প্রতিভুভুজেলা

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০৪/২০১৫ - ২:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নববর্ষ উদযাপন করতে আগতা নারীদের ওপর কিছু মাদারচোদ চড়াও হয়ে তাদের বস্ত্রহরণ করেছে। কাজটা যে হঠাৎ সুযোগ নিয়ে করা হয়েছে, এমনও নয়। কিছু লোক ওঁত পেতে থেকে আচমকা শেয়ালের পালের মতো চড়াও হয়েছে সন্তানবাহিনী মায়ের ওপর, উপস্থিত যুগলের ওপর। কয়েকজন ঘিরে রেখেছে শিকারকে, কয়েকজন তাদের জামা টেনে ধরেছে। সাহায্যের জন্য করা আর্তচিৎকার শুনে যাতে কেউ এগিয়ে না আসে, সেজন্য ভুভুজেলা বাজিয়ে আর্তনাদ চাপা দেওয়া হয়েছে। এই কাজগুলোর জন্য পরিকল্পনা ও অনুশীলনের প্রয়োজন। ভিড়ের ভেতরে সুযোগসন্ধানী বখাটের হাতে মেয়েদের নাজেহাল হওয়ার বিচ্ছিন্ন ঘটনা অন্তত এটি নয়। যারা এ কাজ করেছে, তারা পহেলা বৈশাখের উদযাপনটিকেই দীর্ঘ মেয়াদে আক্রমণ করতে চায়। সে দীর্ঘমেয়াদী আক্রমণের প্রথম ধাপ নারীর ওপর করে শুরু করা বাংলাদেশে সহজ, আরো কিছু মাদারচোদ তাদের সহমাদারচোদদের সমর্থন করে আক্রান্তা নারীটির ওপর যাবতীয় দোষ চাপিয়ে দিতে অনলাইনে এবং অফলাইনে সবসময়ই হাজির থাকে।

তাই বলে কি আমাদের নববর্ষ উদযাপন থেমে থাকবে? কখনোই না।

এ অবস্থায় আমাদের কর্তব্য হতে পারে, নতুন বছর উদযাপনের পাশাপাশি প্রতিটি ঋতুকে আলাদা করে বরণ করার জন্য আরো উৎসব প্রণয়ন করা। পহেলা ফাল্গুনে বসন্তবরণ উৎসব অনেকদিন ধরেই পালিত হচ্ছে, এটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই দিনটিকে নববর্ষের মতোই আনন্দ উদ্দীপনা নিয়ে সবাই উষ্ণবর্ণের জামা পরে উদযাপন করেন, তবে কী করে দিনটিকে আরো আনন্দমুখর করা যায়, তা নিয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের আরো ভাবতে হবে।

পহেলা ফাল্গুনের পাশাপাশি আষাঢ়ের প্রথম দিনে বর্ষাবরণ উৎসব পালন করতে হবে, সমবেত হয়ে নারী পুরুষ সকলে গান, নৃত্য, পথনাটক ও সমাবেশের মধ্যে দিয়ে বাংলার প্রাণদায়িনী বর্ষাকে বরণ করে নিতে পারেন। কদম ফুল হতে পারে এই উৎসবের প্রতীক, রংধনুর সাত রং হতে পারে এই উৎসবের মুখ্যবর্ণ। শেষ গ্রীষ্মের ফল আর বর্ষার ফুল নিয়ে হতে পারে চমৎকার সব আয়োজন আর প্রদর্শনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সেজে উঠতে পারে চারুকলার শিল্পীদের তৈরি করা ব্যাঙের ছাতায়।

যদিও শরৎকে এখন আলাদা করে চেনা দুঃসাধ্য, কিন্তু শরৎবরণের জন্য ভাদ্রের প্রথম দিনটিতে বিদ্যায়তনগুলো ছেয়ে যেতে পারে নীল আর সাদার বিভিন্ন শেডে। কাশের একটি করে শীষ নিয়ে তরুণ-যুবা-বৃদ্ধরা সাদা কুর্তা আর পায়জামায় সজ্জিত হয়ে সাদা-নীল শাড়িতে সেজে আসা সঙ্গিনীকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন একই রঙে সাজানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। চারুকলার শিল্পীরা এ দিন ক্যাম্পাসকে সাজিয়ে তুলবেন কাগজের সারস আর শরতের ফুলের সজ্জায়।

