বইপাগলঃ মূলধারা '৭১

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ২৩/০৬/২০০৭ - ১১:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মঈদুল হাসানের মূলধারা '৭১ একটানে পড়ে শেষ করলাম ছুটির দিনে জ্বরের ঘোরে।

মঈদুল হাসানের লেখা অসাধারণ পরিমিতিবোধে পুষ্ট। গোটা বইটা একটা নিরাবেগ বিবৃতির ঢঙে লেখা, শব্দচয়নে এমন অসাধারণ নৈপুণ্য সবসময় চোখে পড়ে না। মঈদুল হাসান ১৯৭১ সালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ মুখপাত্র হিসেবে নয়াদিল্লির সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্বে ন্যস্ত ছিলেন। মূলধারা '৭১ তাঁর চোখে দেখা কূটনৈতিক যুদ্ধের মসৃণ বিবরণ।

বইটা পড়তে পড়তে রাগে আমার শরীর কন্টকিত হয়ে উঠেছে বারবার। খোন্দকার মুশতাক আহমেদ, মাহবুব আলম চাষীর টুঁটি চেপে ধরতে ইচ্ছে করেছে এক এক সময়, ইচ্ছে করেছে হেনরি কিসিঞ্জার আর রিচার্ড নিক্সনকে লাথি মেরে খুন করতে। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কাজে বাগড়া দেয়ায় অক্লান্ত মুজিববাহিনীর নেতাদের পদে পদে উৎপাতের বিবরণ পড়ে ইচ্ছা করছিলো সেই চার তরুণ নেতাকে চুল ধরে টেনে থাপ্পড় মারতে।

বইটা পড়ে তাজউদ্দীন আহমদের উপর আমার শ্রদ্ধার ভিত সুদৃঢ় হয়েছে বহুগুণে। কী ভয়ঙ্কর প্রতিকূলতার মধ্যে প্রায় একা কাজ করতে হয়েছে তাঁকে, তা আমার জানা ছিলো না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে কতটা সংকীর্ণ পথে অর্জিত হয়েছে, ভেতরে বাহিরে কত অজস্র শত্রুর মোকাবিলা করে তাজউদ্দীন আহমদ নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা কল্পনাতীত।

ভবিষ্যতে কিছু বিষয়ে মূলধারা '৭১ অবলম্বনে কিছু পোস্ট দেবার আশা রাখি।


মন্তব্য

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্যমূলক সেরা বইগুলোর মধ্যে একটি এই বই। হিমু ঠিক বলেছেন, এই বইটি পড়লে বোঝা যায় তাজউদ্দীন আহমেদ নামের রত্নটিকে আমরা বোধহয় এখনো মূল্যায়ন করে উঠতে পারিনি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

হিমু এর ছবি

মাঝে মাঝে খুব লজ্জা হয় নিজেদের ওপরে। মনে হয় আমরা আসলেই ছোটলোকের জাত।


হাঁটুপানির জলদস্যু

উৎস এর ছবি

বইয়ের প্রচ্ছদসহ পোস্ট দেয়া যেতে পারে।

ভাস্কর এর ছবি

মূলধারা কিনা কইতে পারুম না, তয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধারার ইতিহাস হিসাবে বইটা বহুত গুরুত্বপূর্ণ।


বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পড়েছি ।
বারবার পড়ার মতোই । আশা করছি হিমুর কল্যানে পুনঃপাঠের সুযোগ হবে ।

--------------------------
আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কনফুসিয়াস এর ছবি

কই পাই? কেমনে পাই?
মন খারাপ
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বইমেলা.কম-এ ফরিদের কাছে খোঁজ করতে পারেন @ কনফুসিয়াস।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দেখি আমিও এককপি অর্ডার করব।

====
মানুষ চেনা দায়!

হিমু এর ছবি

ইউপিএল এর উচিত বইটা ওয়েবে প্রকাশ করা। অফুরন্ত তথ্যের খনি।

একটা তথ্য জানাই। মুজিববাহিনীর কোন এক অসহিষ্ণু নেতা তাজউদ্দীন আহমদের প্রাণনাশের সিদ্ধান্ত নেয়। উপস্থিত এক মুজিববাহিনীর যোদ্ধা সাথে সাথে এ দায়িত্ব পালনে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর সে অস্ত্রসহ তাজউদ্দীন আহমদের অফিসে যায়। তাজউদ্দীন অফিসের পাশেই একটি ঘরে থাকতেন (তিনি শপথ করেছিলেন বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসারজীবনে প্রবেশ করবেন না), সেদিন তিনি অফিসে একা ছিলেন। সেই যুবক তাজউদ্দীন আহমদকে সব খুলে বলে। তাজউদ্দীন তাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, তারপর তাকে বিদায় জানান। হয়তো সেই সৎসাহসী উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন যুবক না থাকলে অন্য কোন মাথামোটার হাতে তাজউদ্দীন নিহত হতে পারতেন, প্রবাসী বাংলাদেশী সরকারের নেতৃত্বও এক বিরাট সংকটের মুখোমুখি হতো।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

তানভীর মোকাম্মেল তাজউদ্দীন আহমেদকে নিয়ে 'নি:সঙ্গ সারথি' নামে অসাধারণ একটা তথ্যচিত্র বানিয়েছেন। আমার মনে আছে পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে তথ্যচিত্রটি যখন শেষ হয় তখন প্রার্থনা করছিলাম আলোটা যেন একটু দেরি করে জ্বলে ওঠে -- কান্নার দমকটাকে যেন একটু সামলে নেয়ার সময় পাই। আমাদের খানিকটা সামনে বসেছিলেন তাঁর বড় মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি। অঝোর কান্নায় ভেসে যাচ্ছিলেন তিনিও। তাজউদ্দীন আহমেদের একটা দু:খ ছিল নয়টা মাস কিভাবে মুক্তিযুদ্ধটা চলল সেটা তাঁর মুজিব ভাই কোনোদিন তাঁকে ডেকে জিজ্ঞেস করেননি। তিনি অপেক্ষা করেছিলেন একদিন মুজিব ভাই ডেকে জিজ্ঞেস করবেন আর তিনি সবকিছু খুলে বলবেন। কিন্তু সে ডাক আর কোনোদিন আসেনি। উল্টো
মুশতাক আর মুজিব বাহিনীর পাণ্ডাদের বদৌলতে তাঁদের দু'জনের মধ্যে দূরত্বই শুধু বেড়েছে। অবশেষে তাঁদের দু'জনকেই নৃশংসভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এই তথ্যচিত্রটা সকলের দেখা উচিৎ। সুনির্মিত তো বটেই, সাথে সাথে ইতিহাসের অনেক অজানা অথচ উজ্জ্বল অংশ বেরিয়ে আসে।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

ঠিক। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তানভীর মোকাম্মেলের নতুন তথ্যচিত্রটির জন্যও অপেক্ষা করে আছি। অসাধারণ সব কাজ করছেন আমার প্রিয় এই চলচ্চিত্রকার।
আমার আগের মন্তব্যে তাজউদ্দীন আহমদের নামের বানান ভুল করেছি আবিষ্কার করে লজ্জা পেলাম।
আর সুহান তুমি কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে উপন্যাস লেখার কথাটা সিরিয়াসলি ভেবো! এ মহান মানুষটিকে তাঁর প্রাপ‌্য সম্মানের এক কণামাত্রও আমরা কিন্তু দিতে পারিনি।
আমি যদি কখনো রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিই তাহলে চেষ্টা করব তাঁর মত রাজনীতিবিদ হতে।

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

এই লিংক থেকে ডাউনলোড করা যাবে বইটি। প্রকাশকের কথা পড়ে নিশ্চিত হয়েই লিংকটা দেয়া হলো!

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

কল্যাণ এর ছবি

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

কল্যাণ এর ছবি

চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

তানজিম এর ছবি

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এর সম্পর্কে যখনই কিছু পড়ি মনটা বিষাদে ভরে যায়। মুজিব যদি তাজের উপর ভরসা রেখে কুচক্রীদের দূরে রাখতে পারতেন তাহলে আমাদের ইতিহাস পাল্টে যেত। আমরা আসলেই অভাগার দল।

তানজিম এর ছবি

পোষ্টে মুক্তিযুদ্ধ ট্যাগটা লাগিয়ে দিলে ভাল হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।