বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের সাম্প্রতিক সংযোজন পিএসসি আর জেএসসি পরীক্ষা শিক্ষার মানোন্নয়নে কী ভূমিকা রাখছে, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত ছাত্র-অভিভাবকদের সামনে হাজির করেছেন কি না, আমার জানা নেই। কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে একটু চিন্তা করলে মনে হয়, গুটিকয় বাটপার ছাড়া এই দুই পাবলিক পরীক্ষা বৃহত্তর জনসমাজের আর কোনো কাজে আসবে না।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিকের জন্যে ৫ বছর, মাধ্যমিকের জন্যে ৫ বছর আর উচ্চ মাধ্যমিকের জন্যে ২ বছর সময় বরাদ্দ করা আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও কম বেশি একই স্তরে বিভক্ত। প্রাথমিক স্তরের একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্তরের আরেকটি স্কুলে যাওয়ার জন্যে ভর্তি পরীক্ষায় বসতেই হয়, প্রাথমিক স্তরের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার ফল তাতে খুব একটা কাজে আসে না। একইভাবে মাধ্যমিক স্তরের স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কলেজে ভর্তি হতে গেলেও ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হয়, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলেও ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসির ফল একটি মোটাদাগের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসি আর এইচএসসি পরীক্ষার ফল সম্মিলিতভাবে মোটাদাগের নিয়ামকের কাজ করে। এই নিয়ামক দিয়ে কারা ভর্তি পরীক্ষায় বসার যোগ্য হবে, সেটি ঠিক করা হয় কেবল। বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে ভর্তি পরীক্ষার ফলের।
যদি নামী স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পিএসসির ফলকে নিয়ামক হিসেবে গ্রহণ করার রেওয়াজ শুরু হয়, সেক্ষেত্রে এই পরীক্ষাকে যৌক্তিক বলে মনে করা যেতে পারে। কিন্তু জেএসসি পরীক্ষার যৌক্তিকতা কোথায়? মাধ্যমিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণীর পর একই স্কুলের নবম শ্রেণীতে শিক্ষালাভের সুযোগ থাকে, আরেকটি ভিন্ন শিক্ষায়তনে ভর্তির জন্যে নিয়ামক হিসেবে এই পরীক্ষার ফল ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এই পরীক্ষাটি তাহলে কেন নেওয়া হচ্ছে?
আরেকটু তলিয়ে দেখলে আমরা দেখবো, এক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণী থেকে আরেকটি স্কুলের (অপেক্ষাকৃত "ভালো") ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির জন্যে অভিভাবকদের প্রত্যাশাজতিন যে চাপ থাকে, তার সঙ্গে কোচিং ব্যবসার সরাসরি যোগ আছে। অভিভাবকদের এই আকুতিকে কাজে লাগিয়ে কোচিং সেন্টারগুলো ব্যবসা করে, এবং পঞ্চম শ্রেণী থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তরণের জন্যে ভর্তি প্রক্রিয়াটিকেও বাণিজ্যিকীকরণের সুযোগ এই পিএসসির মাধ্যমে প্রশস্ত হচ্ছে।
এখানেই প্রশ্নফাঁসের অর্থনীতি একটু খতিয়ে দেখতে হবে। এককালে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন বিক্রি হতো, সে বাণিজ্যের অর্থনীতি নিষিদ্ধ মাদক বাণিজ্যের অর্থনীতির মতো। কিন্তু এখন প্রশ্ন চলে আসছে ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজে, এবং সরাসরি শিক্ষামন্ত্রক থেকে এই ফাঁসের ব্যাপারটিকে হয় অস্বীকার করা হচ্ছে, নয়তো তাচ্ছিল্যের সাথে দেখা হচ্ছে। মোবাইল-ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ার মতো নির্বোধ আহাম্মকি কথাবার্তা বলে কর্তাব্যক্তিরা মানুষের মনোযোগকে অন্যদিকেও নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ফেসবুকে ফাঁস করা প্রশ্নের অর্থনীতিটা ভিন্ন, এখানে প্রশ্নটি আর টাকার বিনিময়ে ক্রয়যোগ্য পণ্য নেই, বরং আরেকটি ভিন্ন ও বৃহত্তর বাণিজ্যের দিকে এই ফাঁস-হওয়া-প্রশ্নের-ভোক্তাকে (অর্থাৎ অভিভাবক) ঠেলে দেওয়ার একটি মাধ্যমমাত্র।
