাদ এসে দর্পী সাপের মতো ফুটো গলে ঢুকে পড়ে, আকাশে ডানা মেলা বিশাল বিমানের মতোই এই অসহায় মুমূর্ষু ফাঁদবন্দী পাখির মতো পরিবারটির ওপর ক্ষণে ক্ষণে উড়ে যায় শকুনের ধৈর্য নিয়ে। আর যথেষ্ট সাহস নিয়ে মৌলবাদী ইসলামী রাজনীতির ময়দানের খেলোয়াড়দের চরিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে রানওয়েতে, আমি বাংলাদেশের আর কোনো সিনেমায় এমনটি দেখিনি।
সিনেমাটির গল্প আরো একটু সময় দাবি করে দর্শকের হাত থেকে। আরেকটু সময় ধরে বিধৃত হলে হয়তো কিছু সংক্ষিপ্ত দৃশ্য আরো বিস্তারিত হয়ে পরিস্ফূট হতে পারতো। সেইসাথে পেশাদার কুশলীদের নিয়ে কাজ করলে পরিচালক সম্ভবত সিনেমাটিকে অন্যভাবেও চিত্রায়িত করার কথা চিন্তা করতে পারতেন। মাটির ময়নার নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন নাতালি ক্রয়ঠার, হয়তো সে কারণেই সিনেমাটিকে মিঠা করার জন্য গুড়ের অভাব হয়নি। তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ নিজেদের প্রযোজনায় সীমিত সাধ্যের কথা হিসাবে রেখেই হয়তো রানওয়েকে এভাবে তৈরি করেছেন। আবদুল জলিল অনন্তের হাস্যকর সিনেমার পেছনে যতো টাকা খরচ হয়, ততো টাকা এই সিনেমাটির পেছনে খরচ হলে আমরা নিশ্চয়ই দীর্ঘদিন একে নিয়ে আলাপ করার মতো একটা কিছু পেতাম। রানওয়ের যা কিছু ত্রুটি, তার জন্যে দর্শক হিসেবে আমার আর আমাদের ভূমিকার দায়ও কি কম?
বুকে ব্যথা নিয়ে স্মরণ করছি তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর ও তাঁদের তিন সহকর্মীর কথা, যাঁদের মৃত্যু আমাদের দরিদ্র করে রেখে গেছে। মানুষ ভাতের অভাবে দরিদ্র হয় যেমন, তেমনি দরিদ্র হয় কল্পনার অভাবেও। আমাদের দেশে কল্পনার চর্চা যাঁরা করেন, তাঁদের একজনের মৃত্যুই যেন জনপদের মৃত্যুর সমকক্ষ। কামনা করি, তাঁদের রেখে যাওয়া শূন্যস্থানটি যেন নতুন নির্মাতারা বহুগুণে পূর্ণ করেন।
মন্তব্য
মনটা খারাপ হয়ে গেল শেষ প্যারাতে এসে
মানুষ ভাতের অভাবে দরিদ্র হয় যেমন, তেমনি দরিদ্র হয় কল্পনার অভাবেও। আমাদের দেশে কল্পনার চর্চা যাঁরা করেন, তাঁদের একজনের মৃত্যুই যেন জনপদের মৃত্যুর সমকক্ষ। কামনা করি, তাঁদের রেখে যাওয়া শূন্যস্থানটি যেন নতুন নির্মাতারা বহুগুণে পূর্ণ করেন। তাই হোক।
কথাটি ছুঁয়ে গেল!
আমি চলচ্চিত্র তেমন একটা বুঝি না, তারপরও কেন জানি মনে হয় আমাদের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র যারা করেন, তারা চলচ্চিত্রের তত্ত্ব যতটা বুঝেন - তার সফল প্রয়োগ ততটা পারেন না বোধহয়। তারেক মাসুদের মধ্যে মনে হয় এদিক থেকে একটা ভারসাম্য ছিল। মাঝে মাঝে দুয়েক'টা খামতিওলা ছবি সবারই হয়, কিন্তু অনেক বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও তিনি বোধহয় ধীরে ধীরে 'হয়ে' উঠছিলেন। আরও অনেক কিছুই তার দেয়ার ও করার ছিল।
দেশীয় সংস্কৃতির মর্মমূলের সাথে তারেক মাসুদের যেমন অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক ছিল, তেমনি বোধহয় ছিল আন্তর্জাতিক আধুনিক ভাবধারার সাথে ঘনিষ্ট সংযোগজনিত একটা সৃষ্টিশীল, কল্পনাপ্রবণ, দরদী, আধুনিক দেশপ্রেমী মনন। আমার কাছে এটা বেশ রেয়ার কম্বিনেশনই মনে হয়েছে।
তার এই তিরোধান সহজে পূরণ হওয়ার নয়!
--------------------------------------------------------------------
অঃটঃ মোরশেদুল ইসলামের 'চাকা' দেখেছেন? বিকল্প ধারার এটাই আমার প্রথম দেখা ছবি।
****************************************
চাকা মন দিয়ে দেখা হয়নি।
সেটা না দেখলেও চলবে। আনোয়ার হোসেনের ফটোগ্রাফি ছাড়া ভালো লাগার মতো কিছু পাইনি। সেখানে আরোপিত কাহিনী, আরোপিত সংলাপ, অতিঅভিনয় সবই আছে। এই মুভিটার পুরষ্কার পাওয়া নিয়ে এককালে একটা গল্পও প্রচলিত ছিল। বাজে গল্প বলে সেটা আর বললাম না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রানওয়ে ছবিটি কয়দিন আগে আমার দেখা হয়েছে, সত্যি মাটির ময়নার মত ভাল লাগে নি, কিন্তু যেটি আমার ভাল লেগেছে তা হচ্ছে এত চড়া সুরে এর আগে ধর্মীয় উগ্রবাদিতা নিয়ে আমাদের দেশে আর ছবি করা হয় নি । ছবি দেখতে দেখতে মন বিষাদে ভরে গিয়েছিল ভেবে তারেক মাসুদের আরো অনেক ভাল কিছু দেবার ক্ষমতা ছিল, বড় অসময়ে চলে গেলেন
বড় অদ্ভুত লাগে ভাবলে খালি এমন মানুষেদেরই কেন এভাবে চলে যেতে হয়
ভাল বিশ্লেষণ। আমি দেখেছিলাম রামুতে হামলার পরের দিন। সমালোচকের দৃষ্টি নিয়ে দেখিনি, বারবার মনে হচ্ছিল, এত সাহস নিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদ আর কে তুলে ধরবে? পুরো সিনেমাতে শুধু তিশার অভিনয়ের (যদি সেটাকে অভিনয় বলেন) অংশটুকুই মনে হয়েছিল আরোপিত। মুভিটা নিয়ে একটা লেখাও শুরু করেছিলাম, কিন্তু আর আগায়নি লেখাটা। লেখার আর দরকার নেই, শেষপ্যারায় যা বলেছেন সেটাই শেষকথা। আপনার কামনা সত্যি হোক।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
মাটির ময়নাতেও কিন্তু অনেক সংলপ আমার কাছে আরোপিত মনে হয়েছে। কয়েকটি দৃশ্যও অপ্রয়োজনীয় লেগেছে। ভাষার ব্যবহার যথেষ্ট বিশ্বাস যোগ্য (অথেন্টিক) মনে হয়নি। এবং এই ত্রুটিগুলো উত্তীর্ণ হতে কিন্তু বেশী বিনিয়োগের প্রয়োজনও ছিল না।
কোন ছবিতে তা মনে করতে পারছি না, তবে দৃশ্যটা এ রকম; মূল চরিত্র পাকিস্তান সমর্থক। সে তার ছেলেকে স্কুলে না পাঠিয়ে, পাঠিয়েছেন মাদ্রাসায়। সেই মাদ্রাসার দুই শিক্ষক বা মাওলানার একজন আবার প্রগতিশীল; তাদের কাঠ মোল্লা বনাম প্রগতিশীল মোল্লার বিতর্কের ভাষা (আমার কাছে) খুব আরোপিত মনে হয়েছে। সাথে সাথে মাথায় এসেছে এই চিন্তাটা যে; একজন মাওলানা, মাওলানা আবার একই সাথে প্রগতিশীল হয় কী করে! যেমটা আমি দেখেছি হু, আ, "শ্যামল ছায়ায়"। শ্যামল ছায়ায় সব চেয়ে সৎ-নির্ভীক-ভদ্র-বিনয়ী-সাহসী মানুষটি পাকিস্তান