হেমন্ত আর শীতকেও একই ভাবে বরণ করে নেওয়া যেতে পারে আলাদা দুটি উৎসব করে। কার্তিক আর পৌষের প্রথম দুটি দিনে সোনালি আর ধূসর রঙের পোশাকের মানুষ আরা নানা পিঠার আয়োজনে ভরে উঠবে উৎসবের চত্বরগুলো। হাসিমুখে নারী আর পুরুষের সমাগমে ভরে উঠবে রমনা, সোহরাওয়ার্দি, টিএসসি, চারুকলা, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, উদযাপনের এলাকাগুলো।

পহেলা বৈশাখকে আক্রমণ যারা করে, তাদের শায়েস্তা করার জন্য প্রথম উদ্যোগ হোক এটিই, উৎসবের আয়োজন বহুগুণিত হোক। উদযাপনের দিক ছয়গুণ বাড়ানো হোক। হয়তো শুরুতে অনুষ্ঠানগুলো জমবে একটু কম, কিন্তু তার পরের বছর আরেকটু সরগরম হবে, আরেকটু জমজমাট হবে, তরুণ-তরুণীরা আরো নানা আগ্রহোদ্দীপক আয়োজনে ঋতুবরণের উৎসবগুলোকে আরো বর্ণিল করে তুলবেন। কাজটা খুবই সহজ, বন্ধুকে নিয়ে উপস্থিত হলেই দেখবেন উৎসবকে শূন্য থেকে গড়ে তুলছেন আপনি নিজেই।

বাপের গোয়া দিয়ে পয়দা হওয়া যেসব শুয়োরের বাচ্চা ভুভুজেলা বাজিয়ে মেয়েদের ঘিরে ধরে তাদের কাপড় ধরে টানাটানি করে, তাদের মোকাবেলার দ্বিতীয় পন্থাটি আরেকটু কম অহিংস। ওরা যদি ৪০-৫০ জন মিলে দল বেঁধে ওঁত পেতে থেকে আপনার সমাজের একজন নারীর ওপর আক্রমণ চালায়, তাহলে আপনিও পারবেন ১০০-২০০ জনের একটি দল বেঁধে এদের প্রতিহত করতে। যে পহেলা বৈশাখকে পণ্ড করার জন্য মেয়েদের জামা ধরে টানে, আর যে মেয়েটিকে ঘিরে ধরে আত্মরক্ষায় বাধা দেয়, দু'জনই সমান বাপের গোয়া দিয়ে পয়দা হওয়া শুয়োরের বাচ্চা। সামনের উৎসবে একা যাবেন না, বড়সড় দলের সঙ্গে কোঅর্ডিনেট করে যাবেন। যদি হাত-পা চালাতে না পারেন, মোবাইলের ক্যামেরা চালাবেন। স্পষ্ট ছবি তুলে নিয়ে আসবেন এই মাদারচোদদের। সেই ছবি কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ ও প্রচার করে এই মাদারচোদদের এক এক করে খুঁজে বের করা হবে, দশ বছর পরে হলেও। এরা যে প্রতিষ্ঠানে পড়ে বা চাকরি করে, সে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। পুলিশ যদি এদের জেলে না ঢোকায়, মামলা না দেয়, আদালত যদি এদের শাস্তি না দেয়, তাহলে এদের সামাজিকভাবে একঘরে করা হবে।

দেশটা আপনার, উৎসব আপনার, মানুষও আপনার। আসুন ঘুরে দাঁড়াই। কয়েকটা খানকির পোলা মিলে আমাদের হাত থেকে যেন এই দেশ-মানুষ-উৎসবকে ছিনিয়ে নিতে না পারে।

ভুভুজেলা যখন আমরা বাজাবো, তখন মাইরও হবে, সাউণ্ডও হবে।


মন্তব্য

স্যাম এর ছবি

"উৎসবের আয়োজন বহুগুণিত হোক" চলুক চলুক

সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পরিধি বাড়ানো নিয়ে ভাবনা-চিন্তা প্রয়োজন। ঋতুভিত্তিক উৎসবের আয়োজন স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শুরু করে দিতে খুব বেশি আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হবেনা মনে হয়। প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন গুলো চাইলে ভাল ভূমিকা নিতে পারে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমকে একটি হারমনিয়াম দাও , এক জন ভাল কবি দাও । এসব বাদ আমায় একটি ভুবুজেলা দাও , আমি তোমাদের .........।।

রানা মেহের এর ছবি

বলতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এদের সামাজিক ভাবে একঘরে করা যাবেনা। সমাজ এদের আদর করে কোলে তুলে নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আইনানুযায়ী কঠিন শাস্তি একমাত্র উপায়।

সবগুলো ঋতু পালনের আইডিয়াটা ভাল। করা গেলে দারুন হবে।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ওয়াহিদ এর ছবি

কাকে একঘরে করবেন? সমাজের একটা বড় অংশের কাছে এগুলা হিরো!