সে আলোচনার আগে একটু চিন্তা করে দেখি, প্রশ্ন ফাঁস হলে কী হয়? একবার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেলে এবং নাগালের ভেতরে থাকা উন্মুক্ত মাধ্যমে (যেমন ফেসবুকে) চলে এলে পরীক্ষার্থীর সামনে দুটি পথ থাকে, হয় প্রশ্নটি যোগাড় করে কাজে লাগানো (অসৎ পদ্ধতি), নয়তো প্রশ্নটি উপেক্ষা করে নিজের প্রস্তুতির ওপর ভরসা রাখা (সৎ পদ্ধতি)। এখন যদি দবীর আর কবীর নামের দু'জন "লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো" পরীক্ষার্থীর মধ্যে যদি তুলনা করে দেখি, তাদের গেম মেইট্রিক্স হবে এমন:
এখানে মনে রাখা ভালো, দবীর বা কবীর কেউ উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করিয়ে আনছে না, তারা নিরীহ পরীক্ষার্থী, এবং প্রশ্ন ফাঁস তাদের উদ্যোগ ছাড়াই ঘটে যাচ্ছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কাজে না লাগালে দবীর বা কবীর বড়জোর এ মাইনাস পাবে, কিন্তু কাজে লাগালে তারা এ প্লাস পাবে। এরকম পরিস্থিতিতে দবীর আর কবীর, দু'জনের জন্যেই ডমিন্যান্ট স্ট্র্যাটেজি বা লাভজনক কৌশল হচ্ছে অসৎ হওয়া। এবং শেষ পর্যন্ত তারা দু'জনই অসৎ হবে, এটাই এই গেমের ন্যাশ ভারসাম্য। প্রশ্ন ফাঁসের গেমে যেসব "লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো"রা সৎ থাকবে, তারা পরীক্ষার ফলের বিচারে অন্যদের তুলনায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা পিএসসি পরীক্ষার্থীরা ঠিকমতো না বুঝলেও তাদের অভিভাবকরা বোঝেন, এবং সোৎসাহে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন যোগাড় করে সন্তানকে দেন।
কাজেই প্রশ্ন ফাঁস করে উন্মুক্ত ডোমেইনে তুলে দিলে একটা জনগোষ্ঠীর বড় অংশ তাৎক্ষণিক লাভের আশায় অসৎ হয়ে পড়ে।
শিক্ষামন্ত্রক এই পরিস্থিতির জন্যে এককভাবে দায়ী। পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকদের ঘাড়ে দোষ দেওয়া নিরর্থক, কারণ তারা প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার প্রক্রিয়াটি উদ্যোগ নিয়ে ঘটাচ্ছে না।
উন্মুক্ত ডোমেইনে প্রশ্ন ফাঁস করে দিলে প্রশ্নটির আর পণ্যমূল্য থাকে না, কিন্তু সেটি বাজারে ভালো ফলের একটি বাড়তি সরবরাহ তৈরি করে। যেসব পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, সেসব পরীক্ষায় যারা এ প্লাস পাচ্ছে, তাদের মধ্যে কারা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কাজে লাগিয়েছে, আর কারা লাগায়নি, তা বোঝার উপায় কারোই থাকে না। পরীক্ষা নেওয়ার অনেক উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার গুরুত্ব অনুধাবনে সমর্থ করে তুলে অনাগত জীবনের নানা পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুত করা, আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি জনগোষ্ঠী থেকে যোগ্যতর একটি অংশকে সে জনগোষ্ঠীর জন্যে বিভিন্ন ভূমিকায় কাজে লাগানোর জন্য কম যোগ্যতরদের থেকে পৃথক করা। প্রশ্ন ফাঁস করলে এ দুটি উদ্দেশ্যই মার খায়। তাহলে কোন উদ্দেশ্য সাধিত হয়?
পিএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকে যদি আমরা নমুনা আলোচ্য হিসেবে ধরি, তাহলে আমরা দেখবো, বাংলাদেশে যতো সংখ্যক ভালো মাধ্যমিক স্কুল আছে, ততো সংখ্যক ভালো প্রাথমিক স্কুল নেই। কাজেই প্রাথমিক স্কুলের ভালো ছাত্ররা যদি পিএসসি পরীক্ষায় ভালো করে, এবং প্রাথমিক স্কুলের মাঝারি ও খারাপ ছাত্ররা যদি পিএসসি পরীক্ষায় খারাপ করে, তাহলে মাধ্যমিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে কেবল পিএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই তাদের ভর্তি করা সম্ভব হতো, কিংবা অন্তত পিএসসি পরীক্ষার ফলকে ষষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় একটি জোরালো নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার করা যেতো। এটিই স্বাভাবিক এবং আদর্শ পরিস্থিতি। কিন্তু এই পরিস্থিতি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোচিং বাণিজ্যবান্ধব নয়। কোচিং ব্যবসা তখনই জমবে, যখন ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জোরালো নিয়ামকের ভিত্তিতে আর ফিল্টার করা যাবে না। উন্মুক্ত ডোমেইনে প্রশ্ন ফাঁস করে দিলে এই ব্যাপারটিই ঘটে, মুড়ি-মুড়কি সব সমান দর হয়ে পড়ে। মাঝারি মাপের কবীর ও দবীর তখন ভালো মাপের সগীরের সঙ্গে এ প্লাস পেয়ে এক কাতারে চলে আসে। এবং যেহেতু নিজেদের মধ্যে আর পৃথক করার মাপকাঠি অবশিষ্ট থাকে না, কবীর-দবীর-সগীর তিনজনই তখন কোচিং বাণিজ্যের ভোক্তায় পরিণত হয়।
একই প্রক্রিয়া এসএসসি ও এইচএসসির ক্ষেত্রেও খাটে।
আমার বিবেচনায় জেএসসি সম্পূর্ণ নিরর্থক একটি পরীক্ষা, যেটি কোনো বাছাইয়ের কাজে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে না। যেহেতু এক ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উত্তরণের প্রশ্নও এক্ষেত্রে নেই (যে স্কুলে অষ্টম শ্রেণী আছে, সেখানে নবম ও দশম শ্রেণীও থাকে), এই পরীক্ষাটি কেন নেওয়া হচ্ছে, সে উদ্দেশ্যও স্পষ্ট নয়। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষা মানেই প্রতিযোগিতা, এবং অভিভাবকদের পক্ষ থেকে সে পরীক্ষায় ভালো করার জন্য পরীক্ষার্থীর ওপর চাপ, কাজেই এ পরীক্ষাটিও কোচিং বাণিজ্যের উদরপূর্তির কাজে লাগছে কেবল।
পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেবল কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। এই সহযোগিতার পেছনে আর্থিক লেনদেন আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাই।
শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য আপাতত প্রাথমিক করণীয় একটাই, শিক্ষকের মানোন্নয়ন। শিক্ষায়তনে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা-সুবিধা বাড়ানো হোক, শিক্ষকের পেশায় মেধাবীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হোক।
সবার আগে পিএসসি ও জেএসসি নামের এই নিরর্থক কোচিংতোষী দুটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা হোক।
মন্তব্য
সহমত।
পিএসসি আর জেএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে পরিবার-ই তাদের সন্তানকে অসৎ হওয়াকে হালাল রূপে হাজির করছে। কারণ বাবা-মা কিংবা আত্নীয় স্বজন-ই সেই ফাঁস করা প্রশ্ন সন্তানদের কে দেয়। কোথাও এ দুটো পরীক্ষার যেহতু কাজ নেই তাই এটা বন্ধ করা উচিত।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
এককালে হয়ত অনেকেরই জীবন চাকরিরি জন্য দাখিল করা বুৃত্তান্তে এরকমটা থাকবে:
পিএসসি: ৫.০০ /৫.০০
জেএসসি: ৫.০০ /৫.০০
এসএসসি: ৫.০০ /৫.০০
এইচএসসি: ৫.০০ /৫.০০
কিন্তু, আসলেই সবাই শিখে ৫.০০ /৫.০০ পাচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাবে।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সবসময়ই দৌড়ের উপরেই থাকল, একটা সম্যাবস্থায় পৌঁছানো হল না
শুভেচ্ছা
পিএসসি আর জিএসসি পরীক্ষা দুটোই আমার কাছে প্রথম থেকেই হাস্যকর লাগত। এত ছোট বয়স থেকে বাচ্চাদের চাপের মধ্যে রাখার কি মানে আমি বুঝি না, কারন ষ্ট্যাণ্ডার্ডাইজড পরীক্ষা মানেই অভিভাবকদের 'ভালো করতে হবে ভালো করতে হবে' চাপ থাকেই। পদে পদে সারা স্কুল লাইফ এমন চাপে বাচ্চাদের রাখা উচিৎ বলে আমি মনে করি না।
আর এখন প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নকল করা এইসব পরীক্ষাতেও যেভাবে দেখা দিয়েছে, এতে এত ছোট বয়স থেকেই যে আগামী প্রজন্ম কি শিক্ষা পাচ্ছে তা নিয়ে চিন্তা করলে ভয় হয়।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
এই দুইটা পরীক্ষা কেন আরম্ভ হয়েছিল তার কোন ব্যাখ্যা কি শিক্ষাবোর্ড থেকে পাওয়া যায়? তাদের কারনগুলি কি জানেন?
স্মৃতি থেকে কিছুটা মনে পড়ে: প্রথমত বৃত্তি পরীক্ষা যেটা ছিল সেটা সবাই দিত না। সেটাতে সবার অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য এটা একটা পদক্ষেপ। আরেকটা কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, অনেকে ৫ম বা ৮ম শ্রেণীর পরে আর পড়ছে না, তাদের জন্য একটা সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা রাখা যাতে তারা সেটা ব্যবহার করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ছিল যে, কিছু কিছু পিয়ন বা নিরাপত্তারক্ষী পদের জন্য ৮ম শ্রেণী চাওয়া হয় -এসব সার্টিফিকেট তাদের কাজে লাগবে।
[যদিও এখন যুক্তিগুলো খুব একটা যুতসই মনে হচ্ছে না]
একটি তথ্য যোগ করতে পারেন যে এই দুটির কোনটিই আমাদের শিক্ষানীতিতে নেই।
I appreciate your analysis, of course ur induction with game theory makes a great deal of sense. However, I would point to another aspect. There may be a carefully orchestrated plan to create two classes of citizens. Given that only the privileged class can access English medium education- although there are a lot of variations within, I in general refer to the mainstream- the deliberate undermining of general education system may be a part of a long term plan. Further, there are over 30 public universities and 50+ private universities. If pass rate is not high enough, the potential utilization level of most of the private universities will be seriously threatened.
ফন্টে ভাইয়া, একটু কষ্ট করে বাংলায় লিখুন।
আশা করি গিনিপিগ আমরা সবাই চিনি।আমাদের দেশের ছোট বাচ্চারা হল গিনিপিগ। আর আমাদের দেশের শিক্ষা মন্ত্রী হল গিনিপিগদের অভিভাবক। তিনি এক একটা নিয়ম বের করেন আর গিনিপিগদের উপর প্রয়াগ করে দেখেন।
তার ইচ্ছা হলে যে কোন সময় আবার দেখা যাবে দুটো পরিক্ষাই বাতিল করে আবার অন্য নিয়ম চালু করা হচ্ছে।
যতদূর জানি, সরকারের আল্টিমেট উদ্দেশ্য ছিল স্কুল পরীক্ষা হিসেবে এসএসসি পরীক্ষা তুলে দিয়ে জেএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষাকে বহাল করা। সেই উদ্দেশ্যের অংশ হিসেবে পরিক্ষামুলক ভাবে এসএসসি বহাল রেখেই জেএসসি চালু করা হয়েছিল। তাই এখন যে জেএসসি এবং এসএসসি দুটোই আছে, সেটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে চালু হয়েছিল। অবশ্য সেই অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাই এখন স্থায়ী রুপ নিতে চলেছে।
প্রশ্ন হল সেই ব্যবস্থাতেও জেএসসি পরীক্ষার কোন প্রয়োজন ছিল কিংবা আছে কি না, যদিও অভিভাবক এবং বিশেষজ্ঞ(?) পর্যায়ে এর পক্ষ এবং বিপক্ষ দু-পক্ষেই জোড়ালো অভিমত রয়েছে। যারা এর পক্ষে মত প্রকাশ করেন, তাদের অভিমত হল, কঠিন এই পৃথিবীতে যত আগে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব এবং যোগ্যতা তৈরি হয়, ততই ভাল। কতৃপক্ষের দিক থেকেও এ পরিক্ষা নেয়ার একটা কারন থাকতে পারে, তা হল- ব্রিটিশ আমল থেকে তথাকথিত ভাল ছাত্রদের জলপানি বা বৃত্তি দেয়ার যে নিয়ম চালু রয়েছে, সেই বৃত্তি দেয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই করা। এটা ঠিক যে একটা স্কুলের সামান্য কিছু সংখ্যক ছাত্রকে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য মনোনীত না করে সকল ছাত্রের এতা উন্মুক্ত রাখা অনেক বেশী শোভনীয়। সম্ভবত প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা সৃষ্টি এবং বৃত্তিপ্রাপ্তদের তালিকা প্রনয়নের উদ্দেশ্য থেকেই পিএসসি পরিক্ষাটিও যুক্ত হয়েছে যুক্ত হয়েছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়।
কিন্তু এ সব কিছুর মধ্যে কোচিং বানিজ্যের ভয়াল থাবা এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে, মাথা ব্যাথার কারনে এখন আমাদের মাথাটিই কেটে ফেলতে হবে কি না তাি ভাবতে হচ্ছে।
পিএসসি এবং জেএসসি নামের দুটো পাব্লিক পরীক্ষা প্রবর্তনের পরে পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে কি বৃত্তি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে? যদি করা না হয়ে থাকে, তাহলে তো এখানে একটা রিডানডান্সি দেখতে পাচ্ছি; পিএসসি/জেএসসি-র ফলের ভিত্তিতেই উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া যায় (যেমন, এসএসসি/এইচএসসি-তে যারা মেধা তালিকায় স্থান পেত, তারা কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেত)। আর বৃত্তি পরীক্ষার জন্য যেসব শিক্ষার্থীদের মনোনীত করা হত, তাদেরকে তো তো রীতিমত পরীক্ষা নিয়ে বাছাই করা হত (এসএসসি/ এইচএসসিতেও যেমন টেস্ট পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষার্থী বাছাই করা হত)।
শিক্ষার্থীর তুলনায় আমাদের দেশে "ভাল" শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে প্রতিযোগিতা সবসময় থাকবেই। নতুন করে ছাত্রদের ওপর প্রতিযোগিতার বোঝা চাপানর তো কোন কারণ দেখছি না। ইংরেজিতে একটা কথা আছেঃ If it ain't broke, don't fix it। যে পরীক্ষাব্যবস্থা মোটামুটি ভালভাবেই চলছিল, সেটাকে মেরামত করতে যেয়ে আরও নষ্ট করা হচ্ছে। ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো (বিশেষতঃ জেলা পর্যায়ে) এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করার বদলে কেবল পরীক্ষার সংখ্যাবৃদ্ধির নামে এসব কসমেটিক পরিবর্তন কোন সুফল বহন করবে না। পরীক্ষার সংখ্যা যত বাড়বে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শর্টকাটে ভাল ফল করার প্রবণতাও (এবং হয়ত প্রয়োজনীয়তা) তত বাড়বে - যেটা আমরা বাংলাদেশে অলরেডি দেখতে পাচ্ছি।
Emran
আগে শুনতাম প্রতিযোগিতা কমাতে বোর্ড থেকে মেধাতালিকার ধারণা বাদ দেয়া হয়েছে। এখন শুনি প্রতিযোগিতার মনোভাব বাড়াতে এতোসব পরীক্ষার আয়োজন। শেষ পর্যন্ত কোচিং সেন্টার আর প্রাইভেট টিউশনির মার্কেটে তেল যোগানো ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমিও এটা জানতাম। কথা ছিল পরীক্ষার সংখ্যা কমবে। কিন্তু উল্টা বুঝলো রাম। পরীক্ষার সংখ্যা বরং দ্বিগুন হয়েছে। সার্টিফিকেট পরীক্ষাগুলোর অনৈতিক প্রতিযোগীতা মানুষকে রীতিমত বর্বর করে তুলছে। কিছু কিছু অভিভাবকের উপর এই চাপটা এত বেশী পড়েছে যে যদি বর্ডার খুলে দেয়া হতো তাদের অনেকে মনে হয় দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও পালিয়ে যেতো।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সম্ভবতঃ বেশী পরীক্ষা, বেশী সার্টিফিকেট, বেশী এপ্লাস এসব না হলে জাতিকে শিক্ষিত বলা মুশকিল হয়ে পড়েছে সরকারের কাছে। দেশে শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রকল্পে ভবিষ্যতে প্রতি বছর একটি করে সার্টিফিকেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও আশ্চর্য হবো না।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
জাতিয় কোচিং শিল্পের উন্নয়ন ছাড়া এর আর কোন অবদান নাই।
সহমত।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
যদিও শিক্ষামন্ত্রককেই সিংহভাগ দায় নিতে হবে, কিন্তু দায় অন্যদের ও আছে, হিমু ভাই। সারা দেশে শিক্ষালয় ও শিক্ষা সম্পর্কিত প্রশাসনে জামাতি কিলবিল করছে, এই বিশাল জামাতি শিক্ষক ও সরকারী কর্মচারীগণের জোট যদি কোন ব্যাপক প্রজেক্ট গ্রহন করে এবং সক্রিয় হয়ে উঠে তাদের তেলতেলে নেটওয়ার্ক, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা সত্যি কঠিন। তবে পোস্টের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সহমত।
ভীষন সময়োপযোগী পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ, হিমু ভাই।
(অতিথী)
জাতীয় শিক্ষানীতিতে দুটো পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে- অষ্টম ও দ্বাদশ শ্রেণীতে। তবে আমাদের সংস্কৃতিতে মাধ্যমিকের গুরুত্ব ও জনমনে এর প্রভাব বিবেচনা করে পি,এস,সি এবং জে,এস,সি দুটোই তুলে দেয়া উচিত অবিলম্বে।
সত্যি আমাদের স্কুলছাত্রদের চেয়ে দুর্ভাগা আর কারা আছে? একটা মুহূর্ত বিরাম নেই। স্কুলে ভর্তির কোচিং, ক্লাস কোচিং, ক্লাস থ্রি, সিক্সে ভর্তির কোচিং, ক্যাডেট কোচিং। পি,এস,সি জে,এস,সির কোচিং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পর আবার একগাদা ভর্তি কোচিং! এভাবে একটা মুখস্থসর্বস্ব জড়দ্গব জাতিতে পরিণত হচ্ছি আমরা। ক্যাম্পাসগুলো পরিণত হচ্ছে তোতাপাখি আর জঙ্গী তৈরির কারখানায়।
স্কুলগুলোতে আর কাউকে খেলতে দেখি না। বেড়ানো কী, ভালো বই কী- তা প্রায় কেউই জানে না!
এভাবে আর কতদিন?
পিএসসি এবং জেএসসি দুটো পরীক্ষাই অযৌক্তিক। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববর্তী একটি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা থাকাই যথেষ্ট। দ্বাদশ শ্রেণীতে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা রেখে বাকি শ্রেণীগুলোর পরীক্ষা স্কুলের দায়িত্বে ছেড়ে দেয়া যায়।
আরেকটা সমস্যা হলো মিরপুরের একটা ছেলে বা মেয়ের হাইস্কুল পড়তে ধানমন্ডি বা নিউ মার্কেট এলাকায় আসা, এটা একটা বাড়তি প্রেসার, অযথা কমিউট করার সময় বাড়ছে। বাড়ির ঠিকানার পোস্টাল কোডের সীমানার ভেতর কোন স্কুলে পড়তে হবে এমন একটা নিয়ম করতে পারলে অনেক কিছুই বদলে যেতো, কিন্তু বাংলাদেশে এটা করা বোধহয় সম্ভব না।
----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
২০১৮ সাল থেকে পিএসসি রদ করা হচ্ছে [সূত্র]।
নতুন মন্তব্য করুন