নীড় সন্ধানীর সাম্প্রতিক পোস্টে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিয়ে দুর্ভোগের পেছনে নগরবাসীর আচরণ যে একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, সে কথা উঠে এসেছে। এই পোস্টটা পড়ার আগে পৃথ্বী শামসের অনুবাদে নোম চমস্কির একটি সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। আমার এই পোস্টে লেখা ভাবনা উসকে দিয়েছে মূলত এই দুটি পোস্টের আধেয়।
আসল প্যাচাল পাড়ার আগে চমস্কি কী বলছেন একটু পড়ি।
আমাদের মনে রাখা উচিত যে সমাজ বিশ্লেষণ এমন কোন কর্ম না যা বিশেষজ্ঞদের হাতে ন্যস্ত রেখে আমাদের নিশ্চিন্ত থাকতে হবে। বুদ্ধিজীবিরা আমাদের এটাই বিশ্বাস করাতে চায় যে তারা এমন এক কর্মে প্রবৃত্ত যা জনসাধারণের কাছে দুর্বোধ্য। কিন্তু সামাজিক বিজ্ঞান এবং সমসাময়িক ঘটনাবলি অধ্যায়ন আসলে মোটেই জটিল কিছু না, কারো এসব বিষয়ে আগ্রহ থাকলে সে নিজেই এগুলোতে সিদ্ধহস্ত হতে পারে। এসব বিষয়কে অযাচিতভাবে “জটিল” হিসেবে উপস্থাপন করে বুদ্ধিজীবিরা আসলে জনসাধারণকে ননির পুতুল বানিয়ে রাখতে চায় যাতে সাধারণ মানুষ এসব মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তা ব্যতিরেকে সমাজকে উপলদ্ধি করতে নিজেদেরকে অক্ষম মনে করে। একারণে সমাজবিশ্লেষণকে বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমের সাথে তুলনা করার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে, কারণ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আসলেই কোন কিছু বিশ্লেষণের পূর্বে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে একটি সুবিশেষ বৌদ্ধিক কাঠামো আয়ত্ত করতে হয়।
এই বাক্যগুলোতে যদি সমাজ বিশ্লেষণের জায়গায় নাগরিক জীবনের সমস্যা সমাধানের কথা বসাই, তাহলেও কি তা গ্রহণযোগ্য থাকবে? চট্টগ্রামের মতো পাহাড়ি শহর যে বর্ষার জলে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে, সে সমস্যার সমাধান কি ক্ষমতাবান কতিপয়তন্ত্রের মর্জিমাফিক আসবে, নাকি নাগরিকের এতে অংশগ্রহণের সুযোগ আছে? সমস্যাগুলো কি এতোই দুর্বোধ্য যে আমাদের নিজেদের সক্রিয় অংশগ্রহণে তার সমাধান সম্ভব নয়?
আরেকটু ভাবতে গিয়ে মনে হলো, আমাদের সামাজিক সমস্যাগুলোকে আমরা নাগরিকের সামষ্টিক অংশগ্রহণের সুযোগ নেই, এমন "হার্ডওয়্যার" দিয়ে সমাধানের ব্যাপারে খুব বেশি উৎসুক (যদিও এসব হার্ডওয়্যার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নাগরিকের সামষ্টিক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়)। সে তুলনায় নাগরিকের অংশগ্রহণসাপেক্ষ "সফটওয়্যার" দিয়ে সমাধানের ব্যাপারে আমাদের সামষ্টিক আগ্রহ কম। এখানে হার্ডওয়্যার বলতে বোঝাচ্ছি অবকাঠামো বা বস্তুকেন্দ্রিক আয়োজন, আর সফটওয়্যার বলতে বোঝাচ্ছি আচরণ বা বিধি।
প্রসঙ্গ পাল্টাই। বনানীতে পথচারীরা রাস্তা পার হবেন, সেজন্যে বিপুল টাকা খরচ করে ফুটওভার ব্রিজে বিদ্যুৎচালিত সিঁড়ি বসানো হয়েছে। কিন্তু পথচারীরা আগের মতোই নির্বিকার চিত্তে রাস্তার ওপর দিয়েই পার হচ্ছেন, ফুটওভার ব্রিজ ছুঁয়েও দেখছেন না। দুর্ঘটনা এড়াতে আর যানজট কমাতে ঢাকা নগর কর্তৃপক্ষ এখানে বিপুল ব্যয় করে "হার্ডওয়্যার" দিয়ে একটি সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই হার্ডওয়্যারের সাথে মানানসই সফটওয়্যার নাগরিকের মাঝে অনুপস্থিত। মনে করুন আপনার ফোনে ক্যামেরা আছে, কিন্তু ছবি তোলার জন্যে কোনো প্রোগ্রাম নেই। তখন সেই ক্যামেরা বাহুল্য ছাড়া আর কিছু নয়। তখন হয় আপনাকে ছবি তোলার প্রোগ্রামসহ ফোন কিনতে হবে, নয়তো ক্যামেরায় ছবি তোলার লাগসই প্রোগ্রাম গুঁজে দিতে হবে। আমরা চাইলেই আমাদের নাগরিকসমষ্টিকে বদলে পৌরকাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন ভিন্ন নাগরিকসমষ্টি আমদানি করতে পারবো না। কাজেই নাগরিকের মধ্যে নগরজীবনের প্রাত্যহিক হার্ডওয়্যারগুলোর সাথে মানানসই "সফটওয়্যার" ইনস্টল করতে হবে।
এই কাজটা মূলত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের। আর ঐ সফটওয়্যারকে আমরা মোটাদাগে "শিক্ষা" বলে ডাকি।
এই উপলব্ধি খুব কঠিন কিছু নয় যে আমাদের সাম্প্রতিক জীবন আর আমাদের পাঠ্যক্রমের শিক্ষার মধ্যে বড়সড় দূরত্ব আছে। আমরা স্কুলকলেজে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও গণিত, ভাষা ও ইতিহাস, ভূগোল ও ধর্ম, হিসাব-কৃষি-গার্হস্থ্য বিষয়াদি নিয়ে কিছু পল্লবগ্রাহী কাজকর্ম করি, তারপর শিক্ষার জোর পরিমাপ করি কিছু প্রান্তিক পরীক্ষার ফল দিয়ে। সকল বিষয়ে এ প্লাস পাওয়া কোনো ছাত্র যদি ফুটপাথের ওপর থুথু ফেলে, কিংবা কোনো দেয়ালের সামনে জিপার খুলে পিশু করা শুরু করে, তখনই কেবল বোঝা যায়, আমাদের সফটওয়্যার আপডেট করা প্রয়োজন।
অন্যের বাড়ির দরজার সামনে ইঁট-বালু-রড স্তুপ করে নিজের বাড়ি বানানো, গলির মুখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা, গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছাদে প্যাণ্ডেল টাঙিয়ে রাত তিনটা পর্যন্ত বীভৎস শোরগোল করা, রমজানে গায়ে পড়ে সেহরির সময় অচেনা লোককে বিনা অনুমতিতে ডেকে তোলা, এরকম আরো বহু প্রত্যক্ষ ভোগান্তির অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমরা এখনও নগর ও অপর নাগরিকের সাথে সম্পূর্ণ "কম্প্যাটিবল" নই। একটা গোল গর্তে একটা চৌকোণা জিনিস গায়ের জোরে ঢোকানোই আমাদের প্রতিদিনের নাগরিক অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাঝের ফাঁকগুলো আমরা "হার্ডওয়্যার" দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করছি, যেটা দেখিয়ে আমরা একে অন্যকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চাই। এই অযথা হার্ডওয়্যারের পেছনে যে টাকাগুলো নাগরিকের পকেট থেকেই বের হয়, সেগুলো ঘুরে ফিরে গদিঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের পকেটে ঢোকে, তাই হার্ডওয়্যারের অপ্রয়োজনীয়তা নিয়েও খুব বেশি কথা ওঠে না।
প্রান্তিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কিছুদিন আগে যে শোরগোল হয়ে গেলো, সেখানে মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর ড. আনোয়ার হোসেন ছাড়া কাউকে উচ্চগ্রামে কিছু বলতে দেখিনি। ষোলো কোটি মানুষের দেশে আমরা পনেরো কোটি নিরানব্বই লক্ষ নিরানব্বই হাজার নয়শো আটানব্বই জন মানুষ চুপ করে ছিলাম এই ভেবে, যে আমাদের সমস্যা নিয়ে কেবল এই দুটি লোক কথা বলবেন। এই দুজন মানুষই আমাদের গোল গর্তে ঢোকানো চারকোণা জিনিসটার চারপাশের ফাঁক বোঁজানোর জন্য চুনমশলা। এ থেকে বোঝা যায়, আমাদের হাতে যদি সফটওয়্যার থেকেও থাকে, সে সফটওয়্যার আমরা চালাচ্ছি না, অপর ব্যক্তি এসে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দেবেন, সেই দুরাশায়। ঠিক যেমন করে আত্মীয়ের অসুখের সময় আমরা রক্ত খুঁজি, কিন্তু নিজেরা রক্ত দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসি না।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা যেমন শুধু গভীর নালা আর খাল খননের হার্ডওয়্যার দিয়ে সমাধান করা যাবে না, তেমনি বনানী মোড়েও বিদ্যুৎচালিত সিঁড়ির হার্ডওয়্যার দিয়ে পথচারী পারাপারের সমস্যা সমাধান করা যাবে না। কোটি টাকার নালা বোঁজানোর জন্য আড়াই টাকার চিপসের প্যাকেটই যথেষ্ট। হার্ডওয়্যারের সাথে আমাদের মানানসই "সফটওয়্যার" লাগবে। এই সফটওয়্যার হতে পারে নাগরিক আচরণবিধি, হতে পারে স্কুলে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্যে পৃথক "নাগরিক সচেতনতা" ক্লাসের শিক্ষা ও বাড়ির কাজ, হতে পারে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম, কিন্তু তা কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে এসে করতে হবে। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের আওতাধীন সকল প্রতিষ্ঠানকে নিজ উদ্যোগে এ ধরনের "সফটওয়্যার আপডেট"-এর ব্যবস্থা করতে হবে। নাগরিক সমস্যা সমাধানের জন্যে স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যেই চিন্তা ও কর্মে চর্চা চালু করতে হবে দ্রুততম সময়ে, যাতে তাদের প্রজন্ম আমাদের প্রজন্মের চেয়ে এগিয়ে থাকে। কেবল ইঁট-বালু-সুড়কি-রড-সিমেন্ট-ঠিকাদারি দিয়ে সমস্যার সমাধানে নাগরিককে বিচ্ছিন্ন রেখে নয়, নাগরিকের আচরণ দিয়ে নাগরিকের অংশগ্রহণে নাগরিক জীবনের সমস্যার সমাধান করা শিখতে আর শেখাতে হবে। এ ব্যাপারে যারা সামাজিক চাপ প্রয়োগ করার সামর্থ্য রাখেন, তারা মুখ খুলুন, অনেক বিলম্ব ঘটার আগেই।
মন্তব্য
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক কলোনি, সিডিএ আবাসিক এলাকায় এম্নিতেই জোয়ার-ভাটা অনুযায়ী ডেইলি (বিশেষত বর্ষা সিজনে, বৃষ্টি পড়ুক আর নাই পড়ুক) দু'বেলা রাস্তায় পানি ওঠে।
তবে এবারের অবস্থা ছিল ভয়াবহ!
পুরো দু'দিন বাসার কারো সঙ্গে কথা বলতে পারিনি, কারণ ট্রান্সফরমার ফেটে গিয়েছিল.. বিদুৎ ছিল না আশেপাশের কোথাও।
বাসার নিচতলার ভাড়াটেদের ফ্ল্যাটে পানি ঢুকেছিল, নোংরা পানি ঢুকে গিয়েছিল রির্জাভ ট্যাঙ্কে ।
প্লিজজ!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিস হল রমজান মাসে রাত তিনটার সময় বিকট, বেসুর গলায় অখাদ্য গান গেয়ে যারা মানুষকে জাগায় (জানিনা এই চর্চা এখনও আছে কিনা)। এর প্রতিবাদ করাতো দূরের কথা, আমাদের দেশে এসব কাসিদা "গায়ক"-দেরকে হয় টাকা দেয়া হয়, নয়তো চর্ব্য-চোষ্য খাওয়ানো হয় (অথবা দুটোই চলে)।
হার্ডওয়্যার বনাম সফটওয়্যারের পার্থক্য নিয়ে সমাজবিজ্ঞানে cultural lag নামে একটা তত্ত্ব আছে। এর মূল কথা হল প্রযুক্তির পরিবর্তন/বিকাশ যে গতিতে ঘটে, সেই তুলনায় মানুষের আচরণের পরিবর্তন ঘটে অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে। বাংলাদেশের নগর এবং নাগরিক আচরণ হল এই তত্ত্বের পারফেক্ট উদাহরণ। ঢাবি-তে আমাদের এক শিক্ষক একবার মজা করে বলেছিলেন, বাংলাদেশে urbanization হয়েছে, কিন্তু urbanism হয়নি।
Emran
আমাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা সাংস্কৃতিক জড়তাজনিত নয়। নালা তো সাম্প্রতিক প্রযুক্তি নয়, নালা নগরের মতোই প্রাচীন প্রযুক্তি, এটাকে যে ময়লা ফেলে বুঁজিয়ে দিতে হয় না, সেটা গত কয়েক হাজার বছরে আমাদের শিখে ফেলার কথা। উড়ালসাঁকোও প্রধান সব শহরে আছে কয়েক দশক ধরে। আমাদের দেশে নাগরিকের সমস্যা হচ্ছে সে "সবাত্তে বেশি বুজে"। আমাদের নাগরিকরা বিধিভঙ্গ করাকে এক ধরনের সাংস্কৃতিক অধিকার মনে করেন, কেউ কেউ একে বাহাদুরির আবশ্যক উপাদান বলেও ভাবেন। এর কারণ একটাই, নগরের অন্যান্যদের সুবিধা/অসুবিধার প্রতি অনেক নাগরিকের কোনো মনোযোগ নেই। আমাদের নাগরিকদের অনেকেই নগরীর ভেতরে নিজের একটা ছোটো গণ্ডিতে বাস করেন, ঐ গণ্ডিটুকু পরিচ্ছন্ন ও নিরুপদ্রব রাখার জন্য তারা চেষ্টা করেন, অ্যাট দ্য এক্সপেন্স অব দ্য রেস্ট।
সঠিক পর্যবেক্ষন।
থুথু-পিশু তো সামান্যই, হিমু ভাই, এমনকি ক্রমবর্ধমান ডাস্টবিনের সামনে দাঁড়িয়েই মহানন্দে চটপটি, হালিম আর নুডলস ভক্ষন করতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
বনানী ফুটওভার ব্রিজে বিদ্যুৎচালিত সিঁড়ি
[img][/img]
আমরা আমাদের সব সমস্যার জন্য প্রতিদিন দুইবেলা সরকারকে গালি দেই, পাঁচ বছর পরপর সেই একই লোকগুলোকে আবার নির্বাচিত করে নিয়ে আসি। কেউ রাস্তায় ময়লা ফেলতে না চেয়ে ময়লা হাতে নিয়ে ডাস্টবিন খুঁজতে চাইলে থাকে স্নব, আঁতেল, ঢঙী এইসব বলে ঠাট্টা করি। মুখের ওপর সিগারেটের ধোঁয়া ফেলতে নিষেধ করলে চেতে গিয়ে দুকথা শুনিয়ে দেই। পাঁচ সেকেন্ড বাঁচাতে উলটাদিকে গাড়ি চালিয়ে দেই। এবং সবচেয়ে বাজে ব্যাপার এইগুলা করা যে খারাপ সেই বোধটাই আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছে।
শুধু স্কুল-কলেজে এইগুলো খারাপ শিখিয়ে বা পাঠ্যপুস্তকে সিভিক সেন্স অন্তর্ভূক্ত করে এই সমস্যার সমাধান হবে না। স্কুলে যে শিক্ষক পড়াবেন, বা বাসায় যে অভিভাবক আছেন, তারা সবাই যদি এইধরনের কাজ করতেই থাকেন, বাচ্চারা যা করা হচ্ছে সেটাই শিখবে।
সম্প্রতি কিছু উদ্যোগ দেখেছি, বানানশুদ্ধি বা শহর পরিষ্কার করার। এভাবে ধীরে ধীরে শুরু হোক, চ্যারিটি অলওয়েজ বিগিনস অ্যাট হোম।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
সফটওয়্যার ইনস্টল হতে বহুকাল চলে যাবে, আদৌ সম্ভব কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। শহরে শুধু শিক্ষিত সম্প্রদায় বাস করেনা, নিম্ন আয়ের শিক্ষা থেকে দূরে থাকা বড় একটা জনগোষ্ঠিও বাস করে। তাদেরকে কিভাবে সচেতন করতে হবে সেটাও জরুরি বিষয়। তথাকথিত শিক্ষিতরাই চোখ বন্ধ করে ময়লা নর্দমায় ছাড়ে। আমার নিজের পাড়ায় দেখেছি সবগুলো বাসার মালিক এই কাজ করে, এরা সবাই শিক্ষিত। আমি এক বাড়িওয়ালাকে ভদ্র ভাষায় এটা করতে নিষেধ করেছি বলে আমাকে বলে তোমার সমস্যা কি? ড্রেন কি তোমার সম্পত্তি? এটাই এ দেশে অধিকার, দেশের সকল মানুষ অপার স্বাধীনতা নিয়ে বাস করে, এত স্বাধীনতা বোধহয় পৃথিবীর আর কোন রাষ্ট্রে নেই।
যে যেভাবে ইচ্ছে চলবে, যা ইচ্ছে করবে? রাতে মাইকে লটারী টিকেট বিক্রি করতে পারবে, মাইকে সারারাত দিনের পর ওয়াজ করতে পারবে, পূজার নামে দিনের পর দিন মাইকে হট্টগোল করতে পারবে। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতে পারবে, শুধু হলুদ অনুষ্ঠানে না নতুন বছরে, ঈদের আগের দিন সারারাত বাজি ফুটাতে পারবে, আসলে বলে শেষ করা যাবে না এত অনিয়মের কথা। নিজেরা বিশঙ্খলার সাগরে ডুবে থেকে আমরা শুধু রাজনৈতিক নেতাদের বিশঙ্খলা নিয়ে মেতে থাকি। আমি তাই জানি আলো আসতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে এই বাঙলাতে।
মাসুদ সজীব
সফ্টওয়্যার ইনস্টলের দায়িত্ব নাগরিক ও শাসক দুই পক্ষকেই নিতে হবে।
--আরাফ করিম
" এ ব্যাপারে যারা সামাজিক চাপ প্রয়োগ করার সামর্থ্য রাখেন, তারা মুখ খুলুন, অনেক বিলম্ব ঘটার আগেই।"
সেইটাই।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
যারা ভূটান গেছেন তারা জানেন থিম্ফু শহরের কেন্দ্রস্থলে একটা বাজার আছে। বাজারটা সপ্তাহে দুদিন বসে। বাজার মানে আমার চোখে তরিতরকারীর খোসা আর ময়লা আবর্জনার ভাগাড় পাশে নিয়ে দাড়িয়ে থাকা একটা হৈ হল্লা বিক্রয়কেন্দ্র। পরদিন গাইড আমাকে বেড়াতে নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছে শুনে বিরক্তই হয়েছিলাম। ওখানে এখন দেখার কী আছে, বাজার তো আগের আগের দিন শেষ। এখন গিয়ে দেখবো ময়লা আবর্জনার পাহাড়।
কিন্তু বাজারে ঢুকে আমি বাজারের কোন অস্তিত্বই পেলাম না। কিছু সুন্দর টিনের তৈরী শেড বিশাল শূন্যতা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি শিওর এখানেই বাজার বসেছিল কালকে? সে বললো, শিওর, এটাই বাজার। আমি দেখলাম পাশে কলকল করে বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি নদী। নদীর পাশে সার বেঁধে দাড়িয়ে আছে অনেকগুলো ময়লা ফেলার বিন। সত্যি বলতে কি জীবনে প্রথম এত সুন্দর ময়লা ফেলার বিন দেখলাম। সেই বিনের আশেপাশে ময়লা আবর্জনার কোন চিহ্ন নেই।
তার মানে ভূটানীরা এত বড় বাজার বসালেও হাটবাজার থেকে ময়লা আবর্জনা উৎপাদনের কৌশলটা এখনো রপ্ত করতে পারে নাই। শেখে নাই পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে পলিথিনের পুটুলি ছুড়ে মারতে। নাহ, তোদের দেশে যে গনতন্ত্র একদম নাই সেটা দেখেই বোঝা যায়। তিনটা ছবি দিলাম দেখতে পারেন।
বাজার-১
বাজার-২
বাজার-৩
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর বাজার! এটা নাকি রাজার তরফ থেকে নাগরিকদের জন্য উপহার ছিল থিম্ফুর শতবার্ষিকীতে !
বাজার তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত দলটিকে দেখলে যে কারো মনে হবে আমাদের র্যাব এর আপগ্রেড ভার্শন।
পৌরকাণ্ডজ্ঞান বিষয়ে আমরা ক্লাসে একটু পড়েছিলাম। সারমর্ম যেটুকু মনে আছে তা হলো আমরা মাত্র দুই-তিন প্রজন্ম হলো গ্রাম থেকে এসে শহরে বসবাস করছি। 'আরবান কালচার' বলে যে ব্যাপারটা আছে আমাদের মধ্যে সেটা এখনো তেমনভাবে গড়ে ওঠে নি। একটা প্রজন্মের মধ্যে এটা গড়ে উঠতে সময় লাগে। বিদেশে লোকজনকে পৌরকাণ্ডজ্ঞানের ব্যাপারগুলো বলে দিতে হয় না, কারণ তারা বহু প্রজন্ম ধরে শহরে বসবাস করছে। আমাদের জন্য বিকল্প যে উপায় আছে তা হলো সিঙ্গাপুরের মতো শাস্তি বা জরিমানার ব্যবস্থা করা। ওইখানে শুনেছি পৌর আইন ভঙ্গ করলে শারিরীকভাবে নির্যাতন করা হয়।
এই কথাটা যৌক্তিক। সিঙ্গাপুর এত ঝকঝকে শহর বানিয়ে রাখলেও, এদের মানুষের পৌর কাণ্ডজ্ঞান গড়ে ওঠেনি তা বোঝা যায় চাইনিজ নিউইয়ার এর সময়। চৈনিক নববর্ষের চার দিন এদের কাজ কর্ম করা মানা। ফলে ক্ষুদ্র দোকানী, ঝাড়ুদার, ময়লা সাফ কারী, ঘাস কাটুরে সবার সার্ভিস থাকে বন্ধ। যথারীতি এই চার দিনেই নগরীর অবস্থা ফর্দফাই হয়ে যায়!
আর পাবলিক নুইসেন্স ঘটালে শারিরীক নির্জাতন, মানে কেনিং, করা হয়। ব্যাপারটা বর্বর হলেও। এখানে দারুণ কাজে দিচ্ছে। কোনো বড়লোকের পোলা কোনো মেয়ের পাছায় টিপি দিয়ে, দশ বিশ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পার পাওয়ার উপায় নাই। পাছায় বেতের বাড়ি খেয়ে তারপর অন্য কথা। আর এই বেত ও যেনতেন বেত না। কয়েকটা বাড়ি খেলে সোজা হয়ে দাড়ানো যায় না বাকি জীবন। :-/
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এই ব্যাপারটাই হচ্ছে না ঠিক মত। আমাদের সবকিছুতেই গোড়ায় গলদ থেকে যাচ্ছে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
ময়লা সমস্যার সমাধান সহজেই করা যায়, এমনকি এখনকার সমাজ-রাস্ট্র ব্যবস্থায়ই এটা সম্ভব। প্রতিটা পাড়া মহল্লায় ময়লা সংগ্রহ করার কাজটা আনুষ্ঠানিকভাবে ইজারা দিয়ে দিতে হবে। ইজারা যাতে মস্তান টাইপের লোকজন ছাড়া অন্য কেউ না পায়, সেই ব্যাপারটা শুধু নিশ্চিত করতে হবে। তার আগে সিটি কর্পোরেশনকে একটা নির্দেশনা দিতে হবে- প্রত্যেক বাড়ীর সামনে দু ধরনের দুটি বিন অবশ্যই স্থাপন করতে হবে, নইলে ইজারাদারেরা তাদের থেকে শুধু মাসুলই আদায় করবে, ময়লা সংগ্রহ করবে না। ব্যস, বাকী ব্যাপারটা মাস্তানরাই সামলে নিবে ইনশাল্লাহ।
অনেকটা একই ধরনের ব্যবস্থা করা যায় বনানী কিংবা অন্যান্য ফুটওভার ব্রীজ পারাপারের জন্য। সরকার নিয়ম করে দিবে জনগণ ইচ্ছা করলে ফুটওভার ব্রীজের উপর দিয়ে বিনা পয়সায় পার হতে পারে, আবার কারো শখ হলে সে বিশ টাকা টোল দিয়ে সরাসরি নিচে দিয়ে রাস্তা পার হতে পারে। এক্ষেত্রে ইজারাদারের কাজ হবে- যারা নিচে দিয়ে পার হবে, তাদের কাছ থেকে টোল আদায় করা।
****************************************
আমি বনানীতে যে এলাকায় থাকি সে এলাকার গাহ্যস্থ আবর্জনা সংগ্রহ করার কাজটা মাস্তান টাইপের লোকেদের কাছে অনেক আগেই সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়ে দিয়েছে। আমরা এখন ঐ ব্যবস্থার মধ্যেই আছি। দুদিন পরপরই রেট বেড়ে যায় করবার কিছু নেই।
তখন ইজারাদার কি আরো বেশী করে নীচে দিয়ে লোক পাঠাবে? কারণ, তাহলে
১) বেশী টোল আদায় হবে
২) বেআইনী আয়টা বাড়ানোর সুযোগও বেশী আসবে
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
সফটওয়্যারে একটা বড়সড় পরিবর্তন দরকার। ঢাকারই কোন একটা কলেজের (নাম বলছি না) কথা শুনেছি, যেখানে নাকি ছাত্রদের খুব করে শেখানো হয় ময়লা যেখানে সেখানে না ফেলার জন্য। এমন গল্প শুনেছি যে এক ছাত্র নাকি কিছু একটার খোসা ফেলেছিল, একজন শিক্ষক তার পেছনে সেটা কুড়িয়ে সেটা জায়গামত ফেলেছিলেন ছাত্রটাকে লজ্জা দেবার জন্য।
তারমানে, এই সব নাগরিক জ্ঞান (সিভিক সেন্স) যে কোন বয়সে শেখানো যায়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও ছাত্রদের সচেতন করা সম্ভব যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে। তাহলে, আর তারা পিকনিকে গেলে চিপসের প্যাকেট ফেলে আসবে না।এর চেয়ে বড় বয়সে বিদেশে গিয়ে অনেকেই তো ডাস্টবিন খুঁজে তারপর ময়লা ফেলছেন, বাংলাদেশে বসে কেন এটা করতে অনীহা আমাদের?
শুভেচ্ছা
নেটে একটা ছবি দেখে আবার ঐ পোস্টের কথা মনে পড়ল।
এটা আসলে মানুষের পানি খাবার জন্য, এক জায়গায় চাপ দিলে ছোট একটা পানির ফোয়ারা তৈরি হয় (মুভিটুভিতেও দেখা যায়)। এই বেআক্কেল তার কুকুরের শৌচকার্য করাচ্ছে সেখানে
ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে এটা নিউইয়র্ক সিটির সেন্ট্রাল পার্ক। তারমানে বেয়াক্কেল শুধু বাংলাদেশে না, নিউইয়র্ক সিটিতেও আছে।
Emran
ছবি আমি তুলি নি
নেট থেকে পাওয়া এবং ঠিকই ধরেছেন, লেখা ছিল নিউইয়র্ক সিটির সেন্ট্রাল পার্কে এই ঘটনা।
নতুন মন্তব্য করুন