পন্থী। আমার মনে হয়েছে তখন যারা পাকিস্তান পন্থী ছিলো তারা কিন্তু সবাই খারাপ ছিল না। এই মতটা প্রতিষ্ঠিত করতে চলচিত্রে এইসব প্রগতিশীল মোল্লাদের আগম ঘটে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ইউটিউবে দেখেছিলাম সিনেমাটার আসল নাম "রান এওয়ে" মানে পলাতক। ট্রেইলারেও তাই দেখছি। কিন্তু পত্র পত্রিকা থেকে শুরু করে সবখানে দেখি লেখে " রানওয়ে।" ঘটনা কি?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
দুইটা দুই সিনেমা।
আমিও গত পরশু দেখলাম। মাটির ময়নার সাথে অনেক ক্ষেত্রেই তুলনা হয় না। ধারাবাহিকতায় কিছুটা সমস্যা মনে হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টার উপর আমার জানামতে এটা একমাত্র সিনেমা। দেখার পুরাটা সময় আমার অনেক কষ্ট হয়েছে মানুষ গুলোর জন্য। মানুষগুলো যেন আমার প্রতিবেশী, আত্নীয়, চেনা জানা মানুষ থেকে নেওয়া। নিজেকে অনেক অক্ষম মনে হয়েছে যে কখনো এদের কোন উপকারে আসতে পারি নাই বলে।
আর একটা দৃশ্য আসাধারন লেগেছে। ওই যে একটা পিচ্চি গুলতি দিয়ে প্লেনের দিকে তাক করে।
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
অকাল প্রয়াত হলে সেই মানুষটির সব কাজই আমরা ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখার আর দেখাবার চেষ্টা করি। এইক্ষেত্রে আপনি সেটা করেন নি। ভালো লাগল নির্মোহ এই বিশ্লেষণ।
ছবিটা দেখে ফেলব এবার।
এই মাত্র দেখে শেষ করলাম। সিনেমা কেমন বানিয়েছে সেই চিন্তা ছাড়িয়ে মাথায় খালি বনবন করে ঘুরে, আহারে আহারে। এই লোকটা বেচে থাকলে না জানি আরো কত কি দিতে পারত।
জহির রায়হান তিরোধানের বহু বছর পর আলমগীর কবির, তারও বহু বছর পর তারেক মাসুদ ... কোন মৃত্যুই স্বাভাবিক ছিলোনা, প্রতিটি মৃত্যুই আমাদের পিছিয়ে দিয়ে গেছে। আলমগীর কবির এর মৃত্যুর কথা মনে আছে আমার, আরিচায় ফেরী থেকে পড়ে গিয়েছিলো তার গাড়ী, গাড়ীর ভেতর-ই মৃত্যু হয় তার।
এইটাই বস, আমারও এই কথাটাই মনে হইছে বারবার।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
একমত।
-অয়ন
রানওয়ে কিছুদিন আগেই দেখলাম মাত্র, ধর্মীয় মৌলবাদ নিয়ে এত সাহসী ভাবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে উপস্থাপিত কোন সিনেমা-- সত্যিই খুব অবাক হয়েছিলাম, আর বারবার কষ্ট হচ্ছিল। ডকুমেন্টারি সিনেমার বাইরে কেবল যখন অন্য ঘরনার সিনেমা বানাচ্ছিলেন ধীরে ধীরে বিগত কয়েক বছরে, সেই সময়েই-----সত্যিই এই লোকটি বেঁচে থাকলে আরও কত কি যে দিতে পারতেন !
সৌরভ কবীর
সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে যা বললেন, তার সাথে একমত হতে পারলাম না। মাটির ময়নার যে পটভূমি, তাতে ক্যামেরা ধরলেই দেখতে ভালো লাগার কথা। কিন্তু রানওয়ে'র পটভূমি, ও তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ লোকেশনে দৃষ্টিনন্দন চিত্রগ্রহণ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। আর ক্যামেরার প্রতি ডিগ্রি সরণ- বিচরণ আলাদা অর্থ বহন করে, তেমনি তার স্থবিরতাও অর্থবহ বিষয়। আমার ব্যক্তিগত মতামত হল, মিশুক মুনিরের 'সাংবাদিক চোখ' রানওয়েতে অনেক বেশি পরিণত মনে হয়েছে সিনেমাটোগ্রাফারের চোখ হিসেবে। সামগ্রিকভাবে ছবির ফ্রেমিং, মৃদু আলোতে নেয়া কিছু শট, কিছু লং শট আর অনেকগুলো ডিটেল যেগুলোকে 'অসাধারণ' বললে আসলেই কম বলা হয়। সব মিলিয়ে যেখানে যেমন দরকার- যতটুকু দরকার, সিনেমাটোগ্রাফি তেমন হয়েছে বলেই আমার মনে হয়। হতে পারে আমি বুঝি কম, তবে পরবর্তীতে যতবার রানওয়ে দেখেছি, সিনেমাটোগ্রাফি দেখার জন্যই দেখেছি।
আসলেই ভয়ানক দরিদ্র হয়ে গেছি আমরা। মাটির ময়নার অসাধারণ ছবি বাংলাদেশে আর একটাও হয়েছে কিনা সন্দেহ। হয়ত অনেক সুন্দর চিত্রায়ন পাওয়া গেছে, অনেক সুন্দর অভিনয় বা কাহিনি পাওয়া গেছে, কিন্তু অভিনয়, দৃশ্য, কাহিনির এমন প্যাকেজ আর হয়ত নেই। মাটির ময়নার সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হল, এই প্রথম একটি ছবি বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি, মনন ও মানসিকতাকে এত আন্তরিক ও সার্থকতার সাথে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।
আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের একটি বড় সময় পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি, 'গন্ডগোল' বলে চালানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকে, 'রাজাকার', 'পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি' বা ক্ষেত্রবিশেষে 'বঙ্গবন্ধু'- এই শব্দগুলো নিষিদ্ধ ছিল আমাদের পাঠ্যপুস্তকে। তবু নতুন শতাব্দির শুরুর দশকে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে আমদের দেশে, নতুন প্রজন্ম ভীষনভাবে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে তারাই সবচেয়ে সোচ্চার কন্ঠস্বর- নতুন প্রজন্মের এই জাগরণে তারেক মাসুদের 'মুক্তির গান' বা 'মুক্তির কথা'র একটা বড় অবদান আছে বলে মনে হয় আমার।
যাইহোক, রিভিউ ভাল লেগেছে, হিমুভাই।
বাংলাদেশী সিনেমার ধরন-ধারন দেখে আমার মনে হয়েছে এখানে চারটি ধারায় সিনেমা নির্মান হচ্ছে। এক) এফডিসিও ধারা, ২) হুমায়ুন আহমেদীয় ধারা ৩) তারেক মাসুদ, মোরশেদুল ইসলামেরা যে ধারাটি শুরু করেছিলেন সেটা ৪) আর হালের অনন্ত জলিলিও ধারা। এ ধারাটি আবার যুবশ্রেণীকে বেশ বিনোদিত করছে। এই চার ধারার মধ্য থেকে যে যার মানসিক গঠন অনুযায়ী বিনোদন খুজে নিচ্ছে। কিন্তু শুধুমাত্র বিনোদনই কি সিনেমার শেষ কথা ?
আপনার বিশ্লেষণধর্মী পক্ষপাতহীন পর্যালোচনা ভাল লেগেছে।
অলস সময়
আমরা কি কেবল হারাতেই থাকব??
