পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ জোরেশোরে এগিয়ে চলছে। এমন পরিসরের নির্মাণ প্রকল্প বাংলাদেশে নিকট অতীতে দ্বিতীয়টি নেই। যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু আর পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে কর্মযজ্ঞকে ছাড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতুর কাজ।
এমন প্রকল্প ভবিষ্যতে হয়তো আরো হবে। সে সব প্রকল্পে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা যাতে আরো বেশি দক্ষতা ও জ্ঞান নিয়ে সম্পৃক্ত হতে পারেন, সে জন্য পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞটি সম্পর্কে তাদের একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রকল্পে যারা অংশ নিচ্ছেন, তারা অভিজ্ঞতার বিচারে প্রবীণ। কিন্তু এই প্রকল্প থেকে আহরিত জ্ঞান বাংলাদেশের নবীন প্রকৌশলীদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে হবে। নইলে হাতে গোণা কিছু লোকের কাছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জ্ঞান, আরো ভালো কোনো শব্দের অভাবে, "বন্দী" হয়ে থাকবে।
এই নির্মাণযজ্ঞের ওপর একটি ধারাবাহিক অডিওভিজুয়াল ডকুমেন্টারি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে করা যেতে পারে। সেতু ব্যবস্থাপনা বিভাগের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সেতু প্রকল্পের নানা খুঁটিনাটি কাজের ভিডিও বিবরণ সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল অনুষদে পাঠানো যেতে পারে। সরাসরি নির্মাণস্থলের অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প হয় না, কিন্তু পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে দেশের সব প্রকৌশল ছাত্রকে সরাসরি নির্মাণস্থলে এক্সকারশনের সুযোগ করে দেওয়া স্বাভাবিকভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তাদের বঞ্চিত করাও ঠিক হবে না, যেহেতু ডকুমেন্টারির মাধ্যমে প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব।
পদ্মা সেতু আমাদের আত্মশক্তি অনুধাবনের ক্ষেত্রে একটি দৃশ্যমান কাঠামো। কিন্তু এই আত্মশক্তি কেবল এই সেতুর ব্যয় যোগানোর সামর্থ্যের ক্ষেত্রেই খাটে। আমাদের কারিগরি যোগ্যতা ও দক্ষতা যদি আনুপাতিক হারে না বাড়ে, তাহলে অনাগত ভবিষ্যতেও চীন থেকেই আমাদের বড় বড় প্রকল্পের নির্মাণকৌশলীরা আসবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে আহরিত জ্ঞানের মালিকানাও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিকদের হওয়া উচিত, আর সেই জ্ঞান আমাদের ভাবীকালের প্রকৌশলীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বটুকুও সরকারেরই পালন করা উচিত।
তথ্য মন্ত্রক ও সেতু বিভাগ যদি নিজেদের মাঝে সমন্বয় করে এ দায়িত্বটুকু বহন ও পালন করে, তাহলে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশনের সুদক্ষ কর্মীরাই পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ভিডিও ডকুমেন্টারিটি তৈরি করতে পারবেন। এটি আমাদের ভবিষ্যত দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে একটি সহায়ক দলিল হিসেবে যেমন কাজ করবে, তেমনি আমাদের প্রকৌশলবিদ্যার ছাত্রদের মনে আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানের জায়গাটুকুর ভিত্তি আরো মজবুত করবে।
শিক্ষাকালে চিকিৎসককে যেমন ফিরে যেতে হয় মানুষের কঙ্কালের কাছে, তেমনি নির্মাণ প্রকল্পও কঙ্কালপর্বেই প্রকৌশল শিক্ষার্থীর জন্যে সবচেয়ে বেশি তথ্যবহ। পদ্মা সেতু কঙ্কালপর্বে থাকা অবস্থাতেই এই প্রামাণ্যচিত্র প্রকল্পটি শুরু হোক।
মন্তব্য
