ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা ভাষা নিয়ে গণমাধ্যমে লেখা আর কথার স্রোত আসে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার হ্যান এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ত্যান করতে হবে বলে গুণীজন১ এ মাসে অনেক উপদেশ, পরামর্শ আর হাহাকার উপহার দেন আমাদের। মার্চের এক তারিখে বাংলা ভাষা নিয়ে কথাবার্তাগুলো রোদে শুকিয়ে ন্যাপথলিন দিয়ে আবার তোরঙ্গে তুলে রাখা হয়, পরের বছরের জানুয়ারির তিরিশ-একতিরিশ তারিখ ফের বের করে রোদে দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের ঠ্যাকা কাজ চালানোর জন্য। ফেব্রুয়ারি তাই এক অর্থে বাঙালির ভাষা-রমযান। আমার ইচ্ছা ছিলো ফেব্রুয়ারি বাদে বাকি এগারো মাস বাংলা ভাষার টুকিটাকি নিয়ে একজন আগ্রহী চর্চক হিসেবে ঘ্যানঘ্যান করার, কিন্তু বিধি বাম। | [১] সমস্ত (অর্থাৎ সমাসবদ্ধ) পদের ক্ষেত্রে গুণীর ঈ-কার অটুট থাকবে। | |
আজকের পর্বটি শব্দ নয়, বরং বর্ণগল্পদ্রুম শিরোনামে লিখলেই ভালো হতো। কিন্তু বর্ণ শেষ পর্যন্ত শব্দেরই বাহন। বুসিফেলাসকে নিয়ে লিখতে হলে আলেক্সাণ্ডারকেও টানতে হবে।
পরশুরামের অনবদ্য 'চিকিৎসা সঙ্কট'২ গল্প দিয়ে এ লেখাটা শুরু না করলে পাপ হবে। তারিণী কবিরাজ সেখানে রোগী নন্দকে শুধান, "প্রাতিক্কালে বোমি হয়?" নন্দের জবাব, "আজ্ঞে না।" তারিণী তখন গভীর আত্মবিশ্বাসে বলেন, "হয়, Zানতি পার না।" রাজশেখর বসু বাংলা বর্ণব্যবস্থার এক বড়সড় সমস্যা অল্প কথায় এ গল্পে তুলে ধরেছেন, যেটা খণ্ডিত বাংলার একাধিক কোণে অনিষ্পন্ন হয়ে পড়ে আছে এখনও। |
[২] বাংলা একাডেমি প্রণীত 'প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম' (পরিমার্জিত সংস্করণ, সেপ্টেম্বর ২০১২) অনুযায়ী বানানটা এখন সংকট। |
|
বাংলায় জ বর্ণের একাধিক উচ্চারণ আছে, যেটা লিপি দেখে বোঝা কিছু ক্ষেত্রে দুষ্কর। উদাহরণ হিসেবে যদি আল-জাজিরাকে নিই, এর প্রথম জ এর উচ্চারণ তালব্য ধ্বনিতে, ইংরেজি বর্ণ J-এর উচ্চারণ যেমন; দ্বিতীয় জ-টির উচ্চারণ দন্তমূলীয় শিস ধ্বনিতে, ইংরেজি Z যেমন। তারিণী কবিরাজের "Zানতি পার না"-র "Z" বাংলাদেশের একটা বড় অংশ জুড়েই পরম পরিচিত আর চর্চিত, কিন্তু পৃথক বর্ণে একে বোঝাতে গেলেই নানা ফ্যাকড়া। বাংলা একাডেমি কিছু আরবি-ফারসি শব্দের Z উচ্চারণ অন্তঃস্থ য দিয়ে বোঝানোর পরামর্শ দিয়েছেন এভাবে: |
বাংলা বানান প্রমিতকরণ৩ নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের খুঁত ধরার যোগ্যতা বা অভিপ্রায়, কোনোটিই আমার নেই। কিন্তু এ বিধিতে আমার সমস্যার নিরসন না হলে কথা বলার অধিকার চর্চা করবো। প্রথমেই যে গেরোটি সামনে আনতে চাই, বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি বাংলাভাষী অঞ্চলের সর্বত্র এক নয়। তারিণী কবিরাজের মতোই কোটি কোটি মানুষ স্বাভাবিক ছন্দে "Zানতে পারেন না" চর্চা করে যাচ্ছেন। গুনে দেখলে হয়তো জ-কে Z বলা লোকের সংখ্যা জ-কে J বলা লোকের চেয়ে বেশিই হবে। তাহলে ইংরেজি Zebraকে বাংলায় কেন জেব্রা লিখবো, যেখানে জল-জট-জীব-জুন লিখি? যদি "য" দিয়ে "Z" বোঝাতে হয়৪, তাহলে যেব্রা কেন লিখবো না? আর যদি একটি লিখিত শব্দের উচ্চারণ বোঝার জন্যে আবার ঘুরে লাতিন বা পারসিক হরফ দেখে আসতে হয়, তাহলে বাংলা বর্ণমালা আছে কী করতে? আমরা কেন দুটি