হিমু এর ছবি

একবার মাইর শুরু করেন, দেখবেন সমাজ সুড়সুড় করে লাইনে চলে আসবে। লাত্থির ঢেঁকি মিষ্টি কথায় নড়ে না।

অন্যকেউ এর ছবি

চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

মরুদ্যান এর ছবি

সবগুলা ঋতু পালন নিয়া খুব আশাবাদী না। পয়লা ফাল্গুনই তো পুরা দেশে ছড়ানো গেলনা। রক্ষণশীল জেলা বা এলাকাগুলোতে আরো কঠিন। আইনানুযায়ী কঠিন শাস্তি দিয়ে আগে বিষদাঁত টা ভাঙতে হবে। তারপর করতে হবে ভিটাছাড়া।

দল বাইন্ধা মাইরের আইডিয়া ভাল। আমাদের দেশে দাঁড়ায়া দাঁড়ায়া মজা দেখা লোকের পরিমাণ ৯৯.৯ শতাংশ। কিন্তু ২-১ টা নিরীহ লোকও আক্রান্ত হইতে পারে, দেখা গেল দোষীর কিছু হয়নাই। আরেকজন নির্দোষ লোক গণ পিটুনিতে নিহত। মন খারাপ

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

শুধু বছর নয় প্রতিটি মাসকেই বরণ ও উদযাপন করে নেওয়ার প্রস্তাবটি খুব চমৎকার লেগেছে। এই সকল উট দুম্বাদের ভয়ে কোনো মেয়ে যেন ঘরের কোণে বসে না থাকে। দলে দলে মেয়ে বেরিয়ে আসুক রাস্তায়; অনুষ্ঠানে আন্দোলনে বিপ্লবে।
মাঝে মাঝে মুক্তমনায়ও লিখুন না, হিমু। খুব ভালো লাগবে আপনাকে মুক্তমনায় দেখলে।
তামান্না ঝুমু

হিমু এর ছবি

ধন্যবাদ, আমি সচলায়তন ছাড়া আর কোথাও লিখি না।

অতিথি লেখক এর ছবি

মরুদ্যানের সাথে স হমত, ঢাকার অল্প কয়েকটা স্পটে প্রতিটা ঋতু উৎসব চালু করার থেকে , নববর্ষ আর পয়লা ফাল্গুনটা যেন দেশের সব অংশে হয়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরী।

----যান্ত্রিক বাঙালি

এক লহমা এর ছবি

"কয়েকজন ঘিরে রেখেছে শিকারকে, কয়েকজন তাদের জামা টেনে ধরেছে। সাহায্যের জন্য করা আর্তচিৎকার শুনে যাতে কেউ এগিয়ে না আসে, সেজন্য ভুভুজেলা বাজিয়ে আর্তনাদ চাপা দেওয়া হয়েছে। এই কাজগুলোর জন্য পরিকল্পনা ও অনুশীলনের প্রয়োজন। ভিড়ের ভেতরে সুযোগসন্ধানী বখাটের হাতে মেয়েদের নাজেহাল হওয়ার বিচ্ছিন্ন ঘটনা অন্তত এটি নয়। যারা এ কাজ করেছে, তারা পহেলা বৈশাখের উদযাপনটিকেই দীর্ঘ মেয়াদে আক্রমণ করতে চায়।"
- ঘটনা পরবর্ত্তী সময়ে দোষীদের আড়াল করা বক্তব্যগুলি থেকেও সেটাই মনে হয়।

"উৎসবের আয়োজন বহুগুণিত হোক" চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

আয়নামতি এর ছবি

দারুণ আইডিয়া চলুক
আমারও মনে হয় প্রথম প্রথম ঋতু ভিত্তিক উৎসব সেভাবে জমবে না।
কিন্তু ধৈর্য্য ধরে বন্ধু স্বজন নিয়ে করতে থাকলে ঠিকই জমে যাবে।
তবে বদের হাড্ডিদের একঘরে করা নিয়ে কিঞ্চিৎ সন্দেহ আছে ইয়ে, মানে...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। ১লা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব লোকে পালন করার চেষ্টা করে। কিন্তু বিশেষ অনুষ্ঠান/আয়োজন না থাকায় এটা এখনো জমে উঠছে না। এক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি উভয় প্রকার উদ্যোগ দরকার।

২। শীতের পিঠা উৎসব শিল্পকলা একাডেমিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই আলাদা আলাদাভাবে আয়োজন করে। এটাকে সমন্বিত করার উদ্যোগ নেয়া দরকার। তাহলে এটা জাতীয় উৎসবের চেহারা পেয়ে যাবে।

৩। নাবন্ন উপলক্ষে ধান উৎসব আয়োজন করা হয় বটে, তবে আকারে ছোট, প্রচারণাও নেই। এক কালে নবান্ন ঘরে ঘরে পালন করার রেওয়াজ ছিল। এটা ফিরিয়ে আনতে হবে।

৪। শরতে উৎসব আয়োজন করা একটু কঠিন, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ঋতুটা এখন আর বোঝার উপায় নেই। তবু বিকল্প কিছু ভাবা যেতে পারে।

৫। বর্ষা উৎসব খুব ভালোভাবে পালন করা সম্ভব। তবে এর জন্যও উদ্যোগ চাই।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরা এইসব উৎসব পালন করা শুরু করলে বুড়োরা সেখানে যোগ দিতে আগ্রহী হবে। আর একবার লোকজন যাওয়া শুরু করলে কর্পোরেট হাউজগুলো বিজ্ঞাপন দেবার সুযোগ পাবে এবং উৎসব আকারে বাড়তে থাকবে।

এগুলোর বাইরে সঙ্গীতভিত্তিক উৎসব সারা বছরই আয়োজন করা সম্ভব। আমাদের গানের ভাণ্ডার এতো বিচিত্র ও সমৃদ্ধ যে, টানা ৩৬৫ দিনও অনুষ্ঠান চালানো সম্ভব।

সুস্থ ও রুচিশীল বিনোদনের জন্য এমন উৎসবগুলোর বিকল্প নেই। এমনসব উৎসবে যত বেশি লোক অংশগ্রহন করবে, অন্ধকার তত দূরে পালাতে থাকবে।

***********

কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাইরের উপরে ঔষধ নাই। ইতরদেরকে চিহ্নিত করে তাদের চাঁদবদন আর কীর্তিকলাপ ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক সিংহপুরুষই বিলাই হতে বাধ্য হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি একটা প্রস্তাব দিছিলাম- এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত- যাদের ছবি পাওয়া গেছে তাদের ছবি সম্বলিত এক একটি পোস্টার বানানো হোক যার উপর লেখা থাকবে ‘নিপীড়ক’ আরো কিছু লেখা থাকতে পারে। এবং এটা যারা আন্দোলন করছে বা সহমত পোষণ করছে তারা এটা নিজ উদ্যোগে আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দেবে, দেয়ালে সেঁটে দেবে।

উৎসবকে আরো ছড়িয়ে দেয়াটাই জরুরি কাজ। বর্ষা, হেমন্ত, শীতের পিঠা উৎসব, ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং একটা আবেদনও তৈরি হয়েছে। এমনকি শরত নিয়েও ছোটখাট পরিসরে উৎসব আয়োজন হচ্ছে। আমাদের উৎসবকে এভাবে থামানো যাবে না। থামবে না।

স্বয়ম

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আবহমান কাল ধরে চলে আসা বাঙালির প্রাণের অনুষ্ঠানগুলো চলেছে, চলছে, চলবে। দৃঢ় প্রত্যয়!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের দেশে যত ধরণের উৎসব হয়, আমার মনে হয় শুধুমাত্র এটাই হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবারই। আরো বড় করে বললে বলা যায়, একমাত্র বাঙালীর উৎসব যা খুব বড় আকারে পালন করা হয়।

এরকম আরও যদি উৎসব করা যায় আমার মনে হয় তা আসলেই ভাল হবে। কেননা, ধর্ম-কর্মের নামে যে অন্ধকার আমাদের ঘিরে ফেলেছে তা দূর করার জন্য অবশ্যই আমাদের বাঙালী সত্ত্বাকে জাগাতে হবে।

বর্ষবরণের মত 'বর্ষাবরণের' কথা শুনে কেন জানি রাখাইনদের (খুব সম্ভবত) 'জলকেলি' উৎসবের কথা মনে পড়ল। কিন্তু যে অন্ধকারের দিকে আমরা এগোচ্ছি সেখানে এটার চিন্তা করাটাও হাস্যকর।

ভুভুজেলা অবশ্যই সর্বত্র নিষিদ্ধ করার দাবী জানাচ্ছি। তেমনি দাবী জানাচ্ছি পাড়ায় পাড়ায় রং নিয়ে ঐ নোংরামোটা নিষিদ্ধ করার। রং নিয়ে খেলা দেখতে আসলেই ভাল লাগে,সেটা যদি আসলেই 'রং' হয় আর খেলাটাও যদি হয় নির্দিষ্ট জায়গায়, নির্দিষ্ট মানুষদের সাথে। কিন্তু এই কিশোর ছেলেগুলো যখন রাস্তায় মেয়েদের নতুন বৈশাখী জামাটা নষ্ট করার জন্য বিচ্ছিরি কালো রং ছোঁড়ে, প্রচন্ড রাগ লাগে। এরাই এখন হয়ত আরেকটু বড় হয়ে টিএসসির ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে!

তবে জানি, একদিন আলো আসবেই।

রাসিক রেজা নাহিয়েন

অতিথি লেখক এর ছবি

সবগুলো উৎসব পালনে সবচেয়ে বড় বাঁধা ছুটি। যেমন পহেলা ফাল্গুনে পহেলা বৈশাখের মত মানুষের ঢল নামেনা শুধু ছুটির কারণে। পহেলা ফাল্গুনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাসরুমগুলো সব হলুদ হয়ে থাকে। হলুদ হয়ে থাকে সরকারী অফিস থেকে শুরু করে কর্পোরেট অফিসগুলো পর্যন্ত। কিন্তু কেউ কারো কাজ রেখে আর বেরুতে পারে না।

প্রত্যেকটা ঋতুবরণ অনুষ্ঠান চারুকলাতে হয়। যেহেতু মানুষ খুব বেশি হয় না, মাঝে মাঝে ঋতু চলে আসার বেশদিন কিছুও পরে হয়; তবে হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানগুলোর কোনো প্রচারণা নাই। খুব বেশি মানুষ জানতে পারে না অনুষ্ঠান হচ্ছে, কবে হচ্ছে।

নাবিলা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এটার একটা সহজ সমাধান আছে। ১ তারিখের ঠিক পরবর্তী শুক্রবারে দিনটা উদযাপন করলেই হয়। মাদার্স ডে জাতীয় উৎসবগুলো কিন্তু অমুক মাসের তমুক সপ্তাহের রবিবার করে পালিত হয়।

অনুষ্ঠান আগের দিন (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় শুরু করে দেয়া যায়। যাদের পক্ষে সম্ভব রাতে গেলেন, থাকলেন। রাতভর নাচ, গান, নাটক, যাত্রা, স্ট্যান্ডআপ কমেডি, জাদু, আতশবাজী চললো। যারা রাতে যেতে পারবেন না তারা পরদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুবিধাজনক যে কোন সময়ে গেলেন।

আরেকটা ব্যাপার। ঢাকার কথা বলি। ঢাকা এখন অনেকগুলো ছোট শহরের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক মেগালোপোলিস। তাই অনুষ্ঠানগুলো এককেন্দ্রিক না করে একইসাথে মীরপুর, শ্যামলী/মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/রমনা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়/আহসান মঞ্জিল, পোস্তগোলা/ফরিদাবাদ, গুলশান/বনানী/বাড্ডা, উত্তরা, খিলগাঁও/বনশ্রী - এমন ৮/১০টি জায়গায় ছড়িয়ে দিতে পারলে মোট অংশগ্রহনের পরিমাণ বাড়বে, অযথা ভীড় ও হয়রানীর পরিমাণ কমবে। একই প্রকার ব্যবস্থা চট্টগ্রামেও নিতে হবে। অন্য মহানগর ও শহরগুলোতে আপাতত একটা কেন্দ্র হলেই চলবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীলকমলিনী এর ছবি

হিমু তোমার আইডিয়া টা ভালো লেগেছে। কলেজ ভারসিটির ছেলে মেয়েরা শুরু করলে আস্তে আস্তে সারা দেশেই ছড়িয়ে পরবে। সবাই মিলে প্রতিরোধের চেস্টা করলে শয়তান গুলো পালাবার পথ পাবে না। ভুভুজেলা জিনিষ টা কি? এই প্রথম নাম শুনলাম।

হিমু এর ছবি

এই যে এখানে দেখুন আর শুনুন।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ঘটনার জন্য নিন্দা করে যেসব শুয়োরের বাচ্চা মিনমিন করে বলে, "কিন্তু মেয়েদেরও সন্ধ্যার সময় ওই জায়গায় যাওয়া উচিত হয়নি", তাদের বলি, "তোদের মা বোন যখন সন্ধ্যার পর কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবার জন্য বের হয় তখন কেউ যদি পথে শাড়ি টেনে রাস্তায় নামিয়ে বেইজ্জতি করে, তখনো কি বলবি- "আমার বোন কেন দুপুরে না গিয়ে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠানে গেল?"

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আলাদা আলাদা করে ঋতু উৎসব পালনের আইডিয়াটা দারুন! কারো হয়ত মনে হতে পারে- তেমন জমবে কি? কিন্তু ভেবে দেখুন, সত্তরের, আশির, এমনকি নব্বইয়ের দশকেও পয়লা বৈশাখের উদযাপন কি এখনকার মত এত ব্যাপক ছিল? বাঙালী উৎসব প্রিয়, কালের প্রবাহে তাই দেশজ কৃষ্টি থেকে উৎসারিত এসব উৎসব পাকা আসন করে নিতে পারে বাঙালীর হৃদয়ে।

সংঘবদ্ধ বখাটের দলকে দমনের জন্য প্রথমে বোধ হয় প্রয়োজন আওয়ামী সরকারের সদিচ্ছার মনোভাব জাগ্রত করা। সেদিনের সেই বিপর্যয়ের বিষয়ে সরকারের মনোভাব আসলে কি, সেটাই যেন ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে, তারা বলতে চাচ্ছে- তেমন মারাত্মক কিছু ঘটে নাই, টুকটাক একটু কিছু হয়েছিল, যেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। পুলিশের বড় কর্তারা বলছে- "তেমন গুরুতর কিছু ঘটার প্রমান পাওয়া যায় নাই", যেটা প্রকারান্তরে সরকারেরই ভাষ্য হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের ভেবে দেখা দরকার- সরকার কেন এরকম অস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। আমার মনে হয় ব্যাপারটা অস্বীকার করার মাধ্যমে সরকার বুঝাতে চেয়েছে যে তাদের শাসনামলে এমন কদাচার হয় না, নারীরা নিরপদ্রুপভাবে সামাজিক উৎসবে সামিল হতে পারে। বলাই বাহুল্য পুলিশের ভাষ্য কেউ গ্রহন করে নি, আর সরকারের দায়সারা মনোভাব বিপুল সংখ্যক সংস্কারমুক্ত মানুষকে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ করেছে। এর চাইতে বরং তড়িৎ গতিতে যে কয়জনকে সম্ভব ধরে দ্রুত বিচারের সম্মুখীন করাটা সরকারের জন্য অনেক ইতিবাচক হত বলে মনে হয়। সাধারন মানুষের পক্ষে বখাটেদের সাথে হাতাহাতিতে লিপ্ত হওয়াটা যুক্তিযুক্ত বলে আমার মনে হয় না, এতে আবার অন্য ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। অনুকূল পরিবেশে সামাজিক প্রতিরোধ বজায় রাখা সম্ভব, কিন্তু সে প্রতিরোধের কার্যকর সূচনাটা রাষ্ট্রযন্ত্র থেকেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। সরকার যাতে যুক্তিযুক্ত অবস্থান গ্রহন করতে দ্বিধা না করে, সে জন্য স্ব স্ব অবস্থান থেকে আমাদের সবারই প্রচেষ্টা চালান উচিৎ।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আমি নৈরাশ্যবাদী নয়, শুরটা একবার করা গেলে একদিন সারাদেশে ছড়াবেই।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার আইডিয়া! চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।