মশহুর মাসিক পত্রিকা কিশোর আলোর অনিয়মিত তারকা লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বিডিনিউজ২৪.কমে একটি কলাম প্রকাশ করেছেন, "ইতিহাসের ইতিহাস" শিরোনামে [সূত্র]। লেখাটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য এই পদটির কোনো বাংলা মনে হয় আর করা হয়নি, উপসেনানায়ক বলা যেতে পারে সম্ভবত) এয়ার ভাইস মার্শাল আবদুল করিম খন্দকারকে অপমান করা বিষয়ে। সম্প্রতি এ কে খন্দকার স্বনামধন্য কিশোর মাসিক কিশোর আলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রথমা প্রকাশন থেকে একটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন, তার শিরোনাম "১৯৭১: ভেতরে বাইরে"।
অধ্যাপক ইকবাল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর অনুরাগের প্রকৃতি ও ইতিহাস বর্ণনা করে মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক হিসেবে খন্দকারকে উপস্থাপন করে দুঃখ করে বলেছেন,
যখন আমি আবিষ্কার করেছি একটি বইয়ের বিষয়বস্তুর কারণে এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারকে অপমান করার চেষ্টা করা হচ্ছে তখন বিষয়টি আমাকে গভীরভাবে আহত করেছে।
এ কে খন্দকারকে কীভাবে কে কোথায় অপমান করার চেষ্টা করেছে, তার বিশদ বর্ণনায় অধ্যাপক ইকবাল যাননি, কেবল তার কারণটিকে সামনে এনেছেন। তিনি গভীর ক্ষোভ নিয়ে বলছেন,
আমরা আমাদের দেশে একজন মানুষকে তাঁর নিজের মত প্রকাশের জন্যে এভাবে অসম্মান করব আমি সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
খন্দকারের লেখা বইটি আমি পুরোটা পড়িনি, বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে অধ্যাপক ইকবালও বিস্তারিত কিছু বলেননি, কিন্তু গুণী মানুষেরা কোনো কথা না বলেও অনেক কিছু বলে ফেলতে পারেন। রবি ঠাকুর এ ধরনের গুণীদের ওপর বিলা হয়ে লিখেছিলেন, তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মতো অধৈর্য হলে আমাদের চলবে না। একটু একটু করে পড়ে বুঝতে হবে, অধ্যাপক ইকবাল কী বলতে চেয়েছেন।
লেখার প্রারম্ভিক অংশ পড়ে বোঝা যায়, এ কে খন্দকার তাঁর বইতে এমন কিছু মত প্রকাশ করেছেন, যার প্রতিক্রিয়ায় কোনো এক রহস্যময় দুরুচ্চার্য মহল তাঁকে অপমান করার "চেষ্টা" করেছে। মানীর মান রক্ষার দায়িত্ব সকলেরই। কিন্তু মানীর মান রক্ষায় স্বয়ং মানীর কি কোনো দায় নেই?
এ কে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক, তাঁকে কে সেধে সেধে বিনা কারণে অপমান করতে চাইবে? কিন্তু খন্দকার নিজে কি নিজের এই পরিচয়ের প্রতি সুবিচার করেছেন? যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জাফর ইকবাল তাঁর গভীর অনুরাগের কথা কয়েক প্যারা ধরে বিবৃত করেছেন, সে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিই কি খন্দকার সুবিচার করেছেন? কই, মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক এবং একটি স্বাধীন দেশের বিমানবাহিনী প্রধানের গর্বিত পরিচয় নিয়ে তিনি তো ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ফৌজদারি অপরাধী খন্দকার মুশতাকের প্রতি অকম্পিত কণ্ঠে আনুগত্য প্রকাশে এতটুকু পিছপা হননি? তখন কি মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টির গায়ে কাদার ছিটে লাগেনি?
অধ্যাপক ইকবাল তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, হয়তো ব্যাপারটা খেয়াল করার ফুরসত পাননি তখন।
জেনারেল জিয়াউর রহমান যখন সশস্ত্র বাহিনী থেকে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা আর সৈনিকদের বিদ্রোহের অজুহাতে নামমাত্র বিচারে বা বিনা বিচারে ধরে ধরে ফাঁসি দিলেন, যে বিমানবাহিনীর প্রধান এ কে খন্দকার স্বয়ং কয়েক বছর আগেও ছিলেন, সে বিমানবাহিনীকে জিয়া যখন প্রায় মুক্তিযোদ্ধাশূন্য করে ফেললেন, তখন মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক কোথায় ছিলেন? জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রদূত হিসেবেই কি তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন না তখন? মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টি কি তখন আলমারিতে তুলে রাখা ছিলো?
অধ্যাপক ইকবাল তখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, হয়তো ব্যাপারটা খেয়াল করার ফুরসত পাননি তখন।
কামরুল হাসান যাকে বলেছিলেন "বিশ্ববেহায়া", সেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, যিনি জেনারেল মঞ্জুরসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের মৃত্যুর জন্যে দায়ী বলে নানা কৌতূহলোদ্দীপক বিবৃতি ও প্রতিবেদন আমরা পত্রিকায় পড়তে পাই, সেই এরশাদের কেবিনেটে যখন মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক এ কে খন্দকার পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে যোগ দিয়ে এরশাদের ধর্ম মন্ত্রী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দোসর রাজাকার মওলানা মান্নানের সহকর্মী হিসাবে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করে গেলেন, তখন পরিচয়টি কোথায় ছিলো? তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রী থাকার সময় যখন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পরিচয় মুছে ফেলা হলো, তখন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে অভীষ্ট ধরে সাধিত মহান মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়কের পরিচয়টি লজ্জায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলো কি?
অধ্যাপক ইকবাল তখন দেশের বাইরে, এসব খোঁজ রাখার ফুরসত পাননি বোধহয়।
মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টির ওপর অতীতে অকাতরে ত্যাগ করা রহস্যময় হলদেটে তরলের দাগ এড়িয়ে অধ্যাপক ইকবালের কাছে এ কে খন্দকার কেবল সেক্টর কমাণ্ডারস ফোরামেরই প্রধান, যিনি অধ্যাপক ইকবালের সঙ্গে এক গাড়িতে পাশে বসে থেকে তাঁকে শিহরিত হওয়ার অমূল্য সুযোগ করে দেন। অধ্যাপক ইকবালের ভাষ্যে,
মনে আছে তিনি এবং তাঁর সহযোদ্ধারা একবার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন এবং এয়ারপোর্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত পথটুকু আমি গাড়িতে তাঁর পাশে বসে এসেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের এ রকম একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের পাশে বসে আছি চিন্তা করেই আমি শিহরিত হয়েছিলাম।
অধ্যাপক ইকবাল হয়তো অনেক আগেই মার্কিন সিনেটর ড্যানিয়েল প্যাট্রিক ময়নিহানের নাম শুনে থাকবেন, আমি মোটে সেদিন শুনলাম। এই ভদ্রলোক বলেছিলেন, You are entitled to your opinion. But you are not entitled to your own facts. এই কথাটুকু একটু থেমে, মন দিয়ে পড়ে, হৃদয়ঙ্গম করে বাকি কথাগুলো শুনুন।
এ কে খন্দকার তাঁর বইতে মোটা দাগে অভিমত (opinion) দিতে গিয়ে কিছু ঘটনাকে বাস্তবতার (fact) রূপ দিতে চেয়েছেন। এ কে খন্দকারের অভিমত প্রকাশের অধিকার রয়েছে, কিন্তু সে অভিমতের সমর্থনে নিজের অভিলাষ অনুযায়ী বাস্তবতা উৎপাদনের অধিকার তাঁর নেই। শুধু তাঁর কেন, কারোই নেই। তিনি নিজের অভিমতের পক্ষে যায়, এমন একটি গুজব (যা কিনা সেই গুজবের প্রাথমিক ধারকেরা নিজেরাই ক্ষমা চেয়ে নাকচ করেছেন [সূত্র]) নিজের বইতে গুঁজে দিয়ে বলেছেন, শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তাঁর ভাষণের শেষে জয় পাকিস্তান বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া নিয়েও খন্দকার তথ্যসূত্র সমর্থিত গ্রন্থনার বিপরীতে গিয়ে অভিমত দিয়েছেন। ইতিহাস নিয়ে অভিমত দিতে গেলে যে ডিউ ডিলিজেন্স ইতিহাস লেখকের কাছ থেকে পাঠক আশা করে, তার ব্যাপক ঘাটতি বইটিতে রয়েছে বলেই অনেক পাঠক অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
এ কে খন্দকার তাঁর পাঠককে প্রবঞ্চিত করেছেন এখানেই। বইটি তিনি লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়ে, কিন্তু সে পরিচয়টির প্রতি কোনো সুবিচার তিনি করেননি। মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টির প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে যেভাবে তিনি অতীতে ফৌজদারি অপরাধীর প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন, যেভাবে এ মহান পরিচয়টিকে তিনি ধরাশায়ী করে ক্ষমতা জবরদখলকারীর রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন, যেভাবে এ পরিচয়ের মুখে চুনকালি দিয়ে তিনি আরেক ক্ষমতা জবরদখলকারীর কেবিনেটে রাজাকারের সহকর্মী হয়েছিলেন, একই অবহেলায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টির মান ডুবিয়ে অসত্যভাষণের মাধ্যমে পাঠককে ঠকিয়েছেন। তিনি যা বলেছেন, তা সত্য হিসাবে প্রমাণ করতে পারেননি, কেবলই এক বৃদ্ধের ব্যক্তিগত হিসাবনিকাশতাড়িত অসংলগ্ন অভিমত তিনি পাঠককে গছিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়কের এ ভীমরতি কি সহজে মেনে নেওয়া যায়? মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফসল আজকের তরুণ পাঠকের কি ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হওয়ার অবকাশ খন্দকার নিজেই করে দেননি?
কিন্তু আমপাঠকের মতো অধ্যাপক ইকবাল ক্ষুব্ধ বা অপমানিত কিছুই হননি। তিনি শুধু "মন খারাপ" করেছেন, তাও বেশি নয়, "একটু"।
আগেই বলেছি এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের বইটি পড়ে আমার একটু মন খারাপ হয়েছে।
এই তথ্যসূত্র-অসমর্থিত ও পরের-মুখে-ঝাল-খাওয়া বইটি লিখে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধ ও নিজের মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টিকে অপমান করেছেন, এটা বোঝার মতো পরিপক্কতা হয়তো অধ্যাপক ইকবালের এখনও আসেনি। সবার মান-অপমান বোধ একরকম নয়, আমরা বুঝতে পারি।
কিন্তু এরপর খুব বিস্মিত হয়ে দেখি, খন্দকার যে অসত্য কথাগুলো বইতে বলেছেন বলে জাফর ইকবাল ব্যবচ্ছেদ করে দেখিয়েছেন, সেই ব্যবচ্ছেদের পরও অধ্যাপক ইকবাল বলছেন,
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে একটা কথা আছে, মাওলানা আবুল কালাম আজাদও তাঁর মত প্রকাশ করার জন্য ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ নামে একটা বই লিখেছিলেন। সেই বই পড়ে বইয়ের সংক্ষিপ্ত একটা রূপ ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। পুরো বইটি পড়ে অনেকে মনে কষ্টে পেতে পারে বলে তিনি বলেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পরে যেন পুরো বইটি প্রকাশ করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর আমরা সেই বইটি পড়ার সুযোগ পেয়েছি। কাজেই ইতিহাসে সত্য যুক্ত করার জন্যে সময় নেওয়ার উদাহরণ পৃথিবীতে আছে– একজন মানুষকে অসম্মান করা হবে জানলে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এখানে এসে বিভ্রান্ত ও হতচকিত হয়ে যাই। লেখার এক অংশে যেখানে অধ্যাপক ইকবাল নিজেই খন্দকারের বইতে গ্রন্থিত অসত্যকে কাটাছেঁড়া করে পাঠককে দেখালেন, একটু পর তিনিই আবার বলছেন, ইতিহাসে "সত্য" যুক্ত করার জন্য সময় নেওয়ার উদাহরণ আছে। ব্যাপারটা কেমন আঁশটে হয়ে গেলো না? অধ্যাপক ইকবাল কি ঘুরিয়ে এটাই বললেন না, যে খন্দকারের বইটি ইতিহাসে সত্য যুক্ত করে? এ কেমন স্ববিরোধিতা? আর অধ্যাপক ইকবাল কি অভিমত আর সত্যের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন? মাওলানা আজাদের বইতে যা লেখা আছে, সেটি মাওলানা আজাদের অভিমত, যা সত্য হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। আজ যদি কেউ একটা বইতে লেখে, অধ্যাপক ইকবালের হাত রোজ রাত একটার সময় লম্বা হতে হতে হতে হতে শোবার ঘর থেকে ডাইনিং রুমে এসে ফ্রিজ খুলে একটা প্যাটিস বের করে নিয়ে আবার ছোটো হতে হতে হতে হতে ডাইনিং রুম থেকে শোবার ঘরে চলে যায়, এটা কি পঞ্চাশ বছর পর প্রকাশ করলেই সত্য হিসাবে ধরে নিতে হবে?
বাস্তব উদাহরণ থেকে কিন্তু আমরা দেখতে পাই, ইতিহাসে মিথ্যা যুক্ত করার জন্য দীর্ঘ সময় নেওয়ার উদাহরণই বরং কিছু জোচ্চোর প্রকাশক আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে।
অধ্যাপক ইকবাল বই পড়ে যে "একটু" মন খারাপ করেছেন, সে ক্ষত তিনি সারাবার জন্যে ধর্ণা দিয়েছেন প্রথমা প্রকাশনের কাছে। এবং সে আলাপচারিতার বিবরণ থেকে আমরা জানতে পারি, বইটির কোনো পাণ্ডুলিপি নেই, বইটি লেখা হয়নি, বরং খন্দকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বইটি "প্রস্তুত" করা হয়েছে। মনের সেই "একটু খারাপ" ভাবকে সারানোর ঔষধ হিসাবে "মনের সান্ত্বনা"র জন্যে অধ্যাপক ইকবাল প্রথমা প্রকাশনের কাছ থেকে এই প্রস্তুতির ওপর একটু পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রার্থনা করেছেন।
অধ্যাপক ইকবাল লেখার এ পর্যায়ে এসে তাঁর অনুরাগভাজন খন্দকারকে নিষ্কৃতি দেওয়ার একটি উপায়ও খুঁজে পেয়েছেন।
বইটি লেখার দায়ভার কি শুধু লেখকের? প্রকাশককেও কি খানিকটা দায়ভার নিতে হবে না? আপত্তিকর কিংবা বিতর্কিত কিছু লিখে একজন লেখক সমালোচনা আর অসম্মান সহ্য করবেন এবং সেই সমালোচনা আর অসম্মান বিক্রি করে প্রকাশক অর্থ উপার্জন করবেন সেটি কেমন কথা? আমরা কি কোনোভাবে প্রকাশককেও দায়ী করতে পারি?
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ইকবালের সঙ্গে আমি সর্বাংশে সহমত পোষণ করি। এবং দেখতে পাই যে তিনি খন্দকারের বইটিকে "আপত্তিকর" হিসাবে উল্লেখ করছেন।
কিন্তু এই "আপত্তিকর" রচনাকে তিনি লেখার আরেক অংশে "মত প্রকাশের স্বাধীনতা" হিসাবেও উল্লেখ করছেন। অর্থাৎ, তাঁর দাবিটি হচ্ছে, যারা মানী লোক, তাদের মত আপত্তিকর হলেও আমরা পাঠকেরা, যাদের কেবল অপমানিত হওয়ার সুযোগ আছে, তারা কিছু বলতে পারবো না। বললে যদি মানী লোকটি অপমানিত হন?
অধ্যাপক ইকবাল, যিনি খন্দকারের বইটি পড়ে অপমানিত হন না, মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়কের মুখে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অসত্য অসংলগ্ন কথা শুনে ক্ষুব্ধ হন না, অতীতে তাঁর নিজের হাতে মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টিকে ভূলুণ্ঠিত করার উদাহরণ গোপন রেখে কেবল সেক্টর কমাণ্ডারস ফোরামে তাঁর নেতৃত্বের কথাটুকুই বলেন, কায়দা করে চেপে গেলেন, স্বয়ং সেক্টর কমাণ্ডারস ফোরামের অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধনায়কেরা কী তীব্র ভাব ও ভাষায় খন্দকারের বইটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন [সূত্র]।
সেইসাথে অধ্যাপক ইকবাল এক আছায্য পাটীগণিতেরও সন্ধান দিয়েছেন আমাদের। তিনি আবিষ্কার করেছেন, এই "আপত্তিকর" বইটি লেখার দায়ভার যদি বইটির প্রকাশক মতি কিছুটা নেয়, তাহলে খন্দকার তাঁর সম্মান আবার ফেরত পাবেন। তাঁর কাছে সম্মান বিষয়টি বিস্কুটের মতো, আর অপমান সেই বিস্কুট কেড়ে নেওয়ার মতো। যদি কেউ কুকর্মের ভাগিদার হিসেবে হাজির হয়, তাহলে খন্দকার অর্ধেক বিস্কুট ফেরত পাবেন, এমনই মনে হয় তাঁর প্রস্তাব শুনলে।
আমার খুব ইচ্ছে আমাদের সবার কাছে সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকারের বক্তব্যের দায়ভার প্রকাশক খানিকটা হলেও গ্রহণ করে তাঁকে যেন তাঁর সম্মানটুকু ফিরিয়ে দেয়।
অধ্যাপক ইকবাল তুচ্ছ ব্লগ-ফ্লগ পড়ে সময় নষ্ট করবেন না জানি। তারপরও বিনয়ের সঙ্গে তাঁকে বলি, বইটি বিক্রি করে যে অর্থ প্রথমা প্রকাশন উপার্জন করছে, তার একটি নির্দিষ্ট শতাংশ কি খন্দকার রয়্যালটি হিসাবে পাচ্ছেন না? তাঁর অসম্মানের বিনিময়ে মতি প্রকাশক একলাই কামাচ্ছে, ওনাকে কি কিছুমিছু দিচ্ছে না?
দ্বিতীয়ত, এ কে খন্দকার তো হামাগুড়ি দেওয়া শিশু নন, যে ওনাকে ভুলিয়েভালিয়ে বই "প্রস্তুত" করে মতি ওনাকে অপমানের দিকে ঠেলে দেবে। উনি সবকিছু জেনে বুঝে যেমন খন্দকার মুশতাকের কাছে আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন, সবকিছু জেনেবুঝে যেমন জিয়ার রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন, সবকিছু জেনেবুঝেই যেমন এরশাদের মন্ত্রী আর মাওলানা মান্নানের সহকর্মী হয়েছিলেন, তেমনই এ বইটাও সবকিছু জেনেবুঝেই লিখেছেন (আসলে "প্রস্তুত" করতে সহায়তা করেছেন)। মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টিকে বাংলাদেশে সবচেয়ে অপমান যদি কেউ করে থাকে, তিনি আবদুল করিম খন্দকার নিজেই।
এতো কথার পর মুখে চলে আসা থুতু গিলে ফেলে তৃতীয় অনুরোধটা বিনয়ের সঙ্গেই করি, মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়কের অসম্মান বিক্রি করে পয়সা কামানো মতি প্রকাশকের পত্রিকা কিশোর আলোতে পরবর্তী লেখাটি কী নিয়ে লিখবেন স্যার?
মন্তব্য
পড়লাম।
জাফর ইকবাল-এর লেখাটা সময়াভাবে পড়া হয়নি। ওই লেখাটার এই বিষয়গুলো (যা আপনি লেখায় আলোচনা করেছেন) নিয়ে কাউকে সরাসরি কিছু বলতে শুনলাম না! হয়তো আমার লিস্ট ছোট বলে চোখে পড়েনি।
আছায্য পাটিগণিতের মর্মটা শেষে এসে বুঝলাম
আজ সারাদিন ফেইসবুকে বন্ধুরা খুব কঠিন ভাবে সমালোচনা করেছে স্যারের লেখাটার। ব্যস্ততার কারণে মূল লেখাটা পড়া হয় নি; আর ফেইসবুকের এক প্যারার সমালোচনায় ঠিক কী কারণে সমালোচনা করা হচ্ছে সেটা ফুটে ওঠে না, তাই বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল। আপনার লেখায় বিষয়টা পরিষ্কার হলো। লেখাটা পড়ে গঠনমূলক আলোচনায় অংশ নিব কাল। তবে প্রাথমিক ভাবে স্যারের লেখার যে অংশবিশেষ এখানে এসেছে, সেগুলো পড়েই খুবই হতাশ হয়েছি। এ কে খন্দকারের মত একজন মানুষকে কেন ডিফেন্ড করতে হবে, সেটাই মাথায় আসছে না। এর আগে একবার স্যার ড ইউনুসকে ডিফেন্ড করেছিলেন, আজ এ কে খন্দকারকে। স্যারের লেখার একটা অন্যরকম গুরুত্ব আছে আমাদের কাছে। এটা জেনেও কেন তিনি এই ডিফেন্ড করার কাজটা করেন, সেটা আমার বোধগম্য হয় না। যাক, বিস্তারিত মন্তব্য কাল করবো।
টুইটার
মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখাটা পড়ে অত্যন্ত হতাশ বোধ করেছি। এত ভুলভাল লজিকে ভরা লেখা তার কাছ থেকে আশা করি নাই। এ কে খন্দকার তার বই নিয়ে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর এর দ্বিতীয় সংস্করণে কিন্তু ভুল সংশোধন করেনি। তাহলে প্রকাশকের ঘাড়ে সব দোষ দিয়ে খন্দকারকে ভাল মানুষ বানানোর চেষ্টা করা কেন!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল যদিও প্রশ্নের বা সমালোচনার উপরে উঠে যাননি, সমস্যা হচ্ছে কিছু মানুষ তাকে দেবতা বানিয়ে রেখেছে, তারা মুহম্মদ জাফর ইকবালের বিরুদ্ধাচরণ সহ্য করতে পারেনা। আবার কিছু মানুষ তাকে সমানে ব্যক্তি আক্রমণ করতে থাকে। দুঃখজনক ব্যাপার হল মুহম্মদ জাফর ইকবাল মাঝেমাঝেই ভুলভাল বক্তব্য দেন যেটা চরম ক্ষতিকর। তার অবস্থান থেকে এ ধরনের বক্তব্য ক্ষমার অযোগ্য।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার প্রথমাকে ফোন করে পাণ্ডুলিপি দেখতে চাওয়ার বদলে, সেই একই ইফোর্ট দিয়ে এ কে খন্দকারকে ফোন করে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেই পারতেন, যে সে ঐ আলোচ্য কথা লিখেছে (বা প্রস্তুত করিয়েছে) কি না। আশা করি স্যার তার ভুল বুঝতে পারবেন, এবং পরবর্তীতে আরো গভীরভাবে যাচাই না করে স্রেফ ব্যক্তিগত মুগ্ধতার ভিত্তিতে এ ধরনের সাফাই লেখা থেকে বিরত থাকবেন।
চমৎকার লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এ কে খন্দকারের উপর মুহম্মদ জাফর ইকবালের বিশ্বাসের মাত্রা দেখে সত্যি চমকে গেছি। হতে পারে ব্যক্তিগত মুগ্ধতা। আজকে তাঁর মাতৃবিয়োগের দিনে খুব বেশী কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু মনে হলো এই সাফাই লেখাটা তিনি না লিখলেও পারতেন। আমরা দেশের সব নির্ভরযোগ্য মানুষের উপর বিশ্বাস হারিয়ে আস্থাহীনতার জগতে বাস করতে চাই না।
আপনি প্রথমার কাছে পাণ্ডুলিপি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। অথচ খন্দকার সাহেবের কাছে জানতে চাননি তার তথ্যের উৎস কি। সেই উৎসে কোন ভুল আছে কিনা। কিন্তু লক্ষ্য করলাম যে একে খন্দকার জিয়ে পাকিস্তানের উপর যেরকম আস্থা রেখেছেন, আপনিও একে খন্দকারের উপর সেই পরিমান আস্থা রেখেছেন। আপনি প্রথমাকে দোষী বলতে চাইলেও খন্দকারকে নির্দোষ বলতে চেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আপনার উপর অতিরিক্ত আস্থা থাকার কারণেই আপনার খন্দকার বিষয়ক এই অবস্থান আমাদের অনেককে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই খন্দকার সাহেবের এজেণ্ডার সাথে আপনার কোন সহবাস নেই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
জাফর ইকবাল স্যার আগেও আবেগের রেফারেন্সে অনেক হাবিজাবি কথা ঢুকিয়েছেন ভালো ভালো টপিক নিয়ে লেখার মধ্যে। কিন্তু এবারেরটা পুরা বিশুদ্ধ আবর্জনা।
এটা স্যারের একটা "বেসিক" চিন্তাভাবনা-সমস্যা। ডঃ ইনুচ ইস্যুতেও স্যারের একই রকম বক্তব্যের একটি লেখা প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিলো ২০১২র ২৬শে মে। এসব ক্ষেত্রে তিনি যুক্তি এড়িয়ে আবেগের রেফারেন্স ব্যবহার করেন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আচ্ছা, ড: ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেয়ার পর ৪/৫ বছরে সরকার কোনো এমডি জোগাড় করতে পারছে না কেন? পত্রিকায় দেখলাম সরকার যাদেরই এমডি হিসেবে নিয়োগ দিতে চেয়েছে তারা কেউই সেই দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। সেদিন দেখলাম বাংলাদেশ ব্যাংকও এমডি জোগাড় করার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছে। বেসিক চিন্তা-ভাবনা সমস্যাযুক্ত মুহম্মদ জাফর ইকবাল যে জিনিসটা তাঁর আবেগ দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন , আপনার সেটা বুঝতে কোথাও সমস্যা হয়নি তো?
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের দায়িত্ব নিতে অপারগতা জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ককে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এমডি যোগাড় করার কথা কেউ বলেনি, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের কোনো বক্তব্যও নেই। আপনি খবরগুলো আরেকটু মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর পরিচালনা পর্ষদের পার্থক্য বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এলাকার শিক্ষিত ব্যক্তিদের সাহায্য নিতে পারেন।
পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। এমডি জোগাড় করা যাচ্ছে না কেন এই ব্যাপারে কি একটু আলোকপাত করবেন?
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
আমার আলোকপাতও বড়জোর অধ্যাপক ইকবালের খন্দকারের পুস্তকপাঠপরবর্তী মন খারাপের মতোই, "একটু" হতে পারে, কারণ এ ব্যাপারে আমিও কমবেশি আপনার মতোই মুরুক্ষু। তারপরও আসুন চেষ্টা করে দেখি, আমাদের দুইজনেরই এলেম চেষ্টার শেষে বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আমরা এক এক ধাপ করে আগাবো। প্রত্যেক ধাপ শেষে আমি আপনাকে প্রশ্ন করবো, আপনি আপনার বুঝ মোতাবেক জবাব দেবেন। এতে করে আমাদের দুইজনের খাটনির সুষম বণ্টন হবে।
ধরেন সরকার একজন অর্থনীতিবিদ শুক্কুর আলিকে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এমডি হিসাবে যোগাড় করে আনলো। আপনি কি জানেন এর পর পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা কী?
১. শুক্কুর আলির তাতে রাজি হতে হবে, ২. পরিচালনা পর্ষদের সেটাকে অনুমোদন দিতে হবে । নাকি?
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
সঠিক। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ সরকারের ধরে আনা শুক্কুর আলিকে অনুমোদন করবে না, এমন ইঙ্গিতই দিয়েছে। তারা ইউনূসের পছন্দের কোনো এক রজ্জব আলিকে চায়।
এখন এই পরিচালনা পর্ষদে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ৭৫ ভাগের মালিক লক্ষ লক্ষ দরিদ্র নারীদের প্রতিনিধিদের থাকার কথা। সরকার গ্রামীণ ব্যাঙ্কের জন্য ২০১৩ সালে পৃথক আইন করায় এখন একটি প্রত্যক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঐ লক্ষ লক্ষ নারীদের মধ্যে থেকে নয় জনকে নির্বাচন করা হবে। নতুন পর্ষদ আসবে, তারপর সরকার কোনো এক শুক্কুর আলিকে এনে পর্ষদের সামনে হাজির করবে অনুমোদনের জন্য।
বুঝতে পার্লাম --ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
ইনুচ প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল আসলে কি বুঝেছিলেন, এটাই আমার কাছে ক্লিয়ার না। আপনি বুঝায়া বলেন।
এটা আমার জানা নাই। এর কারণ আপনি জানলে বলতে পারেন।
আমার মন্তব্যের কারণ, সন্মানিত মানুষের সন্মান রক্ষায় ব্যর্থ আওয়ামী লীগকে স্যার ২০১২ সালে যে ভোটের থ্রেট দিয়েছিলেন, সেটা নিয়া। পরবর্তীতে দেখা গেছে, ইনুচ আসলে ভোটের সমীকরণে প্রশ্নাতীত সন্মানিত কেউ না, তার স্বার্থ যারা রক্ষা করবে, সে তাদের দলে। আমলীগ রক্ষা করে নাই। বাকি থাকে বৃহত্তর জামায়াত। জাফর স্যার ইনুচের জামায়াতের পক্ষে যাওয়ার একটা স্কোপ অবচেতনেই তৈরি/জাস্টিফাই করেছিলেন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমার কাছে মনে হয়েছে সরকার ড: ইউনূসের ইস্যুটা যেভাবে হ্যান্ডেল করেছে , সেটা স্যারের পছন্দ হয় নাই। ড: ইউনূসকে যেভাবে অপমান করে তাঁর গড়ে তোলা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেয়া হয়েছে -- তার চেয়ে অনেক ভালোভাবে সরকার ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে পারত -- আমার কাছে মনে হয়েছে এরকমটাই তাঁর অভিমত। সরকার যেভাবে ড: ইউনূসকে শত্রু বানিয়ে ফেলেছিলো সেটা আদৌ জরুরি ছিলো কিনা -- নাকি তাঁকে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যবহার করার সুযোগ নেয়া সরকারের উচিত ছিল -- এরকম প্রশ্নই তো তিনি সম্ভবত করেছিলেন এখানে --
আর স্যার যে ভোটের হিসাব-নিকাশ করেছিলেন সেটাকেও তো আমার খুব একটা ভুল মনে হয়নি । গত জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিকে তাকালে সেটার প্রমাণ হয়ত পাওয়া যেতে পারে।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
আচ্ছা, সরকার ঠিক কীভাবে ইউনূসকে অপমান করেছে? আর কী করলে ইউনূসের অপমান হতো না?
আর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কয় শতাংশ গ্রাহক সিটি কর্পোরেশন এলাকার অধীনে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত? আমার তো ধারণা ছিলো তারা পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র নারী। এ তথ্যটা আগে যোগাড় করুন।
এই সহজ জিনিসটা না বোঝার ভান করলে আপনাকে কিভাবে বোঝাই!? তাও আপনার সুবিধার জন্য একটা উদাহরণ দিয়ে চেষ্টা করে দেখি --আপনাকে দিয়েই উদাহরণটা দেই। আপনি সচলায়তনের একদম প্রথম থেকে এর সাথে জড়িত -- এর পেছনে প্রতিদিন আপনার শ্রম, ঘাম আর মেধা ব্যয় করে একে গড়ে তুলছেন। এখন ৩০ বছর পর কেউ যদি যেকোনোভাবে আপনাকে ঘাড় ধরে সচলায়তন থেকে বের করে দেয় এবং আপনাকে এর সাথে কোনোরকম সংস্রব রাখতে না দেয়, তাহলে অন্য অনেক অনুভূতির সাথে আপনার একটু অপমানিতও বোধ করার কথা। ।
এই তথ্যটা আমার পক্ষে এই মুহূর্তে জোগার করা সম্ভব নয়-- আমি শুধু কমনসেন্স ব্যবহার করে রিজনিং করতে পারি। তবে আপনি যদি কোনোভাবে জোগার করতে পারেন তার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ জেনে রাখবেন। আর কোনোভাবে যদি জানতে পারেন গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি, তাদের কত শতাংশের কারণগুলো কি কি --তাহলে সেটাও একটু জানাবেন অনুগ্রহ করে। সে সংখ্যাগুলোর দিকে তাকিয়ে আমি যদি বুঝতে পারি আমার রিজনিংয়ে কোনো ভুল হচ্ছে, সে ভুল সাগ্রহে স্বীকার করে নিব বলে কথা দিচ্ছি!
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
আমার সঙ্গে ইউনূসের তুলনা? "একটু মন খারাপ" না, একেবারে গভীরভাবে অধ্যাপকিকবালীয় কায়দায় আহত হলাম। কিন্তু তারপরও উদাহরণের স্বার্থে পার্থক্যগুলো বোঝার চেষ্টা করি।
[১] সচলায়তনে বয়সসীমা টপকে গেলে অবসরের বিধি নেই। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের জন্যে আছে।
[২] সচলায়তনে বয়সসীমা টপকে গেলে অবসরের বিধি থাকলে আমি নিজের সম্মানের কথা চিন্তা করে অবসর নিয়ে ফেলতাম। যেভাবে বাংলাদেশের সব জনসেবকরা নিয়ে থাকেন। জোর করে আরো ১০ বছর অবৈধভাবে সচলায়তনে আমি পড়ে থাকতাম না। বাংলাদেশের ইতিহাসে ইউনূসই একমাত্র লোক যাকে আইন প্রয়োগ করে অবসরসীমার পর গদি থেকে সরানো হয়েছে।
আম্লীগকে কারা ভোট দেয়নি, সেই হিসাব আমি কেন নিতে যাবো? আমি তো কোনো স্টেটমেন্ট দিইনি। দিয়েছেন আপনি, আপনি এখন উপাত্ত দিয়ে আপনার স্টেটমেন্টকে করোবোরেট করুন। অধ্যাপক ইকবালের মতো ফট করে একটা কথা বলে ফেলার বদভ্যাসটা ত্যাগ করে আসুন তথ্য এবং যুক্তি দিয়ে কথা সাজাই। ইউনূসের প্রসঙ্গ উঠলেই যদি "যুক্তিতর্ক" বাড়িতে রেখে আসেন, তাহলে কীভাবে হবে?
এবার নিচের প্রশ্নটার উত্তর দিন।
কখন ইউনূসের অপমানিত হওয়া উচিত?
[১] দরিদ্র নারীদের কুড়ি [নাকি চল্লিশ] শতাংশ সুদে টাকা ধার দিয়ে ওদিকে নিজের বাপের প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশনের জন্য পাঁচ শতাংশ সুদে টাকা ধার নিয়ে পরে আবার পরিচালনা পর্ষদকে দিয়ে সেই সুদ বাবদ টাকা মওকুফ করিয়ে নিলে।
[২] গ্রামীণ ব্যাঙ্কের দরিদ্র নারীদের কুমীরছানা হিসেবে প্রদর্শন করে বিদেশ থেকে যোগাড় করে আনা টাকা গ্রামীণ কল্যাণ নামে একটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঢুকিয়ে সেই টাকা আবার গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে ঋণ নিতে বাধ্য করলে।
[৩] [২]নং পয়েন্টে টাকার নয়ছয় ধরা পড়ার পর এ নিয়ে নরওয়েতে ইউনূসের নামে তদন্ত কমিটি খোলা হলে।
[৪] নির্লজ্জের মতো অবসরসীমা অতিক্রম করার পর আরো ১০ বছর একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ অবৈধভাবে আঁকড়ে ধরে রাখার কারণে গলাধাক্কা খেলে।
[৫] ওপরের সবকয়টি।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
শীর্ষটীকাঃ
হিমু ভাইরে ইউনূসের যায়গায় কল্পনা কইরা হাসি থামাইতে পারতেছি না কোনো ভাবে
প্রিয় হিমু ভাই, আপনার চন্ডিশীরা (ও অন্যান্য হড়ড়) পড়লে আমরা শিহরণ বোধ করি। আপনে অত্যন্ত মানী লোক, অপমানিত হয়েন না, পিলিজ লাগে।
যাই হোক, লাইনে আসি
ডঃ ইউনূস-কে 'গ্রামীণ ব্যাংক' এর সাথে কোনোরকম সংস্রব রাখতে না দেয়া এবং যেকোনোভাবে বের করে দেয়া হয়েছে এই অভিযোগটিই অসত্য। আইনের ভেতরে থেকে ডঃ ইউনূসকে আইনের সাথে সাঙ্ঘর্শিক নয় এমন পদের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সাথে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তিনি সেই আহ্বান পায়ে ঠেলে হাইকোর্টে গিয়ে হেরে এসেছেন, তারপর কান্নাকাটি শুরু করেছেন তাঁকে নাকি "কোনোরকম সংস্রব রাখতে না দেয়া" টাইপের কষ্ট দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রেও কি আমাদের সোজাসাপ্টা ঘটনা চেপে গিয়ে "যুক্তিতর্ক" পকেটে পুরে তার মান রক্ষায় তৎপর হওয়া উচিৎ?
উত্তর "হ্যাঁ" হয়ে থাকলে, কেন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটুকু জানা ছিল না -- জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ছয় মাস পরই দেখবেন এই উপলব্ধি আবার উধাও, আবার গোড়া থেকে প্যাচাল পাড়তে হচ্ছে। এর আগেও রাজিব মোস্তাফিজের সঙ্গে ইউনূস প্রসঙ্গে কথা হয়েছিলো, যতদূর মনে পড়ে তিনি তর্কে নেমে যুক্তি খুঁজে না পেয়ে "সবকিছু যুক্তিতর্ক দিয়ে ফয়সালা করা যায় না" গোছের মারফতি কথা বলে ইতি টেনেছিলেন।
পীরের মুরিদদের অনেক সমস্যা। একবার বড় পীর একটা ফালতু কথা বলে ফেলছে, মুরিদের দল এখন ঐ কথার ঘানি টানছে, যদিও পীরছাহেব এই প্রসঙ্গে নিজেই আর মুখ খুলতে চায় না।
আপনার সঙ্গে তো আমার এই বিষয়ে ব্লগে এবং ফেসবুকে অনেক তর্ক হয়েছে এবং এই পোস্টের আগে কোনোটাই কনক্লুসিভ ছিল না ।
কখনও বলেছি বলে তো মনে পড়ে না। আমার স্মৃতিশক্তি তেমন ভালো না, ভুলে যেতে পারি -- তা্ই কোনো রেফারেন্স দিতে পারেন?
আর পীর-মুরিদ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আপনার তর্কে জিততে সুবিধা হয় জানি, কিন্তু আপনার জ্ঞাতার্থে জানাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং এই অধম প্রত্যেকেই নিজস্ব বিচার বিবেচনা দিয়ে চলি -- সবসময় যে একজনের বিবেচনা আরেকজনের সাথে মেলে তাও না এবং সে বিবেচনায় ভুলত্রুটি হয়ে গেলে স্বীকার করতে জানি। আপনার নিশ্চয়ই কোনো ভুলত্রুটি হয় না -- কারণ, আজ পর্যন্ত কোথাও আপনাকে ভুল স্বীকার করতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আমার ভুল হয়ে থাকতে পারে, সে ভুল ভাঙানোর জন্য একটু রেফারেন্স দিয়ে জানাবেন সম্ভব হলে।
আর আমার ভুল স্বীকার করতে পারার নমুনা হিসেবে এই পোস্টের উদাহরণ দিচ্ছি। আর মুহম্মদ জাফর ইকবালের ক্ষেত্রে গণজাগরণ মঞ্চের এই ভাষণের রেফারেন্স দিচ্ছি।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
ভদ্রে রাজিব মোস্তাফিজ, আমি বাটপারদের পক্ষে কীবোর্ড ধরি না, তাই ভুল যুক্তি আমাকে দেখাতেও হয় না। তারপরও আমার যুক্তির ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি স্বাগতম। এখন পর্যন্ত আপনি কাজটা করতে পারেননি, আপনার দৌড় টোনে সমস্যা খুঁজে পাওয়া পর্যন্তই আটকে আছে, তবে ভবিষ্যতে পারবেন আশা করি। আর আপনি নিজস্ব বিচার বিবেচনা দিয়ে চলেন, সেটাও আমার মনে হয় না। আমার মনে হয় আপনি সবসময় কিছু বিবেচনার উৎসের দিকে তাকিয়ে থাকেন, এবং সেই উৎস থেকে আসা "যুক্তি"কে অবলম্বন করেন। আপনার শিক্ষক অধ্যাপক ইকবাল সেরকম উৎসের একটি। এটা নোটবইনির্ভরতা বা পীরমুখীনতার আরেকটা চেহারা। যখনই ঐ উৎসনির্গত যুক্তির পাল্টা যুক্তি আসে, আপনি অবলম্বন হারিয়ে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
ছাত্র যদি শিক্ষকের বক্তব্যের ত্রুটি ধরতে না পারে, ধরে নিতে হবে শিক্ষক ব্যর্থ। আপনিসহ অধ্যাপক ইকবালের আরো যারা নিঃশর্ত-অনুরাগী ছাত্র আছেন, তারা যতো দ্রুত এটা বুঝতে পারবেন, শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপক ইকবালের ভাবমূর্তি ততো উজ্জ্বল হবে।
ইনুচকে অবৈধভাবে আঁকড়ে থাকা পদ থেকে সরানো হয়েছে (আদালতেও গেছে বিষয়টা), সরকারের কেউ মাস্তানি করে সরায় নাই। সুতরাং "অপমান" শব্দটা এক্ষেত্রে খাটে না।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইনুচের লোকজন যদি বিএনপিকে ভোট দেয়, তাইলে ইনুচ এবং জাফর ইকবাল দুইজনই একটু গ্যাঁড়াকলে পড়ে, বিষয়টা ভেবে দেখবেন। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পদ থিকা, যা আবার অবৈধভাবে আঁকড়ে ধরে ছিলো, সরায়া দেয়ার জন্য যে লোক বৃহত্তর জামায়াতের পক্ষে যেতে পারে, তাকে ঠিক কোন যুক্তিতে "সন্মান" করতে হবে, এটা বোধগম্য না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমার দৃষ্টিতে "অবৈধ ভাবে পদাধিকার করে থাকা" এটিও দূর্নীতি। সেক্ষেত্রে, জাফর স্যারের লেখার (বলাইদা'র লিঙ্ক দ্রষ্টব্য) শেষাংশ জানাচ্ছেঃ
এবং ড ইউনুস প্রসঙ্গে একই লেখকের একই লেখার এই অংশ জানাচ্ছেঃ
এখন, দাগ দেয়া এই দুটি বক্তব্যের কোনটিকে কোনটি 'ওভাররাইড' করবে? আমি বিভ্রান্ত!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনি অবৈধ ভাবে পদাধিকার করে থাকা বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন? আপনি কি কোনোভাবে বলতে চাচ্ছেন ড: ইউনূস পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন? আর পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে দায়িত্ব পালন করলে সেটা আবার অবৈধ হচ্ছে কিভাবে একটু বুঝিয়ে বলবেন?