ধ্বনির বাছবিচারের জন্যে আমাদের লিপিকে 'দুধভাত' বানিয়ে রাখবো? | [৩] শব্দটিকে 'প্রমিতীকরণ' লেখা হবে কি না, সে নিয়েও তর্ক চলমান। [৪] যেটা করতে গেলে গণ্ডগোল বাড়ে, কারণ বাংলায় প্রচুর শব্দে য বর্ণের উচ্চারণ আসলে তালব্য ধ্বনি জ। প্রমিতকরণের বহু যুগ আগে কয়েকশ বছর পুরোনো বাংলা পুঁথিতে য-এর স্থানে জ লেখাই ছিলো রীতি (জেসব, জখন, জদি, জাইব ইত্যাদি)। বাংলা বানান সংস্কারের নানা পর্বে য-কে পুরোপুরি বর্জনের প্রস্তাব নানা সময়ে উঠেছিলো, তাতে কর্তৃপক্ষীয় সাড়া মেলেনি। |
|
যদি সব বিদেশি শব্দে Z-কে য দিয়ে বোঝাতে যাই, তাহলে খানিক অচেনা বাংলা শব্দের উচ্চারণ শিখতে গিয়ে ভজঘট লেগে যাবে। হঠাৎ বাক্যে "যাম" বা "যুম" পেলে কি আমরা জাম আর জুম বলবো, নাকি Zাম আর Zুম? যদি সবই জ দিয়ে চালাই এবং কোনটা কখন কী রকম সেটা আলাদা শিখতে যাই, তাহলে আল-জাজিরার চার রকম উচ্চারণ চলা শুরু করতে পারে। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় যে বাংলা দুটো বর্ণ আছে, যারা হাওয়া বুঝে কখনও তালব্য ধ্বনি (J), কখনও দন্তমূলীয় শিস ধ্বনি (Z) প্রকাশ করে, এবং এই হাওয়ার নাড়িতে আঙুল রাখতে গেলে সব শব্দ আগাম কানে শুনে নিতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি তাদের 'আকাদেমি বানান অভিধান' ২০০৫ সংস্করণে ৫৫৯ পৃষ্ঠায় এ বিধিতে নারাজি তুলেছে: "২৩.৫। বাংলায় য দিয়ে Z-উচ্চারণ বোঝানোর রীতি মান্যতা পায়নি। তাই এই রীতি গ্রহণযোগ্য হয়নি। এজন্য অযু বা ওযু নয়, অজু বা ওজু; আযাদি নয়, আজাদি; নামায নয়, নামাজ; হযরত নয়, হজরত ইত্যাদি।" এ সমস্যাটা এদেশে আগত ইংরেজরা বাংলা শেখার আর শেখানোর গোড়াতেই বুঝে নিয়েছিলো। বাংলাভাষীদের কাছে এটা বড় সমস্যা মনে হয়নি, কারণ ভাষার সার্বিক প্রমিতকরণের তাগিদটাই প্রথম মাথাচাঁড়া দিয়েছে উপনিবিষ্ট আবহে। গৌড়- ও রাঢ়বাসী বাঙালির কথায় Z দুর্লভ, ফারসি বা ইংরেজির ঐ দন্তমূলীয় শিসধ্বনিকে সে আপন ছন্দে তালব্য করে নিয়েছে। সমস্যা হয়নি, কারণ তার জীবনে লিখিত বাংলার তাৎপর্যই ছিলো সীমিত। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলার রাজভাষা ছিলো ফারসি আর ইংরেজি, যেখানে এ দন্তমূলীয় শিসধ্বনিকে সামাল দেওয়ার জন্যে যাল আর যেড আছে। বাঙালির জীবনে লিখিত ভাষা যখন গুরুত্ব পেলো, তার চিত্তের স্ফূরণের মাধ্যম হিসেবে যখন বাংলা (রাজধানী নানা সময়ে মুর্শিদাবাদ আর কলকাতায় সরে যাওয়ায় গৌড়ের একটি অংশের উপভাষা) মান্যতা পেলো, যখন জগৎজুড়ে অপরাপর ভাষা আর সংস্কৃতির দু'তিন চুমুক পান করে সমাজের বাকিদের সাথে তা বেঁটে নেওয়ার সুযোগ এলো, তখন দেখা গেলো তারিণী কবিরাজের জন্যে আমাদের ভাঁড়ারে কোনো বর্ণ নেই। কিন্তু ইংরেজের কানে এ দুটি ধ্বনির পার্থক্য ব্যাপক বলে ১৮৫১ সালে জন মেন্ডিসের সংকলনে আমরা দেখতে পাই, বর্গীয় জ এর নিচে দুটি বিন্দু দিয়ে তিনি দন্তমূলীয় শিসধ্বনি নির্দেশের চেষ্টা করেছেন: |
মেন্ডিসের এ চেষ্টা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য, তালব্য আর দন্তমূলীয় শিসের মাঝে ফারাক করার জন্যে নতুন বর্ণ উদ্ভাবনের প্রথম(?) চেষ্টা হিসেবে। দুটি বিন্দু তিনি পারসিক বর্ণমালার প্রভাবে পেয়ে থাকতে পারেন, নিশ্চিত বলার সাধ্য আমার এখনও নেই। প্রচলিত বর্ণের নিচে একটি বিন্দু যোগ করে ১৮৫৫ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও "ড়" আর "ঢ়" বর্ণ দুটি উদ্ভাবন করেন৫; সে কাজও পারসিক বর্ণমালার প্রভাব থেকে হতে পারে, নিশ্চিত এখনও জানি না। কিন্তু বিদ্যাসাগর তালব্য জ আর দন্তমূলীয় শিস Z এ ফারাক করেননি। হিন্দুস্তানি ভাষা দেবনাগরী ও পারসিক, দুই লিপিতেই লেখা হতো বলে বাংলার আগে হিন্দিতে বর্ণের নিচে নুক্তা বসিয়ে পারসিক শিসধ্বনি আর কণ্ঠ্যধ্বনি বোঝানোর চল শুরু হয়েছিলো৬; বিদ্যাসাগর সে চর্চা দিয়েও প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন, নিশ্চিত নই। | [৫] কয়েকটি লেখায় পড়েছি, অন্তঃস্থ য় বর্ণটি নাকি ঈশ্বরচন্দ্রই য এর নিচে বিন্দু জুড়ে উদ্ভাবন করেছিলেন। এ তথ্যটি সঠিক নয়। ১০০১ থেকে ১১০০ বঙ্গাব্দ (১৬০৮ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ) কালপরিসরে প্রচুরসংখ্যক বাংলা পুঁথিতে শব্দের প্রারম্ভিক স্বরবর্ণের স্থানে তৎকালীন নানা লিপিকরবৃন্দ যথেচ্ছ য় ব্যবহার করেছেন (যেমন য়শ্বমেধ, য়াজ্ঞা, য়োধিকার, য়েক, য়ৌরস ইত্যাদি)। বিদ্যাসাগর অন্তঃস্থ য়-কে ব্যঞ্জনবর্ণ হিসেবে বর্ণক্রমে পৃথক স্থান দিয়েছেন। [৬] কারা সে উদ্যোগ প্রথম কবে নিয়েছিলেন, এখনও জানি না; জানতে পারলে এ লেখায় জুড়ে দেবো। |
|
জন মেন্ডিসের আগে ১৮৩৩ সালে হটন সুবিস্তৃত ইংরেজি-বাংলা-সংস্কৃত অভিধান লিখেছেন, তিনিও এ পথে হাঁটেননি: |
অষ্টাদশ শতকে ডাকুস্তানি পণ্ডিতের হাতে সংকলিত একটি পূর্ববঙ্গীয় বাংলার শব্দকোষ (এ বিচিত্র সংকলনটি নিয়ে পৃথক কয়েকটি লেখা লিখবার ইচ্ছে রাখি) সম্প্রতি হাতে পেয়েছি, সেখানেও এ পার্থক্যনির্দেশী কোনো উদ্যোগের দেখা পাইনি (দন্তমূলীয় শিসধ্বনি Z আছে, এমন অনেক আরবি-ফারসি শব্দ সে সংকলনে ভুক্তিই পায়নি)। মেন্ডিসকে তাই বাংলা বর্ণের তালব্য জ বনাম দন্তমূলীয় শিস Z সংকটের এক নিঃসঙ্গ, অগ্রবর্তী সমাধায়ক ধরে নিতে পারি (এখন পর্যন্ত)।
এর পর কয়েক দশক ধরে ইংরেজি-শিক্ষিত বাঙালি পণ্ডিতরা বাংলা-ইংরেজি অভিধান প্রণয়ন করেছেন, বাংলা বর্ণমালার ধারাবাহিক সংস্কার কাজ চলেছে, মুদ্রণযন্ত্রের প্রসার ঘটায় বাংলাভাষী অঞ্চলের নানা কোণে উচ্চারণ প্রকাশের নানা বিচিত্র পদ্ধতি অবলম্বিত, চর্চিত ও প্রসারিত হয়েছে, কিন্তু তালব্য-বনাম-দন্তমূলীয়-শিসের স্পষ্ট ও লোকমান্য সমাধান মেলেনি। জন মেণ্ডিসের চিন্তা আর কর্মের প্রতিফলন খানিকটা পাওয়া যায় ১৮৯৩ সালে জন্মভূমি পত্রিকায় ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি লেখায়। সেখানে তিনি কিছু বর্ণ ছেঁটে মোট একত্রিশটি ব্যঞ্জনবর্ণ দিয়ে কাজ চালানোর পাশাপাশি দন্তমূলীয় শিসধ্বনি Z বোঝাতে একটি স্বতন্ত্র বর্ণ সংযোজনের তাগিদ দেন। অশ্বিনীকুমার দাশগুপ্ত ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে নব্যভারত পত্রিকায় ফারসি কণ্ঠ্য ধ্বনি (ক্কাফ, খে, গায়েন) বোঝাতে ক, খ ও গ এর নিচে একটি করে বিন্দুন্যাসের প্রস্তাব করেন। ইংরেজি এফ আর ভি এর উচ্চারণ দন্তোষ্ঠ্য ধ্বনিতে, বাংলায় ফ আর ভ ওষ্ঠ্য ধ্বনিতে; দুটির মাঝে পার্থক্য বোঝাতে তিনি ফ আর ভ-এর নিচেও বিন্দুন্যাসে আগ্রহী ছিলেন। এ ছাড়া দাশগুপ্ত সাহেব Ezh (ʒ)৭ ধ্বনিটির জন্যে তালব্য শ-এর নিচে একটি বিন্দু চেয়েছিলেন। দন্তমূলীয় শিসধ্বনি Z এর জন্যে তিনি অবশ্য কিছু চাননি। তাঁর এ চাওয়ার খানিক সমর্থন মেলে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের 'বাঙ্গলা বানান সমস্যা' প্রবন্ধে (প্রবাসী, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ), তবে তিনি বর্ণের নিচে বিন্দু না দিয়ে বর্ণের ডানপাশে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দেই 'সবুজপত্র' পত্রিকায় সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'বাংলার বেখাপ বর্ণমালা' প্রবন্ধে পৃথক বর্গ গড়ে দন্তমূলীয় শিসধ্বনি Z বোঝাতে জ়-কে নতুন শ-বর্গে রাখার প্রস্তাব করেন। ১৯১৭ সালে জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস তাঁর বিপুলায়তন 'বাঙ্গালা ভাষার অভিধান'-এ জ় দিয়ে Z বুঝিয়েছেন: |
[৭] গারাজ, মেজার ইত্যাদিতে উচ্চারিত ঘোষ পশ্চাদদন্তমূলীয় উষ্মধ্বনি |
জ্ঞানেন্দ্রমোহন এ নতুন বর্ণের পথপ্রদর্শক হিসেবে অক্ষয়কুমার দত্তের কথা উল্লেখ করেছেন। অক্ষয়কুমার কোন প্রবন্ধে বিন্দুন্যাসের মাধ্যমে নতুন বর্ণসৃজনের প্রস্তাব করেছিলেন, আমি এখনও জানি না, খুঁজে পেলে এ লেখায় জুড়ে দেবো। উল্লেখ্য, দাস সাহেবের অভিধানে জ এর ভুক্তিগুলোয় জ় ঠাঁই পেয়েছে শুধু উচ্চারণ নির্দেশের সময়, পৃথক বর্ণ হিসেবে প্রচলিত শিসধ্বনি শ, ষ, স এর আশেপাশে সেটি স্থান পায়নি।
কতিপয়ের ইতস্তত নানা চেষ্টা অন্যেরা বাতিল করে দিয়েছেন বলেই রাজশেখর বসু (যিনি ভাষা ও বর্ণের নানা সংস্কারের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন) তারিণী কবিরাজের মুখে "Zানতি পার না" বসিয়েছেন ১৯২৩ সালে। বর্ণের সাথে ধ্বনির সামঞ্জস্যসাধনের তর্ক থেমে থাকেনি। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি পুনরায় দন্তমূলীয় শিসধ্বনি Z এর জন্যে পৃথক বর্ণের প্রয়োজনীয়তার কথা তোলেন 'ভারতবর্ষ' পত্রিকায়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে বীরেশ্বর সেন 'প্রবাসী' পত্রিকায় আবার এ ধ্বনির জন্যে জ এর নিচে বিন্দুন্যাসের ওপর জোর দেন। বাংলা অভিধানের ইতিহাসে আরেক পর্বতপ্রতিম কীর্তি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ (প্রথম প্রকাশ ১৯৩৩); সেখানে দেখতে পাই, তিনিও একটি বিন্দু ব্যবহার করে দন্তমূলীয় শিসধ্বনি Z নির্দেশ করছেন, তবে সেটি বর্ণের নিচে নয়, ডানপাশে (সুনীতিকুমারের প্রস্তাব এমনই ছিলো): |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রচ্ছন্ন উদ্যোগে গঠিত 'কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বানান সংস্কার সমিতি' (রাজশেখর বসু যার সভাপতি ছিলেন) দন্তমূলীয় শিসধ্বনি Z বোঝাতে পৃথক বর্ণ উদ্ভাবন না করে জ এর নিচে একটি দাগ টেনে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুপারিশপরবর্তী আলোচনা আর তর্কের প্রেক্ষিতে তারা পরবর্তী সংস্করণে নিচেদাগা জ এর সাথে বিকল্প হিসেবে জ়-ও জুড়ে দেন। ২০ মে, ১৯৩৬-এ এ সমিতির পক্ষ থেকে বাংলা বানানের নিয়মাবলির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়; রাজশেখর বসুর 'চলন্তিকা'র সপ্তম সংস্করণে এ নিয়মগুলো ছাপা আছে, সেখানে জ এর ডানপাশে বিন্দুন্যাস [জ.] বিধেয় বলা আছে: |
১৯৩৬ সালে ভোলানাথ ঘোষ 'বিচিত্রা' পত্রিকায় নিচেদাগা জ এর বিরোধিতা করেছেন, "জ্র" এর সাথে সেটি গুলিয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায়। সবিন্দুক জ় তিনি সমর্থন করেছেন। ভারতবর্ষ পত্রিকায় ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ 'বাঙ্গালা বানান-সমস্যা' প্রবন্ধে জ় এর পরিবর্তে য দিয়ে Z বোঝানোর পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন, সব মুদ্রণশালায় নিচেদাগা জ বা সবিন্দুক জ় পাওয়া যায় না। ১৯৬০ সালে 'বাংলা একাডেমী পত্রিকা'য় 'বাঙ্গালা ভাষার ধ্বনি ও সংস্কার' প্রবন্ধেও তিনি একই প্রস্তাব করেন। ১৯৬১ সালে মুহম্মদ আবদুল হাই 'সাহিত্য পত্রিকা'য় Z প্রসঙ্গে শহীদুল্লাহ সাহেবের প্রস্তাবের প্রতিধ্বনি করেন, তবে তাঁর সংস্কার প্রস্তাবের বিচিত্র দিক ছিলো, তৎসম ও তদ্ভবে য-এর স্থানে জ প্রবর্তন, একই সাথে আরবি-ফারসির J ধ্বনির জন্যেও য লেখা (হাতে লাঠি ধরিয়ে দিয়ে পা কেটে ফেলার মতো: লেখক)। ১৯৭৬ সালে মণীন্দ্রকুমার ঘোষ 'কৃত্তিবাস' পত্রিকায় Z এর জন্যে নিচেদাগা জ চেয়েছেন, তিনি জ়-র বিরোধী। জগন্নাথ চক্রবর্তী 'দেশ' পত্রিকায় ১৯৭৮ সালে জ এর ডানপাশে বিন্দু জুড়ে Z চেয়েছেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৯ সালে আরেকবার বানান সংস্কারের জন্যে সমিতি গড়েছিলো, কিন্তু সে সমিতির প্রস্তাবগুলো লোকমান্যতা পায়নি বলে সমিতির ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়; সমিতির সদস্য পরেশচন্দ্র মজুমদার ১৯৮২ সালে 'বাঙলা বানানবিধি' শিরোনামে বই লিখে "বিদেশী শব্দের সর্বত্র জ"-এর প্রস্তাব করেন (আবার এসে পড়বে তবে আমড়াতলার মোড়ে: লেখক)।
বাংলায় দন্তমূলীয় শিসধ্বনি Z বোঝাতে দীর্ঘ সময় ধরে জ়-এর বিস্তৃত ব্যবহার করে আসছে আনন্দবাজার গোষ্ঠী। বাংলাদেশিদের নামের বানান নিয়ে আনন্দবাজারের অগ্রহণযোগ্য আচরণের কথা অনেকেরই জানা, এ বর্ণটিকে তাই অনেকেই আরেকটি আনন্দবাজারীয় বানানবিটকেলপনা ঠাউরে ভুল করেন। তালব্য জ আর দন্তমূলীয় শিস Z এর বখেড়া বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ যারা, তারা জ এর নিচে এই বিন্দুটিকে মুদ্রণপ্রমাদও মনে করতে পারেন (এবং করেনও)। সবিন্দুক জ় বাংলাদেশে নানা কারণে সাড়া পায়নি, কিন্তু প্রথম পরিচয়ে এর প্রতি বৈরীভাব জাগানোর পেছনে আনন্দবাজারের বানানসন্ত্রাসের একটা প্রচ্ছন্ন ভূমিকা আছে। |
বিদ্বজ্জনেরা যখন এ ধ্বনির উপযুক্ত বাহক বর্ণ নিয়ে চিন্তা করছিলেন, আমাদের অক্ষরকৌশল তখনও ছিলো যান্ত্রিক। ধাতব টাইপ জুড়ে লেখা ছাপানোর সে যুগে কাগজে বেমক্কা কালি থেবড়ে গিয়ে বর্ণের বিন্দু, কার-চিহ্ন, নিচে দাগ, সবই পণ্ড হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে মুদ্রাকররা কাজ করতেন। এখন বাংলা লেখার পেছনে প্রযুক্তি আর কৌশল এত ভিন্ন, বর্ণলেখ৮ এত বিচিত্র আর বিবিধ, লেখা আর প্রকাশের কাজটিও তুলনামূলকভাবে এমনই সহজতর, বর্ণের নিচে বা ওপরে বিন্দু বা অপর কোনো চিহ্ন জুড়ে দেওয়া একেবারেই কঠিন কিছু নয়। ইউনিকোডে বাংলা বর্ণের নিচে বিন্দুন্যাস করার সুযোগ আছে, বাংলা লেখার চলতি সফটওয়্যারগুলোর কয়েকটিতে তার প্রয়োগও আছে। তবে সবচে কঠিন হয়তো প্রচলন, কারণ সহজ সমাধানের বহুমান্যতা বাঙালির জীবনে বিরল। | [৮] বর্ণলেখ = Font। | |
জন মেণ্ডিস জ এর নিচে দুটি বিন্দু জুড়ে তালব্য জ ও দন্তমূলীয় শিস Z এর পার্থক্য নির্দেশ করে বই ছাপানোর পর ১৭০ বছর পেরিয়ে গেছে। ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দন্তমূলীয় শিস Z বোঝানোর জন্যে নতুন বর্ণ চেয়ে প্রস্তাব করার পর ১২৭ বছর পেরিয়ে গেছে, বাংলা ভেঙে তার একটি খণ্ড স্বাধীন দেশ আর আরেক খণ্ড আরেক দেশের প্রদেশ হয়েছে, কিন্তু দুই খণ্ডের ভাষা একাডেমি এই ধ্বনিটিকে একটি যোগ্য বর্ণের হাতে সঁপে দেওয়ার কাজে একমত হতে পারেননি। আমি বাংলা ভাষার একজন আগ্রহী ও নিয়মিত চর্চক হিসেবে সবিন্দুক জ় এর পক্ষে; জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসই যেহেতু ব্যাখ্যাসহ তাঁর বিপুল শ্রমের ফসল অভিধানটিতে এ বর্ণটির আনুষ্ঠানিক অভিষেক ঘটিয়েছেন, আপাতত তাঁকেই এর প্রমিথিউস বিবেচনা করছি। দাস সাহেবকে শতবর্ষ পর দূরগুরু জ্ঞানে সেলাম ঠুকে বর্ণটির যথাসাধ্য ব্যবহারের চেষ্টা করবো এ বছর থেকে। জ় যেন আনোয়ার হোসেনের স্নেহধন্যা আর জাফর ইকবালের প্রেমসিক্তা যুবতী ববিতা, কপালের ফেরে তাকে আমরা দেখে আসছি এটিএম শামসুজ্জামানের কুটিল আলিঙ্গনে। আনন্দবাজারের যা কিছু কালিমা, সব ডলে ধুয়েমুছে জ্ঞানেন্দ্রমোহনের কাছ থেকেই তাকে নতুন করে বুঝে নিলাম।
"অজাযুদ্ধে ঋষিশ্রাদ্ধে বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া" কথাটার সার্থকতা এই লেখাটা লিখতে গিয়ে নানা মুনির নানা মত ঘেঁটে নতুন করে টের পেলাম। প্রাতিক্কালে কত বোমি হয়ে গেছে, জ়ানতামই না। এ প্রসঙ্গে নতুন কিছু যদি জানতে পারি, লেখাটিতে সংযোজন করে দেবো। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। সচল থাকুন, সচল রাখুন। |
লেখার সুবিধার জন্যে বিন্দুন্যস্ত কয়েকটি বর্ণ এখানে জুড়ে দিলাম। সচলায়তনের বর্ণভাণ্ডারে (ALT + Z) এ বর্ণগুলো জুড়ে দিতে ডেভু মহারাজকে অনুরোধ করি।
ক় খ় গ় ঘ় জ় ঝ় ফ় ভ় শ় হ়
মন্তব্য
বানান সন্ত্রাস, বানান বিটকেলপনা - আনন্দবাজারের বানান নিয়ে অহেতুক পরীক্ষানিরীক্ষার দারুণ নামকরণের জন্য সাধুবাদ। আমার মনে হয় জ বা য যেটাই হোক, এটা ধারাবাহিক হওয়া উচিত। ইংলিশ, আরবী বা অন্য যে ভাষাই হোক, সেটা একটা বর্ণ দিয়ে করলেই হয়।
- রোবোট
সঠিক। সেই বর্ণটা হচ্ছে জ়।
জ় চালু হয়ে গেলে জ আর য -এর মধ্যে উচ্চারণগত পার্থক্যটা তাহলে কি হবে? উচ্চারণের দিক থেকে শেষের দুইটা থেকে একটা কি তখন অপ্রয়োজনীয় বা বিভ্রান্তি-সৃষ্টিকারী বাহুল্যে পরিণত হবে না?
****************************************
"পরিণত হবে" আবার কী, হয়ে আছে এরই মধ্যে। যে জন, যাজক আর যোজনে সবচে কড়াভাবে।
মৌখিক উচ্চারণে আছে কিন্তু লিখিত রূপে যার অস্তিত্ব নেই সেরকম বর্ণ বাংলা ভাষায় আরো আছে কিনা দেখা দরকার। বহুকাল বাংলা ভাষায় নতুন বর্ণ যুক্ত হয় না। নতুন একটা বর্ণ যুক্ত করার ক্ষমতা কার থাকা উচিত সেটাও একটা ব্যাপার। এই সিদ্ধান্তটা নেবার ক্ষমতা বাংলা একাডেমিকে দেয়া উচিত।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
বাংলা একাডেমির তরফ থেকেই সমস্যাটার সমাধান আসা জরুরি। ঘরে ঘরে সবাই একটা করে নতুন বর্ণ বানিয়ে ফেললে বাবেল-মিনারের দশা হবে। আশা করি একাডেমির মুরুব্বিরা তাঁদেরও মুরুব্বিদের শতবর্ষ পুরাতন উদ্ভাবনের মূল্য দেবেন।
মুরুব্বিরাও তো নিজেরা-নিজেরা ঝগড়া করেন। একে অপরকে পাত্তা দেন না, "বানান নিয়ে কথা বলার কি যোগ্যতা আছে উনার" বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন বা বা "উনি ভাষা সম্পর্কে কিছুই জানেন না" বলে ধুয়ে দেন। আমরা কার কথা শুনব?
https://youtu.be/vHcatT_ohkY?t=3038
****************************************
আমি জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের কথা শুনলাম। যার ধৈর্য আছে কিন্তু বুদ্ধির অভাবে সলিমুল্লাকে মুরুব্বি মানে, সে যার কথাই শুনুক, ভুগবে।
য়ানিসুজ্জামানকে নিয়ে আরেক জায়গায় দেখেনঃ https://www.youtube.com/watch?v=zpBcSGVPzjg&t=1s
আগের ভিডিওটা পুরোটা দেখেছেন? মুশকিল হল এসব বিষয়ে আমার নিজের জ্ঞান একেবারেই শুন্য। তাই _বাগ্মী_ মানুষরা কিছু বললে হা হয়ে শুনি আর মাথা চুলকাই - ঠিক বললো কি বেঠিক বললো তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যাই। মুরুব্বী মানা-টানা পরের বিষয়। হা হা হা
****************************************
থাক, আর দিয়েন না।
আচ্ছা থাক!
****************************************
সবিন্দুক জ এর সাথে হ্রস্ব উকার যোগ হলে বিন্দুটা ঢাকা পড়ে যেতে পারে, বিশেষতঃ ছোট ফন্টে। অভ্রে ও + জ় + ু = ওজু দেখাচ্ছে।
..................................................................
#Banshibir.
হ্রস্ব উ-কার, জ্জ, জ্ঝ, জ্র, জ্ব-তে ঝামেলা হতে পারে। তবে এটা বর্ণলেখের সমস্যা। কিছু দামি, বাণিজ্যিক বর্ণলেখে বিন্দুন্যাস আমলে নিয়ে কার-চিহ্ন আর যুক্তবর্ণের বন্দোবস্ত রাখতে দেখেছি; আমজনতার জন্যে সুলভ বর্ণলেখে এই ব্যবস্থা চলে এলে এ ঝামেলা মিটে যাবে।
হ্রস্ব উ-কার সংক্রান্ত সমস্যাটা 'র' এর সঙ্গে যুক্ত হ্রস্ব উ-কারের চেহারায় হলেই ঝামেলা চুকে যায়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বর্ণলেখের লিগেচার বা বাঁধন নকশার সময় সমস্যাটার সরল সমাধান করা যায়। যেমন এরকম:
সমস্যাটা বর্ণে না, উ-কার/ঊ-কার/ঋ-কার/র-ফলা নকশায়। রাদুগার বইগুলোতে যে বর্ণলেখ ব্যবহার করা হতো, সেটায় র এর ডানে নিচে উ-কার/ঊ-কার দেওয়া হতো, কিন্তু পড়তে সমস্যা হতো না।
আমি ধ্বনি বিজ্ঞানী কিংবা ভাষা বিজ্ঞানী নই, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞও নই। তাই হেমন্ত মুখোপধ্যায়ের কণ্ঠে
"কেন যামিনী না যেতে জাগালে না,
বেলা হল মরি লাজে।
কেন যামিনী না যেতে জাগালে না,
শরমে জড়িত চরণে কেমনে
চলিব পথেরি মাঝে।"
শুনে যামিনী, লাজে এবং জড়িত শব্দগুলোর উচ্চারণে কোন ধ্বনিগত পার্থক্য বুঝি না। একই ভাবে "সবিশেষ" শব্দটির বেশ শুদ্ধ উচ্চারণেও তিনটি স এর ধ্বনি আমার কাছে প্রায় একই রকম মনে হয়। স এবং ন জাতীয় বর্নগুলো নিয়ে যন্ত্রণা তো ছিলই, এখন দেখছি জ নিয়েও রয়ে গেছে এক গভীর যন্ত্রণা। রয়ে গেছে বলছি এ কারনে যে, পরশুরামের গল্পটি একাধিক বার পড়ার সময় আমি বুঝতে পারি নি zানতি শব্দটিতে ইংরেজি z অক্ষরটি কেন ব্যবহৃত হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম এটা মুদ্রণ জনিত প্রমাদ। আননদবাজারেও জ এর নিচে নোক্তা দেখে তার কারনটি বুঝতে পারি নি, ভেবেছিলাম এটা তাদের কোন বিশেষ কারিকুরি।
আপনি এবং আরও কয়েকজন এখানে জ এর নিচে নোক্তাটা কী ভাবে দিলেন, এই ভেবে চমৎকৃত হলাম। আমি অভ্র ব্যবহার করি, তাদের কীবোর্ডে এই অক্ষরটি আছে দেখলাম, কিন্তু সেটার প্রয়োগ কিছুতেই করতে পারলাম না।
এই লেখাটি অভ্রের কাণ্ডারীদের কাছে পৌঁছে দিয়ে কোনো একটা সহজসাধ্য সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান পাওয়া যায় কি না, চেষ্টা করে দেখবো। আমি আপাতত নিজের জন্যে দুটো জোড়াতালি সমাধান বের করে নিয়েছি। উইণ্ডোজ়ে অভ্রের সাহায্যে বেশ সহজেই বিন্দুন্যাসের ব্যবস্থা করা যায়, ম্যাকওএসে নতুন বর্ণাট-বিন্যাস (কিবোর্ড লেআউট) বানিয়ে নিতে হয়, আইওএস আর অ্যাণ্ড্রয়েডের জন্যে গুগল জিবোর্ডে শুনেছি(পরখে দেখিনি) সহজ সমাধান আছে। পরে সময় করে এখানেই কৌশল দুটো সবিস্তারে জানিয়ে যাবো (নোক্তার মন্দিরসোপানতলে কত প্ল্যান হলো বলিদান, লেখা রবে অশ্রুজলে)।
এটিএম শামসুজ্জামান মারা গেলেন আজ। বিদায়, প্রিয় খলনট।
ছোটবেলায় বুঝেছিলাম বিলেতিরা যা লেখে তা হয় উচ্চারণ করতে পারে না নয়তো যা বলে তা লিখতে পারে না। আর একটু বড় হ'য়ে অল্প ক'রে বুঝেছিলাম বাংলাতেও খানিকটা সেই সমস্যা র'য়ে গিয়েছে। তবে এটা নিয়ে পরে আর তেমন একটা ভাবার সুযোগ ক'রতে পারিনি। আর দিন শেষে সব উচ্চারণযোগ্য ধ্বনি লিখতে পারার ক্ষমতা ভাষাতে থাকার পক্ষেই দাঁড়াবো সম্ভবত।
(রাজীব)
লেখাটা খুবই ভাল একটা literature review হয়েছে, কোনো উপযুক্ত জার্নাল থাকলে ভাল হত। দু’টা বিষয় একটু পরিষ্কার করবেন।
১। জ/য এর কাছাকাছি ধ্বনি ইংরেজিতেও দু’টা, বাংলা তেও দু’টা। আমাদের আলাদা করে ‘ঝ’ ও আছে। তাহলে সকল জ = য = করলে অসুবিধা কোথায়? আলাদা জ় লাগবে কেন?
২। শেষ অংশে জ্ঞ্যানেন্দ্রমোহন দাসের সাথে আপনার যুক্তি গুলো বুলেট হিসেবে সারসংক্ষেপ
থাকলে ভাল হত, এতে হয়ত আমি প্রথম প্রশ্নটি করতাম না।
১। আমি আপনার প্রশ্নটা বুঝতে পারিনি। সকল জ = য করা ব্যাপারটা আসলে কেমন?
২। জ্ঞানেন্দ্রমোহনের সাথে বরং বুলেটবিদ্ধ না হই।
কথা একটাই, ঘোষ দন্তমূলীয় শিস Z বোঝাতে এক ও অদ্বিতীয় একটি বর্ণ বাংলায় প্রয়োজন। সেটি জ বা য দিয়ে বোঝানো অনেকটা ২ লিখে ১ বোঝানোর মতো। এক্ষেত্রে Z বোঝাতে জ় এর সুবিধা হচ্ছে নতুন বর্ণ শিখতে বা নকশা করতে হয় না। অসুবিধাও আছে, সেগুলো যুক্তবর্ণের অক্ষরনকশায় কিছু কৌশল প্রয়োগ করে দূর করা সম্ভব।
*** আগের মন্তব্য মুছে দিবেন ***
লেখাটা খুবই ভাল একটা literature review হয়েছে, কোনো উপযুক্ত জার্নাল থাকলে ভাল হত। দু’টা বিষয় একটু পরিষ্কার করবেন।
১। জ/য এর কাছাকাছি ধ্বনি ইংরেজিতেও দু’টা, বাংলা তেও দু’টা। আমাদের আলাদা করে ‘ঝ’ ও আছে। তাহলে সকল জ = J, য = Z করলে অসুবিধা কোথায়? আলাদা জ় লাগবে কেন?
২। শেষ অংশে জ্ঞ্যানেন্দ্রমোহন দাসের সাথে আপনার যুক্তি গুলো বুলেট হিসেবে সারসংক্ষেপ
থাকলে ভাল হত, এতে হয়ত আমি প্রথম প্রশ্নটি করতাম না।
১। এবার বুঝেছি। প্রচুর বাংলা শব্দে য এর উচ্চারণ J, অসুবিধা সেখানে।
বাংলায় কিছু বর্ণের সাথে উ-কার যুক্ত হলে সেটি স্বতন্ত্র উ-কারযুক্ত রূপ নেয় (গু, স্তু, শু, রু, হু])। একই ঘটনা ঊ-কারের ক্ষেত্রেও ঘটে (রূ [র এর নিচে বিন্দু আছে বলে উ-কার আর ঊ-কার পায়ের নিচ ছেড়ে পিঠে গিয়ে চেপেছে])। এগুলো যে নাগরী উ-কার আর ঊ-কার থেকে এসেছে*, সেটা আগে জানতাম না। প্রয়োজনের তাগিদে ভিন্ন লিপির চিহ্ন হজম করার উদাহরণ নিয়েই আমরা চলছি যখন, সবিন্দুক জ-এর পক্ষে যুক্তি আরেকটি বাড়লো।
*সতীশচন্দ্র ঘোষ তাঁর একটি প্রবন্ধে এ কথা উল্লেখ করেছিলেন।
নতুন মন্তব্য করুন