প্রস্তাব ভাল। তবে যেই জিনিসটা মিসিং সেটা হলো এই ডকুমেন্টশনে কে কতো টাকা বিলিবন্টন করতে পারবে। টাকাপয়সার বিলিবন্টন নাই তো প্রজেক্টও নাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কিছু টাকাপয়সা তো খরচ হবেই। কিন্তু কাজটা গুছিয়ে করা হোক।
ডাচরা যে আমলে সমুদ্রে বাঁধ দিয়ে জমি বাড়িয়েছে, সে আমলের কাজের ফুটেজ এখনও কিছু আছে।
আরেকটা অল্টারনেটিভ মাথায় এলো। ন্যাটজিও মেগাস্ট্রাকচার নামে একটা সিরিজ করে। তাদেরকে বলা যেতে প্রজেক্টটা কভার করতে। তাহলে একটা প্রফেশনাল কাজ হবে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নিজেদের লোকেরা খেটেখুটে করুক, অনেক কিছু শিখতে পারবে। দুয়েকজন পরামর্শক রাখতে পারে বড়জোর।
গতকাল দেখলাম একটা কন্ট্রোলরুম আছে যেখানে একসাথে সবগুলো কাজের জায়গা মনিটর করার স্ক্রীণ আছে। এর ফুটেজ সংরক্ষণ করা হলে শিক্ষায় কাজে লাগবে হয়ত। ডকুমেন্টারি কিছু হবে কিন্তু আপনার ভাবনার মতন হবে কিনা সন্দেহ আছে - যখন দেখি তাদের ওয়েবসাইটে ডোনার হিসেবে যারা টাকা দেয় নাই - এখনো তাদের নাম আছে।
যারা ঐ ওয়েবসাইট বানিয়েছে, তাদের ওপরই যদি ডকুমেন্টারি বানানোর দায়িত্ব অর্পিত হয়, তাহলে এই পোস্ট ফিরিয়ে নিলাম। বার্ন আফটার রিডিং।
ডকুমেন্টারি ছাড়াও অন্যান্য মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করা উচিত। তথ্য সংগ্রহ এবং পরিবেশনের জন্য উইকিপিডিয়ার মত ওপেন-সোর্স সফটওয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে, সেই উইকি হালনাগাদ করবে কে? বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদেরকে ইন্টার্নশিপের জন্য চার মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
ধরা যাক প্রকল্পের শুরুতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাচাই বাছাই করে ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেয়া হল প্রথম চার মাসের জন্য। চার মাস পর এই ১০ জন বিদায় নিবেন, নতুন ব্যাচের ১০ জন এসে কাজ করবে। প্রতি চার মাস পর পর এই রোটেশন চলতে থাকবে। চার মাস লিখলাম কারণ সাধারণত চার মাসে এক সেমিস্টার হয়। চার মাস না হয়ে ছয় মাস বা এক বছরও হতে পারে।
কর্ত্রীপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে ইন্টার্নশিপে করা কাউকে পূর্ণকালিন চাকুরীতেও নিয়োগ দিতে পারেন।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
কর্ত্রীপক্ষ শব্দটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বেশ লাগসই হলেও, কর্তৃপক্ষ বলাই মনে হয় ভালো
বানান ভুল, "কর্তৃপক্ষ" লিখতে চেয়েছিলাম।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
কর্ত্রীপক্ষের ভয়ে? হুমমম?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আরেকটা জিনিস মাথায় আসল, আগের মন্তব্যটা লেখার সময় মনে ছিলনা।
দুই/তিন বছর ধরে একটা প্রকল্পের ডকুমেন্টেশন (লিখে, ছবি তুলে, চলচ্চিত্রে) করে যেই অভিজ্ঞতা হবে সেটা আবার পরে কাজে লাগবে নতুন সব প্রকল্পে। চাইলে অতীতে করা গুরুত্বপূর্ন প্রকল্পের (যেমন তিস্তা নদীর বাঁধ) ডকুমেন্টেশনের কাজেও এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগান যাবে।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
সঠিক। এবং সে অভিজ্ঞতা টিভি ব্রডকাস্টিঙে যারা জড়িত, তাদের কাজের মান বাড়াতেও হয়তো সহায়তা করবে।
ভাল প্রস্তাব। এত বড় প্রজেক্টে নিঃসন্দেহে অনেক টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জ এসেছে সেগুলোর সমাধানের ব্যাবস্হাও নিশ্চই করা হয়েছে। এসব পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নব্বই এর দশকের শুরুতে জাপানের কোবে আর্থকোয়েকের কারণ ও স্ট্রাকচারাল জিওটেক কোডের মডিফিকেশন বুয়েটের পাঠ্যসূচীতে এসেছিল। নিজের দেশের এত বড় প্রজেক্ট কেন নয়?
প্রায় ইউনিভার্সিটিগুলোতে ইন্টার্নশীপ নামে কোর্স আছে। সিভিল/মেকানিক্যালের স্টুডেন্টরা পদ্মা সেতুর বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ের উপর ইন্টার্নশীপ করতে পারবে কিনা দেখা যেতে পারে।
যমুনা সেতু প্রকল্পে কি বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা কাজ করেননি? যদি করে থাকেন, তাহলে তাদেরকে পদ্মা সেতু প্রকল্পেও কাজে লাগান যেতে পারে।
প্রকৌশলীরা তো ইন্ডিভিজুয়াল হিসেবে কাজ করেন না। বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা কাজ করেছিলেন বিভিন্ন ধরণের কন্সাল্টেন্সি ফার্মের কর্মী হিসেবে। বিদেশি কন্সাল্টেন্সি ফার্মের (মূল কন্সট্রাকশনের কাজ) পাশাপাশি বাংলাদেশি কন্সাল্টান্সি ফার্মও (মূলত) সুপারভিশনের দায়িত্বে ছিল। আমাদের দেশে এখনও এত বিশাল কর্মযজ্ঞ করার মত ফার্ম গড়ে ওঠেনি। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের প্রকৌশলীরা কাজ করেছেন সুপারভাইজর হিসেবে। এইসব দিক থেকে দক্ষ হয়ে উঠতে হলে আসলে দুইটা জায়গায় যোগ্য হতে হবে ১) ডিজাইন করার মত প্রকৌশলী দল বা ফার্ম গড়ে তুলতে হবে ২) কন্সট্রাকশন করার মত ফার্ম গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে (১) নাম্বারটায় দক্ষতা অর্জন তুলনামূলকভাবে কম অর্থনির্ভর। আমরা এই জায়গাটায় ফোকাস করতে পারি। কারণ এত বড় একটা কর্মযজ্ঞের জন্য যে পরিমাণ প্রকৌশল যন্ত্রনির্ভরতা লাগে সে রকম একটা ফার্ম বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গড়ে তোলা কঠিন। কারণ শুধু একটা দুইটা কাজের জন্য এরকম বিশাল প্রস্তুতি নেয়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল। এরকম করতে হলে সরকারের কোনো বিভাগকেই এইরকম কাজের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
এই জায়গাটার একটা অর্থনৈতিক দিকও আছে। সরকারের কোনো বিভাগকে এরকম একটা প্রজেক্টের জন্য ডিজাইন এবং কন্সট্রাকশান দুই দিক থেকেই যোগ্য করে তুলতে পারলে এটা একটা দারুণ অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হতে পারে। আফগানিস্তান বা আফ্রিকার দেশগুলোতে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির সাথে ইউএনও এই ধরণের কাজগুলোর টেন্ডারে বিড করে এবং বড় বড় প্রজেক্ট পায়। এটা তাদের অর্থ উপার্জনের একটা বিরাট মাধ্যম। যাই হোক সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়। আমি যেটা বলছিলাম সেটা হলো সরকার যেহেতু এত বিশাল একটা কর্যজ্ঞে হাত দিয়েছে, এর সাথে সাথে কোনো একটা বিভাগকে এইরকম কাজের জন্য এককভাবে দক্ষ করে তুলতে পারলে হয়ত এই কাজগুলো অর্থ উপার্জনের একটা মাধ্যম হতে পারে। যদিও এটা ভিন্ন বিতর্কের বিষয়।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কন্সট্রাকশনে পারদর্শী একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারলে পৃথিবীর অনেক দেশেই কাজ করা যাবে। চিন, জাপান বা কোরিয়া যেমন এখন আমাদের এখানে কন্সট্রাকশনের কাজ করে দিয়ে যাচ্ছে, আমাদের প্রকৌশলী (এবং শ্রমিকেরাও) বিদেশে কাজ করতে পারবে।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
সেনাবাহিনীতে স্পেশাল ওয়ার্ক্স অর্গানাইজেশন (SWO) নামে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যা আপনার মতামতের স্বপক্ষে কাজ করছে, যতদুর জানি।
ধন্যবাদ, শিবলী। এই SWO প্রতিষ্ঠানটিতে কি যে কোন প্রকৌশল স্নাতক যোগদান করতে পারেন? নাকি সামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কমিশন্ড অফিসারেরাই কাজ করার সুযোগ পান? শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া হয় কিভাবে?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
প্রস্তাবের মূলনীতির সাথে একমত। তবে এই জায়গায় কিছু মতামত যোগ করতে চাই। অডিও-ভিজুয়াল অনেক ক্ষেত্রেই একটা প্রজেক্ট সম্পর্কে ওভারঅল ধারণা দিলেও দেখা যায় একেবারে টেকনিক্যাল দিকগুলো অডিও-ভিজুয়াল দিয়ে ফুটিয়ে তোলা কঠিন। অডিও-ভিজুয়াল অনেক ক্ষেত্রেই আমার পপুলার সায়েন্সের বইগুলার মত মনে হয়। মানে পুরা ব্যাপারটা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয় কিন্তু আসল কাজ করতে হলে খাতা কলম নিয়ে বসতে হয়। এটা এমনকি ন্যাটজিওর মেগাস্ট্রাকচার বা এগুলার মত ওয়েল-মেইড, ওয়েল-ডিরেক্টেড ডকুগুলার জন্যেও সত্যি। এই ধরণের ডকুগুলা আমার সবসময়েই মনে হয় অনেকটা বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখে না এরকম মানুষদের একটা ধারণা দিতে বেশি কাজে লাগে।
আমরা যদি প্রকৌশলীদের এই বিষয়ে শিক্ষিত করতে চাই, তাহলে আসলে যেটা করতে হবে এই ডিজাইনগুলো উন্মুক্ত করে দিতে হবে। মানে একেবারে প্রফেশনাল ডকুমেন্টগুলো। আমি জানি না এই ধরণের ডকুমেন্টের (একেবারে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন, ডকুমেন্টেশান) মালিকানা কার। যদি বাংলাদেশ সরকারের হয় তাহলে উন্মুক্ত করে দেয়া খুব বড় সমস্যা হবার কথা না। তারপর সেই ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে প্রজেক্ট বা ইন্টার্নশিপ করানো যেতে পারে। সাথে সাইট ভিজিট বা এই ধরণের কাজের সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের একটা অংশ নিশ্চয়ই এসব কাজের কন্সাল্টেনসির সাথে জড়িত। সে সব কাজের মাধ্যমেও তাদের বর্তমান ছাত্রদের অংশগ্রহণ বাড়ানো যেতে পারে।
তবে কাজের প্রক্রিয়া যেমনই হোক, আমাদের যে অর্থায়ন সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি নিজেদের প্রযুক্তিগত দক্ষতায়ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার দরকার আছে এই জায়গাটায় দ্বিমত করবার কোনো সুযোগ নেই।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আমার জানামতে সবকিছুর মালিকানাই বাংলাদেশ সরকারের। তবে লালফিতার দৌরাত্ন বা মজ্জাগত আমলাতান্ত্রিক ঢাক গুড়্গুড় জাতীয় কিছু সমস্যা তো আছেই। তারপরও এখনকার রাইট টু ইনফরমেশনের আওতায় এগুলি প্রাপ্য হলেও হতে পারে যদি না 'জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা' বিধায় কোনরকম বাধানিষেধ না থাকে।
****************************************
If যদি is হয়
তাইলে তো কত কিছুই করা যায়।
আপনে কি বুঝতেছেন বিভিন্ন পর্যায়ে স্তরে স্তরে টেকাটুকার সুষ্ঠু বিলিবন্টন নিয়ে কী পরিমাণ ঝামেলা তৈয়ার করার কথা চিন্তা করতেছেন আপনে?
চারটি মূল জিনিস এতে জড়িত - technoware, humanwar, infoware এবং orgaware। চার ক্ষেত্রে কাজের মূলনীতি, পদ্ধতি, বাস্তবায়ন, সীমাবদ্ধতা, দুর্ঘটনা, উদ্ধার, পারিপার্শ্বিক নিয়ামক ও প্রভাবকসমূহ ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ টেক্সট, গ্রাফিক্স, অডিও, ভিডিও আকারে রেকর্ড থাকা দরকার। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয় না। তিস্তা ব্যারাজ, যমুনা বহুমুখী সেতু, গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্প, মেঘনা-ধনগোদা প্রকল্প বা সুদূর অতীতের কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো কোন প্রকল্পেরই এমন বিস্তারিত কিছু পাওয়া যাবে না।
তিস্তা ব্যারাজ বা যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে কাজ করেছেন এমন অনেক বাংলাদেশী প্রকৌশলী ও অন্যান্য পেশার মানুষকে দেখেছি পরবর্তীতে তাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর কোন সুযোগ পাননি। ফলে এইসব বিষয়ে একটি দক্ষ জনবল তৈরি হবার যে সম্ভাবনা ছিল সেটি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বা সেতু নির্মাণ বিভাগের যারা এর আগে যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে কাজ করেছেন তাদেরকে যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিয়োগ দেয়া হবে সেটাও ভরসা হয় না। ফলে, প্রতিবারই চাকা আবিষ্কার করতে হয়।
ষাটের দশকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন হিসেবে তিন মাসের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে পাঠানো হতো। এখন দেশের কোন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার্ন করার বিধি নেই।
চমৎকার প্রস্তাবনা!
আইডিয়াটা চমৎকার, কিন্তু --
এই অংশটুকুর একেবারেই একমত না। এই "সুদক্ষ" কর্মীদের দক্ষতা সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। "এ বি-কে আংশিকভাবে ওভারল্যাপ করে, আবার সি-ও বি-কে আংশিকভাবে ওভারল্যাপ করে, কিন্তু তার মানে এই না যে অবধারিত ভাবে এ = সি" - যুক্তিবোধের এই চরম শিশুতোষ বেসিকটা যাদের আধাঘন্টা ধরে হ্যামার করেও বোঝানো যায় না (একাত্তর টিভিতে গতকালকের 'একাত্তর সংযোগ' থেকে গরমাগরম উদাহরণ দিচ্ছি), তাঁদের পক্ষে দিয়াশলাইর কাঠি দিয়ে একটা ইঁদারার উপর দিয়ে বানানো সেতুর উপরও ডকুমেন্টারি করা সম্ভব কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এই বিষয়ে আর কথা না বাড়াই বরং - মুডটাই নষ্ট হয়ে যাবে তাহলে।
তবে এমনিতেও, অ-ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা কারও পক্ষে পদ্মা সেতু নির্মান-প্রক্রিয়ার উপর ইঞ্জিনিয়ার বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রদের জন্য শিক্ষাগত বা পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির দৃষ্টিকোন থেকে ইউজফুল বা অর্থপূর্ণ ভালমানের কোন ডকুমেন্টারি বানানো আমার মতে সম্ভব না। আর বাংলাদেশের প্রচার-মাধ্যমগুলি্র নিয়মিত কর্মীরা উপরে ত্রিমাত্রিক কবি-কথিত "পপুলার সায়েন্স" লেভেলেও ভাল কিছু বানাতে পারবেন বলে মনে হয় না, ভিত্তিপ্রস্তর-স্থাপন বা ফিতা-কাটার উপর ২-১ মিনিটের রিপোর্ট ছাড়া। সুতরাং আপনি যা চাচ্ছেন, তেমন কিছু করতে হলে সিভিল/মেকানিক্যালে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও তাতে অভিজ্ঞসম্পন্ন মিডিয়া কর্মীদের দায়িত্ব দিতে হবে। কিন্তু তেমন কেউ কি আছেন? না থাকলে, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রদের 'ডকুমেন্টারি' বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরই এই দায়িত্ব দিতে হবে।
****************************************
সেজন্যই বলেছি, সেতু বিভাগের সাথে সমন্বয় করে এই ডকুমেন্টারি বানাতে হবে। না হলে, কী করা হচ্ছে এবং কেন করা হচ্ছে, সেটা বোঝা যাবে না।
একাত্তর টিভির প্রযোজকের উদ্দেশ্য হচ্ছে অহৈতুকী তর্ক বিক্রি করা, সেটা সে ভালোমতোই চরিতার্থ করে। তার মানে এই নয় যে দেশের টেলিভিশন কর্মীরা তাদের কারিগরি কাজটুকু জানে না। তাদের প্রয়োজন কেবল বুদ্ধিমান নির্দেশক ও প্রযোজক। তেমন যোগ্য লোক আছেন নিশ্চয়ই।
প্রকৌশলের ছাত্র বা পেশাজীবীদের এ কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে আরো ভালো হবে। কারিগরি ডকুমেন্টারি বানানোর চর্চা বা চাহিদা হয়তো এখন আমাদের দেশে বা সমাজে নেই, কিন্তু জিনিসটা শুরু করা গেলে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে এটাকে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে যোগ করা গেলে আরো ভালো হবে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন