শব্দগল্পদ্রুম ০১

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/০৯/২০১৬ - ৩:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উপনিবেশের মানুষ হিসেবে আমরা জগদ্দর্শনের জন্যে প্রকাণ্ড কিছু চশমা না চাইতেই পেয়েছি, স্বশাসনের ঝাপটা চশমাগুলো আমাদের চোখ থেকে সরাতে পারে নি। সব ক্ষেত্রে সে চশমা খোলার প্রয়োজনও হয়তো পড়ে নি। মোগলাই-বৃটিশ-পাকি চশমার ভেতর দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে গিয়ে আমাদের দেখার চোখও এখন এমন যে খালি চোখে দেখতে গেলে হোঁচট খেতে হয়। ভাষাও এমনই একটা চশমা।

বাংলা ভাষার যে রূপটাকে আমরা প্রমিত মেনে নিয়ে ব্যবহার করছি, তা যাঁদের হাতে গড়ে উঠেছে, তাঁরা ইংরেজদের ভিক্টোরিয়ান আমলের চশমা অনেকদিন চোখে রেখেছিলেন। প্রমিত বাংলা ভাষায় সে সময় রক্তমাংস যোগ করেছেন সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিকেরা, আদালত ও দাপ্তরিক কাজ তখন ইংরেজিতে চলতো (যেমন এখনও অনেকাংশে চলে) বলে এখনও আইন-প্রশাসনের ক্ষেত্রে পরিভাষা খুঁজতে গিয়ে আমাদের হাতড়াতে হয়। আমরা ২০১৬ সালে এসেও বহুলাংশে সে আমলের গোলা ভেঙেই ফসল খাচ্ছি। যাঁদের হাতে আমাদের প্রমিত বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হলো, তাঁরা ইংরেজি চশমার বাইরে হাতড়ে হাতড়ে যে যাঁর শাস্ত্রে খানিকটা আশ্রয় খুঁজেছেন, কিন্তু তাঁদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ আর উপলব্ধিগুলো ইংরেজের উপনিবেশকাণ্ডের প্রত্যক্ষ ফল। আমরা সুযোগ পাওয়ার পরও তাঁদের চেয়ে বেশি কিছু করতে পারি নি, এমনকি সমকক্ষও হতে পারি নি, ইংরেজের ধরিয়ে দেওয়া টিনের চশমা চোখে দিয়ে প্রথমে আমরা নিজেকে দেখেছি, তারপর দেখেছি ভারতবর্ষকে, তারপর দেখেছি বিশ্ব। তাই আমাদের দেখা পৃথিবীর আলো মূলত কয়েক দফা ইংরেজের পরিত্যক্ত নানা চশমা পেরিয়ে চোখে ঢোকে।

হয়তো এ কারণেই হীনমন্যতা আমাদের শিক্ষিত সমাজের মাঝে প্রবল। উদয়াস্ত খেটে ইংরেজি শেখার পর আমরা টের পাই, আমরা বাংলায় নিজেকে ভালোমতো প্রকাশ করতে পারি না। পৃথিবীর খাড়া পাহাড়ে চড়তে গেলে ইংরেজি একাধারে আমাদের লাঠি, মশাল, গাঁইতি, তাঁবু আর মশক। বিদ্যাশিক্ষার মাঝারি স্তর এই ভাষাটি ছাড়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনও দুর্লঙ্ঘ্য। পৃথিবীকে নিজের মতো করে জানতে গেলে আমাদের ভরসা আগে ছিলো বই, এখন গুগল, সেখানেও ইংরেজি ছাড়া গণ্ডি ছেড়ে খুব বেশিদূর এগোনো যায় না। প্রতিদিন নতুন সব প্রপঞ্চ এসে গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের জীবনকে, সেগুলোও ইংরেজিবাহিত (যেমন সেলফি)। জীবিত কবিনামযশোপ্রার্থী যুবক মৃত কবির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিশেষণ খুঁজে না পেয়ে বলেন, "তাঁর ভাষা ছিলো টোটালিটিময়"।

পাঁজরে প্রথমে ইংরেজ, পরে জাটকা-ইংরেজ পাকিস্তানীদের হাঁটুর চাপ সহ্য করে মাতৃভাষা নিয়ে কাজ করে গেছেন কীর্তিমান কবি-সাহিত্যিকেরা, পরিভাষা নির্মাণের মূল ঝাপটাটা তাঁদের ওপর দিয়েই গেছে। তাঁদের তুলনায় আমরা অনেক, অনেক ফুরফুরে। আমাদের চাপ যেমন নেই, তেমনই দায়টুকুও আমরা কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলেছি (কারণ আমরা টোটালিটিময়)। কিন্তু আমার ভাষায় রক্তমাংস যোগ করে চলার কাজটা তো মঙ্গলগ্রহ থেকে কেউ এসে করে দেবেন না। আমাদের প্রতি জনের নিষ্ক্রিয়তার ফল বা কুফল, সেটা কি কোনো একসময় সবাইকে বহন করতে হবে না?

উদাহরণে আসি। ধরা যাক, আপনি গল্প লিখতে বসেছেন। যাপিত জীবনের গল্প নয়, কোনো জমজমাট রূপকথা। সেখানে সমুদ্রযাত্রার প্রসঙ্গ আছে। জাহাজের বর্ণনা শুরু করতে গেলেই আপনাকে থমকে যেতে হবে। কারণ বাঙালির সমুদ্রযাত্রার সাথে তার ভাষায় সাহিত্য-কাব্য-সাংবাদিকতার যোগসূত্র ক্ষীণ। জাহাজের মাস্তুল পর্যন্ত আপনি লিখতে পারবেন, কিন্তু মাস্তুলের সাথে বাঁধা যে কাঠ থেকে পাল ঝুলে থাকে, তার বাংলা প্রতিশব্দ আপনি জানেন না। ইংরেজিতে একে বলে Yard, কিন্তু বাংলায়? ‌ইংরেজের জীবনে জাহাজের গুরুত্ব এতো প্রবল-প্রকাণ্ড-প্রচণ্ড, যে জাহাজের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রতিটি অংশ, প্রতিটি কর্মী, প্রতিটি কাজের বর্ণনা তার দলিল, সংবাদ ও সাহিত্যে সুলভ। বাংলায় তেমনটা ঘটে নি। বাঙালি নাবিকের জীবন ও কাজ বাংলা ভাষার নির্মাণকর্তাদের বৈঠকখানা পর্যন্ত পৌঁছায় নি, তাই আঞ্চলিক শব্দগুলোও প্রমিত হয়ে ওঠার সুযোগ পায় নি। ইয়ার্ডকে বরিশালের জাহাজি যা বলে (যদি আদৌ কিছু বলে থাকে), চট্টগ্রামের জাহাজি হয়তো তা বলে না (যদি আদৌ কিছু বলে থাকে)। তাহলে আমাদের রূপকথার চাঁদ সওদাগর পাল ঝোলাবে কী থেকে?

ইয়ার্ডের বাংলা প্রতিশব্দের অভাবে কি আমরা সমুদ্রযাত্রা নিয়ে বাংলায় একটা রূপকথা লিখতে পারবো না? জাহাজের অঙ্গে অঙ্গে, প্রত্যঙ্গে প্রত্যঙ্গে আমাকে ইংরেজের ফেলে যাওয়া টিনের চশমা পরে হাতড়ে বেড়াতে হবে?

ইংরেজি ভাষার প্রতি আমার কোনো বিরাগ নেই। আমি এর রূপে ও গুণে মুগ্ধ। যাঁরা ল্যাটিন আর গ্রিক থেকে মূল ধার করে এ ভাষায় নতুন সব শব্দ যোগ করে গেছেন শত শত বছর ধরে, তাঁদের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। কিন্তু আমি আগাগোড়া মসৃণ বাংলায় সমুদ্রযাত্রা নিয়ে রূপকথা লিখতে চাই, একটিবারও ইংরেজির কাছে আত্মসমর্পণ না করে। প্রয়োজনে আমি ইংরেজিসহ আরো অনেক ভাষার আঁটি ভেঙে শাঁস খাবো, কিন্তু আস্ত ছেড়ে দেবো না। পথ না থাকলে আমি একটি একটি করে ইঁট ফেলে পথ গড়ে তারপর চলবো।

কারণ আমি বাংলায় সমুদ্রযাত্রা নিয়ে একটি রূপকথা লিখেই থামতে চাই না। আমি দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ লেখাটি যেমন লিখতে চাই, তেমনি দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ লেখকের কলমে ঝরঝরে বাংলায় সমুদ্রযাত্রা নিয়ে আরো রূপকথা পড়তে চাই, যেখানে পূর্বসূরীর অবহেলার হাওয়ার তোড়ে ইংরেজি ডুবোশব্দে গুঁতো খেয়ে গল্পডুবি হয় না। সৈনিকের প্রশিক্ষণের সময় বলা হয়, "ঘাম রক্ত বাঁচায়"। লেখকের প্রশিক্ষণের সময় কি আমরা বলতে পারি না, "লেখকের ঘাম ভাষার রক্তশূন্যতা দূর করে"?

গল্প লিখতে বসে মাতৃভাষায় শব্দের অভাবে থেমে যাকে অন্যের ভাষা হাতড়াতে হয়, পৃথিবীতে সে-ই সবচেয়ে বড় অভাগা। শব্দগল্পদ্রুমের পরবর্তী পর্বগুলো পদে পদে এমন অভাগা হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখবো।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ইংরেজী থেকে বাংলায় অনেক শব্দ আধা অনুবাদ হয়ে এসেছে
অডার্লি থেকে আর্দলি।

প্রশ্ন : সেইরকম ভাবে কি নতুন শব্দ অ্যাডপ্ট করাটাকি একটা সহজ সমাধান নয়? নতুন শব্দ তাহলে একেবারে ভীনগ্রহের মনে হবে না।

মামুনুর রশীদ [ ভবঘুরে শুয়োপোকা ]
==========
mamun babu ২০০১ at gmail.com
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি

হিমু এর ছবি

পাঠকের চোখে নতুন সব শব্দই "ভিনগ্রহী"। কিন্তু নিজের ভাষার শব্দ তখনই একটু বেশি "ভিনগ্রহী" মনে হয়, যখন সেটা বা সেটার কলকব্জাগুলো শেখার আগে সে অন্য ভাষায় এর বিকল্প শিখে ফেলে। তখন আন্ডারওয়্যারকে মনে হয় স্বাভাবিক, অন্তর্বাসকে মনে হয় ভিনগ্রহী আর জাঙ্গিয়াকে মনে হয় ক্ষ্যাত (এ কারণেই সম্রাট জাহাঙ্গীর নাকি বিপদের মুখে জাঙ্গিয়া পড়িতেন না)।

স্পর্শ এর ছবি

সেদিন ফেলুদার বাক্স রহস্য পড়তে গিয়ে শিখলাম, 'তেজারতির কারবার' মানে 'সুদের ব্যবহসা'
তারপর 'পেন নাইফ' হলো 'মুরাদাবাদী ছুরি'।
আমরা এবং আমাদের ইমিডিয়েট আগের কয়েক প্রজন্ম নতুন শব্দ তো প্রচলন করতে পারি-ই নি বরং অনেক চমৎকার শব্দ হেলায় হারিয়েছি।। পুরোনো লেখকদের বইয়ে কিন্তু পাওয়া যায় এমন অনেক কিছু। তারপর যেমন মুজতবা আলীর লেখা পড়তে গিয়ে আফসোস হয় সংস্কৃতটা শিখিনি বলে।

আশাকরি এই সিরিজের সাথে সাথে, সেই চমৎকার রূপকথাগুলোও একে একে প্রকাশ করবেন।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সত্যপীর এর ছবি

পেন নাইফের তর্জমা কি মোরাদাবাদি ছুরি? পেন নাইফ অ-মোরাদাবাদিও হওয়ার কথা মনে হয়। মোরাদাবাদের কারুকাজ করা ছুরি যেমন পেন নাইফ, অন্যান্য জায়গার ছুরিও পেন নাইফ হতে পারে। ফেলুদার গলপের পেন নাইফটা মোরাদাবাদের ছিল তাই এমন নাম সম্ভবত। (বহুদিন আগে পড়া বই, বাসায় গিয়ে দেখতে হবে আমি ভুল না ঠিক)

অন-টপিকঃ তেজারত কারবার মোরাদাবাদ ফার্সি শব্দ। মুরাদ (এইটাও ফার্সি নাম) পত্তন করেছিল দেখে মোরাদাবাদ। বরং মুরাদনগর বা মুরাদপুর হলে ভারতীয় নাম বলে চালানো যেত। এখন যেমন ইংরেজি শব্দের বহুল ব্যবহার ইংরেজ আসার আগে একই ঘটনা ঘটে ফার্সি শব্দ নিয়ে।

..................................................................
#Banshibir.

এক লহমা এর ছবি

রূপকথাদের অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সোহেল ইমাম এর ছবি

আমার মনে হয় জীবন ধারা যখন স্বতস্ফুর্ত ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যায় বা দাঁড়াতে চায় তখন তা ভাষাতেও প্রতিফলিত হয়। ব্রিটিশ আমলে জমিদারী হাতে ধরিয়ে দিয়ে যেমন বসে খাওয়ার আরামের জীবনের নেশা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল আমাদের, তেমনি পরবর্তীতে সরকারী চাকুরীর (নিশ্চিন্তি আর নিরাপত্তা) চাপিয়ে স্বাধীন উদ্যোগ, বড় কিছু গড়ে তোলা এসব থেকেও কয়েকটা প্রজন্মকে দূরে রাখা হয়েছিল। আমরা সে সূত্রেই জীবনকে বিশ্বকে যথার্থ অর্থেই জয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে দেখতে শিখিনি। যা শিখেছি তা কেবল আলঙ্কারিক জ্ঞানের স্বার্থে যার মধ্যে অহমিকা থাকলেও প্রাণ নেই। অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে যাপিত জীবন নিজের ভাষা নিজের শব্দ তৈরী করবার পরিশ্রমটুকু করার প্রবৃত্তিও তাই হয়তো হারিয়ে বসেছে। হিমু ভাই খুব সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে লিখছেন। অধীর হয়ে অপেক্ষা করছি পরের পর্ব গুলোর জন্যে।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

হিমু এর ছবি

জমিদারির আরাম বা সরকারি চাকরির নিরাপত্তা মনে হয় না বাংলা ভাষাচর্চা/শব্দোদ্ভাবনের পথে তেমন বাধা ছিলো (রবীন্দ্রনাথ আর উপেন্দ্রকিশোর জমিদার ছিলেন, বঙ্কিমচন্দ্র আর সৈয়দ মুজতবা আলী অনেকদিন সরকারি চাকরি করেছেন)। যে যুগে মাতৃভাষাকে ঠিকমতো অবলম্বন করা প্রয়োজন ছিলো (কেবল ব্যক্তির জীবনে নয়, সমাজে), আমরা সে সময়টা কাজে লাগাতে পারি নি। ভাষা পেশীর মতো, ব্যবহৃত না হলে ক্ষয়ে হারিয়ে যায়। বিদ্যাচর্চার উচ্চতর স্তরগুলো যাঁরা পার করেছেন, তাঁরা ভাষার গায়ে রক্তমাংস যোগ করার চেয়ে অন্য কোনো কাজকে বেশি জরুরি মনে করেছেন। দুয়েকজনের মাঝে বাংলা ভাষা নিয়ে প্রকট বিদ্রুপের প্রবণতাও দেখেছি। পারিভাষিক প্রয়োগকে অনেকে বাঁকা চোখেও দেখেন, অনেকে "এটা তো বাংলা করতে গেলে কেউ বুঝবে না" বলে দায় এড়িয়ে যান। ইংরেজিতেও যে শব্দ পিটিয়ে পিটিয়ে কামারশালার পেরেকের মতো তৈরি করা হয়েছে, এটা তাঁরা পাশ কাটিয়ে যান। ইংরেজ এ কাজগুলো কয়েকশো বছর আগে করে গেছে (আর এখনও সমানে করে চলেছে) বলে আজ তাদের ভাণ্ডারে শব্দের সংখ্যা বেশি, আমাদের কিছু কম।

বাংলাভাষী অঞ্চলে সিন্ধুঘোটক বা জলহস্তী দেখার সুযোগ নেই। এমনকি গোটা ভারতবর্ষেও নেই। কিন্তু শব্দগুলো আমাদের ভাষায় আছে, কারণ কোনো এক বা একাধিক বাঙালি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ওয়ালরাস আর হিপোপটেমাস বলে তিনি/তাঁরা ক্ষান্ত হবেন না, তাঁর/তাঁদের নাতিপুতিরা যাতে বাংলা কোনো শব্দে এদের চিনতে পারে, সে ব্যবস্থা করবেন। আমরা এখন বসে প্রশ্ন করতে পারি, সিন্ধুঘোটক কি খুব ভালো কোনো পরিভাষা হলো কি না, কিংবা খুঁত ধরতে পারি, বরং ওয়ালরাসকে জলহস্তী আর হিপোপটেমাসকে সিন্ধুঘোটক (হিপোপটেমাস মানে নদীর ঘোড়া, সিন্ধুঘোটকও তাই) ডাকলে ভালো হতো। কিন্তু কাজের কাজটা তিনি/তাঁরা করে রেখে গেছেন। কেন এটা আদৌ করা জরুরি? কারণ আমরা পারি। যে কারণে ইংরেজ আমড়াকে হগ প্লাম বলে, আমরাও একই কারণে ওয়ালরাসকে সিন্ধুঘোটক ডাকি। বাংলা শব্দ যে নতুন হতে পারে, সাম্প্রতিক হতে পারে, এ ব্যাপারটা যতোদিন আমরা বুঝতে না শিখবো, আর যতোদিন আমরা বাংলায় যথাযথ শব্দের অভাবকে সূক্ষ্ম অপমান হিসেবে চিনতে না শিখবো, ততোদিন ভাষাও দুর্বল থেকে যাবে। আমরা বিদ্যাচর্চার পথে ইংরেজি শেখাকেই এতো বিষম গুরুত্ব দিই, এতো বিপুল বিনিয়োগ করি তার পেছনে, যে বাংলায় ঠিকমতো লিখতে বা বলতে না পারার অযোগ্যতাটা আর চোখে পড়ে না। প্রমথনাথ বিশী লিখেছিলেন, বিদেশী ভাষায় কোনো বিষয়ে প্রবেশ ঘটে বড়জোর, কিন্তু অধিকার জন্মায় না। আমারও তাই মনে হয়, জমিদারি-সরকারিচাকরি এখানে সমস্যা না, সমস্যাটা প্রবেশেই তুষ্ট থাকা আর অধিকারের অনিচ্ছায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

অথচ সাগরের নামগুলোঃ লোহিত সাগর- পীত সাগর- কৃষ্ণ সাগর- মৃত সাগর অথবা প্রশান্ত কিংবা অতলান্ত মহাসাগর! কি সুন্দর!
ও আচ্ছা, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী নিজে কখনো জমিদার ছিলেন না। তিনি ময়মনসিংহের জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরীর দত্তক পুত্র ছিলেন। পরবর্তীতে হরিকিশোরের একটি পুত্র সন্তান হয়-- নরেন্দ্রকিশোর। প্রবেশিকা পাশ করে ষোল বছরের উপেন্দ্রকিশোর কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে এসেছিলেন। তবে হরিকিশোর সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী উপেন্দ্রকিশোরকে করে গিয়েছিলেন। তিনি ততদিনে ব্রাহ্ম সমাজে যোগ দেন। এ কারণে নিজ পরিবার ছাড়া পরিবারের অনেকের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছিল। নরেন্দ্রকিশোর ময়মনসিংহের জমিদারি দেখাশোনা করতেন।
____________________________
সৌমিত্র পালিত

হিমু এর ছবি

চলুক

সুজন চৌধুরী এর ছবি

লেখাটার Lion's share (সিংহ ভাগ) ভাল লাগলো চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

"পোষ্টানো" ও যোগ করেন সেলফির সাথে।
এ্যানি মাসুদ

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

যাক, আশ্বস্ত হওয়া গেল! কল্পদ্রুম তো স্বর্গীয় বস্তু, আমাদের নাগালের বাইরের জিনিস। গল্পদ্রুম নিশ্চয়ই মানবীয় কিছু হবে, অপেক্ষায় রইলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

রূপকথার অপেক্ষায় রইলাম। বেশ একটা উত্তেজনা অনুভব করছি আপনার সংকল্পে, "কিন্তু আমি আগাগোড়া মসৃণ বাংলায় সমুদ্রযাত্রা নিয়ে রূপকথা লিখতে চাই, একটিবারও ইংরেজির কাছে আত্মসমর্পণ না করে। প্রয়োজনে আমি ইংরেজিসহ আরো অনেক ভাষার আঁটি ভেঙে শাঁস খাবো, কিন্তু আস্ত ছেড়ে দেবো না। পথ না থাকলে আমি একটি একটি করে ইঁট ফেলে পথ গড়ে তারপর চলবো।"

কিন্তু এই যে বললেন "উদয়াস্ত খেটে ইংরেজি শেখার পর আমরা টের পাই, আমরা বাংলায় নিজেকে ভালোমতো প্রকাশ করতে পারি না", এর সাথে আমি একমত হতে পারছিনা। আমার আপত্তি 'আমরা' তে। আপনার আমরাতে আমি আমাকে তো পাচ্ছিনা হিমু। দীর্ঘ সময় বিদেশে থেকে, ইংরেজিতে চলে, ইংরেজিতে হেঁটে, এমনকি দুর্ভাগ্য বশত হঠাৎ হঠাৎ ইংরেজিতে স্বপ্ন কি দুঃস্বপ্ন দেখে আজ অবধি ইংরেজিতে নিজেকে ভালমতো প্রকাশ করতে পারলাম না। এটা অবশ্যই আমার দুর্বলতা। খানিকটা অযোগ্যতা আর কিছুটা আলস্য, সব মিলে ইংরেজিটা জিভে আর টাকরায় এলেও অন্তরে ধারণ করতে পারিনি। তাই সহকর্মী যখন জিগ্যেস করে কেমন আছো, বোঝাতে পারিনা আমার পেট পুড়ছে দেশে থাকা মা'র জন্য। বলি মা কে মিস করছি। ফেলে আসা অনেক কিছুর কথা ভাবলেই আমার যে মন কেমন কেমন করে তা কী করে বোঝাই!

তবে এটি মানতে কোন আপত্তি নেই যে পূর্বপুরুষের চশমাটি সরিয়ে ভাষার দিকে নতুন করে দেখিনি কোনদিন। রবীন্দ্রনাথ বোগেনভিলিয়াকে ডেকেছিলেন বাগানবিলাস নামে অথচ এত এত বছর পাড়ি দিয়ে আমি এখনও আটকে রয়েছি রডোডেন্ড্রনেই।

আপনার লেখাটি আমার পছন্দ হয়েছে।

-----মোখলেস হোসেন।

হিমু এর ছবি

রডোডেনড্রন নেপালের জাতীয় ফুল। বাংলা কোনো নাম দেওয়ার আগ পর্যন্ত কাজ চালানোর জন্যে নেপালিতে গুরাঁস ডাকতে পারেন।

হিমু এর ছবি

রডোডেনড্রন গোত্রের গ্রিক নামটা একটা মিসনোমার বা ভ্রান্ত নাম (বাংলায় এর মানে দাঁড়ায় গোলাপ গাছ)। এর ১,০২৪টা প্রজাতির মাঝে কয়েকটার পৃথক নাম থাকতে পারে। ধ্বনিগত মিল ধরে রেখে গোত্রটার বাংলা নাম করলাম রোদরঞ্জন (রোদকে রাঙায় যে)।

অতিথি লেখক এর ছবি

রোদরঞ্জন! অপূর্ব।

--মোখলেস হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

"রোদরঞ্জন" নামটা চমৎকার। আপনার লেখাটিও পছন্দ হয়েছে। রুপকথার অপেক্ষায় রইলাম।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ যোগ করার সাহস এই যুগে কারো দেখি না। তিনি যত বিজ্ঞলোকই হন, ব্যাকরণ পুলিশের ভয়ে তার বুক তত বেশী কাঁপে। একমাত্র ব্যতিক্রম ফেসবুকের 'নতুন শব্দ' গ্রুপ এবং 'মতিকন্ঠ'। তাদের হাতে অফিশিয়াল মশাল দেয়া গেলে বাংলা ভাষা অনেক সমৃদ্ধ হতো। যদিও এগুলো ফান পেজ কিন্তু এর মধ্যে প্রচুর যৌক্তিক নতুন শব্দের সন্ধান পাওয়া গেছে জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতেও যেটা অতুলনীয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আমার মনে হয় প্রযুক্তিতে ব্যব‌হার হয় (বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে) এমন শব্দগুলোর ভালো বাংলা দরকার আগে। "ট্যাগানো", "স্ট্যাটাস", "স্মাইলি" ইত্যাদি।
ফ্রেন্ডরিকোয়েস্টকে বন্ধোনুরোধ‌ ‌ বলা যায়, ইমোজি-কে অনুভি‌ ‌ ডাকা যায়।

শুভেচ্ছা হাসি

nipu এর ছবি

আমি মনেকরি এ ব্যাপারে লেখকদের চেয়ে (পাশাপাশি) প্রাতিষ্ঠানিক লোকজনদের দায়িত্ব আরো বেশী। নতুন নতুন শব্দ নিয়ে বাংলা একাডেমি প্রতি বছর ডিকশিনারীর নতুন সংস্করন কেন প্রবর্তন করেন না? আজকের যুগে এটা করতে কোন পয়সা খরচ হবারও কথা নয়। অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে পিডিএফ আপলোড করে দিলেই হয়। সাথে নতুন বছরে সংযোজিত শব্দগুলোর প্রমিত রুপ, শ্রেনী, ব্যাবহার ইত্যাদির পরিশিষ্ট। এতে করে সেলফীর বাংলা শব্দের ব্যাবহারে কেউ হাসাহাসি করতে পারবেনা। কিংবা করলেও তার জবাব দেয়া যাবে।

মেনে নিন বা না নিন, একলা চলরে ধাচের লোকের সংখ্যা সমাজে খুবই সীমিত। কেউ একজন প্রথা ভেঙ্গে নতুন শব্দ ব্যাবহার করবে। পরে সেটা প্রমিত হয় যাবে ওরমক আশা করাটা একটু বেশীই চাওয়া হয়ে যায়।

হিমু এর ছবি

কেউ একজন প্রথা ভেঙ্গে নতুন শব্দ ব্যাবহার করবে। পরে সেটা প্রমিত হয় যাবে ওরমক আশা করাটা একটু বেশীই চাওয়া হয়ে যায়।

বেশি চাইতে তো দোষ নেই। তবে নতুন শব্দ ওভাবেই যোগ হয়, এখানে "প্রথা ভাঙা"র কিছু নেই। সেলফি শব্দটা কোনো প্রকাণ্ড পণ্ডিত নিজের পড়ার ঘরে একশো পুঁথি ঘেঁটে আবিষ্কার/উদ্ভাবন করেন নি, এক অস্ট্রেলিয়ান ভদ্রলোক নিজের সেলফির নিচে টীকায় লিখেছিলেন, পরে সেটাই চল হয়ে দাঁড়ায়।

পণ্ডিতদেরই মূল দায়িত্ব পরিভাষার পরিধি বাড়ানোর। তবে তাঁরা সেটা না করলে লোকে বসে থাকবে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটি ভাল লাগলো। উপকারী লেখা হিসেবে ভাল লাগলো। স্কুল জীবনের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেলো,লেখাটি পড়ে। তখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি। থাকি হোস্টেলে। অস্টম শ্রেণীর একটি ছাত্র আমার সাথে একদিন আলোচনা করে যে বাংলাভাষায় দেনন্দিন ব্যবহার্য জিনিষগুলোর প্রতিশব্দ নেই বলে মানুষ ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করে। তাকে বলি, শুধু তাই নয়। আমরা ইংরেজী শব্দ ব্যবহারকে বাহাদুরী মনে করেও ব্যবহার করি অনেক সময়। সে মানতে নারাজ। যে বাংলাদেশে বহুলভাবে ব্যবহৃত বেশ কিছু ইংরেজী শব্দ উল্লেখ করে বলে, এগুলো‘র বাংলা প্রতিশব্দ নেই বলে মানুষ ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। যতদূর মনে পড়ে, তার উল্লেখ করা শব্দগুলোর মধ্যে সবগুলোর বাংলা শব্দ বলতে সক্ষম হয়েছিলাম, শুধু টেবিল বাদে। তাকে বলি, সব ভাষাতেই কিছু বিদেশী শব্দকে গ্রহন করা হয়েছে। টেবিল সেরকম একটি শব্দ। এটাকে ইংরেজী শব্দ মনে না করে বাংলা ভাষায় গৃহীত অনেক বিদেশী শব্দের মতো একটি হিসেবে গ্রহন করা যায়। বলের বাংলা করে তাকে বললাম ‘গোলক’। সে নাছোরবান্দা, জিজ্ঞেস করে তাহলে ফুটবলের বাংলা? আমিও হারার পাত্র নই, বলি, ‘পদগোলক’আর হ্যান্ডবলের বাংলা ‘হস্তগোলক’। এভাবে আরও অনেক শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ তাকে বলেছিলাম। এখন আর সব মনে নেই।
কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখায় মোবাইল ফোনের বাংলা হিসেবে ‘মুঠোফোন’ শব্দটি বেশ ভাল লেগেছিল। তার দ্বারা উৎসাহিত হয়ে আমি ‘ফেইসবুক’ বা ‘স্কাইপে’ লিখেলিখে যোগাযোগ করার বাংলা করি ‘আঙ্গুলালাপ’। শব্দটি আমার কাছে খুব মনে ধরে। আমি বন্ধবান্ধবীদের সাথে কথা বলার সময় গুণের এবং আমার শব্দটি সব সময়ই ব্যবহার করি। আমাকে বলতে শুনে তাদের অনেককেই সেগুলো এখন ব্যবহার করে। তাই লেখক হিমু’র সাথে একমত হয়ে বলি, সেই অস্ট্রেলিয়ান ভদ্রলোকের মতো আমাদেরও প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের ব্যবহৃতগুলোর মধ্যে যেগুলো পাঠক বা শ্রুতার মনে ধরবে আর জুৎসই মনে হবে, সেগুলো তারা ব্যবহার করতে শুরু করবে।

- পামাআলে

অনুসন্ধানী আবাহন এর ছবি

হিমু ভাই এককালে নিয়মিত লিখতেন,নিত্য নতুন শব্দ তৈরী করতেন, যেমন সর্পঘ্ন ও তেজসৃপ, ইত্যাদি। আজকাল হিমু ভাই নতুন টি মেকার নিয়ে বিজি থাকে, চায়ের ফ্লেভার নিয়ে হয়তো এনালাইসিস করতে করতে চা খা খায়, তাই নতুন শব্দ আর আসছে না তেমন। দু:খ

জিজ্ঞাসু এর ছবি

ভাষাবিদগণের মতে কিছু শব্দ পচে যায়, ক্ষয়ে যায়, কিছু শব্দের অর্থের পরিবর্তন হয় কালের পরিক্রমায়। এবং নতুন নতুন শব্দ সংযোজিত হয়। এটাই স্বাভাবিক। মূলত: মানুষই ভাষা সৃষ্টি করেছে। ভাষা আমাদের বাঙালি করেনি। এই জনপদের লোকেরা বলতে বলতেই বাঙলা ভাষার বর্তমান রূপ আমরা পেয়েছি। চর্যাপদের ভাষার সাথে বর্তমান বাঙলার পার্থক্য থেকে তা স্পষ্ট হয়। নতুন শব্দ সৃষ্টিতে কোন দোষ নেই। তবে তা সার্বজনীন হতে সময় লাগে। কবে ডিকশনারীতে কোন শব্দ গৃহীত হবে তার জন্য বসে থাকার সময় আমাদের নেই। আমরা নতুন নতুন শব্দ তৈরি করব এবং তা ব্যবহার করব। এভাবেই সময়ের প্রয়োজনেই বাঙলা ভাষায় নতুন শব্দ আসবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার আপত্তি থাকলেও সময় বসে থাকে না। যেমন ঢাকায় হঠাৎ করেই সম্ভবত ২০০৪/০৫ এর দিকে ডিজুস প্রজন্মের সৃষ্টি হল। তারা নতুন অনেক শব্দ ব্যবহার করা শুরু করলে তাতে আমার ঘোর আপত্তি ছিল। তবে সেটাও একধরণের সময়েরই দাবি আমি বলব। এখন আর সেসব শব্দ তেমন একটা শুনি না। মনে হয় সমাজে সেগুলো তেমন প্রতিষ্ঠা পায় নি। বর্তমান ঢাকার নতুন প্রজন্মের বাঙলা ব্যবহারের অবস্থা জানি না। তবে আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনেই হোক বা কবির কাব্যে বা গল্পের প্রয়োজনে হোক বাঙলা শব্দ সৃষ্টি করতে হবে। আশাকরি হিমুর প্রচেষ্টা স্বার্থক হবে।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

হিমু এর ছবি

"ডিজুস" একটা বিজ্ঞাপনী প্রচারণা, যেটা ভোক্তাদের একাংশের মাঝে খানিক চাঞ্চল্য তৈরি করেছিলো। তারা যে নতুন শব্দ প্রণয়ন করেছিলো, ব্যাপারটা সেরকমও না, কিছু স্বল্পপ্রচলিত বাগধারাকে একটা নির্দিষ্ট বয়সী ভোক্তাদের মাঝে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেছিলো। বিজ্ঞাপনী প্রচারণা ফুরোনোর পর তাই কথাবার্তাগুলোও হারিয়ে গেছে। এটাকে নতুন শব্দ বা পরিভাষা প্রণয়নের সাথে এক করে দেখলে পরিভাষাপ্রণয়নের প্রতি খানিকটা অবিচারই করা হবে।

"সমাজে প্রতিষ্ঠা" পাওয়া ব্যাপারটাও মনে হয় আলোচনার দাবি রাখে। অভিধানে যতো শব্দ আছে, তার কত শতাংশ "সমাজে প্রতিষ্ঠা" পেয়েছে? দৈনন্দিন কাজে সমাজে ব্যবহৃত শব্দমালার পরিধি যথেষ্ট সীমিত। কিন্তু কিছু প্রসঙ্গ আছে (পোস্টে যেমন সমুদ্রযাত্রার উদাহরণ দিলাম), যেখানে আমি চাইলেও বাংলা ব্যবহার করতে পারছি না, কারণ পরিভাষা সেখানে অনুপস্থিত, কিংবা অক্ষরজীবীদের অমনোযোগে আঞ্চলিক শব্দ প্রমিত হিসাবে গৃহীত হয়নি। এখানে গবেষকদের পাশাপাশি লেখকদেরও একটা দায় আছে, এবং সে দায় পূরণে এক প্রজন্মের লেখক ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রজন্মের লেখক/পাঠকও ভোগে, আপাতত এটুকুই বলতে চাইছিলাম।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

হ্যাঁ, ডিজুস প্রজন্মের কথাবার্তায় শব্দ ব্যবহারের ব্যাপারটা ঠিক স্বল্পপ্রচলিত কিছু বাগধারার ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ ছিল; এটা নতুন শব্দ বা পরিভাষা প্রণয়নের সাথে তুলনীয় না। অনভ্যস্ততার কারণে এ ধরনের বাগরীতির প্রতি অনাগ্রহী ও অমনোযোগী ছিলাম। আমি তো রীতিমত এটাকে ভাষার প্রতি এক ধরনের অাক্রমণ মনে করতাম।

ইংরেজি শব্দের পরিভাষা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি যেটুকু বুঝি তাতে মনে হয় আঞ্চলিক ভাষাগুলো অধিকাংশেই প্রমিত ভাষার অপভ্রংশ। ফেলে দেয়ার মত কোন শব্দ (আঞ্চলিক বা প্রমিত) আছে বলে আমার জানা নেই। যদি ভাষাবিদগণ কোন শব্দকে গ্রহণ না করে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই তাদের সীমাবদ্ধতা বা আপনার কথায় অমনোযোগিতা। আমি মনে করি, মূলত: গবেষকরা নন লেখকরাই পরিভাষা, প্রতিশব্দ সৃষ্টি করেন।
যেহেতু নতুন শব্দ বা পরিভাষা প্রণয়ন একটা চলমান প্রক্রিয়া, তা চলতেই থাকবে। সচলায়তনও এমনই একটি লেখকদের মঞ্চ যা থেকে নতুন পরিভাষা জন্ম নিবে।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

হিমু এর ছবি

টিভির কল্যাণে এখন ডিজুসের জায়গাটা হিন্দি সংলাপের দখলে চলে গেছে মন খারাপ

আমি যেটুকু বুঝি তাতে মনে হয় আঞ্চলিক ভাষাগুলো অধিকাংশেই প্রমিত ভাষার অপভ্রংশ।

বহুলাংশে, কিন্তু কোন সময়ের প্রমিত ভাষা, সেটাও আবার দেখার বিষয়। উদাহরণ দিচ্ছি। OSPREY একটা মাছশিকারী পাখি। সংস্কৃতের রমরমার আমলে এর প্রমিত নাম ছিলো উৎক্রোশ (অর্থ: বেজায় জোরে চ্যাঁচায় যে)। সেটা ভেঙেচুরে এর আঞ্চলিক নাম হয়েছে কুরল, হাওরাঞ্চলে কুড়াও বলা হয়। এখন ধরুন, আমি একটা ফ্যান্টাসি গল্প লিখতে চাই, যেখানে অস্প্রের ভূমিকা অপরিহার্য। আমি কি নতুন একটা নাম বানিয়ে নেবো? ইংরেজির অনুকরণে আমি একে মেছোবাজ, সরিৎবাজ ইত্যাদি "নতুন" নাম দিতে পারি, অথবা আমি দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে প্রচলিত নাম কুড়া বা কুরল ব্যবহার করতে পারি। সেক্ষেত্রে আমার প্রত্যাশা থাকবে, কুরলকে নতুন করে "প্রমিত" হিসেবে চালু করার, যাতে আরেকজন লেখক অস্প্রে নিয়ে গল্প লিখলে কুরলই লেখেন। আমি এটাকেই "আঞ্চলিক শব্দের প্রমিতকরণ" বলতে চাইছি (ঠিক নিশ্চিত নই এটা কতোটুকু সঠিক হলো)। নৌযাত্রা বা সমুদ্রযাত্রার ক্ষেত্রেও এমন অনেক আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার আছে, যেগুলো আমাদের বৈঠকখানার অভিধান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। এখন লেখকের হাতে দুটো বিকল্প আছে। হয় তিনি আঞ্চলিক শব্দগুলো সংগ্রহ করে সেগুলোকে প্রমিতকরণের ওপর জোর দিতে পারেন, কিংবা নিজে প্রয়োজন অনুসারে নতুন শব্দ প্রণয়ন করে নিতে পারেন। সেগুলো সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার প্রয়োজন নেই (কারণ সমাজ বহুলাংশে নৌযাত্রা বা সমুদ্রযাত্রা থেকে বিযুক্ত, যতটুকু যুক্ত সেখানে লঞ্চ-কেবিন-ইঞ্জিন-টিকেট দিয়ে কাজ চলে যায়), কিন্তু অনুরূপ গল্পলেখকসমাজে প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আছে, কারণ লেখকদের নিজের ভাষায় পুরো পৃথিবী অধিকার করে নিতে হবে।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

প্রমিতকরণের যে দিকটায় আপনি জোর দিচ্ছেন - তা হল আপনার অনুসরণে অন্য লেখকগণ যেন সে শব্দটা ব্যবহার করেন। এমনটিই ঘটে। তবে তা সময়ের ব্যাপার। লেখক কতটা পাঠকপ্রিয় তার ওপর যেমন তা নির্ভর করছে তেমনি তার পাঠক বা অন্য লেখকরা তা কতটা গ্রহণ করছেন তার ওপরও। কখনও তা ঘটে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আবার কখনও সেশব্দ পরিচিতি পেতে লাগতে পারে দীর্ঘ সময়। যেমন, আপনি রডোডেন্ড্রনকে রোদরঞ্জন বলতে চাইছেন। মন্দ না। আমি এখন থেকে তাই বলব। যদিও এ ফুলটি নানান রঙের হয়। কিন্তু এটা ইংরেজির অনুকরণে একটা নাম দেয়া হল। আবার গুরাঁস নামে ডাকতেও আপত্তি নেই। তবে রোদরঞ্জন ভাল নাম। যেহেতু আমাদের দেশের স্থানীয় নয়। তাহলে কী করা যাবে। যেকোন একটা নিতে হবে। একটা প্রতিবেশি দেশের দেয়া নাম। অপরটা প্রতিশব্দ। যেমন জবা ফুলের ইংরেজি নাম জানি china rose আবার আমেরিকায় তারা বলে hibiscus। তাই আমরা রডোডেন্ড্রনকে রোদরঞ্জন বা গুরাঁস উভয় নামেই চিনে নিতে পারি।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

হিমু এর ছবি

প্রমিতকরণের যে দিকটায় আপনি জোর দিচ্ছেন - তা হল আপনার অনুসরণে অন্য লেখকগণ যেন সে শব্দটা ব্যবহার করেন।

অন্য লেখকেরা ব্যক্তি "আমার" অনুসরণ করবেন, আমার চাওয়াটা সেটাও নয়। আমি চাইছি, গল্পে (বা কবিতায়, বা প্রবন্ধে) লেখকেরা নতুন পরিভাষার ওপর জোর দিন, যাতে ঐ একই প্রসঙ্গে লিখতে বসে আরেকজনকে শব্দ খুঁজতে বেগ পেতে না হয়। সবকিছুর পরিভাষা তো একজন-দুজনের পক্ষে প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। আজ যদি কেউ মহাকাশের পটভূমিতে ঝরঝরে বাংলায় একটা কল্পবিজ্ঞান গল্প লেখেন, তাহলে একই পটভূমিতে গল্প লিখতে বসলে আমার কাজ তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে যাবে, আমি তার প্রণীত নতুন শব্দগুলো থেকে প্রযোজ্যগুলো কাজে লাগাতে পারবো, কোনোটা পছন্দ না হলে একটা বিকল্প তৈরি করতে পারবো। এ প্রক্রিয়ায় আমি যতোবেশি উজানে থাকবো, আমার খাটনি ততো কমবে, হাতে বিকল্প ততো বেশি থাকবে। যেমন, রবি ঠাকুর বোগেনভিলিয়াকে বাগানবিলাস করে যাওয়ায় আমার একটা অতিরিক্ত খাটনি কমে গেছে, কিন্তু রডোডেনড্রনে এসে ঠিকই ঠেকে গেলাম। অপর লেখকের হাতে এখন রোদরঞ্জন আছে, তিনি হয়তো এখন ড্যান্ডেলিওন বা এডেলভাইসের বাংলা নাম রাখায় সময় দিতে পারবেন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হিমু ভাই, নবউদ্ভাবিত শব্দগুলো কি অভিধান বা কোন ডেটাবেইজে সংরক্ষিত হবে? একজন লেখক কিভাবে জানবেন যে একটি শব্দের (ধরুন, রোদরঞ্জন) পরিভাষা করা হয়েছে?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

অভিধান প্রণয়নের কাজটা পণ্ডিতদের দায়িত্ব। লেখকরা বড়জোর ভুক্তি উদ্ভাবন/প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। লেখকেরা পরিভাষা নিয়ে আগ্রহী হলে নিজেরাই খুঁজে বের করবেন (গুগল) বা প্রণয়ন করবেন আপাতত।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অভ্রের বানান পরামর্শক অংশটি যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এর পরবর্তী সংস্করণে পরিভাষা যুক্ত করার কোনও সুযোগ রাখা যায় কি, যেটি অন্তর্জালের মাধ্যমে কোনও একটি সাধারণ সংরক্ষণাগারে যুক্ত হবে এবং ব্যাবহারকারীরা জানতে পারবেন কি কি পরিভাষার প্রস্তাবনা আছে। (ধরে নিচ্ছি বর্তমান সময়ের লেখকবৃন্দ, বিশেষত অন্তর্জালিক লেখকবৃন্দ অভ্র ব্যবহার করেন।) সেক্ষেত্রে বারবার চাকা আবিষ্কারের সম্ভাবনা কমবে। একই সঙ্গে উন্নততর পরিভাষা সৃষ্টির (মানে আগেরটা পছন্দ না হলে, সেক্ষেত্রে) সুযোগ বাড়বে।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

জিজ্ঞাসু এর ছবি

আমার একটা কথা মনে পড়ল সম্ভবত মিরপুর চিড়িয়াখানায় বাজ বা চিলের খাঁচায় OSPREY লেখা ছিল। বাঙলাদেশে বাজ, তিলাবাজ, চিল এই পাখিগুলো স্থানীয়। হাওড় অঞ্চলে কি একই পাখিকে কুড়া বা কুরল বলে? চিল, বাজ, কুরল বা OSPREY যদি একই পাখি হয় তাহলে কুড়া বা কুরলকে প্রমিত হিসেবে গ্রহণ করতে কোন ক্ষতি নেই।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

হিমু এর ছবি

বাজ বা চিল, এগুলো গোত্রনাম। অনেক ধরনের বাজ আছে, যেমন অনেক ধরনের চিলও আছে। যেমন দেশে কাকও দেখা যায় দুই ধরনের, দাঁড়কাক আর পাতিকাক। পানকৌড়িকেও জলকাক বলা হয় কিছু জায়গায়। এখন আমরা যদি তিনটাকেই কাক ডাকা শুরু করি, তাহলে পাখির বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করা হয়। এ কারণে অস্প্রেকেও চিল বা বাজ ডাকা যাবে না।

আর পুরোনো আমলের অভিধানে অস্প্রের ভুক্তি হিসেবে কুরল, কুরর, কুড়া তিনটাই আছে, আমি উদাহরণের জন্যে বিশদ ফেনিয়ে বললাম।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

ভাষা এতটাই প্রবহমান যে তা সবসময় এক জায়গায় অবস্থান করে না। পরিভাষা প্রণয়নের কাজটা সময়োপযোগী। তবে আমরা যেভাবে চাই ঝরঝরে বাঙলায় কিছু লিখতে বা পড়তে সেটা সবক্ষেত্রে সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ ইংরেজি ভাষা বা স্প্যানিশ ভাষাও কিন্তু খুব মৌলিক না। তাতে প্রচুর নানান ভাষার সংমিশ্রণ ঘটছে। এযুগে এসে এই সংমিশ্রণের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে গেছে। অন্যান্য ভাষা থেকে ইংরেজিতে বা ইংরেজি থেকে অন্যান্য ভাষায়, সবক্ষেত্রেই। ইংরেজির কথা বলছি যেহেতু তা আন্তর্জাতিকভাবে সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষা। কিন্তু মিশ্রণ সর্বত্রই হচ্ছে এবং আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে হচ্ছে। আমাদের অগ্রজগণ যেমন ইংরেজি orderly থেকে আর্দলি করেছিলেন। কিন্তু দুই ভাষাতেই আর এই শব্দটির ব্যবহার নেই। তবে প্রতিবর্ণী শব্দগুলো সাধারণত নিজস্ব ভঙ্গীতে উচ্চারিত হয়। যেমন, 'অর্ডারলি' না বলে বলেছি আর্দালি। তেমনভাবে অনেক শব্দের নিজস্বকরণ সম্ভব। যেহেতু উন্নত বিশ্বের বাজার আমাদের চেয়ে এগিয়ে তাই তাদের থেকে শব্দমালা আমাদের ধার করতে হবে স্বাভাবিক। নিজস্ব প্রতিশব্দ থাকলে ভাল, না থাকলে প্রতিবর্ণীকরণের মাধ্যমে নিজস্বকরণ চলতে পারে।
সাক্ষী সত্যানন্দের উপরোল্লেখিত পরামর্শটুকু এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

হিমু এর ছবি

ইংরেজি ভাষা বা স্প্যানিশ ভাষাও কিন্তু খুব মৌলিক না। তাতে প্রচুর নানান ভাষার সংমিশ্রণ ঘটছে। এযুগে এসে এই সংমিশ্রণের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে গেছে। অন্যান্য ভাষা থেকে ইংরেজিতে বা ইংরেজি থেকে অন্যান্য ভাষায়, সবক্ষেত্রেই।

কোনো ভাষাই খুব মৌলিক না। নানা ভাষার সংমিশ্রণ ঘটবেই, সেটাই ভাষার ধর্ম। কিন্তু ইংরেজরা আমাদের সাথে যতোদিন মিশেছে, আমরাও তাদের সাথে ততোদিনই মিশেছি। কয়টা বাংলা শব্দ ইংরেজিতে ঢুকেছে, আর কয়টা ইংরেজি শব্দ বাংলায় ঢুকেছে, তুলনা করে দেখুন। আমাদের ভাত খাওয়া জিভে অর্ডারলির বদলে আর্দালি সহজে বেরোয়, কিন্তু তাতে যে চাপরাসি শব্দটার অস্তিত্ব আমাদের মনোযোগের আড়ালে চলে গেলো, সেটাও স্মরণ করতে হবে।

ভাষায় বিদেশি শব্দ ঢোকার বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আমরা যে আত্মশক্তি বিসর্জন/বিস্মরণ করে ইংরেজি শব্দগুলো নিয়েছি, সেখানে সমস্যা। আমরা তো জার্মান শব্দ নিইনি, ফরাসি নিইনি, স্প্যানিশও নিইনি। আমরা নিয়েছি আমাদের দখলদারদের ভাষা, ফারসি আর ইংরেজি। সেটাও নাহয় মেনে নিলাম। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে চেয়ারের বাংলা আমরা বলি কেদারা। অথচ কেদারা এসেছে পর্তুগিজ CADEIRA থেকে। আমি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বয়স্ক মানুষের মুখে চেয়ারকে কুর্সি বলতে শুনেছি। অনেকে এগুলো সবকিছু অস্বীকার করে চেয়ারের বাংলাও চেয়ার বলতে চান। অথচ চেয়ারের বাংলা আসন। মোগল বা ইংরেজ যখন আমাদের ভূমি দখল করে, তখন "উন্নত বিশ্বের বাজার" খুব এগিয়ে ছিলো না। কিন্তু আমরা আসন ভুলে গিয়ে একে একে কুর্সি, কেদারা, চেয়ার, সবই ব্যবহার করেছি/করছি/হয়তো করবো। বাজারের ঘাড়ে এটাকে না চাপিয়ে আমাদের হয়তো নিজেদের দিকে আরেকবার তাকানো দরকার।

আর শব্দমালা ধার করতে হবে, এটা তখনই "স্বাভাবিক", যদি আমরা স্বভাবে অলস, কল্পনাবিবর্জিত এবং পরিভাষাবিমুখ হই।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

যখন থেকে আমরা বাঙলা ভাষার চর্চাকে কম গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছি তখন থেকেই হয়ত আমরা আত্মমর্যাদার অভাবে পড়েছি । তার আরেকটি কারণ আমরা অধিকাংশ সময় পরাধীন ছিলাম। আমাদের শাসকরা ছিলেন ফার্সি বা সংস্কৃত চর্চায় মগ্ন। আর্যরাও আমাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করেনি কখনও। তখনকার বিদ্বানরা ছিলেন আরবি, ফার্সি শিক্ষিত আর ইংরেজ পরবর্তীরা ছিলেন ইংরেজি শিক্ষিত।
পরবর্তীকালে স্বাভাবিকভাবেই সমাজের বিদ্বান ব্যক্তিদের অনুকরণে এসব শব্দকে গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত হয়ে জনগণ ভাষায় তার সংমিশ্রণ ঘটায়। আর এখনকার নতুন প্রজন্মের কথাতো আপনি উপরে একটা মন্তব্যে বলেছেন। তারা হিন্দি সংস্কৃতির মোহনীয়তায় মুগ্ধ। আমরা যারা বাঙলা ভাষার চর্চায় উৎসাহী তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

বাজারের যেদিকটায় আমি ইঙ্গিত করেছি তা মূলতঃ প্রাযুক্তিক বা অন্যান্য আনকোড়া শব্দগুলোর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাজারের অগ্রসরমানতার কারণের আমি তাদের সবধরনের শব্দকে ধার করতে মোটেও আগ্রহী না। সেসব নবউদ্ভাবিত নামের ক্ষেত্রে যদি আমাদের নিজস্ব পরিভাষা থাকে তাহলে ভাল; না থাকলে প্রতিবর্ণীকরণের ক্ষেত্রে আসবে ধারের প্রশ্ন।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

সুশান্ত কর এর ছবি

দারুণ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।