নেহারুল বার বার জ্যামিতি বাক্স খুলে দেখে নিচ্ছিলেন, ভেতরে সবকিছু ঠিক আছে কি না। কাঁটাকম্পাস, চাঁদা, প্লাস্টিকের ছয় ইঞ্চি রুলার, পেন্সিল, পেন্সিলকাটুনি, পেন্সিলমুছুনি, প্রবেশপত্র, "আল্লাহু" লেখা একটা পিতলের ছোট্ট বোতাম। প্রতিবার জ্যামিতি বাক্স বন্ধ করার পর তাঁর মনে সন্দেহের একটা কাঁটা রুই মাছের ছোটো কাঁটার মতো ঘাই দিচ্ছে কেবল। সবকিছু কি নিয়ে এসেছেন তিনি? কোনো কিছু বাদ পড়েনি তো? বসে বসে আর কিছু করার নেই বলে একটু পর তিনি আবারও জ্যামিতি বাক্স খুলে হন্তদন্ত তদন্ত করেন। কাঁটাকম্পাসটার প্যাঁচ ঘুরিয়ে দেখে নেন, ঠিকমতো টাইট হচ্ছে কি না। আলোর দিকে তুলে চাঁদার গায়ে পঁয়তাল্লিশ আর ষাট ডিগ্রির মোটা দাগগুলোকে তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করে আবার যত্ন করে ঢুকিয়ে রাখেন বাক্সে। রুলারটার ধারে আঙুল বুলিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করেন, কোথাও কোনো খাঁজ ধরা পড়ে কি না।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা দুই বগলে দুটো কাগজের বোন্দা নিয়ে ঘরে ঢুকতেই আশেপাশের সবাই চাবি দেওয়া পুতুলের মতো উঠে দাঁড়ালো। উপদেষ্টা টেবিলের ওপর বোন্দা দুটো সযত্নে নামিয়ে রেখে অলস হাত নেড়ে সবাইকে বসার ইঙ্গিত করেন।
নেহারুল বসতে গিয়ে পেছনে খোঁচা খেয়ে উহ করে ছিটকে সটান উঠে দাঁড়ান আবার। তাঁর আসনে পেন্সিল দাঁড় করিয়ে রেখেছে বেঞ্চের বাম পাশে বসা অসভ্য পরীক্ষার্থী।
বিশেষ উপদেষ্টা কড়া চোখে নেহারুলের দিকে তাকান। নেহারুল কাঁদো কাঁদো মুখে পাশের সিটের পরীক্ষার্থীকে দেখিয়ে বলেন, "স্যার, ও আমার সিটে পেন্সিল উঁচু কৈরা ধরছে স্যার। ব্যথা পাইছি।"
বিশেষ উপদেষ্টা পকেট থেকে ছোটো একটা প্লাস্টিকের হাতলওয়ালা নিরীহ চেহারার কাঁচি বের করে বোন্দার সুতো কাটতে কাটতে কড়া গলায় বললেন, "আহ, জাফর সাহেব, এসব কী হচ্ছে?"
নেহারুল সন্তর্পণে খুব খেয়াল করে আবার সিটে বসেন।
জাফর নামের বিটকেল পরীক্ষার্থী দাঁত বের করে হাসতে হাসতে হাত বাড়িয়ে বললো, "আমার নাম জাফর। তোমার নাম কী?"
নেহারুল গোমড়া মুখে হাত বাড়িয়ে বললেন, "আমি নেহারুল ... এ কী? তোমার হাতে আঠা কেন?"
জাফরের দন্তপঙক্তি মুখের ভেতরের ছোট্ট ঘরে বেশিক্ষণ বদ্ধ থেকে অভ্যস্ত নয়, তারা জগৎটাকে দেখতে ব্যাকুল, হাসতে হাসতে সে বলে, "হ্যাঞ্ছেকের আগে হাতে ছ্যাপ দিয়া লৈছি।"
নেহারুল আঁ আঁ করে চিৎকার করে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, "স্যার, বাথরুমে যামু স্যার! এই জাফর আমার হাতে থুতু মাখায় দিছে স্যার!"