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
এখানে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের চেয়ে এ সংক্রান্ত আইন প্রাধিকার পাবে। পরিচালনা পর্ষদ চাইলেই দেশের আইনে যা বলা আছে, সেটাকে অমান্য করে কোনো কিছুর অনুমোদন দিতে পারে না। যেমন ধরুন, আজ যদি ইউনূস রাস্তায় কারো পকেট থেকে টাকা চুরি করে ধরা পড়ে বলেন যে পরিচালনা পর্ষদ তাকে এর অনুমোদন দিয়েছে, তাহলে কি তিনি ছাড় পাবেন?
ইউনূস যে অবৈধভাবে এই পদে ছিলেন, সেটা কারো "যুক্তিতর্ক"বিবর্জিত স্টেটমেন্ট নয়, বরং দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মীমাংসিত বিষয়।
হিমু ভাই ইতোমধ্যে উত্তর দিয়েছেন, তবু প্রশ্নটি যেহেতু আমাকে করা তাই এক কথায় জানাচ্ছি, আমি এখানে বুঝিয়েছি:
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ইনুচের কিকড আউট হওয়া যে আদালতে স্ট্যাবলিশড, এটা অধিকাংশ মানুষই জানে না। মিডিয়ার কল্যাণে লোকজন জানে হাসিনা তারে অসন্মান করে গায়ের জোরে তাড়াইয়া দিছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাইদা,
মিডিয়ার কল্যানে বোধিলাভকৃত এইসব লোকজনের মধ্যে আলাভোলা/সাদাসিধা লোকজন থাকলে গায়ে লাগত না। কিন্তু রীতিমত চিন্তাশীলতার দাবিদার কেউ যদি শ্রদ্ধেয় জাফর স্যারের দেখানো পন্থায় "যুক্তিতর্ক" পকেটে পুরে এস্টাবলীশড এই সত্য চেপে যায় এবং ধরায়ে দিলে ত্যানা পেচায়ে পাশ কাটায় তখন প্রথমে বিরক্ত লাগে, পরে ভয় লাগে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই স্টাইলটা আসলে অনেক সময়ই খুব কাজের। একে বলে "মাইরাও জিতা, কাইন্দাও জিতা"। এর আরেকটা ব্যবহারিক প্রয়োগ হয়, নিজেকে "অরাজনৈতিক" ট্যাগ দিয়া তারা রাজনীতির আলাপে বয়ান দেয়ার ক্ষেত্রে। যেমন, "জামায়াতের লোকজন কতো সৎ, কোনো দুর্নীতি নাই, কোনো গ্রুপিং নাই, কতো জনসেবা করে" এই বয়ান দেয়ার পরে যদি চেপে ধরা হয় "জামায়াত রগ কাটে কেন?", তাহলে উত্তর আসবে "আমি নিজে দেখি নাই, নিজে না দেখে কিছু বিশ্বাস করা ঠিক না"। এরপরে যখন ধরা হবে, "৭১ এ হত্যা-ধর্ষণ করেছিলো কেন, নাকি তা ও নিজে দেখেন নাই?" তখন বলবে "ধুর, রাজনৈতিক আলাপ ভালো লাগে না, আমি অরাজনৈতিক লোক! অন্য প্রসঙ্গে আসেন!" নিজেকে এইরকম ট্যাগ দেয়া মানে একটা স্কেইপ রুট রাখার চেষ্টা।
ইনুচের ক্ষেত্রে জাফর ইকবাল স্যারও জানেন, সে অবৈধভাবে গ্রামীণের পদ আঁকড়ে ছিলো। প্রশ্ন করলে আটকে যাবেন, এজন্য আগেই যুক্তিতর্ককে আলোচনার বাইরে রেখেছেন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
হুমম...
০০।
জাফর ইকবাল স্যার আহমদ ছফার লেখার ভক্ত। দর্শনেরও ভক্ত কিনা জানা নেই। সেটি হয়ে থাকলে অন্ধ গুরুভক্তি এবং নির্বাচিত আবেগ তাঁর জন্য কোনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাপার নয়। বিশেষতঃ যখন ড. ইউনুস ইস্যুতে এখনো তিনি তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেননি, করতেও চাননি।
০১।
আহবায়ক/সভাপতি/সম্পাদক/সমন্বয়ক ইত্যাদি সাংগঠনিক পদ। আব্দুল করিম খন্দকার স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে এমন পদ থেকে পদত্যাগ করতেই পারেন। কেবল এটুকুতে কোনও দোষ দেখি না (বেখাপ্পা সময় বাদে)। এটি খন্দকার সাহেবের ব্যাক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু তিনি যখন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের "প্রাথমিক সদস্যপদ" ত্যাগ করেন সেটি আসলে কি বোঝায়? কেউ কি বলবেন?
০২।
গত প্রায় এক মাস যাবত আব্দুল করিম খন্দকারকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না কেন? সম্ভবত তিনি শেষবারের মত জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছিলেন বইটির প্রকাশনা উৎসবে। তাঁর এই অনুপস্থিতির কি কোনও আলাদা তাৎপর্য আছে?
০৩।
'প্রথম আলো' নামের মাফিয়া সংগঠনটির প্রকাশনা উইং 'প্রথমা' দ্বারা বা তার মাতৃপ্রতিষ্ঠান দ্বারা আব্দুল করিম খন্দকার কি কোনোভাবে "ব্ল্যাকমেইলড" হতে পারেন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হিমু ভাই,
লেখাটা প্রিন্ট করে অধ্যাপক ইকবাল মশাইকে পাঠান। উনি শুনেছি ইমেইলও পড়েন। কাজেই ইমেইলও করতে পারেন। পড়ার পর মানীর অপমানে নিগঘাত জ্ঞান হারাবেন!
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু ইতর বিক্রি হয়েছে। তারা সম্মানের যোগ্য নন। এতে বাকি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের টেনে আনাটাও অধ্যাপক ইকবালের তথাকথিত "মত প্রকাশের স্বাধীনতা।"
মাত্র দুয়েকদিন আগে ওনার মাতৃবিয়োগ হয়েছে। এই মুহূর্তে কোন মানী-অমানীর চিন্তায় বা কোন উড়ো ইমেইলাঘাতে 'নিগঘাত জ্ঞান হারানোর' মত অবস্থায় উনি নেই বোধহয়! তাই বলে উনি যে এই অবস্থাতেও মাতৃশোকের বদলে আপনার উড়ো ইমেইলাঘাতে 'নিগঘাত জ্ঞান হারাচ্ছেন' - এমন ভাবনার বিমলানন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না যেন। করলে সেটাই হবে আসল ট্র্যাজেডি!
****************************************

ইয়ে---ব---
জাফর ইকবাল স্যারের লেখা নিয়ে মন্তব্য বা ব্লগিং তো নেহাত সময় নষ্ট। এরপর থেকে ভাবছি ওঁর আবেগ-নদনদে কলামগুলো এড়িয়ে যাবো।
মার্জিত ভাষায় যুক্তিসঙ্গত উপস্থাপন।
মোজাম্মেল কবির।
দুর্ধর্ষ!
এই লেখাটায় জাফর ইকবাল স্যারের কিছুই আসবে যাবে না, কারণ তিনি নিজের লেখার ফিডব্যাক সজ্ঞানে এড়িয়ে গিয়ে থাকেন। তবে এই লেখায় ওনার অন্ধ ভক্তপাঠকদের উনি একটা ভ্রান্ত ধারণা দিচ্ছেন সেটা অনলাইন ফোরামগুলোতে পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন।
ইতিহাস নিয়ে লেখায় হয়তো কিন্তু অথবা সম্ভবত বরং-এর সমস্যা বুঝতে জাফর ইকবাল স্যারের লেখা থেকে একটা উদ্ধৃতি দেই। স্যার লিখেছেন,
বাস্তবে খন্দকার ৭ই মার্চের ভাষণ নিজে শোনার কথা লিখেছে, স্পষ্টভাবেই লেখা আছে,
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
একেবারে ষণ্ডচক্ষু, এখন যদি উনি অপমানিত বোধ করেন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
১৯৭১ এর অনেক পরে জন্ম নিয়েও তো আমি ৭ই মার্চের ভাষণ শুনেছি। ওই রকম কোনো শোনার কথা বলা হয়নি তো?
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
না। যা লিখেছে, সরাসরি শোনার কথা মনে হয়।
পুরোটাই ফার্স্টহ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স নির্দেশক। ঘটনার টাইমলাইনও ৭১।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
উদ্ধৃত অংশের জন্য ধন্যবাদ -- কিন্তু আমি ঠিক নিশ্চিত হতে পারলাম না। ৭ই মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে উপস্থিত থাকার কথা কি বলেছেন কোথাও?
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
আমি বই পুরোটা পড়ি নাই। জয় পাকিস্তানের আগের এই অংশের টাইমলাইন ৭১। এই কনটেক্সটে কেউ যদি বলে ভাষণটা শুনেছে, তাহলে ৭১এই শুনেছের বিকল্প নাই। রেসকোর্সে না থেকেও রেডিওতে ভাষণ শুনতে পারে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
খন্দকার সাহেবের বই অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর। নিজের জীবন কাহিনী বর্ণনায় তিনি সন-ক্ষণের খুঁটিনাটি মুহুর্মুহভাবে উপস্থাপন করেছেন। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবহুল অনেক অংশের বর্ননায় তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত ধোঁয়াশা জারি রেখেছেন। ৭ মার্চের ভাষণ সংক্রান্ত অনুচ্ছেদটি তেমনই একটি বিভ্রান্তিকর ও স্ববিরোধী অনুচ্ছেদ।
২৭ মার্চে (যখন অধিকাংশ বাঙ্গালি অফিসার বিদ্রোহী/নিহত/গ্রেপ্তার) তখন তিনি বহাল তবিয়তে বিনা বাধায় ক্যান্টনমেন্টে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আগের বিভিন্ন সময়ের বর্ণনায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি ক্যান্টন্মেন্টে অবস্থান করেছেন বলেই জানা যায়।
সাত মার্চে জনাব খন্দকারের অবস্থান কোথায় ছিল তা পরিষ্কার নয়। একস্থানে তিনি বলেছেনঃ
এর বিপরীতে, রেসকোর্স ময়দানের চিত্রটি কেমন ছিল তা নিয়ে অন্যের ভাষ্য ধার করেও তিনি কোন বর্ননা দেননি। এই ঘটনা পরম্পরায় ঐ দিন তিনি ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন বলেই মনে হয়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ঠিক। তার বই অনুসারে সে ঘটনার প্রবাহ গভীরভাবে লক্ষ্য রাখছিলো। আর ৭ই মার্চের ভাষণ হঠাৎ দেয়া না, সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলো (খন্দকারের বই অনুসারেই)। সুতরাং সেও ভাষণটা লাইভ (রেডিও) শোনার সম্ভাবনা বেশি।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
৭ মার্চের ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়নি। পাকবাহিনী রেডিওর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। পরদিন ৮ মার্চ সকালে এ ভাষণ ঢাকা বেতার থেকে সম্প্রচার করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ ইনফো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
পুনশ্চঃ
প্রথমা থেকেই প্রকাশিত 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর' বইটি গতকালকে হাতে পেয়েছি। এ কে খন্দকার, মইদুল হাসান ও এস আর মীর্জার কথোপকথন ভিত্তিক এ বইটিতেও খুজে দেখলাম, ৭ মার্চ নিয়ে বাকি দুজনের স্মৃতিচারণ আছে, খন্দকার সাহেবের নেই।
এই বইটি আমি আগে পড়িনি। উল্টেপাল্টে দেখতে গিয়ে ইনটারেস্টিং একটা ব্যাপার পেলাম। এই বইয়ে খন্দকার সাহেবের বেশ কিছু কথার সঙ্গে "১৯৭১ ভেতর বাহির" বইয়ে উল্লিখিত প্রাসঙ্গিক কথার গড়মিল আছে।
'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর' বইটি '১৯৭১ ভেতর বাহির' বইটির মতন পান্ডুলিপিবিহীন বেওয়ারিশ নয়। উক্ত বইয়ের ভূমিকায় অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদের ভাষ্যমতে জানা যায় বইয়ে প্রকাশিত এই ত্রয়ীর কথপোকথনটি "অডিও ক্যাসেটে রেকর্ড করা আছে"। এই রেকর্ডটির অবিকৃত রূপ অবিলম্বে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
গরমিলগুলো নিয়ে একটা আলাদা পোস্ট দিতে পারেন নাকি ভাই?
হিমু ভাই,
বইটি পুরো পড়ে দেখারও সময় পাইনি। উল্টেপাল্টে দেখতে গিয়ে একনজরে কিছু চোখে পড়েছে। এই অসঙ্গতি নিয়ে আমিই পোস্ট দেব ভাবছিলাম, বলে তো আরও সাঁকো নাড়িয়ে দিলেন।
এটি কি সিরিজের শেষে দেয়া যায়? তাহলে এই দুটি বইয়ের "খন্দকার বনাম খন্দকার" একটি আলোচনা করা যেত।
এত বেশী রেফারেন্স জমিয়ে ফেলেছি যে পেশাগত কাজের অবসরে সবগুলো টাইপ করতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। আরও বেশ কিছু বই আসছে, পথে আছে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
তবে জাফর ইকবাল এর লেখায় একটা কাহিনী বেশ বের হয়ে এসেছে। সেটা হল বইটা লেখা হয়নাই, প্রস্তুত করা হয়েছে। যদিও নিজের অনুমোদনে নিজের নামে বই প্রস্তুতির দায় নিজের উপরেই সিংহভাগ বর্তায়।
এই পোস্টে অন্য বিষয়ে অনেক কথাবার্তা হলেও পোস্টের বিষয়ে কোনো আলাপ হয় নাই। এই বিষয়ে আমিও একটা লেখা লিখে সচলে দিয়েছিলাম -- মেটাব্লগিং বা অন্য কোনো কারণে হয়ত সেটা মডারেশন পার হতে পারেনি। যাই হোক, এই পোস্টের মূল বক্তব্যের সাথে আমি একমত কিন্তু পোস্টের টোন আমার পছন্দ হয় নাই । জাফর ইকবাল স্যারের লেখা পড়েও আমার মনে হয়েছে এ.কে. খন্দকারের তীব্র সমালোচনার কারণের সঙ্গে তিনি একমত (তিনি একাধিক বইটি পড়ে মন খারাপ হওয়ার কথা বলেছেন) -- কিন্তু সমালোচনার ধরণ তাঁর ভালো লাগেনি। আমার লেখাটি মন্তব্য হিসেবে এখানে দিয়ে দিচ্ছি --
'এ.কে. খন্দকারের অন্য বই, প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং সালাউদ্দীন আহমদরা'
'প্রথমা' প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি এ.কে. খন্দকারের বই '১৯৭১:ভেতরে বাইরে' নিয়ে চারদিকে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বইটি আপাতত হাতের কাছে নেই এবং খুব দ্রুত পা্ওয়ার সম্ভাবনাও নেই । কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে প্রথমা প্রকাশনী থেকেই প্রকাশিত 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর' নামে একটি বই হাতের কাছে যেটি বেশ কিছুদিন আগে একবার খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম। এই ডামাডোলে ভাবলাম সেই বইটিই আরো একবার পড়ে দেখি। নভেম্বর ২০০৯ এ লেখা বইটির ভূমিকায় মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি সালাহউদ্দীন আহমদ জানাচ্ছেন --
এরপর এই প্রকল্পের আওতায় সংকলিত বইসমূহের একটি তালিকা দিয়ে তিনি আলোচ্য বইটির জন্মপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাচ্ছেন --
সম্প্রতি দৈনিক সমকালে জাতীয় অধ্যাপক এবং রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদের একটি লেখা পড়লাম 'এ কে খন্দকারের বই সম্পর্কে কিছু কথা' শিরোনামে। বোধ করি মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাকেন্দ্রের সভাপতি সালাহউদ্দীন আহমদ এবং এই কলামের লেখক অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদ একই ব্যক্তি। কলামের শুরুতেই তিনি বদরুদ্দীন উমর এবং মঈদুল হাসানের সাথে মতভিন্নতা সত্ত্বেও তাঁদের বন্ধুত্ব যেন অটুট থাকে সেই আশা ব্যক্ত করে আমাদের জানাচ্ছেন সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত বদরুদ্দীন উমরের এই নিম্নমানের(আমার বিবেচনায়) লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেকের তাগিদে কলম ধরেছেন। এরপর তিনি আমাদের জানাচ্ছেন --
এরপর অধ্যাপক আহমদ বর্ণনা করছেন কিভাবে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশে এক নতুন ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটল এবং কিভাবে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সরকারের প্রধান শত্রুতে পরিণত হলেন যার দরুণ সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বশংবদ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান ঘোষণা করেছিলেন, যতদিন তিনি গভর্নর পদে থাকবেন, শেখ মুজিবকে জেলে থাকতে হবে। অধ্যাপক সালাহউদ্দীনের মতে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক বাহিনীর লোকেরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর কিংবা হয়তো কিছুকাল আগে থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল এবং ওই স্বপ্ন বাস্তবায়নে গোপনে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। এরপর তিনি লন্ডনে 'পূর্বসূরি' নামে একটি গোষ্ঠীর সাথে জড়িত হওয়ার কাহিনী বর্ণনা করেছেন যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য গোপনে কাজ করার নিমিত্তে সংগঠিত হয়েছিল। এরপর তিনি আমাদের জানাচ্ছেন --
ঠিক এই কথাগুলোই আমি সম্প্রতি পড়ি তাজউদ্দীন আহমদের বড় মেয়ে শারমিন আহমদের বই "তাজউদ্দীন আহমদ:নেতা ও পিতা" -এ সংকলিত বঙ্গবন্ধুর পার্সোনাল এইড হাজী গোলাম মোরশেদের সাক্ষাৎকারে যা এই পোস্টে মন্তব্য হিসেবে উদ্ধৃত করেছিলাম।
এরপর প্রফেসর সালাউদ্দীন আহমদ ১৯৬৩ সালে আওয়ামী লীগ গঠন থেকে ১৯৭১ এর ৭ই মার্চের রেসকোর্সের ঐতিহাসিক ভাষণ পর্যন্ত ইতিহাসের স্রোতধারাকে লিপিবদ্ধ করেন এভাবে --
এরপর তিনি তাঁর বন্ধুবর বদরুদ্দীন উমরের ৭ই মার্চের নতুন অল্টারনেটিভ থিওরী পড়ে হতবাক হয়ে যাওয়ার কথা আমাদের জানান। তিনি বলেন --
এরপর তিনি বাঙালি সামরিক কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা বিষয়ে বলেন --
তিনি আরও যোগ করেন --
এরপর তিনি তাঁর কলামটি শেষ করেন এ. কে. খন্দকারের বইটির উপর তাঁর মূল্যায়ণ তুলে ধরে নিচের মত করে --
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
অধ্যাপক ইকবাল আদৌ কি খন্দকারের সমালোচনা করেছেন? তিনি সমালোচনা করেছেন (তাঁর ভাষ্যে) যারা খন্দকারকে "অপমান করার চেষ্টা" করছে, তাদের।
আর "ইতিহাসের ইতিহাস" রচনা করতে গিয়ে খন্দকারের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখাই যদি অধ্যাপক ইকবালের প্রায়োরিটি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে তিনি বস্তুনিষ্ঠ লেখা লিখছেন না, বন্ধুকৃত্যের জন্য কলম ধরেছেন।
ড: ইকবালকে যতদূর জানি তিনি তাঁর বিবেচনায় বস্তুনিষ্ঠ লেখাই লেখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন -- তাঁর বিবেচনা যে আপনার বিবেচনার সাথে সবসময় মিলতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। আচ্ছা, আরেকটা প্রশ্ন মনে ছিল। এ. কে. খন্দকারকে ডেমোনাইজ করতে যেয়ে আপনি নিচের কথাগুলোর অবতারণা করেছেন --
আচ্ছা, এ সমস্ত ঘটনাই তো এ. কে. খন্দকার গত আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূ্র্ণ দায়িত্ব পাওয়ার আগে ঘটেছিলো। এতসব গর্হিত অপরাধের পরেও তিনি কিভাবে সেই দায়িত্বটি পেয়েছিলেন এবং তার কিছুদিন আগে গঠিত সেক্টর কমাণ্ডার্স ফোরামের সভাপতির দায়িত্বটিও পেয়েছিলেন -- এ বিষয়ে একটু আলোকপাত করতে পারবেন?