রানওয়ে ছবিটি দেখতে গিয়েছিলাম পাবলিক লাইব্রেরীতে। সেই প্রদর্শনীতে ক্যাথরিন মাসুদের কিছু কথা এই রিভিও পাঠকদেরও হয়তো ভালোলাগবে শুনতে, এই ভেবে ভিডিওটি এম্বেড করে দিচ্ছি। রানওয়ে শুরু করার আগে কয়েক মিনিটের নরসুন্দর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটিও খুব টানটান উত্তেজনাময় ছিল। প্রদর্শনীর বাইরে ছোট্ট একটি মেলার মত হচ্ছিল। ক্যাথরিন মাসুদের অটোগ্রাফ সহ চলচ্চিত্র যাত্রা বইটি কিনেছিলাম সেখান থেকে।
ছবিটি দেখার পর আমার অনুভূতিও ছিল চরম উদাসদার মত। আপনার লেখাটি পরে সেই সন্ধ্যার কথা মনেপড়ে গেল।
-ছাইপাশ
ছবিটা দেখলাম, অভিভূত হলাম।
ছবি দেখার সময়ে পথের পাঁচালির সাথে অনেকগুলো সমান্তরাল-দেখবার-বিভ্রম হয়েছে আমার।
অভিবাসি পিতা
মা-গরু-বাছুর
রেলের বদলে এরোপ্লেন
পিসির বদলে দাদু
গরুর দড়ি হাতে রুহুলের মা
চড়ুইভাতির বদলে গার্মেন্টসের দুপুরের খাওয়া, সেখানে নুনের উল্লেখ
থার্ডপার্সন সিঙ্গুলার নম্বর, মনপুরা, খোঁজ দ্যা সার্চ আর হালের মোষ্টওয়েলকাম নিয়ে যতটা
মাতামাতি মিডিয়া করেছে ততটা মাটির ময়না, অর্ন্তযাত্রা কিংবা রানওয়ের নিয়ে করেছে বলে চোখে পড়েনি।
অবশ্য এ খাতে তেমন পয়সা তারেক মাসুদ খাটাতে না পারলেও নিজ উদ্যোগে জেলায় জেলায় নিজের সিনেমা দেখানোর ব্যাপারটা
দেশের আর কেউ নেননি। তাঁর অকালে চলে যাওয়াতে এই ধারাটা মুছে যাবে হয়ত। এখন মুখের কথায় বাজি মাতে ব্যস্ত সিনেমাবানানেওয়ালারা। সেদিক থেকেও তারেক ছিলেন ব্যতিক্রম। তাঁর সিনেমার গল্পের ভেতরে গল্প বলার ব্যাপারটা বুঝতে আসলে আমাদের আরো কিছুটা সময় দরকার। মাটির ময়না আর অর্ন্তযাত্রা আমার বেশি ভালো লেগেছে রানওয়ের চেয়ে। রানওয়েতে যেন আরো কিছু বলার ছিলো এমন একটা ব্যাপার মনে হয়েছে। আর সিনেমা দেখতে দেখতে চরম উদাসের মত
আহারে ব্যাপারটায় বেশি আক্রান্ত হয়েছি। আপনি সিনেমা রিভিউতেও বেশ ভালো কিন্তু! তারেক মাসুদের অর্ন্তযাত্রা এবং কলকাতার অবশেষে(এটার তুলনামূলক একটা চমৎকার রিভিউ হতে পারে) কিংবা ঋতুপর্ণের চিত্রাঙ্গদা নিয়ে লিখবেন?
সিনেমা "রিভিউ" করতে গেলে যে সিনেমাজ্ঞান লাগে সেটা আমার নেই, আমি বড়জোর নিজের প্রতিক্রিয়া লিখতে পারি। আপনি যেগুলোর নাম বললেন, একটাও দেখিনি। দেখার পর সময় পেলে লিখবো।
অর্ন্তযাত্রা অনেক এগিয়ে থাকবে। তবে অবশেষের ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনটা ভালো।
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
মানুষ ভাতের অভাবে দরিদ্র হয় যেমন, তেমনি দরিদ্র হয় কল্পনার অভাবেও। আমাদের দেশে কল্পনার চর্চা যাঁরা করেন, তাঁদের একজনের মৃত্যুই যেন জনপদের মৃত্যুর সমকক্ষ।
সত্যি কথা।
অমি_বন্যা
--- মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
[সূত্র]
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
- সৌরভ - এই ইমোটা কোনদিন ব্যবহার করা হয় নাই - ফারুকীর জন্য যথার্থ।
ফারুকীরে , সে মনে হয় চুপা ছাগু!
_____________________
Give Her Freedom!
ফারুকি ছাগলটারে গদাম দেয়া হোক।
…জিপসি
বলতে ইচ্ছা করছে কোথায় আগরতলা আর কোথায় চউকির তলা !
ফারুকি সাহেব নিজেকে কি না কি ভাব্ছেন তিনিই জানেন !
নতুন মন্তব্য করুন