দ্য মার্শিয়ানের বাংলাদেশি সংস্করণকে কী নামে ডাকা যেতে পারে, ভাবতে গিয়ে এই শব্দটাই মাথায় এলো।
আরো কয়েক দশক পরের কথা।
বাংলাদেশ আকাশযাত্রা ও শূন্য অধিবিভাগ, সংক্ষেপে বাসার অফিসটা বাসাবোতে। কয়েক দশক আগে প্রবল ভূমিকম্পে বাসাবো এলাকার তাবত বাড়িঘর ধ্বসে পড়ার পর নতুন করে আর তেমন কিছু গড়ে ওঠেনি, ধ্বংসস্তুপ সাফসুতরো করে সেখানে নানা রকম সরকারি প্রতিষ্ঠানের সুপরিসর কার্যালয় গড়ে উঠতে শুরু করেছে দুর্ঘটনার কয়েক বছর পর থেকেই। ধ্বংসস্তুপ সরানো হয়নি, এমন একটা বড়সড় প্লট ফাঁকা পড়ে থাকায় সেটার ইজারা চেয়ে নিখিল বিশ্ব ফেনী সমিতি সরকারের কাছে অনেক দেন দরবার করে আসছিলো। দুর্ভাগ্য তাদের, তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের জ্যেষ্ঠ সচিবের বাড়ি নোয়াখালি জেলায়। তাই তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে অবিশ্বাস্য গতিতে নাসার আদলে বাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়, যাতে ঐ প্লট বরাদ্দ করার জন্য একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়।
সেই থেকে বাসার যাত্রা শুরু।
সমালোচনা অবশ্য কম সহ্য করতে হয়নি বাসাকে। বোম্বের নায়কের নাম সালমান খান, তাই ঢাকাই নায়কের নাম সালমান শাহ হতে হয়, নইলে ছবি চলে না। বাসাকেও তাই নাসার আদলে এরকম খটমটে একটা নাম নিয়ে জন্মাতে হয়েছে বন্দে আলী মিয়ার মতো। টিটকিরিগুলো শুরুতে নামের ওপর দিয়েই গেছে। বাজেট মিটিঙে অর্থমন্ত্রী হাবুল মালদ্বীপ আবদেল মাহুত দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের ফাইল একপাশে ছুঁড়ে ফেলে বলতেন, ওনারা তো সারাদিন বাসাতেই পড়ে থাকেন। বাসার কর্মকর্তারা সিয়েঞ্জিওলাদের হাতেপায়ে ধরে কাকুতিমিনতি করতেন, চলেন না ভাই একটু বাসায় চলেন, একশো টাকা বাড়াইয়া দিমুনে। মন্ত্রকের যুগ্মসচিব বাসার আমীরকে ফোন করে মধুর কণ্ঠে শুধাতেন, বাসার খবর সব ভালো? টিভিতে টকমারানিরা বাসাকে ব্যঙ্গ করে ডাকতেন, শূন্য অধিবিভাগ। সংবাদ সম্মেলনে বাসার কর্তারা সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের সাংবাদিকপসন্দ উত্তর দিতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন, খবরে ছাপা হতো, "প্রশ্ন শুনে আকাশকর্তারা আকাশ থেকে পড়েন।"
কিন্তু সব টীপ্পনী গা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে বাসা কোনোমতে এগিয়ে চলেছে গুটিগুটি পায়ে। চীনের সাথে যৌথ উদ্যোগে রামপালে বাংলাদেশের নিজস্ব রকেট লঞ্চিং সাইট তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠার প্রথম দশকেই, কেন যেন প্রবীণ রাজনীতিক জামায়েদ সাকী কোনো আপত্তি করেন নি। পরের দুই দশক কয়েক বছর পরপর একটা দুটো করে টুকিটাকি উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ভেতর দিয়েই কেটে গেছে।
মঙ্গলে মনুষ্যবাহী নভোযান পাঠানোর কাজ বাসা এই দশকেই শুরু করেছে। কয়েক মাস আগে রামপালে রকেটের ফিতা কেটে উৎক্ষেপণ উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশের খলিফা আস্তেক শাহ আবদালি।
গিয়ানজামটা শুরুও হয়েছে তখন থেকেই।
বাসাবোতে বাসার কার্যালয়ের সামনে আজ শামিয়ানা টাঙিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত, তর্জমা, তাফসীর ও তাশাক্কুরের পর ভাবগম্ভীর মুখে বাসার আমীর জনাব আলি আসমান মুজাহিদ মাইকের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ঘনঘন ক্যামেরার শাটারের শব্দ আর ঝলকবাতির আলোতে চারদিক মুখরিত।
আমীর মহোদয় বিষণ্ন গম্ভীর মুখে কেশে গলা সাফ করে নিয়ে বললেন, "ভাইয়োঁ, আপনারা ওয়াকিবাহাল আছেন, মঙ্গলে আমাদের একটি আসমানি জাহাজ গত জিলকদ মাসে অবতরণ করেছে। দিলভরা দুখ নিয়ে আজ আমাকে আপলোগোঁকে সামনে হাজির হয়ে এই গুজারশ দিতে হচ্ছে, আচমকা আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমাদের আসমানি জাহাজটিকে আবার মঙ্গল ছেড়ে উঠে পড়তে হয়েছে। আমাদের ছয়জন আসমানলস্করের মধ্যে পাঁচজন সহি সালামতে জাহাজে উঠে পড়তে পেরেছেন। কিন্তু ঝিনাইদহের শৈলকূপানিবাসী বিজ্ঞানী মোবারক ওয়াটনি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জাহাজে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন। মোহতারামবৃন্দ, জনাব মোবারক ওয়াটনিকে মঙ্গলে ফেলে রেখেই আমাদের আসমানি জাহাজ বিএএস মওদুদী মিশন অসমাপ্ত রেখে পৃথিবীতে ফেরত আসছে।"
সাংবাদিকদের মধ্যে প্রবল গুঞ্জন উঠলো। কে কার আগে প্রশ্ন করবেন, তা নিয়ে উপস্থিত হাজারখানেক সাংবাদিকদের মধ্যে যথারীতি মৃদু মারপিট শেষ হওয়ার পর বিজয়ী কয়েকজন পালোয়ান প্রতিযোগীর-খুন-রাঙা মুষ্ঠিতে মাইক উঁচিয়ে প্রশ্ন গর্জাতে লাগলেন।
আমীর মহোদয় আঙুল দিয়ে এক সাংবাদিকের দিকে ইশারা করলেন। সাংবাদিক হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, "মোবারক ওয়াটনি কি বেঁচে আছেন?"
আমীর মহোদয় বিষণ্ন মুখে বললেন, "তা আমরা এখনো সঠিক জানি না। কিন্তু যেহেতু মঙ্গল গ্রহে পানি বা অক্সিজেন আহরণ করা অত্যন্ত কঠিন, এবং বাতাসের চাপ অত্যন্ত কম, তাই সে যদি বেঁচেও থাকে, তার আর বেশি হায়াত নাই। মঙ্গলে সে খাবে কী? হাগবে কোথায়? ওজু-গোছল করবে কীভাবে? সর্বোপরি, সানি লিওনির চলচ্চিত্রগুলিও সব ছিলো জাহাজের কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে। নাহ, আমি তার বাঁচার কোনো আশাই দেখছি না।"
সাংবাদিকরা অনেকেই অনেক প্রশ্ন গুছিয়ে এনেছিলেন মনে মনে, আলি আসমান মুজাহিদের কথা শুনে সবার সওয়াল যেন ফুরিয়ে গেলো।
এক সাংবাদিক তবুও পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, "মোবারক ওয়াটনিকে বাঁচানোর জন্য বাসা থেকে কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া হচ্ছে?"
মুজাহিদ বললেন, "না।"
সাংবাদিকরা সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। বেচারা মোবারক। বাসা থেকে এখন আর কী-ই বা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে? আপাতত গায়েবানা জানাজাটা ঠিকমতো পড়াতে হবে। আর সাংবাদিকপসন্দ মেনু সাজিয়ে হোটেল মেরিডিয়ানে একটা কুলখানির আয়োজন করলেই সব কূল রক্ষা পাবে।
তবুও চাকরিতে নতুন ঢোকা এক সাংবাদিক চেঁচিয়ে উঠলো, "এ পরিস্থিতিতে বাসার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া কী?"
আমীর মহোদয় এবার মৃদু হেসে বললেন, "আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে।"
মন্তব্য
কয়েকদশক পরেও মোবারক সানি লিওনিই দেখছে! সেতো ব্যাপক ব্যাকডেটেড।
হাহাহাহা
মঙ্গল মুসলমানদের জন্য হারাম।। এরকম বেশরীয়তি কাজ করলে মোবারক ওয়াটনির মতন পস্তাইতে হবে।
d: المريخ
ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
আলহাজ্ব মোবারক ওয়াটনি হওয়া উচিৎ। মঙ্গল নামটাও একটু ইয়ে। এর সহীহ ভার্সান হবে বরকত। বরকতাবাসী আলহাজ্ব মোবারক ওয়াটনির গায়েবনা জানাজা কিন্তু মুভিতে দেখিয়েছে। এইদিক দিয়ে বাসা আর নাসার পার্থক্য নাই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
হ
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সানি লিওনি মুশরিকদের অভিনেত্রী। মোবারক আর মুজাহিদ দুইজনেরই শরিয়তী অভিনেত্রী 'খলিফা' আপা'র ফ্যান হওয়া উচিত!!
দারুণ স্যাটায়ার, হিমু ভাই!
।।।।।।।।।।।
অনিত্র
হে হে হে, মজারু লেখা
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
স্পয়লার সাবধানী দিয়া দেন!
"ভাই, আপনি এখন কই, আমি এখনও বাসায়, কিন্তু একটু পড়েই বাসায় যাব।"
-কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ধন্দে ফেলে দেবার জন্য একটা লাইন পাওয়া গেল।
মনে পড়ল, এক সময় বাসে হকাররা বিক্রি করতেন,
অসাধারণ
একটু কারেকশন। সানি লিওন ততদিনে সুচিত্রার মতো অজ্ঞাতবাসে চলে গেছে। নতুন ক্রেজ- শান-ই-লায়লা; মানে রাত্তিরের ঝলকানি
হাহাহাহাহা। মজা পেলাম। বইটা পড়ছি এখন। শেষ করে মুভিটাও দেখব হয়ত।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মাশায়াল্লাহ, কাহানী উমদা হয়েছে। ইয়ে, এটা হিজরি কত সালের ঘটনা?
মোবারক ওয়াটনির সিদ্ধিলাভ!
ফারাসাত
ডাক্ট টেপ কই ডাক্ট টেপ?
অনেক আসাইলেন।
মনিরুজ্জামান লিংকন
প্রথমবার পড়লাম সিনেমা না দেখে। কিছুই বুঝি নাই। সিনেমা দেখে আবার পড়লাম। হাসতেই আছি।
-কাজী
নতুন মন্তব্য করুন