১.
ইংরেজিতে ভোজ্য প্রাণী আর তার মাংসের নাম দু'রকম। এ খিটকেল বাংলায় নেই। গরুর মাংসকে আমরা গরুর মাংস বলি, ঝামেলা শেষ। কিন্তু ইংরেজিতে গরু হচ্ছে কাউ, কিন্তু তার মাংস বিফ। বাছুর কাফ, কিন্তু তার মাংস ভিল। ভেড়া ল্যাম্ব, কিন্তু তার মাংস মাটন। হরিণ ডিয়ার, কিন্তু তার মাংস ভেনিসন। শূকর হগ/পিগ/বোর/সোয়াইন, কিন্তু তার মাংস পর্ক। সেদিন এক ভিডিওতে জনৈক পণ্ডিতের কাছে এর চমৎকার একটা ব্যাখ্যা পেলাম। ইংরেজিতে মাংসবাচক শব্দগুলো ফরাসি থেকে এসেছে, যখন ইংল্যান্ড শ'তিনেক বছর ধরে ফরাসি দখলে ছিলো। জ্যান্ত প্রাণীগুলোর নাম অ্যাংলো-স্যাক্সন রূপ নিয়ে রয়ে গেছে, কারণ ওগুলো পেলেপুষে সরবরাহের দায়িত্ব ছিলো বিজিত ইংরেজের। আর সে দুর্মূল্য পশু কেটেকুটে রেঁধে পরিবেশন করা হতো বিজয়ী ফরাসিভাষী কেষ্টুবিষ্টুদের। ছোটোলোক যোগানেওলার ভাষায় তাই জ্যান্ত প্রাণীর নাম টিকে গেলো, অভিজাত খানেওলার ভাষায় রয়ে গেলো মাংসবাচক নামগুলো।
বাংলায় ইংরেজি একই খান্দানব্যঞ্জক ভূমিকা পালন করছে। মৈথুনঋতুতে মৈথুনার্থী প্রাণী বা পাখি যেমন নিজ নিজ কুঁজ-পালক-পেখম-ঝুঁটি-শিং-ঠোঁটের আকার বা রং দিয়ে সঙ্গিনীকে নিজ সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করে, বাঙালির কথার চটপটিতে দু'চারটা ইংরেজি শব্দ ফুচকাচূর্ণের মতো তেমন ছড়ানো থাকে, "আমি কিন্তু লেখাপড়া জানি, বুইঝেন কৈলাম!" তাছাড়া ইংরেজি শেখা এখনও কঠিন (এবং খরুচে), ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা আরো। এ কারণে যে পুরো কথোপকথন ইংরেজিতে চালাতে পারে না, সে দুয়েকটা বাক্য বলে। যে বাক্য অব্দি যেতে সাহস পায় না, সে শব্দ বলে। যে শব্দও ঠিকমতো এস্তেমালে অপারগ, সে বয়ে শূন্য র-টাকে ঠেলেঠুলে ড-য়ে শূন্য ড় বানিয়ে দেয়। পুরনো কৌটার গায়ে "ডানো" লেখা থাকলেও, সম্ভাবনা প্রবল যে সবসময় কৌটার ভেতরে গুঁড়ো দুধ থাকে না; মুড়ি কিংবা ছাতুও থাকতে পারে। যদি একজন অশিক্ষিত বাঙালির সাথে একজন শিক্ষিত বাঙালির পার্থক্য শুধু ইংরেজি শব্দচয়নেই থাকে, আর বিশ্বসংসার সম্পর্কে দু'জনের দৃষ্টিভঙ্গি কমবেশি একই রকম হয়, তাহলে বুঝতে হবে ঐ শিক্ষায় খানিকটা "কিন্তু" আছে; একজনের মুড়ি ঠোঙায়, আরেকজনের ডানোর কৌটাতে।
বাংলায় অহৈতুকী ইংরেজির যে ছড়াছড়ি, এর পেছনে এই খান্দানব্যঞ্জকতার আশা (কিংবা বলা যেতে পারে অখান্দানব্যঞ্জকতার আশঙ্কা) একটা ভূমিকা পালন করে কি? যার সম্বল মুড়ি, সে কি ডানোর কৌটাকেই সবচে আপন ভাবে? ভাবছি।
আমাদের উচ্চশিক্ষার একটা বড় অংশ যেহেতু ইংরেজিতে, জ্ঞান অর্জন, চর্চা, বর্ধন আর প্রকাশও প্রথমে ইংরেজিতে ঘটছে। যদি এর খানিকটা বাংলায় ভাষান্তরিত না হয়, তাহলে সে জ্ঞানে ভাগ বসানোর জন্যে দেশের আরেকজন মানুষকে কিছু টাকা ইংরেজের পকেটে ঢোকাতে হয়। উপনিবেশের যে শুঁড়গুলো এখনও চুপচাপ আমাদের রস শুষে যাচ্ছে, তার মাঝে ভাষা একটি। ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা এখনও তাদের পদার্থবিদ্যা-রসায়ন-গণিতের জ্ঞান বিপুল অর্থ ব্যয় করে ইংরেজকে দিয়ে যাচাই করায়।
শিব্রাম চকরবরতির একখানা গল্প পড়েছিলাম কৈশোরে, "পিগ মানে শুয়োরছানা", যেখানে রেলে মালবাবু গিনিপিগকে শুয়োরের হারে মাশুল আদায় করতে বসেন। কিছুদিন আগে এমনই এক ঘটনা শুনলাম, দেশের একটি দূরদর্শনমাধ্যমে "গাছের কাণ্ডের কোষ থেকে কিডনি তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা" গোছের শিরোনামে একটি খবর প্রচারিত হয়েছে। স্টেম সেল থেকে বৃক্ক-যকৃৎ-হৃৎপিণ্ড সবই তৈরি করা সম্ভব, সে পথে অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক কিছুদূর এগিয়েছেন, সাংবাদিক সেটিকে "স্টেম = গাছের কাণ্ড" "সেল = কোষ" ধরে খবর হাঁকিয়ে দিয়েছেন। সবাই বেচারাকে ধরে ডলে দিয়েছে। ইংরেজি পারিস না হতভাগা! কত্তবড় সাহস! এ রাগ যৌক্তিক, যেহেতু ইংরেজি সংবাদমাধ্যম থেকে খবর বাংলা করেই বেচারা কাজ চালাচ্ছে, ইংরেজি ভাষায় তার প্রাথমিক দখল আমরা আশা করতেই পারি। কিন্তু একটি ব্যাপার আড়ালে রয়েই গেলো, স্টেম সেলের কোনো বাংলা বিকল্প জীববিদ্যার কোনো পণ্ডিত আমাদের জন্যে যুগিয়ে দেননি। এ কাজটা একান্তই একজন বাঙালি পণ্ডিতের করণীয়, তিব্বত থেকে কোনো সাধু এসে তো করে দেবেন না। এই যে স্টেম সেল (যেটাকে এখন বাংলায় নিধিকোষ বলছেন কয়েকজন বিজ্ঞানলেখক) নিয়ে ২০১৮ সালে সতেরো কোটি মানুষের দেশে তিরিশ কোটি মানুষের মুখে কথ্য একটি ভাষায় পারিভাষিক চর্চা হচ্ছে না, এটা তো ঐ সাংবাদিকের দোষ নয়?
লেখাপড়া ঝামেলার কাজ, নিজের আখেরটা গোছানো হয়ে গেলে কেউ ফিরে নিজের অধীত বিষয় বাংলা করার হ্যাপা পোহায় না, এটাই সত্য। আর এ সত্যই ঘুরে এসে আমাদের পাছুতে গাছের কাণ্ড থেকে বানানো কিডনি হয়ে কামড়ে দেয়, ওটা আরেকটা সত্য।
সত্যেন বোস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু পদার্থবিজ্ঞানই পড়াতেন না, তিনি বাংলাও পড়াতেন, পড়েছিলাম ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি লেখায়, যিনি অধ্যাপক বোসের স্নেহভাজন ছিলেন। পদার্থবিদ্যা নিয়ে সত্যেন বোস সাবলীল বাংলায় লেখালেখি করেছেন বিস্তর, স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধীত অনেক বিষয়ের ওপরও। কিন্তু তিনি ব্যতিক্রম। বাংলায় কাঁচা রয়ে যাওয়া যেহেতু আমাদের শিক্ষিতসমাজের একটি বড় অংশের সমস্যা, বর্তমান পণ্ডিতদের পক্ষেও সাবলীল বাংলায় পারিভাষিক বিস্তারসাধন একটি জটিল কাজ। যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাংলা বিভাগের শিক্ষক/গবেষকরা তাঁদের ভিনবিভাগীয় সহকর্মীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামেন, তাহলে হয়তো কাজের কাজ হতে পারে। না-ও পারে।
২.
নতুন বাংলা শব্দ কি সাহিত্যিক প্রকাশের একটি রূপ নয়? উপন্যাস যেমন, গল্প যেমন, কবিতা যেমন?
আমার ধারণা, উত্তরটি ইতিবাচকেই দিতে হবে। আমরা যদি কোনো লেখকের যাবতীয় সাহিত্যকর্মকে এক এক করে নিয়ে সেটির মোট শব্দসংখ্যাকে ১০ এর ঘাতে প্রকাশ করে ঘাতানুসারে সাজাই, তাহলে ব্যাপারটা হয়তো খানিকটা স্পষ্ট হবে। উপন্যাস সেখানে ৫ থেকে ৬ এর ঘরে ঠাঁই পাবে, উপন্যাসিকা ঠাঁই পাবে ৪ থেকে ৫ এর মাঝে, বড়গল্প ৩ থেকে ৪ এর মাঝে, গল্প ২ থেকে ৩ এর মাঝে, কবিতা ১ থেকে ২ এর মাঝে, এভাবে কমতে কমতে ঘাত যখন শূন্যে এসে ঠেকবে, তখন একটিমাত্র শব্দ আমরা পাবো। সাহিত্যমূল্য কি কলেবরের ওপর নির্ভর করে? আমরা বড়জোর ভিন্ন একটা নাম খুঁজে বের করি ঐ আকারের জন্যে। কিন্তু ক্রিসেনথিমামের বাংলা যে রবীন্দ্রনাথ চন্দ্রমল্লিকা রেখেছিলেন, সেটির মাঝে কি কাব্যের নির্যাস নেই?
দেখুন নিচের জ্ঞাপচিত্রটি:
এমন কি হতে পারে, নতুন শব্দ নির্মাণের মাঝে সাহিত্যমূল্য নেই ভেবেই এ পথে কেউ এগোচ্ছেন না? পটভূমি ছাড়া শব্দনির্মাণ কঠিন, তার সম্প্রসারণ আরো কঠিন। একটি সদ্যোজাত নতুন শব্দের প্রণেতা হওয়ার চেয়ে "অসম্ভব মায়াবতী" দিয়ে কাজ চালানো যদি লেখকের জন্যে সহজ হয়, তিনি পাকা রাস্তা ছেড়ে কেন জঙ্গুলে পথে হাঁটবেন? কিন্তু যদি ঐ এক একটি নতুন শব্দকে যদি তার মাতৃসাহিত্যকর্মের মাঝে রুশ পুতুলের মতো পৃথক আরেকটি নতুন অন্তর্লীন (Nested) সাহিত্যকর্ম হিসেবে আমরা চিনতে শিখি? যদি নতুন একটি লেখা পড়তে গিয়ে নিজেদের চোখ-কান খোলা রাখি টাটকা নতুন তন্দুর থেকে বের করে আনা ভাঁপ-ওঠা গরম শব্দের সন্ধানে?
যদি একটি নতুন ধারণার প্রবর্তন করি, "শব্দকার"? কবিতা যিনি লেখেন, তিনি যেমন কবি, ছড়া যিনি লেখেন, তিনি যেমন ছড়াকার, গল্প যিনি লেখেন, তিনি যেমন গল্পকার, উপন্যাস যিনি লেখেন, তিনি যেমন ঔপন্যাসিক, তেমনই একটি নতুন শব্দ যিনি ভাষায় যোগ করেন, তাঁকে যদি শব্দকার হিসেবে চিনতে শিখি আমরা, তাহলে লেখক কি আরেকটু মনোযোগী হবেন না তাঁর ভাষায় নতুন মণিমাণিক্য যোগ করতে?
প্রিয় লেখক, পাঠক হিসেবে আপনার কাছে আমার নিবেদন, একটু ভাবুন। লক্ষ শব্দের উপন্যাস নয়, অযুত শব্দের উপন্যাসিকা নয়, সহস্র শব্দের গল্পে নয়, শত শব্দের কবিতা নয়, আপনার মেধা-রসবোধ-জগদ্দর্শন-অভিজ্ঞতা-আকাঙ্খার তুমুল ঘোড়দৌড় চলতে পারে ঐ একটি, একটিমাত্র শব্দের আঙিনায়। এ যেন কলমের ডেক্যাথলন! এ যেন শেষ বলে মাহমুদুল্লাহর ছক্কা, এক তিরে অর্জুনের মৎস্যচক্ষুভেদ, এক গুলির ঘায়ে হাসিমুখো বাঘ এবং বন্দুকের-আওয়াজে-ঘটা হৃৎকম্পে বাঘের-মুখে-ধরা সহাস্য প্রধান বনসংরক্ষক ঘায়েল!
এক একটি নির্বিকল্প ইংরেজি শব্দকেই প্রথমে কাবু করি, আসুন। তারপর যা কিছু জটিল, এক-শব্দে-অপ্রকাশিত, এক এক করে বাংলায় গেঁথে তুলি। সবাইকে নববর্ষের বিলম্বিত শুভেচ্ছা।
মন্তব্য
দারুণ ব্যাপার। মুশকিল হচ্ছে নতুন শব্দগুলোকে প্রচলিত করে তোলাটা। বাগানবিলাস, চন্দ্রমল্লিকা অথবা অসম্ভব রূপবতী শব্দগুলো যে পদ্ধতিতে সবার কাছে পৌঁছেছে, সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটানো শব্দকারদের পক্ষে একটু দুরূহ হবে। কিন্তু তাতে হাল ছাড়ার কিছু নাই, বরং 'শব্দ' ছাড়ি জোরে।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
প্রচলনের "মুশকিল"টা শব্দকারের নয়, বাকি দুনিয়ার।
উদাহরণে যাই। রবীন্দ্রনাথ কেবল ক্রিসেনথিমামের বাংলা চন্দ্রমল্লিকা করেননি, সাঁওতালি টগরের বাংলা মহাশ্বেতা করেছিলেন। চন্দ্রমল্লিকা প্রচলন পেয়েছে, মহাশ্বেতা পায়নি। রবীন্দ্রনাথের কোনো শব্দ প্রচলনের পদ্ধতি থাকলে দুটোই প্রচলন পাওয়ার কথা। সেটা ঘটেনি। কারণ শব্দের প্রচলন শব্দকার ঘটান না, ঘটান তাঁর শব্দরসিক পাঠকবর্গ। এ কারণে রবীন্দ্রনাথ যে বিপুলসংখ্যক নতুন শব্দ প্রণয়ন ও প্রস্তাব করেছিলেন, তার মাঝে খুব অল্প কিছু একশ বছর পেরিয়ে আমাদের প্রয়োগে ঠাঁই পেয়েছে। তাঁর আর আমাদের মাঝে শব্দরসিকদের যে ক'টি প্রজন্ম ছাঁকনি হিসেবে কাজ করেছে, তাঁরা বাকিগুলো হাপিস করে দিয়েছেন। শব্দ এভাবেই বাঁচে-মরে, ঘুমায়-জাগে।
এখন লাভের প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রচলন না পেলে নতুন শব্দ লিখে লাভ কী? এ প্রশ্নে শব্দের জায়গায় গল্প-গান-কবিতা-উপন্যাস বসিয়ে খুঁজলেই উত্তর মিলে যাবে।
কিন্তু পাশাপাশি, নতুন শব্দ, নতুন সময়, নতুন মানুষ, তেমনই নতুন ফিকির। নতুন শব্দ গজালে নতুন কায়দাও গজাবে আশা করি। PLUS ULTRA, my friend, PLUS ULTRA!
- এটা হচ্ছে মোদ্দা কথা! এটা বুঝতে পারলে কর্তব্যকর্মটা আপনাআপনি নির্ধারিত হয়ে যাবে।
একটা প্রশ্ন উঠতে পারে, একটি বিদেশী শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ যদি পাঁচ জন লোকে পাঁচ রকম করে তাহলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে না? উত্তরটা সহজ, একটা শব্দের কি কয়েক হালি প্রতিশব্দ থাকতে পারে না! তাছাড়া কেউ যদি প্রতিশব্দ নির্মাণে ভুল করেন সেটা একসময় আপনাআপনি নাকচ হয়ে যাবে। একটা উদাহরণ দেই,
আশির দশকে বাংলা ভাষায় গণিতের বইয়ের লেখক অধ্যাপক গোলাম রহিম কাজী তাঁর লেখা বইগুলোতে parabola = অধিবৃত্ত এবং hyperbola = পরাবৃত্ত লিখেছিলেন। এই প্রতিশব্দ দুটো সঠিক ছিল না। বাংলা ভাষায় para = পরা আর hyper = অধি প্রচলিত আছে। সুতরাং parabola = পরাবৃত্ত এবং hyperbola = অধিবৃত্ত সঠিক। অধ্যাপক কাজী পরবর্তিতে তাঁর বই সংশোধন করেছিলেন কিনা জানি না, তবে বাংলা ভাষায় গণিতের লেখকেরা এই ভুলটি শুধরে নিয়েছেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
য়্যাকদম জায়গামতো!
কাজী স্যার একাই নন, আমাদের সময়েও পুরো গণিত পাঠ্যপুস্তকে প্যারাবোলা অধিবৃত্ত ছিলো (আমরা মনজুরুল হকের বই অনুসরণ করতাম)।
একটি ইংরেজি (বা যে কোনো ভাষার) শব্দের একাধিক বিকল্প সবসময় সমস্যা নয়, বরং সম্ভাবনা। এ পুরো আলোচনায় একটা জিনিস একেবারেই ধোঁয়াটে, সেটা হচ্ছে শব্দগুলোর বীজবপন, অঙ্কুরোদ্গম এবং মূলবিস্তারের প্রক্রিয়াটা সময়ের সাথে কীভাবে এগিয়েছে। এগুলো যে শ'খানেক বছর আগে তুমুল আলোচনা, পর্যালোচনা, তর্কের ভেতর দিয়ে গেছে, সেটা এখন বসে উপলব্ধি বা অনুমানের সুযোগই কম। গন্তব্যের সাথে যাত্রাও এখানে সমান গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের সামষ্টিক শব্দচিন্তায় এখন, বা এখনও, অনুপস্থিত।
কয়েকটা 'দ্রুম শতবর্ষ পুরনো আলোচনাগুলো নিয়ে লিখবো। সেগুলো আমাদের নতুন আলোচনার প্রারম্ভিকা হিসেবে কাজ করবে আশা করি।
বাংলা ভাষা নিয়ে পণ্ডিতদের বা আমজনতার আলোচনা বা গবেষণার ব্যাপারটা যে এখনো বেশ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে সেটা অনেকে বিবেচনায় নিতে চান না। তাই তারা ইংরেজী, ফরাসী, হিস্পানী ইত্যাদি ভাষার ক্ষেত্রে কয়েকশ' বছর ধরে ঘটে যাওয়া বিবর্তন, গবেষণা, আলোচনা, বিতর্ক, অনুসিদ্ধান্তের ইতিহাসকে বিবেচনায় না নিয়ে সেগুলোর অন্তফলের সাথে বাংলা ভাষার তুলনা করে কেবল হতাশা প্রকাশ করেন। অথচ এখানে হতাশ হবার বদলে গবেষণা-আলোচনাটা চালিয়ে যাওয়াটাই সঙ্গত। বাংলা ভাষার এই উন্নতি না হওয়াটা লজ্জার নয়, এটা পরিবর্তনের চেষ্টা না করাটা লজ্জার।
শতবর্ষের পুরনো আলোচনা নিয়ে লেখার পরিকল্পনাটি চমৎকার। এতে যারা ভাষার উন্নয়নের ইতিহাসের খবর রাখেন না তাদের কাছে ঐতিহাসিক পরিবর্তন আর পরিবর্তনের প্রচেষ্টার চিত্রটা স্পষ্ট হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
মাতৃভাষা চর্চার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের শুধু অবতারনাই নয়, একটা শূন্যতাকে বুঝে ওঠার পাশাপাশি একটা পথেরও আভাস উঠে এসেছে এই লেখায়
যারা ভাষাকে ভালবাসেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় একটি লেখা। ।।
শূন্যতার প্রসঙ্গটি তোলার জন্যে ধন্যবাদ, এটা নিয়ে সামনের পর্বে আরেকটু লিখবো। এ ব্যাপারে কিছুদিন আগে চমৎকার একটি আলোচনা পড়েছিলাম একটি বইয়ে, দেখি কতোটা প্রাসঙ্গিকভাবে সেটা 'দ্রুমের আলোচনায় রোপণ করা যায়।
Decathlon = দশখেল।
Pole Vault = লাঠিলাফ।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন