ছেলেটি ছিলো চাবুক, মেয়েটি মেঘ। ছেলেটির চোখে জ্বলতো মস্কো থেকে হাভানা, মেয়েটি বেলতো ফুলকো লুচি। ছেলেটি শ্লোগানে কাঁপাতো জারুল-শিরীষ-হাবিলদার-বর্ষায়টানারিকশারপর্দা, মেয়েটি খন্দকার ফারুক আহমেদের কণ্ঠের সন্ধানে রেডিওর নব ঘোরাতো আলগোছে। ছেলেটি আউরেলিয়ানো বুয়েনদিয়ার স্পর্ধা আড়চোখে নিয়ে চাইতো মেয়েটির দিকে, মেয়েটি সরল চোখ তুলে বলতো, পিষে ফ্যালো মনজুরুল।
তারপর কী থেকে কী হয়ে গেলো, দু'জন ছিটকে গেলো দু'দিকে। শ্লোগানগুলো বাসি হয়ে গেলো থালার প্রাচীনতম লুচির মতো, রেডিওতে জমলো ঝুল, ঈশান থেকে নৈঋতে মেঘের কোমরে জমলো চাবুক-না-চাখা মেদ। দুনিয়ার মজদুর দুনিয়ার দুরমুজের নিচে এক হোলো না আর, খন্দকার ফারুক আহমেদের নাম ভুলে গেলো টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। ছেলেটি একদিন ওমরা সেরে দেশে ফিরে এক বোতল জমজমের পানি নিয়ে কলিংবেলে স্মৃতিঘন চাপ দিয়ে খোলা দরজার ওপাশে অনিমেষ চেয়ে বললো, আচ্ছালামু আলাইকুম ভাবী, ভালো আছেন? মেয়েটি কী এক আশঙ্কায় পুত্রবধুর ওড়না হাওলাৎ এনে গায়ে জড়িয়ে বললো, জাজাকাল্লাহ খায়ের।
মন্তব্য
অসাধারণ! এত বড় প্রসঙ্গের লেখা এত সংক্ষেপে ফুটিয়ে তোলবার জন্য !!
আপনি অমানুষ, এইটা পড়ার পর থেকে খালি খ্যা খ্যা করে হাসছি। এতদিন কই লুকায় ছিলেন হিমু ভাই?
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরের লিংকগুলোর ভরসা নাই। দুইদিন পরে দেখা গেলো সব মুছে ফেলেছে। তাই কয়েকটা জিনিস বরং এখানে জমিয়ে রাখি।
সিলেটটুডে২৪-এর ১৭ই জানুয়ারি, ২০১৭-এর খবর ও ছবিঃ
"পবিত্র ওমরাহ পালন করলেন দেশের অন্যতম প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা মনজুরুল আহসান খান। ওমরাহ পালনকালে সবার জন্য তিনি দোয়া করেছেন। কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক এই সভাপতি ঢাকা থেকে ১২ জানুয়ারি মক্কার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। মনজুরুল আহসান খান ২৫ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরছেন।"
"ওমরাহ পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করে মনজুরুল আহসান বলেন, বামপন্থিদের সবার মাথায় যাতে বুদ্ধি আসে, সেজন্যও আমি দোয়া করেছি।"
http://imgur.com/RgV8UYg
বুদ্ধিহীন বামপন্থীদের মাথায় বুদ্ধি আসুক। সবাই খান-হক-খান সাহেবদের মতো হজ্জ্ব-ওমরাহ্ করে লাইনে চলে আসুক।
খোরমা আর আবে জমজম পাওয়া-না-পাওয়া নিয়ে বাম মহলে নতুন করে কোনো বিভক্তি বা মেরুকরণ হবে না আশা করি। ইয়া আল্লাহ তুমি দেশের সকল মজহাবের বামকে সালামতে রাখো।
দিলেন তো আরেকটা গুড় লাগিয়ে! এমনিতেই হালুয়া-রুটি-জলপাইয়ের ভাগাভাগি নিয়ে সেই কিযিলবাশী খাঁ সাহেবদের পাক আমল থেকে নানা মজহাবে হাঙ্গামা-হুজ্জত আছে। এ'নিয়ে কত হালাল করার ঘটনা ঘটে গেলো। এখন আপনি খোরমা আর আবে জমজমের হিস্সার সওয়াল তুলে আরেক ফিৎনার শুরুয়াত করে দিচ্ছেন। তামাম মাজহাবের ইত্তিহাদ হাছিলের জন্য দু'আ করা ছাড়া এখন আর কোন রাহা নেই।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
অসাধারণ!অণুগল্প হলেও ব্যাপ্তিতে যেন মহাভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। বামের বিধিতে এই ছিল?
অনেকদিন পর লিখেছেন হিমু। অর্থহীন একজন মানুষকে নিয়ে অপ্রয়োজনীয় একটি লেখা। নিজের প্রতি এ আপনার অবিচার।
-মোখলেস হোসেন।
আমরা অনেকেই কারো লেখার বিচার করতে বসে মাঝেমধ্যে "অপ্রয়োজনীয়" শব্দটা ব্যবহার করে ফেলি। অন্যের প্রয়োজন ঠিক করে দেওয়ার অধিকার আমাদের আদৌ আছে কি না, সে বিবেচনা আর করি না। আমি এ বদভ্যাসটা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি বেশ কিছুদিন ধরে। আপনিও চাইলে সে যাত্রায় শামিল হতে পারেন।
সাব্জেক্টিভ বিচারের সমস্যা এটাই হিমু, বিশেষ করে বিচারের রায় যখন হয় ঋণাত্মক। যদি বলতাম দারুণ প্রয়োজনীয় একটি লেখা লিখেছেন তাহলেও কি একই প্রশ্ন তুলতেন? লেখাটি পড়ে আমার যা মনে হয়েছে তাই বলেছি। আপনার উপলব্ধি বলছে এটি বদাভ্যাস, সেটাও সাব্জেক্টিভ। যেমন সাব্জেক্টিভ ‘দুর্বলতায় রবীন্দ্রনাথ……’ বইটি।
পরিভাষা নিয়ে আপনার আগ্রহের কথা জানি বলেই একটা জিজ্ঞাসা - সাব্জেক্টিভ শব্দটার উপযুক্ত বাংলা কী? আমার কাছে অভিধান নেই। গুগল করে যা পেলাম তাতে মনঃকল্পিত বেশ কাছাকাছি শোনালেও মনে ধরেনি।
ভালো থাকবেন।
মোখলেস হোসেন।
আমি কোনো প্রশ্ন তুলিনি আসলে। শুধু জানিয়েছি, আমার প্রয়োজন আপনি ঠিক করে দিতে পারেন না। সে কাজের ভার নিতে গেলে সূক্ষ্ম একটা দাগের ওপাশে পা পড়ে যায়, ব্যাপারটা অস্বস্তিকর হয় তখন। আপনি আমার অভিভাবক নন, আমিও আপনার নাবালক আশ্রিত নই। লেখা পড়ে আপনার নেতিবাচক (ঋণাত্মক হয় শুধু পরিমেয় জিনিস) কিছু মনে হলে স্বচ্ছন্দে বলবেন, সেটা পাঠক হিসেবে আপনার অধিকার।
সাবজেক্টিভের বাংলা হিসেবে ব্যক্তিক আর অব্জেক্টিভের বাংলা নৈর্ব্যক্তিক ব্যবহৃত হতে দেখেছি। আরো লাগসই কিছু আছে সম্ভবত, মনে পড়ছে না এখন।
কোন কোন লেখার জন্ম হয় স্রেফ ইচ্ছে থেকে। কিছু কিছু লেখা পড়লে মনে হয় না লিখে থাকতে পারেননি লেখক।
হিমু আমার নাবালক আশ্রিত নন, আমি হিমুর অভিভাবক নই। আমি তাঁকে দিক নির্দেশনা দেইনি, বুঝতে চেষ্টা করেছি মাত্র। হিমুকে আমি কখনো দেখিনি, চিনিনা। সচলায়তনে প্রকাশিত লেখাগুলো পড়ে একটা ধারণা জন্মেছে তাঁর চিন্তা-ভাবনা-জীবনবোধ নিয়ে। হিমুকে আমি জেনেছি তাঁর লেখার মাধ্যমে। আমার এই জানাটা সাব্জেক্টিভ। ‘বলদের অভিশাপ’ এর হিমু আর ‘বিধি ও বাম’ এর হিমু আমার কাছে এক ব্যাক্তি নন। ‘বিধি ও বাম’ আমার মতে ইচ্ছেলেখা। তবে ভালো লেখকের ইচ্ছেলেখাও সুপাঠ্য। আপনি একজন ভালো লেখক, হিমু।
আচ্ছা, ওই সূক্ষ্ম দাগটা ঠিক কোথায়? কে টানেন, আর চোখেই বা পড়ে কার!
মন্তব্যটি প্রথমে পাঠিয়েছিলাম প্রায় বাইশ ঘণ্টা আগে। ঘণ্টা দশেক অপেক্ষা করে বুঝলাম আতিথ্য জোটেনি। আবার পাঠানোর সময় ইচ্ছে করেই ‘নেতিবাচক' মুছে ‘ঋণাত্মক' লিখেছি। ধারণা ছিল চোখে পড়বে এবার।
---মোখলেস হোসেন।
মনে পড়ে গেলো অস্টিন পাওয়ারস: ইন্টারন্যাশনাল ম্যান অফ মিস্ট্রির সেই "হোয়াট'স ইয়োর পয়েন্ট, ভ্যানেসা?" মুহূর্ত।
হা হা হা। শুভেচ্ছা হিমু।
----মোখলেস হোসেন।
সাহিত্য জীবনের প্রতিচ্ছবি, তাই চলমান ঘটনাবলী সাহিত্যে উঠে আসা স্বাভাবিক। আনুষ্ঠানিকভাবে রচিত ইতিহাসে যে বিষয়গুলো কখনো অন্তর্ভূক্ত হয় না সাহিত্য সেই অ্যানেকডোটগুলো তুলে রাখে। ভবিষ্যতের ঐতিহাসিকেরা ঐসব অ্যানেকডোট থেকে নতুন করে ইতিহাস নির্মাণ করেন বা ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দেন। ষাটের দশকের 'হট-গ্ল্যামারাস-সেক্সি' বামেরা চার-সাড়ে চার দশক পরে কী নির্লজ্জ রকমের ডিগবাজী খাচ্ছে সেটার অ্যানেকডোটগুলো গল্পে তোলা থাকলে আজ থেকে আরও আড়াই-সাড়ে তিন দশক পরে আজকের 'হট-গ্ল্যামারাস-সেক্সি'গ্রুপগুলো যখন পল্টি খেতে থাকবে তখন সেটাকে কোন আৎকা ঘটনা বলে মনে হবে না। বরং একটু মনোযোগী পর্যবেক্ষক ডিগবাজীর দিকে ক্রমধাবমান ধারাটিকে আরও আগে থেকে আরও ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
হা হা ! আপনি পারেনও!
বাহ! কি দারুন! তোমার লেখা মিস করি।
অনেকদিন পর ফরজে কিফায়া আদায়পূর্বক মন্তব্যের সুযোগ হলো। শুধু বলি
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন