• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

বিচিত্র পেশা ১: দেহরক্ষী পায়োনিয়ার

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: রবি, ০৭/০৫/২০১৭ - ৮:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কয়েক বছর ধরে স্যারের হয়ে কাজ করছে জয়নাল হাটিকুমরুলি। খাটনির তুলনায় বেতন খারাপ না। দুই ঈদে বোনাসও দেন স্যার। ছুটি তেমন পাওয়া যায় না অবশ্য, কারণ কখন কোথায় স্যারের ডাক পড়ে, আর তাঁর সাথে তাকে ছুটতে হয়, তার তো কোনো ঠিক নেই।

দুঃখ একটাই।

ছেলেবেলা থেকেই রোদচশমার প্রতি জয়নালের এক দুর্বার আকর্ষণ ছিলো। স্কুলে একদিন জেনারেল উনি স্বয়ং পরিদর্শনে এসেছিলেন, ক্লাস ক্যাপ্টেন সেদিন হামে ভুগে ক্লাস কামাই করেছিলো বলে জয়নালের কাঁধেই সেদিন এগিয়ে গিয়ে জেনারেলের সাথে করমর্দনের গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে। জেনারেলের রোদচশমা দেখে জয়নাল খেই হারিয়ে ফেলে বারবার হাত ঝাঁকাচ্ছিলো, তিনি স্মিতমুখে বলেছিলেন, "দ্যাটস ইনাফ ইয়ংম্যান। ফল ব্যাক।"

এরপর প্রতিদিন সকালেই ঐ রোদচশমাটা যেন এক মস্ত বাদুড় হয়ে ডানা ঝাপটাতো জয়নালের রোদরাঙা মনে। ওরকম একটা স্মার্ট জেনারেলোচিত রোদচশমা তাকে পেতেই হবে। বাসনাটা আবদার হয়ে মা পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিলো জয়নাল। জবাবে বাবা হঠাৎ একদিন দাঁত খিঁচিয়ে ছুটে এসে জুতোপেটা করলেন কয়েক দফা। রোদচশমার সাথে এ-ক্লাসে ও-ক্লাসে কয়েক বছর ফেল করার কী সম্পর্ক, বাবা ব্যাখ্যা করেননি। হয়তো রোদচশমার অভাবে অতিরিক্ত রোদ লেগেই লেখাপড়ায় খানিক খাবি খেয়েছে সে। কিন্তু যুক্তির চেয়ে জুতো হাতের নিকটতর হলে কোন বাবা ঠাণ্ডা মাথায় খতিয়ে ভাবেন?

তবে বড় হয়ে তার দুঃখ ঘুচেছে। চাকরি নিয়ে বিডিআরে ঢোকার পর প্রথম কয়েক মাসের বেতন জমিয়ে সিঙ্গাপুরগামী এক পাড়াতো দোস্তের হাতে তুলে দিয়েছে জয়নাল। তার হাত ধরে জয়নালের দু'কান চেপে ধরেছে ছিপছিপে কুচকুচে তারাদ্রোহী এক রেব্যান চশমা। সূর্যের বাপেরও সাধ্য নেই তাকে গলে কোনো রেটিনা ছোঁয়ার। জয়পুরহাট সীমান্তে সে চশমা চোখে দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে দিনের পর দিন ডিউটি দিয়েছে জয়নাল।

ডিএডির বদনজরে পড়ার পর আচমকা একদিন কী এক জটিল চক্রান্তে আরামের চাকরিটা খোয়ানোর পর জয়নাল অবশ্য চোখে অন্ধকার দেখছিলো সাধের চশমাটা ছাড়াই। কয়েক হপ্তা বাড়িতে নিরানন্দ বসে থেকে হঠাৎ তার নজরে আসে পত্রিকার বিজ্ঞাপন। দেহরক্ষী চাই। সামরিক প্রশিক্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক। বিজ্ঞাপনে মেন ইন ব্ল্যাক ২ সিনেমার পোস্টার থেকে লোপাট করা উইল স্মিথ আর টমি লি জোনসের ছবিও জুড়ে দেওয়া। জয়নালের বুকটা ধুকপুক করে উঠেছিলো তখন।

তড়িঘড়ি করে উপজেলার সবচে খরুচে নাপিতখানায় বসে বাটিছাঁট ছাঁটিয়ে স্টুডিওতে গিয়ে ভাড়াটে কোট-টাই আর স্বোপার্জিত রোদচশমা পরে ছবি তুলিয়ে আবেদনপত্র পাঠিয়ে বাড়ি ফিরে আসে জয়নাল। হপ্তা না ঘুরতেই ফোন আসে, সাক্ষাৎকারের ডাক।

স্যারের আপিসে গিয়ে জয়নালের তাক লেগে যায়। লবিতে একটি রুগ্ন খেজুর গাছ ঘিরে ছুটছে ফোয়ারা। সর্বত্র চাঁদিছোঁয়া ঝাড়বাতি ঝুলছে, মেঝেতে নরম গালিচা। দেয়ালে আইয়ুব খান, সৌদি বাদশা ফয়সল আর রাণী এলিজাবেথের ছবি। বাতাসে আতর-গোলাপের সুগন্ধ। রবাবের ঝঙ্কারের সাথে আরবি গান বেজে উঠছে থেকে থেকে। সুন্দরী সেক্রেটারি এসে তাকে এ শ্বাসরুদ্ধকর পবিত্র বাতাবরণ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় স্যারের সকাশে।

স্যারকে দেখে জয়নাল মুগ্ধ হয়ে যায়। তার মনে পড়ে যায় জেনারেল উনির সাথে করমর্দনের সেই সংকটক্ষণের কথা, যখন রোদচশমার প্রথম ঘোর লাগে তার মনে। স্যারও এক দুর্ধর্ষ রোদচশমা পরে গম্ভীর মুখে ঘরে বসে আছেন, স্যুটবুট পরা দুই নিষ্ঠুর চেহারার যুবতী তাঁর পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে, যেন হুকুম দিলেই পকেট থেকে কামান বের করে গোলা ছুড়ে বিশ্বজগৎ ধ্বংস করে দেবে তারা।

দু'চার কথায় জয়নাল হাটিকুমরুলির সব পেশাদারি বৃত্তান্ত জেনে নেন স্যার। জয়নাল ঐ চশমাজোড়ার কালো গহ্বরে হারিয়ে গিয়ে ভগরভগর করেই যাচ্ছিলো, কিন্তু স্যার স্মিতমুখে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, "দ্যাটস ইনাফ ইয়ংম্যান। ফল ব্যাক।"

জয়নাল হৈমন্তীর স্বামীর মতো ঘাড়মোড় ভেঙে পড়ে সে কথা শুনে। সেই চশমা, সেই হাসি, সেই বুলি। এই স্যারের দেহগাছে জেনারেলই যেন ফুল হয়ে ফিরে এসেছেন। ছলোছলো চোখে সে চেয়ে থেকে হাতজোড় করে কেবল। স্যার মুচকি হেসে এক যুবতীর বাড়িয়ে ধরা শিশায় লম্বা টান দিয়ে বলেন, "কিন্তু একটা শর্ত আছে। রোদচশমা পরা বারণ।"

জয়নালের বুকটা ভেঙে খানখান হয়ে যায়। রোদচশমা পরে স্যার তাকে মানা করছেন রোদচশমা পরতে? এ কেমন ইনসাফ?

জয়নালের দুঃখমাখা মুখের দিকে চেয়ে স্যার নিষ্ঠুর মুচকি হাসেন, তারপর আরেক যুবতীর দিকে ফিরে ইশারা করেন।

মেয়েটি হাওয়ায় ডিগবাজি খেয়ে কিছুক্ষণ মারাত্মক কুংফুর প্যাঁচ কষায়, তারপর ছুটে গিয়ে জানালার ভেনিশীয় পর্দার কলকাঠি নেড়ে ঘরটাকে আঁধার করে দেয়। শিশা নামিয়ে রেখে অপর যুবতী কী একটা যন্ত্রের বোতাম টেপে, আবছায়ায় ডুবে থাকা ঘরে একটা আলোর রশ্মি গিয়ে আছড়ে পড়ে দেয়ালে ঝোলানো সাদা পর্দায়। জয়নাল রোদচশমা ছাড়া অসহায় বোধ করে সে অসহ্য আভায়, কোনোমতে চোখ কুঁচকে সে পর্দায় ফুটে ওঠা ছবিটা দেখতে পায়।

স্যারের ছবি। রোদচশমা পরে দাঁড়িয়ে আছেন কোনো এক ঘরের সিঁড়িতে। তার দু'পাশে এ ঘরের দুই যুবতী। তার সামনে পেছনে আরো কয়েকটি দীর্ঘদেহী লোক। সবার পরনে কালো কোটপ্যান্ট, সাদা শার্ট, চকচকে সাদা জুতো, আর কৃষ্ণবিবরের-সাথে-পাল্টি-নিতে-সক্ষম রোদচশমা।

স্যার ছবিটা দেখিয়ে গমগমে গলায় বলেন, "এরা সবাই আমার বডিগার্ড। কুংফু, কারাতে, বলীখেলা, সবকিছুতে এরা এক্সপার্ট। এরাই আমার ডার্টি ডজন।"

আলোর ঝাঁঝে জয়নালের চোখ দিয়ে দরদর করে জল গড়াচ্ছিলো, সে কোনোমতে গুণে দেখে, ছবিতে স্যার বাদে এগারোজন আছে। গলা খাঁকরে সে শুধায়, "কিন্তু ছার, ডজন তো বারোজনে হয়।"

স্যার সহাস্যে বলেন, "তুমিই সে ভাগ্যবান দ্বাদশ বডিয়াল। ইউ উইল বি দ্য পায়োনিয়ার। সব সময় দলের আগায় তুমি প্রস্তুত থাকবে। এখন যাও, আমার সেক্রেটারি মিস মোনালিসা তোমাকে জয়েনিং লেটার ইস্যু করবে।"

জয়নাল মিনতিভরা কণ্ঠে বলে, "কিন্তু ছার, উনারা সবাই তো রোদচশমা পরে। আমি কি মাঝেমধ্যে...।"

স্যার এবার চোখ থেকে চশমা খুলে তার দিকে সটান তাকান। জ্বলন্ত সে কুঁতকুঁতে চোখজোড়া দেখে জয়নাল খাবি খায়।

স্যার চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন, "দলের সবাই যদি কালাচশমা পরে, তাইলে আন্ধাইর সরকারি আপিসের ভিত্রে একবার ঢুইকে পইড়লে হাত ধইরে ধইরে আগায় নিবে কিডা? যদি উষ্টা খাই, চিকিশ্যের টেকা তুই দিবি?"


সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক সংযোজন। এ গল্পের সাথে এ ছবির কোনো সম্পর্ক নাই।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

প্লট টুইস্টঃ স্যারের পাশে সানগ্লাস ছাড়া দাঁড়ানো নিষেধ। হাল বাংলায় যাকে বলে প্রোটকল বিরুদ্ধ। হঠাত করে স্যারের পাশে জয়নাল হাটিকুমরুলি পরিচয় দেয়া লোকটা আসলে কে? এ কি প্রকৃত জয়নাল? নাকি জয়নালের ছব্দবেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারি আর কেউ?

গগন শিরীষ  এর ছবি

ম্যাট্রিক্স এর মত ভাবসাব দেখি!

অতিথি লেখক এর ছবি

চিন্তাভাবনা-১: জয়নালের খোমাখান দেহি মোহাম্মদ আলীর নাহান লাগে!

চিন্তাভাবনা-২: ছার আগে খালি নুলা আছিলো, অখন শুনলাম বোবাও নাকি হইছে। তাইলে কতাবার্তা যা কওনের তা কি জয়নালেই কইবো!

চিন্তাভাবনা-৩: এই বেছহীহ্‌ তছবিরটাতে জয়নালের চোখে কালাচশমা ক্যান! আর পাশের ঢিশটিং ঢিশটিং আফার চোখে সাদা চশিমা ক্যান!

ছবি

সুজন চৌধুরী এর ছবি
এক লহমা এর ছবি

=))

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি এর ছবি

:))

এই লোকের নামই কী 'প্রিন্স' তাহলে কিছু বলার নাই। নাম না হলে এমন বেহুদা টাইটেল ব্যবহারের মাজেজা কী?

সোহেল ইমাম এর ছবি

8)

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

8) চাল্লু!
তবে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক একটি সংযোজনের মাধ্যমে কারো কারো রোদচশমা নিষ্ঠুরভাবে কেড়ে নেওয়ায় খুবই দুক্ষু পাইলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।