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তখনও কাঁচি দিয়ে বোন্দার সুতো কাটছিলেন, এবার তিনি মুখ তুলে চশমার ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ আমলার চোখে নেহারুল আর জাফরকে দেখে নেন। নেহারুল ডান হাতটা বারবার প্যান্টের পায়ায় ঘষেন।
উপদেষ্টা আবার সুতো কাটতে কাটতে আমলার গলায় বলেন, "জাফর সাহেব, বি ওয়ার্নড। দিস সর্ট অফ টমফুলারি ইজ নট অ্যাডভাইজেবল অ্যাট অল ইন দ্য অগাস্ট প্রেজেন্স অফ অনারেবল ইনভিজিলেটরস। প্লিজ বিহেইভ ইয়োরসেলফ।"
জাফর নামের পরীক্ষার্থী মিহি গলায় বলে, "স্যার ইংরাজি বুঝি না। বাংলায় কন।"
উপদেষ্টা এবার কাঁচি টেবিলের ওপর রেখে চশমা খুলে হাতে নিয়ে জাফরকে মনোযোগ দিয়ে দেখেন। নেহারুল জাফরের দিকে বিবাদীর কম্পাসকঠোর আঙুল তাক করে বলেন, "স্যার ও ইংরেজি জানে না কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী হৈতে চায়। এদিকে আমার হাতে থুতু দিছে।"
উপদেষ্টা ঘোঁঁৎ করে একটা শব্দ করে বলেন, "মিস্টার নেহারুল, প্লিজ গো অ্যান্ড ওয়াশ ইয়োর হ্যান্ডস।"
নেহারুল কড়া চোখে জাফরের দিকে তাকান। জাফর দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে, "মসিদের ইমাম উর্দুতে খোতবা কয়। পরীক্ষার হলের ইমাম ইংরাজিতে খোতবা কয়। কিচ্ছু বুঝি না। কী দ্যাশে যে আইলাম রে মামা!"
নেহারুল গট গট করে হল ছেড়ে বেরিয়ে এসে করিডোরের শেষ মাথার টয়লেটে ঢুকে বেসিনে ট্যাপ ছেড়ে পানির ধারার নিচে ডান হাত গুঁজে দেন। পরীক্ষার শুরুতেই একটা অঘটন ঘটলো। বাকি পরীক্ষা কেমন হয় কে জানে?
বাথরুমের ঘোলা আয়নায় নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে নেহারুল শিউরে ওঠেন। গভীর রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। পুরো সিলেবাস ভাজা ভাজা করেছেন, সব সূত্র মুখস্থ করেছেন, টেস্ট পেপার খুলে নমুনা পরীক্ষা দিয়ে হাতের লেখার গতি খতিয়ে দেখেছেন, শেষমেশ বলপয়েন্ট কলমগুলো খুলে এক দুই লাইন করে লিখে সেগুলোর মান যাচাই করে কলমের বাক্সে ভরে তারপর এক গ্লাস দুধ খেয়ে শুয়ে পড়েছেন। কিন্তু সারারাত ঠিকমতো ঘুম হয়নি, ছটফট করে এপাশ ওপাশ করে শুয়েছেন, শেষটায় অন্ধকার আকাশ থেকে পুরোপুরি মিলিয়ে যাবার আগেই উঠে পড়েছেন। অনিদ্রিত রাত ফুরিয়ে যাবার আগে তাঁর চোখের নিচে তিলক কেটে রেখে গেছে অন্ধকার হাতে।
আঁজলা ভরে পানি নিয়ে নিজের মুখে ছিটাতে ছিটাতে নেহারুল টের পেলেন, ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তাঁর। একটু চা খেতে পারলে বড় ভালো হতো। কিন্তু যানজট এড়িয়ে আগে আগে পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর জন্য হুড়োহুড়ি করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছেন তিনি, চায়ের কাপে কোনোমতো দুটো চুমুক দিয়েই। মুখ ধুতে ধুতে নেহারুল সিদ্ধান্ত নেন, পরীক্ষায় পাশ করে আবার শিক্ষামন্ত্রী হতে পারলে তিনি পরীক্ষার হলে চা খাওয়ার অনুমতি দিয়ে আইন পাশ করাবেন। জামাতার কাছে শুনেছেন, বিদেশে পরীক্ষার হলে ছেলেপিলে কফির ফ্লাস্ক নিয়ে বসে, কুটকুট করে চকলেট বার চিবাতে চিবাতে পরীক্ষার খাতায় হিজিবিজি লেখে। তাঁর দেশ আর কতো কাল পিছিয়ে থাকবে?
পকেট থেকে চেক কাটা রুমাল বের করে নিজের হাত মুখ মুছে নেহারুল আবার পরীক্ষার হলে ফিরে এলেন।
বিশেষ উপদেষ্টা হলঘরে পায়চারি করছিলেন, নেহারুলকে হলে ঢুকতে দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। তারপর গটগটিয়ে কাছে এগিয়ে এসে বললেন, "মিস্টার নেহারুল, হ্যাভ ইউ এনি আইডিয়া, হোয়াট টাইম ইট ইজ? এগারোটা বাজে। আপনি পরীক্ষা দেবেন কখন?"
নেহারুলের বুক ধক করে ওঠে। এগারোটা বেজে গেলো? পরীক্ষা তো বারোটায় শেষ। তিনি এখন তিন ঘণ্টার পরীক্ষা এক ঘণ্টায় শেষ করবেন কীভাবে?
নেহারুল পাগলের মতো ছুটে গিয়ে নিজের আসনে বসে পরীক্ষার খাতা আর প্রশ্নপত্র টেনে নিলেন। জ্যামিতি বাক্স খুলতে গিয়ে টের পেলেন, বাক্স জাম হয়ে গেছে, খুলছে না কিছুতেই। কলমের বাক্স থেকে কলম টেনে নিয়ে বের করে দেখলেন, কলমের কালি প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। বাক্স হাঁটকে কেবল কণ্ঠার কাছে একটু নীল জমে থাকা মন্থিতসমুদ্রবর্তী শিবের মতো একটা কলম খুঁজে পেলেন তিনি, সেটা নিয়ে খাতা টেনে লিখতে গিয়ে থমকে গেলেন তারপর।
এসব কী প্রশ্ন এসেছে?
প্রশ্নপত্রের পাতা উল্টাতে গিয়ে নেহারুলের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। এ কী? এসব কী প্রশ্ন? এতো কঠিন কেন? অঙ্কগুলো এতো লম্বা কেন? কোন সূত্র খাটবে এখানে? এসব শব্দের মানে কী? উপপাদ্য সম্পাদ্য এগুলো কোন বই থেকে এসেছে? ভাব সম্প্রসারণের নিচে লেখা লঁফে, সে লেজেক্সামাঁ দেজোথ। এর মানে কী?
পাশ থেকে জাফর দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে, "মামু, রফাটটা এট্টু দ্যাও দেহি!"
নেহারুল ফুঁসে উঠে বলেন, "রফাট? হোয়াট দ্য হেল ইজ রফাট? ইটস কল্ড ইরেইজার!"
বক্তৃতা মঞ্চের ওপরে দাঁড়িয়ে বিশেষ উপদেষ্টাও বলেন, "ইয়েস, ইটস কল্ড ইরেইজার। দেয়ার ইজ নো সাচ থিং ইন দিস ওয়াইড ওয়াইল্ড ওয়ার্ল্ড টু বি অ্যাড্রেসড বাই দ্য ইগনোমিনিয়াস নেইম অফ রফাট। ঔনলি ইন দি ডিপেস্ট ডারকেস্ট ডানজন অফ দ্য ডিভিয়াস ডেলিঙ্কোয়েন্ট ড্রাকুলা মে ওয়ান অর টু রফাটস ক্রল অ্যান্ড ক্রাউচ।"
জাফর দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে, "এত্তো ইংরাজি! বাপরে বাপ, আমার রফাট লাগতো না!"
নেহারুল চোখ পাকান। জাফর কাছে ঘেঁষে এসে ফিসফিসিয়ে বলে, "আমার পরীক্ষা শ্যাষ। তোমার পরীক্ষা ক্যামন হইছে?"
নেহারুল প্রাণপণে পরীক্ষার খাতার ওপরে নিজের নাম, ক্রমিক নং, নিবন্ধন নং, জাতীয় পরিচয়পত্রের নং, বাবার নাম, মায়ের নাম, উপজেলা, পোস্ট অফিস, পাসপোর্ট নং, মালয়েশিয়ায় খালাতো শালার সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নং, সব লিখতে লিখতে টের পান, কলমের কালি ফুরিয়ে আসছে। ফুঁপিয়ে উঠে তিনি বলেন, "আমি তো পরীক্ষা দিতেই পারলাম না। এতো কঠিন কঠিন প্রশ্ন!"
জাফর হাসতে হাসতে বলে, "প্রশ্ন কঠিন তো কী হইছে? ফেসবুকে তো প্রশ্ন উত্তর সবই দিয়া দিছে। তুমি পাও নাই?"
নেহারুল কলম তুলে বাতাসে ঝাড়তে ঝাড়তে খাতায় হিজিবিজি লিখতে গিয়ে থমকে গেলেন। "প্রশ্ন ফেসবুকে চৈলা আসছে?"
জাফর চোখ টিপে বলে, "হ, গত পরশুই তো চৈলা আসছে। আহারে, তুমি পাও নাই, তাই না? তোমার আব্বা আম্মা তোমারে প্রশ্ন যোগাড় কইরা দেয় নাই?"
নেহারুল উদভ্রান্তের মতো ডানে বামে তাকান। ডানে বামে দিগন্তের কাছে গিয়ে মিলিয়ে গেছে পরীক্ষার হলের দেয়াল। তার নিচে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি পরীক্ষার্থী আড়মোড়া ভাঙছে, কেউ কেউ ফ্লাস্ক খুলে চা খাচ্ছে বিদেশী ছাত্রদের মতো, কেউ কেউ বিড়ি টানছে, নিজেদের মধ্যে গল্পগুজবও করছে। সবার মুখ হাসি হাসি। ওদের সবার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। প্রশ্ন কমন পড়েছে। ওদের বাবা মা ওদের প্রশ্ন যোগাড় করে দিয়েছে, সল্ভ করে দিয়েছে। নেহারুলের বাবা মা কোথায় ছিলেন গত পরশু দিন?
বক্তৃতা মঞ্চ থেকে চশমার ওপরে দুটো জ্বলন্ত আমলার চোখ নেহারুলের দিকে তাক করে বিশেষ উপদেষ্টা বললেন, "মিস্টার নেহারুল, হ্যাভ ইউ কোয়াইট ফিনিশড অলরেডি?"
নেহারুল ডুকরে কেঁদে উঠে বলেন, "স্যার স্যার স্যার, আমার প্রশ্ন কমন পড়ে নাই স্যার! ইটস নট ফেয়ার স্যার! সবার পরীক্ষা ভালো হয় কীভাবে?"
বিশেষ উপদেষ্টা একটা হলদে আমলার হাসি হেসে বললেন, "উই আর বাউন্ড টু পিক ঔনলি দ্য ভেরি বেস্ট, মিস্টার নেহারুল। আপনার পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?"
নেহারুল উঠে দাঁড়িয়ে ধরা গলায় বলেন, "স্যার, এটা অন্যায়। সবার পরীক্ষা ভালো হলে সবাই এ প্লাস পাবে। তখন শিক্ষামন্ত্রী হবে কে?"
এবার বিশেষ উপদেষ্টা এগিয়ে এসে হাই বেঞ্চের ওপর এক পাটি পাছা পেতে বসে একটা পা দোলাতে দোলাতে হাসিমুখে বলেন, "সবাই যদি এ প্লাস পায়, সবাইকে শিক্ষামন্ত্রী বানানো হবে। কোনো সমিস্যা?"
জাফরও হাসতে হাসতে একটা পেন্সিল উঁচিয়ে বলে, "কোনো সমিস্যা?"
হলভর্তি পরীক্ষার্থী এবার নেহারুলের দিকে ঘুরে তাকিয়ে সমস্বরে বলে, "কোনো সমিস্যা?"
নেহারুল উদভ্রান্তের মতো ডানে বামে তাকান। বিশেষ উপদেষ্টা তাঁর গলা চেপে ধরে, দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে তাঁর। ওদিকে জাফর তাঁরই জ্যামিতি বাক্স অবলীলায় খুলে ভেতর থেকে পেন্সিলকাটুনি বের করে তার ভয়ানকদর্শন পেন্সিলটাকে চোখা করতে থাকে। পেন্সিলের চোকলা বের হতে থাকে সমানে, ক্রমশ চোকলায় ঢেকে যায় বেঞ্চ, এর মাঝে ছোট্টো গোল একটা ফাঁকা জায়গায় জাফর তার কালান্তক পেন্সিলটাকে সটান উঁচু করে পেতে রাখে। বিশেষ উপদেষ্টা নেহারুলের গলা টিপে ধরে তাঁকে সেই পেন্সিলের ওপর বসিয়ে দেন।
হলভরা লোকে স্নেহসিক্ত কণ্ঠে শুধায়, "কোনো সমিস্যা?"
নেহারুল ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর অনুভব করেন, তাঁর সারা শরীর ঘামে ভিজে আছে। ডালিয়া তাঁর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করছে, "অ্যাই, কী হইছে? কোনো সমিস্যা?"
নেহারুল চুনকাম করা সিলিঙের দিকে তাকিয়ে পরম স্বস্তি বোধ করেন। আহ, পরীক্ষার হলে নেই তিনি। এসব পরীক্ষাটরীক্ষার দিন বহু আগেই পার করে এসেছেন।
ডালিয়া বিছানার পাশে রাখা তেপায়ায় ঢাকনা দিয়ে রাখা পানির জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে নেহারুলের দিকে এগিয়ে ধরে, "তোমারে বোবায় ধরছিলো। ন্যাও পানি খাও।"
নেহারুল ঢক ঢক করে পানি খেয়ে গ্লাস শূন্য করে আবার ডালিয়ার দিকে বাড়িয়ে ধরে অস্ফূটে বলেন, "আরেকটু ...।"
ডালিয়া জগ থেকে পানি ঢালে। নেহারুল চোখ বন্ধ করে পরম তৃপ্তির সঙ্গে স্মরণ করেন, পরীক্ষার বিভীষিকাময় দিন ফুরিয়েছে তাঁর। এখন আর কোনো পরীক্ষা নেই। জেগে থাকা আধো ঘুমের রাতভর উৎকণ্ঠা, সকালে পরীক্ষার আগে রিকশা সিএনজি পাকড়ে যানজটের অংশ হওয়ার তাড়া, যানজট ঠেলে সময়মতো হলে পৌঁছানোর দুশ্চিন্তা, পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন না পড়ার আঘাত, কিছুই নেই। এ যেন নরকবাসের সাজা থেকে বেকসুর খালাস। আসলেই তো, লঁফে, সে লেজেক্সামাঁ দেজোথ। নরক, সে তো অন্য লোকের পরীক্ষা। কে বলেছিলো কথাটা? জঁ পল সাখথ? নাকি মিশেল প্লাতিনি?
ডালিয়া পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় তাঁর দিকে। নেহারুল গ্লাসে রসিয়ে রসিয়ে ছোটো ছোটো চুমুক দেওয়ার ফাঁকে বলেন, "বোবা খালি একা আমারে ধরে নাই বৌ। গোটা জাতিরেই ধরছে। দেখি, পাশ ফিরা শুই আবার।"
মন্তব্য
এরকম কিছুই চাচ্ছিলাম এ সময়ে
রাসিক রেজা নাহিয়েন
অনেক দিন পর হাসলাম।মনয়টা খুব খারাপ ছিল
মাকে ও পড়ে শুনালাম। লেখকের লেখার হাত সত্যিই প্রশংসাযোগ্য
ট্রোল
সময়ের দরকারি লেখা, দুর্দান্ত!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
"বোবা খালি একা আমারে ধরে নাই বৌ। গোটা জাতিরেই ধরছে। দেখি, পাশ ফিরা শুই আবার।"
সবাইকে একসাথে বোবায় ধরলে সেটা ছাড়াবে কে? আর এই বোবায় ধরা জাতির ঘুম ভাঙাবে কে? এরকম জাতির জন্য ওরকম পেন্সিল ওয়ালা দরকার যে পিছন থেকে সবসময় চোখা একটা পেন্সিল খাড়া করে রাখবে।
আসলেই, কিন্তু নেহারুলের এই বোধোদয় হইসে কি!
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
কোন সমিস্যা?
বোবা খালি একা আমারে ধরে নাই, গোটা জাতিরেই ধরছে! কোনো সমিস্যা?
এইটা খালো হইসে
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
এই পাঞ্চগুলো দারুণ!
প্রাইমারি স্কুলে যখন পড়েছি তখন ছ্যাপ, রফাট এই শব্দগুলো শিখেছিলাম। আজ যথার্থ প্রয়োগ দেখলাম। আমি এই গল্পটা পড়ে দুইদিন ধরে হাসছি। এখন যখন লগ ইন করলাম, আবার হাসছি। আমার হাই ব্লাডপ্রেসার যেন কমে গেল। যদিও আমার ভাগ্নি পিএসসি দেয়াতে বোন, জামাইয়ের প্রেসার বাড়তি। ফোন করলে আপা কান্না কান্না গলায় বলে, মেয়ের কাছে কি করে মুখ দেখাই?
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ট্রোল
আপ্নের পিলিজ লাগে হিমু ভাই, ফাঁকিবাজী কম করেন। এতদিন পরে পরে এসে, এত অল্পে মিটিয়ে দেয়া মানতে পারলাম না। আপ্নের চা'র কাপ কিন্তু লোপাট করে ফেলবো, খুব সাপধান।
---ইমরান ওয়াহিদ
পেন্সিলকাটুনি, পেন্সিলমুছুনি, রফাট হাহাহাহ, অসাধারণ!
অপর্ণা মিতু
নতুন মন্তব্য করুন