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
অধ্যাপক ইকবালের সর্বোচ্চ চেষ্টা আজকাল গুড এনাফ না তাহলে।
খন্দকারকে আমি ডেমোনাইজ করলাম নাকি? আহ, এ সুযোগটা কেন ফ্যাক্টের মাধ্যমে খন্দকার আমাকে দিলেন?
কেন তাঁকে আম্লীগ সরকারে মন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছিলো, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর কেন তাঁকে সেক্টর কমাণ্ডার্স ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন ফোরামের তৎকালীন সদস্যরা।
আপনার কথাতেও জানা যাচ্ছে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, সবসময় সফল তো নাও হতে পারেন। তিনি যদি খুব অল্পসময়েও ব্যার্থ হয়ে থাকেন তবু সেই ব্যার্থতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়াই কর্তব্য, চেপে যাওয়া নয়। কারন একজন জাফর ইকবাল ভুল করলে (আশা করি দাবী করবেন না যে তিনি ভুল করতেই পারেন না) তার অসঙ্খ্য গুনমুগ্ধ পাঠক সেই ভুল তথ্যটি বয়ে বেড়ায় এবং তা জ্যামিতিক হারে প্রচার করে। ওপরে আপনার একটি মন্তব্য থেকেই দেখা যায় আপনি স্বীকার করেছেনঃ
তিনি যে আবেগঘন কথাবার্তা বলেন এবং ইদানীং তার মাত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে এর প্রমান সদ্যপ্রকাশিত লেখাটিই। তিনি শুরু করেছেন
এই কথা বলে। তাঁর এড়িয়ে যাওয়া প্রতিটি তথ্য কিন্তু উন্মুক্ত, মোটেই গোপন তথ্য নয়। কিন্তু এমন একটি "তথ্যবিমুখী" সূচনা বাকি লেখার অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশকেও হালকা করে দেয়। আখেরে এটি কি লাভ বয়ে আনছে?
প্রিয় রাজীব মোস্তাফিজ ভাই,
জাফর ইকবাল স্যার আমারও অত্যন্ত প্রিয় একজন লেখক হওয়াতেই তাঁর এমন যুক্তিতর্ক এড়িয়ে যাওয়া কিংবা অত্যন্ত সুলভ তথ্যপ্রমানকেও পাশকাটিয়ে আবেগঘন "বাজারী" প্রবন্ধ লেখার প্রচেষ্টা আমাকে আহত করে। সেজন্যই এটির বিরুদ্ধাচরণ করাকে নিজের দায়িত্বজ্ঞান করি। তাঁর লেখনীর প্রতি আমার মুগ্ধতাহেতু আমি তাঁর "বিভ্রান্তিকর" লেখাকে দায়মুক্তি দিতে রাজি নই। এই ক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবালের প্রতি আমার "আবেগ-ভালবাসা" খুজে লাভ নেই।
এবং, একই কারনে আপনার উল্লিখিতঃ
এইসকল দায়িত্বপ্রাপ্তির কোনটিই আব্দুল করিম খন্দকারকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচার করার নৈতিক অসততা থেকে দায়মুক্তি দেয়না।
তুলনা করতে অস্বস্তি বোধ করছি কিন্তু না বলেও পারছি না, এরকম দায়মুক্তির দাবী'র সঙ্গে "আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন ছাইদী একজন জনপ্রিয় বক্তা বিধায় তাকে খুন-ধর্ষনের মত প্রমাণিত ফৌজদারি অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দেয়া হোক" এই অশালীন দাবীনামার সঙ্গে অমার্জিত রকমের মিল পাওয়া যায়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল কোনো ফেরেশতা বা নবী না যে তাঁর কোনো ভুল হতে পারবে না। তাঁর ভুল হলে সে ভুলের সমালোচনাও জরুরি তাঁর গ্রহণযোগ্যতার কারণেই এ বিষয়েও দ্বিমত নেই । এবং এ প্রসঙ্গে আবার বলছি এই পোস্টের টোন আমার পছন্দ হয় নাই । এইবার আপনি আমাকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের কোনো লেখা থেকে আপনার নিচের উদ্ধৃতাংশের সপক্ষে কোনো নমুনা দেখাতে পারেন যেখানে তিনি এই জাতীয় কথাবার্তা বলেছেন ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়ার যোগ্যতা এই দেশে যেসব ছেলেমেয়ের আছে তাদের সংখ্যা অন্তত দুইজনের বেশি -- এই জিনিসটা তো কমনসেন্স ব্যবহার করেই বোঝা যায় -- এখানে সমস্যা কি বুঝলাম না । কমনসেন্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস -- একে হেলা করবেন না যেন। আর চট করে সা্ঈদীর সাথে এ. কে. খন্দকারের তুলনা করে ফেলবেন না যেন -- তাহলে আপনার কমনসেন্স নিয়েই কিন্তু ধন্দে পড়ে যাব।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
প্রিয় রাজীব ভাই,
আন্ডারলাইন করা অংশটুকু তো আমারও বক্তব্য, তাহলে আমাদের দ্বিমত হচ্ছে কেন? প্রসঙ্গতঃ মনে করিয়ে দিই, জাফর ইকবাল স্যারের কোন কোন লেখার টোনে সমস্যা থাকে। তেমন একটি লেখা নিয়েই কিন্তু এই পোস্টের অবতারনা।
আপনার উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গে আসি।
উদ্ধৃতাংশ ১ "আইনের ভেতরে...জন্য ধন্যবাদ" এটি তো আপনার উদ্ধৃতি হিসাবে ব্যবহার করেছি। জাফর স্যারের নয়। আপনি এসেছেন জাফর স্যারের গুণমুগ্ধ ভক্তের "উদাহরণ" হিসেবে।
উদ্ধৃতাংশ ২ "আমি পরীক্ষার...অনেক ছেলেমেয়েরই আছে" আমি যেখানে এই উদ্ধৃতাংশ ব্যাবহার করেছি সেখানে কমন্সেন্স নিয়ে তো কোনও কথা বলি নি, রাজীব ভাই। আপনি আমাকে স্পষ্টত মিসকোট করছেন। (আশা করি এটি অনিচ্ছাকৃত)। আমি যেখানে এই উদ্ধৃতাংশের উল্লেখ করেছি সেখানে "আমি পরীক্ষার [u]প্রশ্নপত্র দেখিনি, ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্যে কী কী যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে তার খুঁটিনাটিও জানি না[/u]" এই অংশটুকু আন্ডারলাইন করে দেখিয়েছি। সেই সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ভাবে এই প্রশ্নটুকুও করেছিঃ "তাঁর এড়িয়ে যাওয়া প্রতিটি তথ্য কিন্তু উন্মুক্ত, মোটেই গোপন তথ্য নয়। কিন্তু এমন একটি "তথ্যবিমুখী" সূচনা বাকি লেখার অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশকেও হালকা করে দেয়। আখেরে এটি কি লাভ বয়ে আনছে?" এই প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে দুঃখ পেলাম, রাজীব ভাই।
প্রিয় রাজীব ভাই,
শেষাংশে আপনার উল্লিখিত তুলনাটি করার আগে আমি কিন্তু বলেই নিয়েছি এই তুলনাটি করতে আমি অস্বস্তি বোধ করছি। তারপরও, আমি সেখানে এ কে খন্দকারের সাথে দেলাওয়ার হোসাইন ছাইদির তূলনা করিনি। তুলনা করেছি "দায়মুক্তির আবদার" প্রসঙ্গে দুইদলের অশালীন মিল প্রসঙ্গে। আশা করি, "চট করে সা্ঈদীর সাথে এ. কে. খন্দকারের তুলনা করে ফেলবেন না যেন" এটিও আপনি ভুলবশত লিখে ফেলেছেন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনি এই পোস্টের যুক্তি বা তথ্যে কোনো গলদ খুঁজে পান নাই দেখে এখন টোনে সমস্যা পাচ্ছেন।
যা ভেবে আপনি মনে শান্তি পান
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
নিশ্চয়ই। আবারও যখন টোনে সমস্যার অভাবে ভুগবেন, জানায়েন।
"টোনে সমস্যার অভাবে ভুগবেন" -
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
নিশ্চয়ই জানাবো -- চিন্তা নিয়েন না । যখন আপনার পোস্টে যুক্তির সমস্যা এবং টোনের সমস্যা মনে হবে তখন জানাবো (আপনি পছন্দ না করলেও), যখন শুধু টোনের সমস্যা মনে হবে তখনও জানাবো(আপনি পছন্দ না করলেও-- খেয়াল করে দেখেন এই পোস্ট সম্পর্কে করা আমার প্রথম মন্তব্যেই বলেছি
) এবং অতি অবশ্যই যুক্তি আর টোন দুইটাই ভালো লাগলেও জানাবো ।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
আমি একজন খারাপটোনা। শুনেছি পিচাশ করিম নাকি একজন ভালোটোনা ছিলো।
হা হা হা.... আপনার "ভালোটোনার" আসল টোন শুনুন --
****************************************

আপনার অপছন্দকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি জাফর ইকবাল স্যারের পোস্টের টোনও আমার পছন্দ হয় নাই। আর সালাহউদ্দিন স্যারের লেখা ও জাফর ইকবাল স্যারের লেখা কোনভাবেই তুলনীয় না। বুঝিয়ে বলি।
তার আগে একটু উদাহরন দেই, হ্যাঁ?
ক) বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান স্বীকৃত। কিন্তু এই স্বীকৃতি কি তাঁকে "জামায়াতী মিডিয়ার" বিশ্বস্ত যোদ্ধা হয়ে ওঠার কর্মকান্ডকে দায়মুক্তি দেয়?
খ) উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান (খেতাবপ্রাপ্ত), তিনিও মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এই স্বীকৃতি কি তাঁকে "জামায়াতী সংগঠন" তথাকথিত 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ' কর্তৃক একজন তৃণমূল মুক্তিযোদ্ধাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করার কর্মকান্ডকে দায়মুক্তি দেয়?
গ) এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ১৯৭৩ সালে গঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ (বিশেষ) ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর। এই স্বীকৃতি কি তাঁকে ২০১৩ পরবর্তী সময়ে একই ট্রাইবুনাল আইনের অধীনে অভিযুক্ত/শাস্তিপ্রাপ্ত "মানবতাবিরোধী অপরাধী" ব্যাক্তিবর্গের পক্ষাবলম্বনের কর্মকান্ডকে দায়মুক্তি দেয়?
ঘ) কর্নেল আতাউল গনি ওসমানী। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হিসেবে স্বীকৃত। উপরন্তু, একনায়কতান্ত্রিক পদ্ধতি আখ্যায়িত করে তিনি বাকশালে যোগদান করতে অস্বীকৃতি যানান। আক্ষরিক গনতন্ত্রের প্রতি তার এই আনুগত্য ও মানসিক দৃঢ়তা অভিনন্দনের যোগ্য। এই যোগ্যতা কি তাঁকে পরবর্তীতে বাংলাদেশের সংবিধান বহির্ভূত ভাবে গঠিত প্রথম সামরিক স্বৈরাচারী সরকারে সহাস্যে সামরিক উপদেষ্টার পদ গ্রহণকে দায়মূক্তি দেয়?
মুক্তিযুদ্ধ পূর্বাপর প্রসঙ্গে আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি, এই বইয়ে আব্দুল করিম খন্দকার প্রদত্ত ভাষ্যের সঙ্গে ১৯৭১ ভেতর বাহিরে বইয়ে আব্দুল করিম খন্দকার প্রদত্ত ভাষ্যের কিছু গড়মিল আছে। মুক্তিযুদ্ধে আব্দুল করিম খন্দকারের স্বীকৃত অবস্থান কি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার এমন "দ্বিচারিতাসম কর্মকান্ডকে" দায়মূক্তি দেয়?
সালাহউদ্দীন আহমদ স্যার যেখানে বলেছেনঃ
জাফর ইকবাল স্যার সেখানে বলেছেনঃ
এবং,
এবং,
এখানে হিমু ভাইকে উদ্ধৃত করে বলি,
এই কাজ খন্দকার সাহেব করেছেন স্পষ্টতঃ, সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধে তার স্বীকৃত অবদানের উছিলায় তার এই নৈতিক অসততাকে চোখ-কান বন্ধ করে, যুক্তি-তর্ক পকেটে ভরে দায়মুক্তি দেয়া যায়না। কারন, দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বন্ধুকৃত্যের চেয়ে আমি বলব একাত্তরের সময় এ. কে. খন্দকারের ইতিবাচক ভূমিকার জন্য তাকে বেনিফিট অব ডাউট দিতে চেয়েছেন বা ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন। 'মূলধারা '৭১' এবং 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর'-এ প্রধানত মঈদুল হাসানের ভাষ্য থেকে জেনেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা বিষয়ে সর্বাধিনায়ক এম. এ. জি ওসমানীর সাথে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের প্রায়ই মতবিরোধ হয়েছে এবং ওসমানী অনেক সময়ই পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছেন । সর্বশেষ ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কমাণ্ড গঠন বিষয়ে মতবিরোধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছুলে ওসমানী আবারও পদত্যাগ করার হুমকি দিলে তাজউদ্দীন আহমদ বিরক্ত হয়ে ওঁনাকে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বলেন এবং বলেন যে পদত্যাগপত্র জমা দিলে তিনি তা গ্রহণ করবেন। ওসমানী এরপর থেকে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও আর পদত্যাগপত্র জমা দেননি । এ সমস্ত বিরোধকালীন সময়ে এ. কে. খন্দকার ওসমানীর ডেপুটি হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের সিদ্ধান্তের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে হয়েছে । এর ফলশ্রুতিতেই হয়ত বা ১৬ই ডিসেম্বর পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ওসমানী অনুপস্থিত থেকেছেন এবং এ. কে. খন্দকার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। যাই হোক, ফেসবুকে আমার লেখাটিতে আমার বন্ধু ও সহপাঠী আরাফাত একটি চমৎকার মন্তব্য করেছে যেটি আমার বেশ ভালো লেগেছে এবং ওর অনুমতি নিয়ে এটি এখানে প্রকাশ করছি --
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
অধ্যাপক ইকবাল যদি এই ডিফেন্ড করার কাজটা যুক্তি দিয়ে ঠিকমতো করতে পারতেন, পাঠক হিসাবে ভালো লাগতো। হয়তো সে যুক্তি খণ্ডন করতে না পেরে তার কথাই মেনে নিতাম। কিন্তু সে পথে না গিয়ে তিনি প্রথমেই সমালোচিত ব্যক্তিদের প্রতি নিজের অনুরাগের অবতারণা করেন, এবং "যুক্তিতর্ক খুঁজে লাভ নাই" গোছের অগ্রহণযোগ্য কথা বলে বসেন। অধ্যাপক ইকবাল এমন কোনো পীর হয়ে যান নাই যে ওনার অনুরাগের পাত্রকে ছাড় দিতে হবে।
হুমম
ব্যাক্তিগত আক্রমণ নিন্দার্হ, সন্দেহ নেই। কিন্তু "attempt to defend AK Khandaker" এইখানেই সমস্যা কারন তিনি ব্যাক্তি খন্দকারের পাশাপাশি তার "মিথ্যাকথন" কেও "বাক-স্বাধীনতা" হিসেবে দায়মুক্তি দিতে চেয়েছেন। এটিও নিন্দার্হ ব্যাপার।
সম্পূর্ণ একমত। ঠিক একথাটাই ওপরের মন্তব্যেও বলেছি।
একমত, এই কথাটাই এই পোস্টে বারংবার বলা হয়েছে। তাহলে আপনার সাথে আমার অথবা এই পোস্টের লেখকের দ্বিমত হচ্ছে কেন?
এই অংশ নিয়ে আমি বিভ্রান্ত। কারন, "his writing was from the point of view of a blind follower" এটি নতুন কোনও ব্যাপার নয়। আশা আমরাও রাখতে চাই, কিন্তু বারবার ঘর পুড়লে কি সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরাব না?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
খন্দকারের আকাম সম্পর্কে জাফর ইকবালের নিজেরও ডাউট নাই। যেখানে ডাউট নাই, সেখানের ডাউটের বেনিফিট একটা ছলাকলা মাত্র।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
"বেনিফিট অব ডাউট" অব "বেনিফিট অব ডাউট" বলছেন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
না। এটারে কয় ডাউটলেস বেনিফিট ।
****************************************

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অন্ধ ব্যাক্তি পূজা আর ব্যাক্তির আরাধনা এই দেশে চলে সর্বত্র। সেই ব্যাক্তি পূজোর জোরে জিন্নাহ প্রেমী কাউকে বানিয়ে দেওয়া হয় “ছয় দফার প্রণেতা আর ৭ই মার্চ নিয়ে মিথ্যাচারীকারী কে বাঁচাতে কিংবা তার পক্ষে সাফাই গাইতে আশার বাতিঘরও ভুলভাল আবেগী লেখার জন্ম দেন।
(১) জাফর ইকবাল স্যার ও ঠিক ভুলে ভরা যুক্তি আর বাল্যখিল্য আবেগী একটি লেখার জন্ম দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন
জাফর ইকবালের কাছে বিনীত প্রশ্ন কোনটি মতামত আর কোনটি ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার সেটি কি পরিষ্কার করবেন? আমি যদি বলি ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধারা অন্যায় ভাবে পাকিস্থানী সৈন্য মেরেছে তাহলে কি সেটি ব্যাক্তি মতামত নাকি মিথ্যাচার?
(২)
চাঁদে সাঈদীকে দেখা গেছে বলে আমরা শুনেছি অনেকের কাছে। তাহলে ভবিষ্যতে খন্দকারের মত কোন সম্মানী ব্যাক্তি যদি লেখেন যে চাঁদে সাঈদীকে সত্যি দেখা গিয়েছিলো তাহলে সেটির প্রতিবাদ করা যাবে না। করলে তিনার যদি আবার সম্মানে আঘাত লাগে
!
একজন জ্ঞানী আর সম্মানিত লোক কেন শুনা কথা যাচাই না করে বই আকারে লেখতে যাবেন? যাচাই করে না লেখার সমালোচনা না করে ইকবাল স্যার সেই মিথ্যাচারের পক্ষে সাফাই গাইলেন কেমন করে?
পুরো লেখাটি কিংবা লেখার মূল বিষয়টি হতাশজনক, বিভ্রান্তিকর।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
মতিউর রহমানকে এতো বকা দেওয়ার পর আবার মতিউর রহমানের কিশোর আলোতেই বই সই করতে হাজিরা দিয়েছেন জাফর সার।
সেদিন দেখলাম ছবিটা । যে যুক্তিতে স্যার প্রথম আলোতে লেখা বন্ধ করেছেন, সেই এ্কই যুক্তিতে সম্ভবত কিশোর আলোতে লেখা বন্ধ করা উচিত। কিশোর আলো হওয়ার অনেক আগে থেকেই স্যার বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের মনের অনেক কাছাকাছি পৌঁছেছেন। কিশোরদের কাছে পৌঁছার জন্য স্যারের কিআ'তে লেখালেখির দরকার নেই -- স্যারের বইগুলোই যথেষ্ট হওয়া উচিত।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
রাজিব ভাই,
মন্তব্য থেকে বুঝেছিলাম, প্রাতিষ্ঠানিক সূত্রে আপনার বোধহয় স্যারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের সুযোগ আছে। এই কথাগুলোকে স্যারের কানে পৌঁছে দেয়া যায়না? অতীত অভিজ্ঞতা বলে, অনেক ক্ষেত্রেই স্যারকে ভুলটা দেখিয়ে দিলে তিনি তা শুধরে নেন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নানা ডামাডোলের পর অধ্যাপক ইকবাল আবারও কলম হাতে ধরে "কিন্তু-পার্টিকে" এক হাত নিয়েছেন [সূত্র]। কিন্তু পার্টি কীভাবে নানা ভালো ভালো কথা বলে একটা "কিন্তু" যোগ করে খারাপ খারাপ ইঙ্গিত করে, সেটা তিনি অফলাইনে থাকায় একটু দেরিতে বুঝলেও হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন দেখে ভালো লাগলো।
এই পোস্টে অধ্যাপক ইকবালের যে লেখাটি আলোচ্য, সেখানেও একটা মিষ্টি কিন্তুর দেখা পেয়ে নমুনাটা যোগ করে রাখলাম।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন