খ্রিস্টের জন্মের খোঁজ বাদার বাঘ রাখে না। খ্রিস্টের জন্মের আগেও সে গরানের শ্বাসমূলকে সচকিত করে নিঃসাড়ে নদীর জলে নেমে ওপারে কোনো হতভাগ্যের মাংসে দাঁত বসিয়েছে। বালথাজার, মেলকিওর আর গাসপার যখন বেতলেহেমের রাস্তা ভুলে হাঁ করে আকাশের তারা দেখছিলো, তখনও বাঘ শেষ রাতের অন্ধকারে নদীর ওপর ঝুঁকে পড়া গাছের ছায়া ঠেলে অনায়াসে চড়াও হয়েছে এক তরুণ চিত্রলের ওপর। ক্যালেণ্ডার বাঘের কাছে বাহুল্য। বংশ পরম্পরায় বাদার বুক চিরে তরতর করে বয়ে চলা মন্থরা সব নদী পার হতে হতে কারা দুই হাজার তেরোবার খ্রিস্টীয় ক্যালেণ্ডারের পাতা ওল্টালো, সে খবর রাখার ফুরসত বাদার বাঘের নেই।
পৌষের রাতে কনকনে ঠাণ্ডা জল ঠেলার শখ বাঘের ছিলো না। কিন্তু পেটের দায়ে তাকে নামতেই হয়। নদীর বুক চিরে এখন মালবাহী জাহাজ চলে সারাদিন সারারাত। কুয়াশার ভেতর সেগুলোর একটিমাত্র জ্বলন্ত চোখ নিভে যায়, হারিয়ে গিয়ে একটু পর পর মা-হারা হরিণবাছুরের মতো ভেঁপু বাজিয়ে একে অন্যকে ডাকে তারা। জাহাজগুলোর রকমসকম দেখে মনে হয়, এই বুঝি একে অন্যের সাথে বাড়ি খেয়ে কাত হয়ে পড়ে গর্ভের সবকিছু নদীর জলে বিসর্জন দিয়ে বনটাকে বিষিয়ে তুলবে তারা। নদীর এপারে হরিণের দল সেই কুয়াশাচর জলযানের রক্তচক্ষু আর আর্তধ্বনি একদম বরদাশত করতে পারেনি। তাদের করণীয় একটাই, সেটাই করেছে তারা, একের পর এক খাল আর খাঁড়ি টপকে সব সরে গেছে আরেক বাঘের তালুকে।
বাঘের চেয়ে বড় তালুকদার আর কেউ বাদায় নেই। এক বাঘের তালুকে আরেক বাঘ ঢুকে পড়লে পরিণতির গায়ে রক্তের ছিটা লাগতে বাধ্য। হরিণ যেমন নাচতে নাচতে এক বাঘের তালুক থেকে আরেক বাঘের তালুকে সটকে পড়তে পারে, বাঘ তেমনটা পারে না। কিছুদিন পর পর নিজেই পিশু করে নিজের তালুকের অলঙ্ঘ্য সীমানা দাগিয়ে রাখে সে, তার ওপারে গেলেই অন্য কোনো বিটকেল বাঘের সঙ্গে মরণপণ কুস্তির খাটনি বাধ্যতামূলক। নিজের তালুকের হরিণগুলো এভাবে শেয়ারবাজারের বখরার মতো চোখের সামনে লোকসান হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাঘ সাঁতরে নদী পার হয়।
নদীর ওপারে মানুষের তালুক শুরু।
ওপারে যে হরিণ নেই, সে কথা বাঘ জানে। কিন্তু আর যা-ই থাক, ঘাড় মটকে আজ সে একটা কিছু খাবেই খাবে। হপ্তাখানেক ধরে পেটে কিছু পড়েনি তার। ভুখা তালুকদারের মতো মরিয়া জীব আর কীই বা হতে পারে?
পৌষের হিমে স্নাত নদীখানা পেরিয়ে বাঘ গা ঝাড়া দিয়ে শরীর থেকে জল ঝরায়, তারপর মানুষের চলাচলে প্রশস্ত হওয়া পথ ধরে চুপচাপ চলতে থাকে। কিছুদূর গেলেই গ্রাম পড়বে, গন্ধের সূত্র ধরে টের পায় সে। মানুষের গায়ের নোনতা গন্ধ ক্রমশ তীব্রতর হতে থাকে পথের উজানে, বাঘ সে গন্ধের আঁচল ধরে চুপচাপ হাঁটে। নদীর শরীর বেয়ে বয়ে আসা হঠাৎ বাতাসে আশপাশে খাটো ঝোপঝাড় শিউরে ওঠে, বাঘের পায়ের শব্দ তাদের চেয়েও মৃদু।
হঠাৎ করেই বনের পরিচয় মুছে গিয়ে গ্রাম শুরু হয়। বাঘ নাকটা উঁচুতে তুলে বুক ভরে ঘ্রাণ নেয় একবার, তারপর নিশ্চিত পায়ে সামনে এগোয়। বলদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে কাছেই। হরিণের পর বলদই এখন তার ভরসা।
বাদার মানুষ গরিব, গরু রাখার সামর্থ্য আছেই কয়েক ঘরের। তাদের গোয়ালের বেড়া গরুর আব্রু রক্ষা করে বড়জোর, বাঘের কাছে সেই বেড়া জাগপার শফিউল আলম প্রধানের মেঠো বক্তৃতায় হুমকির মতোই তুচ্ছ। দুই চাপড়ে বন থেকে চুরি করে কেটে আনা ধুন্দলের ডাল দিয়ে বাঁধা বেড়ার আনুষ্ঠানিকতা উড়িয়ে দিয়ে সে উবু হয়ে গোয়ালের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
দুটো বলদ ঘুমাচ্ছিলো গোয়ালের ভেতরে, বাঘের গায়ের গন্ধ তাদের উত্তরাধুনিক স্বপ্নে খানিকটা ব্যাঘাত ঘটায়। একটা বলদ লেজ নেড়ে মাছি তাড়িয়ে বলে, ঘুমটা ভেঙে গেলো।
আরেকটা বলদ আধো ঘুমের মধ্যেই বলে, বলদের ঘুম সুন্দরী গরুর মনের মতো, অল্পতেই ভেঙে চুরমার।
বাঘের খুব মেজাজ খারাপ হয়।
বাদার হরিণ এতো বেয়াদব হয় না সাধারণত। বাঘের গন্ধ, শব্দ, দৃশ্য, কল্পনা ইত্যাদির তিলেকমাত্র উদয় হলেই তারা চম্পট দেয়। বাদার হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যই সেরকম। হরিণ দোতলা সমান লাফ দিয়ে খাল টপকে বনের মধ্যে উধাও হচ্ছে, এমন দৃশ্য না দেখলে বাঘের আঁতে মোচড় ঠিকমতো লাগে না। তার আগুন আর ধোঁয়ার ডোরায় ছাওয়া শরীরটার ভেতরে রুদ্ররস যোগায় কেবল হরিণের পলায়ন আর অন্য বাঘের আগমন। শুধু খালি পেট ভরাতেই সে গ্রামে ঢোকেনি, সঙ্গে একটু ক্রীড়ার বাসনাও তার ভুখা মনের এক কোণে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত মেহফিলের ডেকোরেটরের মতো চুপচাপ পড়ে ছিলো। কিন্তু এই অশিক্ষিত বলদ দুটো তার পেট ভরাতে পারলেও মন যে ভরাতে পারবে না, তা সে বুঝে যায় এক ঝটকায়।
একটা কাক তখনই কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে গোয়ালের ধোঁয়া তাড়ানোর ছোট্টো ঘুলঘুলিতে। গৌরচন্দ্রিকার ধার না ধেরেই সে বলে, খা খা খা। নাড়িভুঁড়ি আমাকে দিস।
বাঘের মেজাজ আরেক কাঠি খারাপ হয়। বাদার পাখিরা এতো বেয়াদব হয় না। কাকটা মনে হয় শহর থেকে এসেছে।
বলদগুলো এবার একটু ধড়মড়িয়ে উঠে বসে। চোখ মিটমিট করে কান নেড়ে কানের মাছি তাড়িয়ে এক বলদ বলে, বাঘ ঢুকলো নাকি দোস্ত?
অন্য বলদ একটু এগিয়ে গিয়ে ভালোমতো বাঘকে পরখ করে দেখে বলে, বাঘই তো মনে হচ্ছে। দাঁড়া চেটে দেখি।
বাঘ প্রথমে একটা কড়া ধমক দিতে যায়, তারপর গেরস্তের কথা চিন্তা করে জিভ কেটে ফিসফিসিয়ে গর্জে বলে, জিভ সামলে কথা বল, বলদ কোথাকার।
ঘুলঘুলিতে কাকটা এক পাক নেচে ওঠে গোয়ালের মশা তাড়ানো ধোঁয়ার মতো, বলে, বাঘ বাঘ বাঘ।
এক বলদ বলে, গেরস্তকে খবরটা দেওয়া দরকার না দোস্ত?
অন্য বলদ বলে, বিলক্ষণ। কিন্তু গেরস্ত তো ঘুমায়। ডাকলে যদি রাগ করে?
বাঘ চোখ মিটমিট করে বলদ দুটোকে দেখে কিছুক্ষণ ধরে। বলদের কথা সে ছানাবেলায় মায়ের কাছে শুনেছে কেবল, কিন্তু বাস্তবে যে বলদ এতো বড় বলদ, শীত ঠেলে নদীটা না টপকালে সে কিছুতেই বুঝতো না।
বাঘ দুই পা সামনে বাড়ে। কাকটা খুশিতে ডিগবাজি খেয়ে বলে, কা কা কা কা তব কান্তা কস্তে পুত্র? লাগ যা গলে কে ফির ইয়ে রাত হো না হো।
বলদ দুটো এবার গলাগলি করে কাকের সঙ্গে পোঁ ধরে কী যেন একটা বিটকেলে গান গেয়ে ওঠে।
কাকটাও বলদ দুটোর বলদামিতে অতিষ্ঠ হয়ে বলে, আরে তোদের গলাগলি করতে বলি নাই। বাঘকে বললাম তোদের ঘাড়ে নাজিল হতে। বলদ কোথাকার।
এক বলদ অশ্রুসজল চোখে বাঘের দিকে এগিয়ে এসে বলে, আয় ভাই ভায়ে ভায়ে গলাগলি করে একটা গজল গাই।
বাঘ একবার পেছন ফিরে গোয়ালের বেড়ার গায়ে গর্তটাকে দেখে, কান খাড়া করে গ্রামভর নিদ্রার শব্দ শোনে, ঘুলঘুলির কাকের নাচ দেখে কিছুক্ষণ, তারপর জিভ দিয়ে নিজের গাল চুলকাতে চুলকাতে বলে, এটা মানুষের গ্রাম তো, নাকি?
অন্য বলদ একগাল হেসে বলে, একদম। মানুষ ছাড়া বলদ পাবে কোথায়?
বাঘ হতাশ হয়ে কাকের দিকে তাকায়, বলে, আরে কিছু বল না এ দুটোকে। বলদ আমাকে ভাই বলে ডাকে। দেবো নাকি গলাটা টিপে?
কাকটা এবার একটু গম্ভীর হয়ে ঘুলঘুলির ওপর দাঁড়িয়ে গলা খাঁকরে বলে, বলদেরা আমার। তোমাদের গোয়ালে রাতবিরাতে বাঘ ঢুকেছে। কিছু বুঝলা?
এক বলদ সলজ্জ মুখে বলে, বলদের কাছে এসে বাঘের কীই বা লাভ? আমরা গরু হলে একটা কথা ছিলো।
অন্য বলদ গম্ভীর মুখে বলে, আমরা ওরকম বলদ নই।
বাঘ তিতিবিরক্ত হয়ে একবার ঘুরপাক খায় গোয়ালের ভেতরে। এ কেমন শিকার? বলদ দুটো বাবুরাম সাপুড়ের সাপের মতো নিরামিষ মাংস হয়ে থাকলে চলবে কীভাবে? আর্তনাদ কোথায়, আতঙ্কের ঘ্রাণ কোথায়, নিজের বুকে রুদ্ররসের দাপটে রক্তের লাফঝাঁপ কোথায়?
কাকটা বাঘের বিরক্তি টের পায়, সে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে, তোমরা বাঘের প্রেম নও, গেম। বাঘ তোমাদের মাংস চায়।
এক বলদ অন্য বলদকে ফিসফিস করে বলে, বাদায় নাকি বাঘ কমে গেছে। এখন বোঝো ঠ্যালা। অভাবে স্বভাব নষ্ট। এই বেটার মতলব তো ভালো মনে হচ্ছে না। তুই আমার পেছনটা পাহারা দে, আমি তোর পেছনটা দিচ্ছি। খুব হুঁশিয়ার।
বাঘ এবার আর মেজাজ সামলাতে পারে না, চাপা হুঙ্কার দিয়ে বলে, ধুত্তেরি!
কাকের গলায় সহানুভূতি উপচে পড়ে, আহারে। থাক, রাগ করে না। বলছি বুঝিয়ে। ওরে বলদজোড়, আপাতত গাঁড়ের চিন্তা না করে ঘাড়ের চিন্তা কর।
বাঘ কাকের দিকে তাকিয়ে বলে, এরা কি সবসময়ই এরকম কাঠবলদ, নাকি আমাকে চ্যাতানোর জন্য এমন করে?
কাক কাঁধের পালক ঝাঁকিয়ে বলে, মানুষের সঙ্গে থেকে থেকে...।
বাঘের থাবায় পলকে নখ বেরিয়ে আসে, সে গুঁড়ি মেরে এগোয় বলদ দুটোর দিকে।
বলদেরা ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যায়। এক বলদ অন্য বলদকে বলে, দোস্ত বাঘটা মনে হয় আমাদের ব্যথা দিতে চায়।
অন্য বলদ বলে, ও লোক ভালো না।
বাঘের মুডটাই নষ্ট হয়ে যায়, সে তড়পে উঠে বলে, খবরদার আর কথা কবি না! একদম চোপ! লড়েচ কি মরেচ!
এক বলদ শুকনো মুখে বলে, কামন ড্যুড। এইভাবে তুমি রাতবিরাতে আমাদের গোয়ালে ঢুকে মস্তানি করতে পারো না।
অন্য বলদ পাংশু হয়ে বলে, তাছাড়া দিস ইজ নট হাউ উই গো ডাউন। গেরস্ত বলেছে মরার আগে সে একবার আমাদের গাবতলি দেখাতে নিয়ে যাবে।
বাঘ গোয়ালের অন্ধকারে জুলজুল করে কিছুক্ষণ বলদ দুটোকে চোখ দিয়ে মেপে বলে, গাবতলি কী?
এক বলদ মুগ্ধকণ্ঠে স্বপ্ন-স্বপ্ন চোখে বলে, গাবতলি এক স্বপ্নপুরী। সেখানে এন্তার খৈল আর ভুষি। মীরকাদিমের ফর্সা ফর্সা সুন্দরী গরুর কাজল দেওয়া চোখের ভিড় সেখানে। সারাদিন শুধু খাও আর শোঁকো।
অন্য বলদও আনমনা হয়ে পড়ে, বলে, শুনেছি মীরকাদিমের গরুগুলো সারাক্ষণ লেজ তুলে রাখে, আর আড়ে আড়ে কেমন করে যেন তাকায়। তাছাড়া বলিউড থেকেও গরু আসে গাবতলিতে। শুনেছি তারাও খুব দুশ্চরিত্রা। তাদের কোনো বাপভাই নেই।
বাঘ ধমক দিয়ে বলে, চোপ শালা কাষ্ঠুবলদ! গাবতলিতে গরু আসলে তোদের কী? ধুন্দুল পাকলে কুমীরের কী?
এক বলদ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, অবলোকনেও সুখ!
অন্য বলদ শিউরে উঠে বলে, রজার দ্যাট!
কাকটা কা কা করে হেসে উঠে বলে, সারা সাতক্ষীরায় গাবতলি যাওয়ার রাস্তা জামাতের লোকে কেটে রেখেছে। বাঘের বগলতলির চেয়ে বেশি কিছু দেখার কিসমত তোমাদের নাই, মাই সুইট ইডিয়টস।
এক বলদ আঁতকে উঠে বলে, সত্যি? তিন সত্যি?
অন্য বলদের পাঁজুরে বুকে তবুও অনেক আশা কিলবিল করে, সে উতলা হয়ে বলে, গাবতলিতে লঞ্চে করে যাওয়া যায় না?
বাঘ গোয়ালের মেঝেতে থাপ্পড় মেরে বলে, শাটাপ। ফাক গাবতলি। ফাক মীরকাদিমের গরু। ফাকিউ।
কাক নাচতে নাচতে বলে, কা কা কা কামড়া!
এক বলদ পিছু হটতে হটতে গোয়ালের কোণে অন্য বলদকে সঙ্গে নিয়ে ঠাসাঠাসি করতে করতে বলে, ঠিকাছে ড্যুড। যদি তোমার হাতেই আমাদের স্বপ্ন মারা পড়ে, আমরাও বলদ পীরের নামে পাল্টা অভিশাপ দিচ্ছি...।
বাঘ আবার গুঁড়ি মেরেছিলো, অভিশাপের কথা শুনে সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, কার নামে?
অন্য বলদ সব আশা ঝেড়ে ফেলে তার শীর্ণ বুক ফুলিয়ে বলে, বলদ পীর, বাদার সব বলদের ভরসা।
বাঘ বিরক্ত হয়ে বলে, বনবিবিকে চিনি, বনের মালকিন। দক্ষিণ রায়কে চিনি, বাঘের বড়ভাই। বলদ পীর কে?
এক বলদ অন্য বলদের সঙ্গে গলাগলি করে সুর মিলিয়ে বলে, শুধু বাঘেরই বড়ভাই আছে, বলদের নাই? শোনো বাঘ, ইন দ্য নেইম অফ বলদ পীর, কার্সড বি দাই পিপল, ডেথ মোস্ট ফাউল বি আনফার্লড আপন দেম। বলদের মৃত্যু যেমন তোমার হাতে হচ্ছে, তোমার আর তোমার চোদ্দোগুষ্টির মৃত্যুও যেন কোনো বলদের হাতে হয়। বাঘ জাতির চিত্ত, বিত্ত আর পিত্ত যেন কোনো মহাবলদের ইশারায় ধূলিসাৎ হয়। চিত্তে ফাকিউ, বিত্তে ফাকিউ, পিত্তে ফাকিউ!
বাঘ আর সময় দেয় না। গোয়ালের অন্ধকার এক কোণে কাকের শরীর ঠেলে ঘুলঘুলির বাকিটুকি গলে রাতের আকাশ থেকে এক ফোঁটা আলোর দুধ ছলকে পড়ে তার আগুনে শরীরে, এক বলদের শ্বাসনালী পিষ্ট হয় তার চোয়ালে, অন্য বলদের ঘাড়ের হাড় চূর্ণ হয় তার হাতের থাপ্পড়ে। এক বলদকে মুখে করে বাঘ গোয়ালের দেয়ালের ফুটো আরেকটু বড় করে বাইরে বেরিয়ে পড়ে, অন্য বলদ গোয়ালেই পড়ে থাকে নিথর হয়ে। কাক কা কা কা করে নাড়িভুঁড়ির বখরা বুঝে নিতে বাঘের পেছন পেছন ছুটে নদী পেরিয়ে নির্ভয়ে বাদাবনে ঢুকে পড়ে নাছোড় জোটসঙ্গীর মতো।
বলদের শরীর তার চোপার তুলনায় সামান্যই, তার ওপর সে খায় খড় আর ভুষি। বনের হরিণের মতো সে পত্রভূক নয় বলে তার মাংসে শুধু কোলেস্টেরোলের ইশারা। বাঘ ভোর পর্যন্ত পেট ভরে খেলেও তার একটু বদহজম হয়, তারপর কয়েকটা দিন সে চুপচাপ ঝোপের আড়ালে শুয়ে গড়াগড়ি করে আর একটা কান খাড়া রেখে ঘুমায়। স্বপ্নে সেও ছুটতে থাকে গাবতলিতে, সেটা যেন তার নিজেরই তালুক, আর সেখানে শত সহস্র মীরকাদিমের হরিণ দোতলা তিনতলা সমান লাফ দিয়ে তিড়িং বিড়িং নাচতে থাকে তার সামনে।
হপ্তা খানেক এভাবে ঘুমানোর পর এক বিকেলে বাঘের ঘুমের চটকা ভেঙে যায় কাকের কলরবে। বাঘ ঘুম ভেঙে এক গড়ান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাদা কাঁপিয়ে বুক খোলা ধমক দেয় কাককে, কা হুয়া?
কাক একটা গেওয়া গাছের ডালে বসে কাহুতাশ করে বলে, সর্বনাশ হয়ে গেছে বাঘ। পলাও পলাও। মালয়েশিয়া চলে যাও। পুবদিকে এক মাস দৌড় দিলেই ট্রলার ধরতে পারবা। ভাগো বাঘ ভাগো।
বাঘ বলে, কা মালয়েশিয়া যামু কা?
কাক কাঁদতে কাঁদতে বলে, পাকিস্তান আবারো ভেঙে গেছে রে বাঘা। পাপিষ্ঠ বাকশাল ইজ ব্যাক।
বাঘ বলে, তাতে আমার কী? কুমীর মরলে ধুন্দুলের কী?
কাক হাহাকার করতে না পেরে কাকাকার করে বলে, এইবার বন ও পরিবেশমন্ত্রীর গদি পেয়েছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু! তোমার চিত্ত, বিত্ত, পিত্তের খবরই আছে এইবার!
বাঘের পেটে হজমের অপেক্ষায় থাকা এক টুকরো বলদ গুড়গুড়িয়ে বলে, ইত্তেফাকিউ!
মন্তব্য
ইত্তেফাকিউ
শেষ লাইনটা
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
স্যাটায়ার অনেকেই লেখার চেষ্টা করেন, তবে বেশিরভাগ জনের লেখা শেষমেশ ইতরামি ফাতরামিতে পরিণত হয়। কারো কারো লেখায় পাঠক ডুব দিয়েও সাহিত্য বা রস খুঁজে পান না। আর কেউ কেউ ক্রমাগত ট্যুইস্ট দিতে দিতে লেখাটাকে মুরুলি বানিয়ে ফেলেন। এই লেখাটা ঐসব দোষের বাইরে, একেবারে পার্ফেক্ট!
- এই বাক্যটার মতো আরও অনেক বাক্য, শব্দবন্ধ, উপমা দিয়ে পাঠক নিজেই বুঝতে পারবেন এই লেখার সাহিত্য মান কোথায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সহমত।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
আপনি বরাবরই একজন ভালো লেখক। পাঠককে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখার কৌশল জানেন। যেমন এই গল্পের প্রথম কয়েকটি লাইন পড়ে যে কোন পাঠক আগ্রহী হয়ে উঠবে পুরোটা পড়ার জন্য।
ভালো থাকুন।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
বাসে বসে পড়তে পড়তে বারবার হাসি আটকাতে গিয়ে হেঁচকি উঠে গেছে!!!
পার্ফেক্ট স্যটায়ার গল্প।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
টাচস্ক্রীন এ স্লাইড করতে গিয়ে আপত্তি তে চাপ লেগে গেছে।
সরানোর উপায় কি?
"বলদের অভিশাপ " পড়তে পড়তে নিজেই বলদ হয়ে গেলাম। :'(
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
দুর্ধর্ষ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
"ইত্তেফাকিউ"
অসাধারণ!
জিল্লুর রহমান (সোহাগ)
অনেক দিন পরে আবারও একটা দারুণ স্যাটায়ার পড়লাম
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
দুর্ধর্ষ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ধরতে ধরতেও... ঠিক ধরতে পারিনি আসলে!
সচলে এক নতুন লেখকের ভাষা ধার করে বললে, আপনার স্যাটায়ারের "অলিগলির প্যাঁচালো পথে সুকৌশলে স্কি করার" অক্ষমতার কারনে আমার শ্লথ বোধশক্তি "সেই গলিতে পথ হারিয়েছে" - বা পিছলে পড়েছে! একটু হিন্টমিন্ট কিছু দিবেন?
****************************************
গল্পের কি হিন্ট হয়, বলেন? এই ধরেন একটু মিন্ট।
এক লহমার পরামর্শে গুগ্লাইতে গিয়ে বুঝলাম। হা হা হা -
****************************************
উল্লিখিত মন্ত্রী এবং বাঘ নিয়া এট্টু গুগ্লায় দেখবেননি?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
গোয়ালের অন্ধকার এক কোণে কাকের শরীর ঠেলে ঘুলঘুলির বাকিটুকি গলে রাতের আকাশ থেকে এক ফোঁটা আলোর দুধ ছলকে পড়ে তার আগুনে শরীরে, এক বলদের শ্বাসনালী পিষ্ট হয় তার চোয়ালে, অন্য বলদের ঘাড়ের হাড় চূর্ণ হয় তার হাতের থাপ্পড়ে। - জোস !
facebook
সমসাময়িকতার সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ বিন্দু ধারণকারী সুতীক্ষ্ণ স্যাটায়ারের মাঝেও এমন মায়াবী গদ্যশৈলী আর প্রকৃতির জমাট বর্ণনা বজায় রাখা আপনার পক্ষেই সম্ভব!
[ কাহিনী শেষমেশ মুসাফিরের কনিষ্ঠ পুত্রে গিয়ে ঠেকবে আন্দাজ করেছিলাম।
কিন্তু "ইত্তেফাকিউ"!! হোয়াট দ্য ইত্তেফাক ইজ দিস। কইত্তে পান এইসব? ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সহমত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এমন লেখা পড়তেও আরাম। হো হো করে হাসিনি কোথাও, কিন্তু ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি লেগে থাকল অনেকটা সময়। এমন বুদ্ধিদীপ্ত বিদ্রুপ অনেকদিন পড়িনি।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
চরম উদাস, সো, সাফি, কল্যাণ, ষষ্ঠ পাণ্ডব, শান্ত, সুবোধ অবোধ, নজরুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান, জিয়েমতানিম, মরূদ্যান, মনমাঝি, তারেকাণু, তাহসিন রেজা ও এক লহমাকে অনেক ধন্যবাদ।
বলদের অভিশাপ লেগেই গেলো বাছা আমার ! হা হা হা !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
।।।।।।।।
অনিত্র
পড়ে মজা পেলাম
জ্ঞানহীন মহামানব
ফাটাফাটি! ইত্তেফাকিউ!!
উচ্চাঙ্গের রচনা।
যে দুইটি জায়গা অনেকদিন মনে থাকবে -
১) গন্ধের আঁচল ধরে
২) এক ফোঁটা আলোর দুধ ছলকে পড়ে
এমন উপমা সচরাচর চোখে পড়ে না। দুর্দান্ত দুটি উপমা আর দুর্দান্ত স্যাটায়ার
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
মঞ্জু মন্ত্রীকে দিয়ে এই সরকার ঠিক কাদেরকে হাতে রাখতেছে বা কোন লেভেলের বনোদ্ধার করতেছে, সেইটা নিয়া ব্যাপক ধান্দার মাঝে থাকি।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
দুর্ধর্ষ
হা হা হা! পারফেক্ট স্যাটায়ার। দুর্ধর্ষ!
_________________
[খোমাখাতা]
এখন থেকে 'ইত্তেফাকিউ' টাই ব্যবহার করব সর্বত্র।
বেড়ে লেখা হয়েছে হিমু ভাই।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
ইত্তেফাকিউ!
----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য
ইত্তেফাকিউ!
বহুদিন পর একটা স্যাটায়ার পড়া শেষ করে মনে হলো স্লোগান ধরে রাস্তায় নেমে যাই! দুর্ধর্ষ!!
বরাবরের মতোই চমৎকার গল্প, ধারালো স্যাটায়ার আর অপূর্ব শব্দচয়ন। কাকের ডায়ালগগুলো দারুণ! কাহুতাশ, কাকাকার - শব্দগুলো অদ্ভুদ! আর শেষ লাইনটার কোনো তুলনা নেই! হোয়াট দ্যা ইত্তেফাক!
এককালে আপনি প্রচুর লিখতেন, সেই সময়টা মিস করি।
আর হিমু ভাই, কয়েকটা বানান ভুল চোখে পড়লো, একটু দেখবেন প্লিজ।
খ্রিষ্ট, খ্রিষ্টাব্দ > খ্রিস্ট, খ্রিস্টাব্দ
ধূলিস্যাৎ > ধূলিসাৎ
পূবদিকে > পুবদিকে
- উদ্দেশ্যহীন
বানান ভুলগুলো শুধরে দিলাম। অনেক ধন্যবাদ।
খ্রিষ্টাব্দ ঠিক আছে। বাং/এ
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
হুমম। ৯৬ সালের অভিধান (বা/এ) ঘেঁটে আমিও তাই পাচ্ছি। কিন্তু, বিদেশী শব্দে দন্ত্য-স ব্যাবহারের নিয়মটার কি হবে? আমি বিভ্রান্ত।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
খ্রিস্টাব্দ এখন বদলাইছে প্রায় সবখানেই কিন্তু সরকারি বইয়ে বদলাই নাই
দেবদ্যুতি
নাহ, মাঝে অনেক কিছু বদলেছে, একাডেমী>একাডেমি হয়েছে। কিন্তু, নতুন সংস্করণ হাতে না থাকায় আরো কিছু হয়েছে কিনা জানা নেই। জানলে জানাবেন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই আবহ নির্মানগুলি দুর্দান্ত লাগে। মনে মনে প্রায় একটা হরর-ফ্যান্টাসি ঘরানার কোন চলচ্চিত্রের জীবন্ত একটা দৃশ্য দেখছিলাম যেন!
****************************************
এহ, হিমু ভাইয়ের লেখার সাথে হরর (হড়ড়?) আসলেই তো চন্ডিশীরার কথা মনে পড়ে যায় আর হতাশ লাগে!
____________________________
ইত্তেফাকিউ, প্রোফেসর। (হৃদয় খুঁড়ে এসব বেদনা না জাগালেই কি নয়? )
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
তাইলে আপনার কথাই ধার করে বলি - হোয়াট দ্য ইত্তেফাক!
আর কথাটা আমাকেই বলেছেন তো, নাকি চামে চিকনে হিমুদাকে বলে দিলেন?
____________________________
ইত্তেফাক বদলে দিয়ে প্রথম আলো পড়ুন, লাইনে আসুন।
উধোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো বাদ দিন। আর আমি কাউকেই কিছু বলিনি। চণ্ডীশিরা নিজেই রেগেমেগে বলেছে "ইত্তেফাকিউ"। কাকে বলেছে? কিছু কথা থাক না গুপন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আজকে হিমু ভাইয়ের লেখার একটু উপরেই 'চণ্ডীমুড়া'র পোস্ট দেখে আমারও মনে পড়ে গেছিলো
- উদ্দেশ্যহীন
ছোটবেলায় পড়া বীরবলের একটা বহুল প্রচলিত কৌতুক মনে পড়ে গেল। সম্রাট আকবর তার সভাসদ বীরবলকে বেকায়দায় ফেলার জন্য হঠাৎ একদিন জিজ্ঞেস করলেন - আচ্ছা বলুন তো, রাজধাণী শহরে মোট কাউয়ার (কাক) সংখ্যা কত? সম্রাটের ধারণা ছিল এমন অসম্ভব প্রশ্নের উত্তর বীরবল দিতে পারবেন না। কাক গুনতে গুনতে তিনি পাগল হয়ে যাবেন। কিন্তু বীরবল গুনাগুনির ধারেকাছেও না গিয়ে তৎক্ষণাৎ মুখের উপর উত্তর দিয়ে দিলেন - জাঁহাপনা, রাজধাণীতে সর্বমোট কাউয়ার সংখ্যা হচ্ছে - ৯৯,৯৯৯। আকবর জিজ্ঞেস করলেন - যদি কম বা বেশি পাওয়া যায়? বীরবলের তেমনি সপাট উত্তর - এ আর এমন কি ব্যাপার হুজুর! যদি কম পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে যতটা কম পাওয়া গেছে তত কাউয়া পাশের শহরে তাদের জ্ঞাতিগুষ্ঠির বাড়িতে বেড়াতে গেছে। আর যদি বেশি পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে যতটা বেশি পাওয়া গেছে তত কাউয়া পাশের শহর থেকে রাজধাণীতে বেড়াতে এসেছে। বেড়ানো শেষে যে যার বাড়িতে ফিরে যাবে। চিন্তার কিছু নেই।
অন্ধকার ষোড়শ শতকের এক সেমি-ফিকশনাল রাজ-বিদূষকের মুখে বসানো দায়িত্বহীণ মোঘলাই ফাত্রামি এই একবিংশ শতকে এসে একটা সাপোজেড্লি অতি সিরিয়াস, গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থায় একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে একটা বাস্তব কন্টেক্সটে প্রায় হুবহু প্রযুক্ত হতে দেখবো - এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। পরাবাস্তবতা আর কাকে বলে!
****************************************
মোগলদের ছিলো বীরবল, আমরা পেয়েছি বীরবলদ।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
হ, একদম রয়্যাল বেঙ্গল...
****************************************
গোয়ালের অন্ধকার এক কোণে কাকের শরীর ঠেলে ঘুলঘুলির বাকিটুকি গলে রাতের আকাশ থেকে এক ফোঁটা আলোর দুধ ছলকে পড়ে তার আগুনে শরীরে, এক বলদের শ্বাসনালী পিষ্ট হয় তার চোয়ালে, অন্য বলদের ঘাড়ের হাড় চূর্ণ হয় তার হাতের থাপ্পড়ে। - পুরাই ইত্তেফাকিউ!
কি লিখসেন রে বাবা!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
মাত্র একদিনের ঈদের আনন্দের জন্য সারা রোজার মাস ধরে প্রস্তুতি নেয় না লোকে? ঠিক সে রকম। শুধু শেষের শব্দটার জন্য পুরো লেখার প্রস্তুতি - আর মেদবিহীন ছিপছিপে ভাষার মাধুর্য্য! পুরাই---- (ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না!)
____________________________
বাহ! চমৎকার! অসাধারন!
অনেকদিন থেকে আমার মনে একটা প্রবল ইচ্ছা ছিল উচ্চাঙ্গের একটা কার্টুন ছবি বানাবো। সে আশা পূর্ণ হয় নি, কারন তা বানানোর মত রেস্ত, অবসর এবং সর্বোপরি একটা পারফেক্ট কাহিনীর বন্দোবস্ত হয়ে ওঠেনি এখনও। সত্যি বলছি, কাহিনীতে কাকের আগমনের পর থেকে পুরো বিষয়টা মনশ্চক্ষে আমি কার্টুনে দেখেছি।
চমতকার! কাহিনীর চেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি বর্ণনার ধরনে।মনে হচ্ছিল বাদার বাঘের সাথে আমিও শীতের রাতে পথ চলছি।
দেবদ্যুতি
অসাধারণ !! আপনাকে
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
ধুন্দল তো কুমড়োর মত লতানো গাছে হয়। ধুন্দলের ডাল দিয়ে কি বেড়া হবে?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সেটা মনে হয় অন্য ধুন্দল। সুন্দরবনের ধুন্দল হচ্ছে Xylocarpus granatum, মেহগনি পরিবারের গাছ।
আপনি এইটির কথা ভাবছেন, গল্পে এসেছে বোধহয় এইটি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
গাজীপুরে এক ফ্যাক্টরির জিয়েম মহোদয় একবার ধুন্দল দিয়ে রিঠা মাছের তরকারি খাওয়ানোর জন্য মর্মান্তিক চাপাচাপি শুরু করেছিলেন। বেচারা যাতে মনক্ষুণ্ণ না হন, সেজন্য হাত ধুয়ে প্যাঁচার মতো মুখ বানিয়ে বসেছিলাম টেবিলে। এক লোকমা মুখে দিয়ে তারপর যা হলো তা কহতব্য নয়। সিরাম সাঁটিয়েছিলাম। জিয়েমের পাতের দিকে তরকারির বাটি আর যেতেই দিই নি আর কী। বাংলার অলিতে গলিতে ধুন্দুল আর রিঠা মাছ গজাক। আহাহা।
রিঠা মাছের ব্যাপারে আইডিয়া নাই। কিন্তু, ধুন্দল একটা বেহেস্তী সব্জি, সাক্ষ্য দিতাছি।
(যদিও দুষ্টলোকে কয়, দলীল মোতাবেক বেহেস্তে নাকি ধুন্দল পাওনের চান্স নাই )
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধুন্দল/ধুঁধুল পেলে কড়ে আঙুলের সাইজ চিংড়ি দিয়ে অল্প ঝোল ঝোল রান্না করতে পারেন। অথবা নোনা ইলিশ দিয়ে চচ্চড়ি করতে পারেন।
সুন্দরবনের ধুন্দল গাছের কাঠ পেন্সিল বানানোর জন্য খুব ভালো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভাষার গাঁথুনিতে মুগ্ধ হতে হতে পড়ে যাচ্ছিলাম। শেষটা যে এমন হবে ভাবিনি।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
নতুন মন্তব্য করুন